ভাড়াটিয়া-১৫
চারজন লোক কে আসতে দেখেই দ্রুত অফিসে ঢুকল মঞ্জু।
ইমতিয়াজের কাছে গিয়ে বলল,” বস পুলিশ আসছে।” ইমতিয়াজ হলো বাস মালিক সমিতির সভাপতি। শ’খানেক বাসের মালিক।
ইমতিয়াজ একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “পুলিশ ক্যান! থানায় হপ্তা দেস নাই ঠিক মতো?”
“দুইদিন আগেই তো হিসাব মতো টাকা দেয়া হয়েছে বস।”
“আচ্ছা দেখি কী বলতে এসেছে! যা চা বিস্কিটের ব্যবস্থা কর।”
মামুন অফিসঘরে ঢুকল সাথে শাহাদাৎ, ইসমাইল ও জয়ী। মামুন কে ঢুকতে দেখে ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়াল। বড়ো করে সালাম দিলো। মামুন একটু অবাক হলো। ওরা কেউই পুলিশের পোশাক পরে আসেনি। তবুও এরা কী করে বুঝে ফেলে কে জানে?
হাসি হাসি মুখে ইমতিয়াজ বলল,” কেমন আছেন স্যার?”
মামুন এ প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না। আলগা একটা হাসি দিয়ে বলল,” আমি মামুন। গোয়েন্দা বিভাগ থেকে এসেছি। ”
অফিস ঘরটা বেশ সাজানো গুছানো। সাধারণত বাস মালিক সমিতির অফিস টফিস এত গুছানো থাকে না। বুঝা ইমতিয়াজের রুচিবোধ ভালো। টেবিলের সামনের চেয়ারটাতে বসল মামুন। শাহাদাত বসল তার পাশের চেয়ারে। ইসমাইল আর জয়ী দাঁড়িয়ে রইল।
ইমতিয়াজ হাসি আর প্রসারিত করে বলল, “কী খেদমত করতে পারি স্যার?”
মামুন একটু বিরক্ত হলো। লোকটা এত গদ গদ আচরণ দেখে। এরা কি কোনো দুইনাম্বার কারবারি টারবারি করে কি না কে জানে? না হলে পুলিশ দেখেই এত গলে যায় কেন!
একটু ভারি গলায় মামুন বলল,” আপনাদের বাসগুলো ছাড়া পূর্বে য়াত্রীদের একটা ভিডিও ফুটেজ রাখার কথা। সেটা কি নিয়মিত রাখেন?”
“জি স্যার। একটা বাস খুঁজে পাবেন না যারা ভিডিও ফুটেজ না রেখে বাস ছাড়ে।”
“গুড। তা এ সব ভিডিও ফুটেজ কতদিন সংরক্ষিত রাখা হয়?”
“এক মাস রাখি স্যার। তারপর ডিলেট করে দিই। বুঝেন তো স্যার এত এত ভিডিও রাখা সম্ভব না।”
“গত শুক্রবারের সব বাসগুলোর ভিডিও ফুটেজ আমি দেখতে চাই।”
“আপনি বলেন কোথায় পাঠাতে হবে। আমি সব পাঠিয়ে দিবো স্যার।”
“পাঠানোর দরকার নাই। আপনি সকল কেমেরাম্যান কে ডাকার ব্যবস্থা করেন। শুক্রবারের ফুটেজ সহ। ”
ইমতিয়াজ কে একটু চিন্তিত মনে হলো। এ তো বিরাট ঝামেলার কাজ। শুকনো একটু হাসি দিয়ে বলল, ” একটু সময় লাগবে স্যার।”
“আমরা অপেক্ষা করছি আপনি ব্যবস্থা করুন। আশেপাশে কোনো কমিউনিটি সেন্টারে সবাইকে আসতে বলুন।”
ইমতিয়াজ সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “ছেলে-পেলে কে কোথায় আছে কে জানে? এত অল্প সময়ে সবাইকে ডাকাত কঠিন কাজ! ”
মামুন মাথাটা ইমতিয়াজের দিকে একটু আগিয়ে একটু কঠিন গলায় বলল,” কঠিন কাজটাই করতে হবে। আই,জি স্যারের কাজ। সময় নষ্ট করার মতো হাতে নাই।”
ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়াল।” দেখি স্যার কী করা যায়।”
টেবিলের ওপাশ থেকে বেরিয়ে একটু উঁচু গলায় বলল,” মঞ্জু স্যারদের জন্য চা পানির ব্যবস্থা কর।”
ইমতিয়াজ ব্যস্ত ভঙ্গিতে বেরিয়ে গেল।
মঞ্জু আর একটা ছেলে ঠান্ডা একটা পানির বোতল এনে টেবিলে রাখল। সাথে একটা ট্রে-তে চা। অফিস ঘরের পাশেই একটা চায়ের দোকান। ওই দোকান থেকেই চা আনা হয়েছে। সাথে একটা জাম্বু সাইজের বিস্কিটের প্যাকেট। এত বিস্কুট কে খাবে কে জানে?
মঞ্জু বলল,” স্যার, চা নেন। এখানকার চা টা খুব ভালো!”
মামুন কিছু বলল না। সে চা খাবে কি-না এখনো বুঝা যাচ্ছে না। জয়ীর অবশ্য চা খেতে ইচ্ছে করছে।
শাহাদাত চায়ের একটা কাপ হাতে তুলে নিলো। জয়ির দিকে তাকিয়ে বলল, “নাও চা খাও। আপাতত কোনো কাজ টাক নেই। ” ইসমাইল আর জয়ী পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে।
ইসমাইল হাত বাড়িয়ে চায়ের একটা কাপ জয়ীর দিকে এগিয়ে দিলো। জয়ী হালকা হেসে ধন্যবাদ বলল।
ঘন্টাখানেক সময় পেরিয়ে গেছে। ইমতিয়াজের কোনো খবর নাই। মঞ্জু অবশ্য একটু পর এসে বলছে, “স্যার কিছু লাগবে কিনা?”
দুই ঘন্টা পর মঞ্জু এসে বলল, “স্যার চলেন।”
মামুন উঠে দাঁড়াল। ওরা এখন এসেছে একটা কমিউনিটি সেন্টারে। ঘরটাতে সাউন্ড সিস্টেম আছে। মনে হয় মিটিং টিটিং হয় এখানে। সারি সারি চেয়ারে বসে আছে অনেকগুলো ছেলে। এদের সবার হাতে ক্যামেরা দেখা যাচ্ছে।
মামুন চারিদিকে তাকাল। ইমতিয়াজ কে দেখা যাচ্ছে না। এতক্ষণ বিরক্ত হলেও। মামুনের এখন ভালো লাগছে! ইমতিয়াজ লোকটা ভালোই কাজের মনে হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে সব কিছু ব্যবস্থা করে ফেলবে মামুন আশা করেনি। ও ভেবেছিল লম্বা সময় বসিয়ে বলে দিবে,” স্যার আজ তো পারা গেল না! আগামীকাল আসেন সবাই কে পাবেন।”
ইসমাইল দ্রুত একটা প্রোজেক্টর রাশিদা বেগমের ছবিটা সেট করে ফেলল। মামুন আর শাহাদাত বসে আছে সামনের সারির চেয়ারে। সামনে জয়ী আর ইসমাইল।
এ সময় ইমতিয়াজ ঢুকল। মামুনের সামনে এসে বলল, “মোটামুটি সবাই এসেছে স্যার।”
মামুন একটু হেসে বলল,” ধন্যবাদ ইমতিয়াজ ভাই। খুব ভালো একটা কাজ করেছেন। ”
ইমতিয়াজ একটু উচ্চ স্বরে হেসে বলল,” কী যে বলেন স্যার। আপনাদের সাহায্য করা তো আমাদের দায়িত্ব। আইনের জন্য যে কোনো সাহায্য করতে আমরা রেডি স্যার।”
সবাইকে ছবিটা ভালো করে দেখার জন্য বলা হয়েছে। ইসমাইল বলল,” আপনারা সবাই শুক্রবারের ভিডিও ফুটেজ চেক করে দেখেন। এই মহিলা কোন বাসে চড়েছে?”
সবাই ভিডিও দেখছে। ক্যামেরায় এভাবে ভিডিও চেক করাটা একটু কঠিন। অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর। একজন দাঁড়িয়ে বলল, “স্যার পেয়েছি। ”
চলবে–