আলো_আধারের_খেলা পর্ব_০২

0
448

আলো_আধারের_খেলা
পর্ব_০২
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

জান্নাতকে এভাবে বোরকা পড়া দেখে পাত্রের ভাই আর ভাবী ভীষণ অবাক হলো।তার উপর আবার পুরো চেহারা ঢেকে রেখেছে জান্নাত।চোখ দুটিও ঠিকভাবে দেখা যাচ্ছে না।এমন নিচ হয়ে বসে আছে মনে হয় এক্ষুনি মাটিতে পড়ে যাবে।তাহলে তারা কিভাবে চুজ করবে এই মেয়েকে?

এদিকে পাত্রের বন্ধুরা হা হা করে হেসে উঠলো।কারণ তারা ভাবতেই পারে নি এই মেয়েকেই তারা দেখতে আসবে।পাত্র নিজেও ভীষণ অবাক।অন্ধকারে বাড়িটা চিনতে না পারলেও জাহানকে দেখামাত্র চিনতে পেরে গেছে সবাই।জাহান নিজেও ভীষণ অবাক।এরা তো সেই ছেলেগুলোই, যারা তাদের আমচোর বলে ভেবেছে।

পাত্রের ভাবী এক দেখাতেই মুখ ফিরে নিলো।তিনি কিছুতেই এমন মেয়েকে তার দেবরের সাথে বিয়ে দেবেন না বলে ঠিক করে নিলেন। এর আগে তারা ৫০ টার মতো মেয়ে দেখেছে।সবগুলো মেয়েই যথেষ্ট সুন্দরী এবং উচ্চ বংশের ছিলো।তবুও রুয়েল একজন মেয়েকেও পছন্দ করে নি।সে যে কেমন মেয়ে খুঁজছে তা নিজেও জানে না।আর এ বোরকা ওয়ালি কে তো জীবনেও চয়েজ করবে না।এইজন্য পাত্রের ভাবী তার স্বামীর কানে ফিসফিস করে বললো, এই পাত্রীর খবর কে দিয়েছে?সে কি আমাদের ফ্যামিলির স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানে না?এই মেয়ে কি করে আমাদের বাড়ির বউ হবে?আমার পছন্দ হয় নি এই মেয়ে।উঠে আসতে বলো সবাইকে।

এদিকে জান্নাতের বাবা জান্নাতকে এরকম সাজে দেখে মনে মনে ভীষণ রাগ হলেন।এতো করে বলার পরও জান্নাত বোরকা পড়েই পাত্রপক্ষের সামনে এসেছে।সবার সামনে বকাঝকাও করতে পারছেন না তিনি।তবুও বললেন,
মা জান্নাত,একটু তাকাও সবার দিকে।মুখের নিকাব টা খোলো একটু।এনারা তোমাকে দেখতে এসেছেন।
জান্নাত তার বাবার কথা শুনে সবার দিকে তাকালো।কিন্তু এক নজর তাকাতেই সে তার চোখ ফিরে নিলো।কারণ সে ভাবতেই পারছে না এতোগুলো ছেলের সামনে সে বসে আছে!আর তার বাবা কি করে তাকে এভাবে সবার সামনে নিকাব খুলতে বলে!জান্নাত এই কাজ জীবনেও করতে পারবে না।সে জন্য জান্নাত তার নিকাব খুললো না।

হঠাৎ পাত্রের ভাই বললো, আমরা তাহলে আজ আসি।মেয়ে দেখা হয়ে গেছে আমাদের।পাত্রের ভাবীও উঠে পড়লেন।আর রুয়েলকে বললেন,উঠে আয়।
জান্নাতের বাবা সেই কথা শুনে বললো, আপনারা বসেন একটু।কিছু মুখে দিন।
–না খাবো না কিছু।এই বলে সবাই চলে গেলো।

পাত্রপক্ষের এভাবে চলে যাওয়া দেখে জান্নাতের বাবা বুঝে গেলো তাদের মেয়ে পছন্দ হয় নি।আর হবেই বা কি করে জান্নাত তো নিকাবটাই টাই খুললো না।আর মুখ না দেখলে কিভাবে চুজ করবে তারা জান্নাতকে।এজন্য জান্নাতের বাবা ভীষণ রাগারাগি করলেন জান্নাতের সাথে।তিনি এমন এমন কথা বললেন যা শুনে জান্নাত কাঁদতে কাঁদতে তার রুমে চলে গেলো।
এবার জান্নাতের মাও বকতে লাগলেন তাকে।তিনি এক নিঃশ্বাসে বলতে লাগলেন এরকম ঘোমটা দিয়ে বসে থাকলে কে তোকে চয়েজ করবে আর কে বা তোকে বিয়ে করবে?এভাবে সারাজীবন কে তোকে পালবে?কত ভালো একটা ঘর।আর ছেলেটাও কত ভদ্র আর সুন্দর!এমন ছেলে যে তোকে দেখতে এসেছে সেটা তোর কপাল।নিজের কপাল নিজের হাতেই শেষ করে দিলি।এই বলে জান্নাতের আম্মু তার কাজে চলে গেলেন।

এবার জাহান বোঝাতে লাগলো জান্নাতকে।মানসম্মান আর রাখলি না তুই।নিকাব টা খুললে কি হতো?বাহিরের মানুষ শুনলে কি হবে?আমাদের মানসম্মান একদম ডোবালি তুই।এখন আশেপাশের সবাই বলবে জহিরের মেয়েকে দেখতে এসেছে কিন্তু পছন্দ করে নি।আচ্ছা তুই কি অসুন্দর!তাই মুখ দেখাতে চাস না?নিকাবটা খুললে কি হতো?
জান্নাত এবার জাহানের কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বললো, তুই বুঝবি না এসব।তুই যদি হাদিস পড়তিস তাহলে বুঝতে পারতিছ।একজন মেয়ে মানুষের সৌন্দর্য কখনোই বাহিরের ছেলের সামনে প্রদর্শন করা ঠিক না।মরার পর কি জবাব দেবো আমার আল্লাহকে।সেজন্য আমি কখনোই পরপুরুষের সামনে নিজের চেহারা বের করবো না করবো না।এতে যা হবার তাই হবে।

জান্নাতের কথা শুনে তার দাদী তার কাছে আসলো।আর জান্নাতের মাথা বুলিয়ে দিয়ে বললো, হ্যাঁ ঠিক আছে।দেখাতে হবে না চেহারা।আমিও চাই তুই সারাজীবন এভাবেই পর্দার সহিত থাক।এবার একটু চুপ কর।আর কাঁদিস না।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, তাহলে সবাই কেনো বার বার মুখ খুলতে বললো।তখন কতগুলো ছেলে এসেছিলো!তারপরও বাবা কেনো বললো একথা?তিনি তো জানেন আমি এমন।
জান্নাতের দাদী তখন বললো, আজ তোকে দেখতে এসেছে।আর দেখতে এসে যদি মুখ টাই না দেখে তাহলে কিভাবে পছন্দ করবে?আর পছন্দ না হলে বিয়ে হবে কেমনে?এজন্য তোর বাবা নিকাব টা খুলতে বলেছিলো।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো না হলে না হবে।তবুও আমি পরপুরুষের সামনে মুখ খুলবো না।

জাহান তখন বললো, আমার মনে হয় আপু যেভাবে চলাফেরা করে ওর জন্য একজন হুজুর জামাই দরকার।অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিলে কখনোই সে সুখী হতে পারবে না।আর যে ছেলে আজ দেখতে এসেছে তাকে দেখে তো বেশ মডার্ন আর স্টাইলিশ মনে হলো।এ ছেলে আপুর কদর বুঝবে না।
জাহানের কথা শুনে দাদী বললো,হ্যাঁ ঠিক বলেছিস তুই।তোর বাপ যে কেনো বোঝে না।তার মেয়ে যেরকম সেইরকমই তো পাত্র খুঁজতে হবে।

——— ——— ——— ——— ——— ———

রুয়েলের পরিবার আজকে আবার অন্য আরেকটা মেয়ে দেখতে এসেছে।মেয়ে বেশ সুন্দরী।একদম সুন্দর করে সেজেগুজে শাড়ি পড়ে সবার সামনে বসে আছে।রুয়েলের ভাবীর এইরকম মেয়েই পছন্দ।তিনি পাত্রীকে নানা ধরনের প্রশ্ন করতে লাগলেন।তারপর রুয়েলকে বললেন তুই কিছু জিজ্ঞেস কর।রুয়েল তখন বললো তোমরাই জিজ্ঞেস করো।আমার কিছু প্রশ্ন করার নাই।রুয়েল অনেক বেশি স্টাইলিশ আর খোলামেলা টাইপের ছেলে হলেও জান্নাতকে তার ভীষণ ভালো লেগেছে।কারণ সে যতগুলো মেয়ে দেখেছে সবার মধ্যে জান্নাত সম্পূর্ণ আলাদা টাইপের মেয়ে ছিলো।এরকম মেয়ে সে কখনোই দেখে নি।রুয়েলের বার বার শুধু জান্নাতের কথাই মনে হচ্ছে।সেই যে একবার তাকালো মেয়েটা আর সাথে সাথেই চোখ টা সরিয়ে নিলো এই দৃশ্য টাই বার বার ভেসে উঠছে চোখের সামনে।

এদিকে বাসার সবাই এই মেয়েকেই পছন্দ করে ফেললো।রুয়েলের বন্ধুরাও রাজি।তাদেরও ভীষণ পছন্দ হয়েছে।মেয়েটা কত স্মার্ট আর আধুনিক।কি সুন্দর করে কথা বলছে সবার সাথে।রুয়েলের ভাই এনগেজমেন্ট এর ডেটও ঠিক করলেন।পাত্রীর জন্য আংটিও বানালো হলো।

এদিকে রুয়েল শুধু বার বার জান্নাতের কথাই ভাবছে।কিন্তু কি করে জান্নাতের কথা সবাইকে বলবে?কারণ তাদের বাসার কেউই জান্নাতকে পছন্দ করে নি।কেউ চায় না জান্নাত তাদের বাড়ির বউ হোক।এজন্য রুয়েল ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।সে আর চুপ করে থাকতে পারলো না।ব্যাপার টা তার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলো।
রুয়েলের কথা শুনে তার বন্ধুরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো।তারা বিভিন্ন ধরনের ঠাট্টাও করতে লাগলো।রুয়েলের ফ্রেন্ডরা বললো,কি এমন দেখলি ওই মেয়ের মধ্যে যে তোর এতো ভালো লাগলো তাকে?চেহারাই তো দেখিস নি?মেয়েটা কালো না ফর্সা সেটাও তো বোঝা গেলো না।
রুয়েল তার বন্ধুদের কথা শুনে বললো,জানি না।তবে মনে হচ্ছে আমার ওই মেয়েকেই লাগবে।অন্য মেয়েকে আমার লাগছে না।
তখন রুয়েলের অন্য এক ফ্রেন্ড বললো,মেয়েটার কন্ঠ পর্যন্ত শুনলি না।বোবাও তো হতে পারে।
–জানি না।আমার মন শুধু ঐ মেয়েটাকেই দেখতে চাচ্ছে।চল তো আজ একবার দেখে আসি মেয়েটাকে।
রুয়েলের বন্ধুরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো।কি বলে এসব?রুয়েল পাগল হয়ে গেলো নাকি?এনগেজমেন্ট এর ডেট হয়ে গেছে আর এই ছেলে পড়ে আছে সেই বোরকাওয়ালিকে নিয়ে।যার চেহারা দেখা তো দূরের কথা একটা কথা পর্যন্ত শোনা যায় নি।

#চলবে,
কেমন লাগছে ভিন্নটাইপের এই গল্পটা।অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here