দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা) #লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৩৪

0
885

#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৩৪
🍂
আজ পনেরো দিন হয়েছে বাড়িতে আছি আমি,,,
এই পনেরো দিন তেমন কিছু বদলায় নি,,, আর না বদলিয়েছে কোনো সম্পর্ক,,, যেটা যেভাবে ছিল সেটা সেভাবেই আছে,,, কোনো কিছু পরিবর্তন হয়নি আর না হয়েছে কোনো উন্নতি,,, বরং অবনতি ঘটেছে অনেকটাই,,, আর এই অবনতি হলো আমার আর উনার(রিদ) সম্পর্কে মাঝে আরও বেশি তিক্ততা চলে এসেছে,,, আর এই তিক্ততা ঘিরেই আছে আমার আর উনার সম্পর্ক,,,,

.

আজ পনেরো দিন ধরে আমি আমার বাড়িতে আছি,,, আর এই পনেরো দিন এ উনি (রিদ) আমার কোনো খবর নেয় নি, আর না করেছে একটি বার এর জন্য কোনো ফোন,,, হয়তো ডলি আপুকে নিয়ে ভালোই আছে তাই আমার কথা মনে পড়েনি,,, আচ্ছা আমি কি উনার আমাকে মনে পড়ার আশায় আছি,,, কিন্তুু কেন উনি তো আমার সাথে কখনো এমন কিছু করেনি যে আমি তার আশা ছেয়ে বসে থাকবো,,, সবটা জেনেও কেন আমি এতটা বিচিলিত,,, স্বামী বলে এতটা বিচিলিত আমি,,, নাকি অন্য কিছু,,, না তাকে তার মতোই থাকতে দেয়ায় উচিত, ভাব্বো না আর আমি তাকে নিয়ে হুহহহ,,,,

.

এই পনেরো দিন ঐ বাড়ি সবাই আমার খবর নিয়েছে,,, বিশেষ করে দাদা-দাদি আর আয়ন ভাইয়া একটু বেশিই নিয়েছে,,, ঘন্টায় ঘন্টায় আয়ন ভাইয়া আর দাদী ফোন করবে আমাকে,, দুজনেই সারাদিন ভিডিও কল করবে আমাকে,,, দাদী বাড়ি থেকে করবে,, আয়ন ভাইয়া অফিস থেকে করে,,, আমার কাজ শুধু রিসিভ করে রেখে দেওয়া, কারণ দাদী কথা বললেও আয়ন ভাইয়া কোনো কথা বলে না নিজের মতো করে কাজ করে আর আমি কি করি সেটা লক্ষ রাখবে,,, আমি কিছু বললে আমাকে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলে,, তাই আর কিছু বলা হয়ে উঠে না আমার,,,, যদিও আমার এখানে তিন দিন থাকার কথা ছিল,,, কিন্তুু এই তিনদিনের জায়গাটা বাড়াতে গিয়ে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে আমাকে,,, নানান ধরনের মিথ্যার আস্চরয় নিতে হয়েছে আমাকে,,,, তারপরও দাদা-দাদী ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে বলবে, কবে যাচ্ছি, কখন যাচ্ছি, আমাকে ছাড়া নাকি খান বাড়ি অচল,, দাদীর কিছুই ভালো লাগে না আমাকে ছাড়া ইত্যাদি,,, আর আমি এটা সেটা বলে কাটিয়ে নেয় ঐ বাড়িতে যাওয়ার থেকে,,,,

.
🍁
আয়ন ভাইয়া যেদিন আমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিল,,, ঐদিন আমি বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথে আম্মু আব্বু আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়, সেকি কান্না,, এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল এই বাড়িটি একটি কান্নার মহল,,,আর আমি ভুল করে সেই মহলে ঢুকে গেছি,,, যেখানে একটা কান্নার রাজা আছে আর একজন কান্নার রানী,,, তারা শুধু কান্না আর কান্না করে বেড়ায়,,, কি সাংঘাতিক ব্যাপার ভাবা যায়,,,
পরে আব্বু আম্মুর থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে পরে আমাকে কোলে নিয়ে,,,
পরে দু’হাতে জরিয়ে রাখে আমাকে বুকে মাঝে পুরো আধাঘন্টা,,,, আম্মু আয়ন ভাইয়াকে সোফায় এনে বসায়,,, আয়ন ভাইয়া শুধু নিরব দর্শকের সবটা দেখছিল,,, আসলে আমরা তিন ভাই বোন এর মধ্যে আমি সবার ছোট আর সবার আদুরে,, কখনো আব্বু আম্মুর থেকে একটা রাতও দূরে থাকিনি আবার মাঝে মাঝে রাতে আম্মু আব্বু সাথে ঘুমাতাম,,,, হঠাৎ করেই আমার বিয়ে হওয়ায় তাদের কোলের মেয়েটা চলে যাওয়ায় অনেক কষ্ট পেয়েছিল,,, আমাদের ফোনে রোজ কথা হলেও দেখাটা আটকে মাস পরে হয়েছে, তাই হয়তো খুশিতে কান্না করে দেয় আম্মু আব্বু,,, আপু ও ছিল আমাদের বাসায় দুলাভাইকে নিয়ে,,,, কিন্তুু আমার ভাইয়াটা ছিল না,,, এখনো নেই অবশ্য,,, ভাইয়া চিটাগং আছে এ মূহুর্তে, তার নুতন ব্যবসার প্রজেক্টা নিয়ে,,, কবে আসবে জানি না হয়তো কাজ শেষ হলেই চলে আসবে,,,

.

ঐদিন রাতেই আয়ন ভাইয়া ঢাকায় ফিরে গিয়েছিল,, আমাদের বাসার সবাই আয়ন ভাইয়াকে অনেক করে বলেছিল থেকে যেতে কিন্তুু ভাইয়া থাকিনি উনার নাকি অফিসে কি কাজ আছে,,, যাওয়া সময় আমাকে অনেক কিছু বলে গেছে আমার হাত দুটো ধরে,,, যাতে ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করি পাগলামো না করি,,, আর এবার ঢাকা গেলে নাকি আমার জন্য সারপ্রাইজ থাকবে একটা,,,, কি সারপ্রাইজ দিবে আয়ন ভাইয়া তা তো জানি না তবে তার সারপ্রাইজ আর আমি দেখতে পারবো না এটা শিওর,,,, কারণ আমি তো আর ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি না কখনোই,,,,

ঢাকা থেকে সবকিছু ছিন্ন্য করে এসেছি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াতে,, তাই আবার ঢাকাতে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না,,, তাই তো আমার ভাইয়াকে বলে তার কাছে যাওয়ার ব্যবস্হা করেছি,,, একেবারে জন্য ভাইয়া কাছে চিটাগং চলে যাব কাল,, পরে ঐখানে কিছুদিন থাকার পর অন্য কোথাও চলে যাব যেটা আমার পরিবার ছাড়া কেউ জানবে না,,, অবশ্য এখনো কেউ জানে না আমার মনে কি চলছে,,, আর ঐ বাড়ির কেউ জানে না আমি যে চিটাগাং চলে যাচ্ছি,,, আমি আম্মু আব্বুকে না করে দিয়েছি যাতে দাদা দাদীকে কিছু না বলে এই বিষয়ে,,,,

.

.

🍁
ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার রেলস্টেশনে সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর আব্বু,,, ভিতরে ঢুকতেই আমাকে পাশে দাড় করিয়ে সামনে আগায় টিকেট কাউন্টার দিকে,, চট্টগ্রাম ভাইয়ার কাছে যাব আমি আর আব্বু,,, আমাকে ভাইয়ার কাছে রেখে আব্বু কাল চলে আসবে তাই আজকে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে,,,,

আব্বু সামনে টিকেট কাউন্টার দিকে আগাতেই আমি হতাশ চোখে চারপাশে তাকায় ব্ল্যাকের টিকেটের জন্য,, কারণ আমাদের ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াতে কোথাও যেতে হলে তিন চারদিন আগে থেকে টিকেট কাটতে হয় নয়তো পরে টিকেট পাওয়া যায় না একদম,, তার যেগুলো পাওয়া যায় সেটা হলো দাঁড়িয়ে থেকে যেতে হবে,,, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনে যেতে প্রায় পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে, এতো সময় তো আর দাড়িয়ে থেকেও যেতে পারবো না, যেহেতু আগে আমাদের টিকেট কাটা হয়নি,,, তাই আমি এক্সটা টাকা দিয়ে ব্যাকে টিকেট নেয়া জন্য চারপাশে চোখ বুলাতেই সামনে হাজির হয় আমার আব্বু,,, আমি আব্বুকে এতে তাড়াতাড়ি আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো আমার,, আব্বু চলে আসা দেখে নিশ্চিত হলাম যে টিকেট পাইনি,,, তাই হতাশ চোখে আবারও আশেপাশে তাকাবো তখনি আব্বু কথায় চমকে উঠলাম আমি,,, আব্বু হালকা চিন্তা সুরে বলে উঠেন……

—” আম্মুনি (আমি) দেখনা আমি টিকেট কাউন্টারে যাওয়ার সাথে সাথে কাউন্টারে ছেলেটা আমাকে দুটো টিকেট হাতে দিয়ে বললো এ গুলো নাকি আমাদের জন্য কাটা হয়েছে,, সাথে এটা ও বললো আমাদের আপন জন নাকি কেটেছে টিকেট গুলো,,, নাম বলেনি কেমন না ব্যাপারটা,,,, (টিকেট গুলো দেখতে দেখতে)

.

আব্বু এমন কথায় আমি কিছুটা চিন্তায় পড়লেও পরে ভাবলাম হয়তো ভাইয়া তার কোনো ফ্রেন্ডকে দিয়ে কাটিয়ে রেখেছেন আমাদের জন্য কারণ ভাইয়া একবার বলেছিল যে তার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলবে টিকেটে জন্য তাই এতো মাথা ঘামায়নি আমি,,,,

.

ভি আই পি কমপাটমেন্টে বসে আছি আমি আর আব্বু,,, আমার কাছে কেমন জানি আজিব লাগছে সবকিছু,,, আমরা যে ঢাবিতে বসে আছি সেটা পুরো খালি একটা রুম,,, আমি আর আব্বু ছাড়া আর কেউ নেই এই রুমে,,, কিন্তুু ট্রেনের বাকি রুমগুলোতে মানুষে ভরপুর, অথচ আমাদেরটা,,,, বি আই পি রুমে সিটগুলোও একেকটা ফিক্সড প্রাইজ হয়ে থাকে,,, এতো টাকা ক্ষতি করে তো আর মালিক পক্ষ রুম খালি রাখবে না আর যদি রাখেও তাহলে আমাদেরকে কেন এই রুমে জায়গায় দিল,,, এই বিষয়টা আমাকে ভিষণ ভাবাচ্ছে,,, আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে আব্বু বলে উঠে,,,,,,

.

—” আম্মুনি তুমি একটু বসো আমি টিকেট মাস্টার এর সাথে কথা বলে আসছি, এই হলটা সম্পূর্ণ খালি কেন জেনে আসছি তুমি বসো কেমন,, ভয় পেওনা আব্বু আছে তো,,, (মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)

আমি আব্বু কথা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে মাথা নেড়ে সায় জানালাম,,, আব্বু যেতেই আমি পুরো রুমে একা হয়ে গেলাম,,,, কেন জানিনা আমার প্রচন্ড ভয় করছে এ মূহুর্তে, মনে হচ্ছে কিছু খারাপ হতে চলছে আমার সাথে,,, আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় অবসান ঘটানোর জন্য সিটে নিজের গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম,,,

.

কিছুক্ষন শুয়ে থাকার পর মনে হলো আমার সামনে কেউ বসে আছে সাথে আমাকে গভীর ভাবে পযবেক্ষন করছে,,, তার সাথে কেবিনে ভিতর অনেক মানুষও রয়েছে,,, আর সবাই আমাকে দেখছে,, আমার এমনটা মনে হওয়ায় আমার ঘুমটা হালকা হয়ে আসে,, অল্প সময়ের জন্য আমার চোখ লেগে গিয়েছিল তাই ঘুমটা হালকা হতেই নিজের চোখ পিটপিট করে খুলে সামনে তাকাতেই আমি আতংকে উঠি,,, সাথে সাথে শুয়া থেকে বসে পরি আর সামনে মানুষটাকে দেখে ভয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে কারণ এ মূহুর্তে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে তাকে দেখে,,,

.

আমার সামনে আহ্রমাদ রিদ খান বসে আছে, মানে আমার গুনধর স্বামী,,, আমার সামনে সিটে বসে নিজের গা হালকা এলিয়ে দিয়া,,, এক পা ফ্লোরে রাখা,,, অন্য পা সিটের মধ্যে তুলে দিয়ে তার ওপর নিজের হাত রাখা, সেই হাতে বন্দুক ধরে নিজের কপালের সাইড করছে চোখ দুটো বন্ধ করে,,,
তার সাথে রয়েছে অনেক গুলো বডিগার্ড যারা আমাদের চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে,,, হাতে বন্ধুক নিয়ে,,, আমি উনাকে এমন শান্ত অবস্থা দেখে ভয়ে কান্না দিলাম মূহুর্তেই কারণ আমি জানি এখন আমার সাথে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে,, উনি তখনো চুপ করে আছে,,,, উনার চুপ থাকাটা আমাকে আরও ভয় পায়িয়ে দিচ্ছে,,, আমি সবটা সহ্য করতে না পেরে শব্দ করে কান্না করে দিলাম পরে খানিকটা সাহস জুগিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠি,,,,,,

.

—” আব্বু, আব্বু কোথা…..

.

বাকি কথা গুলো বলার জন্য আমার আর সাহস হল না,,, আর না বলার জন্য আমার মুখটা রইল,,, আমি মুখ দিয়ে শব্দ বের করার সাথে সাথেই উনি ঝড়ে গতিতে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে শক্ত করে সিটের সাথে লাগিয়ে একহাতে দুগাল চেপে ধরে অন্য হাতে বন্ধুকটা আমার মুখে ডুকায় রুডলি ভাবে,,,

.

উনার চোখ ছিল খুন করা নেশা,,, আর চেহারা ছিল হিংস্রতা,,,, আমি তাকে শুধু দেখেই চলছি, আমার দুচোখ দিয়ে অঝোর ধারা পানি ঝরতে লাগলো,,, নিজেকে কিভাবে বাঁচাবো উনার থেকে,,, উনি কি আজ সত্যিই আমাকে মেরে ফেলবেন,,, আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় উনার (রিদ) হাতে থাকা বন্ধুকটা আরও খানিকটা চাপ দিয়ে আমার মুখের ভিতরে ঢুকায়,, এতে করে আমি আরও কষ্ট পাচ্ছি, আর আমার সারা শরীর ভয়ে ঘেমে একাকী হয়ে গেছে,,, কপাল থেকে বিন্দু বিন্দু ঘাম বেয়ে ঘাড়ে পড়ছে,,,, আমর এমন অবস্থা দেখে উনি আমার দিকে ঝুকে এসে লাল লাল চোখে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,,,,

.

—” পিষে ফেলি,,, মেরে দিয়,,, নাকি ট্রেনের নিচে দিব তোকে,,,, বউ বলে ছাড় পেয়ে যাবি তুই,,, আমার কাছ থেকে পালিয়ে যাবি তুই আর আমি বুঝতেও পারব না,,, তোর কি মনে হয় তোর খবর থাকে না আমার কাছে,,, পালিয়ে বাঁচতে পারবি আমার কাছ থেকে সবকিছু এত সোজা হুমম,,,

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here