#ফাগুন_প্রেম_পর্বঃ ৪১+৪২

0
347

#ফাগুন_প্রেম_পর্বঃ ৪১+৪২
#_লিখাঃ Bornali Suhana

💛
মেয়ের এই অবস্থা দেখে তার মাথাটা ঘুরে আসে। অল্পের জন্য পড়েই যাচ্ছিলেন কিন্তু রুমু পেছন থেকে এসে ধরে ফেলে। রুমুকে ছাড়িয়ে বিছানার উপর বসেই মেয়ের মাথা কোলে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন। ভেতর ফেটে যেনো কান্না আসছে। তার কান্না দেখে সজিব ও রুমুর কান্নার বেগটাও বেড়ে গেলো। বর্ণালীর আর কোন সাড়াশব্দ আর পাওয়া যায় না। ডাক্তারকে রুমু আগেই সব বলে দেয়ায় ডাক্তার তার সাথে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসেন। ইঞ্জেকশনটা ওর হাতে দেয়ার সময় সবাই চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলো। যেনো তারাই কষ্ট পাচ্ছে। বর্ণালীর এই অবস্থা দেখে ডাক্তার জিজ্ঞে করেন,
-“এসব কিভাবে হলো?”
-“আসলে ওয়াশরুমে পড়ে গিয়েছিলো।”
রুমু কথাটা অন্যভাবে ঢেকে দেয়। শারমিন বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেন,
-“আমার মেয়ের কিছু হবে না তো ডাক্তার সাহেব? ও ঠিক হয়ে যাবে তো?”
-“কিছুটা রক্ত ঝরে গেছে। তবে ভয় নেই। স্যালাইন দিয়ে যাচ্ছি আর স্যালাইন শেষ হলে খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করাবেন। টেনশনের কিছু নেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”
-“জ্বি আংকেল। আর কোন মেডিসিন?”
-“হ্যাঁ লিখে দিচ্ছি ওইগুলো আনিয়ে নিবে।”
ডাক্তারকে রুমু বিদায় দিয়ে এসে ওর পায়ের কাছে বসে। সবাই বর্ণালীকে ঘিরে বসে আছে। অনেক শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। চোখের নীচটা গর্তের মতো হয়ে কালো হয়ে আছে।
👇
ইভান বর্ণালীর বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। বর্ণালীর ফোনে মনে হয় ১০০টা কল দিয়েছে কোন রেসপন্স পায় নি। রুমুর ফোনেও বারবার কল করছে রুমু এতোক্ষণ খেয়ালই করেনি। ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো। হঠাৎ খেয়াল করতেই ফোন হাতে নিয়ে বেলকনিতে যায়।
-“হ্যাঁ ইভু বলো।”
-“বর্ণালী কোথায়? ঠিক আছে ও? ডাক্তার কেন এসেছিলো?”
-“আসলে বর্ণের মাথা ফেটে গেছে। তাই….”
-“কিহ!!!! ব…….বর্ণালী ঠিক আছে তো? ওর বেশি কিছু হয়নি তো? তুমি আমাকে আগে কেন বলোনি? আমি এখনই আসছি।”
-“ইভু দাঁড়াও। তুমি এখন আসলে ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে যাবে। বর্ণ ঠিক আছে। এখন ঘুমাচ্ছে।”
-“আমি বর্ণালীকে একবার দেখতে চাই রুমু। আমার বাসন্তীকে না দেখলে আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো।”
-“তুমি কোথায়?”
-“আমি বাড়ির সামনে।”
-“ইভান প্লিজ এখন বাসায় যাও। পরে কোনরকম ব্যাবস্থা করে না হয় দেখতে আসবে।”
-“কিন্তু….”
-“একবার বুঝতে চেষ্টা করো ইভান তুমি আসলে বর্ণের সমস্যা হয়ে যাবে। আর তুমি তো তা চাও না। তাই না?”
-“হ্যাঁ কিন্তু আমার প্রাণ পাখিটা যে বর্ণালীর কাছে রুমু। আমি আমার পাখিটাকে না দেখলে শান্ত হতে পারবো না।”
-“এখন বাসায় যাও ইভান আমি পরে দেখছি কিভাবে কি করা যায়।”
-“রু….রুমু আমি পারবো না। আ….আমি এখানেই বসে থাকবো। আমার বাসন্তীকে না দেখে আমি যাবো না।”
ইভান কান্নায় কথা বলতে পারছে না। অন্যদিকে জেদ ধরে বসে আছে যাবেও না।
-“আচ্ছা তুমি আগে বাসায় যাও। ঈশাকে নিয়ে চলে এসো।”
-“হ্যাঁ আচ্ছা ঠিকাছে।”
ইভান দ্রুত গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যায়। কিন্তু ঈশা এখনো ভার্সিটি থেকে ফিরে নি। সাহারা ইসলাম জানান ওর নাকি এসাইনমেন্ট আছে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। ইভান রুমেই পায়চারি করছে আবার কখনো বিছানায় বসছে। অপেক্ষা করা ছাড়া ওর কিছুই করার নেই। কল দিলো অনেকবার ঈশাকে রিসিভ করলো না বরং কেটে দিলো। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে আবার সেই জল হাতের তালু দিয়ে বাচ্চাদের মতো মুছতেছে।
👇
ঈশা সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসায় আসে। ফ্রেশ হয়ে কিছু না খেয়েই সোজা ইভানের রুমে এসে তার এই অবস্থা দেখে চোখমুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতেই বললো,
-“কিরে তোর এই অবস্থা কেন? আর এতো কল দিলি? সব ঠিকাছে তো?”
-“বুমনি এসেছিস? বুমনি কিছুই ঠিক নেই রে কিছুই ঠিক নেই।”
ইভান বসা থেকে উঠে ঈশার হাত ধরে কথাটা বলে। ঈশা কিছুই বুঝতে পারছেনা।
-“বস তুই আগে শান্ত হো। এভাবে বাচ্চাদের মত কাঁদছিস কেন? সব খুলে বল আগে।”
ইভান সব খুলে বলে। ঈশা এসব শুনে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। এতো কিছু হয়ে গেছে। না জানি সজিবের অবস্থা কি!
-“আমি ওকে দেখতে যাবো বুমনি। প্লিজ আমায় নিয়ে চল।”
-“হ্যাঁ চল।”
ঈশা আর ইভান নীচে আসতেই সাহারা বেগম জিজ্ঞেস করেন,
-“তোদের কি হলো? এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মা বর্ণালীর অসুস্থ ওকে দেখতে যাবো।”
-“কি হয়েছে ওর?”
-“শুনেছি মাথা ফেটে গেছে। গেলেই বুঝতে পারবো মা।”
-“সে কি রে? কিভাবে?”
-“জানিনা মা।”
-“আচ্ছা তোরা গিয়ে আয়। তোর বাবা আসুক আমরা না হয় রাত্রে আবার যাবো।”
-“আচ্ছা মা।”
ইভান আর ঈশা আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বর্ণালীর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
👇
ইভান আর ঈশাকে দেখে শারমিন বেগম অনেকটা খুশি হোন। ইভানকে প্রথম দেখে চিনতে পারেন নি। পরে ঈশা আবার পরিচয় করায়। একবার দেখেছেন ওকে তাই চেহারা প্রায় ভুলেই গেছেন। ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু ইভানের পা যেনো আগাচ্ছে না৷ একটা ভয় কাজ করছে রুমে গিয়েই না এমন কিছু দেখতে হয় যাতে ওর নিজেকে কন্ট্রোল করা কষ্টকর হয়ে যায়। রুমে যেতেই প্রথম চোখ পরে বর্ণালীর উপর। মাথায় ব্যান্ডেজ দেখেই ইভানের চোখ জলে ভরে আসে। সজিব আর রুমু বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ইভান লুকিয়ে চোখ মুছে ঈশার পিছু পিছু রুমে ঢুকে। ঈশা আলতো করে বর্ণালীর পাশে বসে। ইভান রুমুর পাশে খানিকটা দূরত্ব রেখে দাঁড়ায়। আজকে ওর ভালোবাসা এতোটাই অসহায় মনে হচ্ছে যে ভালোবাসার মানুষকে এই অবস্থায় দেখে বুকে টেনে নিতে পারছেনা। দূরে দাঁড়িয়ে চেয়ে চেয়ে দেখতে হচ্ছে।
💛
#____চলবে………

#_ফাগুন_প্রেম
_পর্বঃ ৪২
#_Written_by_ Bornali Suhana
💛
ঈশা আলতো করে বর্ণালীর পাশে বসে। ইভান রুমুর পাশে খানিকটা দূরত্ব রেখে দাঁড়ায়। আজকে ওর ভালোবাসা এতোটাই অসহায় মনে হচ্ছে যে ভালোবাসার মানুষকে এই অবস্থায় দেখে বুকে টেনে নিতে পারছেনা। দূরে দাঁড়িয়ে চেয়ে চেয়ে দেখতে হচ্ছে। পুরোটা শরীর শিউরে ওঠে। এভাবে তাকিয়ে দেখতে পারছেনা। বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে ওর। সজীব ঈশাকে দেখে চোখ দিয়ে ইশারা করে বর্ণালীকে দেখায়। চোখে চোখেই যেনো অনেক না বলা কথা হয়ে গেলো। সে যেনো চোখের ভাষাতেই বলে দিলো, -“দেখো না আমার লক্ষী বোনটার কি অবস্থা। আমি যে পারছি না আর ওকে এভাবে দেখতে।”
ঈশার চোখেও জল। সে কখনোই বর্ণালীকে এমন অবস্থায় দেখে নি। এমনিতেই মেয়েটা কত শান্ত আজ যেনো আরো বেশি শান্ত হয়ে গেছে। সজীব রুম থেকে বের হয়ে যায়। সে পারছেনা আর তার কান্না আটকাতে। ঈশার সামনে সে কাঁদতেও চায় না। রুমু বর্ণালীর কাছে গিয়ে বসে ঈশাকে বলে,
-“ও ঘুমাচ্ছে তুমি যাও সজীবকে দেখো। ও ভেতর থেকে অনেক ভেঙে গেছে। এখন তার খুব করে তোমাকে প্রয়োজন।”
-“হ্যাঁ যাচ্ছি। ইভান তুই বস আমি আসছি।”
ইভান যেনো এই জিনিসটার অপেক্ষায় ছিলো। ঈশা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই ইভান দৌড়ে এসে বর্ণালীর মুখের সম্মুখে বসে। ওর একটা হাত ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়।
-“আই এম সরি বাসন্তী। আমি কখনোই তোমাকে কষ্ট দেয়ার কথা কল্পনাও করিনা। অথচ আজ আমার কারণেই তোমার এই অবস্থা। প্লিজ একটা বার চোখ খুলো বাসন্তী। দেখো তোমার বসন্ত পথিক এসেছে। তোমার যা শাস্তি দেয়ার আমাকে দিতে।
কেন নিজের সাথে এমন করতে গেলে? কেন? কেন? কেন?”
রুমু ইভানের এমন কান্না সহ্য করতে পারছেনা। এভাবে কোন ছেলে কাঁদতে পারে কখনোই ভাবতে পারেনি ও। ঠোঁট ভেঙে কান্না করছে। ওর কান্না দেখে রুমুর কান্নার পরিমাণটাও বেড়ে গেলো। ইভান বর্ণালীর মাথার ব্যান্ডেজের উপর আলতো করে চুমু খায়। চুমু খাওয়ার সময় ওর চোখের জল টপ করে বর্ণালীর চোখের উপর পরে। বর্ণালীর মুখ থেকে -“উহ” শব্দ বের হয়ে আসে। কারো উষ্ণ নিশ্বাস নিজের মুখের উপর অনুভব করতে পারছে। কারো দ্রুত হয়ে যাওয়া হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে। ইভান তরিগড়ি করে উঠে বসে। খানিকটা নড়ে পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় বর্ণালী। চোখ ফুলে গেছে। তাকাচ্ছে যে বুঝাই যাচ্ছেনা। চোখ খুলে সামনে যা দেখছে তা সে বিশ্বাসই করতে পারছেনা। মনে হচ্ছে ভুল কিছু দেখছে। ঘুমের ইঞ্জেকশনের রেষ এখনো কাটেনি ওর। তাই আবারো চোখ বন্ধ করে নেয়।
-“বর্ণালী চোখ খুলো বর্ণালী। একবার দেখো আমায়।”
কথাগুলো শুনতে পারছে ঠিকই কিন্তু মনে হচ্ছে ওর কান বাজছে। আবারো ইভান ডাকতে থাকে।
-“এই বাসন্তী চোখ খুলো না প্লিজ। আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দাও না গো। আচ্ছা আমায় শাস্তি দাও কেমন? তুমি আমায় শাস্তি দাও প্লিজ।”
নাহ ও ভুল কিছু শুনছে না। আবারো সে চোখ পিটপিট করে তাকায়। সামনে ইভানকে দেখেই সাথে সাথে গায়ের সর্বোচ্চ জোর দিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে উঠে বসে। ইভান শক্ত হয়ে না বসার কারণে ধাক্কার সাথে ছিটকে গিয়ে খানিকটা দূরে পড়ে। বর্ণালী মাথা তুলতে পারছেনা তাও উঠে বসে। রুমু দ্রুত এসে ওকে বুকের সাথে আগলে ধরে। তার বুকের সাথেই মাথা ঠেকিয়ে বসে পড়ে সে।
-“বর্ণ তুই উঠলি কেন? দেখ তোর হাতে স্যালাইন লাগানো জান। শুয়ে পড় প্লিজ।”
ইভান ঠিক বুঝতে পারছেনা কি হয়ে গেলো মুহুর্তের ভেতর। আবারো ওর দিকে এগিয়ে আসে। বর্ণালী চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বলে,
-“ও…. এহ….এখানে কেন? ওকে চ….চলে যেতে ব…বল।”
ইভান ওর দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে বলে,
-“এমনটা বলো না প্লিজ। আমি তোমাকে না দেখে কিভাবে থাকতাম? এভাবে আমায় দূরে ঠেলে দিও না।”
-“রু….রুমুহ বল ওকে এখান থেকে চলে যেতে।”
-“কেন যাবো? কি দোষ আমার? কি করেছি আমি? আমি যাবোনা। যাবোনা তোমাকে রেখে।”
রুমু বর্ণালীর থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা তুলে বলে,
-“এভাবে কেন বলছিস বর্ণ? ও ভয় পেয়ে গিয়েছিলো তাই তো তোকে দেখতে এসেছে।”
-“তুইও চলে যা এখান থেকে। আমার কাউকে চাইনা। তুই আমার বান্ধবী না। আমার বান্ধবী হলে ওর পক্ষ নিতি না।”
-“আমি পক্ষ নিচ্ছি না জান। দেখ না ইভানের অবস্থা দেখ একবার।”
ইভান রুমুকে থামিয়ে বলে,
-“দাঁড়াও রুমু আমি কথা বলছি।”
-“আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না। দয়া করে চলে যাও প্লিজ। নাহলে আমি এই স্যালাইন খুলে ফেলবো। চলে যাও।”
বর্ণালীর অবস্থা ইভানকে দেখে আরো খারাপ হয়ে গেছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর। কথা বলতে বারবার গলা ধরে আসছে তাও খুব দ্রুত কথাগুলো বলে যাচ্ছে।
ইভান তার বাসন্তীর মুখ থেকে কখনো এমন কিছু শুনতে হবে ভাবতেও পারেনি। পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেছে ওর। বুকটা ধরে এসেছে। রুমু অসহায়ভাবে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। সে মুখ ফুটে বলতেও পারছেনা যে ইভান তুমি চলে যাও।
👇
সজিব বিছানায় বসে চুপ করে চোখের জল ফেলছে। ঈশা ওর পাশে বসে কাঁধের উপর একটা হাত রাখতেই সজিব আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। ঈশার বুকের মাঝে নিজের মাথাটা এলিয়ে দেয়। ইশাও পরম আবেশে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে সে। সজিবকে এভাবে কাঁদতে দেখে তার কান্নার মাত্রাও বেড়ে যায়।
-“আমার লক্ষি বোনটাকে কখনো আমি ফুলের টোকাও লাগতে দেই নি ঈশা। আজ সেই আমার বোন কিনা নিজের এই অবস্থা করেছে। কি এমন কারণে সে এভাবে নিজের ক্ষতি করলো! একবার কেন তার ভাইয়াকে বলতে পারলো না! শুধু একবার বলে দেখতো ওর কোন সমস্যা হচ্ছে আমি ওই সমস্যাকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলে দিতাম। আমার বোনের চোখের জল আমি সহ্য করতে পারছিনা ঈশা। আমার বোন অনেক কষ্ট করেছে। কারো কোন ক্ষতি করেনি। তাহলে কেন ওর সাথে এমন হলো? কেন?”
-“হুস…. চুপ করো সজিব। চুপ করো প্লিজ। তুমি এভাবে কান্না করলে বাকি সবাইকে কে সামলাবে? একদম কান্না করবে না। বর্ণের কিচ্ছু হয় নি। দেখো একটু পরেই সে ঠিক হয়ে যাবে। আবারো আমাদের সাথে আগের মতোই কথা বলবে।”
সজিবের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ঈশা কথাগুলো বলছে। সে তাও থামছে না। ঈশার কোমড়টা শক্ত করে ধরে। তার বুকটা যেনো কেউ চিরে দিয়েছে। চোখের জলে ঈশার বুক ভেজাচ্ছে। অনেকক্ষণ এভাবেই দুজনে বসে থাকার পর ঈশা তার দু’গালে ধরে মুখটা তুলে ধরে। দু’চোখের উপর আলতো করে চুমু খায়। সজিব আরেকটু শক্ত করে ঈশার কোমড় আঁকড়ে ধরে। ওর সম্পূর্ণ শরীরে যেনো এক ভয়াবহ কম্পন বয়ে যায়। এমন ছোঁয়াতে সে চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়। সজিবের চোখ দু’টিও বন্ধ। তার হাত কিছুটা হাট হয়ে আসতেই ঈশা চোখ খুলে তাকায়। সজিবকে চোখ বন্ধ দেখে সে নিজেকে তার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ঘন হয়ে আসা নিশ্বাস তাদের ভালোবাসার জানান দিচ্ছে। এতোটাই কাছাকাছি এসে গেছে যে দুজনার নিশ্বাস মিশে একাকার। ঈশা আলতো করে সজিবের ঠোঁটের উপর নিজের নাক ঠেকায়। তার হাট হয়ে আসা হাত আবারো ওর কোমড় আঁকড়ে ধরে। ও কেঁপে উঠে তার আরো কাছে চলে যায়৷ সজিব ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায় ওর দিকে। নাকের উপর গভীরভাবে চুমু খেতে লাগে। ঈশার হাত সজিবের গলা পাড় করে। ঘাড়ের পেছনে ঘন চুলের মাঝে আঙুল দিয়ে বিলি কাটছে। সজিব নিজের ঠোঁট ঈশার নাক থেকে ঘেষে ঠোঁটের উপর নিয়ে ঠেকায়। শরীরের কাঁপুনি যেনো বাড়তেই থাকে। কোন এক তৃষ্ণার টানে দুজনের ঠোঁটগুলো আলগা হয়ে আসে। একের ঠোঁটের মাঝে অন্যের ঠোঁট আবদ্ধ হয়ে যায়। ঠোঁটের তৃষ্ণা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঈশার নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সজিবের চুলগুলো শক্ত করে মুঠোয় নেয়। ও ব্যাথায় ব্রু কুচকে ঈশার ঠোঁটকে শক্ত করে চেপে ধরে। কোমড়ে হেচকা টানে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। এভাবে দুজনের এই প্রথম কাছে আসা। ঈশা নিজের হবু স্বামীর কাছ থেকে বিয়ের আগে এতো বেশি কিছু পেয়ে যাবে কখনোই ভাবেনি। সজীব সমসময়ই ওর থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। দুজন দুজনকে ভালোবাসে ঠিকই কিন্তু কখনো এসব মাথায় আসেনি। আজকে কিভাবে কি হচ্ছে দুজনেরই বুঝার বিন্দুমাত্র ক্ষমতা নেই। ভাবলেশহীন হয়ে দুজনে ক্রমশভাবে একে অপরের ঠোঁটের সুধা পান করে যাচ্ছে।
👇
ইভান বর্ণালীর এমন অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়৷ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তখনই শারমিন বেগম রুমে প্রবেশ করেন।
-“বর্ণ!!!!! কি হয়েছে ওর? এভাবে হাঁপাচ্ছে কেন? বর্ণ মামনি কথা বল। বর্ণ।”
-“বড় আম্মু শান্ত হও। ওর কিছু হয়নি তুমি টেনশন নিও না৷ রুমু আলতো করে ওকে শুইয়ে দেয়৷ ইভান ধীরে ধীরে নিজের পা পিছিয়ে নিচ্ছে। চোখে জল টলমল করছে৷ বর্ণালী চোখ বন্ধ করে অনেকটা শান্ত হয়ে আসে। রুমু ইভানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“ইভান তুমি ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসো।”
-“হ্যাঁ বাবা তুমি বসো আমি আসছি।”
শারমিন বেগমের কথায় ইভান মাথা নেড়ে সায় দেয়। চোখের জল মুছে তিনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। কেন যে তার মেয়ের এই অবস্থা হলো!
-“একটু খেয়াল করে চললে কি এমন হয় রে? এমনিতেই কত দূর্বল তুই। আমি কত তোর খেয়াল রাখবো? তুই আমার খেয়াল রাখতে পারিস নিজের খেয়াল একটুও রাখতে পারিস না?”
বর্ণ মায়ের সবকথাই শুনতে পাচ্ছে কিন্তু কোন কথা বলতে ওর ইচ্ছে করছেনা৷ চোখে ওর রাজ্যের ঘুম। মায়ের একটা হাত শক্ত করে ধরে শুয়ে আছে৷ ইভান রুম থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে যায়৷ ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় ধপ করে বসে পরে। মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো খামছে ধরে নীরবে চোখের জল ফেলছে। আজকেই ওর ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে যাচ্ছিলো কিন্তু একটা ভুলের কারণে তার বাসন্তীকে সে হারাতে বসেছে।
-“কেন এমন করলি মালিহা? কেন? আমার সুখটা কেড়ে নিয়ে কি তুই সুখী হতে পারবি? আমার বাসন্তীর যদি কিছু হয় আমি তোকে ছাড়বো না।”
একা একাই বিরবির করে ইভান কথাগুলো বলে যাচ্ছে।
শারমিন বেগমর বর্ণালীর পাশে রেখে রুমুও বের হয়ে সজিবের রুমের দিকে পা বাড়ায়৷ মেডিসিনগুলো আনাতে হবে। সজিবের রুমের দরজায় ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই রুমুর পা ওখানেই থমকে যায়৷ হাত-পা প্রবলভাবে কাঁপছে ওর৷ দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছেনা৷ গলার পানি শুকিয়ে গেছে৷ খালি গলায় ঢোক গিলে দ্রুত নিশ্বাস ফেলতে লাগে৷ ওর হৃদস্পন্দন ওখানেই থমকে গেছে। কানের মাঝে কেমন একটা উদ্ভট শব্দ হচ্ছে। মাথা ভনভন করছে। চোখের সামনে এমন কিছু দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেনা। দরজার পাখাটা এখনো এদিক-ওদিক নড়ছে। রুমু এক হাত দিয়ে সেই দরজার পাখাটা শক্ত করে ধরে৷ চোখ ঝাপসা হয়ে আসার আগেই সে পিছন ফিরে যায়। ঈশা নিজেকে সজিবের থেকে ছাড়িয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।
-“স…..সরি আমি আ….আসলে বুঝতে পারিনি। আমার ন….নক করে আসা উচিৎ ছিলো৷”
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে রুমু বের হতে গেলেই সজিব খেয়াল করে রুমুর হাত কেটে রক্ত শুকিয়ে গেছে।
-“দাঁড়া রুমু৷ তোর হাত কাটলো কিভাবে?”
রুমু পেছন না ফিরেই বলে,
-“ও….ই ব….বর্ণকে ওয়াশরুম থেকে বের করার স…সময় গ্লাস লেগে সামান্য কেটে গেছে। তেমন কিছু না।”
আবারও বের হতে লাগলে সজিব বলে,
-“এদিকে আয়।”
রুমু চোখ মুছে পেছন ফিরে তাকিয়ে বলে,
-“কেন? কি হলো?”
-“আমি তোর হাত ড্রেসিং করে দিচ্ছি এদিকে আয় না।”
-“না থাক আমি ঠিক আছি।”
ঈশা এতোক্ষণে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,
-“আরে রুমু ড্রেসিং না করলে ইনফেকশন হয়ে যাবে৷ সজিবের কথাটা শুন৷ ভেতরে আয়।”
সজিব আর কথা না বাড়িয়ে রুমুর হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে দেয়৷ ফাস্ট এইড বক্স থেকে স্যাভলন বের করে জায়গাটা ক্লিন করতে লাগে৷ রুমু ব্যাথায় সজিবের হাত শক্ত করে ধরে।
মুখ দিয়ে উফফফফ শব্দটা বের হয়ে আসে। সজিব অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। মুখটা কাচুমাচু করে বলে,
-“স….সরিই। আমি বুঝতে পারিনি।”
-“ইহ….ইট’স ওকে।”
রুমু এমনভাবেই সজিবের হাত খামছে ধরে যার দরুন ওর হাতে পাঁচ আঙুলের নখের ছাপ বসে যায়। ঈশা পাশে থেকেই চেয়ে দেখছে সজিব কতটা যত্ন করে রুমুর হাত ড্রেসিং করে দিচ্ছে৷ এদের দুজনের মাঝে অনেকটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং আর ভালোবাসা আছে। হয়তো ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে তাই। ঈশার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। রুমু সজিবের চোখের দিকে তাকাচ্ছেনা। তাকানোর সাহসটাই নেই ওর মাঝে। হাতের ড্রেসিং শেষ হতেই সজিবের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বের হয়ে আসার সময় বলে,
-“বর্ণের ঔষধগুলো একবার নিয়ে এসো।”
-“তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো রুমু।”
-“জানি কি কথা বলতে চাও। পরে বইলো এখন আমি বর্ণের কাছে যাচ্ছি।”
-“বাসায় কি কল করে ইনফর্ম করেছিস তুই যে এখানে?”
-“হ্যাঁ ভাবীকে মেসেজ করে দিয়েছি। তারা সবাই কাল আসবে বর্ণকে দেখতে।”
কথাটা বলে আর দাঁড়ায় না রুমু। সে জানে সজিব বর্ণালীর এই অবস্থার পেছনের কারণ জানতে চায়। না জানি সজিব এসব জানলে কি করে বসে। কিন্তু সজিবকে তো বলতেই হবে।
রুম থেকে বের হতেই বেসিং এর সাথে ধাক্কা খায় রুমু। মাথাটা ঘোরাচ্ছে ওর। দ্রুত পানির ট্যাপ ছেড়ে মুখে পানি দিতে থাকে। আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখে মৃদু হেসে একটা গভীর নিশ্বাস নিয়ে বর্ণের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ওর পা আগাচ্ছেনা৷ জোর করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সে। ইভানকে নীরব হয়ে সোফায় বসে থাকতে দেখে রুমু। এখন সে ইভানের কাছে যাবেনা৷ এখন তার বর্ণকে প্রয়োজন আর বর্ণের তাকে প্রয়োজন।
💛
#____চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here