#____ফাগুন_প্রেম_পর্বঃ ০৫+৬
#_লিখাঃ Bornali Suhana
💛
বর্ণালী বই রেখে চশমা চোখে নিয়েই এক দৌড়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে আসলেই এই পাগলটা এসেছে কিনা?
নাকি ওকে মিথ্যে বলছে?
কোথাও তো দেখতে পাচ্ছেনা। কিন্তু ইভান ঠিকই বর্ণালীকে দেখতে পাচ্ছে।
-“এদিক-ওদিক না তাকিয়ে তারাতাড়ি এসো।”
-“মানে! তুমি কোথায়?”
-“এই তো সুপারি বাগানে।”
-“প্লিজ তুমি চলে যাও। কেউ দেখলে অনেক বড় প্রবলেম হয়ে যাবে।”
-“তাহলে আসবে না তুমি?”
-“নাহ আমি আসছিনা। তুমি প্লিজ চলে যাও।”
-“ঠিক আছে তাহলে আমি এখন মেইন দরজায় এসে নক করবো। তখন কাকে কি বলবে ঠিক করে রাখো।”
-“এই এই প্লিজ প্লিজ এমন কিছুই করো না।”
-“তাহলে এসো। ২মিনিট সময় দিলাম।”
বর্ণালী ভয়ে এখনো কাঁপছে। শীতের মাঝেও ঘামতে লেগেছে। মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
-“দে…..দেখো একবার বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ। আমি কিভাবে আসবো এতো রাতে?”
-“তা জানিনা। কিন্তু এখন তুমি না আসলে সত্যি বলছি আমি চলে আসবো।”
কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। একদিকে ভয়ে কাঁপছে অন্য দিকে ইচ্ছে করছে এই ছেলেটাকে থাপরে সবকটি দাঁত ফেলে দিতে। কিন্তু ও তো তা পারবে না। এতো সাহস ওর কখনোই ছিলো না আর হবেও না। ছোট থেকেই একটু চাপা স্বভাবের। কেউ কিছু বললে পালটা জবাব দিতে শেখেনি। চুপচাপ দাঁড়িয়ে হাজারও কথা শুনে চোখের জল ফেলে চলে আসতো।
-“কি হলো? আসছো নাতো? ঠিকাছে আমিই আসছি।”
-“এই এই না না। আ…..আমি আ….আসছি।”
-“কি বললে?”
-“আ…আসছি।”
বলেই বর্ণালী ফোন কেটে দেয়।
কিন্তু এখন কি করবে ও?
কিভাবে যাবে বাইরে?
তাও এতো রাতে! ভাবতেই শরীর অসার হয়ে আসছে। এই ছেলেটা কবে ওকে হার্ট অ্যাটাক করিয়ে ছাড়বে।
তাড়াহুড়োর মাঝে দরজা ভেতর দিয়ে লক করে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়।
ভাবছে কিভাবে এই রেলিং পার করে যাবে?
যদিও রেলিংটা কোমড় সমান তবুও ভয় কাজ করছে। নাহ যেতে তো হবেই তাকে। রেলিঙের বাইরে জুতো খুলে নিচে ফেলে দেয়। তারপর খুব খেয়ালে রেলিঙের উপর বসে।
“হে আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে নিও। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
এটুকু জায়গা লাফ দিতেই বেচারির অবস্থা একেবারে শেষ। চোখ বন্ধ করে দিয়ে মুখে হাত দিয়ে লাফ দেয়। মাটিতে পড়ে চিৎকার দিতেই চেয়েছিলো পরক্ষণেই নিজের মুখ নিজের হাতে চেপে ধরে। একবার আকাশের দিকে তাকায়। আকাশের অবস্থা ভালো না। বারবার বিজলী চমকাচ্ছে। মেঘ ঘুরঘুর শব্দ করে ডাকছে। যেকোন সময় বৃষ্টি নেমে আসবে পৃথিবীর বুকে। পৃথিবীকে সতেজ, নির্মল ও প্রানবন্ত করে দিয়ে যাবে। জুতো পড়ে একবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে একটা দৌড় লাগায় সুপারি বাগানের দিকে।
সামনে এসেই দেখে ইভান পায়ের উপর পা তুলে এক হাত মাথার নিচে দিয়ে নারকেল গাছের নিছে শুয়ে আছে। উঠান থেকে একেবারে সরাসরি ওকে দেখা যাচ্ছিলো। পরনে ব্ল্যাক প্যান্ট আর হোয়াইট টি-শার্টের উপর ব্ল্যাক জ্যাকেট। বুকের পাশে টি-শার্টের মাঝে চশমা টাঙিয়ে রেখেছে। বর্ণালী ইভানের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
`
ইভান বর্ণালীকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। গোলাপী রঙের একটা ড্রেস আর সাদা রঙের একটা ধুতি পায়জামা পরে আছে। কিন্তু মেয়েটা এতোটাই পাগল ওড়নাটা পর্যন্ত পড়ে আসে নি। একদম হাঁপিয়ে গেছে। একবার পেছনে তাকাচ্ছে তো একবার তার দিকে তাকাচ্ছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার শরীর কাঁপছে। শীতে কাঁপছে নাকি ভয়ে কাঁপছে কিছুই বুঝে ওঠার আগে ইভানের টি-শার্ট খামচে ধরে নারকেল গাছের ওপর প্রান্তে নিয়ে যায়।
সজিবকে এইসময় দেখে বর্ণালীর প্রাণ যেনো বেড়িয়েই যাচ্ছে। যদি দেখে ফেলে তাহলে আজ আর ওর রক্ষে নেই। বর্ণালীর দৃষ্টি অন্য দিকে কিন্তু পাশে যে একটা পাগল আছে তার দৃষ্টি যে এই ছায়াবতীর থেকে সরছেই না। ফাগুনের হালকা হাওয়ায় ওর চুলগুলো উড়ে এসে মাঝে মাঝে ইভানের মুখ স্পর্শ করে দিয়ে যাচ্ছে। সে কি মাতোয়ারা গন্ধ। চুলের এমন গন্ধেই বেচারার পাগল হওয়ার উপক্রম। বর্ণালী ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। কপাল কুচকে চোখ ছোট ছোট করে ঠোঁট দুটো চেপে মুখের ভেতর নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু চশমা পড়ার কারনে তার মায়াবী চোখ দুটো ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। হাত দুটো এখনো ইভানের বুকের টি-শার্ট খামচে ধরে আছে। ইভান একবার নিজের বুকের দিকে তাকালো একটু হেসে আবারো বাসন্তীকে দেখতে মগ্ন হয়ে গেলো। একটা ঘোরের মাঝে চলে গেছে। এরকম অবস্থায় নিজেকে সামলে রাখা দায়৷ এই প্রথম ওকে এতো কাছ থেকে দেখছে। বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা আরো বেড়ে গেছে।
সজিব কলিংবেল বাজাতেই শারমিন বেগম এসে দরজা খুলে দেন।
-“কিরে এতো দেরি করলি যে?”
-“এই তো মা হয়েগেলো।”
-“খেতে আয় টেবিলে খাবার দিচ্ছি।”
-“বর্ণ খেয়েছে?”
-“হ্যাঁ খেয়েছে।”
সজিব মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে চলে গেলো। আর ভাইটা ভেতরে যেতেই যেনো বেচারি প্রাণে বেঁচে গেলো। চোখ বন্ধ করে মনে মনেই বললো,
“উফ যাক বাবা এখন একটু স্বস্থির নিশ্বাস নিতে পারবো।”
অজান্তেই ইভানের দু’হাত বর্ণালীর কোমড়ে চলে গেছে। বর্ণালী চোখ বড় বড় করে নেয়। নিশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কি করছে এই ছেলেটা। ইভান আবেশে চোখ বন্ধ করে বর্ণালীর চুলে মুখ ডুবিয়ে গন্ধ নিতে লাগে। বর্ণালীরও চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। শরীরের কাঁপন আরো বেড়ে গেছে। বুক ধুকপুক করছে মনে হচ্ছে এখনি হার্ট বেড়িয়ে আসবে। হুট করেই ইভানের নাক এসে গলার মাঝে লাগে। আকাশে বিজলী চমকে উঠে বজ্রপাতের আওয়াজ ভেসে আসতেই বর্ণালীর ঘোর কাটে। বাস্তবে ফিরে আসে সে।
এসব কি হচ্ছে!
একদম ঠিক হচ্ছেনা এসব। ছিঃ ছিঃ কিভাবে এসব করতে দিচ্ছে ও! নিজেই নিজেকে বকে যাচ্ছে। আজ নিজেকে যেনো নিজের কাছেই অনেক ছোট মনে হচ্ছে। চোখ কুচকে বন্ধ করে উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে জোরে এক নিশ্বাস নিয়ে ইভানকে ধাক্কা দিয়ে দেয়। ইভান পড়তে গেলেই ও ভয় পেয়ে এক পা এগিয়ে যাই তাকে ধরতে। কিন্তু সে নিজেই নিজেকে সামলে নেয়। বর্ণালী নিচের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।
-“আ…….অ্যাম সো সরি। একচুয়েলি আ….আই কান্ট…..।”
ইভান ভেবেছিলো বর্ণালী খুব বেশি রিয়েক্ট করবে কিন্তু না পরক্ষণেই ওর ধারণা ভুল প্রমাণিত হয় বর্ণালীর কথায়।
-“এ…..এখানে কেন এসেছো?”
-“হু! না মানে…. তুমি আমায় ফাঁকি দিয়ে চলে এলে কেন?”
-“ক….কই ফাঁকি দিলাম?”
-“আচ্ছা? দাওনি?”
-“আ….আমার একটু তাড়া ছিলো তা….তাই চলে এসেছি।”
-“তাই নাকি? তাহলে তো আমি এসেছি ভালোই হয়েছে।”
-“দেখো প্লিজ চলে যাও। অল্পের জন্য আজ বেঁচে গেছি একটুর জন্য ভাইয়া দেখে নিতো। আর এখনি বাবা এসে পড়বেন যদি এভাবে দেখেন তাহলে অঘটন ঘটে যাবে।”
-“আমিও তো চাই অঘটন ঘটুক। তাহলে তোমায় আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবেন।”
ওর মুখে এমন কথা শুনে আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা। এতো পাগল মানুষ হয় নাকি! হয়ই তো হুম হয়।
নাহলে আল্লাহ হয়তো ওকেই এক পিচ বানিয়েছেন।
-“পা…..পাগল নাকি?”
-“হুম তোমার পাগল। প্লিজ বর্ণালী আমায় একটা সুযোগ দাও।”
-“তোমার রেলগাড়ী এখনো ওইখানেই আটকে আছে?”
-“হ্যাঁ আছে আর এখানেই আটকে থাকবে সারাজীবন।”
-“দেখো এটা কখনোই সম্ভব না।”
-“কেন সম্ভব না।”
-“তুমি ভালো করেই জানো কেন সম্ভব না।”
-“এটা কোন কারণ হলো? আগের যুগ থেকেই বড় ছোট বিয়ে হয়ে আসছে। আর তুমি এখনকার যুগের মেয়ে হয়ে এমন কথা বলছো? কোন হাদিসে নেই যে ছেলে বড় আর মেয়ে ছোট হতেই হবে।”
-“হ্যাঁ বলছি। আমাদের সমাজ কখনোই এমন কিছু মেনে নেয়না ইভান।”
-“চাইনা আমার সমাজ। তুমি মেনে নিলেই হলো। আমি তোমায় নিয়ে আমার আলাদা একটা সমাজ তৈরী করবো যেখানে শুধু তুমি, আমি আর আমাদের গভীর ভালোবাসা থাকবে।”
-“আমি পারবোনা। দয়া করে আমার পিছু ছেড়ে দাও। আর এখান থেকে চলে যাও।”
বলেই বর্ণালী পিছন ফিরে যেতে নিলেই ইভান ওর হাত ধরে নেয়। বর্ণালী পিছনে তাকিয়ে দেখে ইভান ছলছল চোখে মাটিতে বসে আছে। যে কোন সময় এই জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে।
-“পি….প্লিজ বর্ণালী আ…আমাকে এভাবে কষ্ট দিও না। আ….আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া আমার জীবন সাজাতে।”
-“হাত ছাড়ো প্লিজ।”
-“না ছাড়বো না।”
-“কেন ইভান? কেন এমন করছো? কেন বুঝতে পারছো না? এটা কখনই সম্ভব না। প্লিজ আমাকে আর ডিস্টার্ব করো না। আর কখনোও আমার সামনে এসো না।”
ইভান আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা। চোখে জমে থাকা জল নিজের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে।
-“কেন পারবে না হ্যাঁ? কেন? তোমার কাছে আমার ভালোবাসার একটুও মূল্য নেই?”
-“না পারবো না আমি তোমার ভালোবাসার মূল্য দিতে।”
ইভান চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো। বললেই হলো নাকি! কখনোই না। আমি তোমাকে কখনোই ছাড়বোনা। তুমি আমারই হবে। আল্লাহ তোমাকে আমার জন্যই পাঠিয়েছেন নয়তো কেন তোমাকে আমি আমার স্বপ্নে দেখতাম! আর কেনই বা ভাগ্য আমাকে তোমার কাছে নিয়ে আসতো? অবশ্যই আল্লাহ আমাদের দুজনের ভাগ্য এক কলমেই লিখেছেন। আল্লাহ তোমার নামই আমার বুকের পাজড়ের মাঝে খোদাই করে লিখে দিয়েছেন।
-“তোমাকে আমায় ভালোবাসতেই হবে।”
কথাটা বলেই ইভান বর্ণালীর হাত ধরে একটানে বুকের মাঝে নিয়ে নেয়। বর্ণালীর হার্ট দ্রুত বিট করছে। এমন কেন হচ্ছে! কিছুই বুঝতে পারছেনা।
-“ক….কি ক….করছো কি ইহ….ইভান? ছা…..ছাড়ো পি…..প্লিজ। এ…..এসব একদম ঠি…..ঠিক হ…..হচ্ছেনা।”
ছোটাছুটি করছে ইভানের কাছ থেকে ছোটার জন্য। কিন্তু পারছেনা।
বেচারি নিজেই নিজের মনে মনে বলছে,
এমন গন্ডারের মতো বডি বানালে কি আর পারা যায়! কখন থেকে ছুটোছুটি করছি কিন্তু পারছিনা। তার উপর ওর কাছে আসতেই বুকের মাঝে কেমন একটা শীতল হাওয়া বয়ে যায়। বুকটা ধুকপুক করে। শরীরের মাঝে যেনো কম্পন শুরু হয়ে যায়।
কেন এমন হয়?
এই কথার উত্তর ওর জানা নেই।
এক দিকে আকাশে মেঘ মেঘের সাথে সংঘর্ষে থেমে থেমে বিরাট শব্দ করছে অন্যদিকে বর্ণালীর মনের মাঝেও থেমে থেমে ধুকপুক শব্দ করে উঠছে।
-“ঠি…..ঠিক হচ্ছেনা ব….বলে দিচ্ছি।
-“আর তুমি যা করছো তা ঠিক হচ্ছে?”
-“আ…..আমি কি করলাম?”
-“আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো এটা কোন দিক দিয়ে ঠিক?”
-“দে…..দেখো…..”
-“হুম দেখছি তো।”
কথাটা বলেই ইভান বর্ণালীর দু’হাত ছেড়ে দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে আরো কাছে নিয়ে আসে। যতটা কাছে থাকলে একে অপরের নিশ্বাসের কথা শুনা যায়। ইভান যেনো বর্ণালীর প্রতিটা নিশ্বাসে নিজের নামটাই শুনতে পাচ্ছে আর বর্ণালী ইভানের। কিন্তু এই মেয়ে তা মানতে নারাজ। নিজের অনুভূতিটা বুঝতে পারছেনা। বুঝবেই বা কিভাবে তার মন বুঝলেও মস্তিষ্ক সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একে অপরের উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করতে পারছে। ইভানের নিশ্বাস এসে পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। লম্বা হলে যা হয় আরকি। ছয় ফুটি জিরাফের সামনে ও মিষ্টি একটা মেয়ে মাত্র।
`
চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিলো ইভান। মুখের মাঝে আলতো করে একটা ফু দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। কিন্তু খুব বেশি লাভ হলোনা ফাগুনের শীতল হাওয়ায় আবারো চুল এসে ওর মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। উষ্ণ নিশ্বাসের ছোঁয়া এসে মুখে পড়তেই বর্ণালীর পুরো শরীর কেঁপে উঠল। চোখ নিচের দিকে করে বললো,
-“ছে…..ছেড়ে দাও প্লিজ।”
-“ছাড়ার জন্য তো ধরি নি। সারাজীবন এভাবেই আগলে রাখবো।”
ইভান আঙুল দিয়ে বর্ণালীর মুখে স্লাইড করে চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিলো। বর্ণালী সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়। নিশ্বাস নেয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে ওর। এমন কেন করছে! আমাকে কেন এভাবে পাগল বানাচ্ছে! না না এসব পাপ। এসব কখনোই ঠিক না। সব ভুল হ্যাঁ এইসবকিছু ভুল সব সব সব।
ইভান আর আমার কখনোই কোন কিছু সম্ভব না কখনোই না। আমাকে ওর থেকে দূরে থাকতে হবে। চোখ খুলতেই দেখি ইভান চোখ বন্ধ করে মুখ আমার মুখের একদম কাছে নিয়ে এসেছে। কিঞ্চিৎ পরিমান ফাঁকা নেই। ওকে আমার থেকে সরানোর জন্য গায়ের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেই। ওর হাত একটু ধীর হয়ে ছিলো বলে ধাক্কার সাথে সাথে দূরে সরে যায়। চোখ খুলে আমার দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে।
-“দেখো…..”
-“আরে দেখালে না দেখবো। আগে দেখাও। অবশ্য যা দেখছি তা কিন্তু অনেক সুন্দর। রাতের চাঁদটাকেও হার মানিয়েছে। দেখো না তাইতো আকাশে আজ লজ্জায় চাঁদটাও উঠে নি। ”
-“আ…..আমি গেলাম।”
-” আচ্ছা? আমি যেতে দিলে না যাবে। একদম নড়বে না চুপ করে দাঁড়াও নয়তো আমি চিৎকার করবো বলে দিলাম।”
ওর এমন হুমকি শুনে আমি তো অবাক! এই আসলেই পাগল শুধু পাগল না ঘোর পাগল। এদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ইভান আবারো আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। এক সময় পিছিয়ে যেতে যেতে নারকেল গাছের নিচের দিকে পা লাগতেই ওখানে বসে পড়ি। ইভান আমার দিকে মাথাটা একটু ঝুকিয়ে তাকালো। কি করতে চাচ্ছে ও?
আমি খালি গলায় ঢোক গিলছি। কিন্তু ও আর না এগিয়ে একটুখানি পিছিয়ে গিয়ে নিচ থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
বর্ণালী একবার আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে ব্রু কুচকে আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
-“নাও।”
-“কি এটা?”
-“রুমে গিয়ে খুলে দেখো।”
-“আমি নিতে পারবো না।”
-“দেখো না নিলে কিন্তু আমার দেয়ার অন্য উপায় আছে।”
-“না না নিচ্ছি।”
বর্ণালী ভয়, ঠান্ডা তারউপর বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু হয়ে বসে আছে। কেমন অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে। বার বার এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। হুট করেই ইভান বর্ণালীর এক হাত ধরে হাতের ঠিক মাঝখানে চুমু একে দেয়। ইভান এমন কিছু করবে আমি ভাবতেও পারিনি। বরফের মতো জমে বসে আছি ওখানেই। নিশ্বাস নিয়েছি কিন্তু ফেলতে পারছিনা। চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস ফেলতে চাইতেই ইভান আমার চোখে চশমা পড়িয়ে দিলো।
-“তোমাকে চশমায় অনেক কিউট লাগে। কিন্তু ওই মায়াবী চোখ দু’টি ঢেকে রেখে দেয় তাও ঠিক ভালো লাগেনা। তাই আমি যখন যেভাবে দেখতে চাইবো সেভাবেই আমার সামনে দেখা দেবে।”
-“পা…..পারবো না। আ….আমার কি আর খেয়ে কোন কাজ নেই?”
-“কি বললে?”
-“না না কিছুনা। প্লিজ আমি যাই? দেখো ভিজে যাচ্ছি আর তুমিও ভিজে যাচ্ছ। তুমি বরং বাসায় যাও। সবাই হয়তো টেনশন করছেন।”
-“বাহ আমার বাসন্তী দেখছি আমায় নিয়ে ভাবে!”
-“আরে না ওইরকম কিছুনা।”
-“ঠিকাছে চলে যাচ্ছি। তুমি যাও আগে।”
কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু ওর ইভানের পাশ থেকে দৌড় দিতে দেরি হলো না।
-“এই শুনো?”
-“হুস।”
ইভান প্রায় অনেকটা জোরেই আওয়াজ দেয় বর্ণালীকে। বর্ণালী ওখানেই থেমে যায়। ঠোঁটের মাঝে আঙুল দিয়ে ইশারা করে চুপ করতে। এই দৃশ্য দেখে তো ইভান পাগল হয়ে যাচ্ছে। এই প্রথম ওর ঠোঁট দুটো ভালো করে দেখলো। লিপস্টিক ছাড়াই ওর ঠোঁট হালকা গোলাপি রঙের। বর্ণালী একটু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
-“আবার কি?”
-“ইয়ে মানে, তোমাকে না ওড়না ছাড়া অনেক এট্রাক্টিভ লাগছে। আমার মাথা নষ্ট করে দিয়ে এখন চলে যাচ্ছ এটা কিভাবে পারো তুমি?”
বর্ণালী এতোক্ষণ সেদিকে খেয়ালই করেনি। ইভানের এমন কথা শুনে চোখ বড় বড় করে নেয়। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে খপ করে দু’হাত দিয়ে ক্রস করে ঘাড় অবধি নিয়ে বুক ঢেকে নেয়। একবার ইভানের দিকে তাকিয়ে আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে এক দৌড় দেয়।
ছিঃ ছিঃ বর্ণালী কিভাবে তুই এতো বড় ভুল করলি? কিভাবে?
লজ্জায় মাথা কাটা গেছে। কিভাবে দাঁড়াবি এবার ইভানের সামনে? নিজেকে একনাগাড়ে বকেই যাচ্ছে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় বিপত্তি তো ঘটে রেলিঙের পাশে গিয়ে।
#______চলবে……….
💛
#___ফাগুন_প্রেম___
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ০৬
নিজের দিকে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে খপ করে দু’হাত দিয়ে ক্রস করে ঘাড় অবধি নিয়ে বুক ঢেকে নেয়। একবার ইভানের দিকে তাকিয়ে আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে এক দৌড় দেয়।
ছিঃ ছিঃ বর্ণালী কিভাবে তুই এতো বড় ভুল করলি? কিভাবে?
লজ্জায় মাথা কাটা গেছে। কিভাবে দাঁড়াবি এবার ইভানের সামনে? নিজেকে একনাগাড়ে বকেই যাচ্ছে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় বিপত্তি তো ঘটে রেলিঙের পাশে গিয়ে।
আসার সময় তো রেলিঙের উপর বসে লাফ দিয়ে নিচে নেমে এসেছিলাম।
কিন্তু এখন যাবো কিভাবে?
এতোটা উপরে উঠবো কিভাবে?
বর্ণালী একবার নিচের দিকে তাকাচ্ছে একবার রেলিঙের দিকে। উঠানটা নিচু হওয়ায় এখন রেলিঙের উচ্চতা প্রায় নিজের বুকের সমান মনে হচ্ছে। কিন্তু যেভাবেই হোক যেতে তো হবেই। ইভানের দেয়া প্যাকেটটা আগে রেলিঙের উপর দিয়ে নিচে ফেললো। তারপর জুতো খুলে ফেললো। এখন নিজেকে যদি এভাবে ফেলা যেতো! আরে ধুর কি সব ভাবছি আমি! উফ বর্ণালী নিজেকে শান্ত কর। চেষ্টা কর তুই পারবি। নাহলে যে আজ রাত তোকে এখানেই থাকতে হবে। এসব ভেবে ভেবে রেলিঙের পাশে এক পা তুলে উঠার চেষ্টা করছে। ইভান পেছন থেকে তা খুব করে লক্ষ্য করছে আর মিটিমিটি হাসছে। ইভান ওর দিকেই এগিয়ে এসে বললো,
-“May I help you?”
-“yes please….”
একধ্যানে এ কথা বলেই খেয়াল করে সে কার সাথে কথা বলছে! পিছিন ফিরে তাকাতেই যেনো দম যায় যায় অবস্থা। বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা আবারো বেড়ে গেছে। একটু আগের কথা খেয়াল হতেই আবারো দু’হাতে বুক ঢেকে পেছন ফিরে যায়। ইভান মুখ চেপে হাসছে। বর্ণালী পিছন দিকে না তাকিয়েই নিজেকে একটু সামলে বললো,
-“No…. no need. please you can go now.”
-“Are you sure?”
-“y….yeah please.”
-“okay…. I’ll leave but আগে তুমি ভেতরে যাও তারপর আমি চলে যাবো।”
হুহ আগে তুমি চলে যাও তারপর আমি যাবো। শখ কত! এতটুকুন একটা ছেলে আর আসছে ভালোবাসা দেখাতে! হুহ ঢংয়ে আর বাঁচিনা। একা একাই বিরবির করে কথাগুলো বলছে আর কখনো আকাশের তারা গুনছে তো কখনো পা দিয়ে নিচের ঘাস নাড়াচাড়া করছে। ইভান ভালো করেই বুঝতে পারছে বর্ণালীর মনের অবস্থা। হুট করেই মাথা নিচু করে রেলিঙের পাশে হাটুর উপর ভর দিয়ে বসে গেলো।
-“বর্ণালী আমার কাধের উপর পা রাখো।”
এমন কথা শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এই ছেলে এসব কি বলছে? পাগল হয়ে গেলো নাকি? হওয়ার কি আর বাকি আছে? ও তো এমনিতেই পাগল।
-“মানে কি?”
-“তুমি কি রুমে যাবে না? এখানেই থাকবে?
নাকি আজই শশুর বাড়ি যাবে আমার সাথে?”
আমি এখনো ওর দিকে তাকাইনি অন্য দিকে চেয়ে আছি। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।
-“মজা করছিলাম বর্ণালী। এসো পা দাও আমার হাতের উপর। কাধের মাঝে এক হাত দিয়ে ভর দিয়ে উঠে যাবে।”
-“ভয় করছে পরে যাবো আমি।”
-“এটুকু বিশ্বাস রাখতেই পারো বর্ণালী। আমি থাকতে তোমাকে পড়তে দিবো না।”
একটু ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। এক হাতের উপর আরেক হাত দিয়ে এক হাটু ভাজ করে বসে আছে। জানিনা কেন কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগছে এভাবে ওর হাতের উপর পা রাখতে।
-“কি হলো? আর কত ভাববে? বৃষ্টি বেড়ে যাচ্ছে তো। তাড়াতাড়ি করো। একবার বিশ্বাস করে দেখো শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত এই বিশ্বাস ভাঙবো না।”
কি মনে করে ইভান এমন কথা বলছে তা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি এসব কোন কিছু নিয়ে ভাবতে চাই না। আপাতত এখান থেকে রুমে যেতে পারলেই বেঁচে যাই। সেই কখন থেকেই বর্ণালী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে এক হাতে আরেক হাত কচলে যাচ্ছে। বারবার চুলগুলো কানের পেছনে নিয়ে ঠিক করছে। কিন্তু পুনরায় বাতাস এসে উড়িয়ে এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ওকে। কিছু কিছু চুল কপালের সাথে লেপ্টে আছে। কি সুন্দর লাগছে দেখতে বর্ণনা করার মতো না। ওর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললাম,
-“এর চেয়ে বেশি বিশ্বাস তো অপরিচিত যখন ছিলাম তখনো করেছিলে বর্ণালী। আজ তো একটু হলেও আমাকে চিনো তবে কেন বিশ্বাস করতে পারছো না?”
এমন কথা শুনে বর্ণালী কেন জানি আর কিছুই বলতে পারলো না। নিজেরই খারাপ লাগতে শুরু করলো ওর। আসলেই তো প্রথম দিন তো এর চাইতে বড় বিশ্বাস করেছিলো তাহলে আজ কেন নয়? না এখানে বিশ্বাসের প্রশ্ন আসছে না। এখানে অন্য কিছু বাঁধা দিচ্ছে ওর মনকে।
কিন্তু সেটা কি? তা বর্ণালীর জানা নেই। আর কিছু না ভেবেই ডান পা ওর হাতের উপর তুলে দিলো। এক হাতে ওর কাঁধ চেপে ধরলো। এমন স্পর্শ পেতেই ইভানের শরীরে যেনো এক অজানা শিহরণ বয়ে গেলো। বুক ধুকপুক করছে। নিজের হার্টবিট খুব ভালো করেই সে শুনতে পারছে। কিন্তু নিজেকে একটু শান্ত করতে লম্বা একটা নিশ্বাস নিলো। এই প্রথম ওর এমন অনুভূতি হচ্ছে তাও তার ভালোবাসার মানুষের জন্য। ইভান একটু উঁচু হয়ে উঠলো। বর্ণালী সাথে সাথে ভয় পেয়ে ইভানের কাঁধ খামচে ধরে। মনে হয় পাঁচ আঙুলের নখের আঁচড় বসিয়েই দিলো।
-“নামাও নামাও প্লিজ আমি পড়ে যাবো।”
-“এই মেয়ে এভাবে ভয় পেলে হবে নাকি? আর এইটুকু জায়গা থেকে পড়লে কিছুই হবে না। এক হাত দিয়ে রেলিঙে ধরো।”
-“না না আমি পারবো না।”
ইভান ওকে নামিয়ে দিলো। আস্তে আস্তে ওর কাঁধ ছেড়ে দাঁড়ালো। ইভান খেয়াল করলো বর্ণালী এখনো কাঁপছে।
-“ওকে আমার কাছে অন্য একটা উপায় আছে তোমাকে ওইপাশে পাঠানোর।”
-“ওকে তাহলে সেভাবেই পাঠাও।”
-“আর ইউ শিওর?”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ শিওর। অন্ততপক্ষে এটা থেকে তো ভালোই হবে।”
-“হুম তা হবে।”
কথাটা শেষ করেই ইভান রেলিঙ টপকে ভেতরে চলে গেলো। বর্ণালী হা হয়ে তাকিয়ে আছে কিভাবে গেলো এই ছেলে কিছুই বুঝতে পারলো না। বর্ণালীর দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ণালী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কি করছে এই ছেলে?
-“কি?”
-“আরে বাবা হাত দাও।”
-“কে….কেন?”
-“আরে ভয় নেই। হাত দাও ভেতরে আসবে না?”
-“কিন্তু?”
-“দেখো এর চেয়ে ভালো কোন উপায় আমার জানা এই। তোমার জানা থাকলে বলো?”
বর্ণালী এখনো অবিরত হাত কচলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ ভেবে হাত বাড়িয়ে দিলো ইভানের হাতের উপর। ইভান খুব শক্ত করেই ওর হাত ধরে নেয়। যেনো হাত ছাড়লেই হারিয়ে যাবে। কখনোই ভাবতে পারেনি এভাবে নিজে থেকে ও হাত বাড়িয়ে দিবে। হাত ধরে একটু উপরে তুলে নিলো। রেলিঙের ফাঁকে পা ঢুকিয়ে বর্ণালী উপরে উঠে। ইভান হুট করেই বর্ণালীর হাত নিয়ে নিজের দু কাঁধের মাঝে রাখে। বর্ণালী চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে। ইভান বর্ণালীর পেটের দু’দিকে দু’হাত দিয়ে ধরে। সাথে সাথে ও চোখ কুচকে বন্ধ করে নেয়। হার্টবিট ১০০গতিতে দৌড়াচ্ছে। ওর হার্ট খুব দ্রুত বিট করছে তা স্পষ্ট শুনতে পারছে। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মনে হয় মারাই যাবে এখন। কিছুই বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে! নিশ্বাস ভেতরে নিয়ে আটকে ধরে রেখেছে কিন্তু নিশ্বাস ফেলার মতো শক্তি পাচ্ছেনা।
এমন অনুভূতি কেন হচ্ছে ওর?
ইভান ওকে উঁচু করে শুন্যে তোলে এক ঝটকায় ভেতরে নিয়ে আসে। তাল সামলাতে না পেরে বর্ণালী ইভানের বুকে এসে পড়ে। ইভানের পিঠ দেয়ালে গিয়ে ঠেকেছে। বর্ণালী জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। ইভানের বুকে এসে লাগছে ওর উষ্ণ নিশ্বাস। মাতাল করা ওর চুলের সেই গন্ধ। বর্ণালীর ঘোর কাটতেই চট করে সরে দাঁড়ায় ইভানকে ছেড়ে। চুপচাপ নিচের দিকে চেয়ে আছে।
-“সরি।”
ওর মুখ থেকে সরি শুনে ইভান ব্রু কুচকে তাকায়। বর্ণালীর হাত ধরে এক টানে আবারও ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। ও চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে আর ইভান ঠোঁট বাকা করে দুষ্টুমি ভরা চোখ নিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
-“এ….এই ছাড়ো আমাকে। কি করছো কি এসব?”
-“সবসময় এমন ছাড়ো ছাড়ো বলো কেন বাসন্তী?”
-“দেখো….”
-“দেখাও কি দেখাবে? আমি চোখ খুলে আছি। এভাবে কিন্তু তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। আমি ছাড়া অন্য কারো সামনে ভুলেও এভাবে যেও না।”
-“প্লিজ ছাড়ো বলছি।”
-“এতো বেশি বকবক করো কেন? চুপচাপ থাকতে পারো না?”
বর্ণালী ভয় পেয়ে চুপ মেরে যায়। ইভানের কাধ খামছে ধরে আছে। কাঁধ খুব জ্বালা করছে কিন্তু এতো বড় সুখের কাছে এই জ্বালা তেমন কিছুই না।
-“যাবে বর্ণালী।”
-“হু”
-“একবার বলবে ভালোবাসি?”
-“আমি তোমাকে ভালোবাসি না।”
-“ভালো তো তোমাকে বাসতেই হবে বাসন্তী। সেটা হোক আজ বা কাল।”
কথাটা বলেই ইভান বর্ণালীকে ছেড়ে দেয়। এবার একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিলো বেচারি। জুতো পড়ে প্যাকেটটা হাতে নিয়েই রুমের দিকে দৌড় দিচ্ছিলো তখনি ইভান বলে,
-“এই শুন?”
বর্ণালী পিছন না ফিরেই দাঁড়িয়ে যায়।
-“ভালোবাসি তোমায়।”
বলেই রেলিং টপকে বাইরে এসে হেসে দিলো। বর্ণালী তো ওর কথা শুনে রীতিমতো কাঁপছে। রাগ করতে চাইছে কিন্তু পারছে না। ওর মাঝে যে রাগ জিনিসটা নেই। আর কখনো ছিলোও না। আর না দাঁড়িয়ে ভেতরে গিয়েই দরজা লক করে দেয়। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। এতো সময় যা হয়ে গেলো আসলেই হয়েছে নাকি স্বপ্ন ছিলো? নিজেকে একটা চিমটি কেটে দিলো। ধ্যাৎ সব সত্যিই হয়েছে। চুল ও ড্রেস প্রায় অর্ধেকটা ভিজে গেছে বৃষ্টিতে। এই তো ইভানের দেয়া প্যাকেট। কি আছে এইটাতে? যাই আগে ড্রেস চেঞ্জ করে নেই নাহলে আবার ঠান্ডা লেগে যাবে।
`
ইভান বাসায় ঢুকেই চকলেটের বক্স আর আইসক্রিমের বক্সটা ঈষার হাতে ধরিয়ে দেয়।
-“কি কি হলো ভাই?”
কথাটা শুনেই ইভান যেনো আকাশ থেকে পড়লো। ওকে এসব কথা জিজ্ঞেস করায় লজ্জায় পরে গেছে? যদিও ছোটবেলা থেকে সবকিছু ওর সাথে শেয়ার করেছে তবুও কেমন যেনো লজ্জা লাগছে কিভাবে বলবে এসব? পুরোটা রাস্তা বেচারা লজ্জায় হাসতে হাসতে এসেছে। এখনো সেই লজ্জামাখা হাসিটা ওর ঠোঁটের কোণে ঝুলে আছে। কি জবাব দিবে ভেবেই পাচ্ছেনা। কিন্তু যা যা হয়েছে তা স্বপ্নের চেয়েও বেশি ছিলো আজ ওর কাছে। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাওয়ার মতো বিষয়টা। যাবার আগে সে ভাবতেও পারেনি এমন কিছু পাবে। এতোটা কাছে থেকে আজ তার বাসন্তীকে অনুভব করলো।
-“কিরে বল না? নাকি এখনি সিক্রেট রাখতে শিখে গেলি?”
-“আরে না বুমনি সব বলবো তোকে। তোকে না বললে কাকে বলবো? আমার যে বেস্ট বোন বেস্ট ফ্রেন্ড একমাত্র তুই।”
-“আচ্ছা যা আগে চেঞ্জ করে নে। নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে। ডিনারের পর কফি খেতে খেতে সব শুনবো।”
-“ওকে বুমনি। লাভ ইউ।”
বলেই ইভান ঈশার মাথার চুলের উপর একটা চুমু একে চলে যায়। ঈশা বসে বসে ভাইয়ের কান্ডে হাসছে। যদিও ভাইয়ের জন্য আজ ওর মনটা অনেক ভালো।
`
চেঞ্জ করে এসে বর্ণালী বারবার প্যাকেটটা নেড়েচেড়ে দেখছে। খুলবে কি খুলবে না ভাবছে। ভাবতে ভাবতেই খুলে নিলো। খুব করে হাত কাঁপছে ওর। বুক ধুকধুক করতে লেগেছে। প্যাকেট খুলে দেখে একটা চকলেট বক্স। একটা আইসক্রিমের বক্স। আরেকটা প্যাকেটে একটা নথ দেখে চমকে যায়। নথটা খুব বেশি বড় না আবার খুব বেশি ছোট না। রাউন্ড করা নথের চারপাশে অনেকটা ডায়মন্ড বসানো। চেইনের মাঝে ছোট ছোট আরো কিছু ডায়মন্ড বসানো রয়েছে। সাথে একটা চিরকুট। একবার চোখ বন্ধ করে খুলে নথটা বিছানার উপর রেখে কাঁপা কাঁপা হাতে চিরকুটটা খুলে পড়তে লাগলো। ওটাতে কিছুটা এমন লেখা,
-“””প্রথম যেদিন তোমায় দেখে প্রেমে পড়ি সেদিন অনেকটা তোমার সৌন্দর্য দেখেই প্রেমে পড়েছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি আমার ভালোলাগা হয়তো প্রথম তোমার সৌন্দর্য ছিলো কিন্তু এখন এমন না৷ এখন তোমার সৌন্দর্যের চেয়ে তোমার মনকে অনেকবেশি ভালোবেসে ফেলেছি। জানো সেদিন তুমি সব দিকেই সম্পূর্ণা ছিলে কিন্তু তোমার মাঝে সবকিছু থেকেও কিছু একটার কমতি ছিলো৷ আর এই নথটাই সেই কমতি জিনিস৷ পরেরবার যখন শাড়ি পড়বে প্লিজ নাকের মাঝে এই নথটা পড়ে নিও। তোমাকে অনেক মানাবে। জানিনা কিভাবে নিচ্ছো আমার এমন কাজ কিন্তু সত্যি বলছি প্লিজ আমার ভালোবাসার দেয়া প্রথম উপহারটা গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করো।”
এসব পড়তেই ওর বুক আবারো ধুকপুক করছে। এই হার্টবিট তার একদম ভালো লাগেনা। নিজের কন্ট্রোলএ থাকেনা। ইচ্ছেমতো বিট করেই যায় যখন তখন।
কিন্তু এসব কি করেছে এই ছেলে?
এতো এক্সপেন্সিভ গিফট কিভাবে আমাকে দিতে গেলো?
কিভাবেই ভাবলো আমি ওর এই গিফট নেবো? কালকেই ওকে ওর গিফট ফেরত দিতে হবে। এটা আমি কখনোই রাখতে পারবো না।
`
ইভান ঈশার কোলে একটা কুশন রেখে তারউপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর ঈশা পরম আদরে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। ইভান প্রায়ই এমন বাচ্চামো করে। হুটহাট এসেই তেল নিয়ে ঈশার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়বে। মাথায় তেল লাগিয়ে মালিশ করে দেয়ার জন্য। আবার ঝগড়া লাগতেও ওর সময় লাগেনা। টম এন্ড জেরি টাইপের। কিন্তু ঝগড়াটা খুব কম হয় বন্ধুত্তটা বেশি। কিছু কিছু জিনিস ছাড়া বাকি সবকিছু খোলে বলে দিয়েছে বোনকে। ঈশা তো সব শুনে অবাক।
ওর ভাই এতো রোমান্টিক? কিভাবে?
এতো সুন্দর গিফট দিলো?
ভাবতেও পারেনি এমন কিছু গিফট করতে পারে এই পিচ্চি ভাইটা।
-“কিরে আমাকে তো কখনো একটা চুড়িও গিফট করিস নি আর না হওয়া বউয়ের জন্য এখনি ডায়মন্ডের নথ গিফট করে আসলি?”
-“তুই কি এখনি স্টার জলসার ননদের পার্ট নিতে লেগে গেলি?”
ভাই-বোন দুজনেই হোহোহোহো করে হেসে দিলো।
-“যাও রোমিও সাহেব এখন গিয়ে ঘুমাও। কাল আবার না হওয়া বউয়ের ডিউটি করতে হবে।”
-“বুমনি তুইও না।”
-“সত্যিই তো বললাম।”
-“হুম কিছুটা ঠিকই বলেছিস। কিন্তু জানিস বুমনি ও সবার চাইতে অন্যরকম। জানিনা কবে আর কিভাবে ওকে রাজি করাতে পারবো।”
-“আরে ডোন্ট ওরি। দেখিস খুব শিঘ্রীই ও রাজি হয়ে যাবে। তোর ফাগুন প্রেমে ওকে সাড়া দিতেই হবে।”
-“হবে তো এমন বুমনি?”
-“আলবাত হবে। যা তো এখন আর আমাকে জ্বালাস নে।”
-“হুহ যা তোকে কে জ্বালাচ্ছে? সর আমাকে উঠতে দে।”
-“এক চাপড়ে সবকটি দাঁত ফেলে দিবো।”
-“ইইইইইইই নে নে ফেলে দেখা।”
সবকটি দাঁত বের করে ঈশার মাথায় একটা চাপড় মেরে দৌড় দেয়। ঈশা ওখানেই বেকুব হয়ে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর একা একাই হেসে বলে,
-” পাগল একটা।”
কিন্তু ওর মাথায় অন্য ভাবনা।
আচ্ছা এখন সজিব কি করছে?
কি জানি খুব ইচ্ছে করছে ওকে দেখতে।
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে?
আমি ওর প্রেমে পড়ে গেলাম নাতো?
প্রেমে পড়েছি কিনা জানিনা কিন্তু ওকে আমার ভালো লাগতে শুরু করেছে। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে সাথে চারজন মানুষের মনের মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু সবার বৃষ্টির ধরন আলাদা।
ইভানের মনে চলছে তার বাসন্তী কি তাকে আপন করে নেবে? কবে আসবে সেদিন?
আর বর্ণালীর মনে ইভানকে নিয়ে নানারকম দ্বিধা কাজ করে যাচ্ছে। কেন করছে এই ছেলে এমন?
আমি তো কখনোই ওকে ভালোবাসতে পারবোনা।
কেন এভাবে আমার পিছু পরে আছে?
অন্যদিকে ঈশার মনে যা হচ্ছে ভালোবাসা নাকি শুধুই ভালোলাগা তা বুঝতে পারছেনা।
আর সজিব সেতো ভেবেই মরে যাচ্ছে আজকে কেন মেয়েটা এমন করলো? ও তো মেয়েটাকে মন থেকে সরিয়েই ফেলেছিলো তাহলে কেন আবার ওর সামনে এলো?
#______চলবে………..
💛