একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_49 #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
202

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_49
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রণালী ও সমুদ্র ব্ল্যাক মুন রিসোর্টে সময় কা’টাচ্ছে। সমুদ্রর কি হয়েছে সে জানে না। না চাইতেই অনেক বার তার নজর চলে যাচ্ছে প্রণালীর দিকে। নিজের এই বদলে সে অবাক হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রণালীও সমুদ্রর হঠাৎ ব্যবহারে চমকে গিয়েছিল। যদিও সে এই ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব দিতে ইচ্ছুক নয়। তাই সে সমুদ্রের কথা বাদ দিয়ে শান্তর কথা ভাবতে থাকে। শান্তকে সে কিছুতেই এত শান্তিতে থাকতে দেবে না। শান্ত প্রণালীর গায়ে হাত তুলেছে এর পরিণাম ভালো হবে না। প্রণালী ক্ষোভে ফুসছিল। হঠাৎ করে সমুদ্র,”আহ” করে গোঙানি করে ওঠে। প্রণালী সমুদ্রর কাছে এসে বুঝতে পারে তখন শান্তর সাথে মা*রামারি করে মুখে আঘাত পেয়েছিল সেখানেই বোধহয় ব্যাথা করছে। প্রণালী সমুদ্রকে বলে,”আপনার এতো হিরোগিরি করার কি দরকার ছিল? এখন শুধু শুধু ভুগছেন। আপনার মম যদি এটা জানতে পারে তাহলে তো কেঁদে কেঁদে চোখের জলের নদী বয়ে দেবে। তার বাবাইয়ের কি অবস্থা!”

সমুদ্র আচমকা প্রণালীর ভীষণ কাছে এসে বলে,”মজা নিচ্চজ তাইনা? আমার এমন অবস্থা তো তোমার জন্যই হয়েছে। কোথায় আমায় ধন্যবাদ দেবে তা না আমাকে আরো পিঞ্চ মা*রছ!”

প্রণালী সাবধানে সমুদ্রর থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বলে,”আমি তো আপনাকে আমার হয়ে মা*রামারি করতে বলিনি। আপনি নিজের ইচ্ছাতেই করেছেন। তাহলে আমি কেন আপনাকে ধন্যবাদ জানাবো?”

“অকৃতজ্ঞ! যাইহোক ঐ ছেলেটা কেন থা**প্পড় মা*রল তোমাকে? কে ঐ ছেলেটা তুমি চেনো?”

প্রণালী মৌন থাকে। কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে বলে,”ও আমার প্রাক্তন।”

“ও, আচ্ছা। এই সেই ছেলে যে তোমায় পোল্টি দিয়েছিল!”

প্রণালী গরম চোখে তাকাতেই সমুদ্র চুপ হয়ে যায়। অতঃপর বিছানায় শুয়ে পড়ে বলে,”আমার মাথায় খুব ব্যাথা করছে। কেউ মাথা টিপে দিলে ভালো লাগত।”

প্রণালী চুপচাপ সমুদ্রর মাথা টিপে দিতে থাকে। শুধুমাত্র কৃতজ্ঞতাবশতই। এই লোকটা তার জন্য মা*রামারি করল সেখানে সে এটুকু তো করতেই পারে! ভেবেই সে সমুদ্রর মাথা টিপছিল। অন্যদিকে সমুদ্রর মধ্যে তখন অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিল। তার হৃদস্পন্দন হঠাৎ করেই ভীষণ বেড়ে যাচ্ছিল। প্রণালীর সান্নিধ্যে কেন এমন হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। আড়চোখে দেখতে থাকে প্রণালীকে। এই মুখশ্রী কেমন জানি তাকে শান্তি দিচ্ছে। কিন্তু এমন কেন হচ্ছে। প্রণালীর সমুদ্রের দিকে কোন নজর নেই। যদি থাকত তাহলে সে দেখতে পেত এক জোড়া চোখ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকেই দেখে চলেছে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পু্ষ্পা চৌধুরীর মাথায় আগুন জ্বলে গেছে যখন থেকে তিনি জানতে পারলেন সমুদ্র আর প্রণালী বাসায় নেই। তারা একসাথে কোথায় গেছে সেটাও তিনি জানেন না। সমুদ্রর ফোনও সুইচ স্টপ বলছে। সব মিলিয়ে ভীষণ রেগে আছেন তিনি। সায়মা চৌধুরী বিপদ বুঝতে পেরে সকাল সকাল নিজের শ্বশুর বাড়ি চম্পট দিয়েছেন। সজল চৌধুরীও বিজনেস মিটিং এর বাহানা দিয়ে চলে গেছেন। পুষ্পা চৌধুরী সহজেই বুঝতে পারছেন যে তারা সবাই মিলেই কোন প্ল্যান করে সব করেছে। টায়রা তার সাথেই আছে। পুষ্পা চৌধুরী টায়রাকে বলে,”আচ্ছা, কালকের রাতের খাবারে কি কিছু মেশানো ছিল? আমার এখনো মনে আছে ডিনার করার পর আমি দুচোখ খুলে রাখতে পারছিলাম না আর।”

“জ্বি, আন্টি। আমারও তো একই অবস্থা।”

“বুঝতে পেরেছি। সব চক্রান্ত। সজল আমার থেকে আমার বাবাইকে কেড়ে নিতে চাইছে। নিজের পছন্দমতো মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছে আর এখন চাইছে ঐ মেয়ের সাহায্য নিয়ে আমার বাবাইয়ের মগজ ধোলাই করতে চাইছে। আমার খুব ভয় হচ্ছে টায়রা, আমার ভোলাভালা বাবাইটাকে ঐ চতুর মেয়েটা ছলাকলা করে বশ করে নেবে না তো?”

“তুমি চিন্তা করো না, আন্টি। ঐ মেয়ে কিছুই করতে পারবে না। আমি সমুদ্রকে চিনি। দেখলে না, ও সেদিন তোমার কথায় কিভাবে আমায় প্রপোজ করল। ও শুধু আমাকে ভালোবাসে। ঐ মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাবে না।”

“তাই যেন হয় টায়রা। আমার বাবাইকে আমি হারাতে চাই না। ঐ চতুর মেয়ের কব্জায় আমি কিছুতেই নিজের বাবাইকে ফিরতে দেব না। একবার বাবাইকে ফিরতে দাও ঐ মেয়েকে আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।”

টায়রা খুশি হয়ে যায় পুষ্পা চৌধুরীর কথা শুনে।

~~~~~~~~~~~~~~
তপ্ত দুপুর, সমুদ্র গভীর মগ্ন। প্রণালীর ভালো লাগছিল না তাই সে নিচে ঘুরতে বের হয়। সে রিসোর্টের পাশেই একটি চা বাগানে ঘুরতে গেছিল। প্রণালী আগেও একবার বন্ধুদের সাথে সিলেটে ঘুরতে এসেছিল। তখন চা-বাগানেও ঘুরেছিল। বেশ ভালো লেগেছিল। তাই আজও চলে এসেছে। হঠাৎ করেই কেউ প্রণালীর হাত ধরে টেনে তাকে নিয়ে যায়। প্রণালী কিছু বুঝে উঠতে পারে না। কিছুক্ষণ পর নিজের চোখের সামনে শান্তকে দেখতে পায়। শান্তকে দেখে প্রণালী ভীষণ রেগে যায়। তখনকার স্মৃতি মনে পড়ে। ঠাস করে চ*ড় বসিয়ে দেয় শান্তর গালে। তাও একবার নয় পরপর পাঁচ বার। শান্ত অবাক হয়ে তাকায় প্রণালীর দিকে। বলে ওঠে,”তুমি আমায় মা*রলে প্রণালী?”

“কেন? হাত শুধু তোমার একাই আছে? আমার হাত নেই? তখন আমার স্বামীর হাতে এতগুলো থা**প্পড় খেয়ে তোমার আক্কেল হয়নি তাই না? তাই আবার চলে এসেছ আমায় বিরক্ত করতে।”

“স্বামী! তুমি বিয়ে করেছ?”

“হ্যাঁ, করেছি। কেন কি ভেবেছিলে তুমি? আমি আজীবন তোমার কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকব?”

শান্ত আচমকা প্রণালীর হাতটা ধরে বলে,”জানো, আমি লারার কাছে একটুও শান্তি পাই না। ওর মধ্যে সব সময় তোমাকে খোঁজার চেষ্টা করি। তোমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে কখন তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি সেটা নিজেও জানি না। আজ আমি তোমায় মা***রার পর থেকে কতটা অনুশোচনায় ভুগছি তুমি জানো না। আমার অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।”

প্রণালী হেসে বলে,”তাই বুঝি? আমাকে মে*রে তোমার আফসোস হচ্ছে? কিন্তু বিশ্বাস করো তোমায় মে*রে আমার একটুও আফসোস হচ্ছে না। বরং ইচ্ছা করছে তোমায় ঠাটিয়ে আরো একটা..”

শান্ত আচমকা প্রণালীর হাত ধরে বলে,”চলো না, আমরা অতীতের সব কিছু ভুলে যাই। আবার সবটা নতুন করে শুরু করি। দূরে কোথাও পালিয়ে যাই আমরা….তারপর সবটা আবার নতুন করে শুরু করব।”

প্রণালী শান্তকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে বলে,”খবরদার! এই স্পর্ধা দ্বিতীয় বার আর দেখাতে এসো না। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।”

শান্ত নাছোড়বান্দা। সে জোরপূর্বক প্রণালীকে জড়িয়ে ধরে। এমন সময় কোথা থেকে যেন সমুদ্র চলে আসে। শান্ত আর প্রণালীকে এত পাশাপাশি দেখে রেগে যায়।

সমুদ্র এসে এক ঝটকায় শান্ত আর প্রণালীকে দূরে সরিয়ে দেয়। সমুদ্র শান্তর কলার ধরে বলে,”তোকে না বলেছি আমার স্ত্রীর থেকে দূরে থাকতে? তাও চলে এসেছিস? সকালের মার গুলো ভুলে গেছিস?”

শান্ত বলে,”তোর স্ত্রী আমাকে ভালোবাসে। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ আমার জন্য অঢেল ভালোবাসা দেখতে পারবি।”

সমুদ্র প্রণালীর দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি এই ছেলেটাকে এর প্রাপ্য উত্তর দিয়ে দাও।”

প্রণালী বলে,”আমার চোখে ভালো করে দেখ শান্ত, তোমার জন্য সেখানে একটুও ভালোবাসা নেই। আছে এক বুক ঘৃণা। তোমায় আমি এতটাই ঘৃণা করি যে, তোমার মৃত্যুর খবর পেলে আমি মিষ্টি বিলি করব।”

“প্রণালী!”

সমুদ্র হেসে বলে,”শুনলি তো ওর কথা। ও তোকে নয় শুধু আমাকে ভালোবাসে। তাই না প্রণালী?”

প্রণালী অবাক হয়ে যায় সমুদ্রর কথা শুনে। সমুদ্র তার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে। প্রণালী কোন উত্তর দেয় না। শান্ত বলে,”ওর চুপ থাকাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে ও তোকে ভালোবাসে না। আমি জানি ও মুখে যাই বলুক ও আসলে আমাকেই ভালোবাসে।”

প্রণালী বলে ওঠে,”তুমি ভুল ভাবছ শান্ত
আমি…আমি শুধু আর শুধু….”

থেমে,
“সমুদ্রকেই ভালোবাসি।”

কথাটা মন থেকে বলে নি প্রণালী। পরিস্থিতির চাপে পড়ে বাধ্য হয়েই বলেছে। আসলে তো তার মনে সমুদ্রের প্রতি কোন অনুভূতি নেই। কিন্তু সমুদ্রর কি হলো সে জানে না। প্রণালীর কথা শুনে তার হৃদয়ে শীতল বাতাস বইছিল। মন ফুল ফুটছিল।

to be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here