#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ,পর্ব ৩৭,৩৮
সায়লা সুলতানা লাকী
৩৭
রুশের পরীক্ষা সামনে তাই ওকে নিয়ে এখন ওর আব্বু আর ছুটির দিনগুলোতে সকালে খেলতে যায় না। ইদানিং পড়াশোনার জন্যও খুব চাপাচাপি করছে। কোচিংতো আগে একটা ছিলোই এখন আরেকজন হাউজ টিউটর নিয়োগ দিয়েছে ওর পড়াশোনার জন্য । এতসব প্রেসারের কারনেই হয়ত রুশের মেজাজ একটু খিটখিটে হয়ে গেছে ইদানিং । মাঝে মধ্যেই ওর আচরনে তা একটু একটু উপলব্দি করতে পাচ্ছেন ওর নানু।
আজ দুপুরে খেতে বসে প্লেটে মাছ দেখে রেগে গেলো রুশ ভয়ংকর ভাবে। খালাবুয়াকে ডেকে এনে ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠল
“খালাবুয়া তুমি সবসময় এসবই কেন রান্না কর? তুমি জানো না আমি মাছ খেতে পছন্দ করি না? মুরগী রাঁধতে পারো না? আমাকে সবসময় মুরগীই দিবা বুঝসো। এগুলা দিলে আমি খাবো না।” কথাটা বলেই ও উঠে গেল। ওর নানু পাশেই বসে ছিলেন কিন্তু কিছুই বললেন না। চুপচাপ নিজের খাওয়ায় মন দিলেন। বুয়া কিছুটা অবাক হল ওর এমন আচরনে। এর আগে কখনওই এমনটা করেনি।
নানি নিজে খেয়ে বুয়াকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। রুশকে একবার ডাকলেনও না বা দ্বিতীয়বার কোন রিকোয়েস্টও করলেন না। ভাবটা এমন যে তিনি এসব বিষয়কে মোটেও গায়ে মাখছেন না।
বুয়া একবার চেয়েছিল একটা ডিম ভেজে দিতে একটু সেধে ভাত খাওয়াতে কিন্তু নানি তা করতে বাঁধা দিলেন ।
বিকেলে লাবন্য বাসায় এসে টেবিলে রাখা খাবার খেয়ে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সন্ধ্যায় রুম থেকে বের হয়ে দেখল রুশের টিচার আসছে পড়াতে, তাই আর লাবন্য ওর রুমে ঢুকল না। সোজা নানির সাথে কথা বলতে তার রুমের দরজার কাছে গিয়ে থমকে গেল। নানি সম্ভবত বড় খালামনির সাথে ভিডিও কলে কথা বলছেন। কন্ঠ শুনে মনে হচ্ছে তার মেজাজ খুব গরম। একটু সামনে যেতেই শুনল নানি বলছে
“তোর ছেলে কি করবে তা কি আমি ঠিক করব?”
“আম্মা আপনেতো একটু বুঝাইয়া বলতে পারেন।”
“না আমি পারি না।আমি অন্যের ছেলেকে কোন শাসন করতে পারি না। তোর ছেলেকে কিছু বলতে হলে তোকেই বলতে হবে। এসব বাড়তি ঝামেলা আমি ঘাড়ে নিতে পারব না।”
“আম্মা ও আপনার কথা শুনে, আমার কোনো কথা শুনে না। আমার কথা এখন ওর কাছে বিষের মতো লাগে। আমি ডানে বললে ও এখন বায়ে হাঁটে। ”
“তোর এত বাধ্যগত ছেলে হঠাৎ এমন হলো কেনরে রেহানা ? তুই না কত সুন্দর করে ছেলেমেয়ে পালতে পারিস! ভুলতো শুধু রেশমার মায়েরা করে।তাই না? তাইতো বলতি সবসময়।”
“আম্মা এসব ওই লাবন্যের যাদুটোনা। ওর রংঢংএই হিমেলের মাথাটা নষ্ট হইছে। এত এত ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাব আনতেছি, ছেলে পছন্দই করতেছে না। ওর এক কথা জীবনে বিয়ে করলে ওই মেয়েরেই করবে,বলেনতো কি সাংঘাতিক কথা!”
“হুমম বড়ই সাংঘাতিক! এখন তুই কি করতে চাস?”
“কি করতে চাই মানে? ওই বেয়াদব মেয়েকে আমি কোনোদিনই আমার ছেলের বৌ করব না। দেখলেন না হুমার সাথে কি ব্যবহারটা করল?”
“ও হুমার সাথে কোন ভুলই করে নাই। ভুল যা করার তা হুমাই করেছিলো।”
“আম্মা আপনে ওই মেয়ের কাছে থেকে থেকে পুরাই অন্ধ হয়ে গেছেন। আপনে ওর শয়তানি রুপটা দেখতে পাচ্ছেন না।”
“তাহলে আর শুধু শুধু আমাকে কল দিচ্ছিস কেন? একজন অন্ধ কি করে তোর সমস্যা সমাধান করবে।”
“বুঝছি আম্মা আপনে আমার কোন কাজই করবেন না। আচ্ছা রাখি।”
“হ্যা রাখ।ভালো থাকিস।”
লাবন্য দূরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনল আর মনে মনে হাসল নানির উত্তরগুলো শুনে। একটু সময় নিয়ে ভাবল চলে যাবে কি না, পরে আবার ঢুকে পড়ল নানির রুমে ।
“তুই? পড়তে বসিস নাই?”
“না, তুমি চা খেয়েছো? টেবিলে দেখলাম না তোমাকে তাই….”
“হুমম আমি আসরের পরপরই চা খেয়েছি…..”
“রুশও!”
“উঁহু, ওকে খেতে ডাকিনি।”
“ওমা, তাই নাকি, কেন? দুপুরে কি একটু বেশই ঘুমিয়েছিলো নাকি? এখনতো টিচার চলে আসছে দেখলাম।”
“হুমম, এখন পড়ছে পড়তে দে, ক্ষুধাটা ভালোমতো লাগুক তারপর দেখি কি করে?”
“মানে?”
“মানে হইল রুশ বাবা আইজকা দুফুরে কিছু খায় নাই। অনেক মেজাজ দেহাইছে আমার লগে। মাছ রানছি হের লেইগ্যা।” রুটির বেলুন হাতে তাসলিমা এসে দাঁড়ালো দরজায়।
“কি বলছো তুমি? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না? রুশ মেজাজ দেখাইছে তোমার সাথে? এত্তো বড় সাহস ওর?”
“তাসলিমা তুই যা রুটি রেখে আগে লাবুকে চা দে।”
“নানি তুমি কিছু বলো নাই?”
“আস্তে আস্তে, এতটা হাইপার হলে চলবে কীভাবে? সব কিছুর রিয়েক্ট সাথে সাথে করতে হয় না। ওর এখন বয়ঃসন্ধিকাল। এই সময়তে খুব সাবধানে চলতে হয়। এমন হুটহাট চিৎকার চেচামেচি করলে ফলাফল ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি হয়।”
“তুমি বুঝছো, ও কতটা বেয়াদব হইছে, এসবই ও ওর আব্বুর লাই পেয়ে করেছে। তাকে কি এসব জানিয়েছো? কি বলে সে এসব শুনে?”
“চুপ, একদম চুপ। তুই হলি সবচেয়ে বড় বেয়াদব। ফাজিল মেয়ে একটা নিজের বাপকে সম্মান দিতে জানে না। তুই কি রুশকে আদব কায়দা শিখাবি? সবকিছুতেই বাপকে প্রতিপক্ষ বানানোর একটা বদ অভ্যাস তৈরি হইছে তোর মধ্যে ।”
“সরি।”
“কিসের সরি, ফাজিল মেয়ে একটা, বাপ কখনও কারো প্রতিপক্ষ হয়?”
“বললামতো সরি।”
“এগুলা আর করবি না।”
“ঠিক আছে করব না।”
“রুশকে খাবার নিয়ে কোন কথা বলবি না। ও যা করছে তা শুধু আমিই দেখব। সাবধান যদি ভাইকে কোনো দয়া দেখাতে যাস..”
“মাত্থা খারাপ, আমার কোন দয়া নাই। তুমি যেভাবে বলবা সেভাবেই হবে। এখন একটু ঠান্ডা হও। তোমার বিপি হাই হয়ে যাবে। তোমার হিমুকে একটু ডাকবো নাকি বাসায়? ও মালা নিয়ে আসলে হয়তো তুমি…”
“লাবু তুই যা রুমে যা।তাসলিমা চা দিয়ে আসবে রুমে।”
“আচ্ছা যাচ্ছি।” বলে উঠে গেল। লাবন্য খেয়াল করল ওর নানি বেশ চিন্তিত রুশের বিষয়টা নিয়ে সাথে খালামনিও অনেক চাপে রেখেছেন। নিজের রুমে এসে ভাবল বিষয়টা নিয়ে হিমেলের সাথে কথা বলবে কি না। এরপর আর কল দিলো না। মনে মনে বলল খালামনির কোন বিষয় নিয়ে সরাসরি হিমেলের সাথে কথা বলাটা ওর ঠিক হবে না। হিমেল যেমন ওর আর ওর আব্বুর মাঝে আসতে চায়নি ঠিক তেমনি ওরও উচিৎ হবে না ওদের মাঝে যাওয়া। কিন্তু রুশের বিষয়টা ওর মনটাকে একটু একটু অস্থির করে তুলতে লাগল।
রাতে ডিনারের সময় লিখনকে টেবিলে দেখে লাবন্য অবাক হলো না। মাঝে মধ্যেই খেতে বসে। আজও তেমনটা ভেবে লাবন্য চুপচাপ নিজের চেয়ার টেনে বসল। রুশকে এখনও মাছ দিয়েই ভাতের প্লেটটা এগিয়ে দিল আর তাতেই ও দুপুরের মতো রেগে উঠলো ওর আব্বুর সামনেই। লিখন ভেবেছিলো হয়তো ছেলে বাপকে দেখে এতটা সাহস করবে না। কিন্তু ওর ধারনা ভুল প্রমান করে রুশ কর্কশ গলায় বুয়াখালাকে ডাকতে শুরু করল তখন লিখন থামিয়ে দিল ছেলেকে
“রুশ, তোর সমস্যা কি? কী হয়েছে? বুয়াকে ডাকছিস কেন?”
“আব্বু শোনো আমি খালাকে দুপুরে বলেছি আমি মাছ খাবো না। তারপরও খালা মাছই দিয়েছে আমাকে। এই দেখো, দেখো। এগুলা কি ভালো লাগে?”
“হুমম, বুঝলাম, তা তুই মাছ খাবি না কেন?”
“আব্বু প্লিজ, আমার মাছ খেতে ইচ্ছে করে না। আমার ভালো লাগে না।”
“তোর আম্মু থাকতেতো খেতি।”
“আম্মু বেছে দিতো।”
“তুই এখন বড় হয়েছিস, এখনতো নিজেরটা নিজেকেই করতে হবে এটাতো বোঝতে হবে?”
“প্লিজ আব্বু আমি মাছ খাবো না বলছি আমাকে এ নিয়ে কোনো ফোর্স করো না।”
“ও কে, তুই মাছ খাবি না ভালো কথা, টেবিলে সবজি আছে ডাল আছে তা দিয়ে খেয়ে নে।”
“কেন বাসায় মুরগী নাই? খালাকে যে মুরগী রাঁধতে বললাম খালা বানায় নাই কেন ?”
“তুই বুয়াকে বলছিস, বুয়াতো তোর কথা শুনবে না। তুই কি বুয়াকে অর্ডার করতে পারিস? তুই কি সেরকম কেউ? বুয়া আছেন তোর ভালোমন্দ দেখার জন্য, টুকটাক সাহায্য করার জন্য। তোর হুকুম শোনার জন্যতো না। তোর খালা কি তোর ছোট যে তুই ইচ্ছে হলেই অর্ডার দিবি তাকে?”
“আব্বু..”
“আমিতো অবাক হলাম তুই কীভাবে তাকে ডাকলি তা শুনে৷ তোর আম্মু শুনলেতো…।তুই হঠাৎ করেই এমন হয়ে গেলি, খালা এত আদর করে তোকে আর তুই তার সাথে চিৎকার করলি, তার মনে কষ্ট দিলি?”
“সরি আব্বু।”
“সরি তুই আমাকে বলছিস কেন? কষ্ট আমিও কিছু পেয়েছি কিন্তু মেইনলি তুইতো কষ্টটা দিয়েছিস তোর খালাকে।তাই না?”
“ভাই থাক আর বইক্কেন না, আমি কষ্ট পাই নাই। আমি একটা ডিম ভাইজ্যা দেই, রুশ বাবা ভাত খাইয়া লও। দুফুরেরও খাও নাই।”
“সে কি কথা? তুই দুপুরে খাস নাই, কেন? ”
“খেতে ইচ্ছে করে নাই।”
“তুই টেবিল থেকে খাবার রেখে উঠে গেছিস? কি সাংঘাতিক! রেশমা থাকলেতো আজ গোটা তিনচার পিঠে পড়তোরে বাপ। কি ভয়ংকর কাজ করছোস তুই। আমারতো শুনেই…. ”
“সরি আব্বু আমার ভুল হয়েগেছে আর কখনও করব না।” বলে রুশ কেঁদে ফেলল।
লাবন্যের নানি খাওয়া শেষ করে উঠে গেলেন নিজের রুমে। লাবন্য কি করবে তাই ভাবছে। একবার ভাবলো উঠে গিয়ে ভাইকে আদর করবে। আবার ভাবলো তাতে হয়ত সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাই নিজেও খাবার শেষ করে উঠে নিজের রুমে চলে গেল।
লিখন চুপচাপ ছেলের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
“আব্বুরে তোদের মা তোদের পাশে নাই। কিন্তু তোদের সুভাগ্য যে তার প্রতিনিধি একজন আল্লাহ তোদের কাছে পাঠিয়েছেন। যে সামনে থেকে তোদের দেখাশোনা করছেন তোদের ভালোমন্দ বুঝছেন এটাকেই এখন মনে হয় আল্লাহর রহমত। দুপুরে যখন মাছটা খেতে ইচ্ছে করল না তখন পাশে নানুকেই বলতে পারতি মাছটা বেছে দিতে। কি পারতি না? তার সামনে এভাবে খাবার রেখে উঠে গেলি কিন্তু তিনি তোকে কিছুই বললেন না কেন তাইতো বুঝতে পারলাম না।”
“নানুমনি আমাকে অনেক ভালেবাসেন, অনেক আদর করেন।তিনি কোনোদিনও আমাকে আম্মুর মতো মারবেন না।”
“এতটা আদর যিনি করেন তার সামনে তোর এমন আচরন করাটা কি ঠিক হল?”
“না আব্বু আমার ভুল হয়েছে। ”
“এসব আমাকে না বলে আমি যাওয়ার পর নানুমনিকে বলিস। তোরা বেয়াদবি করবি তা কিন্তু তিনি সহ্য করতে পারবেন না। তিনি কিন্তু তোদের মাঝে তার মেয়েকে খুঁজে ফিরেন সব সময়। তোদের খারাপ কিছু তাকে বড় কষ্ট দেয়।” কথাটা শেষ করে লিখন আর বসল না উঠে চলে গেল নিচে। রুশ চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইল টেবিলে। এরপর উঠে নানুর রুমে ঢুকল।
“আসসালামু আলাইকুম নানু।”
“ওয়ালাইকুম আস সালাম। ”
“এইতো তোমার রাগ এখন নাই হয়ে গেছে, ঠিক বলছি না নানু?”
“কিসের রাগ?”
“ওইযে দুপুরে আমি একটা মিসটেক করে ফেলছিলাম। হুজুর বলেছেন সালাম বিনিময় হলে দুজনের মনে শান্তি বর্ষিত করেন আল্লাহ। তখন ওখানে কোনো রাগ থাকে না। তার মানে এখন তোমার মনে শুধু শান্তি আর শান্তি।”
“আমিতো রাগ করিনি।”
“তাহলে আসো আমাকে মাছ বেছে দাও, আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে দুপুরে খাইনি। এখন না খেলে মরে যাব।” বলে নানুর হাত ধরে টানতে লাগল।
ওর নানু এসে টেবিলে বসে মাছ বেছে বেছে নিজের হাতে ভাত মাখিয়ে খাওয়ায় দিলেন রুশকে। কেন জানি তার চোখ বারবার ভিজে আসতে চাইছে কিন্তু তিনি তা ভেঁজাতে চাচ্ছেন না মনপ্রাণ দিয়ে যুদ্ধ করছেন।
“নানুমনি তুমি কি জানো তুমি আম্মুর চেয়ে দুইগুন ভালো আর একগুন কম ভালো।”
“কি রকম?”
“দুপুরে আমি যা করেছি এমন যদি আম্মুর সামনে করতাম তবে আম্মু প্রথমেই দুইটা চড় দিতো, তারপর আব্বুকে বিচার দিতো। চিৎকার চেচামেচি করে আমাকে ইচ্ছেমতো বকা দিতো।
শাস্তিস্বরূপ দুইদিন কথা না বলার হুমকি দিত। আম্মু পিটায়ে হলেও দুপুরে ওই মাছ দিয়েই খাওয়াতো। কিন্তু তুমি তা করোনি। তাই তুমি আম্মুর চেয়ে ভালো।”
“আর কম ভালো কেন?”
“আম্মু আর যাই করতো আমাকে না খেয়ে ঘুমাতে দিতো না আর রাতে ঠিকই মুরগী দিতো।”
“তাই?”
“হুমম।”
“নানাভাই শোনো পৃথিবীতে মায়ের মতো আর কেউ হয় না। কখনওই কাউকে নিজের মায়ের সাথে তুলনা করো না। এতে নিজেও কষ্ট পাবে আর তোমার মা’ও কষ্ট পাবে। মায়ের তুলনা শুধু মা’ই হয়। আল্লাহ মা’কে শুধু মা করেই বানায়।তার আর অন্য কোন পরিচয় হয় না।”
রুশের খাবার শেষ হলে পরে রুশেকে ওর রুমে ঘুমাতে যেতে বলে তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন। দুপুর থেকে মনটা কেমন ভার হয়ে ছিল, এখন অনেকটা হালকা লাগছে। কিন্তু লিখনকে বেশ চিন্তিত বলে মনে হল। কিন্তু কেন তা আর জানতে ইচ্ছে করল না তার। তাই মোবাইলটা সাইলেন্ট করে শুয়ে পড়লেন।
সকালে বেশ ছুটাছুটি শুরু হল সবার, লিখন কল দিয়ে জানিয়েছে যে আজ ও অফিসে লেটে যাবে। তাই ওরা তিনজনই জলদি জলদি রেডি হয়ে বের হয়ে গেল। সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে দোতলায় বিরাট ঝগড়াঝাটির আওয়াজ শুনতে পেলো। লাবন্য একবার আড়চোখে ওর নানির দিকে তাকাল কিন্তু তিনি বেশ স্বাভাবিকভাবে হেঁটে নেমে গেলেন, আশেপাশে তাকালেন না। রুশ নীচতলায় নেমে একবার লাবন্যকে বলল
“আপু শুনছো দাদি কেমন চিৎকার করছে।”
লাবন্য ওর দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসল আর আস্তে করে বলল
“সবতো আর রেশমা হয় না। অপেক্ষা কর আরও কত কি দেখবি। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।”
সিএনজি ডেকে এনে সামনে দাঁড়িয়ে সিকিউরিটি গার্ডটা হাসতে হাসতে বলল
“আজ দুইদিন ধইরা যে কি গেঞ্জাম চলতাছে আপনেগো দুইতলার বাসায়।আল্লাহরে আল্লাহ, নিচে বইসা কান ঝালাপালা হইয়া গেছে।”
লাবন্য কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু ওর নানি সেই সুযোগটা দিলেন না। ওকে টেনে সিএনজিতে উঠে গেলেন।
চলবে।
#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ৩৮)
সায়লা সুলতানা লাকী
“তুমি আমাকে কথা বলতে দিলা না কেন? দোতলার ওরা যে আমাদের কেউ না তা সবার জানা উচিৎ। সবাই ওদেরকে আমাদের লোক ভাববে এটাতো সহ্য হবে না আমার!” লাবন্য চোখেমুখে বেশ বিরক্ত ফুটিয়ে কথাটা বলল।
“কি বোকার মতো কথা বলিস? তোর বলাতে কি কারো ভাবনা বসে থাকবে? ওখানে তোর বাপ থাকে, তোর দাদি থাকেন। তুই হাজারবার বললেও ওরা তোদেরই লোক তা মানুষ গলা ফাটিয়ে বলবে। শুধু শুধু কেন এসব নিয়ে পড়ে নিজের সময় নষ্ট করবি? যা খুশি তা করুক তারা সেটা তাদের ব্যাপার, এসব নিজের গায়ে না মাখলেই হল। এসব নিয়ে প্রতিবেশী বা গার্ডদের সাথে ঝামেলায় জড়ানোর কি দরকার?”
“নানি তুমি বিষয়টা বুঝতেছো না!”
“এতো বোঝার দরকার নাই।চুপ থাক। এসব নিয়ে তুই কোন কথা বলবি না। সময় থাকলে রুশের সামনে পরীক্ষা, ওর পড়াশোনাটা দেখিস। এখন আর কোনো কথা বলবি না।”
নানি মোটামুটি ওকে থামিয়ে দিয়ে রুশকে নিয়ে স্কুলে নেমে গেলেন। লাবন্য চুপ হয়ে গেল আর মনে মনে বলল “নানির কথাই ঠিক এসব গায়ে মাখার দরকার নাই, সবকিছু কানে না তুললেই হলো।”
ছুটির পর রুশকে নিয়ে ওর নানি কোচিং-এ গিয়েছিলেন তাই বাসায় ফিরতে অনেক দেরি হল। কিন্তু ওই সময়তে বাসায় লাবন্যকে না পেয়ে একটু চিন্তিত হলেন। ওর মোবাইলে কল দিয়ে বারবার বন্ধ পেয়ে আরও টেনশনে পড়ে গেলেন। হিমেলকে কল দিতেই জানতে পারলেন যে হিমেলের সাথে লাঞ্চ করতে গিয়েছিলো লাবু এখন বাসায় ফিরছে আর ওর মোবাইলটায় চার্জ নাই তাই বন্ধ পাচ্ছে । মনে মনে তিনি প্রচন্ড রেগে গেলেন ঠিক করলেন বাসায় ফিরলে আচ্ছা মতো বকা দিবেন এমন নির্বোধের মতো আচরন করার জন্য।
বাসায় ফিরতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেল। দ্রুত বাসায় ঢুকতে হবে জেনেও সিড়িতে উঠার সময় দোতলার কাছে এসেই একটু স্লো হয়ে গেলো। সকালে প্রচন্ড তাড়া ছিলো তাই তাদের ঝগড়াঝাটি ভালেমতো শুনতে পারে নাই। কেনজানি ও বাসায় ঝগড়ার শব্দতে ওর মনে শান্তি শান্তি একটা অনুভূতি হচ্ছিল। বিষয়টা খুব সেনসেটিভ বলে কাউকে প্রকাশ করেনি কিন্তু চরম বাস্তব হল ও মনে শান্তি পেয়েছে আর তাই হিমেল লাঞ্চের অফার করতেই আনন্দচিত্তে রাজি হয়ে গেছে।
ঝগড়া হলে দাঁড়িয়ে কিঞ্চিৎ শুনবে মনে মনে এমন আশা ছিল কিন্তু এখন আর কোন শব্দ পেলো না বাহিরে। এরপর আর দেরি করল না দ্রুত পা চালিয়ে উপরে উঠে এল লাবন্য ।
মাগরিবের নামাজের পর লাবন্যের নানি কোরআন পড়েন। তাই আর তখন ওই রুমে ঢুকল না। আজ কোচিং ছিলো তাই আর হাউজ টিউটর আসেনি পড়াতে। রুশের রুমে উঁকি দিয়ে দেখল ও ঘুমাচ্ছে। সামনে গিয়ে ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে আবার ফিরে এল। এই সময়টাতে ও অনেক ক্লান্ত থাকে। ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকাতেই খুব মায়া হল তাই গালে একটা চুমু খেয়ে ফিরে এল।
ফ্রেশ হয়ে মোবাইল হাতে বিছানায় বসতেই নানি আসলেন লাবন্যের রুমে।
“লাবু, আজকে এটা তুই কি করলি?”
“ও নানি আসো, তুমি কো……”
“আহ! যা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দে।”
“কোনটা নানি?”
“কোনটা মানে? তুই বুঝিস নাই তুই কি করেছিস?” নানি একটু উঁচু স্বরেই বললেন। আর তাতে মনে হল লাবন্য একটু ভয় পেয়ে গেলো।
“ইয়ে মানে নানি….”
“স্পষ্ট ভাষায় কথা বল লাবু। এটা কোনো সময় হল বাসায় ফেরার? তোর যে দেরি হবে তা কি তুই আমাকে ইনফর্ম করছিস?”
“ইয়ে মানে নানি শোনো আসলে হয়েছে কি….”
“লাবু? ইয়ে ইয়ে করছিস কেন ফাজিল মেয়ে। মোবাইলে চার্জ থাকে না কেন তোর? বাসায় যে আমি একজন আছি তা কি ভুলে গেছিস? যা মন চায় তা যে করতি পারিস না তা ভুলে গেছিস?”
“নানি তুমি এতটা রেগে যাবে মানে ভয় পাবে? না মানে, আমি আসলে বুঝিনি তুমি এতটা ভয় পেয়ে যাবে। ”
“কেন বুঝিস নাই? তোরা আর কত ভুল করে শিখবি? তোদের এক একটা ভুলের মাশুল গোনা যে আমার জন্য অনেক ভারী হয়ে যায় তা বুঝিস না?”
“নানি তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো। বসো তুমি আমি মানে আই এম সরি, সরি। আসলে হুট করেই তোমার হিমু….”
“এমনই একদিন বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল রেশমা। কোন খোঁজ নাই, খবর নাই। যার মাশুল টানতে টানতে আমার মেয়েটাই বিদায় নিল পৃথিবী থেকে। আমি একটা বার বুকে নিয়ে বলতে পারলাম না। তোর ভুলের পরও আমি তোকে ঠিক আগের মতোই ভালোবাসি। তুই আমার নাড়ি ছেড়া ধন। তুই তোর সব দুঃখগুলি আমার কাছেই জমা রাখতে পারিস। পারিনি আমি মেয়ের মনের মধ্যে চলতে থাকা কোনো কষ্টের কথা জানতে। আজ এত বছর পর আবার আমি সেখানেই দাঁড়ানো এক মেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছে কিন্তু তার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারছি না। সেই সময়তে লিখনের মা রেশমাকে ঘরে তুলেছিলো। নিজের স্বার্থেই হোক আর রেশমার ভাগ্যেই হোক ওর বিয়ে হয়েছিল, একটা সংসার হয়েছিল ওর। কিন্তু আজ যে মেয়েটা বের হয়েছিল তাকে রেহেনা আপন করে নিবে না বলেছে। তবে এই মেয়ে কোথায় কোথায় ঘুরবে? ওর বিয়েটা যদিও কোনোভাবে হয় তবুও কি ও কোনো সংসার পাবে? মেয়েটা সংসার পেলেও আমার রেহেনাতো ওর ছেলেকে হারাবে। আমি মেয়ে হারিয়ে কাঁদছি, আর আমার বড় মেয়েটা ওর একমাত্র ছেলেকে হারিয়েতো পাগল হয়ে যাবে। কি করব আমি তখন অমন পরিস্থিতিতে? দুই পক্ষই যে আমার। আমি কি তবে এবারও কন্যা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলাম। একবার মা হিসেবে আরেকবার নানি হিসাবে। এটাই কি তবে ঠিক আমি সঠিক ভাবে মেয়েদের দেখাশোনা করতে পারি না? ”
“সরি নানি আমি তোমাকে এতটা কষ্ট দিয়ে ফেলছি তা বুঝতে পারিনি। তুমি আমাকে নিয়ে ভেবো না। আমি আম্মুর মতো এত দুর্বল না। আমি পালিয়ে যাবো না। কেউ যদি আমাকে জয় করে নিতে না পারে তবে আর তার কাছে যেয়ে নিজেকে সস্তা করব কেন? আমি মোটেও নিজেকে সস্তা মনে করি না। পালিয়ে যাওয়ার মতো ভুল আমি কোনোদিনও করব না। আম্মু নিজের জীবন দিয়ে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে গিয়েছেন। তোমাকে ছোট হতে হয় এমন কোন কাজ কোনোদিনও করব না তা প্রমিজ করতে পারি। তোমার মেয়ে যেনো কোনো দিন ছেলেকে না হারায় তা আমি সবসময় মনে রাখব।”
“আমার এত প্রমিজের দরকার নাই। এই এক জীবনে অনেক কিছু দেখেছি, অনেক কিছু পেয়েছি আর নতুন কিছু চাই না। তোর দায়িত্বটা যখন আমি নিয়েছি তখন কখন কোথায় যাস তা জানিয়ে দিস, টেনশনে রাখিস না। নিজের সন্তানরাই যথেষ্ট আমাকে মানসিক চাপ দেওয়ার জন্য, আর কারো দরকার নাই ওই কাজে।”
“হা হা হা নানি শোনো জীবনে টেনশন লেনে কা নেহি দেনে কা। বুঝলা কিছু? আমার দেরি দেখে তুমি একটা কল দিতে পারতা তোমার বড় মেয়েকে। তাহলেই হয়ে যেতো টেনশন দেনেকা খেলা। খালামনির ছটফটানিগুলো দূরে বসে সুন্দরমতো উপভোগ করতে পারতা। ” বলে খিলখিল করে হাসতে লাগল লাবন্য।
“একচড় দিয়ে চাপার দাঁত ফেলে দিব ফাজিল মেয়ে! আমি ওর মা, আমি ওকে টেনশন দিবো? যা মুখে আসে তাই বলে ফেলিস,খুব সহজ না? কোন মা’ই তা করতে পারে না, পারবেও না।”
“আরে ধুর তুমিও না বেশি ইমোশনাল। বিষয়টা একবার চিন্তা করোতো, তুমি বললা “রেহেনা লাবুতো বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ” কথাটা শোনার সাথে সাথে খালামনি শুরু করতো “হায় হায় আম্মা, এইটা কি শুনাইলেন? ওরে আল্লাহ! ওই বদমায়েশ মেয়েতো আমার নাদান কচি ছেলেটাকে পটিয়ে এতক্ষণে আমার বাসার কাছে চলে আসছে৷ ও আল্লাহ এখন আমি কি করব? আম্মা আপনে এইটা কেন হইতে দিলেন। ধুর আপনেরে কিছু বইলা লাভ নাই। আপনেতো ওই মেয়ের যাদুটোনায় অন্ধ হইয়া গেছেন। কল কাটেন আমি হোমারে কল দেই ওই বুদ্ধি দিতে পারবো কীভাবে এই শয়তান মেয়েরে বাসায় ঢোকা থেকে ফিরানো যায় তার। ও আল্লাহ তুমি রহম কর। ওই শয়তানের কুদৃষ্টি থেকে আমার বাসাকে বাঁচাও। ”
“চুপ ফাজিল, এসব কি? মুরুব্বিদের এমন করে ভেঙানোটা কিন্তু গুনাহ।”
“হুমম কিন্তু… ”
“চুপ আর কোনো কথা শুনব না। নাস্তা করবি আয়।” বলে নানি উঠে গেলেন।
লাবন্য কিছুক্ষন বসে চিন্তা করল পুরো বিষয়টাকে।যে বিষয় চিন্তা করতেই এত সমস্যা বলে মনে হয় তা বাস্তবায়ন হতে না জানি কত ঝামেলার আর কত কষ্টের হবে, তা ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
রাতে বসে পড়ছে ঠিক তখনই ডোরবেল বেজে উঠল। লাবন্য এখন আর তেমন একটা খেয়াল করে না এসব বিষয়ে কে আসল আর না আসল। ইয়ারফোনটা কানে লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে এসাইনমেন্ট করতে ছিল। হঠাৎ করেই এক মহিলার বিকট শব্দের চিৎকার সবকিছুকে উপচে ভেসে এল। লাবন্য ঝট করে উঠে দৌড়ে বের হয়ে এল জানার জন্য ঘটনাটা কী?
বাহিরে এসে ওর চোখ আটকে গেল মহিলার উপর। সেতো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে। লাবন্যের নানি এক ঝলক দেখেই চলে গেলেন নিজের রুমে মোবাইলটা হাতে নিয়ে। বুয়া দরজা খুলে যেনো বোকা বনে গেছে এমন একটা চেহারা করে দাঁড়িয়ে আছে দরজার কোনায়। আর মহিলা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে বুয়াকে,কারন বুয়া তাকে চলে যেতে বলেছে বলে।
লাবন্য একটু সময় নিলো বিষয়টা বোঝার জন্য, এরপর রুশের রুমের দরজাটা বাহির থেকে টেনে দিল। আর ওকে বাহিরে আসতে নিষেধ করল। এরপর বলল
“এই আপনি কে? এখানে কী চান? কেন আসছেন? বের হোন,এক্ষুনি বের হোন। কার পারমিশন নিয়ে ঢুকছেন এই বাসায়? বুয়াখালা সিকিউরিটি গার্ডকে ডাকো।কোথায় থাকে তারা? মানে মানে বের হোন বলছি না হলে গার্ড দিয়ে বের করবো কিন্তু! ”
“এই বেয়াদব মেয়ে কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা তোকে কেউ শিখায় নাই? তোর মা তোরে কি শিখাইছে তাইলে হু?”
“চুপ একদম চুপ অসভ্য মহিলা, ওই মুখে আমার মা নিয়ে আর একটা কথা বললে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম। কত্তো বড় সাহস আমার মা’কে নিয়ে কথা বলে বদ মহিলা।”
“শয়তান মেয়ে তোর সাহস কতবড় তুই আমাকে অসভ্য বলিস।তুই তো দেখি যা শুনছি তার চেয়েও বেশি বেয়াদব। তোর বাপ আমাকে বিয়ে করছে। আমি কে তা তুই বুঝছোস? এইটা আমার স্বামীর বাসা এইখানে আমি আসব না তো কে আসবেরে? এইখানে আমি থাকবো নাতো কে থাকবে? এইখানে আমারও অধিকার আছে বুঝছিস!”
“ইন্না-লিল্লাহ, কি বলে এই পাগল মহিলা! এটা আমার আর আমার ভাইয়ের বাসা এটা কার স্বামীর বাসা হলো আবার? ওরে আল্লাহ এখনতো পুলিশ ডাকতে হবে দেখছি।”
“ডাক পুলিশ আমি কি ভয় পাই নাকি? আমিও কেইস করব। জোরপূর্বক বাসা লেখায় নেওয়ার জন্য। কি ভাবছোস আমি ছেড়ে দিবো? এতদিন বসে বসে সব কিছুর হিসাব নিছি সবার কাছ থেকে। এত সহজ নাকি লেখায় নেওয়াটা?”
আর কিছু বলতে পারলো না এরই মধ্যে লিখন এসে উপস্থিত হল ওখানে। বাসার ভেতরে ঢুকেই জোরে এক ধমক দিয়ে উঠল
“তুমি উপরে আসছো কেন? কার পারমিশনে তুমি আরেকজনের বাসায় আসছো? তোমাকে না আমি বারন করেছিলাম এখানে আসতে? তবে কেন আসছো?”
“কেন আসবো না? তুমি দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা এখানে এসে পরে থাকতে পারো আর আমি আসলেই বুঝি দোষ?”
“হ্যা দোষ, তুমি আর আমি এক না। আমি ওদের বাবা, কিন্তু তুমি ওদের কেউ না। এখানে আসার কোন অধিকার তোমার নাই। তোমাকেতো আমি সুন্দরমতো বুঝিয়ে বলছি তারপরও তুমি কেন আসছো?”
“তুমি বললেই হলো? বিয়ের সময় তোমার বড় বোন বলছে তোমার ফ্ল্যাট আছে। আর বিয়ের পর তুমি শোনাচ্ছো তোমার কিছু নাই তা আমি মানবো কেন?”
“মানা না মানা তোমার ব্যাপার, আমার কিছু নাই তাই সত্য, এখন তুমি যা খুশি তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারো। আমার সাথে থাকতে হলে ওই ভাড়া বাসাতেই থাকতে হবে।”
“আমি ওই বুড়ি শয়তানের সাথে আর একদিনও থাকবো না। কি পাইছে বুড়ি আমারে, আমি কি বান্দি? বুড়ির সাথে আরও দুই শয়তান মিলে বুদ্ধি করে, কীভাবে আমারে জ্বালানো যায়। আমি সব বুঝি, আমি এত সহজ না। একজনরেতো মারছে এখন আমাকেও….”
“মুখ সামলে কথা বলো, থাকবা না ভালো কথা, সব গোছাও তোমাকে তোমার মায়ের কাছে দিয়া আসি ব্যস ঝামেলা শেষ। কিন্তু তুমি এখানে আসবা কেন?
“ইশশশ বললেই হইলো মায়ের কাছে দিয়া আসবা! আমি কেন যাবো। এটা আমার সংসার। গেলে যাবে তোমার মা। তারে বিদায় করো তারপর আমি বাসায় যাব। এর আগে আমি এক পাও নড়বো না। এই বাসাতেই থাকবো।”
“নড়বো না মানে? এই মহিলা আমি কেন তোমাকে এখানে সহ্য করব? সিকিউরিটি গার্ডকে ডেকে এখনই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করব যদি না মানে মানে বের হও। শখ কত এখানে থাকবো!” বলে লাবন্য এগিয়ে আসল।
“বেয়াদব বজ্জাত মেয়ে, তোর মা কি তোরে আদব কায়দা কিছুই শিখায় নাই। জোচ্চুরি করে সম্পদ সব লিখায় নিছোস। ভালো হইবি কোত্থেকে ফুপু গুলির রক্তইতো গায়ে। সব শয়তানের গোষ্ঠী। সব এক।”
লাবন্যের কি হলো তা বুঝলো না, হঠাৎ যেনো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল তীব্র গতিতে ছুটে আসতে আসতে বলল
” এই মহিলা তুই এখন বের হবি এই বাসা থেকে। তোকে আমিই বের করব ধাক্কা দিয়ে, তোর কোন কথা আমি আর সহ্য করব না। তোর এত্তো বড় সাহস তুই আমার মা নিয়ে কথা বলিস?”
লিখন অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত এগিয়ে এসে লাবন্যকে মাঝ রাস্তায় আটকে দিল। ওকে জড়িয়ে ধরে টেনে টেনে ওর রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বাহির থেকে রুমের দরজা আটকিয়ে দিয়ে ড্রয়িং রুমে ফিরে চিৎকার করে উঠল।
“তুমি কি মানুষ? তোমার মধ্যে কি বিন্দুমাত্র মনুষ্যত্ব নেই? আমি বারবার তোমাকে কি বলছি আর তুমি এসব কি করছো? কি চাও তুমি?”
“এই বাসা তুমি আমাকে দিবে। তোমার মা বোনকে আমার সামনে থেকে সরায় নিবে। আমি এদেরকে একটুও সহ্য করতে পারছি না। সহজ হিসাব। ”
“গুড, ভেরি গুড। চলো। এক্ষুনি চলো। ” বলে ওর বৌয়ের হাত ধরে টান দিলো।
“কোথায় যাবো? বললাম না ওই শয়তান বুড়ি বাসায় থাকলে আমি যাবো না!”
“তোমাকে ওখানে যেতে হবে না। সরাসরি উকিলের কাছে যাব। ডিভোর্সের জন্য যা যা করতে হবে তাই করব। আমিও আর তোমাকে একটু সময়ের জন্যও সহ্য করতে পারছি না। আমার জীবনটা একেবারে নরক করে তুলছো তুমি। আর না। চলো।”
“হ্যে ডিভোর্স দিবা কেন? আমি ডিভোর্স নিবো কেন?”
“তুমি কি করবা তা ওখানেই সিদ্ধান্ত নিও এখন চলো।”
“না আমি এই বাসা থেকে যাবো না।”
হঠাৎ করে কি হল লিখন হেঁচকা টানে ওর বৌকে বাসার বাহিরে এনে দরজা জোরে আটকে দিল। আর অমনি বুয়া এসে ভেতর থেকে দরজা ছিটকিনি লাগিয়ে দিল।
চলবে।