এক_ফালি_সুখ |১৭| #তাসনিম_জাহান_মৌরিন

0
351

#গল্পঃ_এক_ফালি_সুখ |১৭|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
—–
দীর্ঘ ত্রিশ মিনিট যাবৎ অপেক্ষা করছে তূর্য,তবে মৌরিন তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলো না। যদিও এটা ফেইক আইডি, অচেনা ব্যক্তির রিকুয়েস্ট অনেকেই এক্সেপ্ট করেনা এটাই স্বাভাবিক। তবে বিষয়টা তূর্যের ইগোতে লাগলো, নিজের উপর রাগ পোষণ করেই ছাঁদ থেকে সোজা ঘরে চলে এলো সে। ভাবতেই অবাক লাগছে, মৌরিন এর সাথে কথা বলার জন্য কিনা ফেইক আইডি খুললো,কিন্তু সেই মৌরিন ই তার রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলো না।

ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে কিছুক্ষন এদিক ওদিক পায়চারি করলো তূর্য,কপালের ভাজগুলোতে রাগের আভা স্পষ্ট,মুখভঙ্গি গম্ভীর। না চাইতেই নিজেকে আবারো বোঝালো,”হয়তো মৌরিন অনলাইন এই আসেনি”।
আবারো খানিক বাদে ফোনটা হাতে নিলো তূর্য। নাহ, এখনো এক্সেপ্ট হয়নি রিকুয়েস্ট টা। তবে খেয়াল করলো মৌরিন এর আইডিতে ফ্রেন্ডস এর সংখ্যা দুজন বেড়ে গেছে,ফলোয়ার সংখ্যা বাড়েনি। অর্থাৎ মৌরিন নিজে কিছুক্ষনের মধ্যে এই দুজনের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছে,কিন্তু তূর্যের সেই ফেইক আইডি থেকে দেওয়া রিকুয়েস্ট সে এক্সেপ্ট করলো না!

রাগটা টগবগ করে বেড়ে গেলো,নাক ফুলিয়ে কয়েকবার নিঃশ্বাস ছেড়ে আইডি থেকে বেরিয়ে এলো তূর্য। এই মুহূর্তে তার অকারণেই রাগ হচ্ছে মৌরিন এর উপর। তার মনে হচ্ছে মৌরিন ভাব দেখিয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করছে না।
_”না করুক,আমার কি!”
কথাটা ভেবেই নিজের আসল আইডি তে ঢুকলো তূর্য। নোটিফিকেশন এর কারণে আইডি হ্যাং হওয়ার পালা, এই আইডিটা তূর্যের আসল নামেই। নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে তূর্যের সামনে এলো আবরাজের সেই ক্লিপ, ইনডিরেক্টলি সে তূর্যকে অপমান করেছে সেখানে। কমেন্ট বক্সে অনেকে মেনশন দিয়েছে তূর্যকে। কিছু কমেন্টস চেক করে বাঁকা হাসলো তূর্য, তার সব ফ্যান ফলোয়ারস রা একপ্রকার ঝড় তুলে ফেলেছে সেখানে। মাথার পিছনে হাত দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো তূর্য। চোখ বন্ধ করে মুখ খুলে বড় নিঃশ্বাস ছাড়লো। নিজের মনকে শান্ত করে ভাবতে চাইলো,
_”ইউ আর দা বেস্ট তূর্য, আমার পথে কাটা এলে তা নিজেই উপড়ে পরবে। বাট আই ওয়ান্ট মোর এন্ড মোর এন্ড মোর… দুদিনের মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করা আমার সঙ্গে যায়না,একদমই যায়না..”

______
জ্বরে কাবু হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে নির্ঝর, এই ফ্ল্যাটে মূলত সে আর তার এক বন্ধুই থাকে। সেই বন্ধু আবার দুদিন আগে নিজের বাড়িতে গেছে,তাই ফ্ল্যাটে একাই ছিলো নির্ঝর কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত। তবে এই আধাঘণ্টা আগেই বাসায় উপস্থিত হয়েছে জ্যোতি এবং তার মা। সিলেটের বাড়ি খালি রেখে জ্যোতির মা বাবা মেয়েকে সঙ্গ দিতে দু বছর হলো ঢাকাতেই থাকছেন। নির্ঝর কে জন্ম থেকে দেখছেন তিনি,ভীষণ স্নেহ করে তাকে,নিজের ছেলে না থাকায় নির্ঝর কেই ছেলের চোখে দেখে। এত জ্বর নিয়ে ছেলেটা একা বাসায় থাকবে তা আর হতে দেননি তিনি, তাইতো রাতে রান্না করেই জ্যোতিকে নিয়ে চলে এসেছেন। আজকে তারা এখানেই থাকবে।

কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলো নির্ঝর, একটু আগেই জ্বরটা কম ছিলো বলে কিছু খেতে পেরেছে। এখন আবার সেই গা কাপানো জ্বর। এমনটাই হয় তার ক্ষেত্রে,জ্বর দুদিন থাকলে সেই দুদিনেই ভুগিয়ে ছাড়বে।
মুখের উপর থেকে কেউ কম্বলটা সরিয়ে নিতেই চোখ মুখ কুঁচকে নেয় নির্ঝর। বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলতেই সামনে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জ্যোতিকে।

_”সমস্যা কি? সরালি কেন এটা?”

জ্যোতি বিছানায় বসে বলে,
_”ওমা,তুমি জানোনা? জ্বর হলে এমন কম্বল পেঁচিয়ে রাখতে হয়না। আরো ফ্যান ছেড়ে দিতে হয়, ফ্যানটা ছেড়ে দেই?”

এমন সময় জ্যোতির মা জেসমিন হাতে একটা বোলে পানি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করতেই নির্ঝর তার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
_”মামনি তোমার মেয়েকে কেন আনতে গেলে বলতো? ও তো আমায় সুস্থ করার বদলে আরো অসুস্থ বানিয়ে দেবে।”

জ্যোতি বিপরীতে গিয়ে বলে,
_”আমি কি ভুল কিছু বলেছি আম্মু?”

জেসমিন বোল টা রেখে বললো,
_”এই ব্যাপারে কিন্তু জ্যোতি ভুল কিছু বলেনি নির্ঝর,এটা মানতে হবে।”

নির্ঝর কোনো উত্তর না দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। জেসমিন জ্যোতির উদ্দেশ্যে বললেন,
_”ওর মাথায় জলপট্টি দিয়ে দে তো। শুধু ঔষধে জ্বর নামবে বলে মনে হচ্ছেনা,আমি একটু প্লেট গুলো গুছিয়ে রেখে আসি।”

চলে গেলেন জেসমিন। নির্ঝর মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। জ্যোতি পানিতে রুমালটা হালকা ভিজিয়ে প্রথমেই নির্ঝর এর গালে চেপে ধরতে গেল,তবে নির্ঝর ঠিক তার আগেই ওর হাত চেপে ধরে বলে,
_”হয়েছে,তোর আর সেবা করতে হবে না। যা তো এখান থেকে,ঘুমোতে দে আমাকে।”

জ্যোতি হাতটা ছাড়িয়ে রুমালটা চেপে নিয়ে নির্ঝর এর কপালে ঠিককরে লেপ্টে দিয়ে রাগী ভাব নিয়ে বলে,
_”তা আর করবো কেন? তোমার দিয়া এসেতো সেবা করে দিয়ে যাবে তাইনা? তা এইযে জ্বরে বেহাল অবস্থা, সে খোজ নিয়েছে একবারো? নেবেও না, ঐ শেষ পর্যন্ত আমার কাছেই ফিরতে হবে।”

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে বলে,
_”তার মানে?”

_”কিছুনা।”

ছোট করে উত্তর দেয় জ্যোতি। নির্ঝর কপাল থেকে রুমালটা সরিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বলে,
_”চশমাটা দে তো।”

জ্যোতি পাশ থেকে চশমাটা নিয়ে নির্ঝরের হাতে দিয়ে বলে,
_”চশমা দিয়ে কি করবে এখন?”

নির্ঝর চশমাটা চোখে দিয়ে আবারো জ্যোতির দিকে তাকিয়ে বলে,
_”টেবিলের ড্রয়ারে একটা জিনিস রাখা আছে,নিয়ে আয়।”

জ্যোতি ভ্রু কুঁচকে টেবিলের ড্রয়ার থেকে সেই বাক্সটা নিয়ে এসে বলে,
_”আমাকে কি চাকর মনে হয় নাকি?”

_”খুলে দেখ ওটা।”

জ্যোতি একবার তাকায় হাতে থাকা বাক্সটার দিকে, কোনো ঘড়ির বক্স মনে হচ্ছে। নির্ঝর এর কথায় সেটা খুলতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে জ্যোতির। নির্ঝর এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_”এটা আমার?”

_”নাহ,দিয়ার। তোর হাতে পরিয়ে চেক করাচ্ছি আরকি।”

ভেঙচি কেটে হাসিমুখে ঘড়িটা হাতে পরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে জ্যোতি। প্রতিবার নির্ঝর ওকে জন্মদিন এর এক সপ্তাহ আগেই কিছু না কিছু গিফট দিয়ে দেয়, তবে এবার না দেওয়ায় একটু মন খারাপ ও হয়েছিল তার।

_”দুদিন আগেই দিয়ে দিলাম, এবার আর খ্যাঁচখ্যাঁচ করবি না আমার সাথে।”

_”ভালোই তো দিনক্ষণ মনে রাখছো, প্রেমে টেমে পরলে নাকি আমার?”

দু সেকেন্ড জ্যোতির দিকে তাকিয়ে থেকে দম ফাটিয়ে হাসতে লাগলো নির্ঝর,জ্যোতি সরু চোখে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। অনেক্ষন বাদে নির্ঝর হাসি থামিয়ে বললো,
_”দারুণ ইন্টারটেইনমেন্ট দিলি কিন্তু। এবার যা তো এখান থেকে, ঘুমোতে দে।”

কম্বল টা টেনে নিয়ে আবারো শুয়ে পরলো নির্ঝর। জ্যোতি কিছুক্ষন বসে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে, এটা নতুন কিছু নয়। নির্ঝর সবকিছুই যেন মজা হিসেবে নেয়। তবে বর্তমানে তার থেকে হাতের ঘড়ির উপরই বেশি মনোযোগ দিলো জ্যোতি। নিজের ফোনটা হাতে দিয়ে কয়েকশো ছবি তুলতে লাগলো ঘড়িটার সঙ্গে।

_______
বিছানায় বসে নিজের চুল বেধে নিচ্ছিলো মৌরিন,চুল খোলা রেখে তার শোয়ার অভ্যেস নেই। ফোনটা পাশেই রাখা ছিলো। চুল বেধে চিরুনি রেখে এসে ফোনটা হাতে নিতেই সেখানে রিমির কল আসে। মৌরিন এর মনে পরলো রিমি তাকে সকালেও দুবার কল করেছিল, শুটিং সেটে থাকায় তখন আর কল রিসিভ করেনি। আর দেড়ি না করে ফোনটা রিসিভ করতেই রিমি একনাগাড়ে বলতে লাগলো,
_”ফোন কই রাখিস তুই বইন? মানে মানুষ ম*রে গেলেও তো বোধ হয় তোকে পাওয়া যাবে না।”

_”কাজে ছিলাম জানিস ই তো।”

_”তাহলে কল ব্যাক তো করবি অন্তত।”

_”মনে ছিলোনা রে,নাহলে তো করতাম ই। কিন্তু তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেন? হয়েছে টা কি?”

_”কি হয়েছে সেটা বললে তোর মাথায় বাজ পরবে।”

_”হেঁয়ালি না করে কি হয়েছে বল।”

বিরক্তি নিয়েই শেষ কথাটা বলে মৌরিন। তবে রিমির পরবর্তী কথা শুনে চুপ করে যায় সে।

(চলবে)…
#এক_ফালি_সুখ

(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here