#হাতটা_দাও_বাড়িয়ে
#অরিত্রা_অর্নি
#পর্ব_৭
#রাজনীতি_রিলেটেড
“সময় পেরিয়ে গেছে আরও সাতদিন । চারদিকে শুধু নির্বাচনের পোস্টার মিছিল মিটিং এইসব ই চলছে । তবে এইসব এর মধ্যে শান্তিতে আছে রাফিয়া । আহিলের সাথে তার আর দেখা হয়নি । ভার্সিটিতে ও না কোথাও ই আহিল কে এখন তেমন একটা দেখা যায় না । রাফিয়ার মনে শান্তি থাকলে ও যন্ত্রণায় ভোগে আহিল কতদিন হলো নিজের পছন্দের মানুষকে দেখে না । মেয়েটাকে রাগিয়ে দিতে পারে না ।সময় ই হয়ে উঠে না সাথে রুদ্র তো আছেই ।রাতে সব কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে আহিল । আজই বোধহয় একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পেরেছে ও । ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে রাফিয়ার মিষ্টি মুখটা । বুকের ভেতর যন্ত্রণা
উঠে বসে আহিল । ফোন করে একজনকে
কিছু একটা বলে ফোনটা কেটে দেয় । বারান্দায় গিয়ে দাড়ায় । ফোনে একটা মেসেজ আসতেই আহিলের মুখে হাসি ফুটে উঠে । সাথে সাথে বাসা থেকে গাড়ি বেরিয়ে পড়ে আহিল । পনেরো মিনিটের মধ্যেই একটা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায় । গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির উপরে উঠে বসে ।
তাকিয়ে থাকে সামনে থাকা তিনতলা বাড়ির দিকে । বারান্দায় এখনো বাতি জ্বলছে । পকেট থেকে ফোন বের করে কাঙ্ক্ষিত নাম্বার এ কল করে আহিল দুইবার রিং হতেই কল রিসিভ হয় ”
_হ্যালো কে বলছেন ?
_ হায়,,, কাজল চোখের মেয়ে । তুমি তো ভারী স্বার্থপর দেখছি । আমি একটু ব্যাস্ত দেখে তোমায় জ্বালাতে পারছি না আর এই সুযোগে তুমি তো আমায় ভুলেই গেছো ।
“কাজল চোখের মেয়ে কথাটা শুনতেই রাফিয়ার আর বুঝতে বাকি নেই । কে ওকে কল করেছে । একটু শান্তিতে ছিলো আবার কোথা থেকে চলে এলো । রাফিয়ার প্রচুর রাগ লাগছে । এই লোক ওর নাম্বার ই বা পেলো কোথায় ”
_ আপনি তো দেখছি ভারী অসভ্য । এত রাতে একটা মেয়েকে ফোন করে ডিস্টার্ব করছেন লজ্জা করে না ।( তাচ্ছিল্য করে বলে রাফিয়া )
_একটু লজ্জা করে না । এইবার বেশি কথা না বলে নিচে চলে আসো জলদি । আমার হাতে সময় কম । তুমাকে না জ্বালিয়ে ঘুম ও আসছিল না ।
“রাফিয়া অবাক হয়ে যায় । এত রাতে কল করে বলছে নিচে যেতে । কি অধিকারবোধ রে বাবা । রাফিয়া বিছানা থেকে উঠে আস্তে আস্তে বারান্দায় এসে নিচের দিকে উকি দেয় । রাফিয়াকে দেখেই আহিল হাত নাড়িয়ে হায় দেয় । রাফিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায় ”
_ এইতো কাজল চোখের মেয়ে তোমায় দেখে ফেলেছি । আর লুকিয়ে না থেকে একটি নিচে আসো ।
_ আপনি এইখানে কি করছেন ? এই রাতের বেলায় একটা মেয়ে মানুষের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছেন ছি ।
_এই মেয়ে এত কথা শুনতে চায়নি তো আমি । জলদি নিচে আসবে নাকি আমি উপরে চলে আসবো ।
_ পারলে আসুন দেখি কিভাবে আসেন ।
_চ্যালেঞ্জ করো না । আমি কিন্তু চলে আসতে পারবো । কিন্তু সমস্যা তুমার ই হবে ।এইবার ভেবে দেখো কি করবে ।
_ আপনি কি চান বলুন তো । ( বিরক্ত হয়ে বলে রাফিয়া )
_ নিচে আসলেই বলবো ।
_আসবো না । কি করবেন ?
_ ঠিক আছে আমি ই আসছি ।
” রাফিয়া তাকিয়ে দেখে আহিল গাড়ির উপর থেকে নেমে পড়েছে । এইবার আর উপায় নেই । এই লোককে রাফিয়া মোটেও বিশ্বাস করে না । হুট করে যদি চলে আসে ”
_ আমি আসছি ।
_ গুড গার্ল ।
” রাফিয়া এইবার পরে বিপদে । বলে তো দিয়েছে আসছি । কিন্তু এইবার যাবে কি করে । কেউ যদি দেখে ফেলে । রিপাকে কি ডাকবে । পরে যদি কিছু হয় । বিছানায় থেকে উড়না নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আস্তে করে দরজা খুলে বের হয় রাফিয়া ।
মেইন দরজা খুলে আস্তে করে চাপিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে তিনতলা থেকে নামে । বুকে কাপছে রাফিয়ার । গেটের কাছে এসে গেট খুলে রাস্তায় পা রাখে । বাড়ির দিকে তাকায় । সব জায়গায় অন্ধকার রাস্তার লেম্পস্ট এর আলো ছাড়া কোনো আলো নেই কোথাও । রাফিয়া গুটিগুটি পায়ে হেঁটে একটু সামনে যায়। দেখে একটা সাদা রঙের গাড়ি তার উপরেই বসে আছে আহিল । বিরক্তি থাকলে ও রাফিয়া এগিয়ে যায় । রাফিয়াকে দেখেই আহিল গাড়ির উপর থেকে নেমে দাড়ায় ।
রাফিয়া আহিলের সামনে এসে দাঁড়ায় । দুইজন ই মুখমুখি দাড়িয়ে আছে ।
আহিল শুধু রাফিয়াকেই দেখে যাচ্ছে । মেয়েটা ঘুমের মধ্যে হয়তো খেয়াল ই করনি প্লজো আর টি শার্ট পরেই চলে এসেছে । তবে এই রূপে রাফিয়াকে দেখে বুক কাপছে আহিলের ।
আহিলকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাফিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না । এইভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য ওকে নামিয়ে আনলো ”
_ কি দেখছেন ? কি বলবেন বলুন । কতো কষ্ট করে বের হয়ে এসেছি জানেন ?
” রাফিয়ার কথায় আহিলের হুস ফিরে । নড়ে চড়ে দাড়ায় । আহিল রাফিয়ার সামনে আসলেই কেনো যেনো অন্যরকম হয়ে যায় । আহিল আর একটি কাছে গিয়ে দাড়ায় ।
রাফিয়া ওকে এগিয়ে আসতে দেখে নিজে একটু পিছিয়ে যায় । আহিল রাফিয়ার হাত ধরে ফেলে ”
_ দূরে যাচ্ছো কেনো ? আমি কিছু বলতে আসিনি । তুমায় দেখতে ইচ্ছে করছিলো। তাই । আজকে কয়দিন হয় তুমায় দেখিনি ঠিক মতো জ্বালাতে ও পারছি না । হয়তো এই কয়দিন পারবো ও না । তাই এত রাতে আশা । আর নাম্বার জোগাড় করা আমার কাছে অনেকটা বলতে পারো পান্তা ভাতের মতোই ।
” আহিলের কথা শুনে রাফিয়ার বুঝতে বাকি নেই যে ও এতক্ষন যা যা প্রশ্ন করেছে
তার সবগুলোর উত্তর ই এক সাথে দিলো আহিল ”
_ আমাকে কেনো দেখতে ইচ্ছে করে আপনার । দুনিয়াতে আর মানুষ নেই ?
_ ভালো প্রশ্ন কিন্তু । আমি ও ভাবতাম নেই
কাকে আমি দেখবো । কিন্তু এখন তো না দেখলেই বুকে জ্বালা বাড়ছে । ( বুকে হাত রেখে বলে আহিল )
” রাফিয়া এইবার ভালো করে তাকায় আহিলের দিকে । আহিল একটা হলুদ রঙের টি শার্ট পরে আছে সাথে একটা টাউজার। চাপ দাড়িয়ে সাথে চুলগুলো এলোমেলো । রাফিয়া যতই রাগ দেখাক । অষ্টাদশী মেয়ের মনে অনুভূতিরা তো ঘুরে বেড়ায় ই । রাফিয়ার কেনো যেনো মনে হচ্ছে আহিল সুদর্শন ভয়ংকর সুদর্শন আহিল ”
_ কীহ। আটকে গেলে কেনো ?
_ আমি আসছি। ( কথাটা বলেই পেছন ঘুরতে চেয়ে ও পারে না আহিল টান দিয়ে রাফিয়াকে আরো কাছে নিয়ে আসে )
_ কি করছেন কি আপনি ? হাত ছাড়ুন আমার । দেখতে এসেছেন দেখা শেষ চলে জান । আমি আপনার বিয়ে করা বউ নই
একেবারে আমাকে ধরার চেষ্টা করবেন না ।
” আহিল হাতের বাঁধনটা একটু হালকা করে ।তবে পুরোপুরি ছেড়ে দেয় না । রাফিয়ার কপালের চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেয় ”
_ যাও তুমার কথা ই রাখলাম । ধরলাম না ।
বউ বানিয়ে তবেই ধরবো । বি রেডি ।
” কথাটা বলে রাফিয়াকে ছেড়ে দিয়ে এক হাত দূরে গিয়ে দাড়ায় । রাফিয়ার সব কথা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । রাফিয়া আর একটু ও দাড়ায় না উল্টো ঘুরে দৌড়ে চলে যায় । আহিল দাড়িয়ে থাকে । যতদূর রাফিয়াকে দেখা যায় তাকিয়ে থাকে । আহিল ও গাড়িতে উঠে বসে । ভাবে চাইলে এখনই এই মেয়েকে বিয়ে করতে পারে ও কিন্তু বুকে এত যন্ত্রণা নিয়ে ও বসে আছে ।শুধু মাত্র নির্বাচন যাওয়ার অপেক্ষায় । এই মেয়ের কোনো ক্ষতি সে হতে দিবে না ।
গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায় আহিল বাড়িতে । এইবার শান্তির একটা ঘুম হবে ।
রাফিয়া আবার ও সাবধানতার সাথে রুমে চলে আসে । রিপার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে । বুক এখনো কাপছে । মানুষটা ভারী অদ্ভুত । হুট করেই কি করে বসে । রাফিয়ার মনের ভেতর অস্থিরতা শুরু হয় । এই প্রথম কোনো পুরুষের জন্য এমন হচ্ছে । রাফিয়া এই বিষয়কে মোটেও পাত্তা দিতে চায় না ।
চুপ করে ঘুমিয়ে পড়ে ।
চলবে ,,,,,,,