আমার একটাই তুমি . Part – 1

0
1619

গল্প – আমার একটাই তুমি
.
Part – 1
.
writer – ArFin_$uMon
.
.
অফিস থেকে বাসায় আসার পথে গাড়ির সামনে হঠাৎ একটা মেয়ে এসে দাড়ালো কোন মতে আমি ব্রেক কসে গাড়িটা দাড় করালাম না হলে আজকে একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেত। আমার মেজাজ টা পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেল । চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কোন বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছে কিন্তু মেয়েটির মুখ ফ্যাঁকাশে হয়ে গেছে চোখ মুখে ভয়ের ছাপ আমি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটার কাছে গিয়ে বললাম..
আমিঃ- এই চোখ কই থাকে আপনার ?এইভাবে রাস্তার মধ্যে কেউ দৌঁড়ায় ? আরে হ্যালো ম্যাডাম আপনি কি বোবা নাকি ? আমি যে ৫ মিনিট ধরে এত গুলো প্রশ্ন করছি আপনি শুধু মাথা নাড়ছেন।
মেয়েটাঃ- এখনো নিশ্চুপ ।
আমিঃ- যত সব পাগলের দল ।
এইবলে আমি গাড়িতে উঠতে যাবো ঠিক তখনই পিছন থেকে আমার হাত টেনে ধরল। আমি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ওই মেয়েটা হাত দিয়ে কি যেন ইশারা করছে আমি ওর আঙ্গুল এর দিকে তাকিয়ে দেখি কয়েকটা বখাটে ছেলে এই দিকে আসছে।
আমার আর বুঝতে বাকি নেই মেয়েটা কেন এত ভয় পাচ্ছে কিন্তু এই অবস্থায় ওকে একা পেলে রাখা ঠিক না আর আমি তো কোন হিরো না যে বখাটেদের সাথে মারামারি করব এর থেকে ভালো হয় মেয়েটার কাছ থেকে ওর বাসার এড্রেস জেনে ওকে বাসায় দিয়ে আসি কিন্তু মেয়েটা তো কোন কথাই বলছে না এই সব ভাবতে ভাবতে দেখি অসভ্য ছেলেগুলো অনেকটা কাছে এসে গেছে। আমি আর দেরি না মেয়েটার হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভ করা শুরু করলাম ।
কি আজব মেয়েরে বাবা একটা অচেনা ছেলের সাথে কোন সন্দেহ ছাড়া চলে যাচ্ছে আর বোবার মতো বসে আছে ইচ্ছা করছে ঠাস্ করে চড় মারতে কিন্তু মেয়ে বলে আর কিছু বললাম না। তারপর বললাম..
আমিঃ- আপনার বাসা কোথায়? কিন্তু
মেয়েটাঃ- এবারও চুপ করে আছে।
একটু পর আমার মোবাইল এ কে যেন কল করছে। ফোন হাতে নিয়ে দেখি আপু আমি ফোনটা রিসিভ করলাম।
আপুঃ- হ্যালো সুমন কোথায় তুই? এক টা বাজতে যাচ্ছে? তাড়াতাড়ি বাসায় আয় তোর সাথে অনেক কথা আছে।
আমিঃ- আপু কিছু শুনতে পারছি না আর একটা ঝামেলায় আছি।
কিন্তু তার আগেই আপু ফোনটা কেটে দিল আর এই দিকে মেয়েটা নিশ্চিন্তে বসে আছে। আমার এবার সত্যি মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে বার বার এত করে জিজ্ঞাস করছি তাও কিছু বলছে না। অনেক হয়েছে আর না এবার ওকে কথা বলতেই হবে।
আমিঃ- আচ্ছা আপনার সমস্যা টা কি বলবেন একটু? আপনাকে আমি চিনি না জানি না আপনি কোন কথাও বলছেন না এত করে বাসার ঠিকানা জানতে চাচ্ছি কিছুই বলছেন না তাহলে আমি কিভাবে বাসাই পৌঁছে দিব বলুন।
এরপর হাত দিয়ে আমাকে থামতে বলল তারপর ওর ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে লিখতে লাগল। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না মনে মনে সন্দেহ হচ্ছে মেয়েটা কি বোবা? আমি আর কোন কথা না বলে ড্রাইভ করতে লাগলাম। দশ মিনিট পর আমার হাতে একটা কাগজ দিল। আমি গাড়িটা একটু সাইড করে দাড় করালাম তারপর কাগজ পড়তে লাগলাম।
আস্সালামু আলাইকুম….
জানি আপনাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি কিন্তু বিশ্বাস করুন এতে আমার কোন হাত নেই সবই আমার নিয়তির দোষ আর আপনি মনে মনে যা যা ভাবছেন তা আপনি ঠিকই ধরেছেন আমি একটা বোবা মেয়ে। আমার নাম সালমা আক্তার জুলি। পাঁচ বছর বয়সে আমার বাবা-মা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে তারপর থেকেই বুজতে পারি বাবা মা না থাকার কষ্ট ।
আমি বড় হয়েছি চাচা-চাচি আর আমার নানু বাড়ি থেকে। প্রথম প্রথম চাচা চাচি অনেক খারাপ ব্যাবহার করত তারপর মামাদের ওখানে আমি চলে যাই মামা মামি আমাকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করছে। কিন্তু সেটাও আর ভাগ্যে হলো না ইন্টার পরীক্ষার পর হঠাৎ একদিন রাতে মামা স্ট্রোক করে মারা যাই।
তারপর মামিও কেমন যেন হয়ে গেল? পুরো পরিবার এর সবকিছু মামির উপর চলে আসে কিন্তু মামি কখনো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি। আমার নিজের কাছে অনেক খারাপ লাগতো একটা বোবা মেয়ে যে সমাজের অনেক বড় বোঝা। হঠাৎ একদিন চাচা চাচি বাসায় আসল এসে অনেক মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তাদের ওখানে নিয়ে আসল কিন্তু এখানে এসে বুঝলাম আসল কাহিনি গ্রামের সবকিছু বিক্রি করে দেবে তাই তো আমাকে এত আদর কারন আব্বু আম্মুর মরে যাওয়ার পর সব কিছু আমার হয়ে গেছে।
তাই আমিও আর কিছু না ভেবে সই করে দিয়ে চাচিদের সাথে ঢাকায় চলে আসি। কিন্তু অনার্স এ ভর্তি হওয়ার পর পর-ই চাচা চাচি বিয়ের জন্য চাপ দেয় আমি বোবা বলে সব ছেলেরা আমাকে না করে দেয়। শেষমেষ এক বয়স্ক ব্যাক্তির সাথে চাচা আমার বিয়ে ঠিক করে। চাচাও টাকার বিনিময়ে জানোয়ার টার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয় কিন্তু আমি পড়ালেখা করতে চায়। তাই আজ বিয়ের রাতে আমি পালিয়ে আসছি।
আমি জানি আপনি অনেক ভালো মানুষ অন্যকেউ হলে এতক্ষনে আমার… সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করত। যেমনটা ওই রাস্তার লোকগুলো ওদের থেকে বাঁচতেই আপনার গাড়ির সামনে এসে পড়লাম। প্লিজ আমাকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিন আমি পড়ালেখা করতে চায়। আমি কারোর বোঝা হতে চাই না। পারলে একটু পানি খাওয়াইয়েন।
কথা গুলো পড়ে অনেকটা খারাপ লাগল আমি মেয়েটার দিকে একবার তাকালাম চোখদুটো দিয়ে অজস্র জল। এই প্রথম কোন মেয়ের জন্য এতটা মায়া হচ্ছে। একটু পর মেয়েটার দিকে একটা পানির বোতল এগিয়ে দিলাম। মেয়েটা একটু পানি খেয়ে আমার দিকে তাকালো এখনো কেঁদেই চলছে।
আমিঃ- আচ্ছা আপনি এইভাবে কাঁদবেন না আমি বুঝতে পারছি আপনি অনেক কষ্টে আছেন প্লিজ কাঁদবেন না দেখি আমি কি করতে পারি?
-মেয়েটা নিজের চোখ এর পানি মুছে এ জানলার দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে ।
আমিঃ- আচ্ছা একটা কথা ছিলো আপনি অভিনয় করতে পারেন? মানে টিভি শো তে অভিনয় নয় আমার আব্বু -আম্মুর সামনে একটু নাটক করতে হবে বলবেন আপনি আমার বউ আর আজ-ই আমরা বিয়ে করছি তাছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। আপনি আমার পর আস্থা রাখতে পারেন আমি আপনার কাছে আসব না আমি এতটা খারাপ না। এবার বলুন আপনি কি রাজি আছেন এই শর্তে?
-মেয়েটা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো । তারপর খাতায় লিখে বলল আপনার ফ্যামিলি থেকে প্রোবলেম হবে না তো? আর আপনার নাম কি?
আমিঃ- না হবে না! আমার ফ্যামিলিকে আমি ম্যানেজ করব আপনি শুধু আমার সাথে তালে মিল দিবেন আর আমার নাম আরফিন সুমন।
এরপর আর মেয়েটা কিছু বলল না একটু পর বাসার সামনে চলে এলাম। খুব ভয় করছে বাসায় ডুকলে কি না কি হবে? তাও ভয়ে ভয়ে উপরে উঠলাম তারপর কলিং বেল টিপ দিতেই আপু এসে দরজা খুলে দিল।
.
.
চলবে……………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here