প্রেমহিল্লোল||১১|| #তাসনীম_তামান্না

0
16

#প্রেমহিল্লোল||১১||
#তাসনীম_তামান্না

নীল আকাশে শুভ্র নির্মল রঙের খণ্ড খণ্ড মেঘের মেলা। বিকালে নিরমল শীতল বাতাস বইছে। কুয়াশা ও প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে নীল সাদা রংয়ের সালোয়ার কামিজে নিজেকে স্নিগ্ধ সুষমায় রূপে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। এতো সুন্দর প্রকৃতিকে রেস্টুরেন্টে গ্লাস দিয়ে দেখতে হচ্ছে। আশেপাশে প্রেমিক-প্রেমিকা, কপোত-কপোতিরা আছে। এর মধ্যে কুয়াশা বুঝতে পারলো সামনে বসে থাকা হবু বর নামক পুরুষে দৃষ্টি বিচরণ করছে তার সারা অঙ্গ জুড়ে। অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে হাঁসফাঁস লাগছে। গা শরীর ঘিনঘিন করে উঠলো। ওড়না টেনে নিজেকে যথাসম্ভব আবৃত করে নিলো।

রাজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি না সরিয়ে বলল “নাইস! তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। বাই দ্যা ওয়ে এমন ক্ষ্যাতের মতো বিহেভিয়ার করছ কেনো? হবু বউ দেখতে এসেছি দেখবো না? এতো ঢাকাঢাকি করার কী আছে? বিয়ের পর তো এমনিতেই সব দেখতে পারবো। তুমি চাইলে আগেও দেখতে পারি।”

কুয়াশা রাজের এমন ব্যবহারে অবাক না হয়ে পারছে না লোকটা কী তার সাথে মজা করছে? বাবা, ভাই কী এই লোকটার এমন ব্যবহারের কথা জানে? ওকে চুপ করে থাকতে দেখে রাজ বলল “দেখো আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি। তাই বিয়ের আগে আমার একটা সাবজেক্ট ক্লিয়ার হওয়া দরকার। আমি ক্লিয়ারলি জানতে চাইবো আর তুমিও ক্লিয়ারলি এন্সার করবা।”

কুয়াশা বুঝতে পারলো না রাজ কি বিষয়ে কথা বলতে চাইছে তাই সে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। রাজ কফির মগটা টেবিলের ওপর থেকে নিয়ে একসিপ নিয়ে বলল “আর ইউ ফুলফিল ভার্জিন?”

রাজের কথায় ওর কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। কুয়াশার অপমানে, লজ্জায় আঁখি জোড়া ছলছল করে উঠলো। অরেঞ্জ ম্যারেজে কী এসব জিজ্ঞেসা করে এটা কী নিয়ম? চোখ নামিয়ে নিলো। রাজ কৌতূহলি হয়ে তাকিয়ে আছে। ওকে চুপ থাকতে দেখে বলল “ছেলেরা যেমন তেমন ওটা ম্যাটার করে না। তবে মেয়েদের ব্যাপারটা আলাদা।”

কুয়াশা এবার আর চুপ থাকতে পারলো না। শান্ত কণ্ঠে রাগ ঢেলে বলল “ছেলেমেয়ে উভয়কেই চরিত্রবান হওয়াটা জরুরি। তাদের মধ্যে একজনের কেউ চরিত্রহীন একজন চরিত্রবান হলে কে সে চরিত্রহীনকে মেনে নিবে? তার জন্য ভালো কিছু ডিজার্ভ। আপনার আমার ওপরে বিয়ের আগে থেকেই এমন মনোভাব বিয়ের পর না জানি কী করবে। তাই বিয়ের ব্যাপারটায় আর না আগানোই ভালো। আপনি বাসায় গিয়ে বলে দিবেন আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না। নিজের পছন্দের নিজের কোয়ালিটির কোনো চরিত্রবান মেয়েকে বিয়ে করে নিবেন।”

রাজ হেসে বলল “এতোক্ষণ তো খুব ইনোসেন্ট ভোলাভালা সেজে ছিলে। যেই চরিত্র নিয়ে কথা উঠলো ওমনি চেতে উঠলে? কাহিনী কী? কয়েকজনের সাথে টাইম কাটিয়েছ?”

কুয়াশা রাগ ছিড়বির করে উঠলো। উঠে দাঁড়িয়ে বলল “আপনার সাথে এমন লেইম ম্যাটারে কথা বলতে ইচ্ছুক নই। আপনার কথায় বুঝতে পেরেছি আপনি কেমন! আপনার মাথায় ঘিলু থাকলে আপনিও আমার কথার মানে বুঝতে পারতেন। কিন্তু আপসোস আপনার সেটা নেই। আপনার ফিউচার ওয়াইফের জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি। আপনার মতো এমন একজনকে সে জীবন সঙ্গী হিসাবে পাবে।”

রাগে রাজের হাত মুঠো শক্ত হয়ে গেলো। তুষার বন্ধুদের সাথে এসেছিলো। কুয়াশাকে একটা ছেলের সাথে দেখে বুকটা ধুকপুক করে উঠলো। দূর থেকে ওদের পর্যাবেক্ষণ করছে কিছু শুনতে পারছে না তবে কুয়াশাকে দেখে মনে হচ্ছে রেগে গেছে। ও আর বসে থাকতে পারলো না। বন্ধুদের রেখে কুয়াশার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল “তুমি এখানে? এই লোকটাই বা কে?”

তুষারের আগমনে কুয়াশা চমকে গেলো। সে দিনের তুষারের নামে বাজে কথাটা বলেছিলো। তুষার সেটা আড়াল থেকে শুনেছিলো আজ ও একটা ছেলের কাছে এমন বাজে কথা শুনেছে। রাগ, কষ্ট মিশ্রিত অনুভূতি হচ্ছে তুষারেও এমনই হয়েছিল নিশ্চয়ই। হবেই হতো আজ যেমন তার হচ্ছে। কুয়াশার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল “আপনি এখানে?”

তুষার তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল “প্রশ্নটা আমি আগে করেছি।”

তুষারের বাচ্চামোতে কুয়াশার হাসি পেলেও সেটা চেপে রাজের দিকে তাকিয়ে বলল “আসছি। আপনি যদি কথাগুলো না বলতে পারেন তাহলে আমিই বলতে বাধ্য হবো। আপনি কী ফিরবেন? তাহলে যেতে যেতে কথা বলি।”

তুষার ভ্রু কুঁচকে কুয়াশাকে বোঝার চেষ্টা করছে এই ছেলেটাই বা কে? আবার ওর সাথে যেতে চাইছে। কারণ বুঝতে পারছে না। তুষার বলল “হুম, যাবো চলো।” যাবার আগে ছেলেটাকেও ভালো করে দেখে নিলো।

রাজ ওদের যাবার দিকে তাকিয়ে রেগে হিসহিসিয়ে নিজে নিজে বলল “আমাকে অপমান? এর শাস্তি তোমাকে পেতে হবে। বিয়েটাও আমাকেই করতে হবে। তারপর পদে পদে সারাজীবন জাহান্নাম দেখিয়ে ছাড়বো। তুমি জানো না কাকে অপমান করেছ মাশুল তো দিতেই হবে।”

তুষার কুয়াশা রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে হাঁটতে থাকলো। দুজনেই নিশ্চুপ কেউ কথা বলছে না নিরবে হেঁটে যাচ্ছে। গাড়িও নিচ্ছে না। শীতল বাতাসে হাঁটতে ভালো লাগছে হাতে হাত মিলিয়ে হাঁটলে আরো ভালো লাগতো কী? তুষারের এমন ভাবনায় কুয়াশার হাতের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার সাহস হলো না। ও একপ্রকার ধৈর্য্য হারা হয়ে বলল “ঐ ছেলেটা কে ছিলো? ওর সাথেই বা তুমি কী করছিলে? কোনো আত্মীয়? ভাই? বাসায় কী বলে দিতে বললে যেনো!”

কুয়াশা কোনো ভনিতা ছাড়া বলল “হবু বর ছিলো”

তুষারের চলন্ত পা থেমে গেলো। কুয়াশা ধীর পায়ে হাঁটতে লাগলো। ও ধাক্কাটা সামলিয়ে কুয়াশার সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল “মজা করছো? হবু বর হলে ওকে রেখে আমার সাথে আসলে কেনো? ওর সাথেই ফিরতে পারতে।”

–হবু বর ছিলো! এখন নেই।

–না থাকার কারণ?

–পছন্দ হয় নি।

–অপছন্দের কারণ?

–আপনাকে বলতে ইচ্ছে করছে না।

–তোমার কেমন ছেলে পছন্দ?

–আপনাকে কেনো বলবো?

–তোমার বিয়ের পাত্র খুঁজতে সাহায্য করতাম।

কুয়াশা ওর দিকে তাকিয়ে দেখলো তুষার মিটমিট করে হাসছে। ওর বুঝতে বাকি রইলো না লোকটা তার কথাই তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। ওর হলো বলল “আপনাকে আর কষ্ট করে আসতে হবে না। নিজের কাজে যান।”

–এতোদূর অব্ধি যখন এসেছি তখন শেষ অব্ধি যাবো।

তুষারের কথাটা ওর ভালো লাগলো। তাই চুপ করে থাকলো। তুষার বলল “এভাবে কতক্ষণ হাঁটবে? আমি তো আজ গাড়িও সাথে করে আনি নি। কিসে করে যাবে?”

–রিকশাতে।

–ওকে তুমি একটু দাড়াও আমি আসছি।

কুয়াশাকে দাঁড় করিয়ে। তুষার স্ন্যাক্সের দোকানে ডুকলো ফিরে এলো হাত ভর্তি জিনিস পত্র নিয়ে। রিকশা ডেকে সেগুলো কুয়াশার কাছে দিয়ে বলল “বাচ্চাদের দিও। নিজেও খেও। আমি আরেকটা রিকশা নিয়ে তোমার পিছনে আসছি।”

কুয়াশা শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। মানুষটা এতোটা দায়িত্ব কর্তব্য বিষয়ে সচেতন আগে তো দেখে নি নাকি দেখার চেষ্টা করে নি। তুষারকে বলতে পারলো না এ রিকশাতে উঠুন আমার অসুবিধা হবে না। কিন্তু বলতে পারলো না। গলা আঁটকে গেলো। তুষার ওর সাথে বাড়ি পর্যন্ত এলো কুয়াশা ওকে বাড়িতে যেতে জোড়াজুড়ি করলে ও কাজের বাহানায় চলে গেলো। তুষারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে বাসায় কী বলবে ছেলে পছন্দ হয় নি! রিজন কী জানতে চাইলে কী বলবে?

চলবে ইনশাআল্লাহ

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here