গল্প – আমার একটাই তুমি
.
Part – 11
.
writer – ArFin_$uMon
.
.
অফিস শেষে বাসার দিকে রওনা দিলাম আসার পথে ঐ দিনের সেই ছেলেটির সাথে আজকেও আবার দেখা হলো। গাড়িটা একটু সাইড করে রেখে ছেলেটার কাছে গেলাম আজকে ছেলেটা রজনিগন্ধা মালা নিয়ে আসছে।
এরপর আমিও জুলি জন্য একটা রজনিগন্ধার মালা নিলাম এরপর ছেলেটির কাছে গিয়ে ওর পরিচয় জানতে চাইলাম। পাশে একটা চায়ের দোকানে বসে ওর নাম বাসা কোথায় সবকিছু জানতে চাইলাম। একটু পর ছেলেটি আমাকে সব জানালো।
ছেলেটির নাম রফিক উদ্দিন ওর মা নেই অনেক ছোট কালে ওর আম্মু মারা গেছে এবং বাবার কাছে ও মানুষ ক্লাস থ্রিতে পড়ে।
আমিঃ- আচ্ছা তোমার বাবা থাকতে তুমি তোমার পড়ালেখা বাদ দিয়ে এইভাবে ফুল বিক্রি কর কেন?
রফিকঃ- ভাইয়া আমার আব্বু একটা কারখানায় কাজ করে। আব্বু আমাকে কিছু করতে দেয় না কিন্তু আব্বু ১০ দিনেরর মতো অসুস্থ তাই কাজে যেতে পারে না তাই পেটের দায়ে এই ১০ দিন এইভাবে কাজ করছি। তবে আব্বু এখন একটু সুস্থ হয়েছে কাল থেকে আবার কাজে যাবে আর কাজে গেলে আপনার সাথে হয়তো আর দেখা হবে না।
ছেলেটার কথা শুনে অনেক মায়া হলো। আমি ওকে ৫০০ টাকা হাতে দিয়ে আর ওর জন্য কিছু খাবার কিনে দিয়ে চলে আসতে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনি ছেলেটি হাত ধরে বলল..
রফিকঃ- ভাইয়া আপনি অনেক ভালো আমার সারাদিন ফুল বিক্রি করে যে টাকা হয় সেই টাকা আপনি একবারে দিলেন। এই গোলাপ ফুলটি ভাবি কে দিয়েন। নিজ হাতে ভাবির চুলে খোপা করে তার মাঝে ফুলটি গেঁথে দিয়েন সুন্দর দেখাবে।
পিচ্ছিটার কথা শুনে অনেক ভালো লাগল। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গাড়ি তে উঠলাম। যাওয়ার আগে ওকে বললাম..
আমিঃ- ভালো থাকিস আর মন দিয়ে লেখাপড়া করবি নিয়তি চাইলে হয়তো আবার দেখা হবে তোর সাথে হবে।
এরপর ওকে বিদায় জানিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই আপু এসে দরজা খুলে দিল। আমি আমার রুমে এসে দেখি জুলি রুমে নেই। একটু পর ড্রয়িং রুমে এসে দেখি আম্মু সোফায় বসে টিভি দেখছে। জুলি হয়তো রান্নাঘরে আছে যাই একবার গিয়ে দেখে আসি কিন্তু কি ব্যাপার এখানেও নেই। কোথায় গেল উনি আচ্ছা একবার আম্মুকে জিজ্ঞাসা করি..
আমিঃ- আম্মু জুলি কোথায় দেখছি না যে। কোথাও গেছে নাকি? কি হলো আম্মু বলো।
আম্মুঃ- কেন রুমে নেই জুলি।
আমিঃ- কই আমি তো দেখলাম না।
আম্মুঃ- রুমে আছে ভালো করে দেখ না হলে বাথরুমে গেছে হয়তো।
এরপর আম্মু আর আমার কোন কথার উত্তর না দিয়ে আবার সিরিয়াল এ মন দিলো। আমি আর কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম কিন্তু দরজা লক করা না তাহলে উনি বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছে। বেলকুনিতে গিয়ে দেখি তো। আমি যা
মনে মনে ভাবছি ঠিক তাই। উনি বারান্দার এক কোনে দাড়িয়ে আছে।
কিন্তু আমি কাছে গিয়ে দেখি উনার চোখ জল এ ভেজা। চোখ দুটো কান্না করতে করতে ফুলে গেছে একদম। এরপর আমি উনার হাত ধরে রুমে নিয়ে আসলাম। এখন ও কেঁদেই চলছে।
আমিঃ- আপনি এইভাবে কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে আমাকে বলুন? আচ্ছা আপনি যদি না বলেন তাহলে আমি বুঝব কিভাবে হুম? কি হলো বলুন?
এরপর উনি খাতা নিয়ে লিখতে বসলেন। ৫ মিনিট পর আমার হাতে খাতা টা দিলো..
জুলিঃ- দেখুন আমি কাল থেকে আর ভার্সিটিতে যাব না। আজ সবাই আমাকে নিয়ে হাঁসাহাসি করছে এমনকি স্যার ও হাঁসাহাসি করছে আমাকে নিয়ে।
এরপর আমি উনার মুখে হাত দিয়ে চোখের জল মুছে দিয়ে বললাম..
আমিঃ- দেখুন সমালোচনা করার মানুষের তো অভাব নেই। আপনি যেভাবেই চলুন না কেন সমাজ আপনাকে সমালোচনা করবেই। তাই মানুষ যেভাবেই সমালোচনা করুক না কেন আপনি আপনার মতোই চলুন।
এই দেখুন এখনো কেঁদেই চলছে। প্লিজ চুপ করুন। আপনি যদি এইভাবে কাঁদতে থাকেন তাহলে কিন্তু আমি অনেক কষ্ট পাব। একটু পর উনি কান্না বন্ধ করল।
এরপর আমি উনাকে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে এনে একটা টুল এ বসিয়ে ব্যাগ থেকে ওই ছেলেটির কাছ থেকে যে ফুল গুলো কিনেছিলাম সেইগুলো দিয়ে ছেলেটার কথা মতো খোঁপা করে তার মধ্যে একটা গোলাপ ফুল গেঁথে দিলাম। সত্যিই জুলিকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।
আমিঃ- আপনি এখনো কেঁদেই চলছেন? ও বুঝতে পারছি আপনার হয়তো এইগুলো পছন্দ হয় নি। ঠিক আছে আপনি কেঁদেই যান যে বোঝে না তাকে বুঝিয়ে লাভ কি?
এই বলে আমি চলে যাচ্ছিলাম ঠিক তখন উনি আমার হাত টেনে ধরল। তারপর ইশারায় বলল..
জুলিঃ- আপনার তো দেখি খুব রাগ আমি কি বলছি যে আমার পছন্দ হয়নি। আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।
আমিঃ- থাক আর পাম দেওয়া লাগবে না আমি জানি আপনার পছন্দ হয়নি। আমাকে হ্যাপি করার জন্য আপনি বলছেন আমি জানি।
জুলিঃ- না আমি মনে থেকে বলছি।(ইশারায়)
আমিঃ- আচ্ছা সত্যি যদি আপনি মন থেকে কথাটা বলে থাকেন তাহলে আপনি আমার জন্য এক কাপ ব্লাক কফি বানিয়ে নিয়ে আসুন।
জুলিঃ- আচ্ছা ঠিক আছে আপনি বসুন আমি নিয়ে আসছি।
এই বলে জুলি রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। এই দিকে যাওয়ার পর আম্মু জুলিকে দেখে ওকে ডাকল..
আম্মুঃ- কি ব্যাপার রে আম্মু? আজ এত খুশি লাগছে তোকে ভার্সিটি থেকে এসেও তো মুখ গোমড়া করে বসে ছিলি সুমন আসার পর কি এমন যাদু ছড়িয়ে দিল আর মাথায় তো খোঁপাও করছিস এই ফুল কে দিল সুমন?
জুলিঃ- হুম আপনি কফি খাবেন আম্মু..?(ইশারায়)
আম্মুঃ- আচ্ছা বানিয়ে আন তাহলে আর আমার টাই একটু কম চিনি দিবি।
জুলিঃ- হুম। (মাথা নেড়ে বলল)
একটু পর আম্মু আমার রুমে এসে বলল..
আম্মুঃ- সুমন! জুলির কি
হয়েছিল রে তখন?
আমিঃ- আরে আম্মু তেমন কিছুই না একটু মন খারাপ করে বসে ছিল তখন।
আম্মুঃ- কেন কিসের জন্য মন খারাপ?
আমিঃ- ভার্সিটির প্রথম দিন অচেনা জায়গা কেউ নেই আর হয়তো ফ্যামিলির জন্য মন খারাপ লাগছে তাই আর কি?
আম্মুঃ- তা তুই ওদের ফ্যামিলির সাথে আমাদের কথা বলতে দিচ্ছিস না কেন? তোদের বিয়ে তো সেইরকম কোন এরেন্জমেন্ট করে করা হয়নি ভাবছি এবার দুই ফ্যামিলির মত নিয়ে অনেক বড় করে আয়োজন করব।
আমিঃ- না আম্মু এখন না আর কয় দিন যাক তারপর আলাপ করায় দিব তোমাদের।
এরপর আম্মু আর কিছু বলল না আমি একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। একটু পর জুলি আমার সামনে কফির মগটা রাখল আর ইশারায় বলল..
জুলিঃ- এবার বিশ্বাস হয়েছে তো আপনার যে আমি আপনার উপর রাগ করি নি।
আমিঃ- হুম হয়েছে। আচ্ছা আপনার ফ্যামিলি মানে মামি বা চাচা-চাচি বা আপনার কাজিনদের জন্য মন খারাপ বা কষ্ট হয় কি?
জুলিঃ- না।(মাথা নাড়িয়ে)
আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম উনার চোখের কোনে হালকা পানি আমি জিজ্ঞাস করলে উনি আমার থেকে লুকিয়ে ফেলল।
আমিঃ- জুলি আপনি যদি আবার কাঁদেন আমি কিন্তু কফি টা এক টান দিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিব।
জুলিঃ- কি যে বলেন আপনি আমি কান্না করব কেন? (ইশারায়)
বুঝতে পারছি না ঠিক কি হচ্ছে। হয়তো উনি ফ্যামিলির জন্য কষ্ট পাচ্ছে।
আমিঃ- আচ্ছা কাল তো শুক্রবার কাল কোথাও ঘুরতে যাবেন?
উনি মাথা নেড়ে আবার না উত্তর দিল।
আমিঃ- আচ্ছা যদি কাল এিশাল যাই আপনার মামাবাড়ি।
কথাটা শোনা মাত্রই জুলির চোখে মুখে কি আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। আনন্দে আত্নহারা হয়ে ইশারায় বলল..
জুলিঃ- সত্যি নিয়ে যাবেন আপনি?
আমিঃ- হুম সত্যি নিয়ে যাব কিন্তু একটা প্রোবলেম আমি আপনার সাথে কি পরিচয়ে যাব।
জুলিঃ- এখন যে পরিচয়ে আছে ওখানেও সেই পরিচয়েই যাবেন। (ইশারায়)
আমিঃ- কিন্তু আপনার ফ্যামিলি থেকে প্রোবলেম হবে না তো?
জুলিঃ- না আমার মামি অনেক ভালো।(ইশারায়)
আমিঃ- আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে কিন্তু আম্মুর কাছে শুনলাম আপনি নাকি দুপুরে খান নি?
জুলিঃ- হুম আপনি ও তো খান নি।(ইশারায়)
আমিঃ- আচ্ছা ৯ টা বাজে খাবার বাড়ুন আমি আসছি।
.
.
চলবে……………………