বিষন্ন_রাত💖,,০৫,০৬

0
484

#বিষন্ন_রাত💖,,০৫,০৬
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖
#পর্বঃ__৫

বৃষ্টির মাথাটা কাত হয়ে পরলো রাতের কাধের উপর। বুকটা কেপে উঠলো রাতের। জীবনে প্রথম এমন কোনো অনুভুতি। ডাকতে চেয়েও ডাকলো না রাত। চক্ষু জোড়া স্থির হয়ে আছে বৃষ্টির মুখের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। খুবই মায়াবি লাগছে মুখটা। রাত বেশিক্ষন তাকিয়ে রইলো না ওই দিকে। কারণ যতো বারই বৃষ্টিকে দেখে ততোবারই অবাক হয় রাত। মেয়েদের প্রতি যথেষ্ঠ ঘৃনা থাকলেও বৃষ্টির প্রতি কেনো সেই ঘৃনা কাজ করেনা? অদ্ভুত মায়া মিশে আছে এই মুখটায়। এটা যেনো মুখ নয় কোনো স্পষ্ট মায়াজাল।
পাশ থেকে স্নিদ্ধা বলে উঠে,
– রাত এভাবে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু প্রেমে পরে যাবি।
– ধুর, বৃষ্টি এভাবে ঘুমিয়ে পরলো সেটাই ভাবছি। অন্য কিছু না।
স্নিদ্ধা এবার একটু বাকা হাসি দিয়ে বলে উঠে,
– কিছু কিছু দির্ঘতম অসমাপ্ত প্রেমের ইতিহাস গুলো কিন্তু এখান থেকেই শুরু হয়।
রাত আর কিছু বললো না। চুপচাপ বসে রইলো সিটে। স্নিদ্ধার মুখটায় ভেষে উঠলো একটা প্রশারিত হাসি। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রাতের।
রাত বৃষ্টির মাথাটা কাধ থেকে আলতো করে সরিয়ে দিতেই এক হাত জড়িয়ে নিলো বৃষ্টি। এবার খুব আরাম করেই মাথা রাখলো সে। রাতও চক্ষু বুজে হেলান দিয়ে আছে সীটের সাথে।
পার হয়ে গেলো বেশ কিছুটা সময়।
বাস থামলো একটা জায়গায়। রাফি ডাক দিলো রাতকে। তারা নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বৃষ্টি এখনো শুয়ে আছে রাতের কাধে।
রাত আস্তে আস্তে দু একবার ডাক দিতেই উঠে গেলো বৃষ্টি। ঘুম ভাঙতেই দেখে রাতের কাধে মাথা রেখে হাতটা জড়িয়ে ধরে আরামে ঘুমিয়েছিলো পুরুটা রাস্তা। লজ্জায় রাতের দিকে তাকাতে পারছেনা সে। ছি ছি এভাবে কেও ঘুমায়?
ছোট্ট করে একটা সরি বললো বৃষ্টি,
– সরি ঘুমিয়ে পরেছিলাম তো তাই বুঝতে পারিনি।
রাত একটু হাসি হাসি ভাব নিয়ে বলে,
– ইটস্ ওকে। এখন চলো।
বৃষ্টির চোখে এখনো ঘুমের ভাব স্পষ্ট। ঘুমু ঘুমু চোখে বলে উঠে,
– আমরা কি চলে এসেছি?
– নাহ্ এখনো বাকি আছে কিছু পথ।
– ওহ্।
ব্যগটা কাধে নিয়ে নিলো রাত। বৃষ্টির ঘুম ভাঙলেও এখনো চোখে ঘুমু ঘুমু ভাব। মনে হচ্ছে দুই মিনিটের জন্য রেখে দিলে আবার ঘুমিয়ে পরবে।
বৃষ্টির হাতটা ধরে বাস থেকে নেমে এলো রাত। ঘুমু ঘুমু চোখে তাকিয়ে আছে তার আর রাতের এক হয়ে থাকা হাত দুটুর দিকে।
বাস থেকে সবাই নেমে গেলো দুবাইলের ঠিক আগের রাস্তায়। সেখানে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের একটা সাইনবোর্ড দেখতে পেলো। রাস্তার উল্টো পাশে কিছু সি এনজি দেখলো তারা। যদিও বাস, সিএনজি এসবে চড়ার তেমন অভ্যেস নেই রাত বৃষ্টি কারোরই। তবুও ঘুরাঘুরির মুহুর্ত। মজা করাটাই সবার উদ্ধে। গাড়ি আনলে হয়তো এই ফিলটা আসতো না।
রাফি গিয়ে দু,টা সি,এন,জি রিজার্ব নিলো ওখান থেকে। মেয়েদের জন্য একটা ছেলেদের জন্য একটা।
সিএনজিতে থাকা অবস্থায় বৃষ্টিকে নিয়ে বরাবরই মজা নিলো তার বান্ধবিরা। ইশ কেনো যে ওভাবে ঘুমিয়ে পরলো সে।
স্নিদ্ধা বলে উঠে,
– দেখছিস আমি বললাম না রাতও তোকে পছন্দ করে। নাহলে এভাবে সারা রাস্তা পার করাতো দুরের কথা, অন্য কাওকে বসতেই দিতো না তার সাথে।
সকলের নানান কথায় লজ্জায় মুখ লাল হয়ে আসছে বৃষ্টির।
১৫-২০ মিনিটে একটা মিনি যার্নির পর চোখে পরলো বিশাখা সাগর নামের একটা বিশাল সুন্দর দিঘির উপর। রাতের পাশা পাশি হাটছে বৃষ্টি। রাত বৃষ্টিকে বললো,
– এই দিঘিটা হলো বিশাখা সাগর?
বৃষ্টি চোখ মুখ কুচকে উত্তর দিলো,
– সাগর?
– সাগর নয় এটার নামই বিশাখা সাগর। আর ওপাশে গাছ গুলোর আড়ালেই রয়েছে মহেরা জমিদার বাড়ি।
– আমরা তো তাহলে এখন জমিদার বাড়ির সামনেই।
– হুম।
একটু এগিয়ে সবার জন্য টিকিট নিলো ভেতরে প্রবেশ করতে।
টিকিট কেটে রাফির পেছন পেছন ভিতরে ঢুকে গেলো সবাই। সামনেই একটা বড় ভবন চোখে পরলো তাদের।
রাত বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– এটা হলো বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার। এটা হলো পশিক্ষন রত পুলিশ সদস্যদের আবাসিক ইউনিট।
গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে আশে পাশের ভবন গুলোও দেখি নিলো তারা।
সেখানে অনেক গুলো বড় বাড়ি দেখতে পেলো তারা। এক একটা বাড়ির এক এক নাম।
কালিচরণ লজ, চৌধুরি লজ, তার পাশে মেহমান খানা, আনন্দ লজ, মোহারাজা লজ। বৃষ্টি সেগুলোর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটছে রাতের পাশেই। হটাৎ পা মচকে পরে যেতেই রাত ধরে ফেললো তাকে। রাতের এক হাত দিয়ে বৃষ্টির হাত ধরে আছে অপর হাত বৃষ্টির কোমরে। চেয়ে আছে একে অপরের দিকে। লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো বৃষ্টি।
রাত বলে উঠে,
– একটু দেখে চলতে পারোনা? একটু হলেইতো পরে যাচ্ছিলো।
– তুমি আছে না? তুমি থাকতে আমার কিচ্ছু হবেনা।
উত্তর শুনে আর কিছু বললো না রাত। বৃষ্টিকে ছেরে হাটা শুরু করলো সে।

দুপুর হয়ে এলো, বাড়ি গুলোর পেছনে রয়েছে বাচ্চাদের খেলার জায়গা। আরেটু এগিয়ে দেখলো একটা পুকুর।
ওটার পার ধরে একটু সামনে এগুলেই দেখলে পেলো পিকনিকস্পোর্ট। ওখানে আছে নাস্তা ও বিশ্রামের জন্য মনরোম ব্যাবস্থা। ওখানে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলো তারা।
তারপর খেয়ে দেয়ে বেড়িয়ে পরলো তারা চারপাশটা দেখতে।
রাত ও বৃষ্টি খেয়াল করলো তাদেরকে সবাই আলাদা আলাদা রাখছে। বৃষ্টি রাতকে বলে উঠলো,
– ওরা তো আমাদের কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। চলো আমরা চার পাশটা দুজন মিলে ঘুরে দেখি।
রাতও সম্মতি জানালো।

বিকেল বেলা,
রাত ও বৃষ্টি হাটছে রাফিদের থেকে একটু দুরে দুরে। একটা একটা জিনিসের সাথে বৃষ্টিকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে রাত।
– এটা দেখছো বৃষ্টি। এটা হলো আনন্দ লজ, এই আনন্দ লজটাই হলো এই পুরু জমিদার বাড়ির মুল আকর্ষন। এই ভবন স্থাপত্তের অনন্য বিষয়টা হচ্ছে, এর কারু কাজে একই সাথে প্রাচ্য ও পশ্চিমের স্থাপত্ব সৈলির কম্বিনেশন পাওয়া যায়। আর বর্তমানে এটা পুলিশের প্রশাশনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
– ওহ্ আচ্ছা।
রাত বকবক করে যাচ্ছে আর বৃষ্টির দৃষ্ট রাতের ঠোটের দিকে। রাতের বলা কথার দিকে কোনো হুস নেই তার। সে চেয়ে আছে বার বার নরে উঠা রাতের ঠোটগুলোর দিকে। রাতের সাথে পাশাপাশি হাটছে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে তার মাঝে। সে যে রাতের সাথে এভাবে অনেকটা পথ পারি দিতে চায়, তাকিয়ে থাকতে চায় রাতের বক বক করা ঠোট গুলোর দিকে। রাত আড় চোখে তাকালো তার দিকে। দেখে বৃষ্টি তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাত বলে উঠে,
– তুমি কি আমার কথাগুলো শুনছো?
– তুমি আমার পাশাপাশি হাটছো আমার সাথে একাকি সময় কাটাচ্ছো, খুব ভালোই লাগছে আমার। তোমার সাথে কাটানো মুহুর্তটায় আমি অন্য কোনো সোন্দর্য উপভোগ করতে চাইনা।
– হায়রে, কার সাথে এতোক্ষন বকবক করছি আমি?
– তুমি বলতে থাকো আমার খুব ভালোই লাগছে।
আবার হাটা শুরু করলো রাত, একটু এগুতেই রাত বললো,
– এটা হলো মহারাজা লজ। সুন্দর্য কম নয় এটাও। দেখো চার পাশে অসাধারন কারুকাজ। এই অসাধারণ কারু কাজে ঘেরা মোহারাজা লজে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে এক রাত থাকার ব্যবস্থা আছে।

হটাৎ বৃষ্টির খেয়াল হয় স্নিদ্ধার বলা সেই কথায়। তাকে আর রাতকে এখানে রেখেই তারা সিলেটের উদ্দেশ্যে চলে যাবে। সেই সুবাদে রাতে থাকার জন্য এই মোহারাজা লজটাই বেছে নিলো সে। যদিও রাতের প্রতি যথেষ্ট বিশ্বাস আছে তার।

বৃষ্টি এখন চাইছে রাতকে ব্যস্ত রাখতে। তাই সে আবার জিজ্ঞেস করে উঠে,
– আচ্ছা এই জমিদার বাড়ির ইতিসাটা কিভাবে শুরু হয়?
রাত বলতে শুরু করলো,
– এই প্রাচিন জমিদার বাড়িটার ইতিহাসটা শুরু হয়েছিলো ১৮৯০ সাল থেকে। কালিচরণ শাহ্ ও আনন্দ শাহ্ নামের দুই ভাই ছিলো। যাদের ছিলো কলকাতায় লবন ও ডালের ব্যাবসা। আর ওসবের চাহিদাটাও বেশি ছিলো তাই খুব তারাতারি এতোদুর এগিয়ে গেলো তারা। কলকাতা থেকে এখানে চলে আশে ও বিশাল এই জায়গার উপর এই জমিদার বাড়িটা স্থাপন করে। আর এখানে যে জমিদার বাড়ি গুলো আছে এগুলো তখন কার নিদর্শন। তারা জমিদার বাড়িটি নির্মান করার পর এই এলাকা বাসির সাথে বিভিন্ন ভাবে “দাদন” নামক একটা প্রথা আছে ওটা খাটানোর চেষ্টা করে এবং অনেক উন্নতি সাধন করে। অর্থাৎ তারা জমিদার হিসেবে অনেক জনকল্যান কাজ করেছেন। আর এই সুন্দর জমিদার বাড়িটি যে আমরা দেখতে পাচ্ছি এর পিছনেও একটা কলঙ্কিত ইতিহাস রয়েছে।
বৃষ্টি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– কি সেটা?
– ১৯৭১ সালের মে মাসে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনিরা এখানে এসে কুল বধুযোগ মায়া রায় নামে একজন ছিলেন তাকে সহ এখানে পাঁচ জন গ্রাম বাসিকে চৌধুরি লজের পেছনে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তার পর এখানে যে জমিদার রা ছিলো তারা রাগে ও কষ্টে এদেশ ছেরে চলে যায়। কোনো সুন্দর জিনিশের পিছনেও একটা কলঙ্কিত ইতিহাস থাকে। আর আমরা সেই সোন্দর্যটা উপভোগ করি কিন্তু এই ইতিহাস গুলো পর্যালোচনা করিনা।
– বাহ্, তুমি দেখি এখানকার সব কিছুর সাথেই পরিচিত। কয়বার এসেছিলে এখানে।
– ক্লাস এইটে থাকতে একবার এসেছিলাম বাবা আর,,,,,
– আর,,,
– না কেও না। বাবার সাথেই এসেছিলাম আমি। আর সাথে কেও থাকলেও তার নামটা আমি মুখেও আনতে চাইছিনা।
– তার উপর তোমার কিসের এমন অভিযোগ?
– বলবো কোনো একদিন।
বৃষ্টি গুন গুন করে বলে উঠে,
“” একদিন তো আমি তোমার সব কিছুই জানবো আর তুমি আমার সব জানবে। কিন্তু সেই দিনটা আসবে কবে।
রাত রহস্য জনক ভাবে তাকিয়ে বলে,
– কিছু বললে?
– নাহ্।

বৃষ্টির সাথে হাটতে হাটতে চারপাশটা ঘুরতে ঘুরতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে।
আশে পাশে তাকিয়ে রাফিদের কাওকে দেখতে পারলোনা রাত। যেহেতু দুই দিনের জন্য এসেছে তাহলে রাতে এখানেই থাকবে সবাই। আশে পাশেই আছে হয়তো।
বৃ্ষ্টি বুঝতে পারলো তারা কৌশল করেই আলাদা হয়ে গেছে তাদের থেকে। তবুও চুপচাপ রাতের পেছন পেছন তাদেরকে খুজতে লাগলো সেও। না কোথাও পেলোনা তাদের।
একে একে সকলের মোবাইলে ফোন দিলো রাত। কেওই ফোন ধরছেনা। অস্থির হয়ে পরলো রাত, বার বার ফোন দিচ্ছে কিন্তু কেওই ফোন ধরছেনা।
খুজতে খুজতে প্রায় সন্ধা পেরিয়ে গেলো। রাত বুঝতে পারলো তারা এখানে নেই।
– রাফিরা হয়তো চলে গেছে। কিন্তু কেনো এমনটা করলো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– তাহলে এখন কি হবে?
– আর কি হবে আমরাও চলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
– আমি যাবোনা।
– তাহলে, কি এখানেই একা একা থাকবে?
– আমি বাসা থেকে বলে এসেছি দু,দিন থাকবো। তাই আমি দু,দিন আগে কিছুতেই বাড়ি ফিরছিনা। আর মাথাটাও কেমন ঝিম ঝিম করছে।
রাত খেয়াল করলো আকাশটাও বিষন্ন হয়ে আছে যে কোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। এখন বের হলে একটা নাজেহাল অবস্থা হবে।
বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
– আমার উপর বিশ্বাস আছে?
– হুম। উত্তরটা খুব শান্ত ভাবেই দিয়ে দিলো বৃষ্টি। যেনো রাতের সাথে সে একি সাথে আরো অনেকটা রাত পার করে এসেছে সে।

রাত বৃষ্টিকে নিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। মহারাজা লজ এর রুম বুক নিতে এক রাতের জন্য।

– আপনাদের পরিচয়?

বৃষ্টি চুপ করে থাকলেও রাত খুব স্বাভাক ভাবেই উত্তর দেয় আমরা স্বামি স্ত্রী।
হা করে রাতের দিকে চেয়ে রইলো বৃষ্টি। মুখেও লজ্জার ছাপ স্পস্ট।

থাকার জন্য একটা ঘর নিয়ে সেখানে চলে গেলো তারা। হাটতে হাটতে রাত বলে উঠে,
– তুমি এখন ভাবছো, দুজনের জন্য আমরা কেনো একটা ঘর নিলাম। ধরো তুমি যদি অন্য ঘরে থাকো তাহলে বেপার টা রিস্কি হয়ে যায়না? এখানে অনেক মানুষই আছে, আর তুমি এখানে নতুন। নতুন মেয়ে হয়ে একা একটা ঘরে থাকাটা কিন্তু রিস্ক তুমি বুঝতেই পারছে। আর আমার জন্য চিন্তা করোনা। এক ঘরে থাকলেও এক সাথে থাকবো না। কোনো রকম রাতটা কাটিয়ে দিতে পারবো আমি।
– আমি মোটেও ওসব নিয়ে ভাবছিনা। আর তুমি থাকতে আমার কিচ্ছু হবে না আমি জানি।
– ভয় হচ্ছেনা?
– না।
– কেনো?
– তুমি আছো যে,,,,
– আমাকে ভয় হচ্ছে না?
– বিশ্বাস আছে।
– আমি কিন্তু খারাপও হতে পারি।
– যদি তাই হয়, তাহলে ভেবে নিবো আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছি।

থাকার ঘরটা খুবই পরিপাটি। সুন্দর্যতার কমতি খুজতে গেলে ভুল হবে। যা যা দরকার সবই আছে এখানে। সত্যি রাজ প্রশাদের প্রতিটা ঘরই থাকে রাজকিয় ভাব।
,
,
,
রাত তখন নয়টা, ছাদটা ঘুরে ঘুরে দেখছে দু,জন। গুর গুর করছে আকাশটা। মনে হচ্ছে এক্ষুনি বর্ষন শুরু হবে। রাত কয়েক বার চলে যেতে বললেও গেলো না বৃষ্টি। একটু পরই শুরু হয়ে গেলো বর্ষন। বৃষ্টির মাঝে হাত দুটি মেলে নেচে বেড়াচ্ছে বৃষ্টি। বাচ্চামোতে মেতে উঠেছে সে। রাত মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে বাচ্চামোতে মেতে উঠে সেই বৃষ্টির দিকে।
বৃষ্টি হাত বাড়িয়ে ডাক দেয় রাতকে।
– দাড়িয়ে থেকোনা রাত। উপভোগ করো এই মুহুর্তটা। সার্থক করে দাও আজকের এই বৃষ্টি। চলো একসাথে ভিজি। দুজনের জন্যই হয়ে উঠুক এটা একটা বৃষ্টি ভেজা রাত।

To be continue………….

#বিষন্ন_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৬

রাত তখন নয়টা, ছাদে ঘুরে ঘুরে দেখছে আশ পাশটা দেখছে দুজন। আকাশটাও গুর গুর করে উঠছে মাঝে মাঝে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি বুঝি বর্ষন শুরু হয়ে যাবে। আকাশের অবস্থা দেখে রাত কয়েকবার নিচে চলে যেতে বললেও গেলোনা বৃষ্টি। এই বৃষ্টি পাগল মেয়েকে থামায় কে? মনটা যে ছটপট করছে বৃষ্টি ফোটাগুলো গায়ে মাখার জন্য।
একটু পরই শুরু হলো হালকা ভারি বর্ষন। হাত দুটি মেলে রেখে প্রতিটি ফোটার তালে তালে নেচে উঠছে বৃষ্টিও। বাচ্চামোতে মেতে উঠেছে সে। রাত মুগ্ধ নয়ন স্থির হয়ে আছে বাচ্চামোতে মেতে উঠা সেই বৃষ্টির দিকে।
বৃষ্টি হাত বাড়িয়ে ডাক দিলো রাতকে।
– দাড়িয়ে থেকোনা রাত। উপভোগ করো মুহুর্তটা। সার্থক করো আজকের এই প্রতিটি বৃষ্টি ফোটা। চলোনা আজ একটু একসাথে ভিজি। দুজনের জন্যই হয়ে উঠুক এটা একটা বৃষ্টি ভেজা রাত।
বলেই একটা প্রশারিত হাসি দিয়ে হাত মেলে ঘুরতে লাগলো সে। রাতও স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে সেখানে। অজানা এক ভালো লাগা কাজ করছে তার মাঝে। তার জীবনের প্রতিটা মুহুর্তেই যদি এমন তৃপ্তি মিশে থাকতো? কতোই না ভালো হতো।
কিছুক্ষন কেটে গেলো ওইভাবে। রাতের হটাৎ খেয়াল হলো সবে মাত্র বর্ষা কাল শুরু হচ্ছে। নতুন বৃষ্টি এগুলো। বেশিক্ষন ভিজলে নির্ঘাত জ্বর উঠবে।
রাত কয়েকবার ডাক দিলো বৃষ্টিকে,
– বৃষ্টি আর ভিজোনা। শরির খারাপ করবে পরে। চলে আসো।
– খারাপ করলে করুক তুমি আছো না?
রাত আবারও কয়েকবার ডাক দিলো বৃষ্টিকে। কিন্তু তার একটাই কথা সে নিচে যাবেনা। আজ এই বৃষ্টি ফোটার মাঝে হারিয়ে ফেলতে চায় নিজেকে।
রাত এবার আর কিছু না বলে, বৃষ্টির কাছে গিয়ে আচমকাই কোলে তুলে নিলো তাকে। রাতের হটাৎ এমন আচরণে অবাক হলো বৃষ্টি। পরে যাওয়ার ভয়ে রাতে গলাটা দু হাতে জড়িয়ে উরে আছে সে। চেয়ে আছে রাতের মুখের দিকে।
বৃষ্টিকে কোলে নিয়ে সোজা নিচে চলে এলো রাত।
ফ্রেশ হতে গেলেই খেয়াল করে, তার নিয়ে আশা জামা কাপর সব স্নিদ্ধার ব্যাগে। বয়ে বেড়ানোর অলসতায় নিজে কোনো ব্যাগ আনেনি। স্নিদ্ধার ব্যাগেই নিয়ে নিয়েছে। ফ্রেশ না হয়ে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। রাতকে ডাক দিলো সে।
– বলছি কি, আমার জামা কাপর তো সব স্নিদ্ধার কাছে। আর ওরা তো চলে গেছে। এখন কি করবো?
– ভালোই হয়েছে। এখন এই ভেজা কাপর নিয়ে রাত পার করতে হবে। বার বার বলেছিলাম না ভিজতে। শুনলে না আমার কথা। এখন থাকো এই ভেজা কাপর গায়ে নিয়ে।
– প্লিজ কিছু একটা করো। এভাবে কি থাকা যায়?
– এই ভারি বৃষ্টিতে এখন বাইরে যাওয়াও সম্ভব না যে তোমার জন্য জামা কাপর কিনে আনবো। আর ধিরে ধিরে বর্ষন বেরেও চলছে।
– তাহলে কি এভাবেই থাকতে হবে?
– তো আর কি করবে?
ওখান থেকে চলে গেলো রাত। ঠোট ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। ইশ্ কেনো যে ভিজার শখ উঠলো কে জানে?
কিছুক্ষন পর রাত একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার এনে এগিয়ে দিলো বৃষ্টির দিকে। ঘুমানোর জন্য ট্রাউজারও টি-শার্ট সব সময় থাকে তার কাছে।
– এই নাও আপাততো এগুলো দিয়েই কাজ চালাও।
চট করেই রাতের হাত থেকে ওগুলো নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে পরে বৃষ্টি।

চেন্জ হয়ে রাতের সামনে এসে দাড়ায় সে।
– আমাকে কেমন লাগছে?
রাত তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। সাদা টি-শার্ট ও কালো ট্রাউজারে ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছে বৃষ্টিকে।
বিরক্তি নিয়ে বৃষ্টি আবার বলে উঠে,
– বলো না কেমন লাগছে আমাকে?
– ভালো।
– শুধু কি ভালো? সুন্দর লাগছে না?
– হুম তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, এবার হ্যপি?
– জানো, এই কথাটা আমি অনেকের মুখ থেকেও শুনেছি যে আমি অনেক সুন্দর। কিন্তু তোমার মুখ থেকে শুনার মাঝে যেই তৃপ্তি রয়েছে তা আমি আর কখনো পাইনি। কারো কথায় এমন অনুভুতি আমার মনকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। তোমার মুখে শুনা প্রতিটি কথাই আমাকে হারিয়ে দেয় এক ভিন্ন অনুভুতিতে। যে অনুভুতির সাগরে আমি হাজারও বছর ভাসতে চাই।
রাত ভালোভাবেই বুঝতে পারছে বৃষ্টির কথার ধরণ। তবুও কিছু বললো না। খেয়াল করলো বৃষ্টির স্নিদ্ধ চুলের মাঝ থেকে একটু একটু করে পানি পরে টি-শার্ট টা শিরিলের সাথে মিশে যাচ্ছে তার।
রাত চোখ ফিরিয়ে নিলো। ব্যাগ থেকে একটা হালকা জ্যাকেট বের করে বৃষ্টির দিকে এগিয়ে ধরলো।
– এটা পরে নাও।
– কেনো? ঠিক আছি তো আমি।
– না ঠিক নেই, কিচ্ছু ঠিক নেই। পরে নাও এটা।
– আচ্ছা দাও যখন ঠান্ড লাগবে তখন পরে নিবো।
– ঠান্ডার জন্য দিচ্ছি না আমি।
– তো কি জন্য পরবো?
– তুমি বুঝতে পারছোনা?
– না।
– সত্যিই বুঝতে পারছোনা?
– আরে বাবা বললে তো বুঝতে পারবো।
– তুমি কি সত্যি বুঝতে পারছোনা নাকি আমার মুখ থেকে শুনতে চাইছে বুঝতেছিনা। কিন্তু আমি বললে তুমি লজ্জা পাবে।
বৃষ্টি এবার বুঝতে পারলেও একটু ঢং করে বলে উঠে,
– তুমি তো নিশ্চই আমার উপকারই করতে চাইছো তাই না? তো লজ্জা পাবো কেনো?
– কারণ তোমাকে অনেক হট লাগছে। এটা পড়ে নাও তাতে লজ্জা নিবারণের সাথে এই বৃষ্টির মাঝে ঠান্ডা ভাবটাও গায়ে লাগবে না।
লজ্জায় মাথাটা নিজু করে ফেললো বৃষ্টি। ছি, এভাবে কেও বলে? ধুর ভুলটা আমারই হয়েছে, কোনো যে ওর মুখে মুখে প্রশ্ন করতে গেলাম? ভাবতে ভাবতেই জ্যাকেট টা গায়ে নিয়ে নেয় বৃষ্টি।
রাত বলে উঠে,
– তুমি এখানেই থাকো। আমি ডিনারের ব্যবস্থা করছি।
মাথাটা নিচু করেই জবাব দেয় বৃষ্টি,
– আচ্ছা।

রাত চলে গেলো। বৃষ্টি বসে বসে অপেক্ষা করতে থাকে তার জন্য।
কিছুক্ষন পর ফিরে আসে রাত। বৃষ্টি খেয়াল করলো রাতের চুল থেকে পানি গড়িয়ে পরছে নিচের দিকে। রাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠে,
– সোজা হয়ে দাড়াও।
বলেই টাওয়াল দিয়ে রাতের মাথাটা মুছতে থাকে বৃষ্টি। রাত দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। মনে হচ্ছে গভির একটা সম্পর্ক তাদের। আর বৃষ্টি অধিকার খাটাচ্ছে রাতের উপর।
খাবার খাচ্ছে দুজন। খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে বৃষ্টি।
– আমি নিজের হাত দিয়ে খেতে পারিনা।
বৃষ্টির হটাৎ এমন কথায় ভ্রু কুচকে বৃষ্টির দিকে তামায় রাত। শান্ত ভাবে বলে উঠে,
– তাহলে দুপুরে খেলে কি করে?
– তখন খুব কষ্টে একটু খেয়েছিলাম। খেতে পারিনি তখন।
– তাহলে বাসায় ও কি কষ্ট করে একটু খানি খাও?
– তখন তো মা খাইয়ে দেয়।
– তাহলে আর কি করার, কষ্ট করে হলেও যতটুকু পরো খাও।
– খাইয়ে দাও না, খুব খুদা লেগেছে আমার।
রাত এবার বৃষ্টিকে খাইয়ে দিতে দিতে বললো,
– যে তোমার স্বামী হবে সে বেচারার কপাল পুরবে।
– কেনো?
– এই যে সারাক্ষন জ্বালিয়ে মারবা তাকে?
– সহ্য করতে পারবেনা?
– মানে?
– ইয়ে মানে বলতে চাইছি, সে কি সহ্য করতে পারবেনা এই জ্বালাতন।
– সেটা তখন তাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিবো।
– দেখা যাবে।

খাওয়া শেষে কিছুক্ষন বারান্দায় দাড়িয়ে কাটিয়ে দিলো দু,জন। বাইরে বৃষ্টি ফোটার আওয়াজ ভালোভাবেই কানে আসছু দুজনের।
রাত বাইরে তাকিয়েই বলে উঠে,
– যাও ঘুমিয়ে পরো।
– আর তুমি?
– আমার এমনিতেও ৩ টার আগে ঘুম আসেনা। আর কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারবো সমস্যা নেই।
– আমি ঘুমিয়ে গেলে তুমি কি করবে?
– ফোনে ও গিটার নিয়েই কখনো কখনো নির্ঘুমে রাত্রি পার হয়ে যায়। তাছারা এখানে ভালোই লাগছে। তুমি যাও ঘুমাও। আর শুনো ভয় পেওনা আমি আছি।

গভির ঘুমে আচ্ছন্ন তখন বৃষ্টি। হারিয়ে আছে স্বপ্ন রাজ্যে।
চার দিকটা ফুলে ফুলে ভরা। সেই ফুলের মাতাল করা গ্রাণ। চারদিকটায় উড়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য রঙিন প্রজাপতি। মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে লম্বা একটি পথ। যা কতো দুর তা খালি চোখে দেখা যাচ্ছেনা। মনে হয় শেষ হওয়ার মতো পথ নয় এটি। রাতের হাত ধরে বৃষ্টি যত সামনে এগুচ্ছে ততো সুন্দর্য বেরে যাচ্ছে। রাতের এক হাত জড়িয়ে সেই পথে হেটে বেড়াচ্ছে বৃষ্টি।
হটাৎ সমনে এসে দাড়ালো বৃষ্টির মামাতো ভাই সাজিদ। যে বৃষ্টিকে ছোট বেলা থেকেই পছন্দ করে। সাজিদের হাতে বড় একটা ধরালো ছুরি। সাজিদ কিছু না বলেই সেই ছুরি দিয়ে টানা কয়েকটা আঘাত করে ফেললো রাতকে। রাতের শরিলের রক্তে সেই জায়গাটা ভেষে যাচ্ছে। এক সময় সেই জায়গা টা নদী হয়ে গেলো রাতের রক্তে। তার উপর একটা নৌকা ভেষে বেড়াচ্ছে। সাজিদ বৃষ্টিকে নিয়ে সেই নৌকায় উঠে বসলো। সাজিদ সেই নৌকা নিয়ে বৃষ্টিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। রাত এক হাত বাড়িয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। ধিরে ধিরে সে ও ডুবে গেলো সেই রক্তের সাগরে। রাত রাত বলে জোরে জোরে চিৎকার দিচ্ছে বৃষ্টি। কিন্তু সেই চিৎকারের আওয়াজ সাজিদের কান অব্দি পৌছাচ্ছেনা। এক সময় রাতকে আর দেখা যাচ্ছেনা। রক্তের নিচে ডুবে গেছে সে। আর সেই রক্তের উপর দিয়ে সাজিদ নৌকায় করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টিকে।

হটাৎ রাত বলে চিৎকার দিয়ে বিছানায় বসে পরলো বৃষ্টি।
প্রায় ৩টা ছুই ছুই। রাত তখন বারান্দায় বসে বৃষ্টির দেওয়া সেই গিটার টা বাজাচ্ছিলো। যেখানেই যায় সেই গিটারটা সাথে থাকে তার।
হটাৎ বৃষ্টির এমন চিৎকার শুনে ছুটে এলো রাত। রাতকে দেখেই দৌরে তাকে জড়িয়ে দরলো বৃষ্টি।
– তোমার কিছু হয়নিতো রাত? তুমি ঠিক আছো তো? আমি তোমাকে হারাতে চাই না। বলো না আমায় রেখে কোনোদিক কোথাও যাবেনা তুমি। বলোনা।
রাত দেখলো বৃষ্টির শরিলটা থর থর করে কাঁপছে। মুখেও ভয় স্পস্ট, গলায়ও ভয়ের আতঙ্ক। ভয়ে কথা বের হচ্ছেনা মুখ দিয়ে।
রাত বুঝতে পারলো বৃষ্টি হয়তো কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে। তাই এভাবে ভায়ে কাপছে। বৃষ্টিকে শান্ত করার চেস্টা করছে রাত।
– এইতো আমার কিচ্ছু হয়নি। তুমি স্বপ্ন দেখছো। এইতো আমি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখো।
বৃষ্টি কাপা কাপা গলায় বলে উঠে,
– না এটা স্বপ্ন নয়। বাবার অনেক ক্ষমতা, সে পারেনা এমন কোনো কাজ নেই। সাজিদ ও খুব খারাপ। আমি চোখ খুলবো না। চোখ খুললেই তুমি হারিয়ে যাবে।
– চোখ খুলে একবার দেখোইনা আমি তোমার কাছেই আছি। হারিয়ে যাবোনা। ভয় পেওয়া চোখ খুলে দেখো একবার।
বৃষ্টি মিট মিট করে চোখ খুলে তাকালো রাতের দিকে। দেখে সে রাতের বুকে মুখ গুজে আছে।
রাত আস্তে করে বলে উঠে,
– রিলেক্স। তুমি যেই জন্যই ভয় পাওনা কেনো। এটা শুধুই স্বপ্ন ছারা আর কিছু নয়।
– তুমি বারান্দায় থেকোনা আমার পাশেই বসে থাকো। যেনো আমি বুঝতে পারি তুমি আমার পাশে আছো।
– ওকে ওকে এখন ঘুমাও, ভয় দুর করো। আমি তোমার পাশেই আছি।
বৃষ্টিকে শুইয়ে দিয়ে তার পাশেই বসে আছে রাত। শরির টা জমে ঠান্ডা হয়ে আছে বৃষ্টির। মাথায় হাত বুলিয়ে ভয় কাটানোর চেষ্টা করছে রাত। বৃষ্টির মাথায় হাত বুলাতে কখন যে নিজেও ঘুমিয়ে পরলো তা খেয়াল করেনি রাত।

সকালে ঘুম ভাঙতেই শরিরে কিছু উষ্ন তাপ অনুভব করলো রাত। কারো গরম নিশ্বাসটা বরাবরই তার বুকে এসে পরছে। ভালোভাবেই চোখ খুলতেই দেখে বৃষ্টি তাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। এখনো ঘুম ভাঙেনি মেয়েটার। বুক থেকে আলতো করে সরিয়ে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলো রাত। নিচে দাড়িয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো বৃষ্টির মুখের দিকে। গভির একটা মায়া কাজ করছে ওই মুখে। একধম বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে সে।
সকালের সূর্যটা উঠে কিরণ ছরিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতিতে। বৃষ্টিতে ভেজা পাতাগুলো ঝিক ঝিক করছে সেই আলোয়। যেনো সব কিছু ধুয়ে মুছে হয়ে উঠলো একটি রঙিন সকাল।
ফ্রেশ হয়ে বৃষ্টির পাশে বসলো সে। বৃষ্টিকে কয়েকবার ডাক দিলো রাত।
বৃষ্টি ঘুমু ঘুমু চোখে বলে উঠে,
– যা তুই আমি আসছি। ডিস্টার্ব করিসনা একটু ঘুমুতে দে।
রাত মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
– আর ঘুমুতে হবেনা দিন হয়ে গেছে। এখন উঠো।
হটাৎ বৃষ্টির খেয়াল হলো এটাতো রাত। রিদ মনে করে তুই তুই করে বলে ফেললো সে।

বৃষ্টিও ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিলো দুজন। কাপর চোপর ঘুচাচ্ছে রাত। পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– কোথায় যাচ্ছো?
– কেনো বাড়ি ফিরতে হবেনা?
– একটা অনুরুধ করি?
– কী?
– গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত সময়টা আমার জীবনে বেষ্ট সময় ছিলো তুমি পাশে ছিলে বলে। আর বাসা থেকে দু,দিনের কথা বলে বেড়িয়েছি। আরো একদিন বাকি আছে। চলে গেলেই তো সব আগের মতো হয়ে যাবে। প্লিজ আজকের দিনটাও আমি তোমার সাথে কাটাতে চাই। না করো না। প্লিজ প্লিজ……….

To be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here