মেঘে_ঢাকা_চাঁদ,পর্ব ২১,২২

0
476

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ,পর্ব ২১,২২
সায়লা সুলতানা লাকী
২১

হিমেল যখন কথা বলছিল মোবাইল কলে তখন পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল হোমায়রা আর ওর মা। কথা শেষ হতেই। হোমা বলে উঠল
“দেখছো আম্মু আমি যা বলেছিলাম তাই সত্যি । তুমিতো বোকা, কিছুই বোঝো না। আমি প্রথম থেকেই বিষয়টা আন্দাজ করতে পেরেছি।”

“কিসের কথা বলছো আপু?”

“তোকে আর বলে কি হবে? তুইতো যা করার তা করলিই। একটা মাত্র ভাই আমার। কীভাবে পারলি বোনের সংসারে এমন অশান্তি সৃষ্টি করতে? এসব স্বার্থপরতা শিখলি কোথায়?”

“এক্সকিউজ মি, কি বলছো তুমি ? বুঝে বলছোতো? আমি আবার কিসের অশান্তি করলাম তোমার?”

“ন্যাকামো করিস না। আমি আম্মুর মতো এত বোকা না। এত বোকা হলে দেশের বাহিরে আর স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার করে খেতে পারতাম না!”

“আলহামদুলিল্লাহ, তুমি অতি চালাক।আবারও বলি আলহামদুলিল্লাহ। এখন বলো কি কথা বলতে চাও! শুধু শুধু এত ঘুরায় প্যাচায় ঝামেলা আরও কঠিন করছো কেন?”

“আমি করছি ঝামেলা? বদ ছেলে হইছিস একটা। আমার ননদকে বিয়ে করতে তোর অসুবিধাটা কোথায় ছিলো? কেন তুই ওকে কল দিয়ে সাফ সাফ জানিয়ে দিলি তুই এখনই বিয়ে করতে চাস না? যেখানে কি না আমি আসছি এই বলে যে দেশে এসে আমার ভাইয়ের সাথে ওর বিয়ে দিব। তারপর দুজনকেই আমার কাছে নিয়ে যাব। এতে আমার কদরটা কতটুকু বাড়তো শ্বশুরবাড়িতে তার কোন আন্দাজ আছে তোর? এক কথায় সবাই আমার প্রতি অন্ধ হয়ে যেত।”

“গুড, এতক্ষণে কাহিনি বুঝলাম। এখন যাদি আবার ছোটপুও বলে তার ননদকে বিয়ে করতে তাহলে আমার তার ননদকেও বিয়ে করতে হব নয়তো আমিতো তাকেও তার শ্বশুরবাড়িতে ছোট করে ফেলবো। শ্বশুরবাড়িতে তারও কদর বাড়বে যদি আমি তার ননদকে বিয়েটা করি। এখন বলো আমি দুই বৌ নিয়ে কীভাবে কি করব? ভাই হিসেবেতো আমার দুই বোনের কদর তাদের শ্বশুরবাড়িতে বাড়ানোর দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ, তাই না?” হিমেল এবার একটু ব্যঙ্গ করেই বলল কথাটা।

“বেশি বেশি কথা বলিস কেন? তোর ছোটপু কি তোকে এমন কিছু বলেছে? ওরতো কোন ননদই নাই। হোমা কত করে শখ করেছিল ননদকেই ভাইয়ের বৌ বানাবে। ননদ সব সময় ওর কথা মতো চলতো।এরজন্য কত কত মার্কেটিং করে এসেছে। শুধু শুধু তোকে আমেরিকায় নিয়ে গেলে ওর শ্বশুর বাড়ির সবাই নানান কথা শুনাবে ওকে। কিন্তু ননদসহ নিয়ে গেলে কেউ আর কিছুই বলবে না বরং হোমার কথায় তখন সবাই উঠবস করবে। কিন্তু তুইতো সব নষ্ট করে দিলি।”

“ইশশশ আমার পাওয়ার দেখে আমি নিজেতো চমৎকৃত, অভিভূত।”

“এখনও সময় আছে তুই বিয়াটাতে রাজি হয়ে যা।”

“সরি, আমি পারব না। আমি এই মুহুর্তে বিয়ে করতে পারব না। মিনিমাম কয়েক বছর লাগবে আমার এস্টাবলিশ হতে। নিজেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত না করে আমি বিয়ে করব না।”

“কি প্রস্তুত করবি? তোরতো আর চাকরির দরকার নাই। তুই ইমপোর্ট এক্সপোর্ট এর বিজনেস করবি। লাইন ঘাট সব তোর দুলাভাই ঠিক করে দিবে আর ক্যাপিটাল আব্বু দিবে তোরতো নিজের কোন সমস্যা নাই। ”
“তোমার চোখে নাই কিন্তু আমার চোখে আছে।”

“হুমম সেই সমস্যাটাইতো খুঁজছি দুদিন ধরে। এখন পেয়ে গেলাম। ”

“কি পেয়েছো শুনি?”

“আহ থামতো তোরা? হিমু বড় বোনের সাথে এমন মুখে মুখে তর্ক করছিস কেন? আগেতো কখনও করিস নাই? কি হলো তোর ইদানীং। আগেতো সবার কথা ভাবতি, এখন মনে হচ্ছে খুব স্বার্থপর হয়ে উঠেছিস। মেজাজও দেখি সবসময় খিটমিট খিটমিট হয়েছে। ঘটনা কি তোর?”

“ঘটনা আবার কি? তুমি এখন ধরতে পারোনি আম্মু? মিশতো কার সাথে, কার সাগরেদ ছিলো? ভুলে যাও কেন? ”

“হায়রে আল্লাহ! খালামনিকে তুমিও এতটা অপছন্দ করতা আপু ? কই আগে কখনও বুঝি নাইতো? খালামনি দেখি তোমাকে কত কত গিফট করতো! ওগুলোতো খুব খুশি হয়েই নিতা। মানুষটা নাই তারপরও তার ব্যাকবাইটিং করা ছাড়তে পারলা না? আজব মানুষ তোমরা আজব তোমাদের মন মানসিকতা! আম্মু, আপু না হয় এমন করে বলতে পারে কিন্তু তুমি? তোমারতো আপন বোন। তোমার বোন মারা গেলো তার জন্য তোমার এতটুকুও সিমপ্যাথি নাই?”

“আমার বোনও মারা গেছে সাথে ওর প্রতি রাগ ভালোবাসা সব নিয়েই চলেগেছে। এখন আর আছে কে? কার জন্য মন খারাপ করব, সিমপ্যাথি দেখাবো?”

“তোমার বোনের ছেলেমেয়ে দুইটা?”

“সাবধান ওই মেয়ের কথা আমার সামনে আর কখনও বলবি না। কি ডেঞ্জারাস মেয়ে, বাপ আরেকটা বিয়ে করছে বলে তার সম্পত্তি লিখিয়ে রেখে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। যে মেয়ে তার বাপকেও ছাড়ে না সে মেয়ে এই পৃথিবীতে আর কাউকে ছাড়বে? ওরে আল্লাহ আমার জীবনেরও আমি এমন মেয়ে আর একটা দেখিনি। এই মেয়ের কপালে অনেক অশান্তি আছে। বাপের অভিশাপ নিয়ে কোন মেয়ে জীবনে সুখী হতে পারে না। সবধান অমন মেয়ে সম্পর্কে এই বাসায় আর কখনও কোন কথা হবে না বলে দিলাম।”

“আম্মু তুমিই পারো এমন নির্দয় হয়ে কথা বলতে কিন্তু আমি পারি না। কারন আমি….. ”

“চুপ একদম চুপ আর একটা কথা উচ্চারণ করবি না। আমি এসব নিয়ে তোর মুখে আর কোন কথা শুনতে চাই না। এখন তুই বিয়েটা করলেই বাচঁতাম আমি। পিছন থেকে সব অশুভ ছায়া সরতো।”

“তবে শুনে রাখো, আমার খালামনি, আমার আপন খালামনি, যার স্নেহ ভালোবাসা পেয়ে বড় হয়ে উঠেছি। এমন একজন আপন মানুষের মৃত্যুর পর পরই যে আমার বিয়ে নিয়ে ভাবতে পারে তার সাথে আমারও আর কোন কথা থাকতে পারে না।”
কথাটা শেষ করেই ও বাসা থেকে বের হতে চাইল আর তখন ওর মা পিছন থেকে চিৎকার করে উঠল
“সাবধান হিমু তুই এখন বাসা থেকে একটুও বের হবি না। আমি মান করলাম তুই আমার অবাধ্য হতে পারবি না। তুই বাসার বাহিরে এখন যাবি না।”

“ও কে যাব না। তবুও ঠান্ডা থাকো।” বলে হিমেল ফিরে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।

“দেখছো আম্মু ঘটনা কোন দিক থেকে কোন দিকে যাচ্ছিলো। আমি না আসলেতো তুমি সব হারাতে।”

“কে কি হারাতোরে হোমা? জীবনের হিসাবতো বেশ ভালোই শিখেছিস দেখছি।” নাজমুল সাহেব একটু শক্ত গলায় বলে উঠলেন। ওদের কথপোকথন যে তিনি ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে শুনছিলেন তা কেউ খেয়াল করেনি। তার হঠাৎ এমন প্রশ্ন শোনে হোমা একটু অপ্রস্তুত হয়ে উঠল।
” জি আব্বু মানে—-”

“তুই সবার বড়, আমার বড় সন্তান। ভেবেছিলাম আমার মৃত্যুর পর তুই তোর ছোট ভাইবোনদের দেখে রাখবি। কিন্তু আমার আশাটা আজ নষ্ট হয়ে গেল। যেখানে স্বার্থ কাজ করে সেখানে নিরপেক্ষতা আশা করা অবাঞ্ছনীয়।”

“আব্বু তুমি আসলে কি বলছো তা বুঝতেছি না।”

“হুমম বুঝবি কীভাবে, বুঝতে হলেতো — থাক এ বিষয়ে আর চর্চা না’ই হোক। তুই আর হিমুর বিয়ে নিয়ে কোন কথা নাই বলিস। এই বিয়েতে আমারও মত নেই। জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজের একটা মতামত থাকতেই পারে আর এগে অন্য সবার সম্মানও দেখানো উচিৎ। তোদের দুইবোনের মতামতের ভিত্তিতেই বিয়ে দিয়েছি। তখন তোদের পছন্দ অগ্রাহ্য করে নিজের স্বার্থ দেখিনি। সেখানে ছেলের বেলায় কেন ভিন্ন হবে?”

“কিন্তু তোমার ছেলের চোখতো ভুল জায়গায়।”

“কোনটা ভুল আর কোন সঠিক তা তুমিই বা কতটুকু জানো, বোঝো রেহানা?”

” এতটুকু যে বুঝবো না তা ঠিক না।মেয়েটার সাহস দেখছো? কত্তো বড় কলিজা, কি করল কাজটা।”

“পরের মেয়ে বলে দোষটা দেখছো। একবার নিজের দিকে তাকাও চোখ বন্ধ করে নিজেকে একবার মেয়েটার জায়গায় দেখো তারপর বুকে হাত দিয়ে বলো মেয়েটা কতটুকু ভুল।”

“কি বলছো তুমি? তুমি লাবন্যের ভুল দেখছো না? তুমি ওকে সাপোর্ট করছো? এই মেয়ে…..”

তোমার ছোট মেয়ে ওর হাজবেন্ডের বিজনেস শুরু করতে নিজের সব গহনা বিক্রি করে দিয়েছে। এখন ওরা ভালো আছে। নিজেদের সংসারটা গুছিয়ে নিয়েছে। তোমার মেয়ের স্ট্রাগল দেখে দেশে বসে কত কেঁদেছো।এখন সুখ দেখে হাসো। আল্লাহ এমন দিন যেনো আমাকে না দেখায় ধরো তোমার মেয়েটা হুট করেই মরে গেলো। ঠিকতার কিছুদিন পরই তোমার ছোট জামাই আবার বিয়ে করে তেমার মেয়ের কষ্টের গড়ে তোলা সংসারে অন্য কোনো মেয়ে নিয়ে সুখে সংসার করগে শুরু করল। তোমার নাতি নাতনির ভবিষ্যত……
“উফফ তুমি থামোতো। কি সব বলছো আবোল তাবোল, মাথা ঠিক আছে তোমার। কীভাবে এসব বলো? আমার জামাই এত খারাপ না। ও আবার বিয়ে করবে না। ও কখনোই আমার মেয়ের কষ্টে গড়া সম্পদ অন্যকে দিয়ে দিবে না।”

“এমন বিশ্বাস হয়তো রেশমাও করতো। কিন্তু বাস্তবতো হলো ভিন্ন। স্ত্রীর মৃত্যুতে পুরুষ আবার বিয়ে করতে পারে এটা জায়েজ কিন্তু তৃতীয় পক্ষের ক্ষেত্রে তা কতটুকু সহনীয় তা কি কেউ ভেবে দেখে?”

“তুমি হঠাৎ রেশমার পক্ষে কথা বলছো যে? অথচ এই রেশমার জন্য আমি আমার অনেক কিছু হারিয়েছি……”

“তুমি সেদিনও ভুল ছিলা আজও ভুলের মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছো। তুমি যা হারিয়েছো তা সব তোমার নিজের করা ভুলের মাশুল শুধু। কেন অন্যকে দোষারোপ করছো আর নিজের পাপের বোঝা বাড়াচ্ছো।”

“আমি? আমার ভুল?”

“হুমম তোমার ভুল। রেশমার তখন বয়স কম ছিল, চোখে অন্যরকম একটা স্বপ্ন। লিখনকে হারানোর ভয়ে অন্য আরও আট দশটা মেয়ের মতোনই না বুঝে ওর সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো। ওর ধারনা ছিলো না যে ও চলে যাওয়ার পর ওর বাবার এমন অবস্থা হবে। ও একেবারেই বুঝতে পারেনাই ওর যাওয়ার পরিনাম কি হবে। কিন্তু তুমি যা করেছো তা জেনে বুঝেই করেছো। তুমি চাইলেই পারতে ওই দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে। তোমার এর আগেই আরও দুইটা বাচ্চা হয়েছে তোমার অভিজ্ঞতাও ছিল কিভাবে তোমাকে চলতে হবে ওই সময়টাতে । কিন্তু তুমি তা করো নাই। তুমি হাসপাতালে গিয়ে এমন কোন উদ্ধারও করোনি কারউ। উলটা গিয়ে নিজের ক্ষতি করেছো।”

“আমার আব্বা… ”

“তো! সবসময় আবেগ দিয়ে না কিছু সময় বিবেক দিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তুমি যদি নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতে সেই সময় তবে আজকের দিনগুলো অন্যরকম হতে পারতো। নিজের ভুলকে এতদিন রেশমার উপর চাপিয়ে নিজের দায়কে মাটিচাপা দিয়েছিলে। আমি শুধু সহ্য করেছি, এ ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না। ভেবেছি আল্লাহ অতটুকুই আমার ভাগ্যে রেখেছেন। আমার চোখে তুমি সেদিনও অপরাধী ছিলে আজও তাই। মেয়ের কুবুদ্ধি নিয়ে ছেলের পিছে লেগেছো। এসব ছাড়ো।মেয়ের সুবুদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে কাঁদো। নয়তো একজনকেতো হারিয়েছো এবার আরেকজনকেও হারানোর প্রস্তুতিও নিতে হবে।” কথাটা শেষ করে নাজমুল সাহেব আর বসলেন না উঠে নিজের রুমে চলে গেলেন।

রেহেনা বেগম নিজের স্বামীর কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে পড়লেন। কি বলবে তা বুঝতে পারছেন না। সবকিছু কেমন যেন অস্পষ্ট হয়ে আসতে লাগল ক্রমশ।

সকালে রুশকে স্কুলে দিয়ে লাবন্য আবার বাসায় ফিরল। এরপর আবার বুয়া খালাকে নিয়ে বের হল বাজারের জন্য। লিস্ট অনুযায়ী সবটা নিয়ে যখন ফিরল তখন সিড়ির সামনে আবার ওই দোতলার আংকেলের সাথে দেখা হয়ে গেল। লাবন্য এভয়ড করতে চেয়েও পারলো না। তিনি সামনে এগিয়ে এসে বেশ আগ্রহ দেখিয়েই বলতে শুরু করল
“হে ইয়াং লেডি, একি করেছো তুমি? তুমি গেছো বাজারে? কি সাংঘাতিক! এই মেয়ে তুমি আমাকে বলতা। আরে মেয়ে এতে লজ্জার কি আছে। আমি কি পর? যাও যাও বাসায় যাও, আমি আজ রাতে আসব তোমাদর বাসায়। তখন জানিও তোমার আর কি কি দরকার। আরে মেয়ে আমি আছি কি করতে?”

“সরি আংকেল আমার কিছু লাগবে না। আর রাতে বাসায় নাও থাকতে পারি। আসি একটু তাড়া আছে।” বলে খালাকে তাড়া দিয়ে নিজেও উপরে উঠতে শুরু করল দ্রুত । লোকটা সরতেই বুয়া খালা চিৎকার করে বলা শুরু করল
“দেখছেননি খালা কত্তো বড় শয়তান ব্যাডা। কেমন চোখমুখ ট্যাড়াইতে ট্যাড়াইতে কথাগুলো কইলো। বদের হাড্ডি বদ কোহেনকার। শিয়ানা একটা মাইয়া আছে বেডার। তারপরও দিশা ঠিক হয় নাই।”

“আহা খালা থামোতো! সিড়িতে এসব কি শুরু করলা? যাও বাসায় যাও আমি আবার স্কুলে যাব এখন। এমন আরও কত কি আছে কপালে এগুলো নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে?” বলে আর দাঁড়ালো না দরজা থেকেই ফিরে এল স্কুলে যাওয়ার জন্য।

লাবন্য বাসায় ফিরতেই দেখল বুয়া খালা সব বাজার না গুছিয়েই খাবার টেবিলে সার্ভ করছে আগে এমনটা কখনও সে করেনাই। মনে মনে একটু বিরক্ত হল কিন্তু মুখে কিছু বলল না। খাবার খেতে খেতে খেয়াল করল খালার মুখটা বেশ খুশি খুশি। কিন্তু কারনটা বুঝতে পারল না। শরীর আর মন দুটোই এতটা বিক্ষিপ্ত যে আগ বাড়িয়ে নতুন কিছু জিজ্ঞেস করতেও ইচ্ছে করল না। খাওয়া শেষ করে ভাতঘুমের জন্য চলে এল রুমে। ইদানীং খাটা খাটনিটা বেশি হয় বলে ঘুমও বেশ ভালো হয়।

ঘুম ভাঙলো ডোরবেলের আওয়াজে। বিছানায় উঠে বসে দেখল চারপাশ অন্ধকার হয়ে আছে। এখন বাসার দরজাটা অন্য কেউ খুলে না। মাথাটা কেমন জানি একটু ঝিমঝিম করছে। কে আসলো এই সময়তে? একটুকু ভাবতেই মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে।বিরবির করে বলে উঠল “ওই ব্যাটা হারামজাদাটা নাতো?”
লাফিয়ে নামলো আর বলল, যদি সেই হয় তবে আজকে তার সাড়ে সর্বনাশ ঘটায় ছাড়বে। এমনই একটা হিংস্র মনোভাব নিয়ে দরজাটা খুললো।

চলবে

#মেঘে ঢাকা চাঁদ (পর্ব ২২)
সায়লা সুলতানা লাকী

“তুমি? তুমি আসছো? কি মনে করে? অদ্ভুত ব্যাপারতো! তুমি এই সময়তে এই বাসায় আসছো, আমারতো বিশ্বাস হচ্ছে না।” লাবন্য প্রচন্ড রকমের একটা ধাক্কা খেলো মনে হল দরজাটা খোলে।

“দরজা পুরোটা দখল করে দাঁড়িয়েছিস কেন? সরে দাঁড়া, ঢুকতে দে। আর শোন লাগেজটা সাবধানে ভেতরে আনিস গার্ড ছেলেটা একটা চরম বেয়াদব বাসা পর্যন্ত দিয়ে যাওয়াটা যেনো এদের দায়িত্বে পড়ে না। দিন দিন মানুষের আক্কেল বুদ্ধি শূন্যের কোটায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেখতেছে একজন বয়স্ক মহিলা তারপরও এতটুকু বোধ এদের ভিতরে কাজ করল না।” বলতে বলতে লাবন্যকে ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন ওর নানি।

লাবন্য লাগেজ ভেতরে এনে দরজাটা আটকিয়ে সামনে আসতেই শুনতে পেল ওর নানি চিৎকার করে ডাকছে।
“এই তাসলিমা, তাসলিমা কইরে তুই? নে এইটাকে নিয়ে রুমে রাখ। সাবধানে রাখিস। ভেতরে কোরআন শরীফ আছে। তোদের ইন্টারকম নাই নাকি নষ্টরে।”

“নানি আগে মাথা ঠান্ডা কর। এখানে তাসলিমা নামে কেউ থাকে না।”

“তুই চুপ থাক। তুই জানিস কি? আমাকে শিখাতে আসবি না বুঝলি!”

“আশ্চর্য! কি বলছো তুমি ? ভালো কথাইতো বললাম। তাসলিমা কে? এই বাসায় তুমি তাসলিমাকে পেলে কোথায়? আমাদের বাসা আর আমি জানবো না?”

“মানে কি লাবু? এত বছর যাবৎ ও তোদের এত সেবা যত্ন করছে আর তুই ওর নামটাই জানিস না? এটা কোন ধরনের অসভ্যতা হয় বলতো আমাকে? এগুলাই শিখেছিস জীবনে? অবাক হচ্ছি আমি।”

“খালাম্মা আমি বিছানায় চাদর বিছাইয়া রাখছি। সব পরিস্কারও করছি। আপনে এহন রেস্ট নিতে পারবেন? কোনু অসুবিধা হইব না। ”

“বুয়া খালার নাম তাসলিমা? ও মাই গড। এটাতো জানাই ছিলো না। কেউতো খালাকে নাম ধরে ডাকতো না। জানবো কীভাবে?”

“বুঝি না রেশমা এই বাসায় এসে কি সব আদব কায়দা ভুলে গিয়েছিল? ওও কি বুয়া বলে ডাকতো নাকি? আশ্চর্য, তোরা আর কত সভ্য হবিরে? বুয়া কোন নাম হল? মেয়েটা একেবারে বদলে গিয়েছিলো দেখছি। আচ্ছা বাদ দে, রুশ কোথায়? আমার নানা ভাই রুশ, এই রুশ।”

” আহ! এভাবে ডেকো না। ও তো এখনও ঘুমায়।”

“এখনও ঘুমায়? বলি এখন বাজে কয়টা? এটা কোনো ঘুমের সময় হলো? বাসায়তো দেখি কোন নিয়ম কানুনের বালাই নাই। ডেকে তোল ওকে।”

“স্কুল আর কোচিং শেষে বাসায় এসে খুব টায়ার্ড হয়ে যায়। খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে একটু লেট হয় তাই আর সময় মেইনটেইন হয় না।” লাবন্য কথাটা বলতে বলতেই দেখলো রুশ এসে দাঁড়িয়েছে ড্রয়িং রুমে। হঠাৎ এমন চিৎকার চেঁচামেচিতে কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে ছেলেটা। চোখ ডলতে ডলতে সমনে আসতেই নানি হেঁচকা টানে ওকে বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরলেন । মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে গালে কপালে চুমু খেলেন। রুশ আকস্মিক এমন আদরে বিগলিত হয়ে পড়ল। মা মারা যাওয়ার পর এমন আদর আর কেউ করেনি। ওর কেনো জানি একটু চোখ ভিজে উঠল । খুব কষ্টে আবেগ চেপে রেখে বলল

“নানুমনি, তুমি? কখন আসছো?”

“হুমম, নানুমনি আমি, আমিই আমার নানা ভাই রুশের কাছে চলে এসেছি। আমার যাদুমনি রুশ সোনার কাছেই থাকব এখন থেকে । এই যে আমার যাদুর গায়ে কি সুন্দর আমি আমার মেয়ের গায়ের গন্ধটা পাচ্ছি। এই গন্ধের টানেইতো চলে এলাম। ” রুশের গায়ে নাক লাগিয়ে ওর নানু বললেন।

“নানুমনি আমিও তোমার গায়ে আম্মুর ঘ্রাণ পাচ্ছি।” রুশ একটু হাসি দিয়ে কথাটা বলল।

“পাবিইতো, আমরা যে সব একনাড়েই বাঁধারে ভাই।”

“এক মিনিট এক মিনিট, নানি শোনো আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমার মাথাটা খুব ডিজিডিজি লাগছে। আমাকে একটু খুলে বলোতো ব্যাপারটা! তুমি আসলে এখানে কেন আসছো? তুমিতো এখানে আসার কথা না! আম্মু থাকতেই আসো নাই আর এখনতো….. কেমন যেনো হিসাব গরমিল লাগছে।”

“কি বলবো? কি শুনতে চাস? কিসের এত হিসাব মিলাতে চাস?”

“আগে বলো, তুমি কেন আসছো?”

“এখন থেকে এখানেই থাকব, আমার রেশমার আমানত লাবন্য আর রুশের পাশে থাকতে এসেছি।”

“কিন্তু কেন?”

“কারন আমার মেয়ের মৃত্যুতে তার আমানতগুলো যে বড় একা হয়ে গেছে, বড় এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব, তাই।”

“নানি তোমার হঠাৎ মৃত মেয়ের জন্য এত দরদ উথলে ওঠলো কেন? এই দরদটা আগে উঠল না কেন? তখন যদি মানে মেয়েটা বেঁচে থাকতে উঠতো……”

“ও বেঁচে থাকতে এই দরদটা না ওঠে যে পাপ করেছিল, এই সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে দরদটা এখন এখানে এসেছে সেটাই ধরেনে। হিসাব সহজেই মিলে যাবে।””

“নানি সব কিছু এমন কেন? আমার মা’কে যারা কষ্ট দিয়েছে আমি তাদের কাউকেই সহ্য করতে পারছি না। সেই মোতাবেক তোমাকেও না।

“কে বলেছে তোকে আমাকে সহ্য করতে? আমিতো একবারও বলি নাই। বলছি? শুধু শুধু এত কথা বাড়াস কেন? খুব মুখ চালাতে শিখেছিস দেখছি! এগুলা কিন্তু আমার সাথে একদমই চলবে না। আমি কিন্তু রেশমা না। রেশমার মা। আমার সাথে কোন ওতুবুতু চলবে না। সব কিছু পারফেক্ট হতে হবে। টাইম মতো সব কিছু। বোঝাতে পেরেছি? এখন থেকে নিজের পড়াশোনায় মন দিবি। সেমিস্টারের খবর কি? খোঁজ খবর কিছু রাখিস? রেশমা থাকলে তোর অবস্থা দেখে ঘরের কোনে বসে কাঁদতো আর বলতো “আমি হেরে গেছি, লাবু তুই আমাকে সবার চোখে হারিয়ে দিল।”

“আমি কখনোই আম্মুকে হারতে দেইনি কারো কাছে।”

“কীভাবে বিশ্বাস করি, এখন তো দেখছি তুই ইচ্ছে করেই ওকে হারিয়ে দিচ্ছিস। বলতে পারবি এই এক মাসে একদিনও নিজের পড়াশোনা নিয়ে বসছিস! মেয়েটা নিজের ভুলে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলো। আর তুই মা’কে সবার চেখে হারিয়ে দিতে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিস।”

“এই তুমি বারবার একই কথা বলছো কেন? আমি কখন আম্মুকে লুজার দেখাতে চেয়েছি? আমি একা লড়ে যাচ্ছি আম্মুর জন্য। বাসা সামলানো, রুশকে ঠিক মতো চালানো এগুলা কি সহজ কথা?”

“হুমম খুব ভালো দায়িত্ব পালন করছো কিন্তু তুমিও যে তোমার মায়ের মতো পড়াশোনার ইস্তফা দিয়ে বসে আছো সেদিকটা কে দেখবে?”

“এক মিনিট, আমি কখন বললাম আমি ইস্তফা দিয়েছি। সময় সুযোগ মতো করবতো।”

“সময় আর সুযোগ কারো জন্য বসে থাকে না। আর এগুলো এমনি এমনি আসে না। সময়ের কাজ সময়েই করতে হয়।এই যে কথায় কথায় এক মিনিট এক মিনিট করছিস সেই এক মিনিটও তোর জন্য অপেক্ষা করবে না। তাই বলি কি তুইও তোর পড়াশোনাটা সময়ের সাথেই চালিয়েনে।কোনো গ্যাপে পড়িস না নানু আপু। বুঝিস না কেন, তোদের সফলতাই যে আমার মেয়েটার জয়। আগামীকাল থেকে আমি রুশকে নিয়ে ছুটবো আর তুই নিজের জন্য ছুটবি। ভালো কিছু করে রেশমাকে তাক লাগিয়ে দিবি। তোর ভালো কিছু দেখে যেনো রেশমার চোখগুলো জ্বলজ্বল করে উঠে আনন্দে। কি পারবি না লাবু?”

“নানি তুমি এমন কেন? তুমি কেন আগে আসো নাই? কেন আম্মুকে এমন করে আগলে রাখো নাই? আম্মুযে একটা আশ্রয়ের অভাবে নিরবে সবার অত্যাচার সহ্য করতে করতে চলে গেল।” কথাটা বলতে বলতে কেঁদে ফেলল লাবন্য

“আল্লাহর হুকুম হয়েছে তাই চলে গিয়েছে। ওর ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে। পেছনের কথা মনে করে বর্তমানকে নষ্ট করার নাম বোকামি। আমরা কেউ বোকা না। ” লাবন্যকে বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন তিনি।

“খালাম্মা আপনের লেইগ্যা দুইটা রুটিও বানাইছি। আইজকা পেঁপে নাই কাইল আইন্যা সবজি কইরা দিমুনে।

লাগবেনারে তাসলিমা, তুই এত ব্যস্ত হইস না। এখন অযু করে নামাজ পড়ব। যাও তোমরা দুই ভাইবোন ফ্রেশ হয়ে আসো। একসাথে খাবো। এরপর পড়তে বসবা ঠিক আছে?

“খালা তুমি জানতা নানি এখন আসবে? আমাকে বলো নাই কেন?”

“হ,আমারে বাসায় দিয়া আপনে স্কুলে যাওয়ার পরই খালাম্মা ফোন দিছিলো। আমগো সব খবর টবর নিসে। তহনই কইছে। আপনেরে কই নাই। আপনে আবার যদি রাইগ্যা উঠেন তহন কে সামলাইবো আপনেরে। তাই আর কই নাই।” বলে বুয়া খালা একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।

নানিও নামাজ পড়তে উঠে গেলেন নিজের রুমে। লাবন্যের দাদির থাকার রুমেই বুয়াখালা তার সব কিছু গুছিয়ে দিলেন।
রুশও হঠাৎ করেই একটু একটিভ হয়ে গেল। ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে ঢুকে গেল। আজ আর ঘুম থেকে উঠে চুপচাপ সোফায় বসে থাকল না ঝিমা মুরগির মতো। লাবন্যের মনটায় হঠাৎ করেই কেমন জানি একটা ভালো লাগার আবেশ ছেয়ে গেল। অনেক দিন পর নিজেকে খুব হালকা লাগল। মনে হল বুকের উপর চেপে থাকা একটা বড় বোঝা বুঝি নেমে গেল। শান্তি শান্তি একটা মন নিয়ে নিজেও পারফেক্ট হতে উঠে নিজের রুমে ঢুকল। এই ওল্ড লেডি বেশি সুবিধার না তা আম্মুর কাছে আগেই শুনেছে।তাই আর তাকে রাগাতে ইচ্ছে করল না।

রাতে ডাইনিং টেবিলে আসতেই চোখে পড়ল টেবিলের উপর রাখা হিমেলের পাসপোর্টটার উপর। হিমেল ওটা তুলে নিল, মনে পড়ল এটা হোমায়রার কাছে ছিল এতদিন। বুঝল ওই এটা এখানে ফেলে রেখেছে। ইচ্ছে করেই কোন বাড়তি কথা না বলে খেতে বসল। আজ দুলাভাই তার বন্ধুদের সাথে ডিনার করতে গিয়েছেন। আপা তার মোবাইল হাতে টেবিলেই বসা কিন্তু কোন কথা বলছে না।একটু পরই ওর আব্বু এসে বসল। রেহেনা বেগম খাবার সার্ভ করতে নিলে তিনি হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিয়ে নিজেই নিজের প্লেটে ভাত বেড়ে নিলেন। হোমা একবার আব্বুর দিকে একবার ওর আম্মুর দিকে তাকাল বুঝলো পরিবেশ বেশ উত্তপ্ত। একটু স্বাভাবিক করতে নিজের প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে বলল
“আম্মু তুমি আমাকে খাবার দাও। আর তোমার নাতনিকে আজ তুমি খাইয়ে দিও। আমি খেয়ে একটা সিনেমা দেখব।” কথাটা বেশ আহ্লাদী স্বরে বলল সবসময়ের মতো।

“হোমা বাংলাদেশে এসেছিস আজ কতদিন হল, অথচ এখনও তোর শ্বশুরবাড়িতে যাসনি। কাজটা কি ঠিক হল? ”

“আব্বু বড় ভাইয়ার বাসায়তো গেলাম গত পরশু। ওখানে আমার ছোট দেবরও ছিল।সবার সাথে দেখাতো হল।”

“ওটাতো আর শ্বশুরবাড়ি না। আমি বলছি ওদের গ্রামের বাড়ির কথা। ওখানে তোর শাশুড়ি আছেন আরও দেবর ননাসরা আছেন, ওখানে যাবি কবে?”

“আব্বু আমার বাচ্চারা গ্রামে গিয়ে থাকতে পারে না। আর আমারও খুব অসুবিধা হয় ওদের সাথে এডজাস্ট করতে।”

“আমরা গ্রামে থাকলে কি তুই ওখানে যেয়ে থাকতি না? আমাদের সাথে দেখা করতি না?”

“তোমরা কেন গ্রামে যাবে? ঢাকায় এত সুন্দর থাকার জায়গা থাকতে?”

“কেন যাবো না? হিমেলকে ফ্ল্যাটটা দিয়ে আমার শেষ সময়টা গ্রামে চলে যাবো ভাবছি।”

“আব্বু প্লিজ বোকার মতো এমন কাজ জীবনও করো না। পরের মেয়েকে দিয়ে কোন বিশ্বাস নাই। শেষ জীবনে পরে তোমরা দুজন শুধু কষ্টই করবে। এমনটা এযুগে কেউ করে? আর তুমিতো বলেছিলে আমি…..

“ভরসা হারিয়েছিস। প্রথমে ভেবেছিলাম তুই বড়, তাই তোর উপর ছেড়ে দিব ছোট দুইজন কে। এখন দেখলাম তুই নিজ স্বার্থে বেশ পোক্ত। তাই আর কারউ উপর ভরসা নয়, নিজেই সব গোছাচ্ছি। আর পরের মেয়ের কথা বলছিস? পরের মেয়ে কি মেয়ে না? তার উপর বিশ্বাস কেন করবো না। আচ্ছা ওসব রাখ তুই তোর দায়িত্ব পালন কর। গ্রামে যা, শাশুড়ির খোঁজ খবর নে।ওখানে কিছুদিন থাক। এটা তাদের হক। ছেলের সংসারটা কাছ থেকে দেখার, নাতি নাতনির সংস্পর্শ পাওয়াটা।”

“আব্বু প্লিজ আমাকে এসব করতে বলো না। আমার ওখানে গিয়ে থাকতে ভালো লাগে না। তোমাদের জামাই যাবে টাকা পয়সা যা লাগবে তা সবইতো দিয়ে আসবে।”

“ভালো না লাগলেও তোকে যেতে হবে। তোর ননদ ননাসদের সাথে মিশতে হবে। তুই যদি এসব না করিস তবে কীভাবে তোর ভাইয়ের বৌয়ের কাছে এসব পাওয়ার আশা করবি বল? তোর ভাইয়ের বৌ এসে তোর আব্বু আম্মুর সেবা করবে এমনটা কি তুই কখনও চাইতে পারিস পরের মেয়ের কাছ থেকে? সেই অধিকার কি তোর থাকে?”

“সেই জন্যইতো আমার ননদকে বৌ করে আনতে চেয়েছিলাম। ও ঠিকই আমার কথা শুনতো, আমাকে ভয় পেত। কিন্তু তোমরাতো শুনলেই না আমার কথাটা।”

“তোর ননদ তেমনটা কেন করবে? ও তো তোকে দেখে শিখেছে এসব এভয়ড করে চলা, তাই না? সেজন্যই ওই মেয়ে আমি আনব না। তুই আগামীকাল শ্বশুরবাড়ি যাবি জামাই বাচ্চাদের নিয়ে। তোদের মায়ের উচিৎ ছিলো তোকে আগেই এই শিক্ষাটা দেওয়ার। কিন্তু সে উল্টো তোর থেকে উলটা পালটা শিক্ষা নিয়ে এতোদিন অপকর্ম করে বেড়িয়েছে। কি আর বলব, সবই ভাগ্য। তোরা নিজেরা কিছু করবি না আর অন্যের মেয়ের কাছে এটা সেটা পেতে শুধু আশা করবি। এসব দেখে কেবল শুধু হাসিই পায় আমার।”

হিমেল চুপচাপ খেয়ে নিল। ওর আব্বুর কথাগুলো শুনে বেশ মজাই লাগছিল। হোমার চেহারার রংটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। মনে মনে বলল ” অনেকদিন পর রাতে ঘুমটা বেশ ভালোই হবেরে হিমেল তোর।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here