অন্ধকার মানব পর্ব-৩

0
305

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_৩
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

ঘড়িতে রাত ৩ টা বাজে।কোনো একটা আওয়াজে দ্বিধার ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম ভাঙতেই বিছানায় উঠে বসে ও।ধীরে ধীরে ওর নাকে সেই সুগন্ধ টা ভেসে আসে।হঠাৎ ওর চোখ যায় পর্দার আড়ালে অন্ধকার মানব অবয়বের দিকে।দ্বিধা বিছানা থেকে উঠে দাড়ায়। বারান্দার দিকে ভয়ে ভয়ে এক পা এক পা করে এগোতে এগোতে জিঙ্গেস করে–

” কে,,,,,,কে, ওখানে??

মুহূর্তেই মানব অবয়বটি এক নিমিশে ওর কাছে চলে আসে।ওর দুহাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।এক বিস্ফোরিত চোখে ও অন্ধকার মানবটির দিকে তাকিয়ে আছে।পুরো ঘর জুড়ে অন্ধকার।দ্বিধা কিছুই দেখতে পারছে না।শুধু অনুভব করতে পারছে। অবয়বটির শীতল হাত দুটোর স্পর্শ ওর পুরো শরীরে এক শিহরণ তৈরি করল।অবয়বটির ঠান্ডা নিঃশ্বাস ওর মুখের উপর এসে পড়ছে।ও দেখতে পায় ধীরে ধীরে অবয়বটির চোখ দুটো এক জ্বলন্ত নীল শিখায় পরিনত হতে লাগল আর অবয়বটি দ্বিধার কানের কাছে গিয়ে বলল–(গ্রীস ভাষায়)

“আগাপি”।(ভালোবাসি)

সাথে সাথে দ্বিধা চিৎকার দিয়ে—

“মাম্মা আআআআআ,পাপা আআআ

সাথে সাথে পারিজা ইরাম আর ইরাজ ইরাম দৌড়ে মেয়ের রুমে আসেন।

“হোয়াট হ্যাপেন্ড মাই প্রিন্সেস??

“দ্বিধা কি হয়েছে,মা?? বলো, তুমি কি ভয় পেয়েছো??”

দ্বিধার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো।ও হাঁপাতে হাপাতে বলল-

“ওওওওওও কেউ ছিলো আমার ঘরে।”

“কোথায়??”

“এএএখাখাখানে ই ছিল(ভয়ে ভয়ে বলল)

মি. ইরাজ পুরো ঘর,বারান্দা সব দেখলেন কিন্তু কোথাও কাউকে দেখলেন না।তিনি বললেন–

“কেউ নেই প্রিন্সেস।’

“আই ডোন্ট লাই,পাপা।কেউ তো ছিল আমি তাকে
অনুভব করেছি।আমি সত্যি বলছি।”

“আই নো ,প্রিন্সেস।তুমি কখনো মিথ্যা বলতে পারো না।”

পারিজা ইরাম মেয়ের কথা শুনে ভয় পেলেন।মনে মনে বললেন–(তাহলে কি সবকিছু কি আবার শুরু হতে চলেছে)।তিনি বললেল–

“ইরাজ অনেক রাত হয়েছে আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন।আমি আজ রাত এই ঘরেই থাকবো।ইরাজ নিজের ঘরে চলে যায়। মিসেস.পারিজা খাটের উপড় আসন পেতে বসে দ্বিধার মাথা তার পায়ের উপর রেখে বললেন–

“ডোন্ট ওয়ারি মাই বেবি।উই উইল বি অলওয়েজ উইথ ইউ অ্যান্ড উই উইল প্রোটেক্ট ইউ।”

পারিজা ইরাম এক অনাকাঙ্খিত ধ্বংসের আভাস পেলেন যেনো সবকিছ আবার শুরু হতে চলেছে।তারা কি পারবে সে ভয়ংকর ধ্বংসলীলা হতে নিজেদের একমাত্র মেয়েকে রক্ষা করতে।
,
,
,
“কিরে সে কখন থেকে চুপচাপ বসে আছিস??(রিপ্তি মুখের ভিতর জুসের পাইপ দিয়ে ভাঙা ভাঙা স্বরে বলল)।আবার ও কি সেই স্বপ্নটা দেখেছিস??”

“বললাম তো কিছু হয়নি(রাগের স্বরে বলল)।
পাইপ থেকে মুখটা উঠিয়ে বলল—

“আজকাল তোর কি হয়েছে বলতো কিছু বললেই রেগে যাস??”

ভার্সিটির নিচতলার সিড়িতে বসেই দুজন কথা বলছিল যেখান থেকে ভার্সিটির গেইট স্পষ্ট দেখা যায়।দ্বিধা ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর চোখ যায় ভার্সিটির গেইটের দিকে।ও বলল–

“তুই বস,আমি আসছি।”

দ্বিধা গিয়ে জাদ এর মুখোমুখি দাড়ায় আর বলে—

“কাল রাতে তুমিই আমার ঘরে এসেছিলে তাই না??”

জাদ ওর চোখের সানগ্লাসটা খুলে ওর দিকে তাকায়।ও কিছু বুঝে উঠার আগেই জাদ ওর হাত ধরে এক হেচকা টান দিয়ে ওকে একদম ওর মুখের সামনে নিয়ে আসে।দ্বিধা কিছুই বলতে পারছেনা,শুধু এক ধ্যানে জাদ এর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।ও বুঝতে পারে না জাদ এর ওই চোখে এমন কি আছে যা ওকে নির্বাক করে দেয়।জাদ ওর মুখটা দ্বিধার আরো কাছে নিয়ে বলল–

“আপনার এমন কেনো মনে হলো মিস নবনীযুক্তা??”

ও অবাক হয়ে ভাবতে থাকে যে নাম ও কখনো কাউকে বলেনি এই ছেলে তা কি করে জানে।

“মিস নবনীযুক্তা,আপনার নাম কেনো,আমি আপনার সম্পর্কে এমন অনেক কিছুই জানি যা আপনি নিজেও জানেন না”।

“মানে??”

ওদের এক কথোপকথন দেখে কেউ একজন যে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সেইদিকে কারো খেয়াল ই নেই।রিপ্তির কথায় —

“কিরে কি করছিস তোরা দুজন?সবাই দেখছে তো।”
দ্বিধা,জাদ এর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে স্বাভাবিক হয়।জাদ রিপ্তির দিকে তাকিয়ে এক দুষ্টু হাসি দিয়ে চলে যায়।

“এইটা তুই কি করলি??”

“আমি আবার কি করলাম??”

“তুই ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে পারলি?ও না তোর দুলাভাই।(বলেই ভ্যা ভ্যা করে কাদতে লাগল )

“আরে থাম থাম ওইটা একটা অ্যাকসিডেন্ট,আমি পা পিছলে পড়ে যাচ্ছিলাম তাই ও আমাকে সামলেছে”।

দ্বিধা জানেনা কেনো ও মিথ্যা বলেছে।

“তাই বলে এতক্ষন লেপ্টে থাকবি ওর সাথে আমার বুঝি কষ্ট হয়না।(বলেই কান্নার বেগ আরো ও বাড়িয়ে দিলো)

“আচ্ছা বাবা,এইবারের মতো মাফ করে দে।আর হবে না।”

“তাহলে কান ধর”।

“তবেরেরেএ(বলই দুজন খিল খিল করে হেসে দিলো)
,
,
,
“আর ইউ অলরাইট,মিস??”

“ইয়েস প্রফেসর।”

“আই অ্যাম সরি।”

“ইটস ওকে,প্রফেসর।”

সিড়ি দিয়ে হুড়মুড়িয়ে উঠতে গিয়ে প্রফেসর ইতাফ আন্দ্রিজ এর সাথে ধাক্কা লাগে দ্বিধার।টাল সামলাতে না পেরে পড়তে গেলেই ইতাফ তাকে দু বাহুতে আবদ্ধ করে নেয়।রিপ্তি দৌড়ে এসে বলে —

“সরি প্রফেসর।অ্যাকচুয়েলি ওর কোনো দোষ নেই।আমিই ওকে তাড়া করছিলাম।”

“নো প্রবলেম।”ইতাফ এক আজব মানুষ।প্রয়োজন

ছাড়া কারো সাথে টু শব্দ ও করেনা।আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে ৫ বছর আগে এখানে এসেছে একটা রিসার্চ এর জন্য। বয়স প্রায় ৩০ এর গোড়ায়।কিন্তু এখনো যেন ২৫বছরের টানটান যুবক।বয়সের সাথে সাথে তার সৌন্দর্য যেন দ্বিগুন হারে বেড়ে চলছে।
,
,
,
রাতে খাবার টেবিলে দ্বিধা বলে উঠল–

“পাপা,,,,নবনীযুক্তা,আমার এই নাম টা তুমি আর মাম্মা ছাড়া আর কেউ জানে???”

“কেন প্রিন্সেস,কিছু হয়েছে??”

“আগে তুমি বল??”

“হ্যা জানে।আমাদের আমেরিকার রিলেটিভরা। ”

আমি ও তো কখনো কাউকে বলিনি এমনকি রিপ্তি কেও না তাহলে জাদ কি করে জানলো(মনে মনে ভাবল)
,
,
,
“ওয়েলকাম মি. অ্যান্ডি গোমস।ভিতরে আসুন”।

মি.আইভান তাকে ভিতরে নিয়ে বসতে বলেন।

“আসলে একটু দেরী হয়ে গেলো।একটা কাজ ছিল।”

“নো প্রবলেম মি.গোমস।”

“মিসেস ফ্রিদা কেমন আছেন??”

“ভালো।

মি. গোমস একটি ছোট কাচের বোতল মিসেস ফ্রিদার দিকে এগিয়ে দেয়।

“ধন্যবাদ মি.গোমস।আপনি আমাদের জন্য যা করছেন তা অমূল্য।কোনো কিছুর বিনিময়ে আমরা তা শোধ করতে পারবো না।”

“এমন কেন বলছেন এই পৃথিবীতে কেউ স্বার্থ ছাড়া কিছু করে না।আসি।বলেই চলে গেলো।”

আইভান বোতল টি হাতে নিয়ে তার ভিতর থেকে কিছু তরল একটি ইনজেকশনে নিয়ে তা নিজের শরীরে পুশ করে নেয়।মিসেস. ইন্দ্রিয়াজ ও একই কাজ করে।দুজনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
,
,
,

ঘন জঙ্গল।চারদিকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার মেলা। হঠাৎ ই কারো ক্রুদ্ধ কন্ঠস্বর–

“কতবার বলেছি ওই মেয়ের দিকে নজর রাখতে যেনো ওর আশেপাশে ওদের ছায়া ও না পড়ে।কিন্তু তুই কি করছিলি।ওর এতো সাহস হয় কি করে ওই মেয়ের এতো কাছে যাওয়ার।”

বলেই একটা রূপার তৈরী ছুরি তার বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল।এক করুণ আর্তনাদ করতে করতে লোকটি মাটিতে লুটিয় পড়ল।আমার কাছে বিশ্বাসঘাতকের কোনো ক্ষমা নেই।বলেই হা হা করে একটা পৈশাচিক হাসি দিল যেনো পুরো জঙ্গল কেপে উঠলো।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here