ছায়া নীল!
৫.
রক্তের ধারা কী সুন্দর ভাবে বয়ে যাচ্ছে। এক নাগারে তাকিয়ে থাকার দরুন আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো। রক্তের গন্ধ নাকে আসছিলো। পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো।
বিয়ের শাড়ী রক্তে ভিজে যাচ্ছে আর আমারো কেমন লাগছে। মনে হলো পুরো রুম ঘুরছে আর আমি পরে গেলাম ফ্লোরের উপর।
চোখ বুজে আসলো। সব কিছু অন্ধকার। ঘোর অন্ধকারে আমি পরে আছি।
মনে হচ্ছে কোনো এক অতল গভীর অন্ধকারে আমি ডুবে যাচ্ছি।
কেউ আমাকে খুব টানছে। কে???
আশেপাশে খুব চিল্লাচিল্লি হচ্ছে। সবার কান্নার আওয়াজ কানে আসছে। দরজা ভাঙার চেষ্টা চলছে শব্দ শুনে তাই মনে হচ্ছে।
মনে হলো দরজা খুলে ফেললো। কেউ আমাকে কোলে নিয়ে ছুটছে। খুব চেনা স্পর্শ মনে হচ্ছে।
মনে হচ্ছে যে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে তাকে আমি জানি, চিনি।
আবারো মনে হলো গভীর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি।
মনে হচ্ছে আমি ঘন, গভীর জংগলের মাঝে হারিয়ে গেছি। পথ খুঁজে পাচ্ছি না। ছোটাছুটি করছি পথের সন্ধানে।
কোন পথের সন্ধানে সেটা তো আমি জানি না। তাহলে কেনো খুজছি???
একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়ালাম। মনে হলো কেউ আমার হাত ধরলো।আমি তাকিয়ে দেখলাম নীল আমার হাত ধরে আছে।
হাত ধরে টেনে নিলো তার কাছে। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– তুমি এমন কেনো?
– হুশ, কোনো কথা বলে না।আমাকে জড়িয়ে ধরে আছো না?
– হুম।
– কিছু বুঝতে পারছো?
ওর হৃদস্পন্দন শুনছি খুব শান্ত মনে। মনে হলো ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।
আমারো কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু এখন ভালো লাগছে ওকে ছুঁয়ে থাকতে।
– তুমি কষ্ট পাচ্ছো কেনো??
– তুমি এমন কেনো করলে?? যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো?
– হলেও বা কী??
– তুমি বুঝতে চেষ্টা করো। আমার সামনে আসাটা সম্ভব না।
– কেনো সম্ভব না নীল? বলো না?? আমি তোমাকে বাস্তবে ছুঁয়ে থাকতে চাই।
– আমি তো তোমার মাঝেই আছি, সবসময় ছুঁয়ে। আমাকে অনুভব করার চেষ্টা করো। তাতেই তুমি পাবে।
– আমি তোমাকে শুধু অনুভবে নয় চোখের সামনে আমার মাঝে দেখতে চাই।
– জেদ করো না। আর কথা দাও নিজের কোনো ক্ষতি করবে না???
– আগে তোমাকে কথা দিতে হবে?আমার বাস্তব জীবনে তুমি আসবে।আমার হয়ে থাকবে।
– সম্ভব না।আমি তোমার মাঝেই আছি তোমার হয়েই।
– তাহলে আমিও তোমার কথা রাখতে পারবো না।
নীল আমার চিবুকে চুমু দিয়ে আমার চোখেরজল মুছে দিয়ে বলল
– আমি আসবো। তোমার কথা রাখলাম। এখন আমার শারলিন আমার কথা রাখবে। তাই না??
আমি ওকে আবারো জড়িয়ে ধরলাম। তারপর বললাম
– হ্যা, তোমার শারলিন কথা রাখবে!তোমাকে চিনবো কী করে?
– আমি তোমার আশেপাশে থাকলে তুমি অনুভব করতে পারবে।
আমাকে স্পর্শ করলে বা আমি স্পর্শ করলে তুমি বুঝতে পারবে।
আরেকটা কথা, আমি তোমার নীল সেটা কাউকে জানাবে না?
– হুম।
– আমি যাই???
– নাহ, থাকো না এভাবে কিছুক্ষণ।
– অনেক সময় পার হয়ে গেছে। জানো তো?
– কই নাতো? মাত্র কয়েকটা মুহূর্ত।
– শারলিন??
– হুম বলো।
– সত্যি তো আর এমন পাগলামি করবে না তো?
– তুমি না আসলে করবো।
– আমি যাই???
আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম
– যাও।
ও মৃদু হেসে চলে যেতে লাগলো। আর আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি।
একসময় ও আমার দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেলো।
আর আমিও গভীর জংগলের পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। অনেক দূরে আলোর রেখা দেখা হচ্ছে।
আমি ধীরেধীরে সেই আলোর রেখার মাঝে মিশে গেলাম।
আলোর মাঝে চোখ খুলতে পারছিলাম না। খুব চেষ্টা করছি। আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।
আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম আমি হাসপাতালের কেবিনের বেডে শুয়ে আছি। আমার হাত কেউ ধরে আছে। আমি পাশ ফিরে তাকালাম। আমার তাকানো দেখে সে মৃদু হেসে ফেললো। ঠিক সেই নীলের হাসি। কেবলই ও চলে যাবার সময় মৃদু হেসেছিলো।
আমি ওকে ছুঁয়ে দেখার জন্য হাত বাড়ালাম। ও আমার হাত আলতোভাবে ধরে,
আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল
– love you!
চলবে……!
#Maria_kabir