শুনলাম_বসন্ত_নাকি_আবার_এসেছে #লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান #পর্বঃ১৭

0
1

#শুনলাম_বসন্ত_নাকি_আবার_এসেছে
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ১৭

পাক্কা পাঁচ মিনিট বেআক্কল হয়ে বীর টেবিলে বসে থাকল ৷ নিজের দশ বছরের জীবনে এতোটা অবাক ও হয়েছে বলে মনে পড়ছে না ৷ সবচেয়ে বড় কথা ওর মামুর মতো ছেলে এভাবে দৌঁড়াতে পারে সেটা ওর জানা ছিল না আর না জানত হাসার জন্যে কেউ বাথরুমেও যেতে পারে!

সত্যি সত্যি আয়েশা পাঁচ মিনিট পরই চলে এসেছে ৷ ওর মুখটা অত্যধিক লাল হয়ে আছে হয়তো হাসি আটকানোর চেষ্টা করার কারনে ৷ আয়েশা গলা খাকারি দিয়ে নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে বীরকে বলল,,,

বাছা তাহলে পড়া শুরু করা যাক?

বীর কিছু বলার আগেই বর্ষা ভ্রু কুঁচকে ওদের দিকে আসতে আসতে বলল,,, বারিশ ওভাবে ছুটে পালিয়ে গেল কেন?

বীর বলে উঠল,,, মাম্মা সেটা তো আমার মস্তিষ্কেও ঢুকছে না ৷

আয়েশার আবারও দম ফাটিয়ে হাসি আসতে চাইলো কিন্তু পারদর্শীতার সাথে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,,, আসলে আপু হয়েছে কি উনি ভার্সিটিতে যতটা মুড নিয়ে থাকেন , বাসায় তার এক ছটাকও দর্শন মিলল না ৷ তাই হয়তো লজ্জা পেয়েছে ৷

বর্ষা অবাক হয়ে বলল,,, তুমি বারিশের স্টুডেন্ট?

জ্বি আপু ৷

বীর চোখ বড় বড় করে বলল,,, কি সাং*ঘাতিক! মামু তোমার স্যার? মামু কি তোমাদের উল্টো লটকিয়ে বাড়ি মা*রে? নাকি আ*ছাড় মা*রে?

আয়েশা হেসে উঠে বলল,,, না ৷ তবে পড়ায় না পারলে ক্লাসের সবার সামনে বি*ষে ভরা বাণ ছুঁ*ড়ে দেয় যা শারীরিক আ*ঘাতের চেয়েও মা*রাত্মক ৷

ছোট মানুষ বুঝতে না পেরে বলল,,, বি*ষে ভরা বাণ?

কটু কথা, অপমান বাছা ৷ সেসব বাদ তুমি পড়ায় মনোযোগ না দিলে কিন্তু তোমাকে সপাত সপাত করে মা*রব ওকে? কোনো ছাড় নেই ৷

এই যাহ আমি তো মনে মনে খুশি হয়েছিলাম এটা ভেবে যে তুমিও আমাকে বি*ষে ভরা বাণ ছুঁ*ড়বে!

আয়েশা ভ্রু কুঁচকে বলল,,, খুশি হয়েছিলে কেন?

কারন অপমান আমার গায়ে লাগে না ৷ বরং অপমান শুনতে মজাই লাগে ৷

ওরে দু*ষ্টু! অনেক হয়েছে এবার পড়ায় মনোযোগ দাও দেখি বাছা ৷

বর্ষা সামান্য হেসে বলল,,, ওর প্রতি একটুও দয়া দেখাবে না আয়েশা , ঠিক আছে?

আয়েশা মাথা কাত করে হ্যাঁ বলল ৷ বর্ষা চলে গেল নিজের সংসার সামলাতে ৷ জাস্ট এক মিনিট হয়তো বীর পড়ায় মনোযোগ দিয়েছিল তারপর আবারও দু*ষ্টুমি শুরু ৷ আয়েশা বুঝে গেল একে এভাবে বাগে আনা সম্ভব না , অন্য কোনো পথ অবলম্বন করতে হবে ৷ একটা পথ অবশ্য ছিল কিন্তু সেটার কথা ভাবলে চলবে না ৷ বারিশ স্যারের প্রসঙ্গ তোলাই যাবে না ৷

এই এক ঘন্টায় বীরের জ্বা*লাতনে আয়েশার শরীর মন বি*ধ্বস্ত হয়ে গেল ৷ ক্লান্ত পায়ে হেঁটে কাধে ভার্সিটির ব্যাকপ্যাক টা তুলে ও বর্ষার থেকে বিদায় নিয়ে ফ্লাট থেকে বেরোলো ৷ এই এতো সময়ে বারিশ একবারের জন্যেও ওর সম্মুখে আসেনি ৷ লিফটে প্রবেশ করতে যাবে এমন সময় আয়েশার মনে হলো কেউ যেন ওকে দেখছে ৷ চকিতে পিছু ঘুরতেই দেখল বীরদের পাশের ফ্লাট ৩২৬ নম্বর ফ্লাটের দরজাটা কেউ স্বশব্দে লাগিয়ে দিল ৷ আয়েশা ভ্রু কুঁচকে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লিফটে প্রবেশ করল ৷

লিফটের দরজা বন্ধ হতেই ৩২৬ নম্বর ফ্লাটের দরজা খুলে গেল ৷ বারিশ অপরিবর্তিত পোশাকে দরজায় হেলান দিয়ে বলল,,,

এই মাথামোটা মেয়ে আমার ভাগিনার কাছে শ্রেষ্ঠ টিচার! এটা শোনা আর দেখার আগে ছাদ থেকে ঝাপ দিলাম না কেন? বড্ড আফসোস হচ্ছে!

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

আজকেও তুবার এপয়েনমেন্ট ছিল স্বাধীনের চেম্বারে ৷ আসার পর থেকেই তুবা খেয়াল করছে স্বাধীন বারবার মুখ লুকিয়ে হাসছে ৷ এতে করে তুবার ভ্রু কুঁচকে গেল ৷ আবারও স্বাধীনকে হাসতে দেখে তুবা কাটকাট গলায় বলল,,,

এই যে মুচুর মুচুর করে হাসছেন কেন? আমাকে কি আপনার অতি আপনজন বলে মনে হচ্ছে? তাহলে বলে রাখছি আমি কিন্তু জন্মের পর থেকে একবারও চশমা পড়িনি ৷

স্বাধীন মুখভঙ্গি অত্যন্ত স্বাভাবিক করে বলল,,,, আপনাকে আমার আপনজন হতে হলে চশমা পড়তে হবে না ৷ এমনিতে হতে…..

নিজের কথার মানে বুঝতে পারতেই স্বাধীন থতমত খেয়ে চুপ হয়ে গেল ৷ তুবাকেও অস্বস্থি ঘিরে ফেলল ৷ রুমের মধ্যে পিনপতন নিরবতা ছেঁয়ে গেল ৷ কয়েক মুহূর্ত পর স্বাধীন গলা খাকারি দিয়ে বলল,,,

ভুলভাল ভাববেন না খবরদার ৷ সাইক্রিয়াটিস্ট আর তার পেসেন্টের মধ্যে আপনাআপনি একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে ৷ আমি সেটার কথাই বলেছি ৷ আপনারা মেয়েরা শুধু শুধু বে লাইনে চলে যান ছ্যাহ!

তুবা লজ্জা কাটিয়ে উঠল , মনের মধ্যে হঠাৎ একটা সুক্ষ্ম ব্যা*থা অনুভূত হলো ৷ তবুও নিজের ফর্মে ফিরে এসে বলল,,,

তাহলে শুরুতেই বলে দিতে পারতেন ৷ কয়েক মিনিট নিরবতা পালন করার কি দরকার ছিল?

স্বাধীন তৎক্ষণাৎ উত্তর দিতে পারল না তবে পর মুহূর্তে বলে উঠল,,, আসলে আপনার মতো ঝ*গড়ুটে মেয়েকে অবাক হলে কিংবা লজ্জা পেলে কিংবা চুপচাপ থাকলে কেমন লাগে সেটাই পরখ করছিলাম ৷

তুবা ঠোঁটের কাছে কিছু কথার বুলি নিয়ে আসার আগেই স্বাধীন ব্যস্ত হয়ে বলল,,, আমি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকি এটা যেন ভাববেন না ঠিক আছে? এটাও আমার কাজের মধ্যেই পড়ে ৷

তুবা কিছু বলল না , আবারও কোথাও জানি একটু খারাপ লাগা কাজ করল ৷ এরপর কয়েক মিনিট শুধু প্রফেশনাল কথাবার্তা চলল ওদের মাঝে ৷ তুবা যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই স্বাধীন বলে উঠল,,,

ওহ হ্যাঁ নিজের রুপের আগুনের তাপ একটু সহনশীল পর্যায়ে রাখবেন ৷ আমি বারবার কাচের ডোর পরিবর্তন করতে পারব না ৷ আমার ওতো বেশি পয়সা নেই ৷ বউ বাচ্চা হওয়ার আগেই ফতুর হয়ে যেতে চাই না ৷

শেষের কথাটা শুনে তুবার কেন জানি লজ্জা লাগল ৷ স্বাধীনের বউয়ের স্থলে হয়তো আনমনেই নিজেকে বসিয়ে ফেলেছে ও ৷ ক্ষণকাল বাদে নিজের লজ্জা কাটিয়ে তুবা বলে উঠল,,,

বাবা কি বলেনি এই টপিক আমার সামনে তুললে আমি পরকালে গিয়ে হিসাব নিব?

স্বাধীন হেসে উঠে বলল,,, উপসসস ভুলে গেছি ৷ দোহাই লাগে হিসাব চাবেন না ৷ আমার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আমি ৷

তুবা কিছু না বলে দ্রুত ওখান থেকে চলে এলো ৷ ওর আজ হঠাৎ এতো লজ্জা লাগছে কেন? মুখে মুচকি হাসি ছড়িয়ে রেখে ও রিসেপশনে এসে গেল ৷ হঠাৎ সামনে কিছু দেখতেই ওর ভ্রু কুঁচকে গেল ৷ একটা সুন্দরী চশমা পড়া মেয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে ৷ তুবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ৷

লম্বা লম্বা পা ফেলে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,, এই মেয়ে চশমা পড়েছেন কেন?

মেয়েটা হঠাৎ এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল কিন্তু তুবার গম্ভীর মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করল ৷ নিজেও সমান ঠাট বজায় রেখে বলল,,,

কানে শুনি না তো তাই চশমা পড়েছি ৷

তুবা মেয়েটার জবাবে থতমত খেয়ে গেল কিন্তু দমে গেল না ৷ কন্ঠে তেজ রেখে বলল,,,

কমেডি? ঠিক আছে ডোন্ট কেয়ার ৷ তা আপনার কোনো বাচ্চা কাচ্চা আছে?

বিয়ে না করলে বাচ্চা কাচ্চা কি বাজার থেকে কিনে আনব?

তুবা মনে মনে বলে উঠল,,, এ তো সাং*ঘাতিক চালু মেয়ে ৷ না না পরকালে গিয়ে এর থেকে হিসাব নিতেই হবে ৷ তার আগে দুনিয়ায় একটু সামলাই ৷

তুুবা গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠল,,, কোনো সেটিং ফেটিং আছে?

মেয়েটা বুকে দু হাত গুজে বলল,,,সে তো আছেই ৷ পরের মাসেই বিয়ে ৷ তবে একটা কথা না বলে পারছি না ৷ আমার হবু স্বামী বডিবিল্ডার বুঝলেন? ভাবছি আপনার কথা তাকে বলব যেন দ্বিতীয়বার কাউকে এভাবে ইনভেস্টিগেট করার সাহস না দেখান!

তুবা ভয়ে ঢোক গিলল ৷ হঠাৎ নিজের কঠিন করে রাখা মুখটা হাসিহাসি করে জোরে জোরে হাসতে হাসতে বলল,,, আরে আরে আপনি জিতে গেছেন ৷

মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে বলল,,, মানে?

আমি একটা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছি ৷ আমার কাজ ছিল রেন্ডম কোনো মেয়ের সাথে ক*র্কশ গলায় কিছু বেহুদা প্রশ্ন করা ৷ সেই মেয়ে যদি আত্মবিশ্বাসের সাথে উত্তর দিতে পারে তাহলে সেই হবে বিজয়ী ৷ আপনিই সেটা জিতে গেছেন ৷

মেয়েটার মুখের রা*গ মিলিয়ে গেল, খুশিতে আটখানা হয়ে উঠল ৷ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলতে লাগল,,,

সত্যি! উপসস আমি জিতে গেছি ইয়াহু ৷ বাই দা ওয়ে আমার প্রাইজ কোথায়?

তুবা এবার ফ্যাসাদে পড়ে গেল ৷ জোরপূর্বক হাসতে হাসতে বলল,,, গিফট! ওহ হ্যাঁ গিফট , আছে তো ৷

তুবা মুখ ফিরিয়ে বিরবির করে বলতে লাগল,,, কি মুসিবত! গিফট কোথায় পাই? গিফট না দিলেও তো আমার রক্ষে থাকবে না!

হঠাৎ নিজের ব্যাকপ্যাকে একটা চকলেটের প্যাকেট পেতেই তুবার মুখে খানিকটা হাসি ফুটল ৷ আবার খারাপও লাগল ৷ এটা নতুন পোডাক্ট এসেছে ৷ আয়েশার সাথে খাবে বলে কিনেছিল ৷ কিন্তু কি আর করার ৷ বুকে পাথর চেপে রেখে দিয়ে দিল ওই চশমাওয়ালী ভয়কনর মহিলাকে ৷

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

আয়েশা ক্লান্ত শরীরে ড্রয়িংরুমে বসে আছে ৷ কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছে ও ৷ সাভাশ বাদাম খেতে খেতে ওর পাশে এসে বলল,,,

বাচ্চাটার অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সূচনা তাহলে করেই আসলি?

আয়েশা কটমট দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকাল কিন্তু কিছু বলল না ক্লান্তির কারনে ৷ কিন্তু সাভাশ থামল না , পুনরায় বলতে লাগল,,,,

আমি জাস্ট অবাক হয়ে যাচ্ছি ৷ তোর মতো অ*পদার্থ কে কেউ কিভাবে পড়ানোর জন্য বলতে পারে? দেশটা আর দেশ নেই রে বিদেশ হয়ে গেছে ৷

কেন তোর হিং*সা হচ্ছে?

সাভাশ মনে হচ্ছে কোনো জোকস শুনল এমন একটা ভাব করে বলল,,, হিং*সা আর তোকে? আমার এতোটাও অধপ*তন হয়নি রে বা*ল ৷

আয়েশা রে*গে গিয়ে সাভাশকে মা*রতে ধরলে সাভাশ বসা থেকে উঠে পড়ল ৷ এমন সময় শেহনাজ চিপস খেতে খেতে ওদের দিকে আসতে আসতে বলল,,,

আসার সাথেই শুরু হয়ে গেল?

দু ভাই-বোনের কাছাকাছি যেতেই আচমকা শেহনাজ স্লিপ কেটে চিৎপটাং হয়ে পড়ে গেল ৷ তবে এবারে কিছুটা ভিন্নতা এসেছে ৷ পড়ার সময় শেহনাজ দু হাত দিয়ে নিজের দুই ভাইবোনকেও নিজের সাথে পড়তে বাধ্য করেছে ৷ তিনজনই মেঝেতে ধ*ড়াম করে পড়ে ব্যা’থায় আ*র্তনাদ করতেছে ৷ তুষার সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলল,,,

কি সুন্দর দৃশ্য! সত্যিই তো একা কেন পড়তে যাবে? সবাইকে নিয়েই পড়া উচিত ৷

সাভাশ এক হাত দিয়ে তুষারকে টেনে নিয়ে বলল,,, তাহলে তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? নে তুইও আমাদের সাথে গড়াগড়ি খা বা*ল!

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here