#প্রেমে_পড়া_বারণ পর্ব ৫

0
316

#প্রেমে_পড়া_বারণ পর্ব ৫
লেখা: জেসিয়া জান্নাত রিম

রহমান এম্পায়ারস্ এর মেইন অফিসের সামনে নামলো তিন্নি। উদ্দেশ্য আফিফের সাথে দেখা করা। তিথির পরিক্ষা শেষ হয়েছে এক সপ্তাহ। ইন্টার্ন শুরু হওয়ার আগেই আফিফের সাথে তিথির বিয়েটা সেরে ফেলতে চায় ও। আফিফের ব্যাপারে অনেক আগেই ও জানতে পেরেছে। যদিও তিথি এখনো এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা। সব ঠিকঠাক করে তারপর তিথি কে জানাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিন্নি। এখন আফিফের সাথে কথা বলতে হবে ওকে। অফিসের রিসিপশনে গিয়ে আফিফের খোঁজ করতেই সুন্দরী রিসিপশনিস্ট ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
—আপনার কি কোনো এপয়েন্টমেন্ট আছে ম্যাডাম।
তিন্নি মুচকি হেসে উত্তর দিলো,
— না।
— তাহলে তো এখন দেখা করতে পারবেন না।
— আপনার স্যার আমাকে চিনবে। আপনি শুধু একটু ফোন দিয়ে বলবেন তিথির বোন তিন্নি এসেছে।
— আপনার কাছে স্যারের নাম্বার নেই।
— না। আপনি একটু ফোন দিন। জরুরী দরকার। যদি উনি দেখা না করতে চান তাহলে নাহয় আমি চলে যাব।
রিসিপশনিস্ট আর কথা বাড়ালো না। আফিফ কে ফোন দিলো। ও ফোন রিসিভ করতেই বলল,
— স্যার কোনো তিথির বোন তিন্নি এসেছে। কি করবো?
— কি নাম বললে?
— তিথির বোন তিন্নি।
— ওহো হো। জলদি তাকে আমার কেবিনে নিয়ে এসো। তুমি ঠিক মতো কথা বলেছো তো তার সাথে?
— জ্বি স্যার।
— ঠিক আছে। জলদি নিয়ে এসো।
ফোন টা রাখতেই আফিফের বুক ধড়ফড় করা শুরু করলো। তিন্নি কি করতে আসছে? তিথি আর ওর ব্যাপারে সব জেনে কি ওকে তিথির জীবন থেকে সরাতে এসেছে? এখন ও কি করবে? এসব নানা টেনশনে ওর মাথা খারাপ হয়ে গেল। সামনে থাকা পানির গ্লাস থেকে এক ঢোকে পুরোটা খেয়ে নিলো ও। ততক্ষণে তিন্নি এসে পড়েছে। দরজার বাইরে থেকে তিন্নি বলল,
— ভেতরে আসবো?
— আসুন।
ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে তিন্নি বলল,
— আমি আপার ছোট। সম্পর্কে এবং বয়সে আপনি আমার বড় তাই আমাকে আপনি করে ডাকার কোনো মানেই হয় না।
তিন্নির কথায় আফিফের টেনশন টা একটু কমলো। মুখে হাসি ফুটিয়ে ও তিন্নিকে বসতে বলল। তিন্নি বসতে বসতে বলল,
— এই পাঁচ বছরে আপা আমার কথা নিশ্চয়ই আপনাকে বলেছে?
— হ্যা তাতো বলেছে। তবে আজকে যে তুমি আসবে সেটা ও আমাকে বলেনি।
— ও নিজেই জানে না। আপার পরিক্ষা শেষ হয়েছে সেটা তো জানেন কি
তাইনা?
— হুম।
— আমি চাচ্ছিলাম এর মাঝে আপনাদের বিয়েটা সেরে ফেলতে।
তিন্নির কথায় অবাক হয়ে তাকালো আফিফ। ও কি ঠিক শুনছে? ওর আর তিথির বিয়ের কথা বলছে তিন্নি। অবাক হবার মতোই বিষয়। আফিফ শিওর হওয়ার জন্য তিন্নি কে বলল,
— তুমি কি আমার আর তিথির বিয়ের কথা বলছে?
— হ্যা।
— সত্যি?
— হুম সত্যি।
কথাটা শুনেই ইয়াহু বলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো আফিফ। ফোন উঠিয়ে ওর সেক্রেটারি কে ডেকে পাঠালো ও। সেক্রেটারি এলে ওকে নিয়ে কিছুক্ষণ খুশিতে ঘুরলো। তারপর তাকে বলল,
— শোনো আজকে অফিসের সবার জন্য লাঞ্চ আমার তরফ থেকে। আজ আমি বিশাল খুশি। আর শালিকা তুমি কি নেবে?
তিন্নি এতক্ষণ আফিফের কান্ড দেখে মিটি মিটি হাসছিল। আফিফের কথা শুনে বলল,
— আপনি আগে শান্ত হয়ে বসেন। আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।
— তুমি কিছু নেবে না?
— আচ্ছা এক কাপ কফি বলে দিন।
— আর কিছু?
— না।
আফিফ সেক্রেটারি কে বিদায় করে আবারো নিজের জায়গায় এসে বসলো। তিন্নি বলা শুরু করলো,
— শুধু আপনি আর আপা রাজি হলে তো হবেনা। আপনার মায়ের অনুমতি ও দরকার। আমাদের তরফ থেকে কোনো অবজেকশন নেই। আন্টির সাথে আমার সরাসরি কথা বলা উচিত ছিল। কিন্তু আমি চাইছি আপনি আন্টির সাথে আগে কথা বলে নিলেই বোধহয় বেটার হবে। আমাদের সম্পর্কে তো সবই আপনার জানা। আপনার এতে সমস্যা নেই সেটাও বুঝতে পারছি। তবে আন্টির থাকতে পারে।
— মায়ের কোনো সমস্যা হবে না। মাকে তিথির কথা আমি বলেছিলাম। মা তোমাদের সাথে দেখা করতে চায়।
— আচ্ছা তাহলে সব যদি ঠিক থাকে তাহলে সামনে শুক্রবার আপনারা বাসায় আসুন। আপাকে আন্টি দেখে গেলেন।
— আমি মায়ের সাথে কথা বলে তোমাকে জানাই।
— তাহলে আন্টির সাথে আমাকে একটু কথা বলিয়ে দিবেন। আমি নিজে তাকে ইনভাইট করবো।
— ঠিক আছে।
সেক্রেটারি এসে কফি দিয়ে গেল। কফি খেতে খেতে তিন্নি আর আফিফের মধ্যে বিয়ের বিষয়ে টুকটাক আলাপ আলোচনা হলো। যাওয়ার সময় তিন্নি আফিফের উদ্দেশ্যে বলল,
— আপনি আমাকে যতটা খারাপ মনে করেন ততটা ও খারাপ আমি নই। তবে আমার পরিবারের ভালোর জন্য কিছু স্ট্রিক্ট ডিসিশন আমাকে নিতে হয়।
আফিফ কিছু বলতে পারলো না। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বোকার মতো হাসল শুধু।

আফিফের অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা ভার্সিটিতে গেল তিন্নি। আজ শনিবার। ভার্সিটিতে ওর একটা ক্লাস আছে আজকে। সেটা শেষ করে আজকে ওর কাজের সিডিউল টা মনে মনে একবার ভেবে নিলো তিন্নি। ক্লাস শেষে বিদ্যুৎ বিল এবং তিনটা ডি পি এস এ টাকা জমা দিতে হবে আজকে। তারপর বাসায় যাবে। বিকালে তিনটা টিউশনি রয়েছে। তারপরে আর কোন কাজ নেই। একবার ইফতেখারের সাথেও কথা বলতে হবে ওকে। শুক্রবার যদি আফিফ রা আসে তাহলে শুক্রবারে কোনো কাজ রাখা যাবে না। ওর শো টা আগে থেকে রেকর্ড করে দিতে হবে। শুক্রবারের টিউশনি গুলো আগে বা পরে পড়িয়ে দিলেই হবে। সকালের কোচিং টা শুধু এটেন্ড করা যেতে পারে। এসব ভাবছিল আর ক্যাম্পাস দিয়ে হাঁটছিল ও। এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠায় ভাবনায় ছেদ পড়ল ওর। ফোনটা হাতে নিতেই বিরক্তি তে চোখমুখ কুঁচকে গেল তিন্নির। আবিদের নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। লোকটা কিছুদিন ধরেই ওকে ফোন দিয়ে জালাচ্ছে। ও বুঝে পাচ্ছে না ওর নাম্বার লোকটা পেল কি ভাবে? অবশ্য এ যুগে এটা অসম্ভব কিছু নয়। সেদিনের সেই ঘটনার পর তিন্নি ভেবেছিলো সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু লোকটা নাছোড়বান্দা। এরপর থেকে প্রতিদিনই নিত্য নতুন বাহানায় ওর সাথে দেখা করতে আসে। প্রায় প্রতিটা সময় ওর পিছনে আঠার মত লেগে থাকে। তিন্নি বুঝতে পারে আবিদ কি চায়। এরকম পরিস্থিতি কম আসেনি ওর জীবনে। প্রত্যেকবার খুব সুন্দর ভাবে এগুলো সামলে নিয়েছে ও। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রতিবার বিপরীত পাশের মানুষের জন্য ওর মনে কোন অনুভূতি থাকেনা। কিন্তু এবার আবিদের প্রতি ওর একটা অনুভুতি জন্মেছে। এর জন্য ও আরো বিরক্ত। তাই ও যতটা সম্ভব আবিদ কে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আবিদ কিছুতেই ওর পিছু ছাড়ছে না। এবার একটু কঠিন হতেই হবে ওকে। ফোনটা তখনও বাজছে। এবার রিসিভ করলো তিন্নি। রিসিভ করে কড়া গলায় বলল,
— কেউ ফোন রিসিভ করছে না মানে সে তখন বিজি অথবা রিসিভ করতে চায় না। তারপর ও আপনি কেন বার বার কল দিচ্ছেন?
— প্রথমত তুমি এখন মোটেও বিজি না। দ্বিতীয়ত তুমি যাতে একদিন নিজের ইচ্ছায় আমার ফোন রিসিভ করো সেটার জন্যই তোমাকে বেশি বেশি ফোন দিচ্ছি।
— আপনাকে কে বলল আমি বিজি না?
— কারণ তুমি এই মুহূর্তে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে হুদাই হাঁটাহাঁটি করছো। এটাকে বিজি থাকা বলে না।
— আপনি কি করে জানলেন?
— আমি তোমার পিছেই দাঁড়িয়ে আছি।
তিন্নি দ্রুত পিছনে তাকালো। ওর থেকে কিছুটা দূরে হাঁসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে আবিদ। ওকে ফিরতে দেখে হাত নাড়লো। তিন্নি সেদিকে এগিয়ে গেল। আবিদের সামনে দাঁড়িয়ে ওকে বলল,
— দেখুন আমি জানি আপনি এক্স্যাকলি কি চাইছেন। কিন্তু আমার পক্ষে সেটা কোনোদিনই সম্ভব নয়।
— কেন? আমার মধ্যে কি সমস্যা?
— বিষয় টা মোটেও সেরকম না। আপনি বা অন্য কেউ কারো জন্যই আমার কাছে কোনো সময় নেই। আমি আসলে প্রেম ভালোবাসার জন্য না। আপনি ভুল মানুষের প্রেমে পড়েছেন।
— তুমি আমার জন্য পারফেক্ট।
— না। আমি কারো জন্যই পারফেক্ট না। আপনি প্লিজ আমার পিছু ছেড়ে দিন। এতে আপনার আমার দুজনের সময় নষ্ট হবে। এছাড়া কিছুই না। আমার দেরি হচ্ছে। আমি যাচ্ছি।
কথাটা বলেই হাঁটা শুরু করলো তিন্নি। আবিদের ফোনটা বেজে উঠলো তখনই। রিহানের ফোন। আবিদ রিসিভ করে বলল,
— আচ্ছা কোনো মেয়ে যদি বলে সে প্রেম ভালোবাসার জন্য না এর মানে কি?
আবিদের প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ চিন্তা করলো রিহান। মনে পড়লো কিছুদিন আগে একটা মেয়েকে প্রপোজ করলে মেয়েটি ওকে বলেছিল ফ্যামিলির কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে। মেয়েটি প্রেম করতে চায় না। রিহান সাথে সাথে বলল,
— তার মানে মেয়েটি সরাসরি বিয়ে করতে চায়।
— কিহ সত্যি দোস্ত?
— আমার এক্সপেরিয়েন্স সেটাই বলছে।
— আচ্ছা আমি তোকে পরে ফোন দিবো।
বলেই রিহানের কোনো কথা না শুনে ফোন কেটে দিল আবিদ। তিন্নি এখনো ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরোয়নি। আবিদ দৌড়ে তিন্নির কাছে গিয়ে হুট করে ওর একটা ছবি তুলে নিয়ে আবারো দৌড়ে বেরিয়ে গেল। ঘটনা টা এত দ্রুত ঘটে গেল যে তিন্নি কিছু বুঝতে পারলো না।

মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আবিদ। শিরিন ছোট ছেলের চুলে বিলি কাটছেন। মাসে এক দুইবার মায়ের প্রতি খুব আদর পায় আবিদের তখন এভাবে মায়ের কোলে শুয়ে ফ্রি হেড ম্যাসাজ নেয় ও। কখনো কোনো কিছু প্রয়োজন হলেও কাজটি করে ও। কিছুক্ষণ ছেলের মাথায় হাত বোলানোর পর শিরিন নিজেই বললেন,
— কিরে কিছু লাগবে তোর?
— কিছু লাগলেই বুঝি তোমার কাছে আসি আমি?
— মনে তো হয় তাই।
— আচ্ছা যাও উঠে যাচ্ছি।
বলেই উঠতে যাচ্ছিল আবিদ। শিরিন আবিদ কে টেনে ধরলেন। তারপর আগের মতো শুইয়ে বললেন
— আরে না না। আমি তো এমনিতেই বললাম।
তারপর দুজনেই চুপ। মিনিট দুয়েক পর আবিদ বলল,
— মা ভাইয়া তো বিয়ে করতে চায় না তাইনা?
— মনে তো হচ্ছে সেটাই।
— তাহলে মা দরকার নেই ওর বিয়ে দিয়ে তুমি বরং আমার বিয়ে দাও। পাত্রী রেডি আছে।
হুট করে মাথায় হাত বুলানো বন্ধ করে দিলেন শিরিন। আবিদের কান ধরে ওকে টেনে ওঠালেন। আবিদ কান ডলতে ডলতে বলল,
— কান টানলে কেন আমি বড় হয়েছি না। শিরিন রেগে গিয়ে বললেন,
— তোমার কাজকর্ম তো তা বলে না। কতবার বলেছি ভাইয়াকে বিজনেস এ সাহায্য কর। তখন বাবু বলেন উনার কাজ করার বয়স হয়নি। এখন বিয়ে করতে চায় বলে বলছে বড় হয়েছি না।
— মা বিয়ে দিয়ে তো দেখ আমি ঠিক অফিসে যাবো।
— মেয়েটা কে?
মায়ের কথায় হাসি ফুটলো আবিদের মুখে। মায়ের কোল ঘেঁষে বসে বলল,
— ওর নাম তিন্নি মা। ছবি দেখবে?
— দেখা।
পকেট থেকে ফোন বের করে তিন্নির ছবিটা মাকে দেখালো আবিদ। ছবি দেখে শিরিন বললেন,
— মেয়েটাকে দেখে তো বেশ বয়স্ক লাগে। এতো মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া কানা নাকি?
— না মা কানা না মেয়ের বয়স ও বেশি না। বাইশ বছর হবে।
পিছন থেকে কথাটা বলল আফিফ। শিরিন এবং আবিদ আফিফের দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালো। আফিফ সোফায় বসতে বসতে বলল,
— সামনে শুক্রবার ওদের বাসায় যাচ্ছি আমরা। বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে।
শিরিন কিছুই বুঝতে পারছেন না। আবিদ বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেসে বলল,
— ভাইয়া তুই আমার ব্যাপারে এত ভাবিস। মেয়েটির ঠিকানা ও বের করে ফেলেছিস। এখন আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ও যাবি। তুই ওয়ার্ল্ড এর বেস্ট ভাইয়া।
— আরে আরে তোর বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে যাবো কে বললো। আমি তো আমার কথা বলছি।
অবাক হয়ে তাকালো আবিদ। বলল,
— তোর মানে। এক মিনিট তুই যার সাথে প্রেম করছিস সে তিন্নি। এই জন্যই তিন্নি আমার প্রপোজাল একসেপ্ট করেনি।
— আরে না। আমি তিন্নির কথা বলছি না।
— তাহলে?
— ওর বড় বোন তিথি কে বিয়ে করবো আমি।
— ওহ তাই বল। তাহলে তো ভালোই হলো। দুই ভাই এক বাড়িতে বিয়ে করবো।
— সেটা সম্ভব না।
— কেন?
— তিন্নি কখনো তোকে বিয়ে করবে না।
— কেন ভাইয়া ও কি অন্য কাউকে ভালোবাসে?
— না। এখানে অনেক কাহিনী আছে। তুই ওকে চিনিস কতদিন?
— এক দেড় মাসের মতো।
দুই ছেলের কথোপকথনের কিছুই বুঝতে পারলেন না শিরিন। তিনি দুজনকে ধমকে চুপ করালেন। তারপর বড় ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
— তুই কাকে বিয়ে করবি বললি?

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here