ছায়া নীল পর্ব-১৪

0
265

ছায়া নীল!

১৪.

আমি বললাম
– এতো দূরে থাকার কারণ?
– মা নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন।
– আচ্ছা তুমি পড়াশোনা করো নাকি চাকরী?
– আমি তোমার মতো বাচ্চা না। আমার গ্রাজুয়েশন ৩ বছর আগেই কমপ্লিট। এখন ব্যবসা করছি।
– আমি বাচ্চা না। তুমি তো বেশ বয়স্ক!
– হ্যা বুড়ার প্রেমেই তো পড়েছো।শুনো বাড়ির মধ্যে জোড়ে কোনো শব্দ করবে না। মা ঘুমুচ্ছে।
কথাটা বলে সৌরভ আমাকে নামিয়ে দিলো। রাতের অন্ধকারে ভালো বুঝতে পারলাম না বাড়িটা দেখতে কেমন। তবে যতটুকু বুঝলাম তাতে শিওর বেশ পুরাতন বাড়ি।
ডুপ্লেক্স সিস্টেম বাড়ি। সৌরভ বলল
– গেস্ট রুম টা তালা দেয়া আর চাবি মায়ের কাছে।
– তাহলে কই থাকবো? ফুপুকে ডেকে চাও চাবিটা।
– নাহ, তুমি আমার রুমেই ঘুমাও। আমি ড্রয়িংরুম এ সোফায় বেশ চালিয়ে নিবো।
– নাহ নাহ তুমি তোমার রুমে ঘুমাও, আমিই সোফায়….
– আমাদের তো হরোর মুভি দেখার কথা তাই না?
– হুম।
হরোর মুভির নাম শুনলে আমার যেমন ভয় লাগে তেমনিভাবে ভালোও লাগে। বাড়িটা এতো পুরাতন যে দেয়ালে ইট দেখা যাচ্ছে। লাইটের আলোও কেমন তেজ ছাড়া।
সৌরভ গাড়ি গ্যারেজে রাখতে গেছে। এই ফাকে একটু জামা কাপড় পাল্টে নিলে ভালো হতো।
কিন্তু হাতের দিকে তাকাতেই চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।
এই বাড়িতে মনেহয় আর কেউ থাকে না। কাজের লোক কাজ করেই চলে যায়। ড্রয়িংরুমের সাথেই ডাইনিং রুম।ছোট্ট টেবিল আর দুটো চেয়ার। আমার হুট করে বাগানের ভিতর হারিয়ে যাওয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। আমি তো ওর পিছনেই ছিলাম।
পিছন থেকে সৌরভ বলল
– তোমার হাতের ডান পাশে আমার রুম। রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।
ওর রুমে ঢুকে মেজাজ বিগড়ে গেলো। এতো অগোছালো কেউ কীভাবে হতে পারে?
বিছানার উপর ওর কাপড় চোপড় দিয়ে ঠাসা। মেঝেতে পা দিতেই গা সিরসির করে উঠলো। এতো ময়লা!
সৌরভ বলল
– তোমার ঝামেলায় আমার রুম গোছানো বন্ধ হয়ে গেছে।
– মাতাল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ালে তো রুমের প্রয়োজন কখনওই হবেনা। তাই এত নোংরা।
ও আর কোনো কথা বলল না। বিছানার উপর থেকে কাপড় চোপড় নিয়ে চলে গেলো। তারপর এসে বিছানা ঝেড়ে বালিশ ঠিক করে রেখে আমাকে বলল
– মশার সমস্যা নাই, তুমি ঘুমাও।
– আর তুমি?
– আমি তো মাতাল। মাতালের আর কী?
– আমি মজা করে বলেছি।
– অনেক রাত হয়েছে এখন আর মজা করার সময় না।
– মুভি???
– নাহ আমার ভালো লাগছে না।
ও চলে গেলো। আমিও আর ডাকলাম না। শুয়ে পরলাম।
হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ধরতে আসছে।
খুবই বিশ্রী একটা হাত। কিন্তু হাত টা যে কার সেটা দেখা যাচ্ছে না। আমি সরে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। আর হাতটাও আমার খুব কাছাকাছি চলে এলো। আমার কাটা হাতটা ধরলো। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম।
এতো শক্ত করে হাত ধরেছে যে আমি ছাড়াতেও পারছিলাম না।আমার পুরো শরীর ভার হয়ে যাচ্ছে।
সৌরভের কণ্ঠ শুনতে পারলাম। আমাকে ডাকছে
– শারলিন, শারলিন….
আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি পারছি না।
শরীর আর আগের মতো ভার মনে হচ্ছে না।চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি সৌরভ চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
– কী হয়েছে? তোমার শরীর ঘেমে ভিজে গেছে।
আমিও অবাক হলাম আমার শরীর ভেজা।
– আমি বুঝতে পারছিনা। মনে হলো একটা বিশ্রী হাত আমাকে ধরতে আসছে। জানো নীল আমার কাটা হাতও ধরেছিলো।
সৌরভ সাথে সাথে আমার কাটা হাত নিয়ে কী যেন দেখলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে।
তারপর বলল
– আরে কিছুই না। আসার পর থেকে চিন্তাই করে গেছো যে বাড়িটা ভূতের তাই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছো।
– নাহ নাহ সত্যি বলছি।
– হয়েছে বুঝেছি। এখন চুপ থাকো। তোমার গোঙানির আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেছে।
– আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না। তুমি আমাকে একটা মেয়েদের হোস্টেল খুঁজে দাও। বাবা সব টাকা দিয়ে দিবে।
– এতো রাতে কই পাবো? তার জন্যে তো দিন হতে হবে।

পুরো রাত আমি আর ও জেগে রইলাম। ভুলেও আমি চোখের পাতা এক করিনি। যে ভয়টা পেয়েছি তাতে আমার এই বাড়িতে থাকার সাহস নেই।
সকাল যখন হলো তখন সৌরভ বলল
– ঘুমাও তো।
– নাহ নাহ আমি এই বাড়িতে ঘুমাতে পারবো না।
– দেখো আমি আর মা এখানে ১০-১২ বছর যাবত আছি। আমরা তো কিছুই দেখতে বা অনুভব করতে পারিনি।
– আমি সত্যি বলছি, সত্যি একটা হাত…
– শারলিন তোমার ভুল। অনেক স্ট্রেসে আছো তাই এরকম আবোলতাবোল স্বপ্ন দেখেছো।
– আমাকে একটা মহিলা হোস্টেল খুঁজে দাও। আমি চলে যাই।
– দেখো আমার ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলছে। তোমার জন্যে একমাত্র।
– শুরুটা তুমি করেছিলে।
– আমার ব্যবসা ঠিক করে যখন সময় পাবো তখন খুঁজে দেখবো। তোমার মতো মেয়ের জন্য আমি আর সময় নষ্ট করতে পারবো না।
– তোমার খুঁজতে হবেনা। আমিই খুঁজে নিবো। আমাকে শুধু আমার বাসায় দিয়ে আসো।
– আমি তোমাকে একটু আগেই বলেছি, তোমার জন্যে আমার সময় নেই। বহুত ফাজলামি করেছো এখন আর না।
আমার আর সহ্য হচ্ছে না। ওর রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় এসে বসলাম।
সত্যি মা ঠিকি বলে, আমি খুব খারাপ। আমিই চলে যাবো এখান থেকে। গন্তব্য হীন ভাবে হেটে যাবো মরলে মরবো বাচলে বাঁচবো। তাও যারা আমাকে ঘৃণা করে তাদের কাছে থাকবো না।
সোফার সামনে রাখা টিটেবিলে পাউরুটি আর কলা রেখে সৌরভ বলল
– আমি বের হচ্ছি এই বাড়ি থেকে এক পা বের হলে তোমার পা ভেঙে ঘরে বসায় রাখবো।
– আমাকে খুঁজে পাবে কোথায়?
– সেটা আমি বুঝবো।খেয়ে নিবে। রাগ আমার সাথে খাবারের সাথে না।
সৌরভ দ্রুত চলে গেলো। গাড়ির শব্দ পেলাম। তারপর খেয়ে নিলাম। মেডিসিন খেয়ে ওর রুমে রাখা আয়নায় নিজেকে একটু দেখছি। চেহারা আর চেহারা নেই। চোখের নিচে কালি পরেছে। চুল রুক্ষমূর্তি ধারণ করেছে। আয়নায় কারো যেন ছায়া দেখতে পেলাম।গতকালের রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেলো। পিছনে ফিরে দেখি ফুপু। ফুপু আমাকে বলল
– কিরে কিছু খেয়েছিস?
– হুম।
– একটু অসুস্থ ছিলাম তো তাই দেরি হলো উঠতে।
– ঠিক আছে ফুপু।
ফুপু খুব সুন্দর, আমার তো মনে হচ্ছে ফুপু আমার কপি।
ফুপু বলল
– তুই আমার দর্পণ। মনে হচ্ছে বয়স্ক নূরের সামনে ১৯ বছরের নূর দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনি বেশি সুন্দর।
– নাহ রে সমান সমান। আমি আমার সৌরভের জন্য এমন একটাই মেয়ে খুজছি।যাই হোক বাদ দে, কী খাবি দুপুরবেলা??
– আপনার ইচ্ছা।
– আচ্ছা তুই আমার সাথে সাথে থাকবি। রান্নাবাড়া দেখলে শিখতে পারবি।
ফুপু বেশি কথা বলেন না। পুরো বাড়িতে আমরা দুজন।
দুপুরবেলা খাওয়ার সময় ফুপু বলল
– দুপুরে একা খেতে হয়। ভালো লাগেনা। আমার একজন সংগী হলো।
– সৌরভ ভায়া আসে না?
– ওর কোনো ঠিক নাই। সেই সকালে যায় আর রাতে ফিরে। তাও গভীর রাতে।
– আপনার কষ্ট হয়না?
– অভ্যেস হয়ে গেছে।
খাবার মোটেও ভালো হয়নি। খুব কষ্ট হলো খেতে। খাওয়ার পর খুব অস্থির লাগছিলো। ফুপু আর আমি রাতে খেয়ে শুয়ে পরলাম। গেস্ট রুমের চাবি ফুপু খুঁজে পাচ্ছেনা। তাই আমাকে তার রুমেই ঘুমুতে হলো।
শোয়ার সাথে সাথে ফুপু নাক ডাকতে শুরু করলো। গতকালের ভয় আর এই নাক ডাকাতে ঘুম আসছে না।
মেইন গেট খোলার শব্দ পেলাম। ফুপুর পাশ থেকে নীরবে উঠে রুম থেকে বের হলাম।
সৌরভ জুতা খুলছিলো।
আমাকে দেখে বলল
– কী খুব miss করেছো তাই না?

চলবে….!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here