আমার একটাই তুমি . Part – 4

0
650

গল্প – আমার একটাই তুমি
.
Part – 4
.
writer – ArFin_$uMon
.
.
কথা গুলো পড়ে আমি একবার উনার দিকে তাকালাম সত্যিই তো উনি কে হয় আমার? কেন আমি উনার জন্য এত কিছু করছি। এর আগে তো কোন মেয়ের জন্য এতটা ভাবি নি? উনার মুখের দিকে তাকালে আমার কেন এত খারাপ লাগে? তাহলে কি আমি উনার প্রেমে পড়ে গেলাম? এই সব ভাবতেছিলাম জুলির গোঙ্গানির শব্দে কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরলাম ।
উনি আমার সামনে আবার খাতায় লিখে খাতার লেখাটি তুলে ধরল..কি হলো বলুন আমার প্রশ্নের উত্তর দিন? কে হন আপনি আমার? আমার জন্য কেন এত কষ্ট করছেন? আমি তো আপনার জীবনে ২দিনের অথিতি হয়ে এসেছিলাম আজ চলে যাচ্ছি যদি কোন ভুল করে থাকি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর পারলে আমাকে আমার নানুবাড়ি যাওয়ার টিকিট কেটে দিন।
আমিঃ- দেখুন আপনি কে হন আমার বা কেন করছি আপনার জন্য তা আমি নিজেই জানি না কিন্তু আমি একজন অসহায় মেয়ের পাশে আছি। এই ৩ দিনে আমি একজন ভালো বন্ধু পেয়েছি আর আমি আমার বন্ধু জন্য করছি। আশা করি এবার উত্তর পেয়েছেন।
এরপর আবার খাতায় কি যেন লিখতে লাগল আর রুমের বাইরে থেকে আব্বু আম্মু চেঁচামেচি এক কথায় আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে আবার জুলির কথা ভেবে ওর জন্য অনেক মায়া লাগছে। ৫মিনিট পর লেখা শেষ হলে আমার হাতে কাগজ টা দিল উনি।
জুলিঃ- এটা হয় না আপনি শুধু শুধু আমার জন্য কষ্ট করছেন? আপনি আমার জন্য এত কিছু করছেন কিন্তু আমার জন্য আপনি আপনার আব্বু আম্মুর কাছে অপমানিত হচ্ছেন। আর আপনার ফ্যামিলি আপনাকে মানবে না আর যা হওয়ার নয় তা করে লাভ কি? এর থেকে আমি আজই চলে যাচ্ছি এখান থেকে।
আমিঃ- আপনি পাগল হয়ে গেছেন নতুন শহর এসেছেন আপনি আর এখানকার কিছুই তেমন চেনেন না? আমি জানি আব্বু আম্মু আপনাকে অনেক খারাপ ব্যাবহার অনেক বাজে ভাবে আপনার সাথে কথা বলছে আর তার জন্য আমি আমার আব্বু আম্মু হয়ে আপনার কাছে মাফ চাচ্ছি।
খাতায় কি যেন লিখতে যাবে তার আগেই আমি উনার হাত থেকে খাতাটা কেড়ে নিলাম উনি খাতা দিতে চাচ্ছিলো না আমি এক পর্যায়ে জোর করে কেড়ে নিলাম এখনো কেঁদেই চলছে আমি উনার চোখ এর পানি মুছে তারপর বললাম..
আমিঃ- দেখুন রাগের মাথায় কোন সিধান্ত নিবেন না আপনাকে যখন আমি এখানে নিয়ে আসছি তখন সব দায়িত্ব আমার। আমার উপর একটু আস্থা রাখুন সব ঠিক হয়ে যাবে এখন চুপচাপ এখানে বসুন আমি খাবার নিয়ে আসছি।
এই বলে আমি শার্ট টা পড়ে রুমের দরজা খুলে বাইরে থেকে লক করে দিলাম যাতে আব্বু আম্মু ভিতরে ডুকে জুলিকে অপমান করতে না পারে। যেই বের
হব ঠিক তখনি আব্বু পেছন থেকে ডাক দিল।
আমি না শুনার ভান করে চলে গেলাম। বাইরে থেকে সকালের নাস্তা কিনে বাসায় এসে কারো ও কোন কথার উত্তর না দিয়ে সড়াসড়ি রুমে চলে আসলাম। এসে দেখি জুলি বেলকুনিতে দাড়িয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। আমি উনার হাত ধরে উনাকে ভেতরে নিয়ে এসে উনাকে খায়িয়ে দিলাম। প্রথমে খেতে চাচ্ছিলো না পরবর্তী আমার চাপের মুখে খেতে বাধ্য হলো।
আমিঃ- আচ্ছা আপনার হাত তো কেটে গিয়েছিলো তা এখন হাতে ব্যাথার কি অবস্থা কমেছে?
(জুলি মাথা নেড়ে বলল কমেছে।)
আমিঃ- জানি আপনার মন মেজাজ এখন অনেক খারাপ। একটু ওয়েট আমি এখনি মন ভালো করে দিচ্ছি।
জুলি ইশারা করে বলল কিভাবে ?
আমিঃ- ওয়েট বলে কম্পিউটার অন করে একটা ফানি মুভি অন করে বললাম মাথা থেকে চিন্তা বাদ দিয়ে এই মুভিটা দেখুন আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।
জুলিঃ- আর যদি ভালো না হয় তখন কি করবেন হুম (খাতায় লিখে)
আমিঃ- হুম তাই তো কি করা যায় আচ্ছা আমি তখন নিজে অভিনয় করে আপনার মন ঠিক করব। কথাটা শুনে জুলি একটু হাসলো কিন্তু আর কোন কথা বলল না।
আমিঃ- আপনি এখানে বসে মুভি দেখুন আমি আসছি। এই রুমের দরজা খুলে বাইরে যাব এমন সময় আব্বু আবার ও ডাক দিল।
আব্বুঃ- তুই কি চাস একটু খুলে বল আর এখানে এসে বস তো রাগারাগি আমার একটু ও ভালো লাগে না। এখানে বসে খুলে বল তুই কি চাস।
আমিঃ- আমি কি চাইব হুম। ছোটবেলা থেকে তোমাদের সব কথায় তো আমি শুনেছি। আর তোমারা তো আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছিলে। এখন আমি বিয়ে করে আনছি আর তোমাদের এখন ঝামেলা হচ্ছে…না।
আম্মুঃ- খুব সাহস বেড়ছে না তোর যে একটা মেয়ের জন্য নিজের আব্বু আম্মুর সাথে রাগারাগি করছিস? একটা বোবা মেয়েকে বউ হিসেবে পরিচয় দিতে পারবি?
আমিঃ- না পারার কি আছে বলবা আম্মু বোবা রা কি মানুষ না। তুমি বলবা আম্মু জুলি কোন দিক থেকে খারাপ? তোমরা সবাই নিজেদের স্বার্থ নিয়ে থাকো সবাই চেহারা দেখেই মুগ্ধ যেই শুনলে মেয়েটা বোবা তখন থেকেই তোমারা তোমাদের আসল পরিচয় দিলে।
আব্বুঃ- তার মানে তুই ওকে ছাড়বি না তাইতো। আমার পক্ষে ওই মেয়েটাকে আমার ছেলের বউ হিসেবে পরিচয় দিতে পারব না।
আমিঃ- আমার পক্ষে জুলিকে ত্যাগ করা অসম্ভব। এখন তোমরা যদি আমাদের না মানো ঠিক আছে আমি কালই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।
এই বলে আমি রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার আগে আম্মু আব্বু কে উদ্দেশ্য করে বললাম বাইক কিনে না দেওয়ার জন্য একবার কিন্তু আমাকে হারাচ্ছিলে এবার আমাকে সত্যিই হারাবা। এর পর আমি সোজা বাইরে চলে আসলাম আপু কে
ফোন দিলাম। প্রথম বার রিং হলো কিন্তু ধরল না পরবর্তী কল দেওয়ার সাথে সাথে আপু ফোন ধরলো..
আমিঃ- হ্যালো আপু তুই কোথায় এখন? আর তুই কি ফ্রি আছিস তোর সাথে অনেক কথা আছে?
আপুঃ- অফিস শেষ করে বাসার দিকে আসছি কিন্তু কেন রে? কি হয়েছে?
আমিঃ- আচ্ছা শোন বাসায় যাওয়া লাগবে না তোর। তুই কোথায় এখন বল আমি আসছি এসে তোকে সব বলছি?
একটু পর আপু একটা ঠিকানা দিল আমি তাড়াতাড়ি ওখানে চলে গেলাম। আমাকে দেখে আপু বলল..
আপুঃ- কিরে তোকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? আর একদম তো ভিজে গেছিস তুই এখানে এসে বস আর বল কি হয়েছে? আর ওই দিকে সব ঠিক আছে তো?
আমিঃ- কি আর ঠিক থাকবে আজ শুক্রবার তুই অফিসে কেন আসলি সেটা বল।
আপুঃ- আরে আজকে একটা মিটিং ছিলো তাই কিন্তু কেন?
আমিঃ- তা আমাকে একবার বলে যাবি না তুই। তোর এই ভুলের জন্য আব্বু আম্মু সব জেনে গেছে।
আপুঃ- কিভাবে জানলো আর আজ তো আব্বু আম্মু নানু বাড়ি যাওয়ার কথা।
আমিঃ- কিভাবে আবার সকালে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন দরজায় কে যেন নক করছিলো জুলি ভাবল হয়তো তুই সকালের নাস্তা নিয়ে আসছিস তখন যেই দরজা খুলল তখন থেকেই শুরু হলো ঝগড়া।
আপুঃ- তা আব্বু আম্মু কি বলে?
আমিঃ- আরে প্রথমে জুলি কে দেখে অনেক পছন্দ হয়েছে তারপর যখন শুনল ও বোবা তখন থেকে শুরু হলো ঝামেলা বোবা মেয়েকে ওনারা বউ হিসাবে পরিচয় দিতে পারবে না।
আপুঃ- কি বলিস! তাহলে তো এতক্ষন ধরে বাসায় অনেক ঝামেলা হয়েছে আচ্ছা বাসায় চল আগে।
আমিঃ- হুম চল তুই গিয়ে কিছু একটা কর আব্বু আম্মুকে ম্যানেজ কর।
আমি আর আপু গাড়িতে বসে। তখন আপু বলল..
আপুঃ- আচ্ছা একটা অচেনা মেয়ের জন্য তুই কেন এত ভাবছিস বলবি আমাকে এর আগে তো আমার বান্ধবির ছোট বোনরা তোর পিছন পিছন ঘুরতো কই তাদের সাথে তো কোনদিন রিলেশন করলি না আর আজ এই মেয়েটার জন্য এত টেনশন তোর?
আমিঃ- আমিও জানি কেন ওর জন্য এত মায়া হয় আমার কিন্তু ওকে আমি ফ্রেন্ড ভাবি।
আপুঃ- সত্যি কি ফ্রেন্ড নাকি আরও কাছের কেউ হুম।
আমিঃ- তোর শুধু ফাইজলামি। নাম গাড়ি থেকে বাসায় চলে আসছি।
একটু পর কলিং বেল বাজাতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিল আপু সোজা গিয়ে ওর রুমে চলে গেল আর আমি এই দিকে আমার রুমে চলে আসলাম। এসে দেখি জুলি এখনো মুভি দেখে যাচ্ছে।
আমিঃ- কি ব্যাপার আপনার মন ভালো হয়েছে এখন?
মাথা নেড়ে বলল হুম।
আমিঃ- আচ্ছা আপনি সাথে করে সব কাগজ নিয়ে এসেছেন তো তাহলে এই বুধবার আমি আপনাকে এখানকার একটা বেসরকারি ভার্সিটিতে ভর্তি করব?
জুলি ইশারা দিয়ে বলল হুম এনেছি কিন্তু আমার একটা কাজ খুব দরকার ছিল?
আমিঃ- দেখুন আমি আপনাকে লাস্ট বার বলছি বার বার আমার সামনে কাজের কথা বলবেন না আমার ফ্রেন্ড যখন সব দায়িত্ব আমিই নিব?(একটু উচ্চ স্বরে)
এই বলে উনার দিকে তাকালাম দেখি চোখ দুটা ছলছল করছে। আপনি কাঁদছেন কেন? আমার কথায় কষ্ট পেয়েছেন? আচ্ছা বাবা সরি আমার ভুল হয়ে গেছে আর এইভাবে বলব না আর শুনুন ৩টা বাজতে যাচ্ছে আপনি বসুন আমি খাবার নিয়ে আসছি। একটু পর আমি দরজা খুলে বাইরে যাব ঠিক তখনি আম্মু বলল..
আম্মুঃ- কিরে কোথায় যাচ্ছিস রে তুই?
আমিঃ- বাইরে থেকে খাবার আনতে যাচ্ছি জুলির জন্য।
আব্বুঃ- একটা চড় মেড়ে না দাতঁ ফালাই দিব খুব বড় হয়ে গেছো না। যাও বউমা কে ডেকে নিয়ে আসো।
আব্বুর কথা শুনে সত্যি আমার খুশিতে চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে গেল তাহলে আপু কি আম্মু আব্বু কে ম্যানেজ করছে। আমি আর কিছু না বলে আব্বুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
আব্বুঃ- থাক হয়েছে এখন আর এত আবেগ দেখতে হবে না ওকে নিয়ে খেতে আসো।
আমিঃ- হুম আব্বু।
.
.
চলবে……………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here