#প্রেমে_পড়া_বারণ পর্ব ৬

0
472

#প্রেমে_পড়া_বারণ পর্ব ৬
লেখা: জেসিয়া জান্নাত রিম

মায়ের কথায় ভাইয়ের দিক থেকে নজর সরিয়ে মায়ের দিকে দিল আফিফ। মনের মধ্যে কথাগুলো গুছিয়ে নিয়ে বলল,
— আমি তোমাকে সেদিন বললাম না আমি একটি মেয়েকে পছন্দ করি।
— হুম বলেছিলি।
— ওর নাম তিথি মা। আমি ওকেই বিয়ে করতে চাই।
— সত্যি তুই বিয়ে করবি? মেয়েটি কে? কেমন দেখতে? কি করে? ফ্যামিলি কেমন?
— মা এক এক করে প্রশ্ন করো। একসাথে এতগুলো প্রশ্নের উত্তর আমি কিভাবে দিব। আর ওর নাম তিথি মা। মেয়েটা মেয়েটা কেন করছ।
— আচ্ছা আগে তিথির ছবি দেখা আমাকে।
মায়ের কথা মতো ফোন বের করে তিথির ছবি দেখালো আফিফ। ছবি দেখে শিরিন বললেন,
— মেয়েটা তো বেশ সুন্দর।
— তোমার পছন্দ হয়েছে?
— হ্যা। কিন্তু শুধু সুন্দর দেখতে হলে তো হবেনা ওর সম্পর্কে সব জানতে হবে। কি করে মেয়েটি?
— মেডিকেলের ছাত্রী মা। এইতো কয়েক দিন আগে ওর ফাইনাল ইয়ার শেষ হলো। রেসাল্ট বের হলেই ডাক্তার।
— ঐ তুই এই মেয়ের খোঁজ কেমন করে পেলি?
মেডিকেলের সাথে তো আমাদের কারো কোনো সম্পর্ক নেই।
— আমার এক বন্ধু মেডিকেলে পড়ত।পলাশের কথা মনে নেই তোমার?
— তোর হাইস্কুলের বন্ধু?
— হুম। সে সময় প্রায় উইকেন্ডে আমরা কয়েক জন বন্ধু মিলে ওর ওখানে গিয়ে আড্ডা দিতাম। তিথি ওর কাছে পড়তে আসত। আমি প্রায়ই সময়ের আগে গিয়ে তিথি কে দেখার জন্য বসে থাকতাম। তখন থেকেই তিথি কে চিনি আমি। প্রায়ই আমাদের কথা হতো। সে বছর ওর জন্মদিনের দিন ওকে প্রপোজ করলাম। সেদিন থেকেই ওর সাথে আমার সম্পর্ক।
— এতদিন ধরে প্রেম করছিস অথচ আমরা কেউ জানতেই পারলাম না?
— কয়েক জন ক্লোজ ফ্রেন্ড ছাড়া কেউই জানেনা। আর তোমাকে তো ইচ্ছা করেই জানায়নি। জানালে তখনই বিয়ে বিয়ে করে পাগল করে দিতে।
— প্রেম করতে পারো আর বিয়ে করতে পারো না। এত লুকোচুরি কেন?
— ব্যাপারটা মোটেও সেরকম না মা। আসলে ওর ফ্যামিলিতে কিছু সমস্যা ছিল তাই ও চাইছিল না আমাদের সম্পর্ক টা বেশি জানা জানি হোক।
— সমস্যা মানে?
— সিরিয়াস কিছু না মা। আসলে ওর সাথে যে বছর আমার সম্পর্কের শুরু হয় সে বছরই ওর বাবা এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। ওর বাবার এই আকষ্মিক মৃত্যুতে ওর পরিবারের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। তখন তিন্নি সব কিছুর দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়ে নেয়।
— তিন্নি মানে আবিদ যার ছবি দেখালো?
— হুম। আমি প্রথম থেকে বলি তোমরা দুজনেই শোন সব বুঝতে পারবে। তিথিরা তিন ভাই বোন। তিথি বড় তারপর তিন্নি এবং সবার ছোট ওদের ভাই সানভি। তিথিরা মধ্যবিত্ত পরিবারের বলা যায়। তবে গ্রামে ওদের অনেক জায়গা জমি থাকার কারণে সেখানে বেশ ভালই প্রতিপত্তি আছে ওদের। ওদের বাবা যখন মারা যায় তখন তিথি সবে মেডিকেলের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আর তিন্নি তখন ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র। ইনফ্যাক্ট ওর বাবা যেদিন এক্সিডেন্ট করে ওর সেদিন লাস্ট পরীক্ষা ছিল। আর সানভি মানে ওদের ভাই তখন স্কুলেই ভর্তি হয়নি। তিন চার বছর বয়স হবে। মানে বুঝতেই পারছ কোন পরিস্থিতিতে ওরা পড়েছিল। সুযোগ পেয়ে গ্রামে ওদের যত শত্রু ছিল সবাই নানা ভাবে ওদের পেইন দিতে থাকল। ঢাকায় ওদের যে ফ্লাটটা ছিল ওটা ওর বাবা মারা যাবার কয়েক মাস আগে কিনেছিলেন। তবে তার জন্য অফিস থেকে লোন নিয়েছিলেন তিনি। যেটা শোধ করে যেতে পারেননি তিনি। এমন পরিস্থিতিতে ওদের জায়গা জমি নিয়েও বেশ ঝামেলা বাঁধল। ওর মা সাধারণ হাউস ওয়াইফ। শিক্ষিত হলেও এসব ব্যাপারে মোটেও অভিজ্ঞতা তার নেই। ওর বাবা একটা প্রাইভেট ফার্মে জব করতেন। ওদের পরিস্থিতি দেখে আন্টিকে জব অফার করলেন তারা। যদিও সেটা ওদের বাবার পোস্টের থেকে কিছুটা নিচের কিন্তু এতে ওদের লোন শোধ এবং টেম্পরারি একটা সমাধান হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আন্টির এত আত্মবিশ্বাস ছিল না। সব মিলিয়ে খুবই গোলমেলে অবস্থা। তিথি বড় সন্তান হলেও ওর বা আন্টির কারো পক্ষে এই অবস্থা সামাল দেওয়ার মতো ক্ষমতা বা মানসিকতা ছিল না। তখন তিন্নি স্টান্ড নিল। তখন ওর কতই বা বয়স। আঠারো বছর হবে। তিথির মুখে শোনা সেই ছোট্ট বয়সেই সব বড় বড় সমস্যা দক্ষতার সাথে সলভ্ করেছে ও। প্রথমত ওদের জমি জমা নিয়ে যে সমস্যা সেটা সলভ্ করলো। তারপর আন্টিকে চাকরিটা নিতে একপ্রকার বাধ্য করলো। তখন তিথির সাথে দেখা হলেই তিথি বলত তিন্নি সারা রাত জেগে আন্টির সাথে অফিসের জরুরি কিছু কাজ করেছে। বলতে গেলে আন্টিকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছে ও। নেট ঘেটে বিভিন্ন বই পড়ে আগে নিজে শিখেছে দেন আন্টিকে শিখিয়েছে। তখন থেকেই ভীষণ এক্টিভ ও। মাসে চার পাঁচটা টিউশনি করায়, একটা কোচিং এ পড়ায় আবার রেডিও স্টেশনে ও কাজ করে। সাথে নিজের পড়া লেখা তো আছেই। এইসব সামলাতে সামলাতেই হয়তো মেয়েটা পাথর হয়ে গেছে। ওদের ফ্যামিলির জন্য সব সিদ্ধান্ত ওই নেয়। আন্টি বা তিথি কখনোই ওর কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যায় না। আন্টি শুধু অফিসে যায় মাস শেষে বেতন পায়। ওনার ভুমিকা এতটুকুই। কিন্তু তিন্নি ওদের পড়াশুনার খরচ, যাবতীয় বিল পে করা, মাসের বাজার সবকিছু দেখে আসছে। কতবার তিথি আমাকে বলেছে যে সে তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হতে চায়। তারপর তিন্নির কিছু দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে চায়। এখন আন্টি বেশ ভালো পজিশনে আছে। সমস্ত লোন পরিশোধ করা হয়েছে। বেতন পায় ভালোই। কিন্তু তিন্নি তেমনি আছে। তিথি বলে তিন্নি একবার যে বিষয়ে না বলে তা আর হ্যা তে পরিবর্তন করা যায় না। তবে ও যে বিষয়ে না করে পরবর্তী তে দেখা যায় সেটা আসলেই ক্ষতিকারক। এই যে পাঁচ বছর ধরে তিথি আমার সাথে রিলেশনে আছে সেটা আমরা লুকিয়েছি ওর কারণে। ও প্রথম থেকেই বলেছে পড়া শেষ না করে তিথির বিয়ে দেবেনা। এই একটা কারনে আমি ওকে কখনোই পছন্দ করতাম না। কিন্তু আজ যখন ওর সাথে দেখা হলো তখন ওর ব্যাখ্যা শুনে নিজেই গিল্ট ফিল করলাম। ওর সাথে আমার আর তিথির বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছিলাম। সেটা শেষ করে যাওয়ার আগে ও আমাকে বললো, ” আমি জানি আপনি আমাকে বিশেষ পছন্দ করেন না। কারণ আমার জন্য আপনাকে এতদিন অপেক্ষা করতে হলো। আসলে আমি চেয়েছিলাম আপা তার পড়া শেষ করুক। আপনি হয়তো বলবেন বিয়ের পরেও তো ও পড়তে পারতো। কিন্তু অনুভূতি মানুষকে বোকা বানিয়ে ফেলে। এখন আপা শুধু মাত্র পড়া লেখায় ফোকাস করতে পারছে। যখন বিয়ে হবে। ওর একটা সংসার হবে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ওকে অবশ্যই আপনাদের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত টা নিতে হবে। আমি আম্মাকে দেখেছি আমাদের কারণে নিজের কত ইচ্ছার জলাঞ্জলি দিতে। আমি চাইনা আম্মার মত অবস্থা ওর হোক। পরনির্ভরশীলতা মানুষকে জড়ো পদার্থ বানিয়ে দেয়। আমি জানি আপনাদের ফ্যামিলি তে বিয়ে হলে ওর বাইরে কাজ করতে কোনো অসুবিধা হবে না। এই পাঁচ বছর ও একটা ট্রাকে থেকে পড়াশোনা করেছে। আমি আমার বোনকে চিনি। মাঝে যদি ওর বিয়ে হতো তাহলে দেখা যেত এক ইয়ার ড্রপ দিয়ে বসে আছে। এই জন্য পড়াশোনা শেষ হলে ওর বিয়ে দিতে চেয়েছি।”
তিন্নি মেয়েটা ওর বয়সী অন্য মেয়েদের তুলনায় বেশি ম্যাচিয়ুরড্। ওদের বাবার শূন্য জায়গাটা ও পুরণ করেছে। এখন পরিস্থিতি এমন ও সরে আসলে আবারো ওর পরিবার এলোমেলো হয়ে যাবে। আমি যতদূর জানি তিন্নির সামনে কখনো ওর বিয়ে সম্বন্ধীয় কোন বিষয় বলা নিষেধ। এই অবস্থায় তোমার ছোট ছেলের জন্য ওর আশা ছেড়ে দেওয়াই ভালো। আপাতত ফোকাসটা আমার বিয়েতে রাখা উচিত।
এ পর্যায়ে আবিদ বলল,
— ভাইয়া তুই শুধু নিজের কথাই ভাবছিস।
— মোটেও না। তোকে সতর্ক করছি। যেটা সম্ভব না সেটা করতে যাস না। আর কিছু দিনের পরিচয়ে ওর জন্য এত পাগল হওয়ার তো কিছু নেই।
— দেখ ভাইয়া আমি কিছু জানি না। শুধু জানি আমি ওর ব্যাপারে সিরিয়াস। বিয়ে করলে ওকেই করবো যা কিছু করতে হয় করবো কিন্তু ওকে আমাকে ভালোবাসতেই হবে।
— আবিদ বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। মা তুমি কিছু বলো।
শিরিন দুই ছেলেকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন। তারপর বললেন,
— এক বাড়ির দুই মেয়েকে দুই ছেলের জন্য আনতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু শুধু আমি চাইলে তো হবেনা তাদের ও চাইতে হবে। আর বিয়ে কোনো ছেলের হাতের মোয়া না। যে চাইলাম আর সাথে সাথে হয়ে গেল। আফিফ যেহেতু বড় আগে ওর বিয়ে টা ঠিক করতে হবে। তিথি আর আফিফের সব ঠিক হলে আমি তিন্নির ব্যাপারেও বলবো তবে আগে ওদের সাথে দেখা করতে হবে তো। নাকি?
মায়ের কথায় আফিফ বলল,
— ভালো কথা তিন্নি তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছে। তোমাকে শুক্রবারের জন্য নিজে ইনভাইট করবে বলে।
— ঠিক আছে ওর নাম্বার টা দে আমিই ফোন দিই।
আফিফ নিজের ফোন থেকে তিন্নি কে কল দিয়ে ফোনটা মায়ের কাছে দিল। শিরিন ফোনটা কানে লাগিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলেন। তিনবার রিং হতেই তিন্নি ফোন রিসিভ করে বলল,
— আসসালামুয়ালাইকুম আফিফ ভাই।
— আলাইকুম সালাম। আমি আফিফের মা বলছিলাম।
— ওহ সরি আন্টি আমি বুঝতে পারিনি।
— দোষটা তো তোমার না। ছেলেটাকে বললাম আমার ফোন থেকে কল দেই। ছেলে আমার বিয়ের খুশিতে এত এক্সাইটেড যে নিজের ফোন থেকে কল দিয়ে দিল। তুমি নাকি আমার সাথে কথা বলতে চাও।
— জ্বি আন্টি। আসলে এসব বিষয়ে বড় দের কথা বলা উচিত। কিন্তু…
— আফিফ সবকিছু বলেছে আমাকে।
— আমি আম্মাকে বলেছিলাম আপনার সাথে কথা বলতে। কিন্তু আমার আম্মা সবকিছুই আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আসলে আমি চাইছিলাম আপার ব্রেকের মধ্যেই বিয়েটা যাতে হয়ে যায়। ইন্টার্নশিপ শুরু হলে তো সময় বের করা সমস্যা। আর দুই পরিবারের মধ্যেও তেমন পরিচিতি নেই। তাই যদি এই শুক্রবার আপনারা সপরিবারে আসতেন তাহলে ভালো হতো।
— হ্যা আমিও চাচ্ছি বড় ছেলের বিয়ে জলদি দিয়ে দিতে। শুক্রবার দিনটিই ভালো।
— তাহলে আন্টি আম্মাকে জানিয়ে দেই আপনারা শুক্রবার আসছেন?
— হ্যা। তাহলে ঐ কথাই রইলো। কিন্তু তুমি কি এখন বাইরে নাকি চারিদিকে এত শব্দ?
— জ্বি আন্টি। টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরছি। এখন বাসে।
— আচ্ছা তাহলে সাবধানে বাসায় যাও। পরে কথা হবে। আল্লাহ হাফেজ।
— আল্লাহ হাফেজ।

বাসায় ফিরেই তিন্নি মাকে গিয়ে আফিফদের আসার কথা বলল। তিন্নি বেশিরভাগ সময় রাতেই গোসল করে। এতে সারাদিনের ক্লান্তি একেবারে দূর হয়ে যায়‌। আজকেও তিন্নি রাতে গোসলে ঢুকলো। তবে বারবার ফোন বেজে ওঠায় বেশিক্ষণ ধরে গোসল করা গেল না। দ্রুত গোসল সেরে বেরিয়ে ফোন হাতে নিল ও। গ্রামের বাড়ির নম্বর থেকে ফোন এসেছে। ও জলদি কল ব্যাক করলো। এখন রাত নয়টার মতো বাজে। গ্রামে এটা অনেক রাত। এসময় কেন ফোন করেছে। তাহলে কি দাদীর কিছু হলো। এসব নানা টেনশনে তিন্নির মাথায় এলো। ওপাশ থেকে ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হলো। তিন্নি দ্রুত বলল,
— কি হয়েছে ভাবী দাদী ঠিক আছে?
— চিন্তা কইরো না। আল্লাহর রহমতে দাদী ভালা আছে। তোমার ভাই কতা কইবো হের লাইগা ফোন দিছে।
— ওহ। কোথায় দাও জসিম ভাইকে।
— এই তো ধরো কতা কও।
বলেই ফোনটা স্বামির দিকে বাড়িয়ে দিল কাজল। জসিম ফোনটা কানে ঠেকিয়ে বলল,
— কি ভালো সবাই?
— আলহামদুলিল্লাহ। ওখানের কি খবর?
— খবর বেশি ভালো না। সালাউদ্দিনের পোলা কাদেরের বেশি বাইড় বাড়ছে।
— কেন কি করেছে?
— ওদের বাড়ির লগে লাগোয়া আমাগো যে জমি খান আছে তার অনেক্ষানি ওগো বাড়িতে ঢুকাই ফেলছে।
— কিন্তু সালাউদ্দিন চাচা কে সামনে রেখে মাপামাপি হয়েছিল। খুঁটি পুঁতে রাখা আছে না?
— আরে বুড়া মরার পর ওর পোলা সাপের পাঁচ পা দেখছে। সাপোর্ট দিতাছে চেয়ারম্যান।
— চেয়ারম্যান চাচা আছে এর মধ্যে?
— হ। বুঝো না চেয়ারম্যানের বাড়িত প্রায়ই পুকুরের বড় মাছ তারপর সবজি, মুরগি কতকিছু যাইতেছে। আমার লগে দেখা হইছিলো কাদেরের। আমারে কইলো এতদিন তাগো জমি নাকি আমরা খাইছি। এইবার নাকি সঠিক ভাবে মাইপা জমি ফিরত নিবো।
— চিন্তা করো না আমি দেখছি। দাদী কোথায়?
— কথা কইবা?
— জেগে আছে?
— হ।
— তাহলে দাও।
জসিম ফোনটা নিয়ে দাদীর ঘরে গিয়ে তাকে দিয়ে বলল,
— তিন্নি কতা কইবে।
দাদী ফোনটা কানে নিয়ে বলল,
— জমি নিয়া কি হইছে শুনছো?
— হুঁম। চিন্তা করো না আমি সব সামলে নিব। সমস্ত কাগজ পত্র আমার কাছে আছে।
— কাগজ পত্র তো বিষয় না। বিষয় হইলো চেয়ারম্যান। কাদের রে তো সেই সাহস দিতাছে।
— চেয়ারম্যান চাচার সাথে আমি কথা বলবো দাদী। তাকে কিভাবে হাতে আনতে হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি।
— তুমিই তো ভরসা বু। তোমার দিকে তাকাইলে আমি আমার খোকারে দেখি।
— দাদী ওসব বাদ দাও। জানতো আপার বিয়ের কথা হচ্ছে।
— সত্য নাকি?
— হুম। এখনো ফাইনাল কিছু হয়নি। এই শুক্রবার ওরা আপাকে দেখতে আসবে। ছেলে আপার পরিচিত। ফ্যামিলি ভালো। এই ছেলের সাথেই আপার বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
— তাইলে তো হইলোই। তুমি যখন সব দেখছো আমাদের তো কোনো চিন্তা নাই।
— তুমি আসবা না দাদী?
— আমি বুড়া মানুষ। আমি গিয়া কি করবো। বিয়া ঠিক ঠাক করো পরে দেখা যাইবো। ভালো কথা, বিয়া কিন্তু এইখানে হইবো।
— আমি বলে দেখবো। কিন্তু তাদের মতামতের ও একটা বিষয় আছে। শত হলেও ছেলে পক্ষ।
— ঠিক বলছ। তোমার আব্বায় চাইছিল বড় মাইয়ার বিয়াতে সারা গেরাম খাওয়াইবো। ধুমধাম করবো। আল্লা তারে সেই সুযোগ দিলনা….
বলতে বলতে গলা ধরে আসলো দাদীর। তিন্নি ফোন কেটে দিল। ওর ভালো লাগছে না। বহুদিন পর কষ্টটা আবারো গলায় এসে আটকে গেছে। পানি খেতে হবে ওকে। প্রচুর পানি। কিছুতেই কষ্টটা বাইরে আসতে দেওয়া যাবে না।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here