#রাঙিয়ে_দাও
#পর্ব_২
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম
নিজের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রহান।স্থির আর শান্ত নজরটা তার এলোমেলো রুমের চারপাশটাজুড়ে।রুমটা সবসময়ের জন্য পরিপাটি আর সুন্দর করে গোছানো থাকে।আগোছালো এলোমেলো থাকাটা সে কখনোই পছন্দ করেনা।ভিষণ অপছন্দনীয় তা!বিধায় সবসময়ের গোছানো আর শান্ত পরিবেশের ঘরটায় সহজেই কেউ প্রবেশ করে না।একপ্রকার বলতে গেলে দ্বিধা কাজ করে!ভয় পায়!শুধু তার মা বাদে।আর সেই ঘরটাই কি হাল!কি নাজেহাল অবস্থা!জায়গার জিনিস একটাও জায়গায় নেই।বিছানা থেকে শুরু করে ঘরের প্রতিটি গুছানো জিনিস এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে।বিছানার চাদরসহ বালিশগুলাে সব এদিক ওদিকপানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।নিজের গুছিয়ে রাখা জামাকাাপড়গুলোর-ও ঠিক ঠিকানা নেই এমনকি কাভার্ডের গুছানো জামাকাপড়গুলোও বিছানায় স্তুপ করা।বিশেষ করে ঘরের একপাশের ওয়ালজুড়ে নিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর বিশেষ পছন্দনীয় বইয়ের তাকটার তো পুরো বাজে অবস্থা।বিভিন্ন ধরনের বই আলাদা আলাদা তাকে গুছোনে থাকে।সেগুলোর সব এলোমেলো।পুরো বিধ্বংসী অবস্থা!আগে ঘরটা দেখলে যে কেউ বলবে কোনো রুচিশীল এবং সবসময় পরিপাটি হয়ে ব্যক্তির ঘর।আর এখন এঘরের অবস্থা কেউ দেখলে বলবে,এই ঘরের মানুষটা পুরো ছন্নছড়া!
নিজের পরিপাটি করে রাখা পরিচ্ছন্ন ঘরের বেহাল দশা শান্ত নজরে সবকিছু অবলোকন করতেই ক্লান্ত নজর জোড়া আর শান্ত হলো প্রহানের।কাজটা কার বুঝতে অসুবিধা হলো-না তার।আজ যে তার প্রিয় সবকিছুই অপ্রিয় হয়ে উঠবে এটা সে জানে।হয়ে আসছে এরকম।
দু’হাতের খোলা আঙুলগুলো একসাথে মুঠিকরে নিয়ে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলো প্রহান।চোখ জোড়া কিছুসময়ের জন্য বন্ধ করে নিয়ে ফের খুলে ফেললো।ধীর কদমে পা বাড়ালো নিজের এলোমেলো ঘরের মধ্যে।সারাদিনের ক্লান্ত শরীরটা যে বিছনায় এলিয়ে দিলে মূহুর্তেই প্রশান্তি অনুভব করতো সেই অগোছালো বিছানাটায় গিয়ে বসলো সে।বাহির থেকে এসে বাহিরের জামাকাপড় না-ছেড়ে ফ্রেশ না-হয়ে, যে বিছানায় কখনোই সে নিজের শরীরটা এলাতে দেয়নি।আজ সেটাই করলো।অপরিচ্ছন্ন বিছানায় শরীর টা এলিয়ে দিলো।পা-জোড়া বেডের নিচে ঝুলিয়ে দিয়ে, মাথার নিচে হাতজোড়া রেখে অর্ধ শরীরটা বেডে এলিয়ে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো সে।রাগটা এখন তার খুবকরে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।না-হলে বাজে কিছু হয়ে যেতে পারে।যা কখনোই সে চায়না।
কিন্তু ওই মেয়েটা রাগ নিয়ন্ত্রণে থাকতে দিলে তো!নিচ থেকে টিভির ভলিউমটা বেশ তীক্ষ্ণভাবে কানে বাজতেই চোখ বুঁজে ফেললো প্রহান।তাঁকে জ্বালানোর জন্য টিভির ভলিউমটা আর-ও বাড়িয়ে দিয়েছে।মাথার মধ্যে রাগটা অনিয়ন্ত্রিত হতে চাইলেও সেটা হতে দিলোনা সে।চোখবুঁজে সেভাবেই পড়ে রইলো।কিন্তু সেটাও আর হলো কই?সেখান থেকে কিছু সময় পার হতেই কার-ও পায়ের ধুপধাপ আওয়াজ রাগটা বাড়লো বৈ কমলোনা।এই ধুপধাপ আওয়াজ করে চলাফেরাটা-ও তার অতি অপছন্দনীয়।কিন্তু মেয়েটা যে আজ পণ করেছে তাকে তার অপ্রিয় অপছন্দনীয় কাজগুলো দিয়ে আজ জ্বালিয়ে মারবে।রাগের তীক্ষ্ণতা বাড়তে থাকলেও সেটা পাত্তা দিলোনা প্রহান।সে-ও দেখতে চায় আর কতো জ্বালাতে পারে মেয়েটা তাকে।রাগের তীক্ষ্ণ আগুনেটা ভিতরে জ্বলতে থাকলে-ও বাহিরে নিজেকে যতোসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে চোখজোড়া খুলে শান্ত নজরটা উপরের টানানো ঝুলন্ত যান্ত্রিক পাখাটার দিকে রাখলো প্রহান।ধুপধাপে চলা পাজোড়া কোথায় এসে থেমেছে তার বুঝতে বাকী নেই।মেয়েটা এবার তার কথা দ্বারা তাকে জ্বালানোর সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাবে।যা এতোদিন হয়ে আসছে।কিন্তু এবার যে মেয়েটা এলোমেলো কথার বাণ ছুড়লে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে।ভাবনা স্থির রেখে মুখ খুললো প্রহান।ওপাশ থেকেই প্রান্তি আওয়াজ তোলার আগেই তাকে ডেকে উঠলো সে।
—প্রান!
চমকে উঠলো প্রান্তি।ধুপধাপ পা ফেলে সিড়িগুলা বেয়ে উপরে উঠলেও,এই মানুষটার রুমের সামনে নিঃশব্দেই পদচারণ করে এসেছে সে।ধুপধাপ পা ফেলে চলা মানুষটার পছন্দ নয়।বিধায় ধুপধাপ পা ফেলে শব্দকরে সিঁড়ি বেয়ে মানুষটাকে বিরক্ত করতে চাইলেও,উপরে উঠতেই রুমটার মধ্যের অতি নিশ্চুপতা দেখে নিজেই পদচারণের শব্দ কমিয়ে দিয়েছিল প্রান্তি।কেননা সে যা করে রেখেছে রুমটার মধ্যে,মানুষটার এতো নীরবতা পালন করার তো কথা নয়।বিধায় সিঁড়ির মাথা থেকে রুমের দরজা পর্যন্ত নিঃশব্দে এসেছে।কথা না বলা সত্ত্বেও তবুও লোকটা বুঝে গিয়েছে সে এসেছে।আর প্রান নামে তাঁকে এই মানুষটা ছাড়া দ্বিতীয় আর কেউ ডাকেনা।আর নাকি তার মা ডাকতো।কিন্তু মায়ের ডাকটা তার মনে নেই।বিধায় মা ডাকলে এই মানুষটার ডাকের মতো পরাণ চমকিয়ে উঠতো কি না এটাও তার অজানা।তবে মানুষটার সাথে কথা কম হলে-ও এই নামের ডাকটা তাকে বরাবরই চমকিয়ে দেয়!নিজেকে থমকিয়ে দেয়!উথাল-পাথাল ঢেউয়ের মতো নিজের ভিতরটা ভাসিয়ে দেয়!প্রান্তির ভাবনার মধ্যে ভিতর থেকে অতি শান্ত কন্ঠের সর্তকতার বানী সরূপ বার্তা এলো।
—আমার রাগটা নিয়ন্ত্রণের মধ্য থাকতে দে প্রান।আমার রাগ নিয়ন্ত্রণহীন হলে কি হতে পারে এটাতো তোর খুব ভালো করে জানা!সো আমাকে আর নিয়ন্ত্রণহীণ করিস না।আমি বড্ড ক্লান্ত, আমার রাগের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকতে দে আমাকে।
মানুষটা বড্ড ক্লান্ত!এটা প্রথম শুনলো প্রান্তি।এ-বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষকে আর যেভাবেই হোক ক্লান্ত বদনে সে দেখতে পারেনা।কেমন জেনো বুকের ভিতরে তার কষ্ট অনুভব হয়।ক্লান্ত মুখগুলো দেখলে সে অসহায় বোধ করে।তখন বারবার মনে হয় নিজের এই আপজনের ক্লান্ত মুখগুলো যদি সে মূর্হতের মধ্যে ম্যাজিকের মতো হাসিখুশি আর সতেজতায় ভরিয়ে দিতে পারতো।কিন্তু চাইলেই সবকিছুতো সম্ভব নয়।আল্লাহ তায়ালা সবকিছু মানুষের হাতে দেননি।তিনিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণাধীন।তাই আল্লাহর কাছে চাওয়া ছাড়া সবকিছু নিজে চাইলেই হয় না।
আর এই মানুষটাকে ক্লান্ত বদনে কখনো সে দেখিনি, হয়তো হয়েছে কিন্তু সে খেয়াল করেনি।এমনকি কখনো আজকের মতো তার নিজের মুখ দিয়ে ক্লান্ত হবার কথা শোনেওনি কখনো।আর আজ সেই মানুষটা নিজ মুখেই বলছে তিনি ক্লান্ত।তবে কি সে আজ প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে রাগের বশে বাড়াবাড়ি করে ফেললো।যেটা সে করেছে সেটা তার করা উচিত হয়নি?
.
ভাবনার একপর্যায়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় এসে ধপাৎ করে বসে পড়লো প্রান্তি।সোফার সামনে ছোট কাঁচের টেবিলটার উপর থেকে রিমোটটা তুলে ধুপ করে টিভিটা বন্ধ করে দিলো সে।সেটা দেখে সোফার দু-পাশে বসা আদ্র-নিদ্রও বেশ আশ্চর্য হলো।নিদ্র না দেখলে-ও আদ্র বেশ মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছিলো।সে বললো।
—আপু টিভি বন্ধ করলে কেনো?
—আমার এখন আর টিভি দেখতে ইচ্ছে করছে-না তাই।
প্রান্তির মুখটা গম্ভীর দেখে দুইভাইয়ের কেউ আর তাকে প্রশ্ন করলো-না।তবে বুঝতে পারলো কোনো কারনে আপুর আবারও মন খারাপ হয়েছে।দু’ভাই আপুকে ভিষন ভলোবাসে।তাদের প্রান্তি আপুর যে কারনে অকারণে হুটহাট মন খারাপ হয়ে যায়।এটা তারা আগে থেকেই জানে।কিন্তু আপুর কাছে কারন জানতে চাইলে কখনোই বলেনা।জোর করলেও বলতে চায়-ও না।বিধায় এখন আর তারা কারন জানতে চাওয়ার জন্য প্রশ্ন করেনা।
আদ্র আর নিদ্র, দুজনেই নিজেদের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে উঠে দাঁড়ালো।ফের নিদ্রকে উদ্দেশ্য আদ্র বললো।—চল ছাঁদে গিয়ে খেলি।
নিদ্রও সম্মতি জানিয়ে উঠে দাড়ালো।ফের প্রান্তিকে উদ্দেশ্য করে বললো।–আপু,তোমার যখন টিভি দেখতে ভালো লাগছেনা।তুমিও চলো-না।আজ ছাঁদে গিয়ে গুনবে,আদ্রর লাগানো গাছে বেশি ফুল ফুটেছে নাকি আমার লাগানো গাছে।
প্রান্তি ভাইদের দিকে তাকালো।এই বিচ্ছু দুটো তাঁকে ভিষণ ভালোবাসে।বুঝতে পেরেছে কোনো কারনে তার মন খারাপ হয়েছে। তাই মন ভালো করারা জন্য এগুলো বলছে।ছোটো হলেও বুদ্ধিতে তারা দায়িত্ববান ভাইদের মতো।মিষ্টিকরে হাসলো প্রান্তুি।ফের বললো।
—তোরা চল।আমি একটু পরে আসছি।
প্রান্তিকে মিষ্টি করে হাসতে দেখে দুভাইও খুশিমনে চলে গেল।তারা যেতেই কোনো কারনে আবারও মন খারাপ হলো প্রান্তির।সে তো কারনে অকারণেই মানুষটাকে জ্বালায়।বিরক্ত করে।কিন্তু সেজন্য কখনো মন খারাপ হয় না।খারাপ লাগে না তার।কিন্তু আজ কেনো খারাপ লাগছে।
.
নিজের রুমে গিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই প্রান্তি দেখতে পেলো কয়েকশ কল আর মেসেজ।যার সবগুলোই তার প্রানপ্রিয়া বান্ধবী আবিশাই করেছে।মেসেজগুলো ওপেন করতেই দেখতে পেলো।সেখানে হাজার রকমের স্যরি দিয়ে বার্তা পাঠানো।কপাল কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলো প্রান্তি।তখন রাগে ক্ষোভে কলেজ থেকে চলে আসার পর আর তার ফোনটা হাতে নেওয়া হয়নি।বিধায় এই কল আর বার্তার বয়ে যাওয়া ঝড়ের আভাস গুলোও তার দেখা হয়নি।ফোনটাও ছিলো সাইলেন্সে।আর প্রহান নামক মানুষটার সাথে সাথে আবিশার উপরে-ও রাগটা চড়াও হয়েছিলো।বিধায় আবিশাকে কলেজে ফেলেই সে একাএকা চলে এসেছিলো।অবশ্যই মেয়েটার উপর ক্ষনিকের জন্য রাগ হলেও অভিযোগ নেই তার।সে জানে আবিশা তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।তবুও একজনকে যখন শাস্তি দিয়েছে।ফাজিল মেয়েটা বাদ যাবে কেনো?ফোনের বার্তাগুলোর দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে প্রান্তি বললো।
—অসভ্য মেয়ে ইচ্ছাকৃত আকাম করে এখন কল আর মেসেজের ঝড় তুলে দিয়েছে।ফাজিল কোথাকার!
সে ফোন ধরবে-না।আর না মেসেজের রিপ্লাই করবে।আরও একটু বিচলিত হয়ে আরও কয়েকশ কল আর মেসেজ করুক।তারপর সে ধরবে।ফোনটা হাতে নিয়ে ছাদে চলে গেলো প্রান্তি।ছাদে গিয়ে দেখলো আদ্র আর নিদ্র ফুল গোনা শুরু করো দিয়েছে।দুই বিচ্ছু ফুলগাছ দেখলে হয়।যত দাম হোক আর যেখানেই দেখুক কিনে নিয়ে আসবে।পিচ্চি পিচ্চি ছেলে দুটোর এতো গাছের শখ।তাদেরকে না দেখলেই বোঝানো মুশকিল।
হাতের মুঠোফনটা ফের কেঁপে উঠতেই ফোনের দিকে তাকালো প্রান্তি।কিছু মূহুর্তেই কল কেটে যেতেই দেখল আবারও কয়েকটা মেসেজ।মেসেজের নোটিফিকেশন এর সাউন্ড অফ।বরাবরই সে অফ করে রাখে।সাউন্ডে সে বিরক্ত হয়।কখন আবিশা আবারও মেসেজ করেছে খেয়াল করেনি।ছাঁদের একপাশে লাগানো ফুলগাছ গুলোর মধ্যে থাকা আদ্র-নিদ্রকে এক পলক দেখে নিলো।তারা নিজেদের মতো ফুল গুনতেই আছে।সেটা দেখে ছাদের অন্য প্রান্তের দিকেই পা বাড়ালো প্রান্তি।ছাঁদের রেলিঙ ঘেঁষে দাঁড়াতেই বিকালের একদল স্নিগ্ধময় হাওয়া ছুঁয়ে দিলো তাকে।ফের ফোনটা সামনে নিয়ে আবিশার দেওয়া মেসেজগুলো ওপেন করতেই দেখতে পেলো সেখানে লেখা।
—মেসেজ দেখেও রিপ্লাই কেনো করছিস না?এত স্যরি বলছি তাও তোর রাগ কমছে না!
—তুই কল ধরছিসনা, মেসেজে দেখেও রিপ্লাই করছিস না এবার কিন্তু সত্যিই আমার কান্না পাচ্ছে।ফোনটা ধরনা জানু।নাহলে মেসেজের রিপ্লাই দে।প্লিজ প্লিজ প্লিজ জানু।
—এরকম ভুল আর কখনো করবো না।প্লিজ জানটা আমার ফোনটা ধরনা।
এরকম কতশত মেসেজ।মেসেজগুলো দেখে হাসলো প্রান্তি।এরকম একটা কলিজার বন্ধু থাকলে আর কি চাই।মেসেজ গুলো দেখে শান্তি শান্তি অনুভব হলেও ফের কিছু একটা ভেবে মুখের হাসিটা বিলিন করে দিয়ে আবিশাকে ভিডিও কল করলো প্রান্তি।মূহুর্তেই কাল বিলম্ব না করে ওপাশ থেকে কলটা রিসিভ করলো আবিশা।ফের হড়বড়িয়ে বললো।
—এতোবার কল করেছি ধরছিস না কেনো?,কতোশত মেসেজ দিয়েছি রিপ্লাই কেনো দিস না?এতো রাগ আমার উপরে?খুব খুব স্যরি জানু।আর রাগ করে থাকিসনা।এই দেখ আমি কানে ধরসি আর কখনো এরকম ভুল করবোনা।তুই যা বলবি আমি আবিশা তাই মেনে চলবো।তবুও আর রাগ করে থাকিসনা।তুই কল ধরছিস না,মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছিলিস না।আমার কত কষ্ট হচ্ছিলো জানি…..
—ওই থাম!বাবারে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে।
—-তুই আমাকে বকছিস?
প্রান্তি কল না ধরাতে মেসেজের রিপ্লাই না দেওয়াতে আবিশার সত্যিই যে কষ্ট পেয়েছে এটা তার চোখমুখে ফুটে উঠেছে। আবিশার মুখের অবস্থা দেখে আর তার কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগলেও সহজে গললো না প্রান্তি।ধমক দিয়ে বলললো
—-এই একদম ঢং করবিনা।ফোন কেনো দিয়েছিস।
আবিশা এবার কাঁদো কাঁদো গলায় বললো–আমি ঢং করছি।আমি সত্যি ঢং করছিনা।এবারের মতো মফ করে দেনা জানু।তারপর তুই যা বলবি তাই মানবো।
প্রান্তি কপাল কুঁচকে কিছু একটা ভাবলো।ফের একটু ভাব নিয়ে বললো—সত্যি তো আমি যা বলবো তাই মানবি।
প্রান্তিকে গলতে দেখে আবিশা উৎফুল্লচিত্তে বললো।
—তিন সত্যি জানু।
—-তোর ক্রাশের লিস্টের প্রথম কে?
আবিশা উৎফুল্ল চিত্ত মুখটা চুপসে গেলো।প্রান্তি মুলত কি বলতে চাইছে বা এরপর কি বলবে কিছুটা হলেও সে আন্দাজ করতে পারছে।উৎফুল্লময় মুখটা ফের কাঁদো কাঁদো করে ফেললো আবিশা।বললো।—প্রহান ভাইয়া।
—আজ থেকে সে বাদ।পুরো লিস্টের ফাস্ট কেনো কোথাও সে থাকবে না।ডান..
—ডান কি করে হয়?সে লিস্টের প্রথমে থাকবেনা এমন কি কোথাও থাকবেনা তা কি করে সম্ভব?তাহলে থাকবেটা কে?
—থাকবে হলো আমাদের মোড়ের মাথার নতুন চায়ের দোকনার আনিছ ভাই।যার চা খেয়ে আমরা ক্রাশিত।
—এটা কোনো কথা হলো?উনার বানানো চা খেয়ে আমরা চায়ের উপরে ক্রাশ খেয়েছিলাম।উনার উপরে নয় জানু।
—সমান কথা।সেটা তো উনার বানানো চা-ই।তুই কি আমার কথা মানতে রাজি নস?
—আমি সেটা বলিনি কিন্তু আমার ক্রাশ লিস্টের প্রথম নম্বর আনিস ভাই।এটা মানতো পারছিনা।কোথায় সুদর্শন লেকচারার প্রহান ভাইয়া আর কোথায় পান খেয়ে দাঁত লাল করে থাকা আনিস ভাই।প্লিজ জানু আমার কেমন মাথা ঝিমঝিম করছে।আমার৷ প্রথম বা শেষ কোনো ক্রাশের দরকার নেই।
আবিশার কথায় খিলখিল করে হাসি পেলো প্রান্তির।তবুও হাসলোনা সে।পেট ফেটে যাচ্ছে তার হাসিতে তবুও হাসতে পারছেনা।কি কষ্টটাই না হচ্ছেটা তার।তবুও এখন হাসা যাবেনা।প্রান্তি একটু অভিমান নিয়ে বললো।—অবশ্যই তোর ক্রাশের দরকার আছে।তবে তুই আমার কথা মানতে চাইছিস না-তো।ঠিক আছে তোকে মানতে হবেনা।আল্লাহ হাফেজ।
—এই কাটিস না।কাটিস না।আচ্ছা ঠিক আছে।আজ থেকে আনিছ ভাই আমার লিস্টের প্রথম ক্র্যাশ।ওকে এবার খুশি।
আবিশার মুখ বেচারার দিকে তাকিয়ে প্রান্তির ভিষন মায়া হলো।সে যে কতো কষ্টে আনিছ ভাইকে ক্রাশ বলে মেনে নিয়েছে এটা তার বেচারা মার্কা চেহারা দেখে অনুভব করতে পারছে প্রান্তি।তবে এখন গললে চলবে না।তাই সে ও অতি প্রফুল্লচিত্তে বললো।–খুব খুশি।
—এবারতো স্যরিটা একসেপ্ট করে নে জানু।
—সে তো কখন করে নিয়েছি।
—-আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুকরিয়া জানু।তবে আনিস ভাইকে ক্র্যাশ বানিয়ে দিয়েছিস।কেমন একটা অদ্ভুত ফিল হচ্ছে।
—-তারমানে তুই আমার কথা মানতে চাইছিস না?তাই তো?আচ্ছা ঠিক আছে!
—-আরেহ আরেহ তেমনটা নয়!আচ্ছা ও প্রসঙ্গ বাদ দে অন্য কথা বল।
প্রান্তির খুব হাসি পেলেও হাসলোনা।হাসবে কি-করে? মেয়েটা যে তাঁকে কম ভালোবাসে।এরকম বন্ধু ক’জন পায়?আর এই রকম আত্মার বন্ধু কজনের বা হয়।আজ আবিশা তার সব কথা মেনে নিয়েছে।কাল দেখা হলে দুষ্টমিষ্টি কিছু ফাজলামো করে সব মিটিয়ে নেবে।এরকমটা তাদের মধ্যে মাঝেমধ্যে হয়ে থাকে।
দুজনে প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে আরও কিছু সময় এটাওটা নিয়ে কথা বলতে থাকলো।
.
সময়টা রাত।মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে প্রহান।বাবা এখনো বাসায় ফেরেন নি।বিধায় মা তার কাছে এসে কিছু সময় বসেছে।এরকমটা প্রায় সময় মা করে থাকেন।তবে তার মায়ের আদরের বিড়ালটা জেগে থাকলে তিনি অবশ্যই তার রুমে নয় ওই আদূরে বিড়ালটার রুমেই থাকতেন।কিন্তু তার মায়ের আদূরে বিড়ালটা নাকি আস সকাল সকাল ঘুমিয়েছে।ঘুমাবেনা কেনো?অকাজ করে কতো পরিশ্রম গেছে আজকে তেনার।
—মাথা ব্যাথা কমেছে?
—হুম।কিছুটা।
মাথা ব্যথা কিছুটা কমেছে কথাটা শুনতেই মাহবুবা বেগম সাহস জুগিয়ে প্রহানকে উদ্দেশ্য করেই বললেন।
—আজকে তুই ওকে কলেজে বকলি কেনো?তুই তো জানিস ও মোটেও অমনোযোগী বা খারাপ স্টুডেন্ট নয়।
বিকাল থেকেই রুম হতে বের হয়নি প্রহান।নামাজগুলো ও সে রুমের ভিতরে পড়ছে।সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সে সময়করে জামাতে পড়ার চেষ্টাকরে।সেখানে আজ বাড়িতে পড়েছে।সন্ধ্যার পরে মা এসে একবার ডেকেছিলেন, সে দরজা খোলেনি।রুম গোছতে ব্যস্ত ছিলো।রুমের চিত্রটা বাহিরের সবার অজানা।সাড়ে নয়টা বাজতেই মা খবারের জন্য আবার ডাকতে আসলেন। সে বললো খাবেনা মাথা ব্যাথা করছে।কিছুক্ষণ যেতেই মা খাবার আর ঔষধ নিয়ে হাজির।খাবারটা খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে তারপর মা চলে গেলেন।বাবা আসতে দেরি হচ্ছে দেখে পুনারায় আবারও তার রুমে হানা দিলেন।নিজে থেকেই কোলে মাথা রেখে শুতে বললেন।প্রহানও বিনাবাক্যব্যয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে দিতেই তিনি মমতাময়ী স্পর্শে কপাল আর মাথার চুলের মধ্যে হাত বুলাতে লাগলেন।কিন্তু তিনি কিছু একটা বলতে চাইছেন।এটা প্রহান আগে থেকেই বুঝতে পারছে।হয়তো কি বলতে চাইছিলেন এটাও বুঝতে পেরে নিশ্চুপ ছিলো সে।প্রসঙ্গটা উঠতেই গম্ভীর গলায় প্রহান বললো।
—ওটা আমার কাজের জায়গা মা।আর সেখানে সবাই সমান।স্টুডেন্ট ক্লাসে অমনোযোগী হলে বা বেয়দবী করলে আমি শিক্ষক শাসন করার অবশ্যই অধিকার রাখি।ওকে আর মাথায় চড়িও না মা।
—-আমার চড়ানোটা ভুল?
প্রশ্নের প্রেক্ষিতে প্রহান কথা বলতে পারলোনা।নিশ্চুপ রইলো।কিছুক্ষণ যেতেই বললো-সামনে সহ্যটা আমাকে করতে হবে।কোনো বুঝছো না।
–তবে কি তুই দ্বায়বদ্ধ হয়ে ওকে গ্রহন করতে চাইছিস? নিজ ইচ্ছেতে ভালোবেসে নয়?ও যেমনটা তুই কি ওভাবে ওকে সহ্য করে মেনে নিতে চাইছিস না।তবে তুই না চাইলে আমি জোর করবোনা।আর সারাজীবন সহ্যও করতে হবে না।দরকার পড়লে ভালো ছেলে দেখে ওকে বিয়ে দিয়ে আমি ঘরজামাই রেখে দেবো।
একটু থামলেন মাহবুবা বেগম।প্রহানও শান্ত।চুপচাপ মায়ের বলা কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে সে।ফের মাহবুবা বেগম বললেন।
-তবুও দায়বদ্ধতার খাতিরে আমি প্রান্তিকে কারও ঘাড়ে জোর করে চাপাতে চাই না।
চলবে…..
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর অবশ্যই উৎসাহ মুলক কমেন্ট করবেন।এবং যারা গল্প পড়বেন অবশ্যই রিয়াক্ট দিবেন।