মেঘবৃষ্টির গল্পকথা -(পার্ট:16+17)

0
624

#মেঘবৃষ্টির_গল্পকথা
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
পার্ট:16+17

আর কিছু বলতে পারলো না বৃষ্টি, জ্ঞান হারালো।পড়ে যেতে নিলেই অর্ক ওকে ধরে ফেললো।

উমা: ওহ নো!কি হলো ওর!

অর্ক:আব.. ও একটু অসুস্থ!তাই…আসতে বারণ করেছিলাম তাও আসলো।আপনার ইনজয় করুন,ওকে নিয়ে ভাববেন না।

অর্ক ওকে কোলে তুলে নিলো।এদিকে অয়ন আর উমা কিছুই বুঝলো না।অর্ক বৃষ্টিকে নিয়ে নিজের কেবিনে ঢুকে ওকে সোফায় শুইয়ে দিলো।তিশা ওর মুখে পানি ছিটালো।বৃষ্টি আস্তে আস্তে চোখ খুললো।তিশা ওকে ধরে বসিয়ে দিলো।মেঘের কথা মাথায় আসতেই অর্ককে প্রশ্ন করলো
বৃষ্টি:মেঘ?মেঘ কোথায়? অর্ক ভাইয়া মেঘ কোথায়? তোমাকে বলেছিলাম না মেঘ আসবে?দেখেছো আমার মেঘ ফিরে এসেছে! কোথায় ও?

অর্ক:বৃষ্টি ও মেঘ না!

বৃষ্টি: আরে,কি বলছো? ও ই আমার মেঘ!

অর্ক:না বৃষ্টি ও তোর মেঘ না!

বৃষ্টি:না আমি মানি না। ও ই আমার মেঘ,তুমি ভুল করছো।

এভাবে নানা কথা বলতে থাকলো।এক পর্যায়ে তিশা আর পেরে বৃষ্টির গালে সজোরে থাপ্পড় মারলো।

অর্ক:তিশা!

তিশা:চুপ,বৃষ্টি কেন বুঝছিস না ঐটা মেঘ না! ঐটা অয়ন!

বৃষ্টি গালে হাত দিয়ে অর্কের দিকে তাকিয়ে আছে।অর্ক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো।

অর্ক:এর আগেও অয়নের সাথে মেঘ আর তোর বাবার অনেক ডিল কনফার্ম হয়েছে।অয়ন তখন এ দেশে ছিল না। ভিডিও কলের মাধ্যমে মেঘ মিটিং করতো।যেখানে অয়নের সাথে আমাদের মেঘ থাকাকালীন সম্পর্ক আছে,সেখানে ও কি করে মেঘ হবে?

বৃষ্টি চুপ করে রইলো,তিশা ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,

তিশা:অর্ক জানতো তুই এখানে এলে এভাবে পাগলামি করবি,তাই আনতে চায়নি। ও মেঘ না বৃষ্টি।

অর্ক:প্লিজ বোন আমার,ওকে মেঘ ভেবে কিছু করিস না।এই ডিল ক্যান্সেল হলে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে।

বৃষ্টি কিছু না বলে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো।

বৃষ্টি:তোমরা বাইরে যাও,আমি এখানেই ঠিক আছি!

তিশা:তুই একা!

বৃষ্টি:প্লিজ!

তিশা আর কিছু বলল না।দুইজন নিরবে বেরিয়ে গেলো।বৃষ্টি সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে অয়ন আর মেঘের কথা ভাবছে।পৃথিবীতে এক দেখতে সাত জন মানুষ আছে।বাস্তব এ টুইন না হলে কি সত্যি এক দেখতে মানুষ হয়?
নিজের শার্ট ঝাড়তে ঝাড়তে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে অয়ন! ওয়েটার ভুল করে সামান্য জুস ওর গায়ে ফেলে দিয়েছে সেটাই পরিষ্কার করে বের হচ্ছে।আসার পথে একটা রুমে ওর চোখ আটকে গেলো।কালো গাউন পরিহিত এক মেয়েকে দেখে ওর হৃদস্প্দন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলো।মেয়েটি আর কেউ না বৃষ্টি!অয়ন বৃষ্টির হাল চাল জানার জন্য এগিয়ে যেতে নিলেই ওর ডাক পড়ে।তাই আর না এগিয়ে চলে গেলো।এভাবেই কাটলো পার্টি।

পরের দিন,

বৃষ্টি:রাহাতের খবর পেয়েছিস?

উৎসঃ হুমম ওকে এখন ভার্সিটিতেই পাবি।মেয়েদের ডিস্টার্ব করাই ওর কাজ।

বৃষ্টি কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো।লং শার্ট আর জিন্স পরে গলায় স্কার্ফ জড়িয়ে বেরিয়ে গেলো।

রাহাত:মামনি ,এদিকেও একটু তাকাও!

এরকম নানা কথায় মেয়েদের উত্যক্ত করে চলেছে রাহাত আর তার সঙ্গীরা।
“কুকুরের লেজ যে সোজা হয় না,তুই তার জল জ্যান্ত প্রমাণ।”

রাহাত ঘুরে দেখলো বৃষ্টি বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে।বৃষ্টিকে দেখে ও কিছুটা ভয় পেলেও প্রকাশ করলো না।

রাহাত:তুই এখানে!

বৃষ্টি:কিছু হিসেব নিতে এসেছি,তোর থেকে!

রাহাত:মানে?

বৃষ্টি:মেঘের সাথে কি করেছিস তুই?

রাহাত এবার ভরকে গেলো।

রাহাত:আম.. আ.আমি কি করেছি মানে?

বৃষ্টি এক হতে ঘাড় স্লাইড করতে করতে বলল,

বৃষ্টি:তাল বাহানা না করে সত্যি টা বল।

তখন পাশ থেকে দুইটা ছেলে বলে উঠলো,

ছেলে১:ওর সাথে এত কথার কি আছে?

ছেলে২:তুই জানিস কে আমরা?

আরেকজন বলে উঠলো,”রাহাত ভাই, মালটা কিন্তু জোস”

বৃষ্টি ওদের দিকে তাকিয়ে স্ক্যান করলো,

বৃষ্টি:নতুন যোগ দিয়েছো এই ডাফারটার সাথে?

ছেলে১:এই মেয়ে, যা নিজের কাজ কর।আমাদের আমার কাজ করতে দে!

বৃষ্টি এবার এগিয়ে ছেলেটার সামনে দাড়ালো।ছেলেটির কলার টেনে টুনে ঠিক করে দিয়ে মুচকি হেসে সজোরে থাপ্পর মারলো।ছেলেটি অবাক হয়ে রইলো।

পাশের ছেলেটি তেড়ে এগিয়ে আসতে নিলেই বৃষ্টি ওর পেট বরাবর লাথি দিলো।এভাবেই তিন জন কিছুটা রাম ধোলাই খেলো।বৃষ্টি হাঁটু গেরে ওদের সামনে বসে বললো,

বৃষ্টি:তোদের বস,আমার হাতে এক নাগাড়ে অনেক মার খেয়েছে।আর তোরা কোন জঙ্গলের বিড়াল?ভার্সিটির ওল্ড রেকর্ড চেক করিস।এই বৃষ্টির রেকর্ড হাইলাইট করা আছে।মাইন্ড ইট।

বৃষ্টি উঠে রাহাতের কাছে গেলো,

বৃষ্টি:এবার যা বলছি উত্তর দে,মেঘ..

আর কিছু বলার আগেই কেও বলে উঠলো,”স্পর্শিয়া বৃষ্টি না?”

বৃষ্টি ঘুরে তাকালো

বৃষ্টি:আরুশি উমা,আপনি?

উমা:আমি আর অয়ন এখানে একটু কাজে এসেছিলাম।তখন ওদের দেখলাম মেয়েদের উত্যক্ত করতে।অয়ন আসার আগেই দেখলাম আপনি চলে এসেছেন।

বৃষ্টি:একটু দাড়ান,

বৃষ্টি রাহাতের দিকে তাকালো,রাহাত চাইলেও এত টুকু সময়ে পালাতে পারে নাই কারন বৃষ্টি ওদের মেরে ওর পায়ের উপরই ফেলে রেখেছে। বৃষ্টি বাকা হেসে রাহাতের শার্ট ঠিক করতে করতে বলল,

বৃষ্টি:আজ ডোজ বেশি হয়ে গেছে।কালকে ঠিক বিকেল পাঁচটার দিকে সেন পাড়া পল্লীর মোড়ে উপস্থিত থাকবি।আর যদি না থাকিস,জানিসই তো বৃষ্টি ঠিক কি কি করতে পারে?আমার হকি স্টিক টা কিন্তু আজও একদম নতুন আছে।ওকে?

রাহাত উপর নিচ মাথা নাড়লো।বৃষ্টিও ওকে ছেড়ে দিল, ও চায় না উমার সামনে এই প্রশ্ন তুলতে।আর উমার ভাব দেখে মনে হচ্ছে না এত সহজে ওকে ছাড়বে।তাই রাহাত কে যেতে দিলো।

উমা:তোমার ফাইটিং স্কিল তো দারুন!বাই দ্যা ওয়ে,তোমার ফ্যান হয়ে গেলাম।

বৃষ্টি হাসলো,তখনই ওর চোখ যায় অয়নের দিকে।বুকটা মুহূর্তেই ধক করে উঠলো।এরকমটা মেঘকে দেখলে হতো! পরক্ষণেই নিজেকে বুঝালো ও মেঘ না।এদিকে অয়ন ভাবছে, কাল যাকে পরী রূপে দেখলো,আজ সে গুন্ডির সর্দার।বাহ!

এভাবে আরো কিছুক্ষন কথা বলে উমাকে বিদায় দিয়ে বেরিয়ে গেলো বৃষ্টি।অয়নের সামনে থাকলে নিজেকে আটকাতে পারবে না।পরেরদিন রাহাত নিজে থেকে আসে নাই,তবে বৃষ্টি তুলে এনেছে ওকে।

বৃষ্টি:সোজা কথার মানুষ তুই না!

রাহাত:আমাকে যেতে দে।

বৃষ্টি:মেঘের সাথে কি করেছিস?

রাহাত কাপতে লাগলো,প্রথমত বৃষ্টির প্রশ্নের কারণে, দ্বিতীয়ত ওর পাশে উত্তপ্ত রড এর কারণে।

বৃষ্টি:বলবি নাতো?বেশ!বলেই গরম রড ওর গায়ে লাগাতে গেলেই ও বলে উঠলো
“বলছি বলছি,তোকে শাস্তি দিবো বলে মেঘের গাড়ির অ্যাকসিডেন্ট আমি করিয়েছি।”

বৃষ্টি নিঃশ্বাস নিলো,কথাটা ও কয়েকদিন আগেই জেনেছিল।চেয়েছিল রাহাতের শাস্তি,তাই ওকে নিজের মুখে স্বীকার করালো।ভিডিও ও তৈরি করেছে।প্রমাণ সহ পুলিশ কে দিয়ে রাহাত কে ধরিয়ে দিলো।চাইলে ও নিজেও মারতে পারতো।কিন্তু আর ঝামেলা চাচ্ছে না।বাড়ি ফিরে দুই ঘণ্টা শাওয়ার নিলো।বের হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।চারপাশে আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে সব।সামনের ল্যাম্পপোস্ট টায় চোখ যেতেই কিছু মুহূর্ত ভেসে উঠলো। এনগেজমেন্ট এর রাতে ওই জায়গায় এসে দুইজন কত খুনশুটি করেছে।আপনমনে আওরালে বৃষ্টি,
বৃষ্টি:”চোখের কোনে হাজার বসন্ত,বক্ষে নিদারুণ চৈত্র মাস। চৌদিকে ছুঁটে বসন্ত নিঃশ্বাসে দীর্ঘশ্বাস। ঝটিকা বেঁধেছে আসমান প্রান্ত বৃষ্টি স্নাতক রাত চমকে উঠি কুম্ভীরাশ্রুে কোথায় …
মেঘাচ্ছন্ন রাতের প্রতিশ্রুতি স্বরূপ ছিল বৃষ্টি,
তোমার হৃদয়ের আগিনায় ছিল বৃষ্টি,
তোমার প্রতিটা স্পন্দনে ছিল বৃষ্টি…
তবে আজ কি হলো?
কেনো চলে গেলে মেঘ এভাবে?
মেঘ বৃষ্টির গল্পকথা তো শেষ হবার নয়!তবে?ফিরে এসো প্লিজ!”

“সবকিছু বদলে গেলো এক রাতের নিমেষে
তুমি হারিয়ে যাবে বলেছিলে কবে,
আজ তোমায় হারিয়ে আমি একা এই রাতে
ভাবনাতে তোমাকে খুঁজেছি কি তবে।

ভাবি তুমি আসবে ফিরে
ধরবে হাতগুলো,
বলবে তুমি কেঁদো না
ফিরে এসেছি এই দেখো,
আর বলবে কেঁদো না তুমি
এবারই তো শেষ কান্না,
বসে আছি আমি তোমার জন্যে
আসোনা, ফিরে আসোনা,
আসোনা, ফিরে আসোনা।”

#চলমান#মেঘবৃষ্টির_গল্পকথা
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
পার্ট:১৭

দিন যেতে লাগলো,দেখতে দেখতে তিশা আর অর্কের এনগেজমেন্ট চলে আসলো। সারাবাড়ি সুন্দর করে সাজানো।ধূসর পারের কালো শাড়ির কুচি সামলাতে সামলাতে এগিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি, কুচি সামলাতে এতটাই ব্যাস্ত যে সামনে কি আছে তার ভ্রুক্ষেপ নেই।হুট করে কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়তে যেতে নিয়েও কেও ধরে ফেলায় বেঁচে গেছে।ওদিকে ডেকোরেশন দেখতে ব্যাস্ত ছিলো অয়ন,এভাবে কেও ধাক্কা খাওয়ায় নিজেকে সামলে নিলেও সামনে থাকা ব্যাক্তিকে পড়ে যাওয়ার থেকে বাঁচাতে কোমর জড়িয়ে আগলে নিলো।ব্যাপারটা এতই জলদি ঘটলো যে দু জন বুঝতেই পারছে না হচ্ছেটা কি!দুইজনের চোখাচোখি হতেই হারিয়ে গেলো তারা। কোথায় আছে তারা তার এক বিন্দু ধারণা নেই,তবে এটা আছে যে চোখ সরালেই সব পাল্টে যাবে।দূর থেকে এসব দেখছিলো উমা।ব্যাপারটা ওর ভালো না লাগায় ওদের মাঝে এসে অয়নকে ডাকলো,

উমা:অয়ন!

উমার কথায় বাস্তবে আসলো বৃষ্টি।এতক্ষণ কি করছিল ভাবতেই অনুতাপে হৃদয় ভরে উঠলো ওর। অয়নকে সরি বলে ধপাধপ পা ফেলে এগিয়ে গেলো।অয়ন বৃষ্টির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো, যা উমার দৃষ্টিতে এড়ালো না।বৃষ্টি তিশার রুমে গেলো দেখতে ও তৈরি কিনা!সব শেষে সুষ্ঠ ভাবে এনগেজমেন্ট শেষ হলো।উমা আর অয়ন থেকে গেলো।বৃষ্টির বাবা মা সহ বিভোর আয়েশা ও রয়ে গেলো।তিশা আনমনে কিছু ভেবে চলেছে।

বৃষ্টি:বাহ মেরি বেহনা,তোকে তো আজকে ফুল টু নিউজিল্যান্ড এর রানী লাগছিল!

তিশা: নিউজিল্যান্ড এর রাণীকে তুই দেখেছিস?

বৃষ্টি: তা দেখি নাই,কিন্তু এখন দেখে নিলাম!

তিশা কিছু বললো না।
বৃষ্টি:কি হয়েছে?

তিশা:ভালো লাগছে না কিছু!

বৃষ্টি:কেন?

তিশা:আজ আমার জায়গায় তোর থাকার কথা বৃষ্টি!

বৃষ্টি:তিশা..কি বলছিস?

তিশা:ঠিকই বলছি,আজ তো তুই থাকতি মিস অর্ক,আমি না।

বৃষ্টি:কেনো একটা সিম্পল ব্যাপার বুঝতে পারছিস না,অর্ক ভাইয়াকে আমি ভাইয়ার মত দেখি।

তিশা:আর সবাই তো সেটা মানতো না বৃষ্টি,সেদিন যদি তুই মিথ্যে না বলতি যে তোর আর মেঘের বিয়ে হয়ে গেছে,আজ তুই অর্কের বউ থাকতি।

ইরিনা:তার মানে বৃষ্টি আর মেঘের বিয়ে হয়নি?

চমকে তাকালো তিশা আর বৃষ্টি।এই মুহূর্তে ইরিনাকে কেও আশা করেনি এখানে।
পিন পিন নিরবতা পুরো বাড়িতে।কিছুক্ষণ আগেই ইরিনা আন্টি সবাইকে বৃষ্টির বলা মিথ্যার ফাঁস খুলে দিয়েছে। চেঁচামেচিতে অয়ন আর উমা নিচে এসে গেছে। বৃষ্টি মাথা নিচু করে স্পর্শের সামনে দাড়িয়ে আছে।তিশা ওর থেকে একটু দূরেই!অর্ক এক কোনায় দাড়িয়ে সবটা দেখছে, ও জানতো সত্যিটা সামনে আসবেই,কিন্তু এত জলদি তার ধারণা ছিল না।আজাদ সাহেব মুখ গম্ভীর করে আছেন। আফিয়াও ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে।সবার দৃষ্টির মূল বিন্দু বৃষ্টি আর স্পর্শ।

স্পর্শ:তোমার ইরিনা আন্টি যা বললো তা কি সত্যি?

বৃষ্টি চুপ রইলো।

স্পর্শ:জবাব দেও,তোমার আর মেঘের বিয়ে হয়নি?

বৃষ্টি: না!

সাথে সাথে জোড়ে থাপ্পর পড়লো বৃষ্টির গালে।
তিশা:বাবা!

স্পর্শ:চুপ,আজকে কেও কোনো কথা বলবে না!বৃষ্টি,কেন তুমি মিথ্যে বললে?

বৃষ্টি গালে হাত দিয়ে কান্না আটকানোর চেষ্টায় আছে,কোনোমতেই চোখে জল ও আসতে দিবে না।
স্পর্শ:আমি কি জিজ্ঞেস করছি বৃষ্টি উত্তর দাও!(ধমকে বললো)

এবার বৃষ্টি গর্জে উঠলো,

বৃষ্টি:কি বলবো?সেদিন তোমাদের মিথ্যে না বললে বিয়ে দিয়ে দিতে অর্ক ভাইয়ার সাথে আমার।

আজাদ:সেটা তোর ভালোর জন্যই তো বলেছিলাম।

বৃষ্টি:তিনটে লাইফ শেষ হয়ে যেতো বাবাই।তিশা আর অর্ক ভাইয়া একে অপরকে ভালোবাসে,তোমাদের একটা সিদ্ধান্ত ওদের লাইফ কে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট ছিল।হাজার মানা করার সত্বেও তোমরা শোনো নাই ,তাই বাধ্য হয়েছিলাম মিথ্যে বলতে।

আবারো নিরবতা,বৃষ্টি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আবার বললো,

বৃষ্টি:মেঘ আমার সব বাবা।

স্পর্শ আহত চোখে তাকালো,মেয়ে যে মেঘকে প্রাণের চেয়েও ভালোবাসে তা তো ভালোভাবেই জানে।

বৃষ্টি আবার বলতে শুরু করলো,
বৃষ্টি:লাইফের এই কয়েকটা বছরে প্রথম মন থেকে হেসেছিলাম আমি,শুধু মেঘের জন্য।লাইফ উপভোগ করেছি শুধু মেঘের জন্য,তোমাদের পেয়েছি শুধু মেঘের জন্য। আজ আমরা যে পরিবার হয়েছি তাও মেঘের জন্য।যেই মানুষটা আমার হাসির কারণ,যেই মানুষটা আমার দুঃখের সাথী,আমার..আমার রঙহীন জীবনে যে রঙ দিয়েছে,সামান্য এক ঝড়ে তাকে ভুলে যাবো?বাবা,আমি মেঘকে ভালোবাসি। ও ছাড়া এই জীবনে আর কাওকে আনতে পারবো না। মরে যাবো , তাও বৃষ্টির সব কিছু শুধু মেঘের নামে থাকবে…মেঘ বিনা বৃষ্টি হয় না বাবা,এটা যেমন প্রকৃতিতে বিরাজমান তেমনি আমাতেও।আমি জানি মেঘ আসবে,তার বৃষ্টির ফোটার কাছে।আমার মিস্টার ক্যাবলা কান্ত তার বৃষ্টির ফোঁটাকে ছেড়ে কি করে থাকবে?আসবে মেঘ,আসবে..।মেঘ ছাড়া আর কাওকে আমি নিজের করতে পারবো না বাবা।এর চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়।

বিস্ফোরিত চোখে তাকালো সবাই।বৃষ্টি আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে বাইরে চলে গেলো।অর্ক ও গেলো পিছন পিছন।স্পর্শ ধপ করে সোফায় বসে পড়লো,কি বা বলবে।ওদিকে অয়ন থম মেরে রইলো।এতদিন এই মিস্টার ক্যাবলা কান্ত ডাক আর বৃষ্টির ফোঁটা শব্দটা আবছা স্মৃতিতেই পেতো।কিন্তু আজ বৃষ্টির মুখে এই দুটো কথা শুনে ও স্তব্ধ।সবাইকে আড়াল করে সেও গেলো বৃষ্টির খোঁজে যা উমার চোখ এড়ালো না।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা শুনশান রাস্তায় ধপ করে বসে পড়লো বৃষ্টি।হুট করে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো।

বৃষ্টি: কবে আসবে মেঘ তুমি,কেন এমন করলে?তুমি জানো না?তোমার বৃষ্টির ফোঁটা যে খুব ভালোবাসে তোমায়! আসো না মেঘ!প্লিজ!

চিৎকার করে কাঁদছে বৃষ্টি,অর্ক গিয়ে বৃষ্টির পাশে বসলো,
অর্ক:এই বোন কাঁদছিস কেনো?

বৃষ্টি অবাক চোখে তাকালো,অর্ক কোনোদিন ওকে তুই বা বোন বলে ডাকেনি।

অর্ক:তুই না বলেছিস আমি তোর ভাইয়া লাগি?হুমম!তাহলে..একদম কাঁদবি না!আজ আমি তোকে বলছি মেঘ আসবে!আমার এই বোনের ভালোবাসা উপেক্ষা করে মেঘ না ফেরার দেশে যেতে পারে না।আজ থেকে আমিও বলবো মেঘ আসবে ,তোর কাছে মেঘকে আসতেই হবে!
বৃষ্টি অর্ককে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।দূর থেকেই সবটা দেখলো অয়ন।হুট করে মাথায় ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো।তাই জলদি ওই স্থান ত্যাগ করলো।

তিশা উদাস মনে বাইরে তাকিয়ে আছে ।তখনই উমা আসলো!

উমা:কি ভাবছো?

তিশা:বৃষ্টির কথা,মেয়েটা কি করে থাকবে?

উমা:একটা কথা বলবো?

তিশা:কি?

উমা:বৃষ্টি যখন এতই মেঘ কে ভালোবাসে তাহলে অন্য পুরুষকে কে অদ্ভুত নজরে কেনো দেখে?

তিশা:মানে?

উমা:বৃষ্টি অয়নকে কিভাবে যেনো দেখে,সাধারণ না!অনেক আবেগ মিশ্রিত চোখে।
তিশা দীর্ঘশ্বাস ফেললো,এই কথা ও বলতে চায় না,কিন্তু উমা যে ভুল বুঝবে বৃষ্টি কে।
তিশা ওর ফোন থেকে পিক বের করে উমাকে দেখালো।উমা চমকে গেলো।

উমা:অয়ন আর বৃষ্টি একসাথে?

তিশা:এটা মেঘ বৃষ্টি!

উমা: কি!

তিশা:অয়ন আর মেঘ কে হুবহু এক দেখতে,তাই বৃষ্টির ওকে দেখলে মেঘকে মনে পড়ে।পৃথিবীতে নাকি এক দেখতে সাত জন মানুষ আছে,এই প্রবাদ আগে শুনতাম।এখন দেখেও নিলাম।

উমা সরি বলে রুমে গেলো।ভাবছে গভীর ভাবে।হুট করে ফোন নিয়ে ফোন করলো ডক্টর মামুনকে।

উমা:মামুন আংকেল?

মামুন:বলো উমা,কি দরকারে এই বান্দার কথা মনে পড়লো।

উমা:আরে আংকেল,তেমন কিছু না।আমি বাংলাদেশ এসেছি।কালকে আপনার চেম্বারে যাবো।দেখা করতে।

মামুন: ওকে!

আরো কিছু কথা বলে রেখে দিল।তারপর কল দিল অয়নের ফ্রেন্ড নাদিমকে, অয়নের বেস্ট ফ্রেন্ড।

উমা:নাদিম!

নাদিম:উমা তুমি?তুমি বাংলাদেশ কবে আসলে?

উমা:কয়েকদিন!আমার আর অয়নের বিয়ে কয়েকদিন পর,তুমি আসবে না?

নাদিম: হোয়াট?অয়নের সাথে তোমার বিয়ে?তুমি কি রাত বিরেতে মজা করছো?

উমা:নাতো।

নাদিম: আই থিঙ্ক তুমি মজা নিচ্ছো!

উমা :শাট আপ নাদিম,আমি কেনো মজা করবো!

নাদিম:অয়ন মারা গেছে ছয় মাস হয়ে গেছে,ওকে কিভাবে বিয়ে করবে তুমি?

উমার হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো।ফ্লোরে বসে পড়লো ও..এটা কি শুনলো ও।তবে যাকে ও অয়ন বলে চিনে সে কে?মেঘ!

#চলমান

(কিছু বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে লিখবো,তাই লেট হচ্ছে।আর তিন পর্বে শেষ করে দিবো এটা,জুম্মা মুবারাক)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here