আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_১১ Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
516

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_১১
Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

হাটহাজারীর ফতেহপুরের জোবরা গ্রামে পাহাড়ঘেরা ২১শ একর সমতল-উঁচু-নিচু পাহাড়ি ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসংলগ্ন ঝুপড়িগুলোতে আড্ডায় ব্যস্ত বন্ধুমহলের হঠাৎ ধ্যান ভাঙলো শাড়ি পরিহিত প্রসাধনীতে ঢাকা পুরুষালী চেহারার কয়েকজনকে দেখে। নানান ভঙ্গিতে হেঁটে হেঁটে দ্রু পায়ে এগিয়ে আসছে তারা। নিখিল, আহির আর জায়িনের হাতে সিংগাড়া। ছোট ছোট করে ভেঙে মুখে পুরতে পুরতে তিনজনই কপাল ভাঁজ করে তাকালো। নিখিলের ঠোঁট দুষ্টু হাসি। নিশ্চয়ই অনেক ডেঞ্জারাস কিছু ঘটতে চলেছে। দোকানদারের কাছে ছুটে গেল শাড়ি পরিহিত মহিলাগুলো। এক তালির উপর আরেক তালি দিতে দিতে আদেশীসুরে বলতে লাগলো

এই টাকা দে টাকা দে।

দোকানার চিল্লিয়ে বলল

এই দূর হ। মরার জায়গা পাস না আর।

জায়িন সিংগাড়া খেতে খেতে নিখিল আর আহিরের পেছনে গিয়ে লুকোলো। আহির তার হাত ধরে বলল

এইতো টাকার মালিক এইদিকে।

জায়িন ভীত গলায় বলল

না না কি করছিস ব্রো? ওরা বেইজ্জত করে ছাড়বে। আমার ভয় করে।

নিখিল আর আহির একসাথে হেসে উঠলো। মহিলাগুলি মাথার লম্বা বেণী এপাশ থেকে ওপাশ ফিরিয়ে আবারও তালি দিতে দিতে বলল

টাকা দে টাকা দে।

জায়িন এবার শুকনো ঢোক গিললো। নিখিলও একই ভঙ্গিতে হাত তালি দিতে দিতে বলল

এই টাকা দে, টাকা দে।

আশেপাশের মানুষজন হেসে উঠলো। আহির বলল

টাকার মানুষ এই তো।

জায়িন পালাতেই যাচ্ছিল। নিখিল তাকে ধরে ফেলল। বলল

বড়লোকের বেটা। ধরো ধরো। বড় বড় টাকা আছে।

জায়িন বলল

শালা কি করছিস? দিনদুপুরে ইজ্জৎ নিয়ে টানাটানি করার কোনো মানে হয়?

মহিলাগুলো জায়িনের দিকে তাকালো। তেড়ে আসতেই জায়িন উল্টোদিকে দৌড় দিল।

মহিলাগুলো জায়িনের পেছন পেছন ছুটে গেল। জায়িন কিছুদূরে গিয়ে পেছনে ফিরে তাদেরও দৌড়ে আসতে দেখে শুকনো ঢোক গিলে আবারও ছুটলো।

নিখিল আর আহিরও মহিলাগুলোর পেছন পেছন ছুটলো। জায়িন কিছুদূরে গিয়ে থামলো। তার উদ্দেশ্য ক্যাম্পাস। ছুটতে ছুটতে একসময় নিহাত আর দলবলকে দেখে চেঁচিয়ে ডাকলো। নিহাত তাকে অমন দৌড়াতে দেখে থমকে দাঁড়ালো। জায়িন তার কাছে ছুটে গিয়ে বলল

দেখ ওই মহিলাগুলো আমার পিছু নিয়েছে।

পিছু নিয়েছে? কেন?

টাকার জন্য?

কেন টাকা?

আরেহ ওইগুলা হিজড়ে। বুঝতে পারছিস না?

নিহাত চোখমুখ কুঁচকে বিকৃত করে বলল

ও আল্লাহ! তুই এদের ভয় পেয়ে এভাবে ছুটছিস? রিডিকিউলাস জায়িন।

আরেহ না না নিখিল আর আহির আমার পেছনে লাগিয়ে দিয়েছে। উফফ। আমার বুকটা এখনো কাঁপছে।

মহিলাগুলো তাকে ধরতে না পেরে ফিরে আসছিল। নিখিল আর আহিরকে দেখে ছুটে গিয়ে কলার ধরে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিল। দুজনেই আকস্মিক আক্রমণে হতভম্ব। দুজনেই তোতলাচ্ছে। মহিলাগুলো পকেটে হাত ঢুকিয়ে গালে আলতো চাপড় মেরে বলল

এইই টাকা বের কর। বের কর। এক্ষুণি বের কর। নইলে ছাড়ব না।

আহির বলল

ধুরর বেয়াদব মহিলা। নিখিল আমারে বাঁচা ভাই। কি বেয়াদব মহিলা দেখ। আমার কাপড়চোপড় খুলে নিবে মনে হচ্ছে। ও আল্লাহ!

জায়িন দূর থেকে দুজনের এমন দশা দেখে হেসে কুটিকুটি। নিহাত বুকে আড়াআড়িভাবে হাত ভাঁজ করে কপাল কুঁচকে তাকালো।

মহিলাগুলো আলতোকরে ধাক্কা মারলো নিখিলকে। বলল

এই চিকনা টাকা দে। তাড়াতাড়ি দে। দে দে।

নিখিল বুক ঝেড়ে বলল

লম্পট মহিলা।

মহিলাগুলো ক্ষেপে উঠলো। তন্মধ্যে সুজানাদের দেখা মিললো নিহাতদের পেছনে। মেহুল বলল

এমা হিজড়া ধরছে আহিরদের। ও আল্লাহ!

আহির কপাল চাপড়ে বলল

কেসটা কি হলো দোস্ত। জায়িন্ন্যারে পঁচাইতে গিয়ে নিজেরাই কেস খাইলাম। কেউ তো বাঁচা ভাই। ওরেবাপরে কি শক্তি।

মহিলাগুলো ইতোমধ্যে পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা হাতড়ানো শুরু করে দিয়েছে। আহির বলল

ও মা আমার সুড়সুড়ি লাগছে।

সুজানা মেহুল আর শান্তা কিছুদূরে এসে বলল,

হায় আল্লাহ এখন কি হবে?

শান্তা সাহস করে এগিয়ে এল। ব্যাগ থেকে যা আছে সব টাকা বের করে দেখিয়ে বলল

এই টাকা নাও। ওদের ছেড়ে দাও আগে।

টাকাগুলো নেয়ার জন্য সব মহিলা তেড়ে এল। শান্তা একছুটে পালালো সবাইকে তেড়ে আসতে দেখে। সেই সুযোগে নিখিল আর আহির পালালো। মহিলাগুলো আর কোনো পথ না পেয়ে নিহাত আর জায়িনদের দিকে ছুটতেই নিহাত তার দলবল নিয়ে পালিয়ে গেল। সবাই এসে থামলো শহীদ মিনারের কাছে। ধপাস ধপাস একজনের গায়ের উপর আরেকজন এসে পড়লো। হাসতে হাসতে একপ্রকার শুয়ে পড়লো আহির আর নিখিল। সুজানা মেহুল হাসির চোটে ব্যাগ দিয়ে মুখ চেপে ধরেছে। চোখে জল নেমে এসেছে ইতোমধ্যে। জায়িন এসে ধপ করে বসলো আহিরদের পাশে। বলল

টিট ফর ট্যাট।

সুজানা দম নিয়ে বলল

এই তোদের কে বলছে ওদের সাথে লাগতে? হ্যা? পারিসও বটে।

আহির জায়িনের গায়ে ঢলে পড়ে বলল

ইজ্জতভ্রষ্ট থেইকা বাইচা গেলাম।

নিখিল পেট চেপে ধরে বলল

মাগোমা বেডিমানুষ এমন বেয়াদব কেমনে হয়? কেমন কইরা ধরছে বাপরে।

শান্তা মেহুল রেগে তাকালো। জায়িন বলল

ওরা বেডি না।

বলেই সুজনা মেহুল আর শান্তার দিকে তাকিয়ে জিভ কামড় দিল।

নিখিল বলল

ওরা বেডা না বেডি সেইটা জাইনা আমাগো কাম কি? বাপরে বাপ যে শক্তি। এখনো হরলিক্স খায় নাকি?

আহির চোখ টিপে বলল

মানুষের ইজ্জতভ্রষ্ট করে হরলিক্স খাওয়া? আইচ্ছা আইচ্ছা।

শান্তা বলল

তোদের আবার ইজ্জত আছে নাকি? যে ইজ্জতভ্রষ্ট হবে? অসহ্য।

এই অশান্তির বাচ্চা চুপ থাক। তোরে কে ফটরফটর করতে কইছে? আমাদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি পড়ছে আর তুই বলছিস ইজ্জত আছে কিনা। কি শরম কি শরম।

শান্তা মুখ মোচড়ে বলল

মরে যাই।

তুই মরে যাহ। আমি করব কুড়ে আসি।

সুজানা বলল

আহ থামবি তোরা। সময় দেখ তো।

মেহুল সময় দেখে মাথায় হাত দিল। জায়িন বলল

ও মাই গড। অভিক স্যারের ক্লাস মিস।

সবাই একে অপরের দিকে তাকালো। নিখিল জায়িনের মাথায় ধপাস করে মেরে বলল

তোর বইন ক্লাসে চইলা গেল আর তোরে বলে নাই।

তুই না থাকলে বলতো।

আমি তোর বইনের কইলজ্যা খাইছি?

সুজানা বলল

আরেহ থামবি? ক্লাস আর পাবো না?

মাঝক্লাসে গিয়ে লাভ আছে? প্যারা নাই। আমার বাতাস খাই।

শান্তা বিরক্ত হয়ে বলল

স্টুপিট। তোদের কারণে ক্লাসটা মিস গেল। অসহ্য।

আহির বলল

ধুরর বেডি তুই চুপ কর তো। আমার এখনো শিরশিরানি যায়নি। ভাই মানুষ বিয়ার পর মরেনা ক্যান? আমি তো বউ ছোঁয়ামাত্র মইরা যামু।

সুজানা হেসে বলল

কথার কি ছিঁড়ি!

____________

ব্যস্ত জনপদের পদচারণায় মুখোরিত ব্যস্ত চট্টগ্রাম শহর। শান্তাকে সাথে করে নিউমার্কেটে চলে এসেছে সুজানা। আজ শাটল ধরেনি তারা। টেডি কিনবে অনা আর আবিদের জন্য। দাওয়াত যেহেতু পড়েছে সেহেতু না গেলে অভিক স্যার বারবার কথাটা রিপিট করতে থাকবে তার কানের উপর। কেমন আজব ধরণের মানুষ। যেন না শুনতেই চান না উনি।

সুজানা কাউকেই বলেনি যে সে অভিক স্যারের বাড়িতে সে পড়াতে যায়। সবাই জানলে সেটা নিয়ে অযথা মাতামাতি হবে। যদিও সে শান্তা আর মেহুলের কাছ থেকে কিছুই লুকোয় না। একাদশ শ্রেণী থেকে তার তিন বান্ধবী আর দুইবন্ধু একসাথে এতদূর। জায়িনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙনে পরিচয় হলেও বোকাসোকা ছেলেটাও তাদের বন্ধুমহলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একজন।

শান্তা পছন্দ করে দুটো টেডিবিয়ার চুজ করে দিল। প্রায় হাজারের কাছাকাছি এল দুটোর দাম। অন্যগুলো খানিকটা সস্তা হলেও সুজানার পছন্দ হচ্ছে না। উনারা বড় মাপের মানুষ। নিজেকে অন্যের কাছে সস্তা উপস্থাপন করা নিয়ে সুজানার নিজের সাথে বহু দ্বন্দ্ব চলে। সে নিজের অভাব অনটনের ব্যাপারগুলো সহজেই কাউকে দেখাতে চায় না। কমবেশি সবারই এসব থাকে। অভাব অনটন না থাকলে অনেক কিছু শেখা থেকে বঞ্চিত হয় মানুষ।

শান্তা টেডি দুটোকে দেখিয়ে বলল

এগুলো তোর স্টুডেন্টদের হেব্বি পছন্দ হবে দেখিস।

একটু ছোট হয়ে গেল মনে হচ্ছে।

মাঝারি সাইজের। টাকা বের কর। বড় পেয়ে যাবি।

আচ্ছা থাক গে।

আর কিছু কিনবি?

হুম।

প্রসাধনীর বড় দোকানটাতে ঢুকে একজোড়া চুড়ি দেখলো সুজানা। শান্তা বলল

সুন্দর। আমিও কিনবো।

সুজানা তার দিকে ফিরে অবাক গলায় বলল

তুই কার জন্য কিনবি?

দাদুর জন্য। কখনো খেয়ালই হয়নি। আজ কিনব। খুশি হবে ভীষণ। মা থাকলে মায়ের জন্য কিনে নিয়ে যেতাম না?

সুজানা হাসলো। বলল

উনিই তো তোর মা।

শান্ত মৃদু হাসলো।

ইয়েস। মাই গ্র্যান্ডমা ইজ মাই এভরিথিং।

______________________________

জন্মদিন উপলক্ষে আজ অনা আবিদের ছুটি। তাদের টিচার আসবে মাগরিবের পরে। কেক কাটার আগে। ছোটোখাটো করে কেক কাটার আয়োজন হবে মনে করে এসেছিল সুজানা। কিন্তু এসেই নবকুঠিরে বিস্তর আয়োজন দেখে হা হয়ে গেল সে। সামান্য একটা জন্মদিনের জন্য এত আয়োজন করা লাগে? আর এত মানুষ? কালো আর সোনালী রঙের সেলোয়ার-কামিজটি গত ঈদে কিনেছিল সে। ওড়নাটা একটু ভারী হওয়ায় সে খুব কমই পড়েছে ড্রেসটা। এমনিতেও সে আরামদায়ক কাপড়চোপড় পড়তে বেশ পছন্দ করে। স্টুডেন্টদের জন্মদিন উপলক্ষে অন্যদিনের চাইতে একটু ব্যতিক্রম ভাবে এসেছে সে। কিন্তু এসেই মনে হলো আরও একটু ব্যতিক্রম হওয়া উচিত ছিল। বারো তের বছরের কয়েকটা মেয়েকে দেখা গেল স্কার্ট পড়া। বাচ্চা বাচ্চা কয়েকটা ছেলেপেলে। যুবক যুবতী তরুণ তরুণী সংখ্যাও নেহাত কম নয়। শুধুই জন্মদিন নয় নিশ্চয়ই আরও বড় কোনো কিছু উপলক্ষ আছে আজ।

সুজানাকে দেখে মর্জিনা আনিকাকে ডেকে নিয়ে এল। আনিকা তাকে দেখে হেসে বলল

সুজানা এসেছেন? বাহ আজকে টিচারকে মিষ্টি লাগছে ভীষণ। এমা এসব কি এনেছেন?

সুজানা হেসে বলল

ওরা কোথায়? সামান্য কিছু এনেছি।

এসবের কোনো প্রয়োজন ছিল না সুজানা। আপনি এখনো স্টুডেন্ট।

সুজানা বিড়বিড়িয়ে বলল

হাহ তো দাওয়াতের কি প্রয়োজন ছিল? বেতন থেকে এক হাজার গচ্ছা গেল।

সুজানা খেয়াল করলো গায়ের পড়নে খয়েরী রঙা জামদানীটা আনিকার গায়ে বেশ ভালো মানিয়েছে। যেমন মায়াবী চেহারা তেমন ব্যবহারও সুন্দর। অনা বড় হলে একদম মায়ের মতো হবে।

সুজানা আনিকার পেছন যেতে যেতে বলল

ম্যাডাম একটা কথা জানতে চাইবো?

হ্যা বলুন।

আজকে কি জাস্ট বার্থডে নাকি অন্য কিছু ও আছে।

আনিকা হাসলো। বলল

কিভাবে বুঝলেন?

না এত মানুষ তো হওয়ার কথা নয় তাই আর কি।

আজকে আমাদের দাদী শ্বাশুড়ি ইন্ডিয়া থেকে আসছেন। উনি উনার মেয়ে মানে মানে আমার ফুপী শ্বাশুড়ির কাছে গিয়েছেন চারমাস হলো। অভি দেশে ফিরেছে শুনে আসছেন। আর কাকীরও একটা মানত ছিল অভি দেশে ফেরার পর বড় করে একটা মেজবান দেবেন আমার দাদা শ্বশুরের। এতিমখানার লোকজন খাওয়াবে এই আর কি। জন্মদিন ও পড়লো একইদিনে।

সুজানা বলল

ওহহ তারমানে আসল ব্যাপার জন্মদিন না। তাহলে তো আমার না আসলেও চলতো।

আনিকা থেমে গিয়ে পেছনে ফিরলো। বলল

আমি কিন্তু বয়সে বড়। বকতে পারি। টিচারকে ছাড়া ওরা কেক কাটবে কি করে?

সুজানা হাসলো। বলল

আপনার দাদী শ্বাশুড়ি ফিরলে কি কেক কাটবে? মানে অনেক রাত হবে। আমাকে সাইফ ভাই নামিয়ে দিল। আমি নটার দিকে আসতে বললাম তো।

সাইফ?

হ্যা। আমার বড় ভাইয়ের মতো। আমার টিচারও বলতে পারেন। আমি উনার কাছে পড়তাম এখনো পড়ি।

ওহহ। আচ্ছা যাওয়া নিয়ে ভাববেন না। বেশি রাত হবেনা। সবাই মাঝপথে গাড়িতে আছে। অভি আর আবিদের বাবা গিয়েছে। এখনি ফিরবে তখন কেক কাটবে।

আবিদ আর অনা ততক্ষণে আরও কয়েকটা বাচ্চা কাচ্চাকে সাথে নিয়ে হাজির। আবিদ কালো চশমা খুলে সুজানাকে চাইলো। অনা সাদা ফ্রক মেলে ধরে বলল

সুজান বিটিফুল । অনা বিটিফুল।

সুজানা হাসলো। দুজনেই টেডিবিয়ারের প্যাকেটটা নিয়ে তন্মধ্যে খুলে ফেলল। টেডিবিয়ার পেয়ে ভীষণ খুশি হয়ে বলল

আলাভিউ সুজান।

সুজানা হেসে দু’জনের গালে আদর করে বলল

আলাভিউ ঠু। আপনাদের তো আজকে ভারী সুন্দর লাগছে।

আবিদ মাথা দুলিয়ে বলল

সুজানকে চুন্দুল লাছছে।

সুজানা আবারও হাসলো। দুজনেই বাকিদের সাথে খেলতে খেলতে চলে গেল।

চাপা স্বভাবের হওয়ায় সুজানা কারো সাথে কথা বলতে পারলো না নিজ থেকে। তবে আনিকার মা আনোয়ারা বেগমকে চেনায় উনার সাথে খোশগল্পে খানিক্ষণ মজে ছিল সে আনিকার ঘরে। খাওয়াদাওয়াও বেশ হলো। অনা আবিদ তখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। সুজানা দোতলায় ঘুরঘুর করলো অনেক্ক্ষণ। কয়েকটা তরুণীর সাথে টুকটাক পরিচয় হলো বৈকি। বেশ ভালোই লাগলো। কত বড় পরিবার আর কত আত্মীয়স্বজন এদের। মেহুলের এখানে বিয়ে হলে সে খুব সুন্দর একটা পরিবার পেত। পাগলটা তো সাইফ ওয়াহিদ ছাড়া কিছুই বুঝেনা। আজব ভালোবাসা তাদের।

পায়চারি করতে করতে আবারও আনিকার ঘরের দিকে পা বাড়াতেই নীচে হৈচৈ শোনা গেল। তারমানে বাড়ির বড় গিন্নী এসে গেছেন।

সুজানা যাবে যাবে করেও ওদিকে গেল না। কোনোমতে কেকটা কাটার পর চলে যেতে পারলেই হলো।

সে যখন আনিকার ঘরে বসেছিল তখন সতের আঠারো বছর বয়সী একটা মেয়ে এসে বলল

আপু তোমাকে আনিকা ভাবি ডাকছে।

কোথায়?

নীচে।

আচ্ছা।

সুজানা মাথা দুলিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।

যাবে কি যাবে না করতে করতে ঘর থেকে বের হলো। পথিমধ্যে অভিককে আসতে দেখে দুপা থেমে গেল তার। অভিকের সাথে আরও কয়েকজন আছে। নিশ্চয়ই বন্ধুটন্ধু হবে। সুজানা পালিয়ে গেল। আনিকার ঘরের ভেতর ঢুকে আনোয়ারা বেগমের পাশে গিয়ে পালঙ্কে গুটিসুটি মেরে বসতেই খেয়াল হলো পুরুষালি গলার আওয়াজ এই ঘরের ভেতরেই প্রবেশ করেছে। এরা এখানে কেন এসেছে বাবা?

সুজানা পিছু করে বসে মাথায় দেয়া কাপড়টা আরও টেনে দিয়ে হাত দিয়ে হাঁটু আগলে তাতে থুঁতনি ঠেকিয়ে বসলো। কয়জন এল তার হিসেব নেই সুজানার কাছে। আনোয়ারা বেগম আর পুরো ঘরের সব মুরব্বি মহিলাদের সাথে কথা বলা হাসাহাসি তামাশা শেষ করার হঠাৎ একজন বলে উঠলো

উনি কে? কালো ড্রেস।

সুজানার বুকের ভেতর কেমন একটা করে উঠলো। সে মাথা আরও নামিয়ে নিল। পাশ থেকে একজন মহিলা বলে উঠলো

মেহমান আর কি। আচ্ছা তোদের টায়ার্ড দেখাচ্ছে। আগে খাওয়াদাওয়া কর। অভি ওদের নিয়ে যাহ।

অভিক মাথা দুলালো। পশ্চিমমুখী হয়ে নত মাথায় বসে থাকা মেয়েটার দিকে ভুরু কুঁচকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর বেরিয়ে গেল বন্ধুদের সাথে। সুজানা হাঁফ ছাড়লো।

আনিকা ডেকেছে তাই যুবকগুলো কোনদিকে গিয়েছে তা দেখার জন্য রুমের বাইরে উঁকি দিতেই চমকে উঠলো। লজ্জা পেয়ে রক্তিম হয়ে উঠলো মুখ। দেখলো কালো পাঞ্জাবি পরিহিত একজন সৌম্যদর্শন মানব তার সামনে দাঁড়িয়ে । পাঞ্জাবির কলারে সোনালী রঙের কাজ।

সুজানাকে অমন করে চমকাতে দেখে মানবের
সরল চোখদুটোতে ধীরেধীরে ফুটে উঠলো ক্রুর হাসির ছাপ। সুজানা মাথা নামিয়ে ওড়না মুচলেকা করতেই অভিক হাসলো। বলল

আপনি ম্যারিড?

নাহ।

তাহলে তখন ওভাবে ঘোমটা টেনে বসেছিলেন কেন?

এমনি। আমার অচেনা কাউকে ফেস করতে অসুবিধা হয় প্রথম প্রথম।

গুড। কিন্তু একটা সমস্যা।

কিহ?

আমার বন্ধুবান্ধব সকলকে বলে দিয়েছি ঘোমটা দিয়ে রাখা মহিলাটি ম্যারিড। তাই সে কারো সাথে কথা বলে না। সো এখন বুঝতে পেরেছেন?

সুজানা চোখ তুলে তাকিয়ে বলল

কিহ?

জাস্ট কারো সাথে কথা বলতে যাবেন না এটাই।

আচ্ছা।

তন্মধ্যে
আনিকা এসে বলল

এমা অভি তুই বললিনা চেঞ্জ করবি। এখানে গল্প শুরু করে দিয়েছিস সুজানার সাথে।

অভিক সুজানার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে নিল। যেতে যেতে বলল

চেঞ্জ করব না আমি।

আনিকা বিড়বিড় বলল

হঠাৎ মুড চেঞ্জ তার

চলবে……

পাঠক রেস্ট্রিকশন খেয়ে বসে আছি। কারো কমেন্টের রিপ্লাই করতে পারব না। বোনের আইডি ব্যবহার করে গল্প পোস্ট করলাম। সবাইকে ভালোবাসা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here