#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_28
নতুন জামাই বাড়ি এসেছে তার জন্য পিঠা বানানোর ধুম পরেছে। আসার পর থেকে রান্না ঘরে বসে পিঠা বানাচ্ছি। আমি একা না। সাথে ফুপিরা ও আছে। লতা পিঠা বানাতে পারে না তাই ও বসে আছে। এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। আমি সংসার পিঠা করছি। তখন আমার ছোট ফুপি বলল,,
” ইশ সংসার পিঠা ইহান টার কি পছন্দের ? ছেলেটা বাড়ি নাই কতো কিছু মিস করছে?”
আফসোস সুরে বললো। তখন খালা( ইহানের খালা) বললো,, ” কি নাকি কাজ এ গেছে আপা তো তাই বললো।”
সবাই ভাইকে নিয়ে কথা বলতে লাগলো আমি চুপচাপ কাজ করছি আর তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছি। চাচি সবাইকে মিথ্যা বলেছে। সবাই চিন্তা করবে বার বার জিজ্ঞেস করবে তাই বলেছে তার জবের জন্য যাওয়া হয়েছে। সবাই এতে বলেছিলো কলেজে জব নিলো তাতে আবার কোথায় গেল। চাচি তখন বলেছে আমাকে ওতো বলেছে নাকি।
আর কেউ কিছু বলে নাই। পিঠা বানানোর কাজ শেষ হলে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি। কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে উঠে রুমে চলে আসি। হাত মুখ ধুয়ে চুলে চিরুনি দেয়। যেভাবে আপুদের বাসায় গেছিলাম সেভাবেই ছিলাম চুল ঝট হয়ে আছে। চুল আঁচড়ে খোঁপা করে নেয় তখন হুরমুর করে লতা রুমে আসে।
আমি বড় চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে বলি,,
“কি হয়েছে এভাবে ছুটে এলি কেন?”
“ও এসেই বলে রিহান ভাই এসেছে দেখলাম। আমাকে দেখেই তোর কথা জিজ্ঞেস করলো।”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,, ” তো আমি কি করবো?”
“আয় দেখা করবি।”
“ছার তো হাত। লোকটার মতিগতি ভালো না আমি যাব না তার সামনে।”
“আরে আয় না।”
‘যাব না বললাম না জোরে করিস কেন? ভাইয়া কোথায় গেলো আমার চিন্তা হচ্ছে।”
আমার কড়া কথা শুনে চমকে উঠলো লতা।
“আচ্ছা সরি। তোর সাথে আমার কথা ছিলো।”
“কি বল?”
“ওই সকালের কথা। ইহান ভাইজান তার মাকে কি যেন বলে বকাবকি করছিলো। অনেক রেগে কথা বলছিল। কি কথা আমি ঠিক শুনি নি কিন্তু আমি তোর নাম বলতে শুনেছি। তোকে নিয়ে কথা হয়েছে। ম্যাডাম প্রথমে পাল্টা জবাব দিলেও পরের দিকে কেমন ভয় পেয়ে ছিলো।”
আমি হাঁ করে লতার কথা শুনলাম। আমার মাথায় হাত আমাকে নিয়ে কথা বলছে চাচির সাথে। হায় আল্লাহ বলে কি? তাহলে চাচি এর জন্য আমাকে তো বকবে এখন আমি কি করবো? কিন্তু চাচি আজ তো একটু ও বকলো না আচ্ছা বাসায় মানুষ তাই কি ভালো আচরণ? সবাই চলে গেলে আবার শুরু হবে নতুন বিপদ।আমি ঢোক গিলে ভয়ার্ত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি।
লতা আমার কাছে এসে বললো, “কাল বাগানে তোর আর ইহান ভাইজানের সব কথা আমি শুনছি।”
“মানে।”
বড় বড় চোখ করে।
“হুম আমি আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম।”
“কেন?”
“না মানে তুমি কাদছিলি আমি তোর কাছে আসবো তখন ভাইজান কে আসতে দেখলাম তাই দাঁড়িয়ে লুকিয়ে দেখলাম কি হয়? সব দেখে আমি তো স্তব্ধ হয়ে গেছি। আচ্ছা তুই আর ভাইজান দুজন দুজনকে কি ভালোবাসিস?”
আমি ওর কথা শুনে চমকে উঠলাম। আমার মনে ভাইয়ার জন্য আলাদা একটা ফিলিংস আসে। সেটা ক্রাশ শুধুই। ভাইয়ার উপর আমি ক্র্যাশিত কিন্তু ভালোবাসা নাই।
আমি বললাম,, ” তোর এমন কেন মনে হলো।”
” আরে ভাইজানের বিহেভিয়ার দেখে। আমার মনে হয় ভাইজান তোকে ভালোবাসে। ”
তখনি চাচির ডাক এলো লতাকে ডাকছে লতা দৌড়ে চলে গেলো। আমি থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে। না না এটা সম্ভব না তাকে তো আমি তার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলতে শুনেছি হুম ফারিয়া নাম। অনেক দিন আমি তার গানের আওয়াজ পেয়ে চুপিচুপি উপরে গিয়েছি। তখন দেখতাম একটা মেয়ের সাথে কথা বলতো।
ওতো রাগে গার্লফ্রেন্ড ছারা আর কার সাথে কথা বলবে?
কিন্তু ভাইয়া আমাকে চুমু খেলো কেন? ভুল করে হয়তো আমি আর ভাইয়া কাছে যাব না। ভাবতে লাগলাম।
বাইরে আসতেই আমাকে আর লতাকে দিয়ে পিঠা পাঠালো আপুর রুমে যেখানে রিফাত ভাইয়ারা আছে।সেখানে গিয়ে চোখ পরলো রিহানের দিকে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমি পিঠা করে তার তাকানো দেখে গটগট করে বেরিয়ে আসতে চাইলাম। এমন হা করে তাকিয়ে থাকলে কি সেখানে থাকা যায়।
কিন্তু আপুর জন্য সেটা হলো না আমাকে ডেকে সাথে বসালো আমি তার কথা ফেলতে পারলাম না সাথে লতা কে বসলাম। রিহানের দিকে তাকিয়ে দেখি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ সরিয়ে বিরক্ত হয়ে বসে একটা পিঠা দিলো আপু সেটা খেলাম।
আধা ঘন্টার মতো থেকে বেরিয়ে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। অসভ্য ছেলে কেমন বেহায়ার মত তাকিয়ে থাকে।
আমি নিজের রুমে চলে এলাম। এখন ঘুম দেবো। বিছানায় শুয়ে ঘুম আসছে না বারবার ভাইয়ার কথা মনে পরছে। কেন করছে জানা নেই আমি ছটফট করে উঠে বসলাম। চোখ বন্ধ করলেই ভাইয়ার টোল পড়া গালের হাসি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু সুন্দর সেই হাসি অফ। কালকে কতোটা কাছে ছিলো আমার ভাইয়া ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। আচ্ছা ভাইয়া বাসা থেকে গেলে কোথায় আর কেন গেলো? চাচির সাথে রাগারাগী আমার জন্য করে থাকলেও কোথাও যাওয়ার কি দরকার।
আবার শুয়ে ঘুমানোর ট্রাই করলাম। আর ঘুমিয়ে পরলাম। পরদিন ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে মুখোমুখি হলাম রিহানের সে আমার সামনে এসে হেসে বললো,
“আমার উওর টা দিলে না কিন্তু?”
আমি হকচকিয়ে গেলাম। এই লোকটার সামনেই পরতে হলো অফ বিরক্তিকর।
“কি হলো ঊষা আমার উওর দাও?”
“কিসের উওর দিবো?”
“কাল যেটা না বলে চলে এলে। তুমি লজ্জা পেয়ে চলে এসেছো আমি মাইন্ড করিনি।”
“আমি লজ্জায় পেয়ে আসিনি।”
“তাহলে?”
“আমি..
তখন চাচিকে দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আমাদের দেখেছে কিনা জানি না কিন্তু এদিকে আসছে আমি চমকে উঠলাম।
রিহানকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম। রিহান বোকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
চাচির কাছে যেতেই চাচি বললো,,
“কি করে কই যাস? আর ওই ছেলের সাথে কি কথা বলছিলি।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
“কই কিছু না তো।
“মিথ্যা বলছিস?
“না তো। ওই আসলে বলছিলি চা দিতে।”
চাচি তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও বললো না চলে গেলো। আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
চাচি যদি আবার এসে দেখে আমি চা করছি কিনা তাই চা করে নিলাম। ওই লোকটা এখনো সোফায় বসে আছে আমি গিয়ে বললাম,,
“ধরেন চা খান।”
চমকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,, “চা আমার জন্য আমি তো তোমাকে চা করতে বলিনি।”
“বলেননি তো কি হয়েছে আমি নিয়ে এলাম। ধরেন খান।”
“কিন্তু আমি তো…
বলতে গিয়ে ও থেমে গেলো আমি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,,
” আপনি কি?”
রিহান চা খায় না কিন্তু বললো না। ভালোবাসার মানুষটির হাতের চা মিস করতে চাইনা।
তাই হেসে তারাতাড়ি চা দিয়ে চুমুক দিলো।
আমি হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি।
তারপর চলে এলাম।ভাইয়াকে এই সময় কফি দেয় সব সময় আজ ও কফি করে বোকা হলাম ভাই তো বাসায় নাই। সবার জন্য চা করে দিয়ে এলাম। ইমা আপুর রুমে গেলাম না খালি।
আমি রান্না ঘরে এসে কফির দিকে তাকিয়ে আছি। এটা ভাইয়া খায় আমি কখনো খাইনি কিন্তু শুনেছি তিতা এটা একটু খেয়ে দেখবো আজ তো ভাই নাই। এটা ফালানো যাবে।
আমি কফির দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে থেকে ঠোঁটের কাছে নিলাম। এক চুমুক দিতেই মুখ তিতা বিচ্ছিরি হয়ে এলো। গল্পের আসল লেখিকা নন্দিনী নীলা সাথে সাথে থু থু করে ফেলে দিলাম সব। ছিঃ কি বাজে খেতে এটা ভাইয়া খায় কি করে? ওয়াক থু। কফির কাপ রেখে আমি করি করতে লাগলাম। তখন রিহান এলো আর বললো ওকে কফি করে দিতে আমি বললাম,,
“আপনি ও ওই বাজে জিনিস টা খান?”
রিহান ব্রু কুঁচকে বলল,,” কোন বাজে জিনিস?”
আমি কফি দেখিয়ে বললাম। “এই যে এটা?”
রিহান হেসে উঠলো,, “আরে কফি করছো দেখি আমি তো তোমাকে বলিনি করতে করলে যে। ভালোই হয়েছে।”
বলেই এগিয়ে কাপ হাত নিলো আমি চোখ বড় করে বলল, “এটা নিচ্ছেন কেন?”
“খাব তাই। তোমাকে তো করার কথা বলতেই এসেছিলাম। যাই হোক করা আছে এটাই খাই।”
“এটা আপনার না দিন এটা!”
‘কার এটা?”
‘ইহান ভাইয়ের!”
“আরে সে তো বাসায় নাই! আমাকেই দাও।”
“না দিন তো এটা বলেই হাত থেকে কেড়ে নিলাম আমার খাওয়াটা কিছুতেই দেওয়া যাবেনা।”
রিহান অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি কাচুমাচু মুখ করে বললাম,,
“আমি আপনাকে আরেকটা করে দেয় আমি যান সোফায় বসুন।”
রিহান সন্দেহ চোখে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো। আমি বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিলাম। ইশ আমার টা নিচ্ছিলো।
#চলবে
(রিভিউ না দিলে রিহানের সাথেই বিয়ে দিয়ে দিমু হু।)