#তোকে চাই পর্ব ৩০+৩১

0
1200

#তোকে চাই❤পর্ব৩০+৩১
#:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤



রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছি,,হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ,, আমি একা নই,,,ফুল ফ্যামিলি আজ শপিং এ বেরিয়েছি।।ব্যাপক মজা হচ্ছে,,তার সাথে আমার প্যারাময় জামাইয়ের প্যারাও আছে,,এদিকে যেয়ো না,,,ঠিক ভাবে হাটো,,,এখনি পড়ে যেতে,,,দৌড়াচ্ছো কেন??উফফ উফফ বিরক্তিকর,,,, আমি বাচ্চা নাকি??সবাই সামনে সামনে হাটঁছেন আমি আর শুভ্র পিছনে,,,,

দেখুন ফুচকার স্টল,,, চলুন ফুচকা খাবো,,,প্লিজ প্লিজ(হাত ধরে ঝাকিয়ে)

ছি,,,লুক এট হিজ হ্যান্ড,, কি বিশ্রী ভাবে হাত দিয়ে মাখাচ্ছে,,,,একদম খাবা না চলো,,,

প্লিজজ না?

নো তুমি খেলে বউমনিও খাবে,,পরে বেবির ক্ষতি হবে,,তুমি তাই চাচ্ছো??(ভ্রু কুচকে)

ওকে ফাইন(দাঁতে দাঁত চেপে)

আচ্ছা ওই ফুলগুলো নিবো,,রেড কালার ইজ মাই ফেবরিট।।সবগুলো লাল গোলাপ নিবো,,

এতোগুলো??(অবাক হয়ে)একশোরও বেশি হবে,,,

সো,,আমি নিবোই নিবো,,,

আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি আন….

কে শুনে কার কথা,,রেড রোজ ইজ মাই ফেবরেট ফ্লাওয়ার,,,উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে দিলাম ভৌ দৌড়।।উনার কথা শুনতে যাবো কেন হুহ??পিছন থেকে উনি ডেকেই চলেছেন,,,ডাকুক,, তাতে আমার কি?

রোদ প্লিজ দেখে,,,গাড়ি আছে,,প্লিজ রোদ থামো,,,রোদদদদ

উনার হাতে, ধরা পড়ার কোনো শখ নেই আমার,,ধরতে পারলে পুরো আস্ত চিবিয়ে খাবেন,,তবু উনার রিয়েকশনটা দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না,,,পিছনে তাকালাম,,, উনার চেহারায় একরাশ ভয়ের চিন্হ,,উনিও হঠাৎই দৌড়াতে লাগলেন কিন্তু ততোক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেলো।।।সামনে তাকাতেই প্রচন্ড ঝটকায় ছিটকে পড়লাম।।চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসছে,,,বুঝতে পারছি রক্তে শরীর ভিজে যাচ্ছে,,,চারপাশটা ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছে,,চোখদুটো বুজার আগে কারো মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো,,হ্যা,, শুভ্র,,টলমলে চোখে কি যেনো বলে চলেছে ক্রমাগত,,,,তারপর কি হয়েছিলো জানি না,,,যখন চোখ খুলি তখন আমি হসপিটালের বেডে,,,,আমার চারপাশে সবাই দাড়িয়ে আছে,,শুধু শুভ্র নেই।।।কিন্তু মনটা উনাকেই খুজছিলো,,,কিন্তু আমার থাকা না থাকাতে হয়তো উনার যায়ই আসে না,, তাই এই অবস্থাতেও ফেলে চলে গেছেন আমায়,,,হুহ।।সবাই এক এক করে মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো,,,শুধু থেকে গেলো আপু আর মামানি।।।আপুর কাছে জানলাম সবাইকে টেনশনে ফেলে গত ২৪ ঘন্টা খুব আরামে শুয়ে ছিলাম,,ডক্টরের অবজারভেশনের লাস্ট আওয়ারে সেন্স ফিরেছে আমার।।।বাপরে,,হোয়াট আ ভাগ্য,,,টেনেটুনি বেঁচে গেলাম দেখি,,,কৌতূহল বশত আপুকে জিগ্যেস করেই ফেললাম,,,

উনি কোথায় আপু??

উনিটা কে??(ভ্রু কুচকে)

উফফ আপু,,তোমার দেবরের কথা বলছি,,,

ওহ,,,,তাকে তো পাগল বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছিস,,,এখন আবার খবর নেওয়া হচ্ছে,,হুম??(মুচকি হেসে)

মানে??কি বলছো এসব??

তোকে বলেছিলাম না রোদ??আমার ছেলেটা তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে,,,,অনেস্টলি বলছি,,আজ তোর কিছু হয়ে গেলে,,আমার ছেলে সব ভেঙে চুরমার করে ফেলতো।।।(চোখের পানি মুছে)পাগল একটা,,,,

বনিতা না করে বলবা প্লিজ কি হয়েছে??আর উনিই বা কোথায়,,, ঠিক আছেন তো???

এবার বড্ড টেনশন লাগছে,,,,কাহিনীটা কি আসলে,,,তবে আপু আর মামানির কাছে সব শুনে আমি টুটালি নির্বাক,,,শুভ্রও এমন করতে পারে???ওদের কথা অনুসারে ঘটনাটা হলো এই,,,,

রোদের দিকে গাড়ি আসতে দেখেই ছুটে এসেছিলো শুভ্র বাট শেষ রক্ষা হলো না।।।নীলির মতো রোদকেও নিথর হয়ে পড়ে থাকতে দেখে বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো তার।।দৌড়ে রোদকে জড়িয়ে ধরে চেচাতে লাগলো,,,কিন্তু ততক্ষণে রোদের চোখের পাতাও বুজে গেছে,,,
।।
রোদ,,এই রোদ??এই পিচ্চি??চ,,চোখ খুলো,,,প্লিজ কথা বলো।।।(কাঁপা গলায়)এই মেয়ে?? (চিৎকার করে)

শুভ্র??ওকে হসপিটালে নিতে হবে উঠা ওকে,,,

বাবা??দ,,,দেখো।কথা বলছে না,,ও কথা বলছে না।।।এমনিতে তো ধমকিয়েও থামাতে পারি না,,,আজ দেখো কথা বলতে বলছি তাও কথা বলছে না।।।বাবা তুমি একটু বলো না,,একটু কথা বলতে বলো,,,,আমি জাস্ট শুনবো।।

শুভ্র,,,পাগলামো করিস না,,,গেট আপ মাই সান।।।ও ঠিক হয়ে যাবে,,,,তাড়াতাড়ি হসপিটালে চল,,,

কি বলছো বাবা??ও ঠিক আছে,,একদম ঠিক আছে,,এই পিচ্চি??এই একটু বলো তুমি ঠিক আছো,,,বাবা,,প্লিজ ওকে বলো না কিছু বলতে প্লিজ বাবা,,, আমি শ্বাস নিতে পারছি না বাবা,,,ওকে উঠতে বলো তো,,,

শুভ্র??গেট আপ ম্যান,,,পাগল হয়ে গেলি,,,???

অভ্র আর শুভ্রর বাবা,,, শুভ্রকে কোনোরকম উঠিয়ে হসপিটাল পর্যন্ত এনেছে কিন্তু বিপত্তি দেখা দিয়েছে অপারেশন থিয়েটারের সামনে,,,শুভ্র কিছুতেই রোদকে অটিতে নিতে দেবে না,,,তার ধারনা ওই রুমে নিয়ে গেলে রোদ আর ফিরবে না,,,ওরা ওকে মেরে ফেলবে,,,তাকে অনেক বুঝিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না,,,তার এক কথা তার রোদ তার সাথেই থাকবে,,,কোথাও যাবে না ব্যস,,,

শুভ্র?কি পাগলামো করছিস??তুই বাচ্চা না,,,ডক্টরদের কাজ করতে দে,,,

না,,কেউ টাচ করবা না ওকে,,,,মা তুমি বুঝতে পারছো না,,,ওরা আমার রোদকে মেরে ফেলবে,,নীলিকেও মেরে ফেলছে,,,,রোদকেও মেরে ফেলবে,,,আমি আমার রোদকে ওদের কাছে দিবো না,,,কিছুতেই না।।।

শুভ্রর বাবা ছেলের পাগলামো হয়তো আর নিতে পারলেন না,,,অনেকক্ষণ থেকেই সহ্য করছেন এসব।।তাইতো শুভ্রর গালে জোড়ে সোড়ে একটা চড় বসিয়ে দিলেন।।।অনেক কষ্টে রোদকে অটিতে ঢুকানো হলো,,বাট শুভ্র কি এতো সহজে মানবে নাকি??কখনো না।।সে অটির দরজায় ক্রমাগত লাথি দিচ্ছে,,,তার উদ্দেশ্য অটির দরজা ভেঙে ফেলা এবং রোদকে উদ্ধার করা।।কেউ ওকে বাঁধা দিচ্ছে না,,,মূলত সবাই এতোই অবাক যে,, কি করবে তাই বুঝতেছে না।।রোদকে নিয়ে চিন্তা বাদ দিয়ে শুভ্রকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছে সবাই।।শুভ্রর মতো ছেলে এমন ধরনের পাগলামু করতে পারে কেউ চিন্তায় করতে পারে নি।।।

শুভ্র??বাবা শান্ত হো,,,ওখানে রোদ ভালো আছে,,

মিথ্যা,,সব মিথ্যা।।নীলির সময়ও তোমরা বলেছিলে নীলি ফিরবে কিন্তু ও ফিরে নি,,,,এবার রোদকেও নিতে চাও তোমরা,,,,দিবো না নিতে,,,আমার রোদের কিছু হলে সব শেষ করে ফেলবো আমি,,,,আই উইল ফিনিশ এব্রিথিং,,,এন্ড আই উইল ডু ইট,,,

শুভ্র??ভাই,, এমন করছিস কেন??স্বাভাবিক হো প্লিজ,,,

হ্যা শুভ্র ভাইয়া প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন,,,,সব ঠিক হয়ে যাবে,,,,(কাঁদতে কাঁদতে)

বউমনি?বউমনি তুমি বাবাকে বলো আমার রোদকে আমায় দিয়ে দিতে,,আমি আর কিচ্ছু করবো না,,,প্রমিজ,,,, প্লিজ বউমনি বলো না,,,ওরা রোদকে মেরে ফেলবে,,,রোদ হয়তো একা ভয় পাচ্ছে,,,

শুভ্র এসব পাগলামো বন্ধ কর,,,আমরা কেউ শত্রু নই তোর,,

মা,,তুমিও??এবারও আমায় একা করে দিবা??এবার আর বাঁচবো না মা,,,প্লিজজ এমনটা করো না তোমরা,,,সত্যি মরে যাবো।।।আমি শুধু রোদকে চাই, প্লিজ দিয়ে দাও।।আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি মা,,,একটু বাঁচতে দাও আমায়,,,প্লিজজ

তখনি ডক্টর বেরিয়ে আসে মুখে মুচকি হাসি,,

এইযে মিষ্টার আপনার রোদ একদম ঠিক আছে,,,একটু পরেই ওকে দেখতে পাবেন,,,,দরজা ভাঙার কোনো দরকার নেই আর,,,,,

ডক্টরের কথায় শুভ্র শান্ত হলো বলে মনে হলো না,,,সে রুমের ভিতর ক্রমাগত উঁকিঝুঁকি দিয়ে চলেছে,,

ডক্টর??আমার মেয়ে ঠিক আছে তো??কোনো ভয় নেই তে??

হ্যা এমনি ঠিক আছে,,,তবু ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেন্স ফিরে গেলেই টেনশন ফ্রি হতে পারি,,,নয়তো কোমায় চলে যেতে পারেন।।মাথায় চোটটা একটু গাঢ় নয়তো এব্রিথিং ইজ অলরাইট।।

এই ২৪ ঘন্টা শুভ্র ডক্টর আর নার্সদের জ্বালিয়ে খেয়েছে,,,কেনো রোদ কথা বলছে না??তারা রোদের সাথে কি করেছে??ইনজেকশন কেন দিচ্ছে,,,তার রোদকে কোনো ইনজেকশন দেওয়া যাবে না,,,,,রোদের কাছে কোনো ডক্টর আর নার্স আসতে পারবে না,,,তার রোদের কাছে শুধু সেই থাকবে।।অবশেষে শুভ্রকেই ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে,,,সে এখন পাশের কেবিনে ঘুমাচ্ছে,,,


শুভ্র যে রোদের জন্য এমন পাগলামো করেছে তা রোদের বিশ্বাসই হচ্ছে না,,,আবার লজ্জাও লাগছে।।।ছি,,সবাই কি ভাবছে,,,

#চলবে,,,

#তোকে চাই❤
#নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤



বেডে আধশোয়া হয়ে বসে আছি,,পাশে আপু আর মামানি।।আপু অনর্গল কথা বলে চলেছে,,আমার চুপচাপ বোনটা আজ এতো বাচাল কিভাবে হয়ে গেলো বুঝতে পারছি না।।হঠাৎই কেউ একজন প্রচন্ড জোড়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো,,,প্রথম দফায় চমকে গেলেও শুভ্রকে দেখে শান্ত হয়ে বসলাম।।উনি একপ্রকার দৌড়ে ভেতরে ঢুকলেও আমাকে বসে থাকতে দেখা মাত্র থেমে গেলেন।। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে,,,আমার কাছে এসে হাত চেপে ধরলেন,,,

রোদ চলো,,,

আমি তো অবাকই সাথে আমার পুরো পল্টনও অবাক,,,এর মধ্যেই সবাই রুমে প্রবেশ করেছে।।মামুকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি বিন্দুমাত্রও অবাক হন নি।।শুভ্র যে এমন পাগলামো আবার কন্টিনিউ করবে তা সম্পর্কে তিনি অবগত।।।

কি হলো চলো,,,,ওপপস্ সরি তুমি তো হাঁটতে পারবে না,,,

কথাটা বলেই কোলে তুলে নিলেন,,,হাতে স্যালাইন লাগানো ছিলো,,,টান পড়ায় রক্ত উঠে গেলো,,ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম।।।উনি ভ্রু কুচকে আমার হাতের দিকে তাকালেন,,,

আমি বলেছিলাম না ওকে এসব না লাগাতে??(রাগী গলায়)কেনো লাগিয়েছেন এগুলো??হোয়াই???(চিৎকার করে)

উনার চিৎকারে আমার অন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো,,,লোকটা কি আসলেই পাগল টাগল হয়ে গেছে নাকি??।উনি আবার আমাকে সাবধানে বেডে বসিয়ে দিয়ে,, ধীরে ধীরে হাতের স্যালাইনটা খুলে নিলেন,,এমনভাব যেনো সুঁইটাও ব্যাথা পেয়ে যেতে পারে উনার হাতের ছোঁয়ায়।।আমি শুধু উনাকেই দেখছে,,কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগছে উনাকে।।।আচ্ছা?আজ যদি সত্যি মরে টরে যেতাম তাহলে কি সত্যিই উনি পাগল টাগল হয়ে যেতেন নাকি???উনার কাজ শেষ হতেই আবারো কোলে তোলে নিলেন আমায়,,আর সোজা দরজার দিকে হাঁটা দিলেন,,,

শুভ্র কই নিয়ে যাচ্ছিস ওকে??

বাসায়,,,

হোয়াট,,,আল্লাহ আমার ছেলে সত্যিই পাগল হয়ে গেছে,,,আরে বাপ আজই অপারেশন হলো,, আল্লাহর ওয়াস্তে,, দুটো দিন এখানে থাকতে দে ,,

এক মিনিটও থাকতে দিচ্ছি না,,,ও আমার সাথেই থাকবে,,,এখানে এই ডাফারদের মাঝে তো কখনোই ওকে রাখবো না আমি,,,,যখন তখন সুঁই ঢুকিয়ে দেই,,,,ম্যানারলেস।।

উনার কথা শুনে আমার হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে,,আল্লাহ আর কি কি দেখাবা??মিষ্টার আবরার শুভ্র কিনা এমন ভিত্তিহীন পাগলামো করছে,,,

চুপপ,,,এমন ভাব করছিস,,বউ তোর একার আছে,,,আরে এখানে আমাদের সবারই বউ আছে,,,বউকে নিয়ে চিন্তা আমরাও করি বাট তোর মতো বাড়াবাড়ি না,,,,

তোমাদের বউরা বুড়ো বাট আমার টা বাচ্চা,,,,সো ডিফারেন্স তো হবেই,,,

উনার এমন একনাম্বারের ফাউল যুক্তির পর মামু বলার মতো আর কিছুই খুঁজে পেলেন না।।।শুভ্র অন্য কারো বর হলে আর নামি হিরোইন না হয়ে অডিয়েন্স হলে এতোক্ষণে হাসিতে গড়াগড়ি খেতাম,,,বাট ব্যাপারটা যেহেতু আমায় ঘিরে তাই এখন বড্ড লজ্জা লাগছে।।।উনার জেদের সামনে সবাইকে হার মানতে হলো,,,অবশেষে বাসায়ই আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো।।।

রাত ১১ঃ৩২ মিনিট,, আমি বিছানায় শুয়ে আছি,,আর উনি আমার পাশে আধশোয়া হয়ে বসে লেপটপে কিছু একটা করছেন,,,,

এটা কি হলো??(রাগী চোখে)

কি??(ভ্রু কুঁচকে)

কি মানে??আপনি এমনটা কেনো করলেন??

আমি আবার কি করলাম??(অবাক হয়ে)

হসপিটাল থেকে ওভাবে নিয়ে এলেন কেনো??সবাই কি ভাবছে বলুন তো,,,,

তুমি ওই উদ্ভট জায়গায় কেন থাকবা??তাছাড়া তুমি তো একদম ঠিক আছো,,,

কিহ??লাইক সিরিয়াসলি?? আমার মাথায় ব্যান্ডেজ,,হাতে -পায়ে ব্যান্ডেজ আর আপনার মনে হচ্ছে আমি ঠিক আছি??

উনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলেন,,,,

জাস্ট স্যাট আপ রোদ,,,,ওলওয়েজ বেশি কথা বলা ইম্পর্টেন্ট না,,,,চপচপ না করে ঘুমোও(রাগী চোখে)

ওহ,,অবশেষে মিষ্টার আবরার শুভ্র নিজের ক্যারেক্টারে ব্যাক করেছেন,,,থ্যাংক গড।।।বিছানায় শুয়ে উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,,,ইচ্ছে করছে উনার গোছিয়ে রাখা চুলগুলো এলোমেলো করে দিই,,,,এত্তো কিউট কেন উনি,,,ইসসস এত্তো কিউট এন্ড হ্যান্ডসাম ছেলেটা আমার হাজব্যান্ড ভাবতেই শরীর শিউরে উঠে,,,,

কি ব্যাপার এভাবে তাকিয়ে আছো কেন???(লেপটপের দিকে তাকিয়ে)

আপনি আসলেই অনেক সুন্দর,,,

উনি লেপটপ থেকে মুখ তুলে সামনে তাকালেন,,,তারপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে লেপটপটা সাইড টেবিলে রেখে আমার দিকে তাকালেন,,,

তোহ,,মিসেস নৌশিন আবরার,,,আধা ঘন্টা তাকিয়ে থাকার পর আপনি বুঝতে পারলেন আমি সুন্দর??(বাঁকা হাসি দিয়ে)

হুম,,আপনি এতো সুন্দর কেন??ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই,,,সৌন্দর্য তো মেয়েদের জন্য,,,,

তাই???তো ছেলেরা সুন্দর হলে কি সমস্যা??

অবশ্যই সমস্যা,,,এইযে আপনার বদলে যদি আমি বেশি সুন্দর হতাম তো আপনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন,,,,কিন্তু এখন উল্টো হচ্ছে,,ব্যাপারটা প্রকৃতি মেনে নিতে চাচ্ছে না।।।এটা নিসন্দেহে হাস্যকর,,,কোনো মেয়ে একটা ছেলের দিকে “হা” করে তাকিয়ে আছে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না।।।(ঠোঁট উল্টিয়ে)

উনি আমার কথায় হো হো করে হেসে উঠলেন,,,দেখেই বুঝা যাচ্ছে মন খুলে হাসছেন আর আমি মন ভরে দেখছি,,,,মিনিটে হাজারবার আমি এই ছেলেটার প্রেমে পড়তে রাজি।।আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি হাসি থামিয়ে আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিলেন,,,,আমি তো রীতিমতো ফ্রিজড,,এটা কি হলো??উনি নিজে থেকে??কেমনে কি??উনি মুচকি হেসে আমার শরীরে কাঁথা টেনে দিয়ে,, লাইট অফ করে অন্যদিক হয়ে শুয়ে পড়লেন।।হয়তো শান্তির ঘুম ঘুমুচ্ছেন,,কিন্তু আমার ঘুম তো হারাম করে দিলেন।।চোখে তো শুধু স্টার জলসার মতো একটা সীনই চলছে,,,”হি কিসড মি”….


সকালে ঘুম ভেঙে নিজেকে উনার দুই হাতের বাঁধনে খুজে পেলাম।।।খুব শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছেন আমায়,,যেনো এখনি ছুটে পালাবো।।আমি একটু নড়েচড়ে উঠতেই উনি আরো শক্ত করে চেপে ধরলেন ,,,উনার গায়ের একদম অন্যরকম স্মেলটা আমার নাকে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে বার বার,,,নিজেকে উনার এতো কাছে ফিল করার সুযোগ করে দিচ্ছে যেনো।।।আমি শুধু উনাকেই দেখছি,,,,বুজে থাকা দুটো চোখে ঘন লম্বা পাপড়ি,,হালকা বাদামি এলোমেলো চুল,,,,ডার্ক রেড একজোড়া ঠোঁট,,খাড়া নাক,,,থুতনির কাছে একটা টকটকে কালো তিল আর টকটকে ফরসা চামড়া,,,,উনার গায়ের প্রতিটা লোমও যেনো একেকটা কিউটের ডিব্বা,,,, ইসসসস,,,এতোটা সুন্দর না হলেও তো চলতো,,,,


সময়গুলো থেমে থাকে না,,,কেমন অবিরাম ছুটে চলে,,,দেখতে দেখতে আরো দুটো সপ্তাহ চলে গেলো।।।আমি এখন একদম সুস্থ।।রাত ৮ টা বাজে,,খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি,,,কিছুদিন পরই এডমিশন টেস্ট,,,,কিছুই যেনো পড়া হয় নি।।।উফফ টেনশন।। হঠাৎই উনি এসে চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিলেন,,,

আরেহ,,,এটা কি হলো??আমি পড়ছি তো,,চশমা দেন।।

চশমা পড়ো কেন??(ভ্রু কুঁচকে)আগে তো পড়তে না।।

মাথা ব্যাথা করলে মাঝেমাঝে পড়ি,,এখন দেন তো।।

মাথাব্যথা করলে মাথায় তেল দিতে হয়,,,তুমি তো জীবনেও তেল দেও না,,,আমি তেল লাগিয়ে দিচ্ছি ওয়েট,,,

হোয়াট??নো ওয়ে,,,আমি তেল দিচ্ছি না।।।তেল দিলে কেমন চিপচিপে লাগে,,তারউপর পেত্নী পেত্নী লাগে।।।কাল আমার কোচিং আছে,,,আজ তো কোনোভাবেই তেল লাগাবো না,,,

তেলের সাথে কোচিং-এর কি সম্পর্ক?? (ভ্রু কুঁচকে)

অবশ্যই সম্পর্ক আছে,,তেল দিয়ে ভূত সেজে যাবো,,মানুষ কি বলবে??

ঠাডায় দিবো একটা,, কোচিং এ চেহারা দেখাতে যাও??এখন তো আরো বেশি করে দিয়ে দিবো,,,

নোওওওওওওও

ইয়য়য়য়য়েসসসসস

উনার জেদের সামনে কোনো দিনই পেরে উঠি নি,, আজ যে পারবো সে আশা রাখাটাও নিরাশা।।উনি আমার মাথায় বেশ যত্ন করে তেল লাগিয়ে দিচ্ছেন,,প্রতিটি চুলকে এমন ভাবে নাড়াচাড়া করছেন,,যেনো চুলগুলোকে উনি ঘুম পাড়ানোর চেষ্টায় আছেন,,,,তেল লাগানো শেষ করে,,,চিরুনি নিয়ে আচড়াতে বসলেন,,,

বাহ,,তোমার চুল তো অনেক বড়,,আগে খেয়ালই করি নি,,,

হুমম,,কোমরের নিচ পর্যন্ত পড়ে,,,

জানো,,আমি ভেবে রেখেছিলাম আমার মেয়ের এত্তোবড় চুল রেখে দিবো,,,সবাই অবাক চোখে দেখবে,,,

তাই??কিন্তু আপনি তো বাবাই হতে চান না,,,

হুমম,,এখন আর ইচ্ছে নেই।।

কেনো??স্বপ্নগুলো নীলি আপুর সাথে দেখেছিলেন তাই??নাকি হারানোর ভয় পান??

উনি আমার কথার উত্তর না দিয়ে দুই কাঁধে দুটো বেনী ঝুলিয়ে দিয়ে বললেন,,,

একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে,,,ইসসস,,,,তুমি এতো পিচ্চি কেন???আমি তো ভেবেই পাচ্ছি না,,সামনে বসে থাকা গুলুমুলু বাচ্চাটা আমার বউ,,,,

#চলবে,,,,,

(সবাই শুধু শুভ্রর ভালোবাসায় দেখলো,,আমারটা কেউ দেখলো না,,,যাওয়ার আগে যে হালি হালি ভালোবাসা দিয়ে যাচ্ছি সেটার কি???😒😒😒টানা ৫ টা পার্ট দিলাম,,,,আমিও শুভ্র থেকে কম কিসে,,টোটাল ধামাকা দিয়া দিছি,, শুধু আপনাদের ভালোবাসাটাকে রেসপেক্ট জানাতেই,,,,,সো রটার্ন গিফ্ট হিসেবে এত্তোগুলো দোয়া আর ভাললবাসা চাই,,,ফাঁকা হাতে কিছু চলবে না😉😉)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here