#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৮
মধ্যরাত, চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর তার সাথে কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে পুরো শহর। এই হিম ঠান্ডার মাঝেই নুহাশ দাঁড়িয়ে আছে বেলকনিতে। হাত পা পুরো ঠান্ডা বরফ হয়ে গেছে তারপরও নুহাশ ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে। তর্জনী আর মধ্যমা আঙ্গুলের ফাঁকে জ্বলন্ত সিগারেট। খানিকক্ষণ পর পর জ্বলন্ত সিগারেট ঠোঁটের মাঝে রেখে সিগারেট এক টান দিয়ে সেই ধোঁয়া ছেড়ে দেয় আকাশের পানে আর সেই নিকোটিনের ধোঁয়া গিয়ে মিলিত হচ্ছে কুয়াশার সাথে। হঠাৎ করেই দরজার লাগানোর শব্দ শুনে নুহাশ চমকে উঠে। এতো রাতে তার ঘরে কে এলো? নুহাশ সিগারেট না ফেলেই দ্রুত পায়ে রুমে এসে দরজা পাশে জারাকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। ঠোঁট জোড়া আপনাআপনি আগলা হয়ে যায় তার। নিজের চোখ দুটোকে যেন সে বিশ্বাস করতে পারছে না স্বয়ং জারা তার রুমে। কিন্তু জারা এত রাত্রে তার রুমে কেন? এটা কি তার ভ্রম নাকি বাস্তব। আঙ্গুলের মাঝে থাকা জ্বলন্ত সিগারেটের আগুনের ছেঁকা লাগাতেই নুহাশ আহ করে উঠে সিগারেটটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে তা পা দিয়ে পিষে সামনে তাকায়। না এটা তার ভ্রুম নয় সত্যি জারা তার রুমে এসেছে। মেয়েটার চোখে মুখে কেমন জানি একটা ক্রোধ রয়েছে। মনে হচ্ছে নুহাশকে আজকে কাঁচা গিলে খাবে। নুহাশ ঢোক গিলে মনে মনে বলে।
“এই মেয়ে এমন রাক্ষুসি চাওনি কেন দিয়ে রেখেছে আমার দিকে আর এত রাতে আমার কাছে কি চায়?”
জারা এগিয়ে আসছে তবে হাঁটতে তার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু সেই কষ্টকে উপেক্ষা করে নুহাশের দিকে এগিয়ে আসছে। নুহাশ জারার এগোনো দেখে দু কদম পিছিয়ে গিয়ে থেমে যায় জারার ফোলা আর লাল হয়ে যাওয়া পাটা দেখে। কি হয়েছে মেয়েটার পায়ে? এমন বাজে অবস্থা কেন? নুহাশের ভাবনার মাঝেই জারা নুহাশের সামনে এসে থামে। নুহাশ মাথা নিচু করে জারার পায়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে।
“পায়ে কি হয়েছে?”
জারার কোনো সাড়া শব্দ নেই। নুহাশকে অধৈর্য দেখাল। সে জারার মুখ পানে তাকিয়ে দিশেহারা হয়ে বলল, “কি হলো কথা বলছো না কেন?”
জারা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে নুহাশের দিকে। মাঝে মাঝে জোরে জোরে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়চ্ছে। মনে হচ্ছে যেন কোনো বিষয় নিয়ে বড্ড আপসেট হয়ে আছে। জারা আর নুহাশের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। জারা ঠোঁট ভিজিয়ে ভরাট গলায় বলে।
“নিউজটা কি সত্যি?”
“এটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়।”
“এটাও আমার প্রশ্নের উত্তর নয়।”
“তুমি বাড়াবাড়ি করছো জারা।”
জারা কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “আমি কোনো বাড়াবাড়ি করছি না। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও যেই নিউজটা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে সেটা কি সত্যি।”
নুহাশ তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “তোমার কি মনে হয়?”
“আমার মন নিয়ে তুমি কি করবে?”
“কিচ্ছু করব না। তবে একবার যদি কারো মনে সংশয় ঢুকে পড়ে কাউকে নিয়ে সে সংশয় দূর করতে সেই মানুষটাকে অনেক কষ্ট করতে হয়।”
জারা নিঃশব্দে হাসল আর বলল, “আদৌ কি তুমি আমার মন নিয়ে ভাবো যে আমার মনের সংশয় তুমি দূর করতে চাইবে।”
নুহাশ থমকে যায়। সত্যি তো মেয়েটার মন নিয়ে যদি সে ভাবত তাহলে হয়তো এত দিনে এই মনের ডাকা সে সাড়া দিয়ে দিত। কিন্তু এই মনের ডাকে সাড়া দেওয়া সম্ভব নয়। নুহাশ রাশভারি গলায় বলে।
“তোমার যদি মনে হয় আমি এই কাজটা করেছি তাহলে ভালো আর যদি মনে না হয় আমি কাজটা করেনি তাহলে সেটা আরো ভালো।”
আকস্মিক জারা নুহাশের কলার ধরে নুহাশকে নিজের মুখের কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “আমার স্রেফ উত্তর চাই মিস্টার নুহাশ রহমান তোমার কাছ থেকে।”
প্রথম বারের মতো নুহাশ আর জারা এতটা কাছাকাছি এসেছে। নুহাশ জারার কাছাকাছি আসতেই ভেসে আসে মিষ্টি একটা মেয়েলি ঘ্রাণ তার নাকে। নুহাশ চোখ বন্ধ করে পুনরায় তাকাল। কেন মেয়েটা তাকে এভাবে ত্যক্ত করছে? এভাবে মধ্য রাতে কেন তার ঘরে এসেছে? এই সাহসটা আগে জারা কোনো দিন দেখায় নি এটাই প্রথম বার। নুহাশ এক পলকে তাকিয়ে আছে জারার দিকে। জারা তো জুকের বশে রয়েছে তাই নিজের অবস্থানটা ঠিক কোথায় আছে বুঝতে পারছে না। ফোলোফোলো চোখ, রাগে নাকের পাটা বার বার ফুলাচ্ছে, ভ্রু কুঁচকে রেখেছে মেয়েটা। মেয়েদের রাগলে নাকি অন্যরকম সুন্দর লাগে এই প্রমাণটা আজ হাতে নাতে পেয়ে গেল নুহাশ। কিন্তু নুহাশের অবাধ্য মন যে এখন অন্য কিছু করতে চাইছে। জারার চাওড়া কপালটাতে যে তার উষ্ণ ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। নুহাশ নিজের ভাবনাতে নিজেই চমকে উঠে সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে ঢোক গিলে জারার হাত কলার থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে।
“জারা আমার কলারটা ছড়ো প্লিজ। এতো রাতে এই ঘরে তুমি এসেছো বাড়ির কেউ জানতে পারলে কি হবে বুঝতে পারছো।”
জারা ধরা গলায় বলে, “আমি বুঝতে চাইছি না নুহাশ ভাই। কেন তুমি আমার সাথে এমন করছো? একটুও কি মায়া হয় না আমার জন্য তোমার।”
নুহাশ জোর করে জারার হাত থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে নেয়। জারা নিজের টাল সামলাতে না পেরে আহ করে নিচে পড়ে যায়। একে তো পায়ে ব্যথা তার উপরে এভাবে পড়ে যাওয়াতে পায়ের যন্ত্রণাটা যেন আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়। নুহাশ জারার এমন আর্তনাদ শুনে নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এক প্রকার পাগলের মতো জারার পায়ে হাত রেখে আবেগী গলায় বলে উঠে।
“কোথায় লেগেছে দেখি? সরি জান আমি বুঝতে পারে নি এভাবে যে তোমার পায়ে লেগে যাবে।”
জারা হতবাক হয়ে তার নুহাশ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সে কি শুনল একটু আগে নুহাশের মুখে তাকে জান বলে সম্বোধন করল। জারার ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটে উঠল। সকল ব্যথা, যন্ত্রণা এই দুই অক্ষরের শব্দটা যেন শুষে নিয়েছে মুহূর্তের মাঝে। তার সামান্য একটু আর্তনাত শুনে যেন নুহাশ নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। নুহাশের অস্থিরই বলে দিচ্ছে কত্তটা ভালোবাসে জারাকে। কিন্তু এই ভালোবাসা প্রকাশ করে না কেন? তবে জারা ঠিক নুহাশকে দিয়ে তার ভালোবাসার কথা বলিয়েই ছাড়বে। নুহাশ জারাকে পাঁজাকোলা তুলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিয়ে অধিকার নিয়ে বলে।
“চুপচাপ এখানে বসে থাকো আমি আসছি।”
জারা মুখ ফঁসকে বলে, “নুহাশ ভাই।”
নুহাশ জারার ঠোঁটে তর্জনী রেখে গম্ভীর গলায় বলে, “চুপ একটাও কথা নয়।”
জারা বার কয়েক বার চোখের পাতা ঝাপটাল। নুহাশের করা কার্যক্রম গুলা যেন অবাকের শেষ চূড়া নিয়ে যাচ্ছে জারাকে। নুহাশ ফাস্ট এইড বক্স এনে জারার সামনে হাঁটুমুড়ে বসে ওয়েন্টমেন্ট তর্জনীর আগায় নিয়ে আলতো হাতে জারার পায়ে লাগাতে শুরু করল। জারার পা কেঁপে উঠল যন্ত্রণায়। নু্হাশ জারার মুখের দিকে এক পল তাকিয়ে পায়ে ফু দিতে দিতে গম্ভীর গলায় বলল।
“পায়ের এই বেহাল দশা হলো কি করে?”
জারা সকল ব্যথা, যন্ত্রণা হজম করে নরম স্বরে বলে, “বেহাল দশা হওয়াতে ভালোই হয়েছে কারোর অস্থিরতা তো দেখতে পেলাম আমার জন্য।”
নুহাশ কিছু বলল না শুধু শুনা গেল একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাসের শব্দ। নুহাশ ওয়েন্টমেন্ট লাগাতে ব্যস্ত আর জারা তার নুহাশ ভাইকে দেখতে ব্যস্ত। খুব ইচ্ছে করছে জারার নুহাশের এলোমেলা হয়ে থাকা চুল গুলা আরো এলোমেলো করে দিতে। কিন্তু আপাতত ইচ্ছেটাকে মাটি চাপা দিয়ে বসে রইল। এক সময় নুহাশ বসা থেকে উঠে দরজা খুলে বাইরের পরিবেশটা দেখে এসে জারাকে আবারো পাঁজাকোলা তুলে নিয়ে হাঁটা ধরল জারার রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। জারা তখনও পলকহীন চোখে নুহাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সবটা যেন তার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে। জারা আবেশে চোখ বন্ধ করে নুহাশের চাওড়া বুকে মাথা রাখল এই সুযোগটা আদৌ পাবে কি না তা জানে না সে তবে এখন তো পেয়েছে তাই সুযোগটা লুফে নিল। জারার করা কাজটা দেখে নুহাশ এক পালক জারা দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরল।
অয়ন্তি জগে পানি ভর্তি করে কিচেন থেকে বেরিয়ে উপরের দিকে তাকাতেই থমকে যায় জারা আর নুহাশকে এই অবস্থায় দেখে। অয়ন্তি সাথে সাথে আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। এটা কি দেখল সে এটা কি আদৌ সত্যি নাকি মিথ্যা। অয়ন্তি নিজের হাতে চিমটি দেয়, না সবটাই সত্যি। কিন্তু এত রাতে জারা কেনই বা নুহাশের কোলে থাকবে? ওদের দুজনের মাঝে কি কোনো সম্পর্ক আছে নাকি এটা নেহাতি অয়ন্তির ভুল ধারণা। এমনও তো হতে পারে জারা হাঁটতে পারছে না বলে নুহাশ ওকে তুলে নিয়ে ঘরে রাখতে গেছে কিন্তু এত রাতে জারার ঘরের বাইরে কেন? আচ্ছা এই কথাটা কি তার জাহিনকে জানানোর দরকার নাকি তার আগে জারার সাথে কথা বলা দরকার। অয়ন্তি যেন একটা দুটানায় পড়ে গেছে। একে তো বাড়িতে নুহাশের কেসটা নিয়ে সমস্যা তার উপরে এই ঘটনাটা বললে হয়তো আরো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তার চেয়ে ভালো এখন চুপ থাকা আর জারার সাথে এই বিষয়ে কথা বলা। অয়ন্তি চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে আগে নুহাশ যাক নিজের ঘরে তারপর সে ঘরে যাবে। যদি দুজন মুখোমুখি হয় তাহলে একটা বিচ্ছিরি ব্যাপার ঘটে যাবে।
নুহাশ জারাকে জারার রুমে এনে শুইয়ে দিয়ে ব্ল্যাঙ্কেটটা জারার গায়ে দিয়ে চলে যেতে নিবে। জারা সাথে সাথে নুহাশের হাত জাপটে ধরে অভিমানী গলায় বলে।
“তুমি বললে না তো এই নিউজটা সত্যি নাকি মিথ্যে?”
নুহাশ জারার দিকে না ফিরে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাব এমন কাজ আমি করি নি জারা। আর ভবিষ্যতেও করব না।”
নুহাশ কথাটা বলে নুহাশ চলে যায়। জারা হাত দুটো আড়াআড়ি করে নিজের দু বাহু শক্ত ধরে নিজের মুখ কাঁধে হেলিয়ে। নিজের গা থেকে মনে হচ্ছে যেন নুহাশের গায়ের গন্ধটা এখনও লেগে আছে। জারা বা হাতের তর্জনী এনে নিজের ঠোঁটের উপরে রাখে। নুহাশ তার ঠোঁট ছুঁয়েছে, পা ছুঁয়েছে, কোমড় ছুঁয়েছে এই অপ্রত্যাশিত ছোঁয়াগুলা সে সারা জীবন মনে রাখবে সারা জীবন।
_________
নুহাশ নিজের ঘরে এসে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পরিহিত জ্যাকেটটা নাকের কাছে এনে চোখ বন্ধ করে ঘ্রাণ নেয়। মিষ্টি একটা ঘ্রাণ তার সারা গায়ে মেখে গেছে। নুহাশ ডান হাতটা দিয়ে বুকের বা পাশটা শক্ত করে চেপে ধরে। একটু আগেও এখানটায় জারার মাথাটা ছিল আর এখন এই জায়াগাটা শূণ্য। যদি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই মাথাটা তার বুকের বা পাশটা শক্ত করে ধরে রাখার অধিকার পেতো তাহলে হয়ত নিজেকে পৃথিবীতে থাকা ভাগ্যবান পুরুষগুলার মাঝে একজন ভাগ্যবান পুরুষ মনে করত। কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয় চাইলেই কি আর সব পাওয়া যায়।
________
ভোরের আলো ফুটে গেছে। জাহিন আধো আধো চোখে সামনের দিকে তাকাল চোখে ভেসে উঠল ঘুমন্ত অয়ন্তির নিষ্পাপ মুখখানা। এক্কেবারে লেপ মুড়ি দিয়ে মেয়েটা বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে। জাহিন অপলক চেয়ে রইল ঘুমন্ত অয়ন্তির দিকে। মেয়েটা যদি জানত ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে কত্তটা মায়াবী, কত্ত স্নিগ্ধ লাগে তাহলে হয়ত জাহিনের ঘুম থেকে উঠার আগেই সে উঠে পারত। জাহিন মুদৃ হাসল এই মেয়ের মায়ায় সে আটকে গেছে এখন এই মেয়েকে তার নিজের করে চাই। কিন্তু মেয়েটা কি তার সাথে স্বাভাবিক হবে। তাদের বিয়েটা যে আর চার পাঁচটা বিয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবে হয় নি। আরেকটু সময় দেওয়া যাক মেয়েটাকে তারপর না হয় এক নতুন দাম্পত্য জীবন শুরু করা যাবে। কথায় আছে সবুরে মেওয়া ফেল। সে না হয় মেওয়া ফলাতে আরেকটু সবুর করল।
জাহিন উঠতে নিয়ে কিছু একটা মনে করে অয়ন্তির দিকে এগিয়ে গেল। ঘুমন্ত অয়ন্তির ডান পাশে পুরুষালী হাতটা রেখে অয়ন্তির দিকে ঝুঁকে এলো। অয়ন্তির ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পারছে জাহিন। মেয়েটা এক্কেবারে ঘুমে বেহাল হয়ে আছে। জাহিন মুচকি হেসে অয়ন্তির কপালের মাঝ বরাবর নিজের ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিয়ে মনে মনে বলে।
“জানি না নিজেকে আপনার জীবনের সাথে ধরে রাখত পারব কিনা। তবে চেষ্টা করব নিজেকে সারাটা জীবন আপনার পাশে রাখার জন্য।”
অয়ন্তির চোখের পাতা নড়ে উঠে। জাহিন তা দেখে জলদি করে অয়ন্তির কাছ থেকে দূরে সরে আসে। জাহিনে ভেবেছিল অয়ন্তি জেগে যাবে কিন্তু অয়ন্তি জাগলো না বরং সে আরো লেপ মুড়ি দিয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। জাহিন উঠে ওয়াশরুম চলে গেল। তার অনেক কাজ আজকে। জাহিন চলে যেতেই অয়ন্তি চোখ মেলে তাকায়। জাহিনের গরম নিঃশ্বাস যখন তার মুখের উপরে আছড়ে পড়ছিল তখনই অয়ন্তির ঘুম ছুটে গিয়েছিল। কিন্তু চোখ বুজে রেখেছিল, তার ঘুম বড্ড পাতলা আশে পাশে কিছু হলেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। অয়ন্তি ডান হাতটা বের করে জাহিনের ঠোঁট ছুঁয়ে যাওয়া স্থানে হাত রাখল। এখনও মনে হচ্ছে যেন জাহিনের ঠোঁটের উষ্ণতা আর ভেজাভেজা ভাবটা রয়ে গেছে কপালের মধ্যস্থানে। জাহিন লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে আদর করে গেল। লোকটা সত্যি অদ্ভুত। অয়ন্তি লাজুক হেসে লেপ দিয়ে মাথাটা ঢেকে নেয়।
______
শেখ পরিবারের সকল সদস্যরা ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। তবে নুহাশ আর জাহিন বাদে। তারা দুজন অনেক আগেই বের হয়ে গেছে। ডায়নিং টেবিলে থাকা সবাই স্বাভাবিক আছে কিন্তু রিহান স্বাভাবিক থাকতে পারছে না বাবার সামনে। বাবা বাড়িতে থাকাকালীন সে নিজের রুম থেকে বের হতে চায় নি কিন্তু যখন বাবা নিজ থেকে ডেকে পাঠিয়েছে এক প্রকার বাধ্য হয় তাকে ডাইনিং টেবিলে আসতে হয়েছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল বাবা তাকে একটা কথাও বলছে না। সে তো নিজেকে মনে মনে প্রস্তুত করেই নিচে নেমেছে বাবার হাতে চড় আর বকাবকি খাওয়ার জন্য। কিন্তু হাওয়া উল্টো দিকে বইছে মনে হচ্ছে তাই এ যাত্রায় সে বেঁচে গেছে। আজমল শেখ খাওয়া দাওয়া করে উঠে পড়ে তাতে রিহান হাফ ছেড়ে বাঁচে। এতক্ষণ মনে হচ্ছিল শ্বাসটা নাকের ডগায় আটকে ছিল। আজমল শেখ চলে যেতে মাকে ইশারা করে বলে।
“মা বাবা…।”
ছেলেকে থামিয়ে দিয়ে জোহরা বেগম বলেন, “চুপচাপ খেয়ে উঠ।”
রিহান বুঝতে পারল এই কাজটা তার মায়ের। রিহানের মনে এখন আর কোনো ভয় নেই সে মনের আনন্দে খেতে শুরু করল। জোহরা বেগম শিরিনকে ডেকে বলেন।
“জারাকে দিয়ে আয় খাবারটা মেয়েটা পায়ে যেভাবে ব্যথা পেয়েছে নিচে নামার দরকার নেই।”
“মা উপরে খাবার নেওয়ার দরকার নেই আমি এসে পড়েছি।”
মেয়েকে এই পা নিয়ে নিচে আসতে দেখে জোহরা বেগম রাগ দেখিয়ে বলেন, “কে বলেছে তোকে নিচে আসার জন্য এই পা নিয়ে।
“মা আমি ঠিক আছি।”
আহান চেয়ার থেকে নেমে জারার জন্য চেয়ার টেনে দিয়ে বলে, “আপু তুমি এখানে বসো।”
জারা হতবাক হয়ে বলে, “বাবা এতো ভালোবাসা আমার জন্য।”
এর মাঝে রিহান বলে উঠে, “তা মা আমার ভাবি কোথায়? ওনাকে তো দেখছি না ওনাকে ডাকো ওনার সাথে একটু কথা বলি।”
অয়ন্তি চমকে উঠে রিহানের কথা শুনে। অয়ন্তি কিচেনের এক জায়গাতে ঘাপটি পেরে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার বড্ড অস্বস্তি লাগছে রিহানের সামনে যেতে কিন্তু এবার মনে হচ্ছে যেতেই হবে। জোহরা বেগম অয়ন্তিকে ডাকল। অয়ন্তি মাথায় সুন্দর করে কাপড় দিয়ে ডায়নিং টেবিলে এসে উপস্থিত হল। রিহান প্রফুল্ল হয়ে বলে।
“তা ভাবি ভালো আছেন?”
অয়ন্তি আস্তে করে বলে, “হুম।”
রিহান বুঝতে পারল অয়ন্তি অস্বস্তিবোধ করছে। তাই কৌতুকের স্বরে বলে, “ভাবি আগের দিন বাঘে খাইছে বুঝলেন তাই আগে কি ঘটেছে তা নিয়ে পড়ে থাকবেন না। এখন যেই সম্পর্ক গুলোতে জড়িয়েছেন সেই সম্পর্ক গুলো নিয়ে থাকেন। আগে কোথায় কি ঘটেছিল তা ভুলে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবে চলুন তাহলেই দেখবেন সব কিছু সুন্দর ভাবে চলছে।”
অয়ন্তি রিহানের কথার মানে বুঝতে পারল। রিহান যে তাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে চাইছে এটা সে টের বুঝতে পারছে। কিন্তু তারপরও অয়ন্তির অস্থিরতা কমছে না ভবিষতে এই সম্পর্কগুলা নিয়ে আবার কোনো সমস্যা হবে না তো।
#চলবে