LOVE❤ part:23+24+25 [ Last ]

0
718

#LOVE❤
part:23+24+25 [ Last ]
Writer:Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
!
#Part_23
👇
৬ মাস কেটে গেছে
-শোনা তুই বড্ড পাজি হয়ে ছিস কিন্তু ।মাকে এভাবে কিক মারছিস খুব ভাল লাগছে না।একবার তোকে পাই তখন দেখিস তোকে আমি কি করি।কি হলো ভয় পেলি নাকি।আরে তোকে মারবো নাকি আমি।তোকে কি আমি মারতে পারি বল।তুই তো আমার সব রে।তাড়াতাড়ি আয় তো আমার কোল আলো করে।তোকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে ।কিন্তু তোকে কি আদৌ দেখে যেতে পারবো
দিশা ঘরে এসে দেখে রিদিতা পেটে হাত দিয়ে কথা বলছে
-কি রে পুচকু র সাথে কথা বলছিস নিশ্চয়ই
-হ্যাঁ রে।ভারি দুষ্টু হয়ে ছে এখন তো ঘন ঘন কিক মারে।পেটের মধ্যে ফুটবল খেলে
-আমার তো আর তর সইছে না।আর এক সপ্তাহ পর ই তোর ডেলিভারি ।পুচকু কে দেখবো
-হ্যাঁ আমার ও তর সইছে না
আজ রিদিতা র প্রেগন্যান্সি র নয় মাস রানিং।আবেগ এর অফিস থেকে চলে আসার সময় তিন মাস ছিলো ।আজ নয় মাসে পড়লো
কিন্তু এই ছয় মাসে আবেগ খুঁজে পায় নি রিদিতা কে।ঢাকাতে যতো আত্মীয় স্বজন আছে সবার কাছে গেছে।সিলেট এ এসে সেই বাড়িতে গেছিল যেখানে রিদিতা থাকতো।সেখানে গিয়ে আবেগ জানতে পারে যে ঐ বাড়ির মালিক রিদিতা কে মিথ্যা বলে তাড়িয়ে দিয়েছে।সেদিন ই ঐ বাড়িতে গিয়ে বাড়ি র মালিক কে সবার সামনে এনে মারতে মারতে সব সত্যি বলায়।ঐ মালিক কে এলাকা ছাড়া করে
-আশফি আমি কি পাব না রিদিতা কে।আমি কি করবো আশফি।ছয় মাস ধরে খুঁজে চলেছি কোন ক্লু ও পেলাম না
-ধৈর্য্য ধরে আবেগ।মনে রাখিস রিদিতা ভাবি কে তুই নিজের দোষেই হারিয়ে ছিস ।আর ভাবি ও চায় না তোর কাছে ফিরতে।দেখলি এতো দিনে ও ভাবির ফোন নাম্বার টাই অন পেলাম না।এক বার যদি ফোনটা অন করতো তাহলে অন্তত লোকেশন ট্রাক করে পৌছে যেতাম আমরা
-হুম।আমি একটু বেরোচ্ছি
-কোথায় যাচ্ছিস তুই
-অফিসে রিদিতা যেদিন অজ্ঞান হয়ে পরে সেদিন যে ডাক্তার এর কাছে গেছিলাম সে বলেছিল,ওর নাকি লো প্রেসার ।এ মিথ্যা কেন বলেছিল এটাই জানতে যাব
আবেগ আশফি আবেগের বাবা তিন জনেই যেন পরিবার হয়ে উঠেছে।তিনজনে সিলেটে।ঢাকাতে কোন জায়গা বাদ নেই যেখানে রিদিতা কে খোঁজে নি তারা।আবেগ চেয়েছিল পেপারে বিজ্ঞাপন দিতে।কিন্তু আশফি নিষেধ করে।কারণ রিদিতা নিজের ইচ্ছে ই চলে গেছে।নিজের ইচ্ছে তে যে চলে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া এতো সহজ নয়
-ডক্টর কেন আমাকে বলেছিলেন যে ওর লো প্রেসার
-সরি মি,চৌধুরি ।কথাটা আমি না আপনার ওয়াইফ ই বলেছিলেন ।আমিতো সত্যি টাই বলতে চেয়েছিলাম
-কি সত্যি
-আপনার ওয়াইফ এর প্রেগন্যান্সি তে ঝুঁকি আছে।ওনার শরীরে ব্লাড এর পরিমাণ প্রয়োজন এর তুলনায় কম।আরো কিছু সমস্যা আছে।আমি ওনাকে বলেছিলাম এখন এবরশন করে এক দুবছর পরে কনসিভ করতে।কারণ ডেলিভারির সময় ওনার লাইফ রিস্ক হতে পারে।কিন্তু উনি আমার কথা শোনেন নি।উনি আপনাকে বলতে নিষেধ করেন।আর তারপর,,
লাইফ রিস্ক কথাটা শুনে আবেগের বুকটা আরো ধক করে উঠলো
-আচ্ছা ডক্টর রিদিতা র শরীর তখন কেমন ছিল।মানে এই সমস্যা ছাড়া
-এই সমস্যা ছাড়া উনি ভালোই ছিলেন।তা ওনার এখন কি অবস্থা ।কোথায় চেকাপ করাচ্ছেন ।ওনার তো ডেলিভারির সময় হয়ে এলো।কেমন আছেন উনি
আবেগ কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলো।ডেলিভারির কথা শুনে আবেগের চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরলো
-আমাদের ভালোবাসার জন্য লাইফ রিস্ক ও নিলে রিদি।আর কিছুদিন পর আমাদের ভালোবাসা পৃথিবীতে আসতে চলেছে।আর এই সময়ে তোমার পাশে থাকতে পারলাম না।আল্লাহ্ আর কতো শাস্তি দেবে আমাকে।এবার তো পথ দেখাও
ঐদিকে
-এই রিদি তোর সেই দারোয়ান চাচা তো আর তোর খোঁজ নিলো না।এতোদিন তো খোঁজ নিতো ।হঠাত্ যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো
-আরে না আমিই তো সিম ফেলে দিয়ে ছি।উনি কিভাবে যোগাযোগ করবেন।শেষ বার যখন কথা হয়ে ছিল তখন শুনি চাচি র শরীর ভালো নেই।দিশা তোর ফোনটা নিয়ে আয় তো একটু কল করে দেখি।আমার ডায়েরি তে বোধহয় নাম্বার টা আছে যা নিয়ে আয়
রিদিতা দিশার ফোন দিয়ে দারোয়ান কে ফোন দিলো
-হ্যালো কে বলছেন
-চাচা আমি রিদিতা
-তুমি ।কেমন আছো মা।তোমার নাম্বার এ এতো দিন কল দি বন্ধ পাই
-চাচা ভালো আছি।তুমি আর চাচী কেমন আছো
-এই তো ভালো।মা তুমি কোথায় আছো এখন
-এই তো চাচা সিলেটে আমার দিলরুবা আন্টি,,,,,,হ্যালো হ্যালো
ফোন কেটে গেল
-কি রে কি হলো
-আরে জানি না ফোন কেটে গেল।আবার সংযোগ দিচ্ছি তাও বন্ধ
-আচ্ছা পরে কথা বলিস
ঐদিকে দারোয়ান রহিম এর তো মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে
-আল্লাহ্ মোবাইল টা বন্ধ হওয়ার টাইম পেলো না।এখনি চার্জ শেষ হতে হলো।আমি গিয়ে বড় সাহেব কে বলি।যাই হোক এ দিয়ে যদি রিদিতা মা র কাছে যাওয়া যায়
দারোয়ান গিয়ে আবেগের বাবাকে সব জানায়।তিনি সাথে সাথে আবেগকে কল দেন
-হ্যালো আবেগ
-হ্যাঁ বাবা বলো।আবেগ রিদিতা আজ রহিম কে ফোন করেছিল
তারপর আবেগের বাবা সব খুলে বললেন আবেগকে
-বাবা আর দেরী করা ঠিক হবে না।আমি রিদিতা র মাকে ফোন দিচ্ছি ওনারাই ঠিকানা জানবেন
আবেগ রিদিতার মাকে ফোন দিল
-হ্যালো আবেগ বলো।রিদিতা র কোন খোজ পেয়েছো
-দিলরুবা কে মা
-দিলরুবা কেন
-শিগগিরই বলুন।রিদিতা ওনার কাছে আছে।সিলেট এ
-আরে ও তো আমার ছোট বোন।সিলেট এ এই গ্রামে,,,,,,,, থাকে ও।আমার তো মনে ই ছিল না ওর কথা।ওর কাছে রিদিতা যেতে পারে
-তাহলে দেরী নয় আপনি বাবা নিশিতা আপু সবাই চলে আসুন আজ রাতেই যাব আমরা ওখানে
নিশিতা ওর হাসবেন্ড রিদিতা র মা বাবা আবেগের বাবা সবাই ঢাকা থেকে সিলেট এ চলে গেলেন আবেগ আশফির কাছে
-আবেগ চলো ভাই।আর দেরী নয় রিদি র কাছে যেতে হবে
-হ্যাঁ চলুন সবাই
আবেগ ও সবাই বেরোবে হঠাত্ কোথা থেকে লাবনি এসে হাজির হয়
-আবেগ
-এখানে কেনো এসেছেন আপনি
-আমি দারোয়ান এর কাছে গিয়ে কষ্ট এ খবর পেলাম তোমরা না কি রিদিতা র খোঁজ পেয়েছো।আমি তোমাদের সাথে যাব আবেগ।আমি অনেক পাপ করেছি জীবনে।ওর কাছ থেকে ক্ষমা চাইবো ।এক দিন এর জন্য হলেও তো মা বলে আমাকে ডেকে ছিস ।সেই দাবি নিয়ে বলছি আমাকে নিয়ে চল।আমি ক্ষমা চেয়ে চিরদিনের মতো সবার থেকে দূরে চলে যাব
আবেগ কিছু বলতে পারলো না।এক সময় তো এই মহিলা কে ভীষণ ভালোবাসতো।মা বলে ডেকেছিল
-চলুন।কিন্তু রিদিতা র কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না
-আচ্ছা
সবাই রওনা হলো
ভোরের আলো ফুটে গেছে।রিদিতা নামাজ সেরে সেই নীল পানজাবি টা নিয়ে বসেছে।বৃষ্টি র সেই রাতে আবেগ যে ওটা পরেছিল রিদিতা সেটা আর ধুয়ে দেয় নি।আবেগের এর গন্ধ লেগে আছে যে।বালিশের নিচে থেকে ওর কাছে থাকা আবেগের শেষ ছবি টা নিয়ে বুকে জরিয়ে ধরলো।দিশা এলো ঘরে
-প্রতিদিন সকালে এ কেনো ঐ লোকটার মুখ দেখিস বলতো
-জানি না।বড্ড ভালোবাসি যে
-কেন বলেছিলি তো ঘৃনা করবি
-পারিনা রে।যাকে ভালোবাসা যায় তাকে কি ঘৃনা করা সম্ভব
-নে খাবি আয়
-আসছি
রিদিতা খেয়ে ঘরের ভেতর আসতে আসতে পায়চারি করছে
-রিদি বস মা।এতো হাটিস না
-আন্টি আর বসতে ভাল লাগছে না।একটু হাটি।আআআহ
-এই কি হলো
-কি আর হবে।জোরে কিক মেরেছে।যা দুষ্টু হয়ে ছে না
-তা যা বলেছিস ।তোকে খালি কিক দেয়।দেখিস ও খুব দুষ্টু হবে
-আমার ও মনে হয়
আবেগ আর সবাই এসে গাড়ি থেকে নামলো ।দেখা যাচ্ছে এক তলা একটা টিনসেটের বাড়ি ।সবাই এগোচ্ছে দরজার দিকে।আবেগের রিদ স্পন্দন বেরেই যাচ্ছে ।সে চলে এসেছে রিদিতা র কাছে
হঠাত্ দরজায় কেউ বারি দিল
-দিশা দেখতো কে এলো
-আন্টি আমি দেখছি
-তুই বস।তোকে বলেছি না এতো হাঁটা হাটি করবি না।দিশা দেখ
-আসি মা
দিশা দরজা খুলে ভুত দেখার মতো তাকিয়ে আছে।দিশা দরজা থেকে সরে এসে রিদিতা র পাশে দাঁড়ালো ।দিলরুবা ও এগিয়ে এসেছে
-কি রে দিশা কে এসেছে
-কে এসেছে দিশা বল তো
দিশা সামনে তাকাতে ইশারা করলো
আসতে আসতে পুরো ঘর মানুষে ভরে গেল।নিশিতা নিশিতা র হাসবেন্ড রিদিতা র মা বাবা আবেগের বাবা আশফি সবাই ঘরে ঢুকলো।সবার শেষে ঢুকলো আবেগ।সবার চোখে পানি চিক চিক করছে
আবেগের ভেতরে ঢুকে রিদিতা কে দেখে কষ্ট টা আরো বেড়ে গেল।রিদিতা পেট ফুলে অনেক বড় হয়েছে।মেক্সি পরেছে ওরনা দিয়ে আবার পেটটা একটু ঢাকা।রিদিতা কে আর আগের মতো লাগছে না।এ পুরো অন্য রিদিতা ।একজন মা
সবার চোখে পানি।হঠাত্ নিশিতা রিদিতা র দিকে এগিয়ে গেল
রিদিতা দিশা দিশা র মা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।এতো বড় ধাক্কা সাত সকালে কেউ হজম করতে পারেনি

#Part_24
👇
নিশিতা কাঁদতে কাঁদতে রিদিতা কে গিয়ে জরিয়ে ধরলো।রিদিতা ও নিশিতা কে
-আমি কি মরে গেছিলাম বোন।তুই আমার কাছে কেন যাস নি সেদিন।মা বাবা তোকে যাই বলুক আমি কি কখনো তোকে ফেলেছি।তুই একা এই অবস্থায় কিভাবে,,,,,,কেনো আমার কাছে যাসনি তুই
নিশিতা র হাসবেন্ড ও এগিয়ে এলো
-রিদিতা আমি কি কখনো তোমাকে নিজের বোন ছাড়া আর কিছু ভেবেছি।তুমি কেন আমাদের কাছে যাও নি।আমরা দেখতাম তোমাকে ।কেনো আমাদের পর করে দিলে তুমি
-আমি পর করিনি দুলাভাই ।আমি জানতাম মা বাবা আমাকে ফেললেও নিশিতা আপু তুমি আমাকে ফেলতে না।কিন্তু কি বলোতো মা বলেছিল তোমাদের সাথে যোগাযোগ না করতে তাই আমিও তোমাদের সংসার এ বাধা হতে চাই নি
আশফি এগিয়ে এলো রিদিতা র দিকে
-নিশিতা আপু আপনি একটু সরুন
নিশিতা সরে গেলে আশফি রিদিতা র পায়ের কাছে বসে পরে
-আমাকে ক্ষমা করে দেও রিদিতা ভাবি।আমি জানি আমার পাপের কোন ক্ষমা নেই।কি করবো।তুমি যেমন তোমার বাচ্চা র জন্য লড়াই করেছো আমি ও আমার বাচ্চা র জন্য সেদিন ঐ নাটক করতে বাধ্য হই
-তোমার বাচ্চা
-হ্যাঁ ভাবী আমার বাচ্চা
আশফি রিদিতা কে সব খুলে বলে
-ভাবি মাফ করে দেও আমাকে।আমি যদি জানতাম যে এসব নোভা র কারসাজি আমি কোনদিন তোমার আর আবেগের মাঝে আসতাম না
-ওঠো আশফি ভাই।তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।আর ক্ষমা তোমাকে অনেক আগেই করে দিয়েছি।দোষ তোমার নয়।দোষ আমার ।আমি অন্ধ ভাবে ভালোবেসেছি বিশ্বাস করেছি।কিন্তু আমাকে কেউ বিশ্বাস করেনি।আর সেজন্য ই আজ ,,,থাক আর বললাম না
রিদিতার মা বাবা এগিয়ে এসে রিদিতা কে জরিয়ে ধরতে গেলে রিদিতা বাধা দেয়
-খবর দার আমার কাছে আসবেন না আপনারা
-রিদিতা ।নিজের মা বাবা কে এভাবে বলতে পারলি
-কিসের মা বাবা ।আমার মা বাবা তো সেদিন ই মরে গেছে যেদিন রাতের অন্ধকারে নিজের অসহায় গর্ভ বতী মেয়ে কে তাড়িয়ে দিয়ে ছিল।আমার মা বাবা সেদিন ই মরে গেছে যেদিন আমি জন্মেছিলাম।তার পর থেকে প্রতি মূহুর্তে আমার ওপর অবহেলা ।মানুষ সৎ ছেলে মেয়ে কেও এতো অবহেলা করে না যতোটা আমি পেয়েছি।আমার কোন মা বাবা নেই
-রিদিতা মাফ করে দে মা ।তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি আমরা
-কিসের অন্যায়।কোন অন্যায় না।আপনাদের তো একটাই মেয়ে নিশিতা ।আপনাদের আর কোন মেয়ে নেই।থাকলেও সে মরে গেছে ।এটাই তো বলেছিলেন আপনি মিসেস দিলশাদারা
-রিদিতা নিজের মা কে এভাবে কষ্ট দিস না।দোহাই তোর মাফ করে।কোন অজানা জায়গায় এসেছিস তুই।ফিরে চল মা
-কিসের মা।বললাম না আমার মা বাবা নেই।শোনেন নি আপনি।আর অজানা জায়গায় ।অজানা জায়গায় তো এতো বছর ছিলাম ।এখন আছি জানা জায়গায় ।আমার আপনজনের কাছে।যারা আমাকে ফেলতে পারে নি
দিশা র মা এসে রিদিতা কে ধরলো
-মা এতো হাইপার হোস না।তোর শরীর এমনিতেই ভালো নেই
-কি করবো আন্টি ।একটু শান্তি তে ছিলাম ।সেটা ও এদের সহ্য হলো না ।চলেই তো এসেছি।তোমাদের কিছু তো নিয়ে আসিনি।বেরিয়ে যাও সব।বেরিয়ে যাও।আন্টি ওদের যেতে বলো
-তোর আন্টি বললেই আমি যাব নাকি।ও আমাকে আটকানোর কে।আমার মেয়ে কে আমি নিয়ে যাব
-খবর দার।আমার আন্টি র নামে একটা বাজে কথা বলবেন না আপনি।নিজের বোনের সাথে যে এতো জঘন্য কাজ করতে পারে নিজের মেয়ে র সাথে এমন করতে পারে তার কাছে কখনো যাব না
দিশা র মা ও মুখ খুলল
-ওরা বললেই আমি তোকে দেব নাকি।তুই আমার মেয়ে ।আর দিলশাদারা কিসের এতো অধিকার দেখাস তুই।কোথায় ছিল এতো মায়ের দরদ যখন তোর মেয়ে রাস্তায় ঘুরেছিল ।বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে।ও আমার মেয়ে ।আমার যদি ভিক্ষা করে ও ওকে খাওয়া তে হয় তবে তাই খাওয়া বো তবুও ওকে কারোর কাছে যেতে দেব না
আবেগের বাবা রিদিতা র দিকে এগিয়ে এলেন
-রিদিতা মা।ক্ষমা করে দে আমাকে।আমি সেদিন লাবনি র কথা শুনে,,,,,,,
-না বাবা ।আপনার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।নিজের বাবা র থেকেও ওতটা ভালোবাসা পাই নি যতোটা আপনি দিয়ে ছেন ।ঐরকম অবস্থায় নিজের বাড়ি র বৌকে দেখলে যে কেউ ঐ সিদ্ধান্ত নেবে।আপনার কোন দোষ নেই বাবা ।ভুল ছিল আমার ভালোবাসায়।ক্ষমা চেয়ে আমাকে ছোট করবেন না
এবার সবার শেষে আসলো রিদিতা র সবচেয়ে কাছের মানুষ টি।আবেগ।চোখের পানিতে একাকার হয়ে চলে গেল রিদিতা র কাছে
-রিদিইই
আবেগের ডাক শুনে রিদিতা র বুকের হাহাকার বেরে গেল।আবেগের দিকে তাকালো না রিদিতা
-দিশা আমাকে একটু ঘরে দিয়ে আয়।তাঁর পর এতো মেহমান এসেছে।খালি মুখে তো বিদায় দেওয়া যায় না।কিছু মুখে দিয়ে মেহমান বিদায় দে
বলে রিদিতা ঘুরতে যাবে তার আগে আবেগ গিয়ে দুহাত দিয়ে রিদিতা কে জরিয়ে ধরলো
-রিদি আমার সাথে কথা বলবে না
-,,,,,,,,,
-এই রিদি তোমার আবেগের সাথে কথা বলবে না
-,,,,,,,,
না চাইতেও রিদিতা র চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরলো।এতোদিন মনে মনে একবার হলেও চাইতো অপেক্ষা করতো প্রতীক্ষা করতো যে আবেগ আসবে।কিন্তু ঐ যে অভিমান ।অভিমান বাধা হয়ে দাঁড়ায়
-এই রিদি কথা বলো না আমার সাথে।আমি যে মরে যাচ্ছি।তুমি কথা বলো না আমার সাথে।এই রিদি
-,,,,,,,,,
-এই রিদি একবার কথা বলো আর অভিমান করে থেকো না।আমি যে তোমার অভিমান মানতে পারছি না।আমার বুক ফেটে যাচ্ছে
-ছাড়ুন আমাকে
-রিদি আমাকে ক্ষমা করে দেও।আমি অনেক বড় ভুল করেছি।ক্ষমা করে দেও
-ছাড়ুন আমাকে।আপনি কোন ভুল করেন নি।ভুল আমি করেছি।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমার জন্য আপনার জীবন নষ্ট হয়েছে
-রিদি প্লিজ ভুলে যাও সব।ফিরে চলো।আমরা আবার ভালোবেসে ঘর বাধবো ।আমি তুমি আর আমাদের সন্তান কে নিয়ে
-ভুলতে চাইলেই কি সব ভোলা যায় আবেগ চৌধুরি ।পারবেন আমার জীবনের ঐ কষ্ট এর দিন গুলো মুচে দিতে ।পারবেন আমার হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিতে।পারবেন আমার সাজানো সংসার ফিরিয়ে দিতে।যদি পারেন তা হলে বলেন আমি সব ভুলে যাব ফিরে যাব
-রিদি আমি জানি এসব পারব না।কিন্তু বাকী জীবন টা তো সাজাতে পারি বলো।ক্ষমা করে দেও আমাকে।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি ।আমি মরে যাব তোমাকে ছাড়া
-ও তাই।ভালোবাসেন।কোথায় ছিল এই ভালোবাসা এতদিন যখন রাতের আধারে কুকুর এর মতো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন
রিদিতা এবার ঐ দিন এর পর থেকে সব ঘটনা খুলে বললো
-বলুন এই ভালোবাসা কোথায় ছিল তখন
-রিদিতা আমি তোমার পায়ে পরছি তুমি ক্ষমা করে দেও আমাকে।ফিরে চলো
-দয়া করে ছারুন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।ছাড়ুন কষ্ট হচ্ছে আমার
আবেগ তাড়াতাড়ি রিদিতা কে ছেড়ে দিল।এই অবস্থায় রিদিতা র কষ্ট হওয়া টা স্বাভাবিক
এমন সময় লাবনি এসে রিদিতা র সামনে দাঁড়ালো
-রিদিতা
-এই মহিলা এখানে কি করছে।আন্টি বের করে দেও একে।তোমরা কেন একে নিয়ে এসেছো।আমার জীবন টা শেষ করে দিয়ে ছে।বের করে দেও এই মহিলা কে
লাবনি গিয়ে আবেগকে সরিয়ে রিদিতা কে জরিয়ে ধরে কান্না তে ভেঙে পরলো
-আমাকে ক্ষমা করে দেও রিদিতা ।তুমি ক্ষমা না করলে মরেও শান্তি পাব না
-ছাড়ুন আমাকে
-ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম
বলেই লাবনি ধাক্কা দিয়ে রিদিতা কে ফেলে দিল।ঘটনা তে সবাই অবাক
-আআআআআআআআআআ
-রিদিতা আআআ আ
অট্টহাসিতে ফেটে পরলো লাবনি
-ভাবলি কি করে ক্ষমা চাইবো তোর কাছে।আমি এসেছি আমার মেয়ে র প্রতিশোধ নিতে।তোর জন্য আমার মেয়ে জেলে।এবার তোর বাচ্চা ও মরবে।হা হা
ফ্লোর এ রক্ত এ ভেসে গেল।আবেগ রিদিতা কে গিয়ে ধরলো।ঘর জুড়ে রিদিতা র আর্তনাদ
-আআআআআআআ আল্লাহ্ হহহহ

#Part_25 [ Last ]
👇
আশফিইইই গাড়ি বের কর
আবেগ রিদিতা কে কোলে তুলে নিল
-আআআআ আবেগগ আমার বাচ্চা
-কিছু হবে না রিদি কিছু হবে না
আবেগ রিদিতা কে নিয়ে গাড়ি র পেছন সিটে শুইয়ে দিয়ে রিদিতা র মাথা নিজের কোলে তুলে নিল।আশফি ড্রাইভি করছে।আবেগের বাবা অন্য গাড়ি তে বাকি সবাইকে নিয়ে আসছে।সবার কান্না আরো বেরে যাচ্ছে
-আবেগগ আমার বাচ্চা
-কিছু হবে না রিদি।আমি আছি তো।আমরা এক্খুনি হসপিটাল এ চলে যাব।আশফি সামনে যেখানে হসপিটাল পাস সেখানে যা।দ্রুত গাড়ি চালা
-চালাচ্ছি আবেগ।তুই ভাবীকে দেখ
আশফি একটা কমিউনিটি ক্লিনিক এ গাড়ি থামালো।আবেগের বাবা ও ফলো করে সবাইকে নিয়ে চলে এসেছে
-আশফি তুই গিয়ে ডক্টর রকে দেখ।আমি রিদি কে নিয়ে আসছি
আবেগ রিদিতা কে কোলে তুলে হসপিটাল এর ভেতর চলে গেল
-আবেগ আমার #LOVE❤ এর কিছু হবে না তো ।আবেগ ওর কিছু হলে আমি বাচবো না
-কিছু হবে না রিদি।তুমি শান্ত হও
আশফি গিয়ে স্ট্রেচার নিয়ে এলো।ডক্টর ও এলেন
-ওহ নো।ওনার এই অবস্থা কি করে হলো।সিস্টার ওটি রেডি করুন এক্খুনি সিজারিং করতে হবে
রিদিতা কে ওটি তে নিয়ে যাবে
-আবেগ পানির তেষ্টা পেয়েছে ।আমি পানি খাব আবেগ
-দাঁড়াও দেখছি
-না মি,চৌধুরি ।ওনাকে এখন অপারেশন করতে হবে।কিছু খেতে দেওয়া যাবে না
-কিন্তু ডক্টর
-সরি মি,চৌধুরি
রিদিতা কে ওটি তে নিয়ে যাচ্ছে আবেগ রিদিতার হাত ছারছে না।মনে হচ্ছে যেন চিরদিনের মতো চলে যাবে রিদিতা হাত ছেড়ে দিল।ওটির দরজা বন্ধ হয়ে গেল
কিছুক্ষণ পর ডক্টর বেরিয়ে এলেন
-মি,চৌধুরি
-ডক্টর কি হয়েছে আমার রিদিতা,,,,
-মি,চৌধুরি আপনার ওয়াইফ এর কন্ডিশন ভালো না।সব কিছু আল্লাহ্ র হাতে।কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আপনাকে ডিসিশন আপনাকে নিতে হবে।আপনার ওয়াইফ কে জিজ্ঞাসা করেছি উনি বলেছেন ওনার বাচ্চা কে বাচাতে।আমরা আপনার ডিসিশন চাই।ওয়াইফ অথবা বাচ্চা যে কোন একজনকে বাছতে হবে আপনার
-কি বলছেন ডক্টর ।আমি,,,,
-মি,চৌধুরি আমাদের হাতে সময় নেই আপনি উওর দিন
-আমার ওয়াইফ কে চাই আমি।আমার রিদিতা কে চাই
হঠাত্ একজন নার্স বেরিয়ে এলেন
-ডক্টর ওনার ওয়াইফ ওনার সাথে কথা বলতে চান
-মি,চৌধুরি আপনি যান।কিন্তু দ্রুত কথা শেষ করবেন আমাদের হাতে সময় নেই
আবেগ ওটিতে গেল।রিদিতা কে শুইয়ে রেখেছে।পাশে স্যালাইন চলছে
-নার্স আপনি একটু বাইরে যান আমি আমার হাসবেন্ড এর সাথে কথা বলতে চাই
-ওকে আমি যাচ্ছি
নার্স বেরিয়ে গেলে আবেগ গিয়ে রিদিতা র বেডের পাশে বসলো
-রিদি
-আবেগ
-রিদি তুমি কেনো বাচ্চা র কথা বললে
-আবেগ তুমি আমার সিদ্ধান্ত এ রাজী হও
-এসব কি বলছো তুমি রিদি ।তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো।তুমি থাকলে আমরা পরেও বাচ্চা নিতে পারবো।আমার সিদ্ধান্ত আমি বদলাবো না রিদিতা
-তোমাকে বদলাতে হবে।কেউ না জানলে ও আমি জানি আমার বাচ্চা র ওপর তোমার কোন অধিকার নেই।ওর জীবনের সিদ্ধান্ত তুমি নিতে পারো না
-রিদিতা আআআ
-হ্যাঁ আবেগ এটা সত্যি ।যখন তোমাকে দরকার ছিল আমার তখন তুমি আমার পাশে ছিলে না ।ও ছিল সব সময় প্রতি সেকেন্ডে ।অনেক বার আমি ভেবেছি নিজেকে শেষ করে দিতে।বাঁচার ইচ্ছে ছিল না আমার ।শুধু ওর জন্য আমি নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছি প্রতি মূহুর্তে সব কিছুর সাথে সংগ্রাম করেছি।ওকে চাই আমি আবেগ।আমি নিজের জন্য ওকে হারাতে পারব না।আল্লাহ্ যদি চান তবে দুজনেই ফিরবো।যদি তা না হয় আমার বাচ্চা কে চাই আমি আবেগ আমার বাচ্চা কে চাই।তুমি কোন কথা বলো না আবেগ।তুমি এই সিদ্ধান্ত ডক্টর র কে জানিয়ে দেও
-রিদিতা আমি কি করে,,,,,
-আমি জানিনা আবেগ।একদিন তোমার জন্য সব হারিয়ে ছি আমি আজ তোমার কথাতে আমার সন্তান কে হারাতে পারব না।আমি মা হতে চাই আবেগ আমি আমার বাচ্চা র কান্না শুনতে চাই আবেগ।তোমার পায়ে পরি আমাকে ফিরিয়ে দিও না আবেগ
-রিদি তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারো নি তাই না।এজন্য এসব বলছো।রিদি আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে বাচবো
-জানিনা আবেগ
-রিদি আমাকে ক্ষমা করে দেও
-আবেগ তোমাকে খুব ভালোবাসতাম আবেগ খুব।সেদিন আমি সইতে পারিনি তোমাকে থাপ্পড় মেরেছি ।তুমি ক্ষমা করে দেও আবেগ আমাকে ক্ষমা করে দেও
-রিদি আর লজ্জা দিও না আমাকে।ক্ষমা করে দেও ।আমি তোমাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারব না।এতো বড় শাস্তি দিও না আমাকে
-আবেগ জানিনা বেচে থাকবো কি না।যদি বেচে ফিরি আর আমার বাচ্চা আমার কোলে না থাকে মনে রেখো কখনো তোমাকে ক্ষমা করবো না।
-রিদিতা আআ
-হ্যাঁ আবেগ।আমি আমার বাচ্চা যদি ভালো হয়ে ফিরি তো আমি ওকে নিয়ে দূরে চলে যাব তোমার থেকে দূরে কখনো ক্ষমা করবো না আবেগ
-রিদিতা আআআ
-হ্যাঁ আবেগ।তুমি ক্ষমা চাও বলো।আমি যদি মরে যাই তো মনে রেখো তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।বেচে থাকতে তোমাকে ক্ষমা করতে পারব না আবেগ পারব না।অনেক ভালোবেসে ছিলাম তোমাকে তুমি আমাকে অনেক নিচে নামিয়ে ছো।একজন বেশ্যা পর্যন্ত বলেছো।তোমাকে বেচে থাকতে কিভাবে ক্ষমা করবো আবেগ
-রিদিতা এতো বড় শাস্তি দিও না।আমি তোমাকে ভালোবাসি রিদিতা ।তোমার পাঠানো ডিভোর্স পেপার এ আমি আজো সাইন করি নি
-মানে
-হ্যাঁ রিদিতা ডিভোর্স পেপার তুমি আমাকে পাঠিয়েছিলে আমি না
-আমি তো নিজের শেষ আত্মসম্মান টা রাখার জন্য আমি পাঠিয়েছিলাম আবেগ
-রিদি তাহলে কেন এই শাস্তি র কথা বলছো
-আবেগ একটু জরিয়ে ধরবে আমাকে
-এভাবে কেন বলছো তুমি
-যদি আর কখনো বলতে না পারি তোমার বুকে একবার জায়গা দেও না আবেগ
আবেগ সজোরে রিদিতা কে জরিয়ে ধরলো
-আবেগ একটু তোমার মুখটা কাছে নিয়ে এসো না।অনেক দিন তোমার কপালে আদর করিনা।একটু এগিয়ে এসো না
আবেগ রিদিতার দিকে এগিয়ে গেল।রিদিতা আসতে করে আবেগের কপালে নিজের ঠোট ছোয়ালো ।আবেগ আর পারলো না আটকে রাখতে নিজেকে।কাঁদতে কাঁদতে রিদিতা কে জরিয়ে ধরে চোখে মুখে রিদিতা র পুরো গালে নিজের ঠোট ছুইয়ে দিল আবেগ
-আবেগ আমাকে একটা কথা দেবে
-কি বলো
-আবেগ আমি যদি মরে যাই আমার বাচ্চা টাকে তুমি দেখো আবেগ।তুমি কখনো বিয়ে করোনা আবেগ।যদি তুমি বিয়ে ই করো তাহলে আমার বাচ্চা টাকে কোন অনাথ আশ্রমে দিয়ে এসো
-রিদি চুপ কর কি বলছো তুমি ।আমার সন্তান কে কেন আমি অনাথ আশ্রমে দেব
-আবেগ জানো আমার বাচ্চা টা না আমার গর্ভ এ থাকা কালীন অনেক কষ্ট পেয়ে ছে।নিজের মায়ের সাথে সাথে ও ও না কুকুর এর মুখে দেওয়া খাবার খেয়েছে।আমার বাচ্চা টা কে আমি তেমন ভালো খাবার ও দিতে পারিনি খেতে।ওর মায়ের সাথে ও ও অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।তুমি প্লিজ সৎ মা নামক ঐ কষ্ট টা আমার বাচ্চা টাকে দিও না
-রিদি তা কেনো এই কথা বলছো ।তুমি ও তো থাকবে আমার সাথে
-হয়তো থাক আ হবে না আবেগ।মানুষ মৃত্যুর আগে তার শেষ সময় টা বুঝে যায় আবেগ।আমার শেষ সময় বোধ হয় চলে এসেছে আবেগ
-রিদিতা চুপ করো।কিছু হবে না তোমার
-আবেগ আমার আরেকটা কথা রাখবে বলো
-কি বলো
-আবেগ আমি মরে গেলে তুমি একটা মসজিদের পাশে কবর দিও।আর শোন প্রতি শুক্রবার আমার কবরের কাছে তুমি আসবে।আমার বাচ্চা কেও নিয়ে আসবে আবেগ আমি তোমাদের দেখবো।আবেগ শোন তুমি কিন্তু আমার প্রত্যেক মৃতবারষিকিতে কিন্তু তুমি আসবে আর আমার #LOVE ❤ কে নিয়ে আসবে ।শোন তুমি না আমার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের #LOVE❤ এর জন্মদিন পালন করবে আমি দেখবো।তুমি কিন্তু ঐ নীল পানজাবি টা পরে আসবে আবেগ ঐ যে বৃষ্টি র দিন তোমাকে দিয়ে ছিলাম ।ঐটা ।আমি যত্ন করে রেখেছি আবেগ।জানো তুমি গায়ে দেওয়ার পর ওটা আমি ওয়াশ করিনি।ওতে তোমার গায়ে র গন্ধ লেগে আছে আমি প্রতিদিন তোমার গন্ধ শুকতাম
-রিদিতা চুপ করবে।কিছু হবে না তোমার শুনতে পেয়েছো তুমি কিছু হবে না
-আবেগ তুমি আমার মরা মুখ দেখতে চেয়ে ছিলে তাই না
-রিদিতা আমি সেদিন মুখ ফসকে বলেছিলাম ।আমি মন থেকে বলিনি।তুমি মরলে আমি কি নিয়ে থাকবো
-আবেগ জানো বন্দুক এর গুলি আর মানুষের মুখের কথা এক।একবার বেরোলে আর ফেরে না
-রিদিতা তোমাকে ছাড়া আমি কি নিয়ে বাচবো বলো। I ❤ u রিদিতা I ❤ u
– I ❤ u too আবেগ I ❤ u too
-তাহলে কেন এই কথা বলছো
-আবেগ বাইরে যাও।ডক্টর কে পাঠাও।আর অপেক্ষা করো আমাদের #LOVE ❤ এর জন্য আর আমার মরা মুখ দেখার জন্য
-রিদিতা আর আমাকে কষ্ট দিও না।আর শাস্তি দিও না
-আবেগ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আবেগ।আমার হাতে সময় নেই।তুমি ডক্টর কে পাঠাও
-এক্খুনি পাঠাচ্ছি
আবেগ উঠে চলে যাচ্ছে সে সময় রিদিতা হাত টেনে ধরে।আবেগ পেছনে ফেরে
-আবেগ ডক্টর কে সিদ্ধান্ত জানিও দিও।আমার সিদ্ধান্ত তোমার সিদ্ধান্ত আমাদের #LOVE❤ এর সিদ্ধান্ত
-রিদিতা আমি,,,,,
-আবেগ ভালোবাসি খুব অনেক বেশি
-রিদিতা আমি ও ভালোবাসি খুব খুব খুব।ভালোবেসে যাব
-আমিও ভালোবেসে যাব
-আমিও
-খোদা হাফেজ আবেগ।অপেক্ষা করো
-খোদা হাফেজ
আবেগ বেরোচ্ছে আর পেছন ঘুরে রিদিতা কে দেখছে।রিদিতা হাত নাড়িয়ে আবেগকে বিদায় দিল।আবেগ কান্না ভরা চোখে রিদিতা কে দেখে বেরিয়ে গেল।আবেগ তখনো জানে না রিদিতা তাকে শেষ বিদায় দিল
-আল্লাহ্ আমি প্রতি রাতে তাহাজ্জুদের নামাজে তোমাকে ডেকেছি।আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না।আমার সন্তান কে তুমি হেফাজত করো।আমি যা যা পাপ করেছি তুমি মাফ করে দেও
আবেগ ডক্টর এর কাছে গেল
-মি,চৌধুরি আপনার ডিসিশন
বুক ফেটে যাচ্ছে তবুও আবেগ কে বলতে হলো
-আমার সন্তান কে বাঁচান ডক্টর
-are you sure মি,চৌধুরি
-yes,I am sure
-okay
ডক্টর ভেতরে চলে গেলেন।ওটির আলো জলে উঠেছে
অপারেশন শেষে র দিকে।ডক্টর নার্স রা একবার রিদিতা র দিকে তাকাচ্ছেন আরেক বার স্ক্রিন এর দিকে।রিদিতা র পালস ক্রমশ কমে আসছে
হঠাত্ কান্না র আওয়াজ হলো।রিদিতা চোখ একটু নড়ছে।রিদিতা চোখ খুলতে পারছে না।চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে।শেষ বারের মতো রিদিতা র কানে শেষ কথা গুলো গেল।নিজের সন্তান এর কানের আওয়াজ আর নার্স এর কথা
-মিসেস চৌধুরি আপনার একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়ে ছে।শুনছেন আপনি।মিসেস চৌধুরি ।স্যার স্যার ওনার পালস
ডক্টর নার্স স্ক্রিন এর দিকে তাকালো রিদিতা র পালস থেমে গেছে।রিদিতা আসতে আসতে ঘুমিয়ে গেল চিরকালের মতো।আর শোনা হলো না মা ডাক দেখতে পারলো না একবারের জন্য তার #LOVE❤ কে
-আল্লাহ্ র কি খেল।ওনার বেবির লাইফ রিস্ক বেশি ছিল।আর সেখানে উনি,,,,সিস্টার বেবিকে ক্লিন করে আনুন আমি ওনাদের খবর দিই
ওটির লাইট বন্ধ হয়ে গেল।বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে।আশফি আবেগ ডক্টর কে দেখে বেরিয়ে এলো
-ডক্টর আমার রিদিতা
-,,,,,,,
-ডক্টর কথা বলুন আমার রিদিতা
-মি,চৌধুরি সবার হায়াত আল্লাহ্ র হাতে
-কি সব বলছেন আপনি।বলুন আমার রিদিতা,,,,,
-she is no more
আবেগের পুরো পৃথিবী ওখানেই থমকে গেল।রিদিতা র পরিবার এর সবাই কাঁদছে
-নাহহহহ
আবেগ ডক্টর কে ঠেলে ফেলিয়ে ওটিতে ঢুকলো।রিদিতা র মুখ সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা।আবেগ গিয়ে কাপড় তুলে ফেললো
-এই রিদি এই রিদি ওঠো না।এই রিদি দেখো ডক্টর কি বাজে কথা বলছে।এই রিদি ওঠো।এই ওঠ না।এই রিদিতা ।এই তোকে ছাড়া আমি কিভাবে বাচবো এই আমিতো মরে যাব।তুই শুনেছিস না।ওঠ এই রিদিতা ।এই আমি কি করবো তোকে ছাড়া ।এতো বড় শাস্তি দিস না আমাকে।ওরে আমি মরে যাব তুই বুঝেছিস না এই রিদিতা
আবেগ কাঁদছে আর এই কথা বলছে।আবেগ এর কথা শুনে ডক্টর দের চোখে পানি চলে এলো।নার্স এসে বাচ্চা টাকে আশফি র কোলে দিল
-আপনারা বাচ্চা টাকে নিন।ওর কান্না থামছেই না
আশফি বেবি কে কোলে নিয়ে গিয়ে আবেগ এর কাছে গেলো
-আবেগ দেখ তোর বাচ্চা ।আবেগ তোর আর রিদিতা ভাবির ভালোবাসা আবেগ ও কাঁদছে ওকে ধর
আবেগ ছোট্ট বেবিকে কোলে নিয়ে রিদিতা র কাছে গেল।অবাক ব্যাপার আবেগের কোলে গিয়ে বেবির কান্না থেমে গেল
-এই রিদি বুঝেছি আমার ওপর রাগ করেছো না।দেখো আমাদের সন্তান আমাদের ভালোবাসা রিদি আমাদের #LOVE❤।রিদি চোখ খোলো না।এই রিদি চলো আমাদের ছোট্ট সংসার হবে।এই রিদি শুনছো না।ওঠো না।এই রিদিতা ।এই এই দুধের শিশুকে নিয়ে কি করবো আমি ওর যে তোমাকে প্রয়োজন রিদিতা ওর তোমাকে প্রয়োজন
আবেগ কাঁদতে কাঁদতে বসে পরলো।আশফি আবেগের পাশে গিয়ে কাঁধে হাত দিলো
-আবেগ রিদি ভাবি নেই আবেগ।চলে গেছে।মেনে নে আবেগ।দেখ তোর বাচ্চা টা তোর কাছে গিয়ে কান্না থামিয়ে দিয়ে ছে।দেখ তোর বাচ্চা টা তোকে ছোট চোখ দিয়ে দেখছে আবেগ।আবেগ তুই যদি ভেঙে পরিস ওর কি হবে।কোথায় যাবে ও।ও তো দুনিয়া তে এসেই মা কে হারালো।ওর কি হবে
আবেগ ছোট্ট #LOVE❤ কে বুকে জরিয়ে নিল
-না ও আমার #LOVE ❤।আমাদের #LOVE❤।ওর কিছু হতে দেব না আমি।ও যে আমার রিদিতা র শেষ স্মৃতি ।ওর কিছু হবে না ।আল্লাহ্ এ কি শাস্তি দিলে তুমি আমাকে।এ কি শাস্তি দিলে।রিদিতা আআ এই ক্ষমা র দরকার ছিলো না আমার রিদিতা আআআআআ
আজ আবেগ পৃথিবী র সবচেয়ে অসহায় ।রিদিতা র কথা সত্যি হলো।আবেগ আজ হাজার চাইলে ও রিদিতা কে পাবে না
৩ বছর পর
-বাবাই আমার তিলিপ লাদিয়ে দেও
-এই তো মামোনি হয়ে গেছে
-আমার দুতো
-দেখি পা দেখি।এই তো হয়ে গেছে।কি সুন্দর লাগছে আমার প্রিনসেন্স কে
-বাবাই তলো এবার মামোনির তাছে দাব
-যাবো তো
-বাবাই তলো মামোনি কে হামি দেব
-এসো
ছোট্ট লাভ রিদিতা র ছবিতে গিয়ে চুমু দিল
-লাবু উ মামোনি
-নেও বাবাইকে দেব এ না
লাভ বাবা র গালে পাপ্পি দিল
-লাবু উ বাবাই
-লাভ ইউ টু আমার প্রিনসেন্স
হ্যাঁ আজ আবেগ চৌধুরি আর রিদিতা চৌধুরি র মেয়ে আবেদিতা(আবেগ+রিদিতা) চৌধুরি #LOVE❤ এর জন্মদিন ।আজ #LOVE❤ তিন বছরে পা রাখলো।আর আজ রিদিতা র তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী
এই তিন বছরে অনেক কিছু পালটেছে
আবেগ আজ একজন পরিপূর্ণ বাবা।আশফি দিশা কে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করেছে।নিশিতা প্রেগন্যান্ট ।ওর দ্বিতীয় বাচ্চা এটা।আজাদ চৌধুরি আবেগ চৌধুরি #LOVE❤ কে নিয়ে তাদের তিনজনে র ছোট সংসার গড়েছে
আর হ্যাঁ তারাও শাস্তি পেয়েছে ।নোভা কে দেখলে মনে হয় এখন পন্বাশ বছরের বুড়ি।নোভা র স্কিন ক্যান্সার হয়ে ছে।শুধু তাই না অতিরিক্ত পিল খাওয়ার কারণে নোভা র জরায়ুতে টিউমার হয়ে ছে।নোভা প্রতিক্ষণ এ নিজের মৃত্যুর প্রহর গুনতে চায় ।আজ সে বুঝেছে তার পাপের শাস্তি ।আর লাবনি সেদিন রিদিতা কে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি তে এক্সিডেন্ট করে।তারপর লাবনি র এক পা কেটে ফেলা হয়েছে ।লাবনি আজ ঢাকা শহরের পঙ্গু ভিক্ষুক ।লাবনি যেই হাত দিয়ে রিদিতা কে ধাক্কা দিয়ে ছিল সেই হাত গ্যাঙ্গার রোগে পচে গেছে।মাংস খসে পরছে।আর নোভা র বাবা তাকে আবেগের বাবা মহিলাদের দিয়ে জুতো পিটিয়ে মুখে চুনকালি মাখিয়ে ছেড়ে ছে।সেই শোকে তিনি আত্মহত্যা করেছেন
আশফি আবেগের ঘরে এলো
– #LOVE❤ আরে কি সুন্দর লাগছে আমার প্রিনসেন্স কে
লাভ নীল রঙে র জামা পরেছে।আর ওর বাবা আবেগ সেই নীল পানজাবি ।লাভ নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে একবার ঘুরপাক দিলো।আশফি ওকে কোলে তুলে নিল
-ওরে আমার প্রিনসেন্স রে
-মামাই তলো আমরা মামোনি র কাছে যাই
-চলো।আবেগ আয়
-তুই ওকে নিয়ে যা আমি আসছি
আশফি লাভকে নিয়ে চলে গেল
আবেগ কাপড় দিয়ে রিদিতা র ছবিটা মুছে দিল।পুরো ঘরে রিদিতা র ছবি রেখেছে আবেগ।সব ছবিতেই রিদিতা র হাসি মাখা মুখ
আবেগ বেরিয়ে গেল
রিদিতা র মা বাবা নিশিতা দিশা সবাই এসেছে রিদিতা র কবরের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।মসজিদের পাশেই আবেগ রিদিতার কবর দিয়ে ছে
-বাবাই মামোনি র কাতে দাব।নামিয়ে দেও
আবেগ কোল থেকে মেয়ে কে নামিয়ে দিল
-মামোনি তুমি কিন্তু কোথাও যাবে না।আমরা একটু দোআ করি তুমি এখানে থাকো
-তিত আতে
আবেগ আর সবাই মোনাজাত তুললো রিদিতা র কবর যিয়ারত করার জন্য ।ছোট্ট লাভ ছোট ছোট পায়ে রিদিতা র কবরের খুঁটির কাছে।ছোট্ট থেকে সে এটা জানে তার মামোনি এখানে থাকে দিনে আর রাতে তারা হয়ে আকাশে থাকে।ও বোঝে না ওর মা কোথায় আছে
সবাই মোনাজাত এ ব্যস্ত ।লাভ গিয়ে রিদিতা কবরের খুঁটি ধরেছে
-মামোনি দেতো আমি এতেছি ।মামোনি তুমি কবে দাবে আমার তাছে।বাবাই বলে তুমি আতবে ।কবে আতবে।ও মামোনি
সবাই মোনাজাত শেষ করে ছোট লাভের কথা শুনে চোখে র পানি ফেলছে।আশফি গিয়ে লাভ কে কোলে তুলে নিল
-প্রিনসেন্স মামোনি আসবে দেখো।তুমি বড় হও তখন আসবে
-আততা মামাই তবাই আমাকে গিফত দেয়।মামোনি দেয় না কেন
-প্রিনসেন্স তোমার মামোনি তোমাকে সবচেয়ে বড় গিফট দিয়ে গেছে।তুমি যখন বড় হবে তখন বুঝবে তোমার মামোনি তোমাকে কি দিয়ে গেছে।চলো আমরা কেক কাটবো
-তলো তলো
-আবেগ চল
-আশফি তুই ওকে নিয়ে যা আমি আসছি
সবাই চলে গেল।আবেগ রিদিতা র কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।প্রতি শুক্রবার সে তার মেয়ে কে নিয়ে আসে এখানে।কিন্তু এই দিন কষ্ট টা বেশি হয়।এই দিন রিদিতা চলে গেছে আবেগ কে ছেড়ে
-কেমন আছো রিদি।খুব ভাল লাগছে তাই না আমাকে এভাবে দেখে।জানো রিদি মেয়ে টা খুব পাজি হয়ে ছে তোমার মতো।প্রতিদিন তিন বেলা ওর জন্য রাঁধতে হয়।অফিস করতে হয় ।সারাদিন এ হাঁপিয়ে যাই আমি।কিন্তু কি জানো দিন শেষে আমার প্রিনসেন্স কে দেখে সব কষ্ট মুছে যায় ।শোন এখন কিন্তু বলতে পারবেনা ও র ওপর আমার কোন অধিকার নেই।তুমি তো ফাঁকি দিয়ে চলে গেছো ওকে কিন্তু আমিই মানুষ করছি।যান প্রতি রাতে লাভ কে তোমার গল্প শোনাতে হয়।মামোনি র গল্প না শুনলে তার ঘুম আসে না
এদিকে ছোট্ট লাভ ব্যস্ত হয়ে গেছে
-ও বাবাই এতো না তেত ঠান্ডা হয়ে দাচ্ছে ।আমি তেত কাতবো না।ও বাবাই
ছোট্ট লাভ এর কথা শুনে সবাই হেসে পরলো
আবেগ পেছন এ ফিরলো
-আসছি মামোনি।দেখেছো কি দুষ্টু হয়ে ছে ও।কেক বলে ঠান্ডা হয়ে গেছে।শোন আমি আসবো তুমি কিন্তু অপেক্ষা করবে আমার জন্য একালে তো হলো না হয় হবে ওপারে দেখা জান্নাতে
আবেগ গিয়ে ছোট্ট লাভকে কোলে তুলে নিল।হাতে ছুরি ধরিয়ে দিল।কেক কাটা হলো।সবাই লাভকে উইশ করছে।আবেগের সাথে সাথে ঐ দূরে কবর থেকে মা ও দোআ করে যায় নিজের মৃত্যু ভুলে নিজের সন্তান এর শুভ কামনা করে আবেগ এর সাথে
“”HAPPY BIRTHDAY TO OUR #LOVE ❤”””
—————————–সমাপ্ত——————————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here