তবে_ভালোবাসো_কী ২ #Mehek_Enayya(লেখিকা) পর্ব ১২

0
365

#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ১২

প্রচন্ড গরমে কপাল বেয়ে চুঁয়ে চুঁয়ে ঘাম ঝরছে আরহামের। এক আঙুল দিয়ে ঘাম মুছে রাফিনের কাছে এগিয়ে যায়। পেন্টের পকেট থেকে মাক্স বের করে পরে নেয়। রিদ আরহামকে দেখে মাথায় হাত দিয়ে সেখানেই বসে পরলো।
-এক্সকিউজ মি। তোমার নাম রাফিন?
রাফিন পাশ ফিরে আরহামের পানে তাকায়। সে নিজেই বেশ লম্বা কিন্তু সামনের জনের সামনে এখন নিজেকেও ক্ষুন্ন মনে হলো রাফিনের। বাহ্! বাংলাদেশে ছয় ফুটেরও মানুষ আছে! মনে মনে ভাবলো সে। কপাল কুঁচকে বলল,
-হ্যাঁ। কী কাজ?
পেন্টের পকেটে দুই হাত গুঁজে আয়েশ করে দাঁড়ালো আরহাম। রাফিনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে প্রশ্ন করলো,
-মাহানুর খান আই থিঙ্ক তোমারই ব্যাচমেট তাকে পছন্দ করো?
রাফিন অচেনা পুরুষের মুখে মাহানুরের নাম শুনে কিঞ্চিৎ অবাক হলো। পরোক্ষনে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-আপনি কে? আর আমি মাহানুরকে পছন্দ করি বা না করি সেটা জেনে আপনার কী?
-আমি মাহানুরের উড বি হাসব্যান্ড। হোপ নিজের প্রশ্নের উত্তর পেয়েছো?
আরেক দফা অবাক হলো রাফিন। মনে মনে মাহানুরের ওপর ভীষণ রাগও হলো তার। তলে তলে বিয়ে ঠিক করে রেখেছে অথচ সবাইকে সিঙ্গেল বলে বেড়ায়! তৎক্ষণাৎ রাফিনের মাথায় ভয়ংকর একটা কুবুদ্ধি আসে। সামনের চুল গুলো সরিয়ে এটিটিউড নিয়ে বলল,
-ওহহহহ! বাট মাহানুর আর আমি তো দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি। আমাদের রিলেশন সিক্রেট রেখেছি যাতে কেউ না জানে। আপনার জন্য ভীষণ কষ্ট লাগছে ভাই।
ওষ্ঠকোণে হাসি ফুটে উঠলো আরহামের। সহসা রাফিনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
-জানো বাছা যখন আমার ছোট ছিলাম খেলার দোকানে যাওয়ার পর খেলনা দেখলে যেভাবে নেওয়ার জন্য জেদ করতাম না? মাহানুর খান উপস সরি ব্রো তোমার জিএফ এখন আমার সেইরকমই জেদে পরিণত হয়েছে। তুমি তার বিএফ হও বা ভালোবাসার মানুষ হও সেটা আমার দেখার বিষয় নয়।
-আপনি কী কোনোভাবে আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?
-একদম না। আমি তো জাস্ট বললাম এখন তুমি ভয় পেলে আমি কী করবো?
-শুনে রাখুন ও শুধু আমাকে ভালোবাসে। বুঝলেন?
তাচ্ছিল্য সহকারে হেসে আরহাম বলল,
-আমার এতে একটুও সমস্যা নেই। ভালোবাসার বয়স হয়েছিলো ভালোবেসেছে। তারপর বিয়ের পর এই তুমিটাকে আমি ওর জীবন থেকে মুছে ফেলবো। দেন সে কেনো তার ১৪ গুষ্টি আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য!
রাফিন শুকনো ঢোক গিললো। মেজাজ চটে যায় তার। ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলল,
-আপনি জোর করে ওকে বিয়ে করতে পারবেন না।
-আওয়াজ নামিয়ে কথা বলো ভাই। আর আমি কিভাবে বিয়ে করবো সেটা সম্পূর্ণ আমার বিষয়।
রাফিন আর কোনো বানোয়াটে কাহিনী খুঁজে পেলো না। নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না আরহাম। ক্রমশ শ্বাস প্রশ্বাস বেড়ে যায় তার। চোয়াল শক্ত করে বলল,
-ভালো কাহিনী বানাতে পারিস দেখছি! এতক্ষন বেশ এনজয় করলাম। নিজের দিকে নজর দে ভাই তারপর ভাব কোনদিক দিয়ে তোর নিজেকে মাহানুরের যোগ্য মনে হয়?
রাফিন কিছুটা বিচলিত হয়ে উঠলো। তরতর করে ঘামতে লাগলো তার শরীর। বিড়বিড় করে বলল,
-আমি কোনো কাহিনী বলিনি। আমি ওকে সত্যি ভাল,,
কথা শেষ করার পূর্বেই আরহাম রাফিনের শার্টয়ের কলার চেপে ধরলো। অগ্নিমূর্তি রূপ ধারণ করলো সে। ধমকের স্বরে বলল,
-আমার সামনে ওকে ভালোবাসি শব্দটা বলে নিজের মৃত্যুকে ডেকে না আনাই তোর জন্য শ্রেয়। আমি মাহানুরকে ভালোবাসি এই ভয়ংকর শব্দটা আমি বেতীত অন্য কেউ বললে তার জিব কেটে হাতে ধরিয়ে দিতে আমার এক মিনিটও লাগবে না।
ঘামে ভিজে চুবচুব রাফিন। ভয়ে গলা শুকিয়ে এসেছে তার। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেও ভীত হয়ে পরলো সে। আরহাম রাগের মধ্যেও স্মিত হেসে রাফিনের গালে হাত দিয়ে বলল,
-আজ থেকে মাহানুর তোর বোন হয়, একদম আপন বোনের মতো বোন। আর নিজের বোনকে ভার্সিটিতে ভালো মতো দেখেশুনে রাখবি। বুঝলি?
রাফিন কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। আরহাম রাগী চোখে তাকিয়ে পুনরায় বলল,
-মাহানুর তোর কী লাগে?
-বো বোন।
ভয়াত, কম্পিত কণ্ঠস্বরে বলল রাফিন। আরহাম রাফিনের কলার ঠিক করে দিতে দিতে শান্ত ভঙ্গিতে বলে,
-গুড বয়। আজ আমাদের মধ্যে যা কথা হলো তার একটুও যদি তোর বোনের কানে যায় তাহলে তোর একদিন কী আমার একদিন। বুঝলে শালাসাহেব?
রাফিন ত্বরিত গতিতে মাথা নাড়ায়। আরহাম পিছনে ফিরে চলে যায় রিদের কাছে। রিদ গোলগোল চোখ করে আরহামকে দেখছে। আরহামের মতিগতি তার কাছে ভালো ঠেকাছে না। সন্দীহান চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-কী বলে এসেছিস তুই রাফিনকে?
আরহাম বাঁকা হেসে হেয়ালি ভনিতায় বলল,
-জাস্ট আমার উড বি ওয়াইফ আর নিজের বোনকে ভালোভাবে দেখেশুনে রাখে এটাই বলে এলাম।
-মানে?
রিদ কিছুই বুঝলো না আরহামের কথার। আশ্চর্য হয়ে বলল,
-এরে শালা তুই আবার রাফিনের বোনকেও বিয়ে করছিস? তোরে আমি সাধু ভেবেছিলাম! না না, তাহলে তোর কাছে আমার একমাত্র আদরের শালীসাহেবাকে ভুলেও দেওয়া যাবে না!
________________
মার্কেটে পৌঁছে মাহানুর ফোনের মাধ্যমে বাকি সবাইকে খুঁজে পায়। সুনহেরা আর তার মাও এসেছে। সনিয়া নিজের ছেলের জন্য আসতে পারেনি। সকলের সাথে হালকা পাতলা কথা বলে নেয় মাহানুর। এতক্ষনে সকলেই কম বেশি শপিং করে ফেলেছে। অহনা মাহানুরকে নিয়ে শাড়ীর দোকানে ঢোকে। অহনা আর হাজেরা জোর করে মাহানুরকে কয়েকটা শাড়ী কেনায়। তারা কেনাকাটার থেকে বেশি কথাই বলে যাচ্ছে। মাহানুর ঘুরে ঘুরে নিজের জন্য টপ্স দেখছে। এতক্ষনে আরহাম আর আয়াসও এসে উপস্থিত হয়। জয়া বেগম আরহামকে কল করে বলেছিলো আয়াসকে নিয়ে আসতে। তাঁদের ওয়েডিং ড্রেস ম্যাচিং করে নেওয়া হবে। আয়াস প্রথমে আসতে নাকোচ করে দেয়। সুনহেরা তাকে দেখতে চায় না তাহলে শুধু শুধু যেয়ে কি বা হবে! কিন্তু আরহাম একপ্রকার জোর করেই তাকে নিয়ে এসেছে। মাহানুর আড়চোখে আরহামের দিকে তাকায়। মহিলাদের মাঝে একটু অস্বস্তিবোধ করছে আরহাম। বাঁকা নজরে আবার মাহানুরকেও দেখছে সে। জয়া বেগম আরহামকে বললেন,
-তোমরা দুইজনও নিজেদের মার্কেটিং করে নেও।
-ঠিক আছে। আমি আয়াসকে নিয়ে অন্যদিকে যাচ্ছি।
-যাও।
আয়াস মাহানুরের দিকে তাকিয়ে ছটপট বলল,
-মাহানুর তুইও আয় আমাদের সাথে।
-আমি কী ছেলে? তোদের সাথে যেয়ে কী করবো?
-ড্রেস চয়েস করে দিবি। চুপচাপ আয়।
মাহানুর মুখ ভেংচি দিয়ে অহনা আর সুনহেরাকে নিয়ে তাঁদের সাথে হাঁটা ধরে। আরহামের চিত্ত খুশিতে নেচে উঠলো। মনে মনে আয়াসকে কয়েকশো বার ধন্যবাদ জানালো। সুনহেরা কাছুমাচু হয়ে ভাইয়ের সাথে হাঁটছে। মাহানুর অহনা আর আয়াস নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। আয়াস চোরা চোখে ক্ষণে ক্ষণে সুনহেরার দিকে তাকাচ্ছে। সকলের চোখের আড়ালে আরহাম নিজের পেন্টের পকেট থেকে কিছু একটা বের করে। মাহানুরের পাশাপাশি হাঁটার সময় দ্রুততার সাথে নিজ হাতের জিনিসটা মাহানুরের হাতে গুঁজে দেয়। মাহানুর আরহামের কাজে স্তব্ধ হয়ে যায়। হাতের মুঠ সামনে এনে দেখে একটা ডিজাইনার হিজাব ব্রুজ। গতকাল এটা পরেছিল সে। কিন্তু আরহামের রুমে পরে গিয়েছিলো এটা একটুও বুঝতে পারেনি। আরহাম দৃষ্টি সামনে রেখেই আস্তে আস্তে বলল,
-অন্তুত ধন্যবাদ বলা প্রয়োজন ছিল!
-আরেকটু বড় ভালো কাজ করেন ধন্যবাদ বলবো।
একই ভনিতায় বলে মাহানুর। মুখে বাঁকা হাসি তার। আরহাম আড়চোখে মাহানুরকে দেখে নিজেও হাসে।
মাহানুর ব্রাইডাল ড্রেসের শপে ঢুকে সুনহেরাকে নিয়ে। পিছু পিছু আরহাম আর আয়াসও যায়। দোকানদার একে একে কয়েকটা ভারী ডিজাইনের লেহেঙ্গা দেখাচ্ছে। আরহাম বোনকে জিগ্যেস করলো,
-কোনটা পছন্দ হয় সুনহেরা?
-সবগুলোই তো কেমন যেন ফিকা ফিকা ভাইয়া। আমাকে ভালো লাগবে কোন কালারে?
আরহাম আরো বেস্ট কালেকশন বের করতে বলে। সহসা আয়াসের নজর আটকে যায় একটি শাড়ীর দিকে। সম্পূর্ণ পার্পল রঙের গর্জেস একটি বেনারসি শাড়ী। এটায় সুনহেরাকে কোনো পরী থেকে কম লাগবে না! মনে মনে ভাবলো আয়াস। ধীর পায়ে এগিয়ে শাড়ীটা হাতে নিলো। তার বলতে মন চাইলো “সুনহেরা এই শাড়ীটায় তোমাকে বেশি সুন্দর লাগবে।” কিন্তু সেল্ফ রেসপেক্ট এর কারণে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না। এই কয়দিনে আয়াস সত্যি সুনহেরাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু সুনহেরা তাকে সবসময় ইগনোর করে। অপমান করে। তাই সে মনে মনে পরিকল্পনা করেছে যে পর্যন্ত না সুনহেরা তার প্রেমে পরছে সে পর্যন্ত সে নিজের অনুভূতি কথা কাউকে জানাবে না। আগে বিয়েটা হোক সর্বপ্রথম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হোক দেন ভালোবাসাও হয়ে যাবে।
শাড়ীটা রেখে কিছুটা দূরে সরে গেলো আয়াস। মাহানুর ভালোভাবেই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারলো। সুনহেরা বিচলিত হয়ে মাহানুরকে জিগ্যেস করলো,
-মাহানুর আর অহনা আপু বলেন না কোনটা সুন্দর?
মাহানুর ফট করে আয়াসের পছন্দ করা শাড়ীটা হাতে নিয়ে বলল,
-এটা কিন্তু ভীষণ সুন্দর! আর তোমাকে মানাবে ভাবি।
-আসলেই তো! এতক্ষন এই শাড়ী আমার নজরে কেনো পরেনি!
সুনহেরা একে একে শাড়ী লেহেঙ্গা পছন্দ করছে আর নিচ্ছে। মাহানুর শাড়ী দেখতে দেখতে কিছুটা দূরে চলে যায়। একটি কালো রঙের জর্জেটের শাড়ী তার মন কেড়ে নেয়। ভেবেছিলো শাড়ীটা নিবে দামও জিগ্যেস করলো কিন্তু শাড়ীটা হাতে নিতেই বুঝলো অনেক পাতলা। এতো পাতলা শাড়ী পরে সে কোনোভাবেই বাহিরে বের হতে পারবে। তাই মন খারাপ হয়ে যায় তার। আপসোস দৃষ্টিতে শাড়ীটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আচমকা মাহানুর তার পিঠে কোনো পুরুষালি হাতের বাজে ছোঁয়া অনুভব করে। চট করে পিছনে ফিরে সে। অচেনা বাবার বয়সী একজন পুরুষের নিজের ওপর নিকৃষ্ট চাহনি দেখে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না মাহানুর। ঠাস করে চড় মেরে দিলো মধ্যবয়স্ক পুরুষের গালে। বিকট চড়ের শব্দে দোকানে উপস্থিত সকলে মাহানুরের দিকে তাকায়। আরহাম সরু চোখে তাকিয়ে থাকলো শুধু। আয়াস দ্রুত পা ফেলে মাহানুরের পাশে যেয়ে দাঁড়ায়। মাহানুর চেঁচিয়ে বলল,
-এক পা কবরে এখনও এইরকম জঘন্য কাজ করতে বুক কাপে না? কিভাবে নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়ের গায়ে হাত দেস শয়তান।

লোকটা ভয়ে জমে গেলো। ভেবেছিলো পাশ দিয়ে ছুঁয়ে নিজের নিকৃষ্ট মনকে শান্ত করবে। কিন্তু মাহানুর এভাবে প্রতিক্রিয়া করবে তার কল্পনায়ও ছিল না। কম্পিত কণ্ঠে বলল,
-আমি তো জামা দেখছিলাম আপনি হটাৎ সামনে এসে পরেছেন।
-চোপ একদম চোপ। তোদের মতো মানুষদের ভালোভাবে চেনা আছে আমার। ভালো মানুষীর রূপ দেখিয়ে নিজের কাজ হাসিল করে নেস।
-কী হয়েছে কী মাহানুর? কী করেছে সে?
-আরে আমি শাড়ী দেখতেছিলাম এই লোকটা এসে আমার শরীরে বাজে ভাবে হাত দিচ্ছে। কলিজা কত বড়!
আয়াসের মাথায় রাগ চড়ে যায়। ধবধবে ফর্সা মুখ ক্রোধে লাল হয়ে যায়। কোনোদিক না তাকিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে লোকটার ওপর। একে একে কি’লঘু’ষি দিতেই থাকে। সুনহেরা ভয় পেয়ে যায় আয়াসের এমন বিধ্বস্ত রূপ দেখে। এতদিন সে শুধু জানতো আয়াস পড়ুয়া, শান্তশিষ্ট, ভদ্র, চুপচাপ স্বভাবের মানুষ। আয়াস এইভাবে মারামারি করতে পারে তার ভাবনায়ও আসেনি। মাহানুর নিজেও চমকে যায়। আয়াসকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। লোকটার নাক থেকে রক্ত পরা শুরু হয়েছে। আরহাম বড় বড় পা ফেলে ছুটে এসে আয়াসকে ঝাপ্টে ধরে দূরে নিয়ে যায়। মাহানুর আঙুল দেখিয়ে লোকটাকে বলে,
-আর কোনো মেয়ের সাথে এইরকম করতে দেখলে সেইদিনই তোর শেষ দিন হবে। চলে যা এখান থেকে।
লোকটা প্রাণের ভয়ে দৌড়ে চলে গেলো। মাহানুর আয়াসের কাছে আসে। দোকানের বাহিরে মোটামোটি ভীড় জমে গিয়েছে। আরহাম শক্ত করে ধরে রেখেছে আয়াসকে। সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে আয়াস। গালে আঁচড় পেয়েছে কেমন রক্ত জমে আছে। মাহানুর ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে আয়াসের মুখ মুছে দেয়। ভাইয়ের গালে হাত দিয়ে বিচলিত কণ্ঠে বলল,
-ভাই শান্ত হো। ওই লোককে আমিই তো মেরে দিয়েছিলাম তুই কেনো এইসব করলি!
-ওই হা’রাম’জাদা তোকে ছুঁইবে কেনো? ওর সাহস কত বড় আমার বোনকে টাচ করবে! ওর কলিজা ছিঁড়ে ফেলবো আমি।
-চুপ। যেটা গিয়েছে সেটা গিয়েছে বড়দের এই বিষয় কিছু জানানো যাবে না।
-আমি ওকে মেরেই ফেলবো।
নিজের মতো দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলেই যাচ্ছে আয়াস। আরহাম এবার মুখ খুলে বলে,
-আয়াস শান্ত হও। বাহিরে মানুষজন দেখছে।
আয়াস আশেপাশে চোখ বুলায়। বড় বড় নিঃশাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করে। আরহাম তাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়ায়। এরই মধ্যে মাহানুর আরহামের চোখাচোখী হয়ে যায় কয়েকবার। মাহানুর শান্ত কণ্ঠে আরহামকে বলল,
-আমি আয়াসকে নিয়ে বাহিরে যাই। ঠান্ডা পানি খেয়ে যদি ওর মাথা ঠান্ডা হয়। আপনি ওদের কেনাকাটা হলে নিয়ে আসেন।
-ঠিক আছে।
মাহানুর আয়াসকে টেনে নিয়ে যায়। সুনহেরা তখনও ঘোরের মধ্যে। মুখে ভীত হয়ে আছে সে। অহনার হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। অহনা জিগ্যেস করলো,
-সুনহেরা ঠিক আছো?
-হ হ্যাঁ আছি।
-অবাক হয়েছো নিশ্চই?
সুনহেরা ওপর নিচ মাথা নাড়ায়। অহনা হালকা হেসে বলল,
-মাহানুরদের পরিবারের সবাই অনেক শান্তশিষ্ট যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ মাহানুরকে কষ্ট দেয়! এখন তোমার উড বি হাসব্যান্ড এর যে রূপ দেখলে একদিন সেটা তোমার প্রতিও দেখবে।

মাহানুর কোকে চুমুক দিচ্ছে আর হাঁটছে। আয়াসও তাই করছে। দুইজন হাঁটতে হাঁটতে বাহিরে এসে পরেছে। মাহানুর সামনে তাকিয়ে বলল,
-ভুতে ধরেছিলো তখন তোকে?
-সর যা। শ’য়তা’নি ভালো লাগছে না।
-সুনহেরা ভয় পেয়েছে।
আয়াস কিছু বলল না। পাশের বেঞ্চে আরাম করে বসে দুইজন। মাহানুর স্মিত হেসে বলে,
-তখন মুখ ফুটে বললি না কেনো সুনহেরাকে ওই পার্পল শাড়ীতে সুন্দর লাগবে? ও ভীষণ খুশি হতো।
-হতো না।
-হতো। তুই মেয়ে না তাই মেয়েদের ফিলিংস বুঝিসও না।
আয়াস দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো শুধু। মাহানুর যেনো বুঝে গেলো এই দীর্ঘশ্বাসের মানে। আকস্মিক প্রশ্ন করে উঠলো,
-ভালোবেসে ফেলেছিস সুনহেরাকে?
আয়াস উত্তর দিলো না। মাথা ঘুরিয়ে অন্যপাশে তাকিয়ে থাকলো। মাহানুর মুচকি হেসে বলল,
-জানিস আয়াইসার বাচ্চা তুই নিজেও নিজেকে ততটা চিনিস না যতোটা তোকে আমি চিনি। মেয়েরা প্রথম প্রথম একটু আরেকটা নকসা করে। এটিটিউড দেখায়। তবে ছেলেরা একটু চেষ্টা করলেই মেয়েদের মন জিতে নিতে পারে। তুইও এইরকম প্রতিবন্ধী হয়ে না থেকে সুনহেরার মন জিতার প্রয়াস করে। ও তোকে যত দূরে যেতে বলবে তুই ততই ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করবি। ও যেটা করতে বারণ করবে সেটা বেশি বেশি করবি।
এক দমে এতকিছু বলে হাঁপিয়ে উঠলো মাহানুর। কোকের বোতলে মুখ লাগিয়ে চক চক করে কয়েক ঢোক গিলে নিলো। জোরে জোরে নিঃশাস নিতে থাকলো। আয়াস নিস্পলক তাকিয়ে থাকলো মাহানুরের দিকে। মাহানুরের প্রত্যেকটা কথা তার মনে লেগেছে। মাহানুর বুকে হাত দিয়ে অনেকটা নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল,
-তোর সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া করা দরকার আমার মতো একটা বোন পেয়েছিস। যা থ্যাংকু বলতে হবে না শুধুই একটা ভালো রেস্টুরেন্টে নিয়ে নিম্নে হলেও ৪ প্লেট কাচ্চি খাওয়ালেই হবে।
-৪ প্লেট নিম্নে! ইসসস আমার জ্ঞান দেওয়া বোনটা!
-তারিফ করতে হবে না। মে ইতনা ভি খাস নেহি হু।
দুইজন একসাথে শব্দ করে হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে হটাৎ মাহানুরের নজর যায় রাস্তার ঐপাশে। অনেকগুলো মানুষ গোল হয়ে কিছু একটা দেখছে। মাহানুর আয়াসকে বলে,
-ঐখানে কী হচ্ছে? এতো মানুষ কেনো?
-আসলেই তো! চল দেখে আসি।
বড় বড় পা ফেলে রাস্তা পাড় হয় দুইজন। ধীরে ধীরে আরো মানুষ জড়ো হচ্ছে। মাহানুর সামনে আয়াস পিছনে। পাশের কয়েকজন লোক বলাবলি করছে,
-ইসসস ভাই কী ভয়ংকর ভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে রে! র’ক্তে শরীর ভরে গিয়েছে।
মাহানুর শুকনো ঢোক গিললো। রোদের প্রচন্ড তাপে ঘেমে একাকার সে। ভীড়ের ফাঁকে ঢুকে মাথা উঁচু করে দেখলো একজন লোক জমিনে পরে আছে র’ক্তার’ক্ত হয়ে। লোকটার মুখ দেখতেই মাহানুর আঁতকে উঠে। মাথায় বাজ ভেঙে পরলো তার। আয়াসেরও একই ভঙ্গি। দ্রুত ভীড় ঠেলে বেরিয়ে আসে তারা। মাহানুর আশ্চর্য হয়ে বলে,
-এটা ওই লোকটাই তো যে মার্কেটে আমার সাথে খারাপ আচরণ করলো!
-হ্যাঁ। এতক্ষনের ভিতরে কিভাবে কী হলো!
-কী বীভৎস দেখাচ্ছে! হয়তো মারা গিয়েছে।
-হুম। মাথা তো একদম ভেঙে গিয়েছে বেঁচে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব হয়।
______________
সন্ধ্যার দিকে বাসায় আসে সকলে। মাহানুর লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে ধপাস করে বিছানায় শুইয়ে পরে। সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছিলো অহনা। সোফার একপাশ ভর্তি শপিং ব্যাগ দিয়ে। মাহানুর শুয়ে থেকেই বলল,
-আমি শান্তি পাচ্ছি না অহনা। মাথায় শুধু তখনকার ওই লোকটার বীভৎস দৃশ্যই ঘুরছে।
-আমার মাথায় ঢুকছে না হটাৎ কিভাবে এক্সিডেন্ট হলো তার?
-মগা! এক্সিডেন্ট কী কাউকে বলে আসে?
অহনা আমতা আমতা করে বলল,
-না মানে এতো লোক থাকতে ওই লোকটারই কেনো এক্সিডেন্ট হলো? এমন ও তো হতে পারে মুভির মতো তোর মতো সিক্রেট লাভার আছে যে তোকে টাচ করায় লোকটাকে এতো ভয়ংকর ভাবে শাস্তি দিলো!
শোয়া থেকে উঠে বসে মাহানুর। তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বিরক্তকর কণ্ঠে বলল,
-তুই না শুধু ফিকশনাল দুনিয়ায়ই বসবাস করিস! কবে জানি এসে আমাকে বলিস মাহানুর মাহানুর রিদ না অমুক দেশের প্রিন্স। উপস সরি প্রিন্স চার্ম।
মুখ বাকিয়ে বলল মাহানুর। অহনা গাল ফুলিয়ে ফোনে তাকিয়ে রইলো। মাহানুর ফোন চার্জে
দিয়ে বিছানা গুছিয়ে লাইট অফ করে দিলো। অহনা অবাক হয়ে বলল,
-লাইট কেনো অফ করলি?
-আমার মাথা ব্যাথা করছে এখন আমি একটা ঘুম দেবো। ভুলেও আমাকে জাগানোর মতো ভুল করবি না।
-আচ্ছা।
মাহানুর শুতে শুতে অহনার দিকে তাকায়। সহসা তীব্র আওয়াজে অহনার ফোন বেজে উঠে। অহনা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে লাজুক হাসি দিচ্ছে। মাহানুর ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,
-রিদ ভাই নাকি?
অহনা লাল টমেটো হয়ে ওপর নিচ মাথা নাড়ায়। মাহানুর ভেংচি দিয়ে মাথা নাড়ালো। শুইয়ে বেঙ্গ করে হাসতে হাসতে বলল,
-আমার এখন টিভিতে একটা এড করতে মন চাইতেছে। এডটা হবে আপনিও যদি মুচকি মুচকি হাসতে চান, লাজে পাঁকা লাল টমেটো হতে চান তাহলে এখনই মুলা রুপী মানুষদের প্রেমে পরে যান।

>>>>চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here