#অন্যরকম_নেশা পর্ব ১

0
1113

#অন্যরকম_নেশা পর্ব ১
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

পিছন থেকে খুব জোড়ে কেউ গাড়ির হর্ন বাজাচ্ছে। পর পর এমন করে অনেকবার হর্নের আওয়াজে সব বাচ্চারা কানে হাত দিয়ে……

আমি : উফ বাবা কে এটা যার এতো তারা পড়লো? সারা রাস্তা তো ফাঁকা তবুও কেন আামাদের সামনে এসে এতো হন দিচ্ছে।

একটা ছোট বাচ্চা আমার ওড়না টেনে বললো আপুনি দেখো না কে এটা।

আমি : তোরা এখানে থাক আমি দেখছি।

তারপর ঊর্মি গাড়ির মাঝ বরাবর দাড়ালো আর আরেকজন তো গাড়ির হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে। গাড়ির মালিক এবার গাড়ি থেকে বের হয়ে…….

লোকটা : এই মেয়ে কানে শুনো না নাকি?(ধমকের স্বরে)

ঊর্মি কিছু না বলে রাস্তা থেকে একটা পাথর কুড়িয়ে গায়ের সব শক্তি দিয়ে গাড়ির কাঁচের দিকে ছুঁড়ে মারলো।

লোকটা : (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ঊর্মির দিকে)

আমি : এইযে মিস্টার রাস্তাটা আপনার বাবার না যে এতো শব্দ দূষণ করবেন।

লোকটা : এটা কি করলেন?

আমি : কেন আপনি কানা নাকি?

লোকটা : You girl (আঙ্গুল তুলে)

ঊর্মি আঙ্গুলের উপর আঙ্গুল রেখে বললো……

আমি : I am Urmi Mr arrogant.

লোকটা : Do You Know Who i am?

আমি : প্রধানমন্ত্রীর ছেলে নাকি? না মানে যেভাবে বলছেন মনে হচ্ছে আপনি কোনো প্রধানমন্ত্রীর ছেলে!

লোকটা : দেখুন আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করছেন।

আমি : আমি একটুও limit cross করি নি। বরং আপনি করছেন। দেয়ালে লিখা আছে “অযথা শব্দ দূষণ করবেন না” হয়তো পড়েন নি তাই না?

লোকটা আর কিছু বলতে পারলো না। সে গাড়িতে বসতে যাবে এমন সময়…..

আমি : এই যে মিস্টার

লোকটা : কি? (পিছনে ফিরে চোখ লাল করে)

আমি : এই নিন আপনার গাড়ির কাঁচের জন্য।
কিছু বেঁচে গেলে তা আপনার টিপ (গাড়ির মালিকের হাতে কিছু টাকা দিয়ে)

লোকটা : You…..

আর কিছু বলতে না পেরে রাগে গজগজ করতে করতে সেখান থেকে চলে গেলো। ঊর্মি নিজের সামনে পড়া চুল গুলো ফু দিয়ে রাস্তার পাশের বাচ্চা গুলোর কাছে গিয়ে…..

আমি : এই নে তোদের চকলেট। আর আমার মিষ্টি?

সব বাচ্চারা ঊর্মির গালে একটা একটা করে মিষ্টি দেওয়া শুরু করলো।

আমি : আচ্ছা শোন আমি আজ যাই আমার চাকরির ইন্টারভিউ আছে আজ।

আজ আমি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি। জানি না কি হবে খুব নার্ভাস লাগছে এই মুহূর্তে। এটাই আমার প্রথম ইন্টারভিউ। এতোক্ষণ আমি অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের সাথে ছিলাম। মাঝে মাঝেই আসি ওদের সাথে সময় কাটাতে।

(আমি ঊর্মি। আমার পরিবার বলতে মাম আর ছোট বোন। মাম একটা স্কুলের টিচার। বোন এইবার এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। আমি অনার্স কমপ্লিট করে এখন মাস্টার্স কোর্স করছি) আমার সম্পর্কে গল্পে আস্তে আস্তে সব জেনে যাবেন।

ইতিমধ্যেই আমার ডাক পড়েছে। আমি হল রুমের ভেতর গেলাম এখানে একজন মধ্যবয়সী লোক। ইন্টারভিউ নেওয়া শেষ উনারা আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছে।

আমি রিসেপশন কাউন্টারে অপেক্ষা করছি এমন সময় একটা স্টাফ এসে বললো……

স্টাফ : হ্যালো ম্যাম! আমি নীলা, আপনার চাকরিটা কনফার্ম হয়েছে। কাল থেকে আপনি আমাদের নতুন এমডি তানভীর স্যারের পিএ কংগ্রাচুলেশনস ম্যাম। কাল সকাল ৯ টায় অফিসে চলে আসবেন আপনাকে সব কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

বাসায় এসেই মাম কে জড়িয়ে ধরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললাম…..

আমি : মাম আমার চাকরিটা হয়ে গেছে। এখন থেকে তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না এখন থেকে তুমি শুধু আরাম করবে।

মাম : হয়েছে বাচ্চা এবার যা ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে সকালে তো টেনশন করে ঠিক মতো না খেয়ে চলে গিয়েছিলিস।

শাম্মি : Congratulations আপু (জড়িয়ে ধরে)

আমি : Thank you.

রাতের খাবার খেয়ে মাম আর শাম্মি চলে গেছে যে যার রুমে আমিও আমার রুমে চলে এসেছি। শুয়ে শুয়ে শুরু এপাশ-ওপাশ করছি নার্ভাসনেস এর কারণে কিছুতেই ঘুম আসছে না। এপাশ-ওপাশ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানি না। সকালে……

মাম : কিরে মা উঠ তাড়াতাড়ি ৭:২০ বাজে অফিসের জন্য তো লেট হয়ে যাবি।

মাম এর কথায় ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। প্রথম দিন লেট হয়ে গেলে বিষয়টা খারাপ দেখায়। তার মাম এর সাথে কোনো কথা না বলে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম ফ্রেশ হতে। জিন্স প্যান্ট, সাদা লং টপ, রংধনু স্কার্ফ গলায় পেচিয়ে, হালকা লিপস্টিক আর চুল গুলো ঝুটি করে তৈরি হয়ে নিলাম। এতোক্ষণে মাম এর ডাক পড়েছে নাস্তা করার জন্য। তাই তাড়াহুড়ো করে নাস্তা করেই মাম এর উদ্দেশ্য বললাম…..

আমি : মাম নাস্তা করে ফেলেছি এখন আমি আসি।

মাম : সাবধানে যাস মা।

আমি : আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।

২০ মিনিট ধরে জ্যামে বসে আছি। আজ চাকরির প্রথম দিন যদি দেরি হয়ে যায় বিষয়টা কেমন দেখায়। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে যেই গেইট দিয়ে ঢুকতে যাবো তার আগেই একটা গাড়ি সামনে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ গাড়িটা সামনে আসায় কিছুটা ঘাবড়ে গেছি তাই গাড়িতে থাকা লোককে বললাম…..

আমি : এইযে মি. চোখ কি সাথে নিয়ে বের হন না নাকি?

লোকটা : What Nonsense? (চেঁচিয়ে)

আমি : ওহ আপনি! ফলো করতে করতে এখানেও চলে এসেছেন এই গাড়ি নিয়ে।

লোকটা : অলরেডি আমার লেট হয়ে গেছে তাই বেশি কিছু বললাম না। আপনাকে তো আমি দেখে নেবো।

বলেই অফিসের ভেতর চলে গেলেন। যেহেতু দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই কথা না বাড়িয়ে অফিসের ভেতর চলে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে নীলা আমাকে সব কাজ বুঝিয়ে দিলো।

নীলা : ম্যাম এমডি স্যার আপনাকে উনার কেবিনে ডাকছেন।

আমি : হ্যাঁ যাচ্ছি।

————————-

আমি : May i coming sir?

তানভীর : Yes coming.

আমি : আপনি (অবাক হয়ে)

(অফিসে আসার সময় যার গাড়ির সামনে পরতে যাচ্ছিলাম তিনি আর কেউ নয় আমার অফিসের এমডি)

তানভীর : আপনিই তাহলে আমার পিএ। বাবা তাহলে আপনাকেই সিলেক্ট করেছেন। আচ্ছা যাই হোক এতো কথা আমি বলতে চাচ্ছি না এখন। যে জন্য ডেকেছি আপনাকে সেটা বলি? (তোমাকে তো শিক্ষা দিতেই হবে আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়া)

আমি— জী স্যার বলুন,

তানভীর : আমার প্রতিদিনের অফিস টাইমের একটা রুটিং তৈরি করবেন, ম্যানেজার এর থেকে আগেই জেনে নেবেন আমার কোন দিন কি কাজ আছে? আর হ্যাঁ সমস্ত কাজ টাইমলি হওয়া চাই।

আমি : ওকে স্যার।

তানভীর : এখন আপনি আসতে পারেন।

আমি : ওকে স্যার।

আমি কেবিনে এসে বসার একটু পরেই নীলা হাতে করে একটা ফাইল এনে আমাকে দিলো আর বললো ১ ঘন্টার মধ্যে সব ক্যালকুলেশন ঠিক করে স্যার কে দিতে হবে। এখন আপাতত সেই কাজটাই করছি। নীলা বলে গেছে স্যার নাকি খুব রাগী সময়ের কাজ সময়ে করাই পছন্দ করেন।

ফাইল নিয়ে স্যারের কেবিনের সামনে এলাম….

আমি : May i coming sir?

তানভীর : Yes.

প্রথমত এমন কাজ আমি নতুন তাই ভয়ে ভয়ে ভিতরে গেলাম। স্যার বসে বসে একটা ফাইল চেক করছেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বললাম।

আমি : স্যার এই ফাইলটার সব ক্যালকুলেশন করা হয়ে গেছে।

তানভীর : ওকে ফাইলটা টেবিলে রেখে যান।

আমি : ওকে স্যার।

চলবে?………..

#পর্ব-১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here