ছায়া নীল পর্ব-১৫

0
196

ছায়া নীল!

১৫.

আমি বললাম
– নাহ।
সৌরভ বলল
– নিশ্চয়ই মায়ের রান্না খেয়ে চেহারার এই হাল হয়েছে।
কথাটা বলেই হাসতে শুরু করলো। হাসা অবস্থায় বলল
– প্রথম প্রথম খুবই বাজে লাগবে। পরে অভ্যেস হবে তবে জিহ্বার কোনো স্বাদকোরক জীবিত থাকবে না।
– ভালো তো। তুমি তো ছোটোবেলা থেকেই তার হাতের রান্না খাও। তাহলে তো তোমার জিহ্বা বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই।
– তা ঠিক বলেছো। এইজন্য ভেবেছি শেফ বিয়ে করবে।
– মুর্দা জিহ্বাকে পুনরায় জীবিত করার জন্য।
– ওহ শারলিন তুমি তো অনেক ক্লেভার।
– ছাই, তাহলে তো তুহিন লোকটাকেই বিয়ে করতাম। গাধার মতো তোমার জন্য নিজের বিপদ ডেকে আনতাম না।
সৌরভ আমার এ কথার কোনো প্রতি উত্তর দিলো না। আমি সেই ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে মোবাইলে গেমস খেলতে শুরু করলাম।
নাক ডাকলে ঘুম আসে নাকি। ঘুমাতেও ভয় লাগছে আবার সেই হাত যদি।
টেম্পল রান খেলতে মজাই লাগে। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে সৌরভ আমার পাশে বসলো।আমি না দেখার ভান করে খেলায় ব্যস্ত রইলাম। ও আমার আরো কাছে এসে বসলো। আমিও দূরে সরে গেলাম। ও আবারো কাছে এসে বসলো। এভাবে সরে বসতে বসতে একসময় আর জায়গা নাই সরে বসার।
ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
– এগুলা কোন ধরনের শয়তানি?
– শয়তানির কী আছে? তোমার পাশে আমি বসবো না তো কে বসবে? ওহ তুহিন পাশে বসবে?
– কীসব বাজে কথা বলছো।
– কই, তুমি তো একটু আগেই বললে তুহিন কে বিয়ে করার কথা।
– সেটা পারসোনাল ব্যাপার আমার। তোমার পারসোনাল ব্যাপারে তো আমি নাক গলাই না।
– আমার পারসোনাল বলতে তো তেমন কিছুই নেই।
– সে তুমিই জানো। আমার পাশে থেকে সরো। আমার অসহ্য লাগছে তোমাকে।
– আমাকে এতো তাড়াতাড়ি অসহ্য লাগছে?
আমি চলে যাবার জন্য উঠলাম ও আমার হাত ধরে টেনে পাশে বসালো।
– শেফ বিয়ে করবো তাই এতো রাগ?
বিয়ে করলে কী করবা?
– কিছুই করবো না। চেয়ে চেয়ে দেখবো একটা শয়তান আমার জীবন থেকে বিদায় নিছে।
তারপর সৌরভ ওর প্যান্টের পিছনে হাত দিয়ে কী যেন বের করার চেষ্টা করছে। পিস্তল বের করলো।
জীবনে এই প্রথম কাছ থেকে পিস্তল দেখলাম। পিস্তল হাতে নাড়াচাড়া করছে আর বলল
– এর থেকে ভালো আইডিয়া আমার কাছে আছে।
তারপর আমার হাতে পিস্তল দিয়ে বলল
– এটায় গুলি লোড করা আছে। ৫-৬ টা আছে।
হাতে পিস্তল নিয়ে কেমন ভয় লাগতে শুরু করলো।আমি আস্তে আস্তে বললাম
– তো?
– কিছুনা, যতক্ষণ রাগ থাকবে ততক্ষণ আমার বুকের বামপাশ টাতে একটার পর একটা গুলি ঢুকিয়ে দিতে থাকবা।
– তারপর?
– তাতেও রাগ না কমলে আমার পকেটে আরো গুলি আছে লোড করে নিবা।
– আমি শুট করতে পারি না আর তো গুলি লোড।বাদ দাও তো এসব।
– ভয় লাগছে?
পিস্তল টা সোফায় রেখে দিলাম। মন বলছে ওকে জড়িয়ে ধরে বলি, তোমাকে ছাড়া আমার কী হবে??
কিন্তু আমার ভিতরের কেউ একজন বলছে, না।
– ভয় কেনো লাগবে? যে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতে পারে সে অন্যকে হত্যা কেনো করতে পারবে না?
– তাহলে কী?
– আমি যে বিন্দুকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত আবর্তিত হচ্ছি সেই বিন্দুকে কীভাবে মুছে ফেলি।
– কিন্তু বিন্দু টা তো ভুল বিন্দু।
– নাও তো হতে পারে। আর এইসব বিশ্রী জিনিষ আমাকে দেখাবে না।
– লাইসেন্স করা আর্মস। দেখতেই হবে তোমাকে। আর অভ্যেসও করতে হবে, আমার সাথে থাকছো যে।
– বাহ কী বিরাট যুক্তি। যাও খেয়ে মাথা ঠাণ্ডা করো।
– মার রান্না খাবার খেলে মাথা ঠাণ্ডা হবেনা, গরম হবে।আমি খেয়ে এসেছি।
তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটলো। ও কীভাবে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন অস্বস্তিকর লাগছিলো। বাধ্য হয়ে বললাম
– প্লিজ ওভাবে তাকিয়ে থেকো না।
– তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
– এটা তো আগেও ছিলাম। নতুন কোনো কথা না।
– হ্যা কিন্তু কিছু কিছু সময় সেই সৌন্দর্য টাকে অন্যরকম লাগে। দেখোই না চাঁদ কে প্রতিনিয়ত দেখছি কিন্তু সবসময় তো সুন্দর লাগে না।
– বুঝলাম, কিন্তু আমার এই কালি পরা চোখ বিশিষ্ট চেহারায় নতুন কোনো সৌন্দর্য নামক কিছুই নাই।
– মনে পড়েছে তোমাকে ডাক্তারের কাছে আবার যেতে হবে।
– আবার লং জার্নি উফফ। ঘুমাবা না?
– নাহ দুপুরে লম্বা ঘুম দিয়েছি। জানি তুমি আজকেও ঘুমাতে দিবা না।
– নাহ আজকে ফুপুর পাশে ঘুমাবো তাই সমস্যা নেই। তুমি ঘুমাও।
– আজকে গতকালের যুক্তি খাটছে না। অন্যকিছু।
– বুঝেছি, সারারাত বসে বসে আমাকে হা করে দেখবে।
– হুম। দেখবো তুমি কী দিয়ে তৈরি? এতো ভালবাসতে কীভাবে পারো? আমার আগের সে তো ভালবাসতে পারেনি।
– যাও তো ঘুমাও। আর আমাকেও যেতে দাও।

পুরো পাগল, আর আমার চেয়েও জেদি। পিস্তল নিয়ে হাজির। ফুপুর পাশে শোয়ার পর নাক ডাকার শব্দ কানে আসছে। আলাদা একটা ছন্দে নাক ডাকছে।আহা, এযে মহান ছন্দময় সুর।
শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙলো ফুপুর ডাকে।
– এই ওঠ, ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে বলে?
– হুম। কয়টা বাজে?
– ৯ টা। সৌরভ এখনি চলে যাবে। তাড়াতাড়ি ওঠ……
তাড়াতাড়ি করে ব্রাশ করে, পোশাক পাল্টে নিলাম। খুদা লেগেছে খুব, খেতে বসবো তখন সৌরভ হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলল
– সময় নেই, এখন খেতে হবেনা।
ফুপু বললেন
– এতদূর যাবে না খেয়ে কীভাবে থাকবে?
– বাইরে থেকে খাবার কিনে দিবো বাট এখন সময়ের বড় অভাব।
না খেয়েই আমাকে গাড়িতে উঠতে হলো। ও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
– আমার পাশে তোমাকে বসাই না কেনো জানো?
– নাহ, আমার মাথায় তো জট নেই।
– তুমি পাশে থাকলে মনে হবে তাকিয়ে থাকি তারপর এক্সিডেন্ট হবে…!
– ভালো তো মরে গেলেই ভালো। আমার খুদা লাগছে সৌরভ।
– বুজেছি কিন্তু সময় ছিলো না।
গাড়ি তো সে ঝড়ের বেগে ড্রাইভ করতে শুরু করলো। এদিকে পেটে খুদা তার উপর এতো স্পিডে গাড়ি চলছে, কেমন লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।
গাড়ি থেমে গেলো। সৌরভ বলল
– নামো, এখানে নাস্তা করে যাওয়া যাবে।
ছোটোখাটো রেস্টুরেন্ট এর মতো একটা হোটেল। একে হোটেল বলবো না রেস্টুরেন্ট বলবো?
ও বললো
– নিশ্চয়ই কনফিউজড তুমি এটা হোটেল না রেস্টুরেন্ট ভেবে??
– হ্যা, আমি না বুঝতে পারছি না।
– হাফ রেস্টুরেন্ট হাফ হোটেল।
আমরা বাইরে চেয়ার টেবিল পাতা ওখানেই বসলাম।
– শুনো খিচুড়ি অর্ডার দাও আর সাতে ডিম পোঁচ।
– ওকে।
খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি ৫-৬ জন ছেলে আমাদের পাশের টেবিলে এসে বসলো।
আমি চুপচাপ বসেই ছিলাম আর ও মোবাইলে কী যেন করছিলো।
ছেলে গুলো খুব বাজে বাজে কথা বলছিলো আর হাসছিলো। বেশিরভাগ কথা গুলোই মেয়েলি বিষয়ক। এইখানে আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মেয়ে নেই।
সৌরভের সামনে আমার লজ্জা লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো গাড়িতে ফিরে যাই। সৌরভ হয়তোবা খেয়াল করছে। ওর চোখমুখ শক্ত হয়ে যাচ্ছিলো। খাবার খেয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
হাসপাতালে এসে সরাসরি ডাক্তারের কাছে চেকাপ করালাম। মেডিসিন চেঞ্জ করে দিলেন। আর আমাকে উদ্দেশ্য করে ডাক্তার বললেন
– পুলিশ কেস হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু মিস্টার সৌরভের রিকুয়েস্টে করি নাই। বুঝেছেন?
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। তারপর মেডিসিন কিনে সৌরভ বলল
– আমার অফিসে কাজ আছে।
– আমি কই যাবো?
– তুমি আমার সাথে থাকবা তারপর একসাথে বাসায় যাওয়া যাবে।
ওর অফিস রুমটা সুন্দর বিশেষ করে সাজানোটা।সৌরভ কে বললাম
– চেয়ারে বসে থাকতে হবে?
সৌরভ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে অফিস রুমের উত্তর কোণার দরজা খুলে ভিতরে নিয়ে গেলো।
– আমার বিশ্রামকক্ষ। তোমার জন্য উন্মুক্ত। এখানে বসে টেলিভিশন দেখো, ফ্রিজে খাবার আছে খাও। আর বোরিং লাগলে আমি তো আছি।
ওর অফিস বিল্ডিং টাও সুন্দর। দোতলা ভবন, নিচতলায় গাড়ি পার্ক করা হয় আর দোতলায় বিশাল হল রুমে কর্মকর্তা রা কাজ করছে।
– এই শুনো না।
– বলো কী বলবা?
– তুমি নিজেই এই ব্যবসা খুলেছো?
– বাবার ছিলো। একা ভালো লাগছেনা এখানে থাকতে?
কথাটা বলে ও আমার কপালের চুলে হাত দিয়ে বিলি কাটতে শুরু করলো।
– নাহ।
ও আরেক হাত দিয়ে প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে পিস্তল বের করে বিছানার উপর ছুড়ে মারলো। তারপর বলল
– মেজাজ গরম হয়েছিল এতক্ষণ।
– কেনো?
– থাক বাদ দাও। আমি যাই অনেক কাজ বাকি আছে।
ও চলে গেলো। বিছানার উপর শুয়ে টেলিভিশন ছাড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছিলো। তাই টেলিভিশন অফ করে চোখ বুজলাম। চোখ বুজার সাথে সাথেই সেই বিশ্রী হাত ভেসে উঠলো।
সাথে সাথে চোখ খুললাম। কিন্তু আশেপাশে তো কিছুই দেখছি না।

চলবে…..!

® Maria Kabir

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here