এক_ফালি_সুখ🌼 |১৫| #তাসনিম_জাহান_মৌরিন

0
661

#এক_ফালি_সুখ🌼 |১৫|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
রাতুল খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো তন্নির হাতের দিকে। এরপর তন্নি চোখের ইশারা করলে খাবারটা মুখে নেয় রাতুল,তবে তার দৃষ্টি সম্পূর্নরূপে তন্নির দিকে আবদ্ধ। তার ফর্সা কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম এসে জমা হয়েছে, মুখশ্রী তে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। খুব মনোযোগ সহকারে রাতুলকে খাইয়ে দিচ্ছে সে, এমনভাবে মাছ বেছে দিচ্ছে যতটা রাতুল নিজেও জীবনে বাছেনি।

তন্নি একহাতে প্লেট ধরে অন্যহাতে খাইয়ে দিচ্ছে। তবে তাকে এই মহামূল্যবান কাজে বিরক্ত করছে কিছু অবাধ্য চুল। সেই সকালে বিনুনি করেছিল,তাই সামনে থেকে অনেকটা চুল এলোমেলো হয়ে চোখের উপর এসে পরছে। হাতের সাহায্য ব্যতীত তা সরাতেও পারছে না তন্নি। যার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে একটা অদ্ভুত কাজ করে বসলো রাতুল। নিজের বামহাত বারিয়ে তন্নির কপালে এসে পরা চুলগুলো অতি যত্নসহকারে কানের পিছনে গুঁজে দিলো সে।

মুহূর্তেই হাত থেমে গেলো তন্নির,বিস্মিত চোখে তাকালো রাতুল এর দিকে। খাবার প্রায় শেষ তখন, তন্নিকে এভাবে তাকাতে দেখে থতমত খেয়ে যায় রাতুল। দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নেয় সে,তন্নি এখনো ওভাবেই তাকিয়ে আছে।
রাতুল কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গলা ঝেড়ে বলে,
_”আই থিংক ইউ আর টায়ার্ড, তোমার বাড়ি গিয়ে রেস্ট নেওয়া উচিৎ।”

_”আপনি কি করে বুঝলেন আমি টায়ার্ড?”
একইভাবে তাকিয়ে কথাটা বললো তন্নি। রাতুল তাকালো তার দিকে, একটু আগে থাকা ক্লান্তির ছিটেফোঁটাও নেই তার মুখে,বরং যেন অত্যাধিক প্রফুল্ল লাগছে তাকে। রাতুল স্মিত হেসে বলে,
_”ওটাতো এমনিতেই বোঝা যায়।”

_”এমনিতেই বুঝে গেলেন?”

চুপ করে যায় রাতুল। তন্নি এবার আর তাকে অপ্রস্তুত করতে চাইলো না,তাই প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে বললো,
_”যাকগে, রাতের খাবার ও এখানেই রাখা আছে। শুধু গরম করে খেয়ে নেবেন কেমন?”

মাথা নাড়ায় রাতুল। তন্নি চেয়ার থেকে উঠে বেসিনে গিয়ে নিজের হাত ধুয়ে নেয়। রাতুলও স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে পাশ থেকে নিজের ফোনটা হাতে নেয়। স্ক্রোলিং করতে গিয়ে একটা নিউজ এ চোখ আটকে যায় তার। তন্নিও এতক্ষনে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। রাতুল একবার ফোনের দিকে আরেকবার তন্নির দিকে তাকাচ্ছে। তা দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয় তন্নি। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রাতুলের দিকে তাকাতেই সে ফোনটা এগিয়ে দেয়। তন্নি ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রিনে তূর্য আর তার একটা ছবি ভেসে ওঠে, নাটকেরই একটা শুট এর ছবি। কোনো একটা ফেইসবুক পেইজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে। ক্যাপশন এ লিখা, “তবে কি এবার সত্যি সত্যিই প্রেমের সম্পর্কে জড়ালেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ তন্নি এবং তূর্য? এ যেন রাবনে বানাদি জোড়ি।”

রাগে ফুঁসতে শুরু করে তন্নি,নিজের ফোন হলে বোধ হয় এখনি ছুড়ে মারতো। তার উপর এমন বানোয়াট নিউজ রাতুলের সামনেই পরলো? যদি রাতুলও এমন কিছু ভেবে নেয়? তন্নি রাতুলের দিকে তাকিয়ে রেগেমেগে বলতে থাকে,
_”এদের না কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি দেওয়া উচিৎ। কিসব বানোয়াট নিউজ বানিয়ে রেখেছে! নাটকের একটা সিন এমনভাবে ক্যাপশন দিচ্ছে যেন…। এই পেজ যদি আমি নষ্ট না করে দিয়েছি! শেষ পর্যন্ত তূর্য! আরে তূর্য তো আমার ভাই এর…”

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেই যাচ্ছে তন্নি। রাতুল উঠে দাঁড়িয়ে তাকে থামিয়ে বলে,
_”আরে এত হাইপার হচ্ছো কেন? ওদের তো কাজই এমন নিউজ বানানো, তূর্য আর তোমার রিলেশন কেমন তা তো আমরা সবাই ই জানি।”

_”তবুও ওরা এমন নিউজ করবে কেন?”

রাতুল হাসতে লাগলো এবার। তন্নির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে আরেকটু নিচে গেলো স্ক্রোল করে। আরেকটা নিউজ দেখে আরো জোরেজোরে হাসতে শুরু করে রাতুল। নিউজটাতে আবরাজ আর তূর্যের একটা মুখোমুখি ছবি এডিট করা,ক্যাপশন এ দেওয়া,”দ্বিতীয়বারের মতো একসঙ্গে কাজ করছেন বর্তমানে মেয়েদের দুই হার্টথ্রোব ইলহাম আবসার তূর্য এবং আবরাজ শাহ। তবে কি আরো এক ধামাকার অপেক্ষা?”

তন্নিও এবার হাসতে শুরু করলো,রাতুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
_”এরা একটা জিনিস মিস করেছে, তূর্য আর আবরাজ ভাই এর সঙ্গে দিয়াও আছে এই নাটকে। সেইরকম একটা মজা হবে তাইনা?”

_”একদম”

_______
_”আর যাওয়া যাবেনা, সামনে রাস্তা বন্ধ।”

_”আমিতো একটু আগেও এলাম,তখন তো বন্ধ ছিলোনা।”

_”কি জানি আফা, আপনেই দেখেন। এই জায়গা দিয়ে যাওয়া সম্ভব?”

সামনের দিকে তাকায় মৌরিন,আসলেই যাওয়া সম্ভব নয়। অনেক মানুষ জড়ো হয়ে আছে,ক্যামেরা,লাইটিং এ ভর্তি। ছোট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে রিক্সা থেকে নেমে গেলো মৌরিন, একটা শপিং কমপ্লেক্স এর সামনে জায়গাটা। রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে সামনে এগিয়ে যায় মৌরিন,এখন কিছুটা সামনে এগিয়ে আবার নতুন রিক্সা নিতে হবে। কাঠফাটা রোদের মধ্যে এই বারতি ঝামেলায় বিরক্ত হয় মৌরিন। ভিড় এর মধ্যে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই মৌরিন এর, বোঝাই যাচ্ছে কোনো সেলিব্রিটি আছে এখানে। মৌরিন পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই তার কানে আসে কিছু কথা।

_”রিসেন্টলি আপনার নতুন কাজের খবর পেলাম, খুব দ্রুতই নাকি শুটিং শুরু হচ্ছে। আবারো আপনাকে আর তূর্যকে একসঙ্গে দেখতে পাবে শুনে কিন্তু মেয়েরা ভীষণ এক্সাইটেড। আপনি কতটা এক্সাইটেড এই কাজ নিয়ে?”

_”খুব বেশি এক্সাইটেড বলা যায়না, আমার কাছে এগুলো খুব বেশি ম্যাটার করেনা। আর আমি অলওয়েজ নিজের কাজের দিকে নজর দেই, বাকিরা কারা থাকলো না থাকলো তা নিয়ে আমি ভাবিনা।”

_”অনেক ক্ষেত্রে শোনা যায়, আপনি নাকি তূর্যকে হিংসে করেন। এই কথা কতটা সত্য?”

_”হু ইজ তূর্য ম্যান? ও ইন্ডাস্ট্রি তে এসেছে কতদিন? ওর সাথে আমি হিংসে কেনই বা করবো? বাট আই থিংক, সিনিয়র অ্যাকটর দের সাথে সবার বিহেভিয়ার টা ঠিক করা উচিৎ।”

_”কথাটা কি ইনডিরেক্টলি তূর্যকে বললেন?”

_”সবাইকেই বললাম, নতুন এসে আবার অনেকে নিজেদের বড় ভাবতে শুরু করে দেয়। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু টক আবাউট দিস,অ্যানাদার কুয়েশ্চেন?”

ভিড় থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলো মৌরিন। চোখে না দেখলেও টুকটাক কথা শুনে বুঝলো এখানে সেই আবরাজ ই এসেছে। মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো মৌরিন। কেমন মানুষ এরা? জনসম্মুখে ইন্ডাস্ট্রির অন্য একজনকে নিয়ে এমন কথা বলছে!
অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই, তূর্যও এমন ই করবে তা নিয়ে মৌরিন এর মনে কোনো সন্দেহ নেই। অহংকার পতনের মূল জানা সত্ত্বেও এরা নিজেদের নিয়ে অহংকার করতে ব্যস্ত,নিজে উপরে যেতে ব্যাস্ত,অন্যকে ছোট করতে ব্যস্ত। অথচ এরা বুঝতেই পারছে না, অন্যকে ছোট করে কখনো নিজে বড় হওয়া যায়না।

মৌরিন অবাক হলো কেবল একটি বিষয়ে, পাবলিকলি শত্রুতা প্রকাশ করা দেখে। সহসা এমনটা হয়না, এসব ক্ষেত্রে অনেকের মাঝেই শত্রুতা থাকে তবে গোপনে, তারা এগুলো কখনই মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করেনা খুব একটা। তবে এখানে শুধু গোপনে নয়, প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে দুজনের মাঝে। শুটিং শুরু হওয়ার আগেই এমনটা হচ্ছে, তাহলে এর পর কি কি হবে?

#চলবে?
[সেহেরি তে বোনাস পার্ট দিতে পারিনি, তাই এটাই বোনাস পার্ট হিসেবে নাও। ইফতার এর পর যথারীতি প্রতিদিন এর পর্ব চলে আসবে ইনশাল্লাহ।
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here