#অন্যরকম_নেশা পর্ব ২

0
639

#অন্যরকম_নেশা পর্ব২
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

অফিস থেকে বাসায় আসতে আসতে ৭ টা বেজে গেছে। মাম আর শাম্মির সাথে বসে গল্প করছি।

শাম্মি : আপু অফিসের প্রথম দিন কেমন কাটলো?

আমি : ভালোই।

মাম : তোর কোনো সমস্যা হয়নি তো মা?

আমি : আমার কোনো সমস্যা হয়নি মাম। তুমি এতো দুশ্চিন্তা করো না এমনিতেই তোমার ব্লাড প্রেশার।

মাম : তোরাই তো আমার সব। তোদের ছাড়া আর কে আছে আমার?

আমি : উম্মাহ মাম (জড়িয়ে ধরে)

শাম্মি : আমি বাদ? (ন্যাকামি করে)

মাম : তুইও আয়।

ডিনার শেষে যে যার রুমে চলে এসেছি। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদ দেখছি আর গান শুনছি। এই গানটা বরাবরই বেশ ভালো লাগে।

♪♪♪♪♪♪♪♪

প্রাণ দিতে চাই মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে ওওওওও তোমাকে
স্বপ্ন সাজাই নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে ওওওওও তোমাকে

জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকে
রোজ দুই ফোটা যেনো আরো ভালো লাগে
গানে অভিসারে চাই শুধু বারে বারে
তোমাকে ওওওওও তোমাকে

যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে
বুকের মাঝে জাপ্টে জড়িয়ে ধরবো তোমাকে
পথ চেয়ে রই দেরি কর না যতই
আর ভোলা যাবে না জীবনে কখনই
তোমাকে ওওওওও তোমাকে

তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রং মিশে যায় রুক্ষ্ম দুপুরে
সেই রং দিয়ে তোমাকে আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি

প্রাণ দিতে চাই মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে ওওওওও তোমাকে
স্বপ্ন সাজাই নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে ওওওওও তোমাকে

♪♪♪♪♪♪♪♪

সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে মাম কে কাজে সাহায্য করলাম তারপর নাস্তা করে রেডি হয়ে বের হলার অফিসে যাওয়ার জন্য।

অফিসে……

আমি : May i coming sir?

তানভীর : ফোনের দিকে চোখ দিয়ে (মুচকি হাসছে)

আমি : আবারও বললাম May i coming sir?

তানভীর : (চুপ)

আমি : May i coming sir? (চেচিয়ে)

তানভীর : আল্লাহ এতো চেচানোর কি হলো?
আসুন ভিতরে।

আমি : না মানে স্যার, ভাবলাম আপনি হয়তো কানে কম শুনেন তাই একটু জোড়ে বললাম আর কি! (ভিতরে ঢুকে)

তানভীর : মিস ঊর্মি!

আমি : সরি স্যার! আপনি আমায় ডেকেছিলেন?

তানভীর : হুম কিছু নোট লিখবেন পরশু মিটিং আছে তার জন্য।

আমি চেয়ারে বসে NotePad আর কলম নিয়ে লিখতে যাবো তখনই বদমাশ বাদরটা বললো….

তানভীর : আমি আপনাকে বসতে বলেছি?

আমি : না তো স্যার।

তানভীর : তাহলে দাড়িয়ে লিখুন।

আমি : সরি স্যার (চেয়ার থেকে উঠে)

তানভীর : নেক্সট টাইম যেন এমন ভুল না হয় (এখন তো সবে মাত্র শুরু মিস ঊর্মি)

আমি : খেয়াল রাখবো স্যার।

তানভীর : আমি বলছি আপনি লিখুন।

তানভীর বলা শুরু করেছে কিন্তু ঊর্মি লিখতে পারছে না কারন তানভীর ইচ্ছা করেই খুব তাড়াতাড়ি বলছে যা শুনতে আর লিখতে ঊর্মির সময় লাগছে। ঊর্মি এক প্রকার বিরক্ত হয়ে…..

আমি : স্যার?

তানভীর : হুম!

আমি : আমার লিখা শেষ।

তানভীর : এই মেয়ে এতো জলদি লিখলো কিভাবে আমি তো ইচ্ছে করেই তাড়াতাড়ি বলছিলাম (মন মনে)

আমি : খালি NotePad তানভীর এর দিকে এগিয়ে দিলাম

তানভীর : এটা তো খালি!

আমি : আপনি যে তানভীর এক্সপ্রেস এর মতো বলছেন। আমার মনে হচ্ছে রেলগাড়ি ছুঁটে যাচ্ছে।

তানভীর : Don’t cross your limit miss urmi. I am your boss. আমার যত তাড়াতাড়ি বলার ইচ্ছা বলবো লিখার দায়িত্ব আপনার।

আমি : ব্যাটা বদমাশ বাদর ইংলিশ ঝারে। আল্লাহ এই দুষ্ট দানবের হাত থেকে বাঁচাও আমাকে (বিড়বিড় করে)

তানভীর : কিছু বললেন?

আমি : না মানে তবুও একটু ধিরে বলেন।

তানভীর : ওকে!

এবার তানভীর ধিরে ধিরে বললো….

তানভীর : লিখা হয়েছে?

আমি : হ্যাঁ স্যার।

তানভীর : দেখি

আমি : আবার NotePad দিলাম

তানভীর : কি লিখেছেন এগুলো? কিছুই তো বুঝতেছি না। অন্যরা কি আপনার মাথা বুঝবে? Disgusting…(ইচ্ছে করেই বললো)

আমি : ব্যাটা উগান্ডা আমার লেখা সুন্দর তোর চোখে সমস্যা (মনে মনে)

তানভীর : চুপ করে আছেন কেনো? আপনি এই লিখাটা ৫ বার লিখুন আমার সামনে।

আমি : কি?

তানভীর : কানে সমস্যা?

আমি : না স্যার (ভেংচি মেরে)

তানভীর : তাহলে লিখুন আমার সামনে।

আমি : জ্বী স্যার (ব্যাটা রাক্ষস সুদে আসলে বদলা নিবো দেখিস)

ঊর্মি আবার লিখা শুরু করলো। তানভীর খেয়াল করলো ঊর্মির কপালের ছোট চুল গুলো বার বার মুখের সামনে আসছে। তানভীর অপলক ভাবে উর্মিকে দেখে যাচ্ছে (ঊর্মি উজ্জ্বল শ্যাম বর্নের, চোখ দুটো টানা ঘণ লম্বা পাপড়ি, চুল গুলো সিল্কি কিন্তু এতো লম্বাও না আর গালে টোল পড়ে) ঊর্মির চুল গুলো মনে হয় ঊর্মির মতো জেদি বার বার সামনে এসে পড়ছে।

আমি : স্যার লিখা শেষ।

তানভীর : ওকে তাহলে এখন নিজের কেবিনে যান।

আমি : ওকে স্যার।

লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে এমন সময় মাম এর কল আসে।

আমি : হ্যাঁ মাম বলো।

মাম : তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।

আমি : কেন মাম কি হয়েছে?

মাম : কলেজ থেকে ফেরার সময় শাম্মির এক্সিডেন্ট হয়েছে

আমি : কি বলছো মাম তুমি? কিভাবে হলো?

মাম : সব পড়ে বলবো তুই তাড়াতাড়ি আয় ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

আমি : তুমি ওকে হসপিটালে নিয়ে যাও আমি আসছি।

লাঞ্চ টাইমে বাইরে বের হওয়া যায় তাই অফিসে কিছু না বলেই হসপিটালে ছুটে এলাম। মাম শাম্মিকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে ওর চিকিৎসা চলছে। আমি ডক্টর এর সাথে কথা বলতে গেলাম কিন্তু ডক্টর আমাকে যা বললো তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না….

ডক্টর : দেখুন মিস ঊর্মি আপনার বোনের মাথায় মারাত্মক ভাবে জখম হয়েছে ব্রেইন এ রক্ত জমাট বেঁধে আছে ইমিডিয়েটলি অপারেশন না করলে যেকোনো সময় মারাত্মক কিছু ঘটে যেতে পারে।

আমি : কি বলছেন আপনি? অপারেশন ছাড়া ওষুধে কি কোনো কাজ হবেনা?

ডক্টর : না এখন অপারেশন ছাড়া কোনো উপায় নেই তাও আগামী আট ঘণ্টার মধ্যে না হলে আমরা আর কিছু করতে পারবো না

আমি : ডক্টর এই অপারেশন এ কত টাকা লাগবে?

ডক্টর : সব খরচ মিলিয়ে হবে পঁচানব্বই হাজার টাকা।

আমি : ওকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন এর ব্যাবস্থা করুন আমি টাকার ব্যবস্থা করছি

ডক্টর : ওকে

চলবে?………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here