#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ,পর্ব ৩৫,৩৬
সায়লা সুলতানা লাকী
৩৫
কিছুক্ষন কাঁদার পর হুট করে কী যেনো হল লাবন্যের? হঠাৎ করেই পাশে রাখা বক্স থেকে শাড়িটা বের করল। আর তখন ফিক করে হেসে ফেলল, শাড়িটার উপর থেকে চোখ সরাতে পারলো না কিছুক্ষণের জন্য । কচুপাতার রঙের জমিন, তার উপর লতাপাতা,ফুল আর পাখির যেনো জড়াজড়ি করা ছাপ, পুরো আঁচল জুড়ে রয়েছে এক পেখমতোলা ময়ুর । মনে পড়ল হিমেলের পুরনো কথাগুলো। একদিন এক সাদা শাড়ি পড়েছিল কলেজের অনুষ্ঠানে, আর তা দেখে ও মুখটা গম্ভীর করে বলেছিলো “উঁহু, মানায় নাই একটুও! বন্যকে বন জঙ্গলেই মানায়। অন্য কিছুতে মনে হয় জোর করে ওকে আটকে রেখেছে কেউ। ”
সেদিন লাবন্য খুব করে বকেছিল হিমেলকে এমন সব বাজে কথা বলার জন্য। ভেবেছিলো হিমেল দুষ্টমি করেই বুঝি বলেছিলো কথাটা । কিন্তু আজ এই শাড়ি দেখে মনে হল ও আসলে ভেতরে ভেতরে তা’ই মিন করে সবসময়। ওর ভাষায় ও সেদিন বলেছিলো —
“তুই বন্য,
তুই অনন্য।
তুই আঁটসাঁট এই ধরনীর বুকে-
পাখা ঝাপটে উড়ে বেড়ানো বাঁধাহীন এক বিহঙ্গ।
যার কাছে এসে সব শৃঙ্খলতার অপশক্তি
মুখ থুবড়ে পড়ে হয়ে উঠে অতি নগন্য।
তুই সেই বন্য, শুধুই বন্য, আমার বন্য ।”
আজ সেসব কথা মনে হতেই ভেতরটা যেনো কেমন করে উঠলো লাবন্যের। অমন করেই সেদিন প্রথম প্রথম প্রকাশ করেছিলো ওর মনে অভিব্যক্তিগুলোকে। সেদিন ওর মনের অনুভূতি গুলো নাড়িয়ে দিয়েছিলো লাবন্যের মনকেও।
আপন মনে বিরবির করে বলল “ওতো এখনও ওর মনের বন্যই ভাবে আমাকে। ভাবনারতো কোনো পরিবর্তন হয়নি দেখছি! তবে আমি কেন একটু একটু করে দূরে কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি? কেন নিজেকে অনবরত ঠকাচ্ছি নিজের কাছেই ?” এর উত্তর খুঁজতে খুঁজতে শাড়িটা খুলে নিজের গায়ের সাথে লাগিয়ে আয়নার কাছে দাঁড়ালো। মুগ্ধতা মিশিয়ে অস্ফুটস্বরে শুধু বলে উঠল
“অসম্ভব সুন্দরতো!”
সাথে সাথেই ইচ্ছে হল শাড়িটাকে তখনই পড়ে দেখার । যেমন ভাবনা তেমন কাজ। শাড়ি হাতে নিয়ে শুরু হল আনুষঙ্গিক ব্লাউজ পেটিকোট মিলানোর পায়তারা । ঠিক মতো মিলছে না দেখে আশাহত হয়ে বিছানায় বসে পড়ল একটা সময়। আর তখনই মনে পড়ল ওর আম্মুর আলমারির কথা। সাথে সাথে শাড়ি নিয়ে দিলো দৌড় মায়ের রুমের দিকে ।
লাবন্যের নানি ওর ছুটাছুটির বিষয়টা একটু একটু আন্দাজ করতে পারলেন তবে নিজের রাগ চোখেমুখে ফুটিয়ে রেখেই স্থির থাকলেন নিজের দমে। লাবন্য আলমারি খুলে ঘন্টা খানেক ঘেঁটেঘুঁটে মিলিয়ে ফেলল সব। জুয়েলারিও রেডি করল। সব কিছু গুছিয়ে আবার নিজের রুমে চলে এল। মাঝ রাস্তায় নানির সাথে চোখাচোখি হল কিন্তু কোন কথাই বলল না দুজন দুজনাকে।
রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভেতরে শুরু হল শাড়ি পড়ার আয়োজন। বেশ কিছু সময় ব্যয় করে সাজালো নিজেকে মনের মতো করে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন ও নিজেকে দেখছিলো ঠিক তখনই ডোরবেলটা বেজে উঠল। লাবন্যের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই এখন। ইদানিং ওর আব্বু যখন তখন তার ছেলের কাছে আসে। ওর ধ্যান এখন শুধু নিজের দিকে। হঠাৎ করেই মনটা আনচান করে উঠল হিমেলের জন্য। ওর দেওয়া শাড়িটা পরল অথচ ওকেই দেখাতে পারলো না। ও নিশ্চয়ই ওর বন্যকে এই রুপে দেখতে পেলে খুশি হয়ে যেত। ওর মনের ভালোবাসাটা মনে হয় কয়েকশো গুন বেড়ে যেত এই ধাক্কায়। কিন্তু কেন যে হিমেলকে এমন করে রাগিয়ে দিলো তখন! আর অমনি সে’ও এত অল্পতেই রেগে গিয়ে আস্ত এক বনের মালিক তার বন্যকে ফেলে বন নিয়ে চলে গেল।এটা কোনো কথা হল? বনের বাহিরে কি বন্য ভালো থাকতে পারে? মনটা যখন এতসব কষ্টে ভারাক্রান্ত ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়ল।
“কে?”
“খোল।”
“তুমি?” বলেই কোনকিছু চিন্তা না করেই দৌড়ে দরজাটা খুলে দিল লাবন্য ।
হিমেল নিজের দু’হাত পেছন করে, রাজ্যজয়ের তৃপ্তি চোখেমুখে মাখিয়ে ভেতরে ঢুকল আর বলল
“হুমম আমি, বেলি ফুলের মালা আনতে গিয়েছিলাম, এগুলো ছাড়া আবার তোর সাজ কমপ্লিট হয় নাকি? সাজ শেষ করেইতো অর্ডার করতি মালা এনে দাও। আমি শালা তখন তোকে দেখব নাকি তোর হুকুম পালন করব। তাই আগেভাগেই নিয়ে এলাম। বন্যতো বন্যই, তারতো সবসময় চাওয়া মাত্রই পাওয়া চাই। নে ধর, এবার আমাকে আমার বন্য দে।”
লাবন্য কোন কথা বলতে পারল না। মনে হল এতদিনে সব হরতালে থাকা আবেগ ভালোবাসার অনুভূতিগুলো দলছুট হয়ে যত্রতত্র দিয়ে ছুটে নিজেকে প্রকাশ করার প্রতিযোগীতায় মেতেছে। নিজেকে আর ধরে রাখার ক্ষমতা রইল না, হিমেলের বুকে নিজের মাথাটা ঠেকিয়ে দিয়েই ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। হিমেল যেন এইটুকুরই অপেক্ষায় ছিল এতদিন। মেঘ ঘন হতে হতে কালো আর ভারী হয়ে উঠেছিল বন্যের মন আকাশে। তখন শুধু একটু সময়ের দরকার ছিল তা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার। এরপরে আবার আগের মতো করে পাওয়া যাবে ওর বন্যের মন আকাশের রঙিন চমক । পাবে হাস্যোজ্জল রোদেলা ঝকঝকে চকচকে এক মন আকাশ যেখানে থাকবে বাঁধহীন ভালোবাসার ঢেউ অবশ্য তাতে দুষ্টমির টুকরো টুকরো কিছু সাদা মেঘের ভেলার উপস্থিতিরও প্রয়োজন আছে বৈকি , এছাড়াতো আবার তাকে মানাবে না। এমন এক ফুরফুরা আকাশের প্রত্যাশায় এখন এই বৃষ্টি ঝরার সময়টাতে পরম ভালোবাসায় আগলে রাখল নিজের বুকে টেনে নিয়ে । দুহাত দিয়ে আজ শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ওর বন্যকে।
“কেন আমার সাথে এমন হল? কেন আমি এমন হলাম? বলতে পারো?” কাঁদতে কাঁদতেই বলল লাবন্য।
” উফফ এটা কোনো প্রশ্ন হল? আর কত কাঁদবি? সাঁজতো নষ্ট হয়ে যাবে। পরে আমি বন্যকে বনে খোঁজতে গিয়ে পেয়ে যাব এক পেত্নী। ”
“আমার জীবনের সবকিছু কবে আবার আগের মতো হবে? কখনও কী আর আগের মতো হতে পারবে?”
“সবইতো সেই আগের মতোই আছে, আগের মতোই চলছে তবে তুই কেন আগের মতো হতে পারবি না, অমন করে চলবি না বলতো? পৃথিবীতে কেউ স্থায়ী না।সবাই চলে যাবে, কেউ আগে কেউ পরে। কেউ যখন চলে যায় তখন তার জায়গায় সাময়িক চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে কিন্তু তারপর পৃথিবী আবার তার আগের ছন্দেই ফিরে আসে। এটাই নিয়ম এভাবেই চলে৷ তুই আমি এর বাহিরে না। অনেক কিছুই আমরা অপছন্দ করি, সহ্য করতে পারি না। কিন্তু এসবকে আবার একেবারে ত্যাগও করতে পারি না। এসব কিছুর মাঝেই আমাদেরকে এডজাস্ট করে চলতে হয়। এই এডজাস্ট করাটাই হলো জীবন।”
“এতই যদি সহজ তবে আমি কেন পারছি না?”
“পারবি, অবশ্যই পারবি।পারতেই হবে। রুশের জন্য পারবি, তোর জন্য পারবি। আমার জন্য পারবি।”
“তোমার জন্য কেন আমি পারতে যাবো? তুমি আমার কে? আমার প্রয়োজনেতো আমি তোমাকে পাইনি। মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে চেয়ে রয়েছি কিন্তু কোথাও তোমাকে পাইনি। আমি কেন তোমার জন্য অযথা পারতে যাবো?”
“যাকে মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিস তাকে বাহিরে খুঁজে পাবি কি করে? আমাকে খুঁজেছিস তুই শুনেইতো হাসি পাচ্ছে।”
“ফাইজলামি করো না। আমার প্রয়োজনে তুমি আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছো!”
“কে কাকে দূরে ঠেলে দিছে সেই হিসাব না হয় মন ভালো হলে পরে করি?”
“আমার মন ভালো করতেই তো জানতে হবে। আমার কাছে সব পুরুষ তোমরা স্বার্থপর, ঠিক রেশমার স্বামীর মতো। যতক্ষণ পাশে আছে ততক্ষণ তার, দূরে গেলেই অন্য কারো হাত ধরে ফেলো সহজেই ।”
“রেশমার স্বামীর এই বিয়েটা জরুরি ছিল তবে তা এখনই না আরও কিছু সময় পর করলে ভালো হত। তখন নয়তো আমরাই তাকে আরেকজনের সাথে হাত মিলিয়ে দিতাম। কিন্তু এই সময়ে তার এই আকস্মিক সিদ্ধান্তটাকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনি আমিও।”
“আম্মুর জায়গায় যদি আব্বু মারা যেতো তবে কি আম্মুও বিয়ে করতো? করতো না আমাদেরকে নিয়ে আব্বুর স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকতো। তাহলে আব্বু কেন পারল না। ”
“মায়েরা অনেক কিছু পারে, তা বাবারা পারে না। খালুজি মারা গেলে এই ফ্ল্যাটটা এমনিতেই তোরা পেয়ে যেতি। তাই তোকে এতবড় পদক্ষেপ নিতে হতো না। গ্রামের সম্পদ সহ ব্যাংক ব্যালেন্স যা খালামনি পেতো তা দিয়ে তোদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে নিশ্চিন্ত একটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু খালুজির একটা সময় পর সঙ্গীর দরকারটা…..
“তোমরা পুরুষরা নিজেদের বোঝটা এভাবে বোঝো কেন?”
“আচ্ছা সরি, তুই এখন বুঝবি না বুঝছি। উল্টো বোঝার দরকার নাই। যখন বোঝার তখন বুঝলেই হবে। এখন এসব বাদ। আজ আমি আমার বন্যকে পেয়েছি অনেকদিন পর। আগে একটু তাকে দেখতে দে।”
“কি লাভ দেখে, আমি মরলেইতো তখন আরেকজনকে দেখতে আকুপাকু করবে।”
“উঁহু, তুই থামবি না বুঝছি। তোর দুশ্চিন্তা দূর করতে না হয় তোর আগে আমিই মরে যাই, কি বলিস? তাতে যুদি তুই একটু নিশ্চিন্তিত হতে পারিস।”
“কিসব কথা বলছো? আমি কখন বললাম তোমাকে আগে মরতে?”
“তাহলে তুই কেন আমার আগে মরার কথা ভাবছিস? আমিওতো তোর আগে মরতে পারি। ”
“না মানে…..”
হিমেল লাবন্যের ঠোঁট চেপে ধরে আস্তে করে বলল
“এসব মানে টানে এখন থাক,
সব যুক্তি তর্ক কিছু সময়ের জন্য তুঙ্গে যাক।
সব দুঃখ কষ্ট হতাশা, নিরাশা আত্মঘাতী আন্দোলন নিঃশেষ হয়ে যাক।
আজ শুধু কিছু স্বপ্ন তার রঙিন পাখনা মেলুক।
কিছু প্রত্যাশা আজ শুধু পূর্নতার মুখ দেখুক।
আজ এই সময়টা শুধু কিছু ভালো লাগায় ডুবুক।
আজ এই তৃষ্ণার্ত ঠোঁট শুধু তার তৃষ্ণা মেটাতে ভালোবাসা চুমুক…. ”
আর শেষ করতে পারলো না হিমেল। নানুমনির ডাক পড়ল
“হিমু, রাত হল অনেক। খেতে বসছি আমি।তুই কি করবি?”
লাবন্য হিহিহি করে হেসে উঠল হিমেলের থেমে যাওয়া দেখে।
“এইতো নানুমনি আসছি।” গলা চড়িয়ে উত্তরটা দিয়েই লাবন্যের দিকে তাকিয়ে আবার বলল
“চল, আজ দুই ঘণ্টা তোকে রিকশায় ঘুরাবো।এরপর পেট চুক্তি ফুচকা খাওয়াবো।”
“ওল্ড লেডি মানবে না। আমার উপর মনে হল এমনিতেই একটু রেগে আছে। দেখলে না নিজেরা খেতে বসছে কিন্তু আমাকে ডাকেনি।”
“আরে মানবে মানবে, আসার সময় ঘুষ দিয়ে আসছি না!”
“কি ঘুষ দিয়েছো?”
“এইতো কয়টা মালা দিলাম খোঁপায় জড়িয়ে। দেখলাম খুব খুশি হয়েছে তাতে।”
“মালা? এগুলা তুমি কার জন্য এনেছো? আমার জন্য আনা জিনিস তুমি আবার ভাগ করেছো কেন? তোমাকে না আমি বারন করেছি যা আমার তা আমার, তা কখনও কাউকে ভাগ দিবে না। আজ তুমি আমার মালায় ভাগ বসিয়েছো কেন?”
“ইন্না-লিল্লাহ, আমি আরও ভাবলাম নানুমনিকে তুই অনেক ভালোবাসিস, তাকে দিলে তুই রাগ করবি না। তাইতো দিলাম।”
“মানে? আমি ভালোবাসি বললেই তুমি তাকে আমার ভালোবাসার ভাগটা দিয়ে দিবে? কি আশ্চর্য তোমার চিন্তা ভাবনা। তোমরা পুরুষরা কীভাবে পারো এসব করতে? সব কিছুর ভাগ সহ্য হয় না বুঝছো?” বলে রাগে গজগজ করতে করতে লাবন্য রুম থেকে বের হয়ে এল।
হিমেল মুগ্ধ চোখে ওর বন্যকে বন্য রুপে বের হতে দেখছিলো হঠাৎ মনে হল “ও মাই গড! এই বন্য না জানি কী করে বসে নানুমনির সাথে!” বলে নিজেও দৌড়ে বের হল।
“ইয়ে মানে নানি শোনো, আসলে হয়েছে কি জানো? তোমার ওই কাঁচা পাকা চুলের এত্তোবড় খোঁপায় ওই কয়টা মালা না একটুও সুন্দর লাগছে না। জানি তুমি নিজে ইয়ং বয়সে অনেক সুন্দর ছিলা যা দেখে নানা কুপোকাত হয়েছিল। কিন্তু এই বয়সে এসে আর তুমি তেমনটা নাই। আর এখনকার ছেলেরা তোমার মতো………. ”
“চুপ একদম চুপ, মালাগুলো নিতে চাচ্ছিস নিয়ে যা। আবোল তাবোল কথা বলে এতো পাকাচ্ছিস কেন বিষয়টা? বেশি কথা বলা যেনো একটা বদাভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ”
“থ্যাংক য়ু নানি।” বলে আর দেরি করল না মালাগুলো খুলে নিয়ে নিজের খোঁপায় জড়িয়ে নিতে নিতে বলল
“আসলে এগুলো আমার জন্যই এনেছিলো, মাঝে তোমাকে দিয়েছিল ঘুষ সরুপ। আমি যতটুকু জানি তাতে তুমি ঘুষ খাও না। যদি জানো যে তোমার হিমু তার বন্যকে নিয়ে এই রাতে রিকশায় দুই ঘণ্টা ঘুরতে যেতে চায় কিন্তু তুমি এই দাবি নাও মানতে পারো তাই তোমাকে ঘুষ খেতে প্রবুদ্ধ করেছিল। ধরে নাও আমি তোমাকে তা থেকে বাঁচিয়ে দিলাম। ছোট হোক আর বড় হোক। টাকা হোক আর মালা হোক।ঘুষতো ঘুষই, তাই না। আবার এখন যদি তুমি আমাদেরকে ঘুরতে যেতে বারন কর। তবে মনে হবে তুমি আসলেই মনে মনে ঘুষটা চেয়েছিলে আমি নিতে দিলাম না বলে এখন রেগে গিয়ে পারমিশনটা দিতে চাচ্ছো না। সেটাও কিন্তু একপ্রকার গুনাহ। মানে তুমি মনে মনে ঘুষটার পক্ষেই ছিলে…….”
“উফফ!হিমু তুই এই বাঁচালটাকে নিয়ে এক্ষনি বের হবি। আমার সামনে থেকে এক্ষনি যাবি।আর ঠিক টাইম মতো এটাকে আবার বাসায় দিয়ে যাবি। জলদি কর। এর বকবকে আমার মাথার পোকা সব কিলবিল কিলবিল করে উঠছে। ওরে আল্লাহ! না জানি একে কীভাবে সবাই হজম করে?”
“নানি নানি শোনো, তোমাকে যে পাপের হাত থেকে বাচিয়ে দিলাম সেই জন্য তুমি চাইলে আমাকে পুরস্কারও দিতে পারো। বলতে পারো আমি দেখতে কতটা সুন্দর লাগছি! অবশ্য তুমি না বলতে চাইলেও আমি বুঝি আমি জানি আমি কতটা…..”
“হিমু তুই এখনও এখানে দাঁড়িয়ে? যাবি নাকি….?”
“উফফ বুঝেছি, ওল্ড লেডির রোষানলে পড়েছি, এখন আর সম্ভব না। এই রুশ দেখ, আঁচলটা দেখ।” বলতে বলতে আঁচলটা মেলে ধরল ওর সামনে।
“ওয়াও! দারুন একটা পিকক।” রুশ খেতে খেতে বলল।
“ইয়েস! পিকক। দারুন, ভীষন দারুন” বলে হিহিহি করে হেসে উঠল লাবন্য।
“আচ্ছা হয়েছে, এখন আয়।” বলে দরজাটা খুলে দাঁড়াল হিমেল।
লাবন্য দরজার দিকে একটু এগিয়ে আবার ফিরে নানির কাছে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে গালের সাথে গাল লাগিয়ে একটু চুমু খেয়ে নানিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে এল। হিমেলও তখন দরজাটা বাহির থেকে টেনে দিয়ে গেল।
তাসলিমা দরজাটা আটকে দিতে দিতে বলল
“ওরে আল্লাহ! বহুদিন পর লাবু খালারে এমন কইরা খুশি হইতে দেখলাম। আল্লাহ পাকের অশেষ দয়া।”
রুশ খেয়াল করল , সামনে বসা ওর নানুর চোখ থেকে তখন টপটপ করে পানি পড়ছে। কিন্তু কেন পড়ছে তা বুঝতে পারল না।
চলবে।
#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ৩৬)
সায়লা সুলতানা লাকী
রিকশার হুড ফেলে দিতেই ঠান্ডা বাতাস শিরশির করে এসে লাগল লাবন্যের গায়ে। ও একটু জড়োসড়ো হয়ে বসলো হিমেলের হাতটাকে জড়িয়ে ধরে । হিমেল ওর দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করল হুডটা আবার তুলে দিবে কি না।সাথে সাথে মাথা ডানে বামে নাড়িয়ে মানা করল । কারউ মুখে কোন কথা নাই, দু’জনই বসে আছে চুপচাপ । একটু পর লাবন্য ওর মাথাটা কাত করে হিমেলের কাঁধে নামিয়ে রাখল আর অমনিই হিমেল বলে উঠল
“এই বন্য, তুই আবার ঘুমিয়ে পড়িস না কিন্তু!”
” উঁহু ঘুমোবো না। এমনি চোখ বুজে আছি। আলো আঁধারের এই কম্বিনেশনে চোখ বুজে থাকতে ভালো লাগছে। সাথে তুমি তোমার কাব্য চালাতে পারো তাহলে আরও ভালো লাগবে। তবে হয়ত তখন ঘুমিয়েও যেতে পারি।”
” মামা একটু দেখে শুনে চালাইয়েন, প্যাসেন্জার কিন্তু পাগল! রিকশায় উঠেই ঘুমানো শুরু করছে, একটু ধাক্কা লাগলেই পড়ে যাবে।পরে কিন্তু আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করবে চিৎকার করে। ”
” মোটেও পড়ব না। আমি তোমাকে শক্ত করে ধরে আছি। আর তুমি কি আমাকে পড়তে দিবে নাকি? শুধু শুধু মামাকে কেন ভয় দেখাচ্ছো? মামা আপনি চালান আপনার মতো করে বিন্দাস ফুরফুরা মেজাজে। আপনে হইলেন এখন রাস্তার রাজা। এর কথা শুনে ভয় পাইয়েন না। আমি মোটেও এমন না। দেখছেন না আমারে? আমারে কি ওই রকম মনে হইছে আপনের?”
রিকশাওয়ালা কোন উত্তর দিলো না। শুধু একটু হেহেহে করে হাসল। তবে একবার পিছন ফিরে তাকিয়ে ছিল তবে তা আর দ্বিতীয়বার করার সাহস পায় নাই। হিমেলের অবাক হওয়া চেহারাটা দেখে সামনে ফিরে গেছে সাথে সাথেই।
“তুই আর মানুষ হলি না, বন্য বন্যই রইল। থাক চোখ বুজেই থাক।ঘুমা।”
“কবিতা চাই….”
“তুই কর।”
“আমি কেন? তুমি কর। আজতো বেশ ভালোই চলছিলো তোমার !”
“সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে, বুঝলি।”
“মানে? তুমিই কিন্তু প্রথম শুরু করেছিলে, ভুলে গেছো?”
“কি করে ভুলি? ”
“পারলে কি ভুলে যেতে চাইতে?”
“তোর কি মনে হয়?”
“তুমিও স্বার্থপর। বড় স্বার্থপর। ”
“স্বার্থপরের সাথে আসলি কেন?”
“এত কথা বলছো কেন? ফুচকা খাওয়াবা বলছো তা খাওয়াও।”
“মামা সামনেই রাইখেন রিকশাটা” বলে হিমেল মোবাইলটার স্ক্রিনে চোখ দিলো।
লাবন্যের চোখ বন্ধ কিন্তু মোবাইলের ভাইব্রেশনটা ঠিকই টের পাচ্ছিলো বারবার। হিমেল কেন যে কল রিসিভ করছে না তা বুঝতেছে না। এর আগে কখনওই খালামনির কল পেলে এমন করে নাই। আগে রিসিভ করেছে। মনে মনে ভাবলো কারনটা কি একবার জিজ্ঞেস করবে? এরপর আবার মনকে ঘুরালো না জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবে না।
এরই মধ্যে রিকশা থামল। হিমেল ওকে নামার ইশারা করে নিজেও নামল।
দুই প্লেট ফুচকার অর্ডার দিয়ে বসতেই লাবন্য চিৎকার করে উঠল
“ও মামা আপনেও আসেন আমাদের সাথে ঝাল টক ফুচকা খাবেন।”
রিকশাওয়ালা এমন প্রস্তাব পাবে তা ভাবতে পারে নাই। তাই কি বলবে তা ভেবে কিছুটা ইতস্তত করতে লাগল। এবার হিমেলও ডাকল
“মামা আসেন, রিকশা সাইডে রাইখ্যাই আসেন।”
“না মামা আপনারা খান, আমি খামু না।”
“কেন মামা এইডা বুঝি আপনের পছন্দ না?”
“না মানে এইডা আমার মাইয়ার বড় পছন্দ। এগুলা আমি তেমন একটা খাই না।”
“তাই নাকি! তো আজকে মেয়ের পছন্দের জিনিসটা আপনেও একটু খাইয়া দেখেন?”
“না মামা, যদি দিতেই চান তয় আমার মাইয়ার লাইগ্যাই দেন ঘরে ফিরা ওরেই দিমুনে।” কথাটা বলে একটা লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে নিজের মাথা চুলকাতে লাগল রিকশাওয়ালা।
লাবন্য চুপ হয়ে গেল। অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল।
“কি দেখছিস? এমনটাই হয়। ওরা খুব কঠিন, বাবা চরিত্রগুলো এমনই হয়। মেয়েকে খুশি করতে একটু সুযোগও হাতছাড়া করল না। কি নিখাঁদ ভালোবাসা মেয়ের জন্য।”
“আমার আব্বুটা কেন এমন হল না? ”
“খালুজি বাবা হিসাবে একদমই পারফেক্ট। এতে কোন সন্দেহ নাই। তবে তিনি প্রেমিক হিসেবে আমার কাছে পুরাই ফেল। খালামনিকে ভালোবাসছে কিন্তু নিজের ভালোবাসাকে আগলে রাখতে পারেন নাই। নিজের পরিবারের কাছে বারবার তার ভালোবাসাকে নির্যাতিত হতে দেখেছে কিন্তু নিজে চুপ থেকেছে।শুধু এই একটা দিক আমি তার একটুও পছন্দ করতে পারি নাই। এছাড়া বাবা হিসাবে সেও ভালো।”
“তুমি কীভাবে এসব বলো? তার সবটা অপকর্ম তুমি জানো। মা মরা দুইটা বাচ্চাকে অনিশ্চয়তার সাগরে ডুবিয়ে নিজের নতুন সংসার পাতল……”
“তোকে পেপারটা সাইন করে দিয়ে এসে আমাকে কল দিয়েছিলো সেদিন । যে মানুষটাকে দেখলে মনে হত শক্ত এক পারসোনালিটির মানুষ তিনি , হুট করেই দেখলাম সেই মানুষটা হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো হিমেল আমার মেয়েটা আমি থাকতেই নিজেকে নিরাপত্তাহীন ভাবছে। ওতো ভেতরে ভেতরে অনিশ্চয়তার সাগরে ডুবে যাচ্ছে। এখন আমি কি করব? ওকে তুমি বলো শুধু ফ্ল্যাট কেন ওকে আমি আমার সব দিয়ে দিব। ওদের বাবা থাকতে ওরা কখনোই অনিরাপদ না। আমার মেয়েটার বড় কষ্ট হচ্ছে, আমি দেখছি, বুঝছি কিন্তু বুকে টেনে নিয়ে বলতে পারছি না মা তোর কোন চিন্তা নাই আমি আছি। আমি আছি। তোর বাপ আছে।”
“কেন পারেনি? কে তাকে বাঁধা দিয়েছিলো? সত্যিকারে তেমনটা মনে করলে কারউ সাধ্য ছিলো না তাকে সেদিন আটকে রাখতে পারতো তার মেয়েকে বুকে নিয়ে একটু আশ্রয় দিতে।”
“তোর চোখেমুখে তখন ছিলো শুধু আতংক আর ভয়ংকর হতাশার আগুন। সে আগুনে তুই তখন সব পুড়িয়ে দিতে প্রস্তুত ছিলি। খালুজি তেমনটাই বলেছিলেন। সেদিন এক অসহায় বাপ কে দেখেছিলাম যে তার সন্তানদের জন্য পাগল হয়ে ছুটছিলেন শুধু মাত্র তাদের ভালোর জন্য। তুই শুধু জানিস এই ফ্ল্যাটটা তোদের আসলে তার পরের দিন সেই বাপ হিরো থেকে পুরোটাই জিরো হয়ে গিয়েছিলেন শুধু মাত্র সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে।”
“মানে?”
“মানে পরেরদিন ওই এডভোকেটের সাথে কথা বলে তোদের দুইজনের নামে খালুজির যেখানে যত সম্পদ ছিল সব তোদের নামে ট্রান্সফার করে দিয়েছিলেন। খালুজির শুধু অফিসটাই ছিলো নিজের। বারবার শুধু বলতেছিলেন হিমেলরে এরচেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে। আমি বেঁচে থাকতেও আমার মেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, কি করলাম জীবনে তবে ওদের জন্য?”
“আমি যে তখন কীসের মধ্যে ছিলাম তা শুধু আমিই বুঝি অন্য কেউ তা বুঝবে না। চারপাশে এমন একজন মানুষ পাইনাই যে আমাদের জন্য কোন পজেটিভ কথা বলেছে। সবার মুখে তখন এক কথাই। “মা মরলে বাপ হয় তালোই”। আব্বুরও হাবভাব ছিলো সেরকমই। দাদি ফুপুদের তাবেদারিতে চলতে শুরু করল সে, যখন কি না দরকার ছিলো আমাদের সাপোর্ট হয়ে থাকা।
আম্মু মরে সারে নাই এরই মধ্যে দেখলাম আব্বু বিনা নোটিশে হুট করে বিয়ে করে আসল বাসায়। এমনটাই আভাস দিচ্ছিলো চারপাশের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। মিলে গেল তাদের ভবিষ্যদ্বানী। তাদের কথা মতে এমনটাই হয়। তারা এমনসব গল্প করেছিল যেখানে মুলকথা ছিল এমন যে আব্বুর বিয়ের পর আমার আর রুশের ঠিকানা হবে রাস্তায়। নানিবাড়ির সাথে তেমন কোন যোগাযোগ নাই আমাদের, দাদি ফুপুরা হল বড় শত্রু।কেউ নাই আশ্রয় দেওয়ার। তুমিও নাই। আমি তখন যা মাথায় আসছে তাই করেছি। রুশ আর আমি রাস্তায় ঘুরছি একেক জনের দ্বারে দ্বারে দয়া প্রার্থনা করছি এমন জীবন ভাবতেও ভয় পাচ্ছিলাম।”
” আমি তোর আর তোর বাবার মাঝখানে আসতে চাইনি। সবসময় চেয়েছি তোর পাশে থাকতে।বাদ দে যা হবার তা হয়ে গেছে। এখন আবার সব কিছু আগের মতো হয়ে ওঠুক তেমনটাই কাম্য।”
“কীভাবে সম্ভব, আম্মু কী আর ফিরবে আমাদের জীবনে?”
“যে যায় সেতো না ফেরার জন্যই যায়। কিন্তু যা আছে তা গুছিয়ে নিয়ে চলটাই জীবন। তোর যে এমন একজন মাতামহ আছেন তা কি বুঝতে পেরেছিলি? ধরে নে আল্লাহ সেই সুবাদে তোকে এই পর্ব দান করেছেন।”
“মানে? মাতামহ কি?”
“হা হা হা নানুমনি”
” ওওও, এই তোমার মোবাইলটা কখন থেকে বেজে চলছে রিসিভ করছো না কেন?”
” নিজের ভালোবাসাকে সারাজীবন বুকের মধ্যে আগলে রাখতে ।”
“মানে?”
“সবকিছুর এত মানে বুঝতে চাস কেন?”
“খালামনিকে কষ্ট দিও না। মা বড় অমূল্য সম্পদ। যার নাই শুধু সেই বোঝে।”
“আমি কোনোদিনও আম্মুকে কষ্ট দিতে চাই না। বড়পু যা করল এর পর ইচ্ছে করলেই আমি অন্যভাবে হলেও মনের জিদ পূরণ করতে হলেও আমেরিকায় যেতে পারতাম গিয়ে তাদেরকে দেখাতে পারতাম তারা ছাড়াও মানুষ আমেরিকায় যায়। ওখানে যেতে কারও ননদ বিয়ে করতে হয় না। কিন্তু আমি আম্মুর জন্যই যাইনি। কিন্তু তাই বলে আম্মুর যেকোন আবদার মেনে নিব তাও তো ঠিক না। আম্মুকেও আমার ভালোবাসার কদর করতে হবে। বাদ দে এসব কথা। ভাললাগছে না এসব নিয়ে কথা বলতে।”
“তোমার চাকরি করাটা আমার পছন্দ হয় নাই। তুমি আরও পড়তে চেয়েছিলে!”
“এই মুহুর্তে চাকরিটার বড় দরকার ছিলো।”
“আর তোমার স্বপ্ন? ”
“এখনতো শুধু একটাই স্বপ্ন দেখি, প্রতিসকালে তোর হাতের এককাপ চা আমার সামনে, ধোঁয়া উড়ছে আর তুই…… । ”
“মানে? তুমি কিন্তু সবসময় আনফেয়ার স্বপ্ন দেখো? আগে দেখতা আমাকে রেখে তুমি তোমার বই নিয়ে আমেরিকা চলে যাচ্ছো। এখন দেখছো তুমি আরাম করছো আর আমি চা বানিয়ে বানিয়ে জীবন শেষ করছি।”
“যাহ তোর চা আর লাগবে না আমার। চা ছাড়াই বাসা থেকে বের হব। এত মেজাজ দেখতে পারব না এক কাপ চায়ের জন্য। ”
“হুমম সবই বুঝি এই বাহানায় যদি কোন কলিগের সাথে বাহিরে বসে বৌয়ের বদনাম ভিজিয়ে ভিজিয়ে এককাপ গরম চায়ে চুমুক দেওয়া যায়। তাই না?”
“হুমম তাইতো! ভাববি যখন তখন আরও ভাব যদি কলিগটা হয় কোন মায়াবতী রমনী তবেতো বেশ জমবে। একটু পর পর বলবে –আহা! হিমেল কেন সহ্য করছো এই রাক্ষসীর অত্যাচার যে কি না তোমাকে এক কাপ চা এই সকালে করে দিতে পারে না।”
“কি আমি রাক্ষসী? এমন কথা যে বলবে তুমি তার সাথে বসে চা খাবে? তবে আর আজ এখানে এলাম কেন? এই শাড়ি দিলা কেন? আজকে তোমার……”
“আস্তে আস্তে! বাকি ঝগড়াটুকু আগামীর জন্য অবশিষ্ট রাখ। সব আজই শেষ করলে পরে কম পড়বেতো।”
হিমেলের কথা শুনে এবার লাবন্য হোহোহো করে হেসে উঠল। একটু পর ওর সাথে হিমেলও হাসতে শুরু করল।
“হয়েছে এবার চলো উঠি। আমাকে বাসায় দিয়ে তোমাকেতো আবার ফিরতে হবে। খালামনি দিবেতো বাসায় ঢুকতে? আমাদের বাসায় কিন্তু থাকতে পারবে না, তা আগেই বলে রাখছি।”
“চল পালিয়ে যাই। রোজ রোজ তোর স্বপ্নগুলো ঘুমাতে দেয় না। চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সরি বন্য….”
“আবার আরেক রেশমার জীবন! খালামনি তখন আমার মৃত মা’কে শান্তি দিবে ভাবছো? কখনো এমনটা হবে না। পালিয়ে বিয়ে আমি কোনোদিনও করব না। অনন্তকাল তোমার জন্য অপেক্ষা করতে বলো, আমি তাও পারব।”
“বিশ্বাস রাখ সব তোর চাওয়া মতোই হবে। তবে চা কিন্তু তোকেই বানিয়ে দিতে হবে বলে রাখলাম।”
লাবন্য আর উত্তর দিলো না শুধু একটু হাসল।
রিকশা এগিয়ে যেতে লাগল চেনা পথ ধরে। চারপাশ স্তব্ধ রাস্তায় লোকসংখ্যা কম। হিমেল টুকটাক কথা বলছে রিকশাওয়ালার সাথে কিন্তু লাবন্যের আজ সেদিকে কোন খেয়াল নাই।ওর মন আর মনন জুড়ে তখন চলতে শুরু করেছে হিমেলের দেখা স্বপ্নে গুলোর মহড়া। রঙিন রঙিন স্বপ্নতে ডুবতে থাকল একটু একটু করে লাবন্য ।
চলবে