#আশার_হাত_বাড়ায় |১১|
#ইশরাত_জাহান
🦋
আদালতের ভিতরে সবাই তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় বসে পড়ে।শ্রেয়া মনে মনে দোয়া পড়ছে যেনো সত্যের জয় হয়।মিমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অহনার দিকে।মায়ের জন্য কান্না পাচ্ছে তার।কিন্তু মা যে নিকৃষ্ঠ এক ব্যাক্তি।ফারাজ মিমির পাশে বসা।মিমির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,”তোমার পাপা তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারে না মা।তোমার পাপাকে ভালোবাসলে অন্য কারো জন্য তুমি কান্না করবে না।”
বিচারক এসে বসেন তার আসরে।শুরু হয়ে যায় সকল কার্যক্রম।ফারাজের উকিল কিছুক্ষণ তার বক্তৃতা দিতে থাকেন।যেগুলো ছিলো যুক্তিযুক্ত।কিন্তু তারপর অহনার উকিল দাড়িয়ে কিছু বক্তৃতা দিয়ে বলে ওঠে,”খোঁজ নিয়ে জানা গেছে লাস্ট কিছুদিন হলো মিসেস শ্রেয়া মিস্টার ফারাজের কোম্পানিতে জব করছেন।এর আগে কিন্তু মিসেস শ্রেয়া মিস্টার রনির সাথে হ্যাপি লাইফ লিড করেছিলেন।এই জব পাওয়ার পর মিসেস শ্রেয়া ছেড়ে চলে আসেন তার পরিবারকে।ইনফ্যাক্ট তিনি তার মায়ের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখেননি।এর যুক্তিযুক্ত প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।আমি মিস্টার রনির বাড়িওয়ালাকে কাঠগোড়ায় এনে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই।তার আগে তাদের জব অ্যাপয়েনমেন্ট পেপার আপনাকে দেওয়া হলো।”
বলেই শ্রেয়ার ইন্টারভিউ এর দিন যে সিভি জমা দেওয়া হয় তার ডকুমেন্ট দেওয়া হয় বিচারককে।তারপর বাড়িওয়ালাকে কাঠগোড়ায় এনে প্রশ্ন করা হয়,”মিসেস শ্রেয়া তার স্বামী সংসার ছেড়ে যান কত তারিখে?”
বাড়ীওয়ালার সোজা সাপটা উত্তর,”তেইশ তারিখ।”
অহনার উকিল আবারও বলে,”আর মিসেস শ্রেয়া জবের চান্স পায় বাইশ তারিখে।ইনফ্যাক্ট জব পেয়েই সে ছেড়ে আসে তার সংসার।এম আই রাইট?”
বাড়িওয়ালা এবার শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”এতকিছু জানি না।তবে শ্রেয়া তেইশ তারিখ সকালে বেড় হয় সেখান থেকে।”
তারপর উকিল একটু হেসে বলেন,”মিসেস শ্রেয়া ও মিসেস অর্পা দুজনে বেস্ট ফ্রেন্ড।তাদের প্রায় সময় দেখা সাক্ষাৎ হয়।আবার মিসেস অর্পার ভাসুর মিস্টার ফারাজ চৌধুরী।ঘটনা চক্রে মিসেস অর্পার ভাসুর মিস্টার ফারাজ চৌধুরী আর মিসেস শ্রেয়ার মানে মিসেস অর্পার বেস্ট ফ্রেন্ডের কন্টিনিউ দেখা সাক্ষাৎ হয়।এর মধ্যেই আবার এনারা সংসার ভাঙ্গার পাঁয়তারা করতে থাকেন।দুই তরফ থেকে কিন্তু মিস্টার ফারাজ চৌধুরী ও মিসেস শ্রেয়া ডিভোর্সের জন্য ব্যস্ততা দেখিয়েছেন।তাহলে তো বলা যায় আসলে রিলেশনশিপ মিস্টার রনি ও মিসেস অহনা নয় মিস্টার ফারাজ চৌধুরী ও মিসেস শ্রেয়া করেন।কিন্তু মিস্টার ফারাজ চৌধুরী তার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য কিছু করতে পারছিলেন না।এদিকে মিসেস শ্রেয়া তার মাকে ভয় পায়। আর মিস্টার রনির সাথে সেপারেশন হতে পারছিলেন না।তাই চুক্তি করে আগে তারা চাকরিতে জয়েন করেন।তারপর বুদ্ধি খাটিয়ে তারা তাদের স্বামী স্ত্রীর নামে এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ারের দাবি করে থাকেন।কারণ এর দ্বারা মিস্টার ফারাজ চৌধুরী ও মিসেস শ্রেয়ার কাজ উশুল হবে।ইওর ওনার,এখানে স্পষ্ট বোঝা যায় যে মিসেস অহনা পুরোপুরি নির্দোষ।কারণ তার কোনো প্রমাণ আমরা দেখতে পারছি না।কিন্তু মিস্টার ফারাজ ও মিসেস শ্রেয়া যে আগে থেকে সাক্ষাৎকার এটার যথাযথ প্রমাণ আমরা দেখছি।”
অহনার উকিলের মুখে এমন কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো শ্রেয়া ও অর্পা।অহনা এভাবে সবকিছু ঘুরিয়ে দিলো ভাবতেই পারছে না।রনি নিজেও কাঠগোড়ায় দাড়িয়ে হাসতে থাকে।অহনা জেলে এসে দেখা দিয়েছিলো রনির সাথে।সবকিছু খুলে বলে রনিকে।তাই তো রনি শান্তিতে আছে।বিচারক বলে ওঠে,”আপনার আর কিছু বলার আছে মিস্টার হাসান?”
কথাটি ফারাজের মামা রিফাত হাসানকে বলেন।যিনি ফারাজের উকিল।উনি এবার ফারাজের দিকে তাকালেন।তারপর একটি রহস্যের হাসি দিয়ে উঠে দাড়ালেন।তারপর বলেন,”ইওর ওনার,আমরা তো এতক্ষণ শুধু যুক্তিযুক্ত বয়ান শুনছিলাম।কিন্তু আমরা কি যুক্তিযুক্ত প্রমাণ দেখেছি?”
ভ্রু কুচকে তাকালো অহনা ও অহনার উকিল।রিফাত হাসান বলেন,”আমার বিপরীত বন্ধুর ভাষ্যমতে মিসেস শ্রেয়া ও মিস্টার ফারাজ রিলেশনশিপে ছিলেন।তাহলে তাদের শুধু জব এর প্রমাণ কেনো থাকবে?কিছু প্রণয়ের মোমেন্টও তো থাকবে।”
অহনার উকিল তাকালো অহনার দিকে।অহনা মাথা নাড়িয়ে না বুঝিয়ে দিলো।মানে তার কাছে কোন প্রমাণ নেই।রিফাত হাসান আবার বলেন,”মিসেস শ্রেয়া জবে জয়েন করেছেন আজ এক সপ্তাহ।তার এই কয়দিন ট্রেনিং ছিলো।তিনি সাকসেস হয়েছেন।কিন্তু জব পাওয়ার মানেই কি প্রেম হয়ে যায়। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত কাজ না করে এক্সাক্ট প্রমাণ পেশ করা উচিত।যেটা আমি আপনাকে দিতে পারব।”
এবার যেনো ভয় পেলো রনি ও অহনা।রিফাত হাসান একটি ভিডিও ক্লিপ অন করেন।যেটাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রনি ও অহনা রেস্টুরেন্টে একসাথে আলাপ করছে।এছাড়া কিছু ছবি দেখানো হলো।সবশেষে এমন একটি ভিডিও দেখানো হলো যেটা দেখে সবাই নিরব হয়ে গেলো।ভিডিওতে ছিলো,
মিমিকে বেধরম মরছে অহনা।মিমিকে মারতে মারতে বলে,”তোমার পাপাকে আমাদের ব্যাপারে কিছু বলবে না।যদি বলো তাহলে তোমার পাপা আর আমি আলাদা হয়ে যাবো।তখন তোমার সাথে কেউ মিশবে না। লোকে বলবে মিমি ভালো না।মিমি আসলে ওর মাকে ভালোই বাসে না।”
ছোট্ট মিমি কান্না করছে।অহনা অবাক হয়।এই ভিডিও কখন করা হলো।ফারাজ এবার অহনার দিকে তাকিয়ে রহস্যের হাসি দিতে থাকে।
রিফাত হাসান এবার বলেন,”এছাড়া আরও প্রমাণ আছে আমাদের কাছে।যেগুলো তে স্পষ্ট যে মিসেস অহনা একজন ডেঞ্জারাস মা।উনি অত্যন্ত লোভী মহিলা।যার কাছে টাকা পয়সা আসল আর বাইরের পুরুষের সাথে আসক্তি থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।যে মা তার মেয়ের কাছে এক্সপোজ হয় সেই মা ভালো পথে না এসে উল্টো তার মেয়েকে অত্যাচার করে।এটার থেকে নিকৃষ্ট মহিলা আমার দেখা মতে একটাও নেই।আমরা জানি মা নষ্ট হতে পারে কিন্তু সে তার সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ মা হয়ে থাকে।কিন্তু এখানে মিমি মেয়েটার পুরো সময়টা তার বাবার সাথে কাটায়।মিস্টার ফারাজের পুরো লাইফ হেল করে দেন এই মিসেস অহনা।ছোটখাটো একটি কোম্পানি নিয়ে হ্যাপি লাইফ ছিলেন ফারাজ চৌধুরী।মিসেস অহনার সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকে তার চাহিদা পূরণে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।বউয়ের সকল চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে দিন রাত খাটতে থাকেন মিস্টার ফারাজ চৌধুরী।বিয়ের পর থেকে অল্প কিছুতে সন্তুষ্ট থাকতেন না মিসেস অহনা।প্রত্যেক পদক্ষেপে এটা চাই ওটা চাই।স্ত্রীর মন জোগাতে নিজেও দিন রাত পরিশ্রম করে যান।বাবা মা ভাই ও বউকে সুখে রাখতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকেন।ধীরে ধীরে সফলতা তাকে বিদেশে নিয়ে যায়।বিদেশে যাওয়ার আগে জন্ম নেয় আমাদের ছোট মিমি।দীর্ঘ চার বছর সেখানে পরিশ্রম করে এসে দেশের কোম্পানিকে অনেক উপরের লেভেলে গড়ে তোলেন তিনি।সারাদিন পরিশ্রম করার পরও মেয়েকে সময় দিয়ে আগলে রাখেন ফারাজ চৌধুরী।কিন্তু মা হিসেবে মিসেস অহনা মেয়েকে সময় দিতেই পারেনি।সন্দেহ তো তখন থেকেই শুরু হয়।ধীরে ধীরে ফারাজ চৌধুরী খোঁজ লাগান মিসেস অহনার ব্যাপারে।খোঁজ নিয়ে দেখা যায় মিসেস অহনার কলেজ লাইফের প্রেমিক এই মিস্টার রনি।তার কিছু ছবি আমরা মিস্টার রনির বন্ধুর থেকে কালেক্ট করেছি।”
বলেই ছবিগুলো দেখলো বিচারককে।ছবিগুলো স্পষ্ট বোঝা যায় পুরনো।রিফাত হাসান আবার বলেন,”মিসেস অহনার মূল উদ্দেশ্য ছিলো ফারাজ চৌধুরীর সম্পত্তি টাকা পয়সার দিকে।তার কাছ থেকে সবকিছু আদায় করে তিনি সময় কাটাতেন মিস্টার রনির সাথে।মিমির মতো বাচ্চাকে সময় না দিয়ে মহিলাটি অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক রেখে যান।অন্যদিকে মিস্টার ফারাজ অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তার মেয়ে বউ ও পুরো পরিবারের জন্য।আমাদের দেশে অনেক নারীর স্বামী প্রবাসী।কিন্তু কেনো থাকে তারা?দিনরাত পরিশ্রম করে যে অর্থ উপার্জন করা হয় এই সব তো পুরুষ মানুষ তার বউ আর সন্তানের জন্য করে।কিন্তু বউ হিসেবে স্বামীর কষ্ট বোঝার অধিকার মিসেস অহনার রাখা উচিত ছিলো।এভাবে পরকীয়ায় লিপ্ত না হয়ে তার উচিত ছিলো ফারাজ চৌধুরীর সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া অথবা একটি মিউচুয়াল সেপারেশনে যাওয়া।যার একটাও মিসেস অহনা করেনি।এই সবকিছুর প্রমাণ আপনাদেরকে দেখানো হলো।”
বলেই সকল প্রমাণ বিচারকের সামনে আনা হয়।বিচারক সব দেখে অহনার উকিলকে জিজ্ঞাসা করে,”আপনার আর কিছু বলার আছে বা দেখানোর আছে?”
অহনার উকিল মাথা নত করে আছে।এতগুলো প্রমাণ দেখে কিছু বলতে পারছেন না।কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বলেন,”সবকিছু মানলাম কিন্তু এটা আমরা বুঝলাম না মিসেস শ্রেয়া কেনো তার মাকে না জানিয়ে স্বামী ছেড়ে এলেন।মিস্টার রনির সাথে কি এমন হয়েছিলো যে মিসেস শ্রেয়া এভাবে বেড় হন?”
রিফাত হাসান এবার বলে ওঠেন,”এই কথাটি নাহয় মিসেস শ্রেয়া নিজেই বলুক।”
বিচারকের আদেশে শ্রেয়াকে কাঠগোড়ায় আনা হয়।অহনার উকিল প্রশ্ন করে,”আপনি কি চাকরি পাওয়ার পর এই সংসার ছেড়ে চলে আসেন?”
শ্রেয়া সোজাসুজি উত্তর,”হ্যাঁ।”
“কেনো?তার আগে কেনো ছাড়েন না সংসার?”
“আমি নিজের একটা পরিচয় করতে চেয়েছি।”
“মিস্টার ফারাজের অফিসেই কেনো?”
“কারণ ওখানে আমার রেফারেন্স ছিলো তাই।আজকাল চাকরি রেফারেন্স ছাড়া আসেনা।যদিও আসে তো ভাগ্য করে আসে।”
শ্রেয়ার এমন স্ট্রেট কথা শুনে রনি নিজেই হা হয়ে তাকালো শ্রেয়ার দিকে।শ্রেয়া এমন স্মার্টলি উত্তর করবে এটা ভাবনার বাইরে ছিলো রনির।অহনার উকিল বলে,”রেফারেন্স তো আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড।তার ভাসুরের কোম্পানিতে জব দিলেন।আপনি কেনো জবটি করতে রাজি হলেন।যেহেতু আপনার স্বামী আর তার স্ত্রী রিলেশনে আছেন।”
“কারেকশন!আমি জানতাম না আমার বসের ওয়াইফের সাথে এই লোকটির রিলেশন আছে।”
“তাহলে?”
“আমি নিজে থেকেই দেখে ফেলি এই লোকের নোংরা কর্ম।তার প্রমাণ আমার কাছে আছে।আমি নিজেও আমার মত আলাদা ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করেছি।যদি ডিভোর্সে এনারা সমস্যা করে তাই আমি প্রমাণগুলো কালেক্ট করি।কিন্তু বুঝিনি আমি ছাড়াও আরো কেউ তার নামে কেস করেছে।শুধু এটাই না এই লোক তার প্রেমিকার জন্য আমাকে দিনে রাতে নির্মম অত্যাচার করেছেন।শুধু যে উনি করেছেন এটা বললে ভুল হবে এনার পুরো পরিবার আমাকে অত্যাচার করত।”
“প্রমাণগুলো দেখাতে পারবেন?”
শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে ওর ফোনের মেমোরি কার্ড খুলে রিফাত হাসানের এসিস্ট্যান্টের হাতে দেন।মেমোরি কার্ড একটি পেনড্রাইভে ঢুকিয়ে ভিডিও ওপেন করতেই দেখা যায় সেদিনের করা সম্পূর্ণ ভিডিও।যেটা দেখে আতকে ওঠে সৃষ্টি বেগম।এরপর আরো কিছু প্রমাণ পেয়ে বিচারক রায় দেন,”সকল প্রমাণ সাপেক্ষ গ্রহণ করে দেখা যায় আসল অপরাধী মিসেস অহনা ও মিস্টার রনি।যেহেতু এই ধরনের কেসে মেয়েদের শাস্তি সরুপ কোনো আইন দাবিদার করা নেই তাই মিস্টার ফারাজ চৌধুরী আলাদা একটি কেস পেশ করেছেন।তার মতে মিসেস অহনা একজন জালিম মা এবং একজন প্রতারক।যে পদে পদে মানুষকে ঠকিয়ে নিজের স্বার্থ উশুল করে।এই ধরনের নারীর জন্য সকল নারীরা আজ দুর্বিসহ।যুক্তিযুক্ত প্রমাণ ও দাবিদারের ফলে মিসেস অহনা তার সমস্ত কিছু মিমির নামে লিখে দিবেন এছাড়া ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী মিস্টার রনিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে প্রদান করা হলো।”
বিচারকের এমন রায় শুনে থমকে যায় রনি ও অহনা।রুবিনা কান্না করে দেন।তার দুই মেয়ে একবার ভাই তো একবার মায়ের দিকে দেখতে থাকে।ঘাবড়ে গেছে সবাই।অহনা হাত মুঠ করে আছে।সে তার সর্বস্ব হারাবে এখন।ফারাজ একটি পেপার এগিয়ে দিলো অহনার সামনে।পেপারটি দেখিয়ে বলে,”এখানে সম্পত্তির বিষয় এবং ডিভোর্স দুটোই উল্লেখ আছে।সই করে দেও নাহলে আমাকে আবার স্টেপ নিতে হবে।”
অহনা আশেপাশে তাকিয়ে সই করে দিলো।বিচারক চলে গেছে তার রায় দেওয়ার সাথে সাথে।রনিকে নিয়ে যখন পুলিশ বেড় হতে নিবে ঠিক তখনই রনির মুখে একটি জুতা ছুড়ে আসে।সবাই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির দিকে তাকালে দেখতে পেলো কাজটি সৃষ্টি বেগম করেছেন।রিমলি খুশি হয়ে সৃষ্টি বেগমকে জড়িয়ে ধরে।আজ আর রনি বা রুবিনা কেউ কিছু বলতে পারছে না।শ্রেয়া রনির সামনে এসে দাড়ালো।একবার মিমির দিকে তাকিয়ে আবার রনির মুখের দিকে তাকালো।শরীরের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে একটি চ”ড় মেরে বলে,”লজ্জা করে না একটি ছোট বাচ্চার মায়ের সাথে নোংরামি করতে?ছিঃ,তোমার মত মানুষ বেঁচে না থাকাই উত্তম।”
বলেই সরে আসে শ্রেয়া।মিমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অহনার দিকে।অহনার সই করার পর কাগজে ফারাজ নিজেও সই করে দেয়।মিমির চোখ থেকে পানি পড়ছে।মায়ের স্নেহ মমতা ছাড়াই বেড়ে উঠেছে মিমি।কিন্তু তারপরও মা বলে চিনেছে কাউকে।অর্পা এসে দাড়ালো মিমির কাছে।মিমিকে কোলে নিয়ে বলে,”কষ্ট পায় না মা।তুমি না ব্রেভ গার্ল।তুমি তো বলেছিলে পঁচা কাজের শাস্তি দিতে।তোমার পাপার সাথে মিলে পঁচা লোকদের শাস্তি দিবে।সে যতই তোমার মাম্মি হোক।তাহলে এখন কেনো কষ্ট পাচ্ছে আমার মিমি সোনা?”
মিমি জড়িয়ে ধরে অর্পাকে।কান্না করে দেয়।বলে ওঠে,”মাম্মি এত পঁচা কেনো।তোমরা আমাকে শিখিয়ে দেও কোনটা পঁচা কাজ কোনটা ভালো কাজ।তাহলে কেনো মাম্মিকে শিখিয়ে দেওনি?”
মিমির মাথায় হাত বুলিয়ে অর্পা বলে,”কারণ তুমি ছোট বাচ্চা।আমরা বড়রা তো ছোটদের সবকিছু শিখিয়ে দেই বড়দেরকে তো শেখানো থাকে।”
“পঁচা কাজ শিখিয়েছে সবাই মাম্মিকে।”
একটু জোরেই বলে ওঠে মিমি।ফারাজ এসে মিমিকে আগলে নেয়।শ্রেয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।নিজের জন্য না।অসহায় মিমির জন্য।কঠিন জীবন তো মিমি নিজেও পার করেছে।অহনার কাছে এসে শ্রেয়া দাড়াতেই অহনা মুখ ঘুরিয়ে নেয়।অহনাকে খুঁটিয়ে দেখলো শ্রেয়া।মুখ থেকে থু মেরে ছুড়ে মারলো অহনার মুখে।মিমির দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,”মেয়েটাকে দেখেও কি এসব নোংরা জীবন থেকে বেড় হয়ে আসতে মন চাইতো না?”
অর্পা এসে শ্রেয়াকে ধরে বলে,”আরে এই মেয়ে তো সবসময় একটা কথাই বলে।ওর নাকি বেবী নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না।কো ইনসিডেন্টলি হয়েছে।লাইফ ইনজয় করবে।অল্প বয়সে বাবা মা বিয়ে না দিলে এতদিনে নাকি মহারানী বিদেশ টুর দিতো।আরও কত কি আছে।এই মেয়ের কর্মকান্ডের জন্য ওর বাবা মাও ঘরে বসে কান্না করছে।লোকলজ্জার ভয়তে আসতে পারেনি তারা।”
চলবে…?