#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ,পর্ব ৩২,৩৩
সায়লা সুলতানা লাকী
৩২
“কি বলছো ভাই তুমি? আমরা তোমাকে কুবুদ্ধি দিছি? এখন বুঝবা নাতো, বুঝবা যখন এই মেয়েরে বিয়ে দিবা ছেলে দূরে সরবে নিজের স্বার্থ নিয়ে তখন বুঝবা আমরা তোমারে কি দিছি? এত মেয়ে মেয়ে করছো যে, দেখলা না মেয়ে তোমারে এক রাতের মধ্যে ফকির করে দিলো কীভাবে ? কিছু করতে পারছো তখন? পারো নাই। এখনও সময় আছে নিজের জন্য ভাবো কিছু।” লাবন্যের ছোট ফুপু খুব জোরের সাথেই বলে উঠল কথাগুলো।
“ওরে আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরে! অনেক অনেক ধন্যবাদ তোদের, আমার জন্য এতদিন ভেবেছিস বলে । আর ভাবিস না, আমি আর কুলাতে পারছি না এত এত শুভ বার্তা। আমাকে আমার জন্য ছেড়ে দে দয়া করে। দয়া করে আর কোনোদিন আমার বাচ্চাদের বিষয়ে কোন কথা বলতে আসিস না। শোন এই উপরেতো আরও আসবিই না। এটা আপাতত আমার অনুরোধ তোদের কাছে বলে মনে কর। যদি না মানিস তবে লাবু না আমিই যথেষ্ট হব তোদের মতো শুভাকাঙ্ক্ষীর জন্য। ”
“তোমার হইছেটা কি? তুমি বাহিরের এক মহিলার জন্য তোমার ছোট বোনের সাথে এমন ব্যবহার করছো আজ?”
“তুই আর একটা কথাও বলবি না। আমি আর একটা শব্দও শুনতে চাই না। তোদের অশুভ ছায়া আর সহ্য করতে পারছি না আমার বাচ্চাদের উপর। তোদের মতো নির্বোধের সাথে কথা বলাটা বেকুবের কাজ ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না। কে বাহির আর কে ভিতর তা আমিই বুঝব তুই এখন যা বলছি, এক্ষুনি যা।”
শেষের কথাটা লিখন এতটাই জোরে বলল যে ওর বোন আর কিছু না বলে রাগে গজগজ করতে করতে বের হয়ে গেল বাসা থেকে ।
“লাবন্য নিজেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছিলো। এরই মধ্যে লিখন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল আমার লাভ, আমার জানপাখি।এতটা রাগ করতে হয় না মা। নিজের রাগ সংবরন করতে শিখ। এমন অনিষ্টকারী মানুষ জীবনে বহু আসবে সামনে, সবসময় তাদের সামনে রিয়েক্ট করতে হয় না মা।” বলতে বলতে স্বভাব মতো মাথায় একটা চুমু খেল লিখন। লাবন্য আর সহ্য করতে পারল না। ওর ভিতরটা এলোমেলো হয়ে গেল এতদিন পর পুরোনো ধাঁচে নিজের আব্বুকে ফিরে পেয়ে। ও এক ঝাটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে চিৎকার করে উঠলো
“তুমি প্রতারক, তুমি আমার আম্মুর ভালোবাসার সাথে চরম প্রতারণা করেছো। তুমি বিশ্বাসঘাতক। তুমি আম্মুর সব বিশ্বাসের সাথে খেলেছো। আমার আম্মুর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলা আরেকটা বিয়ে করার জন্য। তাইতো মৃত্যুর পরপরই বিয়ে করতে একটুও দ্বিধাগ্রস্ত হও নাই। তোমার মতো মানুষের কোন স্থান নাই আমার জীবনে। তোমার এসব লোক দেখানো আদরের কোন দরকার নাই আমার।” কথাটা শেষ করেই কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে গেল।
“লাভ, লাবু, শোন, শোন মা, আমার কথাটা শোন।”
লিখন ওর পিছন পিছন ডাকতে লাগল কিন্তু এগোতে পারলো না লাবন্যের নানির জন্য, তিনি বাঁধা দিলেন।
“যেতে দাও লিখন, ওর চিন্তা ছাড় তুমি, এখন যাও নিজের ঘরে যাও।তোমার বোনকে কন্ট্রোল কর। একই বিল্ডিংএ থাকতে হলে অনেক কিছু তোমাকে মেইনটেইন করতে হবে। পরিবেশ নষ্ট করে সেখানে থাকা যায় না। তোমার বোন মনে হচ্ছে সিড়িতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে।”
“আম্মা আই এম সরি, ওর কথায় আপনে কিছু মনে করবেন না। আমি আসলে বুঝতে পারিনি যে ও উপরে চলে আসবে। কখন যে আসলো তা বুঝতে পারিনি। আপনি কল দিলেন পরে খেয়াল করছি।”
” আহ লিখন, এখন এসব কথা বলার সময় না। যাও তুমি আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন কর।”
“আম্মা লাবুযে…”
“যাও তুমি, ওকে আমি দেখছি।” রেশমার মায়ের আশ্বাস পেয়ে লিখন আর কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে এল বাসা থেকে।
লাবন্য নিজের রুমে বসে ওর আব্বু আর নানির কথোপকথন শুনছিলো। ওর কাছে সব কিছু কেমন যেনো এলোমেলো লাগতেছিলো। সবাই কি বলছে? কি হচ্ছে কিছু যেনো বুঝতে পারছিলো না। খেয়াল করল পিছন থেকে ওর নানি এসে বসল ওর পাশে। ও তখনও কাঁদতে ছিলো। কোনভাবেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলো না।
“তুই যেদিন স্ট্যাম্প পেপারে সাইন করিয়ে নিলি তোর আব্বুকে দিয়ে। তখন ও তোর চোখেমুখে এক ভয়ংকর রুপ দেখেছিলো। তোর চোখমুখে ছিল স্পষ্ট অনিরাপত্তার ছায়া । ওর চেনাজানা লাভ নাকি সেখানে কোথাও ছিলো না। ও এতোটা ভয় পেয়েছিলো যে কোন দ্বিধা দ্বন্দ না করেই সাইন করে সবাইকে নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিলো ঠিক যেমনটা তুই চেয়েছিলি। দুজনকে ওর বড় বোনের বাসায় রেখে ও চলে গিয়েছিলো ওর পরিচিতা এক কাউন্সিলরের কাছে। তার কাছে সবকিছু খুলে বলার পর তিনি নাকি এডভাইজ করেছিলেন যে তোর কাছে এমন একজন এখন থাকা দরকার যে তোকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিতে পারবে। আদর ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখবে, কোন প্রকার জোরজবরদস্তি করবে না। যেমনটা তুই চাস ঠিক সেভাবেই তোর সঙ্গ দিবে। তোর প্রতি এই মুহুর্তে কোন মেন্টাল প্রেসার দেওয়া যাবে না। দিলে নাকি তুই চরম কোন ভুল করে বসবি। তোর মতো বয়সি ছেলেমেয়েরা এরকম পরিস্থিতিতেই বেশি ভুল করে, ভুল পথে চলতে শুরু করে । তখন তাদেরকে আবার শুধরে ফিরিয়ে আনতে অনেক কষ্ট হয়। কেউ আসতে পারে আবার কেউ চিরতরে হারিয়ে যায়। এমন সব কথা শুনে লিখন তখন নিজেই বিদিশা হয়ে পড়েছিল। উলোট পালোট চিন্তা করতে করতে শেষে কল দেয় হিমেলকে। ওর সাথে সবকিছু নিয়ে আলোচনা করে। হিমেলকে দিয়ে আমাকেও ডাকালো পরেরদিন সকালে কথা বলার জন্য । কফিশপে নির্লজ্জের মতো মেয়ে হারানো এক মায়ের পা জড়িয়ে সেদিন এক মেয়ের বাবা অঝোরে কেঁদে ছিলো শুধু মাত্র তার মেয়েটাকে আগের জীবনে সেই প্রানচঞ্চল উচ্ছল রূপে ফিরে পাওয়ার জন্য। নিজের করা ভুলের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে লজ্জায় বারবার নুয়ে পড়ছিলো ওর মাথা। হাত জোর করে সেদিন শুধু ক্ষমা ভিক্ষাই চেয়েছিলো। ”
“আর তুমি তাতেই গলে গিয়ে ক্ষমা করে দিলে?”
“নারে, পারিনি। ওকে ক্ষমা করতে পারিনি। কি করে করি বল? আমি যে আমার মেয়েটাকেই হারিয়ে ফেলেছি ততদিনে। যে মেয়েটা ওকে ভালোবেসে আমাকে ছেড়ে চলে এসেছিলো। তাকেতো ওরই দেখে রাখার কথা ছিলো!কিন্তু ও পারেনি, সঠিকভাবে আমার মেয়েটা ওর ভালোবাসার মূল্যায়নটুকুও পায়নি, মেয়েটা আমার এক বুক কষ্ট নিয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। কি করে লিখনকে এত সহজেই ক্ষমা করি?”
“আমিও করবো না, কোনোদিনও করবো না।”
“ওর কান্নায় আমি সেদিন অন্য কিছু দেখেছি, নিজের মেয়ের জন্য ওর বুকে শুধু হাহাকার দেখেছি। আমিও তখন সদ্য মেয়ে হারানোর শোকে কাতর। মনের ভেতর মেয়ের সাথে করা নিজের ভুলের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছি প্রতিনিয়ত। তোর অবস্থার কথাশুনে মনে হল লিখন না আমার রেশমাই বুঝি আমার কাছে এসে সাহায্য চাচ্ছে। মনে হল এই এক উপায় যাতে আমি আমার মৃত মেয়ের মনে একটু শান্তি দিতে পারি। আমার মনের অনুশোচনাটাও কিছুটা হলেও লাঘব হতে পারে এই কাজে। চারপাশের সব কিছু ভুলে গেলাম। কে কি বলবে? কে কি চোখে দেখবে বিষয়টা? সব কিছু তখন তুচ্ছ হয়ে গেল। নিজেকে একটু একটু করে গোছালাম। তারপর চলে এলাম। জানতাম আমি আমার বর্তমান বাঁধন ছিড়ে আসলে সম্মুখ বিপদে পড়তে হবে। তখন হিমু দিলো সাহস , বলল ও সব কিছুতে পাশে থাকবে। ব্যস সাহস করে পা বাড়ালাম। আসলাম তোদের কাছে, আমার রেশমার জানপাখিদের কাছে৷ আমার রেশমার গড়ে তোলা ওর শান্তির নীড়ে নিজের জন্য একটু স্বস্তি খুঁজে নিতে । রেশমার মৃত্যুর পর কয়েক রাত ঘুমোতে পারিনি মনের কষ্টে। এখানে এসে দেখলাম আমার ভালো ঘুম হচ্ছে৷ আমার মনে কোত্থেকে যে এত শান্তি এসে ভর করল তা বুঝলাম না। এখন মনে হয় আমার বাকিটা জীবন আমি রেশমাকেই দিব।অনেক বঞ্চিত হয়েছে মেয়েটা। এখন যা আছে আমার তার সবটারই ও একাই হকদার। অন্যদের জন্য জীবনের ফেলে আসা বছরগুলোতো দিয়েছি আর তাই কোন দায়বদ্ধতা নাই আমার কারউ কাছে। যে কোন মূল্যে আমি এখন আমার রেশমার আদরের সন্তানদের পাশে থাকবো। যেমনটা ও থাকলে থাকতো ছায়ার মতো। জানি না কতটুকু পারবো তবুও চেষ্টা করব।”
“নানি আমার ভেতরটা এমন লাগছে কেন? আমার বুকটা ফেটে যেতে চাচ্ছে কষ্টে। কেন আমাদের সাথে সব কিছু এমন হল? আম্মু কেন এমন করে চলে গেল? কেন আব্বু শুধু আমাদের থাকলে না, কেন আব্বু আবার বিয়ে করল? কেন আমরা একসাথে আম্মু আব্বু দুজনকেই হারালাম বলতে পারবে নানি?” চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে লাবন্য যখন কথা গুলো বলছিলো তখন ওর নানি ওকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরল। পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করতে করতে বললেন
“যা আল্লাহর ইচ্ছে হয়েছে তাই ঘটেছে তোদের জীবনে। তা মেনে নিয়ে সামনের সময়টাকে ভালো করে গুছিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই হচ্ছে জীবন। তোর আম্মুকেতে আর ফিরে পাওয়া যাবে না তবে আব্বুকে যতটুকু পাওয়া যায় তাতেই শুকরিয়া আদায় কর। তাতেই মানিয়ে নিতে চেষ্টা কর। জীবন থেমে থাকবে না, চলবেই। সব আবার হুবুহু আগের মতো হবে না ঠিকই তবে জীবন সচল করতে তোদেরকেই চেষ্টা করতে হবে। বাহির থেকে কেউ এসে ভালো থাকতে শিখাবে না। নিজেকেই নিজের ভালো থাকাটা শিখে নিতে হবে। ভীতুরা লড়ে না সহজেই হার মানে।জীবনকে লন্ডভন্ড করে ফেলে একটা সময়। রেশমা নিশ্চয়ই কোনো ভীতুর জন্ম দেয়নি। রেশমার লাভ লড়বে, নিজেকে ভালো রাখবে, ভাইকে ভালো থাকার পথ দেখাবে। জীবনকে সুন্দর করে তুলবে যা দেখে জান্নাতে বসে রেশমা কাঁদবে না বরং গর্ব করে বলবে আমার লাভ পেরেছে। কি ঠিক বলছি না লাবু?”
“নানি তুমি আমাকে শক্ত করে ধরে রাখো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি আম্মুকে কখনওই কষ্ট দিব না। যা কষ্ট ছিলো তার ভাগ্যে তা ভোগ করে গেছে দুনিয়ায়, আর কোন কষ্ট বাকি নাই তার জন্য। আমার আম্মু জান্নাতে বসে শুধু সুখ করবে, শুধু সুখ থাকবে আম্মুর চারপাশে।”
” আর তুইও যা কাঁদার আজকেই কেঁদেনে। এরপর আর কাঁদবি না। যতক্ষণ কাঁদবি ততক্ষণই পিছিয়ে পড়বি জীবন থেকে। আব্বু হারিয়ে গেছে ভেবে ভেবে যে কষ্ট পাচ্ছিলি আজ দেখলিতো তোদের আব্বু তোদেরই আছে, হারায় নাই। সবসময় কেন এমন হবে যে সন্তান ভুল করবে আর তা বাবা মা ক্ষমা করে সন্তনকে আগলে রাখবে? এটার উলটাওতো হতে পারে! ভুলতো বাবা মায়ের তরফ থেকেও হতে পারে। তাই বলে কি তখন বাবা মা’কে দূরে ঠেলে দিতে হবে? বাবা মা যদি সন্তানের ভুলকে ভুলতে পারে তবে কেন বাবার করা ভুলকে তার সন্তান ভুলতে পারবে না?”
“কি বলছো তা তুমি বুঝে বলছোতো? আব্বুর ভুলকে মেনে তাকে কাছে টানার মানে বুঝো? তার সাথে আর কে আসবে আমাদের কাছে জানো? আমি অত মহৎ না আমি তা মেনে নিতে পারবো না কোনো দিনও । ”
” তুই কি পারবি? আমিইতো মন থেকে তা মেনে নিতে পারছি না। কীভাবে তা মেনে নিতে আমি তোকে বলব? তবে লিখনকে দূরে ঠেলে দিস না। বাপকে বাপের জায়গাটায় আবার ফিরিয়ে আন। নিজের জন্যতো আছেই সাথে রুশের জন্যও। মায়েরা যা পারে তা কোনোদিনও বাবারা পারে না।
আমার মায়ের কথা বলি শোন, বাবা মারা গেলেন যখন তখন মায়ের বয়স ছাব্বিশ কি সাতাশ। আমরা চার ভাইবোন ছোট ছোট। আমার বয়স দশ। মাকে হঠাৎ করেই দেখলাম বোরখা পড়তে। এখন বুঝি তখন ছিলে মায়ের সদ্য তাজা যৌবন, মা চোখের পলকে তার পুরো যৌবন কালো কাপড়ে মোড়ায়ে নিলেন। বোরখা পড়ে বাজারে যান, দোকানের হিসাব আনেন। আমাদের পড়াশোনা দেখেন। জমি জমার হিসাব রাখেন।সব একা একাই করেন। কেউ তখন মা’কে বুদ্ধি দেন নাই আবার বিয়ে কর। বরং মায়ের পায়ে পায়ে দোষ খুজে বেড়িয়েছেন। একটু সাজলে দোষ। একটু হাসলে দোষ। একটি কাঁদলেও দোষ।বলতো বুড়া বয়সে ভীমরতিতে ধরছে তাই কাঁদে। মা আমার আস্তে আস্তে সব ভুলে গিয়ে শুধু আমাদের চারভাইবোনের মা হয়েই বাকিটা জীবন বেঁচে ছিলেন। অথচ আমারই মেজ মামা সত্তর বছর বয়সে মামি মারা যাবার পর আবার বিয়ে করেছিলেন না হলে তিনি চলবেন কীভাবে এই কথা বলে? এবং তার এই বিয়েটাও কিন্তু আশেপাশের শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্ররোচনাতেই হয়েছিলো। এমনটাই হয় তবে কিছুতো ব্যতিক্রম থাকেই কেউ কেউ বৌ মারা গেলে সারাজীবন সেই বৌয়ের স্মৃতিতেও বেঁচে থাকে তেমন পুরুষও দেখেছি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা বিয়ে করে। লিখনও তেমনই, তবে ও যদি আরও কিছু সময় নিয়ে কাজটা করতো তবে হয়তো মনকে মানাতে পারতাম।এমন হুট করেই করায় বড়ই হোটচ খেয়েছি। আসলে কি জানিস! অধিকাংশ পুরুষদের ক্ষেত্রে একটা নিদিষ্ট সময়ের পর আর ভালোবাসার অনুভূতি থাকে না। সেখানে থাকে অভ্যাস, অভ্যস্ত, আর নির্ভরতা। ওরা সাংসারিক দিকটায় ক্রমেই স্ত্রীর প্রতি নির্ভর হয়ে যায়। অনেক কিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন মনে হয় স্ত্রী ছাড়া ওরা নিরুপায়।…”
“নানি প্লিজ তুমি এখন আমাকে এসব উলোট পালোত কথা দিয়ে কিছু বোঝাতে যেয়ো না। আমার মাথা কিছুই নিতে পারছে না। সব কিছু বড় জটিল লাগছে।”
“আচ্ছা যা আর কিছু বলবো না। তবে তুই আর কাঁদবি না। এত ঘ্যানঘ্যান আর ভালো লাগে না। রুশের মনেও প্রচুর চাপ পড়ে। এটাও তোকে দেখতে হবে। ওরা থাকুক নিচে ওদের মতো করে। আমরা থাকব এখানে। আগের মতো মজা করব, মাস্তি করব তবে অবশ্যই লিমিটের মধ্যে। মনে রাখিস। এখন থেকো সেভাবেই নিজেকে তৈরী কর।”
চলবে
#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ৩৩)
সায়লা সুলতানা লাকী
সকালে ঘুম ভাঙল একটু দেরিতে। এলার্ম বাজতেই উঠেছিল লাবন্য। এরপর নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ছুটির দিনগুলোতে সকাল সকাল উঠতে একটুও ইচ্ছে করে না। রেশমা থাকতে এই সুবিধাটুকু ভোগ করা খুব কঠিন ছিলো। ছুটির দিনে একগাদা কাজ দিয়ে রাখতো। বিশেষ করে সকালে দাদিকে গোসল করানোর কাজটা দিত বেশি। রেশমার মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন ইচ্ছেমতো ঘুমিয়েছে একেবারে বাঁধাহীন ভাবে । কেউ ডাকাডাকি করার ছিলো না। কিন্তু নানি আসার পর আবার সেই নিয়মে বাঁধা জীবনটাতে আঁটকে গেল ওরা। ছুটির দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠে সুরা কাহাফ পড়তে হবে নানির সাথে বসে। প্রথম কয়েকবার একটু কষ্ট হয়েছিল। এখন আর হয় না। নানির পাশে বসার আরেকটা মজা হল, নানি মাঝে মাঝেই অর্থ বলেন। সব তখন গল্পের মতো লাগে ওদের। আজ সকালে নানি ডাকাডাকি করেনি কারনটা বুঝল না। ফ্রেশ হয়ে এসে নিজের চুলে চিরুনি করছিলো তখনই ডোরবেলের শব্দ পেল। একটু পরেই রুশের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল। ও খুব এক্সাইটেড বলেই মনে হল লাবন্যর। তাই নিজের রুম থেকে বের হয়ে এল রুশের এক্সাইটমেন্টের কারনটাকে দেখার জন্য। বের হতেই সামনে নানির সাথে দেখা হল। নানি চোখ দিয়ে ইশারা করলেন নেতিবাচক কিছু না বলার জন্য। লাবন্যকে দেখেই রুশ চিৎকার করে ডেকে বলল
“আপু জানো? আজ না আমি আব্বুকে তিনবার বোল্ড আউট করতে পেরেছি। একেবারে স্ট্যাম্প পড়েগেছে বলের ধাক্কায়। আরেকটু হলেতো ভেঙেই ফেলতাম।”
রুশের কথায় খেয়াল করল নতুন স্ট্যাম্প সেটটাকে। এটার জন্য রুশের আবদার ছিলো অনেকদিন ধরেই। ছেলেকে খুশি করতে নিশ্চয়ই এটা কিনে এনেছে ওর আব্বু। রুশের আনন্দ ওর চোখেমুখে ফুটে উঠেছে। হঠাৎ লিখনের কথায় এবার ওর দিকেও নজর গেল।
“তুই যে ছক্কা আর বাউন্ডারি মারলি তাও বল আপুকে। আজকেতো তুই ব্যাটিংও ভালো করেছিস। দেখলি না আশেপাশের ছেলেগুলো তোর দিকে ঘুরে ঘুরে দেখছিলো।”
রুশ একটু লজ্জা পেয়েগেল ওর আব্বুর কথায়। মুখটা কিঞ্চিৎ লাল হয়ে উঠল। মাথা নিচু করে বলল
“আশেপাশের সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছিলো না। সবাই তোমার চিৎকার আর উল্লাস দেখছিলো। আমি বুঝতে পেরেছি সবই ।”
লাবন্য আর ওখানে দাঁড়ালো না। নিজের রুমে ফিরে এল। মনটা খুব আনচান করছিলো ওখানটায় দাঁড়িয়ে। বারবার কিছু একটা মিসিং মিসিং লাগছিলো ওর মনে। আবার না কেঁদে ফেলে সেই ভয়ে পালিয়ে এল নিজের রুমে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো রুশের আনন্দ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
নাস্তার টেবিলে আর ওর আব্বুকে দেখতে পেলো না। বুঝল সে নিচে চলে গেছে। মনে মনে বলল এটাইতো স্বাভাবিক, এটাই মন থেকে মেনে নিতে হবে।এটাকেই এখন নিয়ম বলে অভ্যস্ত হতে হবে।
বিকেলে হিমেল আসল নানির ঔষধ নিয়ে, সাথে রুশের জন্য এক বক্স চকলেট। লাবন্য হিমেলকে দেখে নিজ থেকে কিছু বলল না। চুপচাপ নানির পাশেই বসে রইল। নানির চুলগুলো আনমনে দেখতে লাগল। ওর আম্মু প্রায় এই চুলের গল্প বলতো। এখনও সব পেকে সাদা হয়নি। মায়ের বর্ননার সাথে মিলাতে কষ্ট হচ্ছে না একটুও।
“কিরে চুল নিয়ে কি থিসিস করবি নাকি?” হিমেল একটু খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করল।
“থিসিস করা তোমার কাজ, আমার না।”
“তাহলে এক ধ্যানে কী দেখছিস?”
“কেন আমার দেখা মানা নাকি?”
“চোখ লাগবে, চুল সব পড়ে যাবে। তখন এই ওল্ড লেডিকে দেখতে কেমন লাগবে ভাবতো?”
“তোমার সমস্যা কী? সব কিছুতেই মজা খুঁজো কেন? এটা কোন প্রশ্ন হলো? কি বোঝাতে চাও তুমি? আমার কি কু দৃষ্টি ? ”
“না না জিনিসটা একটু খেয়াল কর, নানুমনির মাথায় কোনো চুল নাই কেমন লাগবে…..”
আর বলতে পারলো নানু ওর কান মলে দিলো জোরে
“ওয়াও ভাইয়া এবার বলো কান মলা খেতে কেমন লাগলো তোমার?” বলে রুশ হিহিহি করে হাসতে লাগল।
“উফফ, দারুন মজারে।”
“মোটেও না, কান জ্বলে অনেক ।”
“একটুও না তুই এখন খেয়ে দেখ কত মজা!”
“নানুমনি তুমি আমাকে সেদিন দিলে তখনতো জ্বলেছিলো, কিন্তু এখন ভাইয়ারটা মজার হলো কীভাবে? ” রুশ একটু রাগ হয়ে জিজ্ঞেস করল।
“ইশশ কী পাগল ছাগলের পাল্লায় যে পড়লাম! এই হিমু তুই একটু বাঁদরামিটা কম করতো! এখন এই পুচ্চিটারে উলায় দিচ্ছিস আমার পিছে। ”
“নানু আমি পিচ্চি না আমি আব্বুকে বোল্ড করতে পারি, সিক্সও মারতে পারি।”
লাবন্য চুপ করে বসে ওদের দুষ্টমি দেখছিলো কিন্তু কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না। মনে হতে লাগল এই সংসারের উপর যে মেঘ জমে ছিল এতদিন ধরে তা একটু একটু করে কাটতে শুরু করেছে বুঝি। হঠাৎ করেই হিমেলের কথায় ধ্যান ফিরল- ও বলে উঠল
“চল তোকে আজ রিকশা ভ্রমণ করিয়ে আনি।বোনাসও পাবি। ফুচকা খাওয়াবো পেটচুক্তি করে।”
“পারমিশন পেয়েছো?”
“নানুমনি মানা করবে না। কি করবা?” বলে নানুর দিকে তাকালো হিমেল।
“উঁহু, আমি নানির কথা বলিনি।”
“তাহলে?”
“একটু সময় আমার সাথে ঘুরে ফিরতে হবে যে নীড়ে, সেখানে তখন জায়গা পাবেতো? ঢুকতে দিবেতো?”
“সেটাতো তোকে ভাবতে হবে না।সে ভাবনাতো সবসময় আমারই ছিল, তাই না?”
“আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক তা আর আমি চাই না। মা বড় অমূল্য রতন। যার নাই সেই শুধু বোঝে।থাকতে যতন কর। তার কথা মেনে চলো।”
“তারমানে কী? আমি বুঝি আম্মুর যত্ন নেই না? কি আবোল তাবোল বলছিস?”
” জানো! আমরা মেয়েরা বড় অসহায় হই। স্বামী বল, সংসার বল, ভালোবাসা বল সবই নিছক মায়ার খেলা মাত্র । এসব খেলা যে সব ফাঁকির খেলা তা বুঝতে পেরেও অনেক নারী তা মুখ বুজে মেনে নিয়ে যুগের পর যুগ এই মায়াজালে নিজেকে আটকে রাখে কারন সে যে ততদিনে মা হয়ে যায়। একজন মা তার সবকিছু বিসর্জন দেয় শুধু মাত্র সন্তানের জন্য। সংসারে শুধু মাত্র ওই একটা অবলম্বনকে কেন্দ্র করেই তার বসবাস। সেই অবলম্বনটা কোন মায়ের জন্য শুধু মাত্র আমার কারনে দূর হয়ে যাক তা আমি চাই না। আমার মা’কে দিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। ভালোবাসা, স্বামী, সংসার এসব শুধু মাত্র একটা ধাঁধা। খালামনিকে তুমি আমার জন্য কখনও কষ্ট দিও না। তার মনে কোনো কষ্ট দিয়ে সুখ পাবে না। যদি কষ্ট দাও তবে তা হবে তোমার জন্য ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। ” কথাটা বলে লাবন্য আর বসল না চুপচাপ উঠে চলে গেল নিজের রুমে।
ওর নানি হিমেলের দিকে তাকাল। আর হিমেলও ওর নানুমনির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল
“এবার বুঝলা ও কেন শুধু আমারই বন্য? ইয়েস, সি ইজ মাই, অনলি মাই বন্য।”
“কথাগুলো বুঝেছিস?”
“ওকে যারা স্বার্থপর বলে, আমার না তাদের জন্য খুব মায়া হয়। ইচ্ছে করে গলা চড়িয়ে চিৎকার করে বলি, ও স্বার্থপর না, ওকে বুঝতে হলে মন লাগবে। ও একেবারেই অন্যরকম। ও শুধু বন্য, সবকিছু অগোছালো, সবকিছু এলোমেলো, কিন্তু তাজা একেবারেই ফ্রেশ, নির্ভেজাল। ”
“হইছে, আর বকবক করতে হবে না। এমন করে বললেই মনে করিস না আমি গলে যাব। আমি কিন্তু অত সহজ না।” বলে হাসতে হাসতে উঠে গেলেন তিনি নাস্তা রেডি করতে।
রাতে আবার লিখন উপরে আসল অনেক বাজার নিয়ে। বুয়া ব্যস্ত হয়ে গেল বাজার গোছগাছ করতে। এরই মধ্যে লিখন নিজের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আরাম করে বুয়াকে ডেকে বলল
“বুয়া একটু যাওতো দোতলায়, গরম গরম পিঠা বানাচ্ছে বাসায়। একটু উপরে নিয়ে আসো। আমরা সবাই মিলে মজা করে খাই।”
কথাটা লাবন্যের কানে যেতেই ওর মেজাজ হঠাৎ করেই গরম হয়ে উঠলো। মনে মনে বলল “আব্বুর আসলে মতলবটা কি? সে আসলে কি চাচ্ছে?” একটু ভেবেই আবার বলে উঠল। “অসম্ভব এসব কখনওই এলাউ করা যাবে না। শুরুতেই থামাতে হবে নয়তো পরে সমস্যা সৃষ্টি হবে।” ভেবেই দৌড়ে বের হল রুম থেকে যাতে বুয়া বের হতে না পারে।
“বুয়াখালা দাঁড়াও দাঁড়াও, তুমি কোথাও যাবা না। তুমি যাও কিচেনে যাও।”
লাবন্যের নানি নিজের রুম থেকে সব শুনছিলেন। বাবা মেয়ের মাঝে কোন কথা বলাটা সমুচিত ভাবলেন না। তাই নিজের রুমেই বসে থাকলেন।
লিখন মেয়ের এমন প্রতিক্রিয়া আশা করেনি। তাই একটু অবাক হয়েই বলল
“লাবু তোর প্রিয় পোয়া পিঠা বানাচ্ছে। গরম গরম খাবি আনুক না, মানা করছিস কেন?”
“আব্বু তোমাকে কিছু কথা একটু ক্লিয়ার করে বলে নেই। এতে মনে হয় আমাদের সবার জন্যই ভালো হবে। নিচ তলায় যারা আছেন তারা তোমার লোক। তোমার আপনজন। তারা আমাদের কেউ না। দয়া করে তুমি কোনদিনও তাদেরকে আমাদের লোক ভাববে না। এক করতেও চাইবে না। তাহলে আমরা তোমাকেও ত্যাগ করতে কষ্ট পাবো না। এখানে যারা থাকি তারা কেউ বড় মনের মানুষ না। এখানে একজন মা থাকেন সে কোনদিনও তার মেয়ের সতিনের হাতের পিঠা মজা করে খেতে পারবেন না। জোর করেও যদি মুখে পুড়ে দাও তিনি তা কখনওই গিলতে পারবেন না। কারন তার মনে হবে সে তার মেয়ের ভালোবাসার সাথে হওয়া প্রতারণাকে গিলছে। সেইম বিষয়টা এক মেয়ের ক্ষেত্রেও তার মায়ের…. ”
“জিনিসটা এভাবে কেন দেখছিস?”
“তোমার ইচ্ছে তুমি যেভাবে খুশি সেভাবে দেখতে পারো। আমি এভাবেই দেখছি, দেখবো ঠিক আমার মতো করে। ”
“আমি…”
“আব্বু আমার কথা শেষ হয়নাই, রুশ আর আমি যেনো কোনোদিনও তোমার ওয়াইফের ছায়াটা না মারাই তার জন্য যা করতে হবে তাই করব। ওই ছায়াটা যখনই দেখব তখনই তোমার প্রতি থাকা আমাদের সব শ্রদ্ধা ভক্তি উবে যাবে। তখন তোমার মুখটার উপর এক বিশ্বাস ঘাতকের, এক প্রতারকের ছবিই শুধু ভাসবে। আমরা আমাদের পিতাকে সেরুপে চাই না। এখন বাকিটা তোমার ইচ্ছা। তুমি কি চাও।”
লিখন আর কোনো কথা না বলে চুপ হয়ে গেল। লাবন্য আবার নিজের রুমে চলে গেল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে শুরু হল হুড়োহুড়ি রেডি হওয়ার জন্য। লাবন্য ব্যাগটা নিয়ে বের হয়ে টেবিলে আসল নাস্তা করতে। রুশ তখন নাস্তা করছিলো। নানি টিফিন গুছিয়ে দিতে গিয়ে বললেন
“রুশ তুই কিন্তু পানি খাস না, এটা কিন্তু খুব খারাপ কথা।এরপর ওয়াটার পটে পানি পেলে তোকে পিঠাবো বলে দিলাম।”
“আগেই বলে দিলা? এখনতো রুশ লাস্ট পিরিয়ডে বোতলের সব পানি ফেলে তারপর তোমার সামনে আসবে।”
“আপু আমি মোটেও এমন না।”
লাবন্য আর কিছু বলতে পারল না ওর মোবাইলটা বেজে উঠল। দেখল ওর আব্বুর নাম্বার, অনেকদিন পর তার কল আসল এই নাম্বারে। কি করবে ভাবতে ভাবতেই রুশ থাবা মেরে মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করল
“হুমম আব্বু, আমরা আসছি। তুমি দাঁড়াও।” বলে কলটা কেটে দিল।
লাবন্য যা বোঝার তা বুঝল তাই কিছু আর বলল না। জলদি খাওয়া শেষ করে তিনজন বের হয়ে এল।
রুশ আর লাবন্য লাফিয়ে লাফিয়ে আগে নামতে লাগল। নিচ তলায় আসতেই শুনতে পেল একরাম সাহেবের কন্ঠস্বর, তিনি ওর আব্বুর সাথে কথা বলছেন
“হ্যালো লিখন ভাই, কেমন আছেন?” বলে হেহেহে করে হাসলেন এর পর আবার বললেন “আরে ভাই এখনতো আপনি সুপার ভালো থাকবেন তাতো জানিই। বুঝলেন ভাই ভাগ্যবানের বৌ মরে। কথাটা কিন্তু এমনি এমনি হয় নাই। তা নতুন সংসার নিয়ে নাকি এখানেই চলে এলেন?”
একরাম সাহেবের কথাটা শুনে লিখন কিছুটা লজ্জিত হল।কি বলবে বুঝতে পারছিলো না কারন পিছনেই লাবন্য রুশসহ ওর শাশুড়িও এদিকে এগিয়ে আসছেন। ইতস্ততবোধ করছে দেখে মনে হল একরাম সাহেব আরও মজা পাচ্ছিলেন।একেবারে সব দাঁত বের করে হাসির জোর যেনো আরও বাড়িয়ে দিলেন।
“জি আংকেল, আব্বু চলে আসছেন একেবারে আপনার ডোর টু ডোর প্রতিবেশী হয়ে শুধু মাত্র আপনার মেয়েটার খোঁজ খবর রাখতে। সামাজিক একটা দায়বদ্ধতা আছে না? আপনি তার অনুপস্থিতিতে তার মেয়ের খোঁজ খবর রাখতে চেয়েছিলেন, এটা শুনে আর দূরে থাকতে পারলেন না। ছুটে আসলেন প্রতিদান দিতে। এখন থেকে আব্বু আপনার মেয়েরও সব ধরনের খোঁজ খবর রাখবেন। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। ওই যে বলে না একেবারে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারেন।” কথাটা বলে লাবন্য হিহিহি করে হেসে উঠল।
লিখন এমন এক পরিস্থিতিতে পড়বে তা বুঝতে পারে নাই। দিকপাশ না ভেবেই রুশের ব্যাগটা নিয়ে উবারে উঠে গেল। নানি খুব কষ্টে হাসি চেপে রেখে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। লাবন্য আর রুশ “বাই বাই আংকেল” বলতে বলতে ক্যাবে উঠে গেল।
কিছুটা অপ্রত্যাশিত ধাক্কা খেয়ে একরাম সাহেব মুর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল একা।
লাবন্য বারবার খেয়াল করছে লিখন সামনে বসে লুকিং গ্লাসে লাবন্যকে দেখছে। কেমন জানি খুব অস্বস্তি লাগছিলো কিন্তু ইচ্ছে করেই নিজ থেকে কিছু বলছিলো না। পাশে বসে ওর নানি আড় চোখে সবই খেয়াল করছিলেন। এবার আস্তে করে লাবন্যের কানের কাছে মুখ নামিয়ে বললেন
“বাপের আপমানটা সহ্য করতে পারলি না, তাই না? তবে জবাবটা ভালোই ছিলো?”
“যেমনটা ভেবে মনে শান্তি পাও তেমনটাই ভাবতে পারো। আসল কথা হলো মনের শান্তি। আমি শুধু ওই ব্যাটার কিছু বকেয়া ছিলো তা শোধ করেছি। কারউ বকেয়া জমা রাখি না মনে। মনটা লোড নিতে পারে না বেশি, তাই হালকা করলাম। ” লাবন্য বেশ মুড নিয়েই উত্তরটা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইল। ওর নানি শুধু একটু মুচকি হাসলেন ওর উত্তর শুনে।
চলবে