ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (৬৯)

0
551

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৬৯)
কুলকুচি করে ফুটপাতে পিক ফেললো রোজী। পর পর তৃতীয় বার সেম কাজটা করার সময় পাশ ঘেঁষে হেটে যাওয়া লোকটা খেঁক করে উঠলো।
” সাইডে পিক ফেলা যায়না? রাস্তার মধ্যে পিক ফেলে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা ভদ্রতা কি জিনিস কিচ্ছু শিখেনি। ”

রোজী দেখলো সে রাস্তা থেকে তিন কদম দূরে আছে। লোকটার উপর তো পরে নি। এরকম বিহেভ করার কি আছে? ছুটির পর গেট থেকে এটিএম বুথ এর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তামিম বলেছে এখানে দাঁড়াতে। সে এসে নিয়ে যাবে। দশমিনিট হতে চললো তামিমের খোঁজ নেই। পানির বোতল ব্যাগে ভরে রোজী আবার অপেক্ষা করতে লাগলো। তামিমের দেখা মিললো আরও মিনিট সাতেক পর। গেইট থেকে বের হয়ে এলো। গাড়ি কোথায়? গাড়ি ছাড়াই এসেছে নাকি? তামিম এসে কিছু না বলেই রোজীর হাত মুঠোয় নিয়ে নিলো। হাতের উল্টো পাশ গালের উপর ছুঁয়ে দেখলো। প্রশ্ন করলো, ” য়্যা য়্যু ফিলিং সিক?” রোজী মাথা নাড়ালো।
” কই? নাতো।”

” ক্লাসের মাঝে তিনবার ঘুমিয়েছো। ”

রোজী আমতা আমতা করতে লাগলো।
” এসো। ”

তামিম রোজীকে নিয়ে সামান্য পেছনের দিকে হেঁটে গাড়িতে উঠলো। রোজী প্রশ্ন করলো, ”
আপনি কি অফিস রুমে ছিলেন? আমি অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম। ”

” হুম। বউ যদি প্রথম ক্লাসে গিয়েই তিনবার ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে হাজব্যান্ড হিসেবে আমার তো অফিস রুমেই থাকার কথা তাই না ? স্যার দের সামনে লজ্জা পাওয়ার জন্য। ”

স্টিয়ারিং এ বারি দিয়ে তামিম রোজীর দিকে ঘুরে বসে। হাত দুটো দুহাতে আবদ্ধ করে তার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে চোখে চোখ রাখলো। জিজ্ঞেস করল, ” টেল মি ওয়ান থিং রোজ? আমাদের নিজেদের মধ্যে ডিসটেন্স কমানোর কথা ছিল। স্বাভাবিক সংসার জীবন যাপন করার কথা ছিল। আমি তো কোথাও তোমাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমি রাত করে বাসায় ফিরে দেখি তুমি ঘুমাচ্ছো। আবার দেখি তুমি অসুস্থ। বাবার বাড়ি যাবার জন্য হাই হুতাশ করছো। ফাস্ট ডে তে তোমার নামে কমপ্লেইন এলো। দিন দিন চেহারা খারাপ করছো। কি নিয়ে এতো ডিপ্রেসড? তুমি কেনো পিছিয়ে যাচ্ছো? আমি তোমার হাজব্যান্ড। আমাকে বলতে পারো। তোমার কি এসবে ইন্টারেস্ট নেই? ”

” আপনার আছে?”

” আমি কি তোমাকে নিয়ে পজিটিভ নই? ”

রোজী চুপ রইলো। তামিম কি করবে? রাগ কমাতে নিজের চুল নিজেই খামচে ধরলো। গাড়ির জানালা খুলে দিয়ে ফুস ফুস করে শ্বাস ছাড়লো। মিনিট দুয়েক পর মাথা নাড়াতে নাড়াতে গাড়ি স্টার্ট করলো। বাসায় ঢুকার আগে রোজীর দিকে নিজের রুমাল এগিয়ে দিলো।
” চোখ মুখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে বাড়িতে ঢুকো। তোমাকে বকা দেয়া হয়নি যে সারা রাস্তা চোখের জল ফেলতে হবে। ”

তামিমের রুঢ় ব্যবহারে রোজী আবার ফুঁপিয়ে উঠলো।
রোজী চোখে মুখে জল ছিটিয়ে মুছে ঠিকাঠাক হয়ে বাড়িতে ঢুকরো। তখনই লাবিবা এসে সামনে দাঁড়ালো। ঘুরে ঘুরে রোজীকে দেখলো। রোজীর দিকে অসহায় দৃষ্টি ফেললো। মাথা চুলকিয়ে বিড়বিড় করলো,
” আমার বড় জা এবার স্কুল ছাত্রী হয়ে গেলো!”

” স্কুল ছাত্রী না। আমি তো ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার। ”

” তাহলে আমি হলাম তোমার হোম টিউটর। ” বলেই হাসতে লাগলো। রোজীও মুচকি হাসলো। লাবিবাকে বললো, ” এখানেই থাকো। আমি চেঞ্জ করে আসছি। অনেক গল্প বলার আছে। ”

রোজীকে সাদা একটা কামিজে সাদামাটা চেহারায় লাবিবার ভালো লাগলো না। যেখানে লাবিবা নিজের গায়ে সবথেকে আনকম্ফোর্টেবল শাড়িটা সর্বদা জড়িয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানে রোজী কেনো এভাবে থাকবে? জবেদা নেই। রোজী নিজেই খাবার গরম করে লাবিবার পাশে খেতে বসেছে। লাবিবাকে জিজ্ঞেস করলো, ” খেয়েছো তুমি?”

লাবিবা বললো, ” খেয়েছি।”

লাবিবা বসে বসে রোজীর খাওয়া দেখতে লাগলো। কিছুক্ষন পর জানতে চাইলো, ” আপু আমাকে দেখে কেমন লাগছে বলোতো? একদম বউ বউ না?”

” মাশাআল্লাহ। অনেক সুন্দর।”

” তোমার দেবর আমার জন্য এত্তোগুলো কালারফুল ড্রেস নিয়ে এসেছে। আমাকে সাদাসিধে দেখলেই রেগে যায়। বউদের সব সময় সুন্দর সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে থাকতে হয়। যাতে তাদের হাজব্যান্ড এর চোখে সর্বদা সবচেয়ে সুন্দরী নারী হয়ে থাকতে পারে। আমার কাকিমনি তাই বলতো। ”

” ও আচ্ছা। ”

রোজী কি যেন মনে মনে ভাবলো। তারপর বললো,
” আমার কাছে আন ইজি লাগে। ”

” কি?”

” বলতে পারবোনা। ”

” চেষ্টা করো। একটু একটু করে। দেখবে ঠিকই একসময় ভাইয়া তোমার দিক থেকে নজর সরাতে চাইবেনা। একটা মেয়ের যোগ্যতা তার ব্যক্তিগত সম্পদ, আর রূপ তার ব্যক্তিগত পুরুষের সম্পদ। একটা ছাড়া আরেকটা কোনো না কোনো দিক থেকে অসম্পূর্ণ। কোনটাই হেলা করা উচিত নয়। ”

” জানি। ”

” তাহলে কি করতে চাইছো? ”

” সময় সবকিছু ঠিক করে দেয় । ”

বলে রোজী লাবিবার চোখে চোখ রাখলো। লাবিবা উপর নীচ মাথায় ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো। হ্যা। সময় সবকিছু ঠিক করে দেয়। একসময় এ বাড়িতে আসার জন্য লাবিবা কতো প্রে করেছে আজ সে এই বাড়িতে। খান সাহেবের অনুপস্থিতিতেও তার সবকিছু লাবিবাকে অনুভবে জড়িয়ে রাখে। খান সাহেব কে মানানোর জন্য কতো কি করেছে আজ খান সাহেব তার দিওয়ানা হয়ে আছে। রোজীর লাইফে কত বড় ক্রাইসিস ছিলো আজ সঠিক মানুষটার দেখা মিলেছে। শুধু পা বাড়ানোর অপেক্ষা। তামিমের জীবনের বিষ নির্মূল হয়েছে।

রোজী যেনো লাবিবার কথা শুনলো। টকটকে হলুদ রঙের একটা শাড়ি পড়ে নিলো। ফর্সা গায়ে জ্বলজ্বল করতে লাগলো ‌। লাবিবা তাকিয়ে আছে দেখে রোজী একটু লজ্জাও পেলো। সোহানা ছেলে বউদের সাথে গল্প করার সময় খেয়াল করলো রোজী শাড়ি পড়েছে। মনে মনে হাসলো। সাথে আসতে বলে নিজের রুমে নিয়ে এলো। সিম্পল এক সেট গহনা বের করে রোজীকে পড়িয়ে দিলো। রোজী আপত্তি জানালো। বললো, ” মামুনী আমার আছে তো অনেক। ”

” এটাতে সুন্দর লাগবে। পড়ে থাকো।”

রাতে তামিম এসে দেখলো রোজী ঘুমিয়ে পড়েছে। বিছানার কোনায় গুটিশুটি হয়ে কাথা মোড়ে শুয়ে আছে। নিঃশব্দে রোজীর পাশে এসে দাঁড়াল। স্নিগ্ধ মুখটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ফ্রেশ হয়ে এসে পাশেই শুয়ে পড়লো। দু চোখে ঘুম ধরা দিলো না। সিলিং এর দিকে তাকিয়ে রইলো। মনের খেয়ালে প্রাক্তনের মুখটা ভেসে উঠলো। সুন্দরী মায়াময়ী একখানা মুখ। মারাত্মক ভাবে আকর্ষন করে। ভুলে যাওয়া কি এতোই সহজ? সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো কখনো মুছে যায়না। স্মৃতি হয়ে মনের এক কোনে পড়ে থাকে। তামিম খুব যত্ন করে তুলে রেখেছে ভালো সময়ের স্মৃতি গুলোকে। আর খারাপ সময়টাকে ভুলে এগিয়ে যেতে নিয়ে এসেছে পাশেই শুয়ে থাকা মেয়েটাকে। তামিম হাত বাড়িয়ে রোজীকে নিজের বাহুতে টেনে আনলো। মেয়েটা ঘুমিয়ে কাদা। ভারী শ্বাস ফেলছে। তামিম দু আঙ্গুলে থুতনি তুলে ধরলো। মুখের কাছে এসে ডাকলো, ” রোজ ? হেই রোজ?”
সাড়া পেলো না। এক বাহুতে আগলে নিয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। সময়ের পর সময় ব্যয় করে ঠিক করলো সে এই মেয়েটির প্রতি কেয়ারিং হবে। যতোটা একজন হাজব্যান্ড তার ওয়াইফের প্রতি নরমাল বন্ডিং এ হয়। মেয়েটিকে তার দিকে টেনে আনবে। তাকে ঘিরেই চলবে এই মেয়েটির জীবন। টকটকে এই হলুদ শাড়িটার মতোন রঙিন করে তুলবে বাকিটা জীবন। মানুষের জীবনের গ্যারান্টি নেই। যতদিন বেঁচে আছে এই মেয়েটাকে নিয়েই সকল চিন্তা,ভাবনা ,সময় গুলো পাড় করবে। ভাসা জীবনের একটা ভীত গড়া চাই। যাতে এই কম বয়সী মেয়েটা তামিমের অবর্তমানে নিজেই নিজের ছাদ হতে পারে। যদিও কেউ তাকে উপড়ে ফেলার চিন্তা করবে না তবুও একটা শক্ত ভীত গেড়ে রাখা চাই। তামিম আছে। রিস্ক নেবার কোনো প্রয়োজন নেই। তামিমের ভাবনার মাঝেই রোজী একটু নড়ে চড়ে উঠলো। তামিম চিন্তিত হয়েই রোজীর কপালে চুমু দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।

ভোর চারটার দিকে তানভীর কাজ শেষ করলো। কতো কাজ যে জমে আছে একে একে শেষ করতে হবে। ল্যাপটপটা বন্ধ করে বিছানায় দৃষ্টি মেললো। হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে লাবিবা। গোলাপি টপসটা চেঞ্জ করেনি। সিঙ্গাপুর থেকে আসার সময় দুটো লাগেজ ভর্তি ড্রেস নিয়ে এসেছে তানভীর। সব তার এই ফোটা গোলাপটার জন্য। কবিরের থেকে জানতে পেরেছিলো ইন্ডিয়া গেলেই হাতে বড় একটা লিস্ট ধরিয়ে দিতো। কসমেটিকস আর ড্রেসের। এর জন্য এক টাকাও কবিরকে সে দিতো না। গিফট বলে তর্ক করতো। উল্টো মন মতো জিনিস না হলে কেঁদে কেটে একসার করে ফেলতো। ইসমাইল অবশ্য জানার পর কবিরের হাতে টাকা ধরিয়ে দিতো। কিন্তু ঐ টাকায় তো আর হতোনা। ইসমাইল জানতো ড্রেস কেনার কথা। কিন্তু আলাদা যে চকলেট, কসমেটিকস আনা হতো কবির তো আর এতো টাকার হিসাব দিতে পারতো না। সে রোজগারের মানুষ। বোনের জন্য এনেছে এতে যদি টাকা চায় কাকার কাছে বিষয়টা কেমন লাগে? তবে তানভীরের সাথে লিংক হবার পর কড়ায় গন্ডায় সব টাকা তানভীরের থেকে আদায় করেছে। লাবিবার পছন্দ গাউন হিজাব। কবিরের নাম ধরে কত গাউন হিজাব কিনে যে লাবিবাকে পাঠিয়েছে তার হিসাব নেই। প্রাপ্তি তো তখনই হতো যখন সেই হিজাব গাউনে আবৃত নারীকে সে আড়ালে দাঁড়িয়ে চোখ জুড়িয়ে দেখতো। সেদিন রাতে অবশ্য ভালো ঘুম হতো। তানভীর এখন স্বাচ্ছন্দ্য মতো শপিং করতে পারে। লাবিবাকে সব থেকে সুন্দর দেখায় শাড়িতে তার থেকেও সুন্দর লাগে ওয়েস্টানে। গাউনে অর্ধেক সৌন্দর্য চাপা পড়ে যায়। লোকালয়ে সেটাই ঠিক আছে। শাড়ীতে ওয়েস্টানে লাবিবা শুধু তানভীরের জন্যই সাজবে।

বাহিরে আঁধার কেটে আলোর ছটা লেগেছে। একটু পরেই লাবিবা উঠে পরবে ফজর পড়তে। তানভীরের মোটেই ভালো লাগছে না। কতো গুলো রাত সে বউকে আদর করে না। কাছে পায়না। ঠিকঠাক ঘুমাতেও পারে না। আর এই মেয়ে যেই দেখেছে তানভীর বিদেশ থেকে ব্যাক করেছে।‌ তখন থেকে শান্তিতে ঘুমিয়েই যাচ্ছে। একটা বার ও নিজে থেকে কাছে টানছে না। আর সে নাকি জামাইয়ের জন্য পাগল! এসব পাগলের নমুনা? তানভীর বসে রইল লাবিবার উঠার অপেক্ষায় । কিন্তু সে পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে পারলো না। অনেক ঘুমানো হয়েছে। আর না। হুট করেই তানভীর ডেকে উঠলো, ” জান! এই জান! জান? ”

তানভীরের চিৎকার শুনে লাবিবা হুড়মুড় করে উঠে বসলো। চোখ খুলতে না পারলেও টেনে খুলার চেষ্টা করলো। তানভীরের আওয়াজের সাথে দৃষ্টি তাক করলো। তার থেকে কিছুটা দূরত্বে সোফায় বসে ডেকে যাচ্ছে তাকে। আচমকা এমনটায় লাবিবার হার্টবিট বেড়ে গেছে। দু হাতে বুক চেপে ধরলো। একরাশ চিন্তা স্বরে জানতে চাইলো, ” কি কি কি? কি হয়েছে?”

” আসবে কাছে?”

” কেন ?”

তানভীর আঙুল তাক করে দেখালো,
” বুকে ব্যাথা হচ্ছে। এইখানে।”

কয়েকটা মাস গ্যাপ থাকায় ঠিকঠাক লিখতে পারছিলাম না। চারপর্বের পর আজ লিখে নিজেকে সন্তুষ্ট করতে পারলাম। আশাকরি এবার থেকে আর অসন্তষ্ট থাকবো না রাখবো ও না। যারা এখনো জানতে পারেনি গল্পটা শুরু হয়েছে প্রিয় পাঠক তাদের জানিয়ে দিবেন। অনান্য পাঠকদের পড়ার জন্য সাজেষ্ট করবেন যেনো তারাও পড়ার সুযোগ পায়। রেসপন্স খুবই কম পাচ্ছি। কমেন্টে কেনো এতো কিপ্টামি?

(গল্পটি সম্পূর্ণরুপে কপি পোস্ট করা নিষেধ। তবে শেয়ার দিতে পারেন। অনান্য আইডি বা পেইজে কপি, ওয়েবসাইটে পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও বা থিম কপি করার অনুমতি নেই। )
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here