গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #পর্বঃ_০৫ #লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার

0
437

#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_০৫
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
দেখতে দেখতে অনুরাধা ও প্রভার কলেজে কয়েকটা দিন সানন্দে অতিবাহিত হয়ে গেল। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অনেক কিছু বদলেছে। প্রভার সাথে আবিরের যতবারই দেখা হয়েছে প্রভা ততবারই লজ্জায় মূর্ছা গেছে। কখনো ঠিকভাবে কথাই বলতে পারে নি৷ এদিকে অনুরাধা হাত ধুয়ে পড়ে আছে প্রচার সাথে আবিরের রিলেশন করিয়ে দেওয়ার জন্য। এজন্য সে সবসময় প্রভাকে বলে আবিরের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে। কোন পড়া বুঝতে চাওয়ার ভান করে হলেও তার সাথে সময় কাটাতে কিন্তু লাজুক প্রভা এসব কথা কানে নেয় না৷ তবে অনুরাধা হাল ছাড়ার পাত্রী নয়। সেও নানারকম ভাবে সুযোগ খুঁজছে আবির ও প্রভার প্রেম করিয়ে দেবার।

এরকমই একদিন হঠাৎ কলেজে ঘোষণা করা হলো খুব শীঘ্রই কলেজ থেকে শিক্ষাসফরে যাওয়া হবে রাঙামাটিতে। সব ছাত্র-ছাত্রীই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল। অনুরাধাও এই শিক্ষা সফরে যেতে ইচ্ছুক। প্রভাকে এই ব্যাপারে বলতেই সে বলল,”তুই গেলে যা, আমি যাবো না।”

“এমন কেন রে তুই প্রভা?”

“তুই তো জানিসই আমার এসব ভালো লাগে না।”

অনুরাধা প্রভাকে নানাভাবে মানানোর চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়৷ শেষে হাল ছেড়ে বলে,
“ঠিক আছে। তুই না গেলে না যা। আমি একাই যাবো।”

~~~~~~~
শিক্ষাসফরে কারা যাবে কি যাবে না সেই নাম লিস্টে তোলার দায়িত্ব পড়েছে আবির, রায়ান, সৌভিক এই বন্ধুর হাতে। রায়ান ও সৌভিক যখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের আর্টসের ক্লাসে গিয়ে নাম লেখাতে থাকে তখন রায়ানের দুচোখ শুধু প্রভাকেই খুঁজতে থাকে। এরমধ্যে অনুরাধা এসে বলে,”আমার নামটা লিখিয়ে নাও।”

সৌভিক বিরক্তি নিয়ে বলে,”কি নাম তোমার বলো।”

“অনুরাধা দাস।”

“আচ্ছা, লিখিয়ে নিয়েছি যাও এখন।”

অনুরাধা যেতে যাবে এমন সময় রায়ান তাকে আটকে বলে,”তোমার ঐ সাধাসিধা বান্ধবী যাবে না?”

“না, ওর যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।”

বলেই অনুরাধা চলে আসে। সৌভিক রায়ানকে বলে,”তোর ব্যাড লাক ভাই। ভাবি শিক্ষাসফরে যাবে না।”

“ও যাবে।”

“যাবে মানে? ঐ মেয়েটা তো বললোই যে ও যেতে ইচ্ছুক নয়।”

“তোকে এত কিছু ভাবতে হবে না৷ তুই শুধু খাতায় প্রভার নামটা তুলে নে। টাকা আমি দিয়ে দেব।”

“এটা কিভাবে হয়?”

“তোকে যেটা বলেছি সেটা কর। বাকিটা আমি সামলে নেব।”

~~~~~~~
আজ কলেজ থেকে যারা যারা শিক্ষাসফরে যাবে তাদের নামের একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকায় নিজের নাম দেখে ভীষণ অবাক হয়ে গেল প্রভা। অবাক হয়ে অনুরাধাকে জিজ্ঞেস করল,”আমি তো শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্য নাম লেখাই নি। তাহলে আমার নাম এখানে এলো কিভাবে?”

“জানি না প্রভা। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“সত্যি করে বল তো তুই আমার নাম দিস নি তো?”

“তুই কি পাগল হলি নাকি? নিজেই শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্য কত কষ্ট করে ৫ হাজার টাকা ম্যানেজ করলাম তার উপর আমি আবার তোর নাম কিভাবে দেব?”

প্রভা ভেবে দেখে অনুরাধা তো ঠিকই বলছে। তাহলে তাঁর নামটা লেখালো কে? প্রভার ভাবনার মাঝেই অনুরাধা বলল,”কি রে কি ভাবছিস?”

“কিছু না।”

বলেই প্রভা কোথাও যেতে নেয়। অনুরাধা প্রভাকে আটকে বলে,”কই যাচ্ছিস রে তুই?”

“স্যারকে বলে আমার নামটা ক্যানসেল করতে হবে।”

“আরে থাক। তোর নাম যখন একবার উঠেই গেছে তখন তুই চল আমার সাথে। আমিও তো যাবো খুব মজা হবে।”

“আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।”

অনুরাধা কিছুক্ষণ ভেবে বললো,”এক মিনিট দাঁড়া, তোদের ক্লাসে শিক্ষাসফরে নাম কি আবির ভাইয়া লিখিয়েছে?”

“হুম। কেন?”

” তোকে কি কিছু জিজ্ঞেস করেছিল?”

“হ্যাঁ, বলেছিল শিক্ষা সফরে যেতে চাই নাকি। আমি সোজা না করে দিয়েছিলাম। তারপর আর কিছু বলেনি।”

“এবার আমি সবটা বুঝতে পারলাম।”

“কি বুঝলি?”

“আমার মনে হয় আবির ভাইয়াই তোর নাম লিখিয়েছে।”

“উনি এমন কেন করবেন?”

“তুই আসলেই একটা গাধী। তুই বুঝতে পারছিস না আবির ভাইয়া এমন কেন করল?”

“না, পারছি না।”

“আরে গবেট, আবির ভাইয়া চায় যে তুই সকলের সাথে শিক্ষাসফরে যাস।”

“উনি এমনটা কেন চাইবেন?”

“কারণ ওনার তোকে পছন্দ।”

“এসব কি বলছিস টা কি তুই?”

“যেটা সত্যি সেটাই।”

“তুই কিভাবে বুঝলি যে উনি আমায় ভালোবাসেন?”

“কারণ আমার সিক্স সেন্স আছে। সেদিন ক্যান্টিনে যখন আবির ভাইয়া যেচে তোর সাথে কথা বলতে এসেছিল তখনই তো আমি ওর চোখ দেখেই বুঝেছিলাম যে ও তোকে ভালোবাসে।”

প্রভা এবার একটু লজ্জা পেয়ে যায়। প্রভা বলে,”আরে দেখো মেয়ের অবস্থা। লজ্জায় ফর্সা গাল একদম লাল হয়ে গেছে।”

প্রভা বলল,”তাহলে এখন আমার কি করা উচিৎ?”

“তোর উচিৎ আমাদের সাথে শিক্ষাসফরে যাওয়া।”

“কিন্তু বাড়িতে কি বলব?”

“তোকে কিছু বলতে হবে না। আমি আন্টির সাথে কথা বলে নেব। আমি বললে আন্টি ঠিকই রাজি হবে।”

“আচ্ছা। যা ভালো মনে করিস কর।”

~~~~
আজ শিক্ষাসফরে যাওয়ার দিন। সকাল সকাল অনুরাধা এসে উপস্থিত হয়েছে প্রভাদের বাসায়। প্রজ্ঞা বেগম অনুরাধাকে ভালো করে পরখ করে নিলো। অনেক সুন্দর করে সেজেছে মেয়েটি। আর অন্যদিকে তার মেয়ে প্রভা। যার সাজসজ্জার প্রতি কোন আগ্রহই নেই। তিনি অনুরাধাকে বললেন,”প্রভাকে একটু দেখে রেখো। আগে কখনও তো একা এতদূর যায়নি। তোমার ভরসাতেই কিন্তু ওকে যেতে দিচ্ছি।”

“আপনি কোন চিন্তা করবেন না আন্টি। আমি ওর খেয়াল রাখব।”
~~~~~~~~

প্রভা ও অনুরাধা যথাসময়ে কলেজে এসে উপস্থিত হলো। কলেজে আসতেই তাদের সাথে আবিরের দেখা হয়ে গেল। আবির প্রভাকে দেখে বললো,”তুমি তাহলে শিক্ষাসফরে যাচ্ছ?”

প্রভা লাজুক হেসে বললো,”জ্বি।”

আবির আর কিছু বলতে যাবে তখনই সৌভিকের ডাক শুনে অন্যদিকে চলে গেল। সে যেতেই অনুরাধা বললো,”আমি আজকেও নোটিস করলাম। আবির ভাইয়া তোর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল।”

অনুরাধার কথায় প্রভা লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে থাকে। এরইমধ্যে তাদের একজন শিক্ষিকা মোছাঃআনোয়ারা বেগম সেখানে এসে তাদের বলেন,”তোমরা এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও গিয়ে বাসে উঠে পড়ো। এখনই আমরা রওনা দেব।”

অনুরাধা ও প্রভা বাসের দিকে যায়। প্রভা বাসে উঠে গিয়ে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খায়। রায়ান পিছন ফিরে তাকিয়ে বলে,”আবার ধাক্কা!”

প্রভা আমতা আমতা করে বলে,”সরি।”

“আবার সরি!!”

প্রভা আর কিছু ভাবতে না পেরে দ্রুত বাসে উঠে পড়ে। অন্যদিকে অনুরাধাও তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠতে গিয়ে উষ্ঠা খেয়ে পড়ে যেতে ধরে। তখনই হঠাৎ কারো দুটো বাহু তাকে আগলে নেয়। প্রভা অনুরাধাকে পড়ে যেতে দেখে চিৎকার করে বলে ওঠে,”অনু…”

অনুরাধার জান যেন বেডিয়ে যাওয়ার জোগাড়। নিজেকে শুন্যে আবিস্কার করে সে আলতো করে চোখ খুলতেই দেখতে পেল সৌভিককে। দেখে প্রচণ্ড অবাক হয়ে গেল। সৌভিক অনুরাধাকে সোজা করে দিয়ে বলে,”চোখ কোথায় থাকে তোমার? নাকি শুধু মুখই চলে। এখনই আমি না ধরলে তো পড়ে গিয়ে হাত-পা সব ভাঙতে।”

“ধন্যবাদ।”

বলেই সামনে এগিয়ে যায় অনুরাধা। অনুরাধা ও প্রভা গিয়ে একই সিটে পাশাপাশি বসে পড়ে। রায়ান প্রভার দিকে দেখে বারকয়েক। এরমধ্যে আবিরও বাসে উঠে পড়ে। আবির ও রায়ান দুজনে অনুরাধা ও প্রভার কাছে অবস্থিত একটি সিটেই বসে। যেখান থেকে প্রভাকে ভালোভাবেই দেখা যায়। রায়ান বারবার লুকিয়ে লুকিয়ে প্রভাকে দেখছিল। বাস রওনা দেয়৷ সারা রাস্তায় রায়ান যে কতবার লুকিয়ে প্রভাকে দেখেছে তার কোন ঠিক নেই। অন্যদিকে প্রভাও বারকয়েক লুকোচুরি তাকিয়েছে তাদের দিকে। তবে সে রায়ানের দিকে নয় তার চোখ ছিল আবিরের দিকে। এরইমধ্যে একবার তাদের চোখাচোখি হয়ে যায়। দুজনেই দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয়। দুজনের মনেই ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা ঘুরতে থাকে।

রায়ান ভাবছে,”সাধাসিধা মেয়েটা কি ভাবলো? যে আমি হ্যাংলার মতো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম? কিন্তু ও তো আমার দিকে তাকালো। তার মানে কি…”

রায়ান আবারো তাকালো প্রভার দিকে। এদিকে প্রভা ভাবলো,”উনি কি ভাবলেন? যে আমি ওনার বন্ধুকে..ছি ছি! আমি আর ভাবতে পারছি না। আমি কি করে এতটা নির্লজ্জ হলাম?”

বলেই সে নিজেকে গুটিয়ে নিলো।

(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়

(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here