কনফিউশন পর্ব ১৩

0
360

কনফিউশন পর্ব ১৩
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম

আরশি বাসায় ঢুকে কাপড়ও বদলালো না। রাতে খেলোও না। চুপচাপ শুয়ে পড়লো। কিছু ভালো লাগছে না। সিগারেটের গন্ধে টিকতে পারছিলো না বলেই তো জানালা খুলে দিয়েছিলো আরশি। তাতে দোষের কী হলো? আর একটা কথাও কেন বললো না কাব্য? সে কি জানেনা আরশি এতো কথা বলতে পারে না। কাব্য যদি বলে তবেই কথা হবে, সে যতটুকু বলবে ঠিক ততটুকুই! তারপরেও কথা বললো না কেন? পরক্ষণেই আরশি আবার ভাবলো, না বললে না বলুক। এমনিতেই তাকে পছন্দ না আরশির। সে যত দূরে থাকবে ততই ভালো। কিন্তু একটা জিনিস আরশি বোঝেনা তার সাথে দেখা হলো এতো ভালো লাগে কেন? তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেই বা এতো ভালো লাগে কেন? তার ওভাবে তাকিয়ে থাকা, তার কথা বলা সবকিছুই কেন ওকে টানে? এসবের জন্য তো মানুষটা পছন্দের হওয়া চাই। কিন্তু আরশির তো তাকে একদম পছন্দ না। তাহলে কেন এমন হয়? ভালো লাগা আর খারাপ লাগা দুই ধরনের অনুভূতিই কি একটা মানুষের জন্য থাকা সম্ভব?

সারারাত কাব্যর ঘুম হলো না। খুব অস্থির লাগলো। দশ মিনিট পর পর সিগারেট খেতে লাগলো। আরশির সাথে দেখা হবে বলে সেই সন্ধ্যা থেকে সিগারেট খেলো না। তাতে লাভ কী হলো? সেই তো আরশি সিগারেটের গন্ধ পেলোই। অথচ কাব্য চাইছিলো আজ অন্তত সে সিগারেটের গন্ধ না পাক। আরশির অনুভূতিটা যদিও পুরোপুরি বুঝতে পারছে না সে। আরশি হাসে না, কথা বলে না। তার দিকে সরাসরি তাকায়ও না তাই ওর ভেতরে কি চলছে বোঝা মুশকিল। কিন্তু নিজের অনুভূতি নিয়ে এতো কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে কেন? একবার মনে হচ্ছে আরশির প্রতি যত অনুভুতি তা ভালো লাগার অনুভূতি, সারাজীবন ঘরের মানুষ বানিয়ে নিতে চাওয়ার অনুভূতি। আবার মনে হচ্ছে সবটাই কেবল মোহ, ওকে জানার আগ্রহ। কাব্য নিজেকে বোঝাতে লাগলো, “সময় নিতে হবে কাব্য, সময় নে। তনিকার বেলায় যে ভুল করেছিস আরশির বেলায় তা করিস না। আরশি অনেক ছোটো এখনো, অনেক সময় আছে হাতে। তাড়াহুড়ো করে আবার কোনো ভুল করিস না।”

যাদিদের বাড়ি থেকে তিরাকে দেখতে এসেছে। তিরা তৈরি হয়ে ছটফট করতে লাগলো কখন তাকে পাত্রপক্ষের সামনে নেয়া হবে। সে জানে সে সুন্দরী যেকোনো পাত্রপক্ষ তাকে দেখে পছন্দ করবে। কিন্তু যদি এরা পছন্দ না করে? যাদিদকে পাবেনা তাহলে! ভাবতেই কান্না পেয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর যখন তাকে পাত্রপক্ষের সামনে নেয়া হলো সে বাঁকা চোখে যাদিদকে দেখে নিলো। কিন্তু হায় যাদিদ তো একবারো তাকাচ্ছে না! নাকি তার মতো প্রথমেই চুরি করে দেখে নিয়েছে যা সে টের পায়নি! দুই পক্ষেরই পছন্দ অপছন্দ মতামত সব মিলে গেলো। যাদিদ ও তিরার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানার জন্য তাদেরকে একা কথা বলতে দেয়া হলো। তিরা তো খুশিতে বাকবাকুম করতে লাগলো। যাদিদ সামনাসামনি ছবির থেকেও বেশি স্মার্ট। তিরার ইচ্ছে করছে যাদিদকে স্কচটেপ দিয়ে দেয়ালে লাগিয়ে রাখতে, যাতে সারাক্ষণ দেখতে পারে!

কথা বলার জন্য যাদিদ ও তিরাকে ছাদে নিয়ে যাওয়া হলো। দুজন পাশাপাশি হাঁটছিলো। যাদিদ প্রথম প্রশ্নটাই করলো এমন,
“এত অল্প বয়সে বিয়ে করছেন যে? পড়াশোনা করার ইচ্ছে নেই?”
যাদিদের গম্ভীর গলায় এই প্রশ্ন শুনেই তিরার কপাল কুঁচকে গেলো। সে যথাসম্ভব কপাল সোজা রেখে দৃঢ় কন্ঠে উত্তর দিলো,
“বিয়ের সিদ্ধান্ত আমার বাবা মায়ের৷ আমি তাদের কথার উপর কথা বলিনা। পড়াশোনা বিয়ে হয়ে গেলেও করবো আমি। সেকথা আমার বাবা মাকে বলেছি।”
“আপনার কন্ঠটা চেনা চেনা লাগছে।”
তিরা ঘাবড়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো।
“সবাই বলে আমার কন্ঠস্বর শুনলে নাকি মনে হয় খুব চেনা কেউ।”
“সেসব যারা বলে আপনাকে পটানোর জন্য বলে। আমার তো আপনাকে পটানোর প্রয়োজন নেই। আমি চাইলেই আপনাকে পেতে পারি।”
ছেলের ভাব দেখে তিরার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। বললো,
“আমি না চাইলেও পেতে পারেন?”
“হ্যাঁ কারণ আপনি একটু আগেই বলেছেন আপনি আপনার বাবা মায়ের কথার উপর কথা বলেন না।”
যাদিদের একথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলো তিরা। ছেলে তো আরশির মত বুদ্ধিমান। কথার পিঠে কথা ঢেলে কুপোকাত! তিরা আবার মজে গেলে যদিদপ্রেমে। যাদিদ জিজ্ঞেস করলো,
“আমার সম্পর্কে কিছু জানতে চান আপনি?”
তিরার নিজেকে চিনতে এবার অসুবিধা হচ্ছিলো। যে মেয়ের মুখের আগায় কথা থাকে সে কিনা এখন একটা প্রশ্নও খুঁজে পাচ্ছে না যাদিদকে করার মতো? তিরা বললো,
“আস্তে আস্তে জেনে নেব। যা জানা খুব জরুরি তা নিশ্চয়ই আমার বাবা মা জেনে নেবেন।”
“আপনি তো দেখছি একদম ড্যাডি’স গার্ল!”
তিরা চুপ। তবে বাঁকা চোখে দেখছে যাদিদকে। যাদিদ আবার বললো,
“আমার ছুটি শেষের দিকে। হাতে সময় খুব কম। কিছু জানার থাকলে জেনে নিন। আমরা রাজী হলে কিন্তু সামনের সপ্তাহেই বিয়ে।”
তিরার হঠাৎ মনে পড়ে গেলো সিগারেটের বিজ্ঞাপণের সেই বিশেষ ক্ষতির কথাগুলো। জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি সিগারেট খান?”
“না।”
“মদ খান?”
“মাঝেমাঝে খুব রেয়ার।”
“গার্লফ্রেন্ড ছিলো কোনো?”
“হ্যাঁ।”
“ব্রেকাপ হলো কেন?”
“সেইম এজ ছিলাম। আমি যখন স্টুডেন্ট তখন তার বিয়ে হয়ে গেছে।”
“আপনাদের এখনো যোগাযোগ আছে?”
“না। সে এখন দুই বাচ্চার মা। আপনার বয়ফ্রেন্ড ছিলো কোনো?”
“না।”
“আমাকে বিয়ে করছেন কি একদমই বাবা মায়ের ইচ্ছেয়? নাকি আমাকে দেখে ভালো লেগেছে বলে? নাকি আমার ভালো জব আছে বলে?”
“প্রথম দুটো কারণে।”
“গট ইট। আপনার আর কিছু জানার আছে?”
“আপনি কি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন?”
“সম্ভাবত।”
তিরা আতঙ্কিত চোখে তাকালো। যাদিদ বললো,
“যখন কেউ ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে তখন তার বুকে হাত বুলিয়ে দিলে নাক ডাকা থেমে যায়।”
“ওহ আচ্ছা। আপনার কোনো বদ অভ্যাস নেই?”
“আছে।”
“কী?”
“ঘুমের মধ্যে গায়ে পা তুলে দেই।”
“আপনার ওজন কতো?”
এই প্রথম যাদিদ হাসলো। তারপর বললো,
“ঘাবড়ানোর মতো নয়।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here