#অন্যরকম_নেশা পর্ব৩
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা
ডক্টর এর চেম্বার থেকে বের হয়ে এলাম। এতো গুলো টাকা আমি কোথা থেকে জোগাড় করবো তাও এতো কম সময়ের মধ্যে কিছু মাথায় আসছে না।
মাম : কি রে ডাক্তার কি বললো?
আমি : মাম তুমি আগে শান্ত হও এমনিতেই তোমার শরীর টা ভালো নেই। ডাক্তার বলেছে শাম্মির ব্রেইন এ আঘাত লেগেছে ওখানে রক্ত জমাট বেঁধে আছে ইমিডিয়েটলি অপারেশন করতে হবে।
মাম : অপারেশন?
আমি : তুমি চিন্তা করোনা আমি তো আছি ওর কিছু হবে না। ঈশু তুই মাম এর সাথে থাক আমি আসছি (ঈশু আমার বেস্টফ্রেন্ড। ওর নাম ঈশিকা)
মাম : কোথায় যাবি তুই?
আমি : মাম শাম্মির অপারেশন এর জন্য টাকা লাগবে ওটাই জোগাড় করতে যাচ্ছি।
মাম : কত টাকা লাগবে?
আমি : পঁচানব্বই হাজার টাকা!
মাম : পঁচানব্বই হাজার? কিন্তু এতো টাকা তুই কোথায় পাবি?
আমি : মাম তুমি চিন্তা করোনা। যে করেই হোক আমি টাকা ব্যবস্থা করে ফেলবো।
হসপিটাল থেকে বের হয়ে ভাবছি যে করেই হোক শাম্মিকে আমার বাঁচাতেই হয়ে। ছোট বেলা থেকে এই দুজন মানুষ আমার পাশে ছিলো। মাম আমাকে নিজের মেয়ের মতো করে বড় করেছে। শাম্মি আমাকে নিজের বোনের মতো ভালোবাসে আমি আমার বোনটাকে যে করেই হোক সুস্থ করে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবো হঠাৎ আমার ফোন টা বেজে উঠলো, ফোনটা তুলে দেখি তানভীর স্যার ফোন করেছে ফোনটা রিসিভ করে….
আমি : হ্যালো স্যার?
তানভীর : এখনি অফিসে চলে আসুন।
আমি : স্যার আমার একটু…..
তানভীর : আমি কোনো কথা শুনতে চাই না আপনি তাড়াতাড়ি অফিসে আসুন।
আমি : স্যার আমার কথাটা তো শুনুন। হ্যালো হ্যালো
এখন কি করবো আমি আমার হাসপাতালে যাওয়া টা ভিষন জরুরি, আর চাকরি বাঁচাতে হলে অফিসেও যেতে হবে, কি করবো এখন আমি?
অফিসে……
আমি : May i coming sir?
তানভীর : Yes come.
ভয়ে ভয়ে ভিতরে গেলাম, স্যার বসে বসে একটা ফাইল চেক করছেন, উনার চোখে মুখে রাগের ছাপ। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর প্রশ্ন করলাম
আমি : স্যার কোনো সমস্যা?
তানভীর : সমস্যা না থাকলে কি আপনাকে এখানে ডেকেছি? এটা কি করছেন? একটা কাজ ও তো ঠিক মতো করতে পারেন না, যত্তসব!
আমি : স্যার কি হয়েছে?
তানভীর : মিস ঊর্মি এটা অফিস আপনার বাসা নয় যে যখন ইচ্ছে হবে আসবেন যখন ইচ্ছে হবে চলে যাবেন। অফিসে কিছু রুলস আছে যেটা সবাইকে মেইনটেইন করে চলতে হয়। কি করেছেন নিজের চোখেই দেখুন।
বলেই হাতে থাকা ফাইলটি আমার দিকে ছুড়ে মারলেন।
আমি : আহ…(ফাইলটা এসে কপালে লাগে আর কিছুটা কেটে যায়, যার ফলে রক্ত বের হচ্ছে)
তানভীর : কোথায় মন থাকে আপনার?
আমি : সরি স্যার! আসলে…..
তানভীর : Shut up. আমি কোনো সাফাই শুনতে চাই না। এখন বসে বসে সব ঠিক করবেন।
আমি : স্যার আমার ছুটি লাগবে খুব দরকার।
তানভীর : কেনো?
আমি : স্যার আমার ছোট বোনের এক্সিডেন্ট হয়েছে। ব্রেইন এ আঘাত লেগেছে ওখানে রক্ত জমাট বেঁধে আছে অপারেশন করতে হবে হসপিটালে ভর্তি আছে।
এমন সময় ঈশুর কল এসেছে……
আমি : হ্যালো!
ঈশু : হ্যাঁ কোথায় তুই?
আমি : আমি অফিসে, ওদিকের কি অবস্থা?
ঈশু : শাম্মির অবস্থা একেবারেই ভালো নয়, ডক্টর বলেছে টাকা জমা না দিলে অপারেশন শুরু করবে না, টাকার ব্যবস্থা করতে পেরেছিস?
আমি : না এখনো ব্যবস্থা হয়নি কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে, মাম কে বল চিন্তা না করতে আমি টাকা নিয়ে আসছি।
ঈশু : আন্টি খুব কান্না কাটি করছে।
আমি : একটু সামলে রাখ আমি আসছি (কল কেটে দিয়ে)
আমি : সরি স্যার আপনার সময় নষ্ট করার জন্য।
তানভীর : আচ্ছা একটু আগে যার সাথে কথা বললেন সে কে?
আমি : আমার বেস্টফ্রেন্ড।
তানভীর : এখন কি অবস্থা আপনার বোনের?
আমি : অপারেশন করতে হবে, অনেক টাকার প্রয়োজন।
তানভীর : কত টাকা প্রয়োজন আপনার বোনের অপারেশনে?
আমি : পঁচানব্বই হাজার টাকা।
তানভীর : আমি ম্যানেজারকে বলে দিচ্ছি সে হসপিটালে টাকা পৌঁছে দিবে।
আমি : স্যার আপনি কেন এতো গুলো টাকা দিবেন?
তানভীর : টাকা টা লোন হিসেবে নিন বেতন থেকে অল্প অল্প করে কেটে রাখবে অফিস কর্তৃপক্ষ।
আমি : ওকে স্যার, আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না।
তানভীর : ধন্যবাদ দিতে হবে না , আপনার কপাল থেকে তো রক্ত পরছে আমি তো এতোক্ষণ খেয়ালই করিনি।
আমি : স্যার আপনি ব্যস্ত হবেন না।
তানভীর : চুপ করুন।
তারপর স্যার নিজের কেবিনে বসে আমাকে ব্যান্ডেজ করে দিলেন।
হসপিটালে……
হসপিটালে আসার আগেই স্যার কল করে বলেছেন অপারেশন এর টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। আমি হসপিটালে ঢুকতেই মাম আমার কাছে এসে আমার কপালে হাত দিলো।
মাম : একি তোর কপালে কি হয়েছে?
আমি : কিছুনা মাম দরজায় সাথে ধাক্কা লেগে একটু কেটে গেছে।
মাম : একটু সাবধানে চলাচল করতে পারিস তো, আচ্ছা শোননা টাকার কিছু ব্যবস্থা হলো?
আমি : হ্যাঁ মাম হয়ে গেছে।
মাম : কে দিলো এতগুলো টাকা?
আমি : অফিস থেকে লোন দিয়েছে।
দেড় ঘন্টা পর অপারেশন শেষ হয়। শাম্মি এখন আশংকা মুক্ত তবে এক সপ্তাহ পর ডিসচার্জ করে দিবে।
এক মাস পর…….
এখন শাম্মি পুরোপুরি সুস্থ। এতো শুধু স্যারের কাজের অত্যাচার। অফিসে নিজের কেবিনে বসে ফাইল ক্যালকুলেশন করে স্যারকে দেখাতে যাবো এমন সময় কারো সাথে ধাক্কা লেগে ফাইল গুলো পড়ে যেতে নিলেই মেয়েটা ফাইলগুলো ধরলো
আমি : Thank you mem. (এক নজরের তাকিয়ে আছে)
মেয়েটা : Its ok. কিন্তু এতো ফাইল নিয়ে move হচ্ছ একটু দেখে যদি ব্যথা পেতে।
আমি : ঐ মানুষটা কে দেখছেন উনি এই অফিসের এমডি। মানুষ খেকো দানব।
মেয়েটা : (হাসছে)
আমি : জীবন অর্ধেক তেজপাতা করে দিছে।
মেয়েটা : তুমি কি এই অফিসে নতুন
আমি : জ্বী ম্যাম।
মেয়েটা : আমাকে ম্যাম বলতে হবে না আপু বলে ডেকো। আমি তানিশা আহমেদ।
আমি : কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না?
তানিশা : আমি মি. তানভীর এর সাথে দেখা করতে আসছি।
আমি : আচ্ছা আমি তাহলে স্যার এর কাছে inform করছি।
তানিশা : ওকে ডিয়ার করো।
আমি : স্যার আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে একজন (কল করে)
তানভীর : কে এসেছে?
আমি : মিস তানিশা আহমেদ।
তানভীর : তোমার কি মাথা খারাপ? জলদি পাঠাও (ধমকিয়ে)
আমি : জ্বী স্যার (মন খারাপ করে)
আপু আপনি যেতে পারেন আর সাবধান এই রাক্ষস থেকে কি জানি আপনাকে আবার কি বলে।
তানিশা : Don’t worry dear. You’re absolutely right the boy look like Hunter.
আমি : Good day (মুচকি হেসে)
চলবে?……..