#সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️
#আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️
#পর্বসংখ্যা-(১৩)
_______________________________
এতো ভালোবাসার পরেও কিভাবে পারলো এমন কথা বলতে?সে-তো খুব ভালো স্বামী হয়ে গিয়েছিলো। শুধু কাল লিয়ানার কারণে মাথাটা গরম ছিলো। কিন্তু সে-তো লিয়ানাকেও ছেড়ে দেয়নি। পানিশমেন্ট দিয়েছে। কালরাতে বাইরে থেকে আসার পর প্রভা তাকে একটাবারও বুঝার চেষ্টা করেনি। উল্টো তার ওপর অনর্থক চেঁচিয়েছে। পরে তো আদর করে কাছে টেনেছে। একটা সংসারের দায়িত্ব কি শুধু তার একার ছিলো প্রভার কি নেই? মানুষ তো মাত্র তারা দু’জন। অন্যদের ঝামেলা নেই। ঝামেলা হবে বলেই তো প্রভাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে। টোনাটুনির সংসার পেতে ছিলো। এতো সুখ পাবে কোথায় মেয়েটা? অফিস থেকে এসেও ডিনার রেডি করে প্রভাকে নিয়ে খেতে বসেছে। অন্যকোনো বউ হলেতো সব নিজেই করতো। স্বামী সেবা করতো! প্রভা তো এক গ্লাস পানিও ঢেলে দেয়নি কখনো। তবুও আরমানের কোনো অভিযোগ-অনুযোগ কিছুই নেই। ইভেন সে নিজেই প্রভার সব করে দেয়। সকালের বাসি জামা-কাপড় থেকে শুরু করে পিরিয়ডের কাপড়গুলোও পর্যন্ত সে ধুয়ে দেয়। রান্না-বান্নাটাও সে করে। প্রভা জামা-কাপড় ধুতে পারে না। শেপের হাতের রান্না খেতে পারে না। বড্ড নাক-মুখ তোলা এবং খুঁতখুঁতে স্বভাবের মেয়ে। তপ্তশ্বাস ফেলে বলল,”বেলাডোনা প্লিজ শান্ত হোন। আমার কথা শুনুন।”
বুকের মধ্যে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো। সরে আসতে যেয়েও প্রভা আসতে পারলো না। পড়ে রইলো মানুষটার বিশাল বুকের নিচে। মানুষটার প্রতি মারাত্মক এক টান এবং মায়া রয়েছে তার। হাজারটা নারীর সাথে সম্পর্ক থাকলেও প্রভা বোধহয় ছেড়ে যেতে পারবে না। এই একটা জায়গায় এসে প্রভা দূর্বল। বড্ড দূর্বল! সে এই ভীনদেশী মানুষটাকে খুব খুব ভালোবাসে। ঘৃণা করতে যেয়েও পারে না। ব্যর্থ সে! শব্দ করে ফুঁপিয়ে উঠলো প্রভা। ডিভোর্সের কথা বলেছে ঠিক কিন্তু সত্যিই কি সে পারবে থাকতে মানুষটাকে ছাড়া?এখুনিই তো বুক কাঁপছে! শরীর অসাড় হয়ে আসছে। শরীরে জ্বলন ধরেছে। আরমানের খুব খারাপ লাগছে!
“আপনার কি মনে হয় না আপনার চেয়েও অনেক ভালো,সুন্দরী মেয়ে আমি বিয়ে করতে পারতাম কিংবা পারবো!”
“পারবেন তো। অস্বীকার করেছি আমি?এখনও তো কুকাজ করে বেড়াচ্ছেন আমার অগোচরে।”
কথাগুলো বলতে গিয়ে বুক ফেটে আসলো প্রভার।
“এমন নয় যে কাউকে পাই না বলে আপনাকে বিয়ে করেছি কিংবা আমাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো বলে। আমার দূর্বলতা হচ্ছে,আমি আপনার মায়ায় পড়েছিলাম! নয়তো আপনার মতো হাজারো ছিলো যাদের দিকে আমি ফিরেও তাকাইনি। আর সেই মায়া থেকেই আপনার সাথে জীবন পার করবো বলে হাজারটা অপশন থাকার পরেও আমি শুধু আপনাকেই বিয়ে করেছি এবং ভালোবেসেছি। আপনার জন্য আমার অনেক মায়া,হৃদয়ভর্তি ভালোবাসা,মাথাভর্তি চিন্তা এবং অদৃশ্য এক টান রয়েছে। সত্যটা না জেনে এভাবে অপবাদ দিতে পারেন না। আমি সবসময়ই লয়্যাল এবং অনেস্ট ছিলাম। আছি ইনশাআল্লাহ থাকার চেষ্টা করবো।”
“সব মিথ্যে কথা।”
“আপনি বললেন আমি পরকীয়া করছি। যেটা হারাম। না জেনে,না শুনে,যাচাই-বাছাই না করে এমন অপবাদ কেন দিলেন? আপনার বুক কাঁপলো না?”
“তবুও ও তো করছেন। সত্য কথা বলতে বুক কাঁপবে কেন?”
কেঁপে উঠলো প্রভার গলা।
“তাহলে আপনার গলা কাঁপছে কেনো?”
কিছু বলতে পারলো না প্রভা। আরমান বলতে লাগলো,”মোটেও আমি পরকীয়া করছি না। শুনে রাখুন,হারাম সম্পর্কের শুরুটা হয় সহজ আর মজাদার। মধ্যবর্তী সময়টা হয় দুশ্চিন্তার,অন্তরের ব্যস্ততা পীড়ার আর শেষ পরিণতি হয় পতন এবং নিজেকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে যদি আল্লাহ বান্দাকে না বাঁচান। আপনার কি মনে হয় এইসব জেনেশুনেও আমি নিজেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবো?এই মির্জা আরমান শাহরিয়ার চৌধুরীকে আপনি কি ভাবেন?”
“তাই তো করছেন।”
হতাশ শ্বাস ফেললো আরমান। প্রভাকে গভীরভাবে জড়িয়ে নিলো বুকের সাথে। আচমকা পাঁজাকোলে তুলে বেডের উপর শোয়ালো। কাল লিয়ানা অফিসে এসে যা যা করেছে সব বিস্তারিত বলতে লাগলো। সব শুনেও বিশ্বাস করতে চাইলো না প্রভা। পরে এইরাতে রিয়াদকে কল দিয়ে তার কেবিনের মধ্যে ঘটে যাওয়া সিসি ফুটেজগুলো তাকে ইমেল করে পাঠাতে বললো। সময় নিয়ে রিয়াদ সিসি ফুটেজগুলো পাঠাতেই এক এক করে সব প্রভাকে দেখালো। এরপর প্রভা শান্ত হলেও তার মন খচখচ করছিলো। ওই মেয়েটা যদি আবার আসে? তার স্বামীকে যদি কেঁড়ে নিয়ে যেতে চায় তাহলে?এবার ভীত-সন্ত্রস্ত হলো প্রভা। এতোক্ষণ ডিভোর্স চাইলেও এবার মানুষটাকে হারানোর ভয় পাচ্ছে সে!
(৫৪)
সকালবেলা শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই প্রভার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো আরমান। ব্ল্যাঙ্কেট গায়ে জড়িয়ে শুয়ে রয়েছে সে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসতেই শরীর থেকে সুগন্ধী ছড়িয়ে পড়লো। বুকভরে সুগন্ধী টেনে নিলো আরমান। চুল থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। ব্লাউজসহ পিঠের পিছনের দিকটা ভিজে জবজবে হয়ে গেছে। টাওয়াল দিয়ে লম্বা রেশমি চুলগুলো মুছতে লাগলো প্রভা।
“ভেজা চুলে মেয়েদেরকে এতো সুন্দর লাগে কেনো বেলাডোনা?”
সন্দিহান হয়ে প্রভা বলল,”আপনি কিভাবে জানেন?”
“জানি দেখেই তো বলেছি।”
“ও আচ্ছা! তা এই অব্ধি ভেজা চুলে কয়জন মেয়েকে দেখেছেন?”
“আপনিসহ দুইজন।”
“জানতাম তো!”
প্রভা যে রেগে গেছে বুঝতে পারলো আরমান। বড্ড হিংসুটে মেয়েটা! তাও খোঁচানোর জন্য বলল,”ঠিক ধরেছেন।”
“তা আমি ছাড়াও আপনার জীবনে আর কে কে ছিলো জানা যাবে?”
“আছে আরেকজন।”
“এইজন্যই আমি পুরুষ মানুষ বিশ্বাস করি না। এরা বহুনারীতে আসক্ত।”
রাগে গজগজ করতে লাগলো প্রভা। প্রভাকে রাগাতে পেরে আরমানের ভীষণ ভালো লাগলো। মেয়েটা একটু বেশিই মাথামোটা আর গাধী টাইপের। উপস্থিত বুদ্ধি এবং সোশিয়্যাল নলেজ কম। আচমকা চেঁচিয়ে উঠে বলল,”ওই দেখুন তেলাপোকা।”
কথাটা শুনতেই প্রভা চেঁচিয়ে উঠে সরে আসতেই আরমান হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের গায়ের উপর ফেলে প্রভার চুলে নাক ডুবালো। প্রভা বুঝতে পারলো মানুষটা চালাকি করেছে তার সাথে। নেশালো গলায় বলল,”বিশ্বাস করবেন কি-না জানি না। তবে আপনি এবং আমার আম্মিজান ব্যতীত অন্য কোনো নারীকে দেখার দুঃসাহস করেনি আমার এ দু-চোখ! আপনি কি জানেন না আমি আমার দৃষ্টিকে খুব যত্ন করে হেফাজত করি সুন্দরী মেয়ে।”
সুন্দরী এবং ওদের দু নারীর কথা বলতেই শান্ত হলো প্রভা। ঘাড়ে গলায় নাক-মুখ ঘষে বলল,”ভেজা চুলে মেয়েদেরকে সুন্দর লাগে বলেই তো রোজ সকালে আপনাকে গোস..”
মুখ চেপে ধরলো প্রভা।
“আস্ত একটা খারাপ মানুষ। মুখ দিয়ে কিছু আঁটকায় না। ঠোঁটকাটা স্বভাব। ভীষণ ফাজিল মানুষ আপনি।”
“খারাপ কি বললাম?রোজ সকালেই তো..”
আবারও মুখ চেপে ধরলো প্রভা।
“একদম আর একটা কথাও বলবেন না। ফাজিল একটা মানুষ আপনি।”
“লজ্জা পাচ্ছেন?”
মিইয়ে গেলো প্রভা। গোলাপি আভা ফুটে উঠলো সমস্ত মুখে।
“ইশ! আমার সুন্দরী বউটা লজ্জা পাচ্ছে! এখন থেকে প্রতিদিন লজ্জা দেবো।”
“আর কাজ নেই তো আপনার।”
“এজন্যই এইকাজটা বেছে নিয়েছি।”
মানুষটার সাথে কথায় পেরে উঠবে না ভালো করে জানে প্রভা। তাই নীরব রইলো। প্রভাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো ঘনিষ্ঠভাবে। কানের লতিতে আলতো চুমু খেয়ে আবারও চুলের মধ্যে নাক-মুখ গুঁজে প্রাণভরে সুবাস টেনে নিয়ে নেশালো গলায় বলল,”পিংক কালারের শাড়িতে আজ আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে বেলাডোনা!”
“অন্যদিন লাগে না?”
“সবসময়ই লাগে।”
“ওহ।”
“তবে আপনি আমার কল্পনার চেয়েও ভীষণ সুন্দর!”
“কল্পনা!?”
“হ্যাঁ।”
“রাখুন আপনার প্রশংসা! আগে বলুন কল্পনা মহিলাটা কে?”
“আজব! কল্পনা মহিলাটা মানে?সে আবার কে হবে?”
“তাহলে কেনো বললেন কল্পনার চেয়েও আমি ভীষণ সুন্দর?”
“কথাবার্তার একটা সীমা থাকা উচিত!”
“সীমাটা কে আবার?”
“হোয়াট! সীমা মানে!? হু ইজ শী?”
“আপনিই তো মাত্র বললেন কোথাকার কোন সীমা।”
“শিক্ষা হয়েছে আমার। দ্যাট’স ওকে আপনি সুন্দর না কালো,বিশ্রী,কুৎসিত!”
“জানতাম তো! ও আচ্ছা! ওয়েট! ওয়েট! তারমানে কল্পনা,সীমা-ডিমা,আর্সেল-পার্সেল এবং লিয়ানা এরাই বেশি সুন্দরী! আর আমাকে ভালো লাগে না। তাই তাদের বিয়ে করতে চান তাই না? তা কতদিন ধরে এইসব চলছে আপনার?”
“ইয়া আল্লাহ! আমার ধৈর্য্যধারণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিন। না হয় আপনার এই অধম বান্দাটাকে উঠিয়ে নিন আসমানীতে।”
“আসমানী! হোয়াট! আসমানীটা আবার কে?”
“ওহ শিট! স্যরি! মিস্টেক হয়েছে।”
“মোটেও না! সত্য কথা মুখ দিয়ে হুট করেই বের হয়ে যায়।”
“মানে?”
“বাপরে! এতো মহিলা কেন লাগে আপনার?”
“কি বলতে চান আপনি?”
“ওই যে ওইটা।”
“কোনটা?”
“লাল নীল আসমানীটা।”
আরমানের অবস্থা এখন এমন,“ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!”
“শুয়ে রইলেন যে? শাওয়ার নিয়ে আসুন যান।”
বেশকিছুক্ষণ প্রভাকে বুকে জড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আরমান।
(৫৫)
শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুমের ডোর খুলতেই দেখলো প্রভা বমি করছে ফ্লোরে। দ্রুত এগিয়ে এলো আরমান। বেসিনে নিয়ে প্রভাকে কুলকুচি করিয়ে নিজেই বমি পরিষ্কার করে নিলো। প্রভা শুয়ে রয়েছে। ভালো করে হ্যান্ডওয়াশ করে চিন্তিত হয়ে প্রভার পাশে বসলো আরমান।
“এখনও খারাপ লাগছে?”
মাথা নাড়ালো প্রভা।
“হঠাৎ বমি করলেন যে? রাতে ডিনার করেননি ঠিকমতো?”
“করেছি।”
“তাহলে?”
“মাথা ঘুরছে শুধু।”
“ঠিক আছে ব্রেকফাস্ট করে ডক্টরের কাছে যাবেন চলুন।”
ডক্টরের কথা শুনতেই ঘাবড়ে গেলো প্রভা।
“না না লাগবে না। আমি ঠিক আছি।”
“সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
“ও কিছু না ঠিক হয়ে যাবো। চিন্তার কিছু নেই।”
“আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?”
“আরেহ! না না। ভয় পাওয়ার কি আছে।”
“তাহলে গাইনী ডক্টরের এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখি কেমন?”
ঘাবড়ে গিয়ে প্রভা বলল,”বলেছি না ঠিক হয়ে যাবো।”
আরমান বুঝতে পারলো না ডক্টরের কথা বলায় প্রভা ঘাবড়ে গেলো কেনো? প্রভা কি কিছু লুকাতে চাইছে?
“আচ্ছা শুনুন,আমার হাতে কোনো ফোন নেই।”
“প্রতিদিনই তো আপনার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলছেন,আবার ফোন লাগবে কেনো?”
অভিমান হলো প্রভার। আর কথাই বললো না মানুষটার সাথে। কিন্তু আরমান ভয় পায়। ফোন দিলেই প্রভা আবার কি থেকে কি করে বসে ঠিক নেই। প্রভার এখন আবেগের বয়স। একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে গেলে তখন?এছাড়াও প্রভার বমি হচ্ছে মাথা ঘুরাচ্ছে। লক্ষ্মণ তো অন্যকিছু বলছে। আরমান এও জানে কারো মনের বিরুদ্ধে কাউকে বন্দী করে সংসার করানো যায় না।
(৫৬)
বমি করে করে বেশ কতগুলো জামাকাপড় নষ্ট করেছে প্রভা। সার্ভেন্টের হাতে না ধুঁয়ে আরমান নিজেই ধুয়ে দিয়েছে। সব জামা-কাপড় তো আর ওয়াশিং মেশিনে ধোঁয়া যায় না। তাদের ইয়া লম্বা ব্যালকনির তিনটা দড়ি ভরে গেছে প্রভার শাড়ি-কাপড়ে। আরো এক বালতি রয়েছে। তা দেখে প্রভা বলল,”এগুলো ছাঁদে দিতে বলি?”
“প্রয়োজন নেই।”
“কেনো?”
“নারীদের জামাকাপড় এমন স্থানে খুলে রাখা কিংবা শুকাতে দেওয়া ঠিক নয়,যেখানে পরপুরুষের দৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিংবা পরপুরুষ দেখে নেয়ার ও স্পর্শ করার সুযোগ রয়েছে।”
চুপসে গেলো প্রভা।
“ছাঁদে দিলে কে দেখবে?”
“কেনো মহলে কি পুরুষ মানুষের অভাব?”
“তাতে কি হয়েছে?”
“মেয়েদের কাপড় শুকানো নিয়ে কিছু কথা বলবো শুনুন।”
মাথা নাড়ালো প্রভা।
“আমাদের সমাজে দেখা যায় অনেক নারী আছেন যারা গোসল করে তাদের কাপড় শুকাতে দেয় বাহিরে এবং ছাঁদের উপরে যেখান দিয়ে মানুষ চলাচল করলে দেখতে পায়। সেই উদ্দেশ্যেই বলবো। ইসলামে বলা হয়েছে,মহিলাদের পরনের কাপড় গোপনে শুকাতে দিতে। যাতে পরপুরুষ দেখে ফিগার আন্দাজ করতে না পারে এবং হস্তমৈথূন করতে না পারে। মহান আল্লাহ মেয়েদের জন্য পর্দা ফরয করেছেন। নারীদের চেহারার মধ্যে শুধু পর্দা না,নারীদের কাপড়ের মধ্যেও রয়েছে পর্দা। এমনকি নারীর নামের মধ্যেও রয়েছে পর্দা। অনেক নারী আছেন তারা গোসল করে তাদের সালোয়ারের দুই পা ফাঁকা করে বাহিরে শুকাতে দেয়। সাথে কামিজও শুকাতে দেয়। এমনকি অনেকেই তাদের গোপন-বস্ত্রগুলোও (অন্তর্বাস) শুকাতে দেয়। যেটা লজ্জাজনক কথা। একজন পরপুরুষ যদি আপনার সালোয়ার-কামিজ এবং গোপন-বস্ত্রগুলো দেখতে পায় এবং সে যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয় তাহলে অবশ্যই তার মনের ভেতরে কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হবে যদিও আপনাকে সে কোনদিন দেখেনি। কিন্তু আপনার কাপড় দেখে সে উপলব্ধি করতে পারবে আপনার শারীরিক গঠন কেমন। আর তার মনের ভেতরে যদি কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হয় তার অন্তরে যদি যিনার প্রতি আকর্ষণ তৈরী হয় তাহলে সেই ব্যক্তির আমলনামায় চোখের যিনা অর্থাৎ কবিরা গুনাহ লিখা হয়। এমনকি আপনার আমলনামায়ও এক ভাগ গুনাহ লেখা হয়। কারণ এর জন্য তো আপনিই দায়ী। আর একটি কবিরা গুনাহই যথেষ্ট জাহান্নামে নেওয়ার জন্য। পবিত্র কোরআনের ভিতরে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন,“সামান্য বিন্দু পরিমাণ গুনাহ নিয়েও যদি কেউ কবরে আসে তাহলে কবরের মাটি তাকে ছাড় দিবে না।”
তাই গোসল করে কাপড় এমন জায়গায় শুকাতে দেওয়া উচিত যেখানে কোন পরপুরুষ দেখতে না পায়। আর গোপন-বস্ত্রগুলো (অন্তর্বাস) পরিবারের বাবা ভাই অর্থাৎ যাদের সামনে একজন নারীর যাওয়া বৈধ তাদের সামনেও রাখা ঠিক না। এগুলো নিজের রুমের ভেতরে অথবা কাপড়ের নিচে শুকাতে দেওয়া উচিত। লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। যার লজ্জা নেই তার ঈমানের মধ্যে কমতি আছে। আর এটাই তা প্রমাণ করে।”
কথাগুলো বলে পানি নিংড়ে বাকি কাপড়গুলোও মেলে দিতে লাগলো আরমান। দূর থেকে আয়েশা মির্জা দেখে মৃদু হাসলেন। ভাবলেন,প্রতিটা মেয়েই সুখী হতে চায়। আর সেই সুখের পেছনে একজন পুরুষের পবিত্র ভালোবাসাই যথেষ্ট। মনে মনে দু’জনের মঙ্গলের জন্য দোয়া করলেন। কাপড় রোদে দেওয়া শেষে রুমে ঢোকার সময় আচমকা শশীপ্রভা পশ্চিম দিকে থুথু ফেললো। তা দেখামাত্রই আরমান বলল,”দিক নির্বাচন না করে আজকের পর থেকে কোনদিকে থুথু ফেলবেন না বেলাডোনা।”
অবাক হলো শশীপ্রভা।
“একদিকে থুথু ফেললেই তো হলো। এতোকিছু দেখার কী আছে?”
“না হবে না।”
“কেন?”
“কারণ আমরা মুসলিম। আমাদেরকে প্রতিটি কাজ করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। নয়তো ছোট্ট একটা ভুলের কারণে পরকালে আমরা জাহান্নামে চলে যেতে পারি কিংবা হাশরের ময়দানে অপমানিত হয়ে উঠতে পারি।”
“মানে!?”
“মুসলমানের জন্য কিবলার (পশ্চিম) দিকে থুথু ফেলা হারাম।”
“কী বলছেন এইসব? আগে তো কখনো শুনিনি!”
“তাহলে শুনে রাখুন,“যে ব্যক্তি কিবলার দিকে থুথু ফেলবে কেয়ামতের দিন তার থুথু সে কপালে নিয়ে উঠবে।”(সহিহুল জামি,হাদীস ৬১৬০)
এই হাদীসটি সহীহ। অন্যান্য হাদীসেও এরূপ রয়েছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ، أَظُنُّهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلّى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ تَفَلَ تُجَاهَ الْقِبْلَةِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تَفْلُهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ
অর্থঃ হযরত হুযাইফাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন,“যে ব্যক্তি কিবলাহ’র দিকে থুথু ফেলে কিয়ামতের দিন সে ঐ থুথু নিজের দু-চোখের মধ্যখানে পতিত অবস্থায় উপস্থিত হবে।”(সুনানে আবু দাউদ হা/৩৮২৪,সহীহ ইবনে হিব্বান-১৬৩৯,আত তারগীব খ:১/পৃ.১৬১(হাদীস সহীহ)
রাসূল (সা.) বলেছেন,“তোমাদের কেউ যেন তার সামনে বা ডানে থু থু নিক্ষেপ না করে ; বরং তার বামে অথবা বাম পায়ের নীচে ফেলে।”(সহীহ্ বুখারী,হা/৪১২)
এই হাদীসটি প্রভা জানতো না। খেয়ালে-বেখেয়ালে কতদিকে থুথু ফেলেছে তার কোন হিসাব নেই। মুখটা মলিন হয়ে গেলো। অজান্তেই কত পাপ করেছে সে।
“আমি আর কখনো ভুলেও পশ্চিমদিকে থুথু ফেলবো না রাগী সাহেব। আজকের পর থেকে সবসময়ই সতর্ক থাকবো।”
(৫৭)
প্রভাকে কলোরাডো নিয়ে যাওয়ার পরের দিনই আর্সেলকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মিশরে পাঠিয়ে দিয়েছেন মারইয়াম ইউজিওয়েল। ভারাক্রান্ত মনে আর্সেল তার নিজ বাসস্থানে গিয়েছে ঠিক কিন্তু মন পড়ে রয়েছিলো আরমানের মধ্যে। আর্সেল কিছুতেই নিজেকে বুঝাতে পারছিলো না যে মানুষটা তার হবে না। একপর্যায়ে ডিপ্রেশনে পড়ে গেলো। রাতদিন ২৪ ঘন্টা পাগলের মতো হয়ে গেলো। সপ্তাহখানেক পর আরমান-প্রভার মহলে ফেরার কথা শুনতেই গতকাল রাতেই আমেরিকা ফিরলো আর্সেল।
সকাল দশটা প্রায়। শনিবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই আজ একটু দেরীতেই ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে আরমান। ওর জন্যই সবাই এতোক্ষণ অপেক্ষা করছিলো। আর্সেল এখনও ঘুমে। খাবার খাওয়ার ফাঁকে টুকটাক কথা বলছে সবাই। প্রভার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না ঈদার্নিং। সেই নিয়ে চিন্তিত সবাই এবং প্রভাকে নিয়েই টুকটাক কথা হচ্ছে।
ইরিন জামান এবং ইভানা গাড়ি থেকে নামতেই হঠাৎ আরেকটা গাড়ি এসে থামলো মহলের সামনে। ওনারা দু’জন গাড়ি থেকে বের হতেই অপর গাড়ি থেকে বের হলো লিয়ানা ও তার মা। একপক্ষ আরেক পক্ষকে দেখতেই কপাল কুঁচকে ফেললো। পা বাড়িয়ে ইল্মিরিয়া লিয়ানাকে বলল,”তুমি এখানে কি করছো?”
“আমারও তো এক কথা তুমি এখানে কেনো?”
“আমার আত্মীয়ের বাড়ি আর আমি আসবো না?”
“আমার মাম্মি-পাপার বিজনেস পার্টনার আর আমিও কি আসবো না?”
গাল বাঁকিয়ে ইরিন জামান এবং ইল্মিরিয়া মহলে প্রবেশ করতেই দেখলো সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে। হঠাৎ ইরিন জামান এবং ইল্মিরিয়াকে দেখতেই মারইয়াম ইউজিওয়েলের মুখটা মলিন হয়ে গেলো। আবার কোন কুমতলবে এসেছে আল্লাহই জানে। ছেলেটাও আজ বাসায়। আয়েশা মির্জা বললেন,”ইরিন যে?”
“হুম ফুপি।”
“কখন এলে?”
“সবে।”
“বসো। ব্রেকফাস্ট করো।”
“আমরা করেই এসেছি।”
লিয়ানা এবং তার মাও এসে সামনে দাঁড়ালো। আরমানের পাশে প্রভাকে দেখতেই ইরিন জামান বললেন,”শশীপ্রভা আমেরিকা কবে আসলো ফুপি? ওর জন্য এপ্লাই করেছে কে? আমাকে বলোনি যে?”
“হয়েছে কয়েকমাস। তোমাকে বলার কি আছে?”
“কার সাথে এসেছে।”
“আরমানের সাথে।”
অবাক হলেন ওনারা মা মেয়ে দু’জন।
“আরমানের সাথে কেনো?”
“কেনো মানে? স্বামীর সাথে বউ এসেছে।”
ইরিন জামান এবং ইল্মিরিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
“ফুপি এইসব কি বলছো তুমি? তুমি কি জানতে না আমার মেয়ে আরমানকে পছন্দ করে?”
“তুমি কি সিনক্রিয়েট করতে এসেছো?”
“সিনক্রিয়েট মানে?এমন একটা ঘটনা ঘটিয়ে এখন আবার বলছেন সিনক্রিয়েট?”
লিয়ানার মা বলে উঠলেন,”এইসব কি শুরু করলে মিসেস মারইয়াম?”
মারইয়াম ইউজিওয়েল চুপ করে রইলেন।
“কথা ছিলো আমার মেয়েকে বিয়ে করার। তা না করে তোমার ছেলে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিলো?”
আরমান চেঁচিয়ে উঠলো এবার।
“কি হচ্ছে এইসব?”
লিয়ানার মা বলল,”তুমি চিট করলে কেনো আমার মেয়ের সাথে?”
“আপনার মেয়ের সাথে আমার প্রেম ছিলো নাকি বিয়ের কথা পাকাপোক্ত হয়েছিলো কোনটা?”
“আরমান ভুলে যেওনা আমার মেয়ে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে।”
“আমি তাকে বাসি না। হেট করি। কজ শী ইজ ক্যারেক্টারলেস।”
“মুখ সামলে কথা বলো আরমান।”
চেঁচিয়ে উঠলো লিয়ানার মা। ইরিন জামান বললেন,”আমার মেয়ে তোমাকে কতোটা ভালোবাসে তা তুমি ভালো করেই জানতে। তা না করে তুমি শশীপ্রভাকে বিয়ে করে নিলে?”
“কারণ আমি কাউকেই ভালোবাসি না। যাকে বেসেছি তাকে বিয়ে করেছি। এবার সবাই আসতে পারেন। নয়তো ভালো হবে না।”
______________
চলবে।