#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_47
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রণালী নিজের ঘরে এসে কাপড় চোপড় গোছাচ্ছে৷ বেশ অনেক হয়েছে সে আর এসব সহ্য করতে পারছে না৷ তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে আজই সে এই বাড়ি ছেড়ে আবার নিজের বাবার কাছে ফিরে যাবে। এই জন্য সে তৈরি হয়ে নিচ্ছিল। সায়মা চৌধুরী প্রণালীর রুমে এসে তাকে এভাবে তৈরি হতে দেখে অবাক হয়ে যান। প্রণালীর কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন,”মা, তুমি হঠাৎ রেডি হচ্ছ কেন? আবার ব্যাগ পত্রও গুছিয়ে রাখছ। কোথাও কি যাবে?”
প্রণালী একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”হ্যাঁ, আন্টি। আমি এখান থেকে আমার বাড়িতে ফিরে যাব।”
সায়মা চৌধুরীর মুখ কালো হয়ে যায়। এই মেয়েই তো এখন তাদের আশা ভরসা। তারা তো স্বপ্ন দেখছে এই মেয়েই পুষ্পা চৌধুরীকে টাইট দেবে। কিন্তু এই মেয়ে এভাবে চলে গেলে তো তাদের সব আশা শেষ হয়ে যাবে। তাই সায়মা চৌধুরী বলে ওঠেন,”তুমি এই বাড়ি থেকে কোথাও যেওনা প্রণালী। এটা তোমার বাড়ি৷ তোমাকে তো এখানেই থাকতে হবে। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িই যে মেয়ের সব। শ্বশুর বাড়িতে টিকে থাকতে হবে সেটা মাটি কামড়ে হলেও।”
প্রণালী স্পষ্ট গলায় বলে,”সরি, আমি এসব পুরানো দিনের ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী নই। আমি এত লড়াই ঝগড়া করার মুডে নই। আর আমি চাই না, আমার জন্য এই বাড়িতে ফারদার আর কোন ঝামেলা হোক। আমি এমনিতেই অনেক ঝামেলার মাঝে আছি। আমি চাই না আমার ঝামেলা আরো বাড়ুক। আমার একটা শান্তিপূর্ণ জীবনের ভীষণ দরকার।”
এমন সময় সজল চৌধুরী এসে বলেন,”আমি বুঝতে পারছি তুমি এখানে অতীষ্ঠ হয়ে উঠছ। তবে এখন তোমায় একটু সহ্য করতেই হবে। এটুকু সহ্য করেই দেখো জীবনে অনেক সুখী হবে।”
“আমি পারবো না আঙ্কেল। আমার আর সেই সহ্যক্ষমতা নেই।”
“ঠিক আছে। তোমায় কিছু সহ্য করতে হবে। তোমার শান্তি চাই তো? আমি তোমার শান্তির ব্যবস্থা করছি। তবে তোমায় আর বাপের বাড়ি যেতে হবে না। তুমি যাবে অন্য কোথাও?”
“অন্য কোথাও মানে কোথায়?”
“হানিমুনে।”
“কি?!”
“আমার উপর বিশ্বাস রাখো প্রণালী। আমি সব ঠিক করে দেব। কাপড় চোপড় গুছিয়ে ভালোই করেছ। আজ রাতেই তোমরা বেড়িয়ে পড়বে।”
“কিন্তু..”
“কোন কিন্তু নয়। সায়মা তুই প্রণালীকে সামলা। আমি ওদিকটা ম্যানেজ করি।”
~~~~~~~~~~~
পুষ্পা চৌধুরী টায়রার হাতে বার্নাল লাগাতে লাগাতে বলেন,”খুব লাগছে তাইনা? ইশ,ফোস্কা পড়ে গেছে। ঐ মেয়েটার সাহস দেখে আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি। প্রথমে কি সুন্দর ভেজা বিড়াল হয়ে থাকত আর সুযোগ পেতেই নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দিলো। আমাকে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছে! ও এখনো পুষ্পা চৌধুরীকে চিনে নি। ওর আমি এমন অবস্থা করব যে..”
টায়রা প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিল৷ সে বলে,”আপনি চিন্তা করবেন না আন্টি। ঐ মেয়ের আমি এমন ব্যবস্থা করব যে ও ভাবতেই পারছে না। কিন্তু তার আগে আমাকে সমুদ্রকে নিজের করে নিতে হবে। আপনি প্লিজ এমন কোন ব্যবস্থা করুন যাতে আমি সমুদ্রকে নিজের করে পাই।”
পু্ষ্পা চৌধুরী বলেন,”আগে ঐ মেয়েকে তাড়াতে হবে।”
“না, আন্টি। আমি চাই ওর চোখের সামনে ওর বরের সাথে একান্ত সময় কা*টাতে। এভাবে ওকে ওর অবস্থানটা বুঝিয়ে দিতে চাই।”
“তুমি এমনটা চাইলে তাই হবে। বাবাইকে আমি বলে দেব তোমার সাথে একান্ত সময় কাটাতে। বাবাই তোমাকে ভালোবাসে। তাই ও নারাজ হবে না।”
টায়রা কিছু একটা ভেবে বলে,”আমার মনে হয় না সমুদ্র আমায় ভালোবাসে বলে। যদি ও সত্যি আমায় ভালোবাসত তাহলে যখন ঐ মেয়েটা যখন আমার হাতে গরম কফি ঢেলে দিল তখন প্রতিবাদ করত, ও তো এমন কিছুই করল না। কেমন নীরব দর্শকের মতো সবকিছু দেখে গেল।”
পুষ্পা চৌধুরী গর্জে উঠে বললেন,”বাবাই আমার ছেলে। আমার কথাই ওর কাছে শেষ কথা। আমি যদি ওকে বলি তোমাকে ভালোবাসতে হবে তাহলে ওকে তোমাকেই ভালোবাসতে হবে। আমার কথার অবাধ্য ও হতে পারবে না।”
পুষ্পা চৌধুরীর কথায় টায়রা ভীষণ খুশি হয়। অতঃপর মনে মনে প্রণালীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,”এবার দেখো মেয়ে, তোমার আমি কি অবস্থা করি।”
এই বলে সে পুষ্পা চৌধুরীকে বলে,”আন্টি আপনি একটু সমুদ্রকে ডেকে পাঠান। প্রমাণ করিয়ে দিন যে আপনার কথায় ও আমায় ভালোবাসবে।”
পুষ্পা চৌধুরী সমুদ্রকে ডেকে পাঠান। সমুদ্র আসতেই তিনি বলেন,”বাবাই, তুমি তো আমার সব কথা শোনো। আমি যদি কিছু বলতে বলি বলবে।”
“হ্যাঁ, মম। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।”
“তাহলে এক্ষুনি আমার সামনে এই গোলাপ ফুলটা দিয়ে টায়রাকে প্রপোজ করো।”
সমুদ্র হচকচিয়ে যায়। আসলে তো তার মনে টায়রার জন্য কোন ফিলিংস নেই। সে তো শুধু প্রণালীকে জ্বালানোর জন্য টায়রাকে ব্যবহার করছে। পুষ্পা চৌধুরী সমুদ্রকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলেন,”কি হলো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমি যা বলছি করো।”
সমুদ্র একপলক টায়রার দিকে তাকায়৷ ফুলটা হাতে নিয়ে টায়রার দিকে বাড়িয়ে দেয়। পুষ্পা চৌধুরী বলে ওঠেন,”এভাবে নয়। হাটু গেড়ে বসে টায়রাকে আই লাভ ইউ বলো।”
“ওকে, মম।”
সমুদ্র নিজের মায়ের কথা মতো হাটু গেড়ে বসে টায়রাকে বলে,”আই লাভ ইউ।”
টায়রা আনন্দে লাফিয়ে ওঠে। পুষ্পা চৌধুরী বিশ্বজয়ের মতো হেসে বলেন,”আমার বাবাই আমারই আছে।”
~~~~~~~~~~~~~~
সজল চৌধুরী সায়মা চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করেন,”তোকে যা বলেছিলাম করেছিস তো?”
“হ্যাঁ, ভাইয়া। আমি তোমার কথা মতো ভাবি আর ঐ টায়রা পায়রার খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছি। ওরা এখন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।”
“বেশ, বেশ এটাই সুবর্ণ সুযোগ। এবার তুই যা সমুদ্রকে ডেকে আন। আমি নাটক শুরু করে দেই।”
“আচ্ছা।”
সজল চৌধুরী বিছানায় অসুস্থ হওয়ার ভান করে শুয়ে থাকেন। সায়মা চৌধুরী সমুদ্রের রুমে গিয়ে দরজা নক করতে থাকেন। সমুদ্র হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে বলে,”কি হয়েছে ফুপি? এমন উদ্ভ্রান্তের মতো দরজা ধাক্কাচ্ছ কেন?”
সায়মা চৌধুরী কান্নার সুরে বলে,”ভাইয়া খুব অসুস্থ রে সমুদ্র। তোকে ডাকছে।”
“কি হয়েছে ড্যাডের? আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।”
এই বলে সমুদ্র দৌড়ে সজল চৌধুরীর রুমে যান। সজল চৌধুরী বিছানায় শুয়ে কাতড়াচ্ছেন দেখে সমুদ্র তার পাশে গিয়ে বসে বলে,”ড্যাড, তোমার কি হয়েছে? ডাক্তার আঙ্কেলকে ডেকেছ? চলো আমি তোমায় হসপিটালে নিয়ে যাই।'”
“আমি এখন ঠিক আছি। তোর ডক্টর আঙ্কেল আমায় দেখে গেছেন। তিনি বলেছেন প্রেশার বেড়ে গিয়েছিল।”
“তোমাকে কতদিন না বলেছি এত টেনশন না করতে। এইজন্য তোমার প্রেশার বাড়ে। প্রেশারের ওষুধ খেয়েছ?”
সায়মা চৌধুরী তখনই পেছন থেকে বলে ওঠেন,”এটাই তো সমস্যা সমুদ্র। ডাক্তার বার বার করে বলেছেন তোর বাবাকে সে যেন সঠিক সময় ওষুধ খান। কিন্তু তোর বাবা ওষুধ খেতেই চাচ্ছেন না।”
সমুদ্র চৌধুরী নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি ওষুধ খেতে চাইছ না কেন? এভাবে চললে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।”
“কেন খাবো আমি ওষুধ? তুই আমার কোন কথা শুনিস যে আমি তোর কথা শুনব।”
“আচ্ছা, তুমি বলো আমি কি করলে তুমি ওষুধ খাবে। আমি তাই করবো।”
সজল চৌধুরী মনে মনে হাসেন৷ এই সুযোগই তো তিনি খুঁজছিলেন,”আমি চাই তুমি প্রণালীর সাথে হানিমুনে যাও।”
“কি?!”
“হ্যাঁ, আর এই হানিমুনে যাবার সময় তোমার ফোন আমার কাছে জমা দিয়ে যাবে। ভুলেও নিজের মায়ের সাথে যোগাযোগ করবে না। নাহলে আমি ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবে।”
“বাবা, এটা তোমার কেমন ছেলেমানুষী? আমি পারবো না তোমার কথা রাখতে।”
“তাহলে আমিও ওষুধ খাবো না।”
সায়মা চৌধুরী বলেন,”ডাক্তার বলেছে ওষুধ না খেলে তোর বাবার জীবন নিয়ে টানাটানি।”
সমুদ্র দ্বিধায় পড়ে যায়। অনেক ভেবে বলে,”ঠিক আছে,আমি রাজি।”
এই বলে সে নিজের ফোন সজল চৌধুরীর হাতে তুলে দেয় এবং সেই রাতেই প্রণালীকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে সিলেটের উদ্দ্যেশ্যে।
to be continue…
[যারা গল্প পড়েন লাইক, কমেন্ট করছেন না তারা পুষ্পা চৌধুরীর মতো শাশুড়ী পাবেন বলে দিলাম! ]