মেঘে_ঢাকা_চাঁদ,পর্ব ৪০,৪১

0
397

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ,পর্ব ৪০,৪১
সায়লা সুলতানা লাকী
৪০

রাতেই মামারা চলে গেলেন। নাজমুল সাহেব একাই ফিরলেন কারন রেহেনা বেগম তার মায়ের কাছে রাতটা থাকতে চাইলেন। আসলে সে যে মায়ের জন্য থাকছেন না তা তার বিচক্ষণ মা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু কিছু বললেন না। সমস্যাটা বাঁধিয়েছে হিমেল। ও নাছোড়বান্দার মতো আটকে রইল নিজের ডিসিশনে। নানুমনির দায়িত্ব সে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে তাই তার এই সময়ে নানুকে একা রেখে কোথাও যাবে না। নানুমনির পাশেই থাকবে। ব্যস এই কথাতেই রেহেনা বেগম তার বাসায় ফেরার ডিসিশন চেঞ্জ করলেন। ছেলেকে একা এখানে থাকতে দিতে পারেন না তিনি। এখানে লাবন্য আছে, ওর সামনে ছেলেকে কখনওই একা রাখা যাবে না। লাবন্য সব বুঝল কিন্তু খালামনিকে মুখ ফোটে কিছু বলল না। বরং তারা থাকলে ওর মনে একটু সাহস পাবে সেটাই এখন মুখ্য ওর কাছে।

খালামনি নানির পাশে ঘুমানোর জন্য লাবন্য আর এই বিছানায় শুঁতে পারল না। নিজের রুমেও ঠিক মতো ঘুম আসলো না। মাঝ রাতে উঠে ডাইনিংএ আসতেই নানির নাক ডাকা শব্দে ভয় পেয়ে গেলো। সাধারণত তিনি নাক ডাকেন না। তাই আস্তে আস্তে নানির রুমে ঢুকল। গা’টা গরম তাই থার্মোমিটার নিয়ে নানির পাশে বসল তাপমাত্রাটা দেখতে। তখনই
রেহেনা বেগম নড়েচড়ে উঠলেন। রুমে ওকে দেখে বলে উঠলেন
“কি করিস? কি, আবার জ্বর উঠছে? কি আশ্চর্য আমিতো টের পেলাম না। আম্মা আমাকে ডাকবেন না?”
“খালামনি নানি আমাকে ডাকেনি, নানির নিঃশ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনে আসছি।গা’টা গরম তাই দেখছি টেম্পারেচারটা কত?”

“হিমেল কোথায়? ও কি করে?”

“রুশের রুমে ঘুমায়। ডেকে দিব?”
“না না না ডাকার দরকার নাই, ওর সকালে অফিস আছে, ঘুমাক ঘুমাক। ওকে কেউ ডিস্টার্ব করিস না।”

“তুমিও ঘুমাও।” বলে লাবন্য থার্মোমিটারে রিডিংটা দেখে আবার ওটাকে ঝাঁকি দিয়ে রেখে দিল। নানির মাথায় হাতটা বুলিয়ে দিতে দিতে পাশেই বসল।

“আম্মা ঘুমাচ্ছে, তুই আবার এখানে বসছিস কেন? যা ঘুমাতে যা। নিজের রুমে যা। শুধু শুধু বসে থেকে আবার তুইও অসুস্থ হবি পরে আম্মার কষ্ট হবে।”
রেহেনা বেগমের কথাটা শুনে লাবন্যের আর কোন উত্তর দিতে ইচ্ছে করল না। বুঝলো যে এখানে বসাটাকে সে ভালো চোখে দেখছে না। তাই আর দেরি না করে নিজের রুমে ফিরে এল। কিছু সময় কিছু বিষয়ে মন বিদ্রোহ ঘোষনা করলেও অনেক ক্ষেত্রে অনেক কিছুই আমরা মেনে নেই, চুপ থাকি। মনে হয় মেনে নেওয়াই ভালো। আসলে তা কতটুকু ভালো তা জানি না। বিক্ষিপ্ত চিন্তা ভাবনাগুলো মাথার মধ্যে ঘুরতে লাগল ঘুম আর আসল না শুধু কিছু সময় চোখ বুঝে রইল।

সকালে লিখন গরম গরম নাস্তা নিয়ে হাজির হল বাসায়। এমন সব আয়োজন দেখে লাবন্যের মন মেজাজ দুটোই নাস্তার মতো গরম হয়ে গেল। মিনমিন করে বলে উঠল
“এসবের কি দরকার ছিলো? মনে হচ্ছে এখানে কোন উৎসব চলছে? ”

“আহ লাবু এভাবে বলে না। তোর কাছে তোর খালামনি এসেছেন, তা কি একবার ভেবেছিস? তোর মায়ের মনে খুব ইচ্ছে ছিল ওর কাছে ওর বোন এসে থাকুক।কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তোর খালামনির প্রিয় নাস্তাটাই আনলাম। নেহারি আর তন্দুরি রুটি। রেশমা প্রায় সময় গল্প করত আপার পছন্দের খাবার নিয়ে। ওর খুব ইচ্ছে ছিল নিজ হাতে ওর স্পেশাল নেহারি রান্না করে আপাকে খাওয়াবে। তাই নিয়ে এলাম তুই সামনে বসিয়ে খাওয়াবি তাহলে তোর মায়ের আত্মা খুশি হবে।”
লাবন্য চুপ হয়ে গেল ওর আব্বুর কথায়। মনটা কেমন জানি ব্যাকুল হয়ে উঠল মায়ের জন্য। এমন হাজারও ইচ্ছে মনে পুশে রাখতো আম্মু, যা মনের মধ্যে নিয়েই চলে গেল, পূরণ করতে পারল না। মনে হল আম্মুর সাথে সাথে এমন হাজারও স্বপ্নেরও মৃত্যু ঘটেছিল সেদিন যার কথা কেউ জানে না,জানবেও না।

নানির রুমে নানিকে ফ্রেশ করিয়ে ডাইনিংএ এসে দেখল লিখন হিমেল আর রুশ নাস্তা করগে বসেছে। রুশ ড্রেস পরে রেডি হয়ে আসছে। কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো। নানি অসুস্থ এই অবস্থায় ওর স্কুলে যাওয়ার কি দরকার? আর ওকে না হয় আব্বু দিয়ে আসবে কিন্তু আনতেতো হবে লাবন্যকেই। খালামনি যদি বাসায় ততক্ষণ না থাকে তবেতো ঝামেলা হয়ে যাবে। আর ভাবতে পারলো না মেজাজ গরম হয়ে গেল রুশের উপর। পাশেই হিমেল নাস্তা করতে বসছে দেখে কথা না বাড়িয়ে কিচেনে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর চা নিয়ে এসে দেখল রুশ আর ওর আব্বু চলে গেছে। একটা কাপ হিমেলের দিকে এগিয়ে দিয়ে নানিকে খাওয়াতে চলে গেল। হিমেল চা-টা হাতে নিয়ে চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো আনন্দে একটা হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকাল কিন্তু সেদিকে যেনো লাবন্যের কোন খেয়াল নেই, ও তা একবার ফিরেও দেখল না।

বিছানায় বসিয়ে নানিকে নেহারিতে রুটি ভিজিয়ে ভিজিয়ে মুখে তুলে দিচ্ছিলো লাবন্য এমন সময় হিমেল ঢুকল রুমে

“নানুমনি আমি এখন যাচ্ছি, তোমার শরীর একটু খারাপ লাগলেই আমাকে জানাবে। শুনলাম এখন জ্বর নাই। যদি জ্বর আসে তবে ঔষধটা খেয়ো।আগামীকাল ব্লাড টেস্ট করাতে নিয়ে যাব।”

“কিছুই করাতে হবে না। আমি ভালো আছি। তোদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমি ভয়ানক কোনো রোগের রুগি। যা তোরা যে যার কাজে। আমি ঠিক আছি। রাতে জ্বরটাও উঠে নাই। এক কাজ কর তুই তোর মা’কে সাথে নিয়ে যা। ওতো তোর চিন্তায় এখানে পরে আছে। শুধু শুধু ওকে টেনশন দিচ্ছিস কেন?”

“না মা এইটা কি কথা! আমি কি বলছি যে আমি ওর জন্য এখানে আছি? আমিতো…”

“শোন তুই আমার জন্য এখানে বসে নাই তা আমি জানি। এখানে বসে ছেলেকে পাহারা দিতে হবে না।”

“আম্মুকে আব্বু এসে নিয়ে যাবে। আমি এখন অফিসে যাচ্ছি। আমার একটু তাড়া আছে।” কথাটা বলেই আবার লাবন্যের দিকে তাকিয়ে বলল
“বন্য একটু আয় দরজাটা আটকে যা”।

“পারব না, দেখছো না আমি নানি কে খাওয়াচ্ছি। তোমার যাওয়া তুমি যাও বুয়া খালা আটকে দিবে দরজা।”

“কি আশ্চর্য এটা কোনো কথা হল! একটু এলে কি এমন ক্ষতি হয় তোর?”

“এই তুই আমাকে খাওয়াচ্ছিস কেন? আমি কি নিজে নিজে খেতে পারি না?”

“না পারো না। একদম কথা বলবা না। গত দুদিনই দেখছি এক চামচ দুই চামচ ব্যস শেষ তোমার খাওয়া। এমন চললে তুমি সোজা হবে কীভাবে আমাকে ধমকানোর জন্য? ”

“তুই যা হিমু আমি আটকে দিচ্ছি দরজা।” বলে রেহেনা বেগম বসা থেকে উঠতে চাইলেন।

“আরে না না না তুমি বসো, বুয়াখালাই আটকাতে পারবে। ” বলে হিমেল মুখটা একটু বাঁকা করে চলে গেল। রেহেনা বেগমও ছেলের পিছে পিছে বের হল রুম থেকে।

“এমন করলি কেন?”

“কেমন করেছি সব আবদার মানতে হবে নাকি? অত পারব না। ”
“তুইতো দেখি বিয়ের আগেই ঝাড়ি দেস ওকে।”
“হুম দেই এখন তুমি চুপচাপ খাও না হলে তুমিও খাবে।”

“নাস্তার টেবিলে বসে রেহেনা বেগমের চোখ ছলছল হয়ে উঠল। পুরোনো অনেক স্মৃতি ভেসে উঠল স্মৃতির পাতায়। নেহারি আর তুন্দরি হলে আর কিছু লাগতো না রেহেনা বেগমের। তার বাবা মাঝে মধ্যে এটা রেস্তোরাঁ থেকে এনে খাওয়াতেন। রেশমার তেমন একটা পছন্দ ছিলো না তাই ও এগুলো দেখলেই কান্না জুড়ে দিত।এরপর থেকে ওর জন্য আলাদা করে ঘিয়ের হালুয়া, বুন্দিয়া আর পরোটা নিয়ে আসতেন সাঘে করে। এই নেহারি নিয়ে রেশমার সাথে প্রায় সময় রাগারাগি করতেন রেহেনা।অথচ এই রেশমাই চুপিচুপি মাঝে মধ্যে নিজের হাতে রান্না করে হিমেলকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতো বাসায়। আর তারজন্য ফোন করে বোনকে কি সব কথাই না শুনিয়েছেন জীবনে। আজ সব কষ্ট একসাথে চেপে বসল মনে। এমনটা না করলে হয়ত আজ এত কষ্ট লাগতো না। বোনের সাথে সম্পর্কটা ভালো হত। লাবন্য খালামনির চোখ দেখে আস্তে আস্তে বলল

“তুমি নাকি খুব পছন্দ কর, তাই আব্বু নিয়ে এসেছে। গরম গরম খাও, ভালো লাগতে পারে।”

“হুমম, কীভাবে খাই। এগুলো যে মুখে তুলতে পারছি নারে।” বলে হুহু করে কেঁদে ফেললেন তিনি।
লাবন্য এই প্রথম ওর খালামনিকে এভাবে কাঁদতে দেখল।

নাজমুল সাহেব এসে রেহেনা বেগমকে নিয়ে গেলেন। হিমেল কল দিয়ে ওর আব্বুকে বলেছে তাকে বাসায় নিয়ে যেতে। তারপরও রেহেনা বেগম কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ ছিলেন পরে তার মা’ই তাকে আশ্বস্ত করলেন যে হিমেলকে বাসায় পাঠিয়ে দিবেন বলে।

দুপুরে রুশকে নিয়ে ওর আব্বুই বাসায় ফিরলেন। লাবন্যকে বের হতে হলো না। যদিও আজ লাবন্যের কথা ছিল ওর নানির রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার।কিন্তু নানি নিজেই তেমনটা সাহস পেলেন না দুপুরে বের হতে। তাই আর যাওয়া হলো না। লিখনকে পেয়ে নানি জিজ্ঞেস করলেন বাসায় এখন কে আছে। উত্তরে লিখন জানালো যে বাসা ছাড়ার নোটিশ দিয়ে দিয়েছে। আর এখানে থাকবে না ওরা। মা’কে বোনদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। বৌয়ের সেবা পেতে হলে তার আরও কিছু ধৈর্যের দরকার, বুদ্ধির দরকার। আর বৌকেও বাবার বাসায় দিয়ে আসছে। বিয়েটার আগেই বলা হয়েছিলো শাশুড়িকে দেখে রাখবে ছেলেমেয়ে দেখে রাখবে সাংসারিক হবে। কিন্তু এখন যখন বলছে সে এগুলো করবে না তখন আর তাকে এখানে রাখার দরকার নাই। বাবার বাড়িতেই থাক আর আলাদা সংসারের ঝামেলায় যাওয়ার দরকার কি? দুই পক্ষ নিজ নিজ জায়গায় বসে বুঝুক তারা কি চায়। তারপর ডিসিশন নেওয়া যাবে কে কোথায় থাকবে।

লাবন্যের নানি আগ বাড়িয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। চুপচাপ শুনলেন শুধু। যাওয়ার সময় লিখনকে শুধু বললেন “এখানে যতদিন আছো আলাদা করে রান্না করো না। রুশের সাথেই থেকো।”

সন্ধ্যার পর হিমেল এসে হাজির হল বাসায়। ওকে দেখেই লাবন্য ফিক করে হেসে উঠল। আর তা দেখে হিমেল জিজ্ঞেস করল

“হাসছিস কেন?”
“তুমি এখানে আসছো কেন?”
“আসবো না কেন? নানুমনি অসুস্থ…. ”
“আহা নানি এখন সুস্থ, সারাদিনে জ্বর আসেনি।”
“তো”
“তো, তুমি এখন এখনে কেন আসছো? খালামনি হাইপার হয়ে যাবেন জানলে।”
“হোক, হওয়ারই দরকার।”
“কি আবোল তাবোল বলছো, মাথা ঠিক আছে?”
“হুমম আছে, হান্ড্রেড পারসেন্ট ঠিক আছে। আমি এখানে আসবো, বারবার আসবো।”
“কেন?”
“সুখ পাই তাই।”
“সুখ পরে অসুখ হয়ে যাবে।”
“কিছু অসুখেও সুখ থাকে।”
“তুমি বড় বেশি ঢং কর।”
“সকালে চা দিয়েই চলে গেলি কেন? এক দন্ড আমার পাশে বসা যেতো না?”
“উঁহু, ভয় ছিল ভেতরে।”
“ভয় আর তুই?”
“হুমম, মাঝে মাঝে কোত্থেকে জানি সুখ হারাবার ভয়টা বড় তাড়া করে বেড়ায় আমাকে।”
“তোর এই কথায় একটা আদর হবে । কাছে আয়।”
“একদম না, দূরে থাকো। বাসায় যাও।”
“যাবো না।”
“খালামনি কাঁদবে তাহলে। ”
“কাঁদুক, এমন কাঁদা আমিও কেঁদেছি। আম্মু বুঝুক যতই বাঁধা দেওয়া হোক না কেন আমি আমার সিদ্ধান্তেই অটল আছি আর থাকবো। ”
“জোর করে মানিয়ে নিলে কি সেই সম্পর্কে মধুরতা থাকবে?”
“আগে মানুক পরে গুড় চনি মধু সব ঢালবো।কোন সমস্যা নাই।”
“জানো, আজ খালামনি আম্মুর কথা মনে করতে করতে কেঁদে ফেলছে। আমি এই প্রথম দেখলাম খালামনি একবারও আম্মুর কোন দোষ বলেনি। খুব অবাক হয়েছি।”

“দারুন একটা নিউজ দিলিতো এই খুশিতেতো অবশ্যই মুখ মিষ্টি করতে হবে বলে লাবন্যকে জড়িয়ে ধরল।”
“আরে আরে করো কি? দেখো পেছনে কে? ধরল ধরল তোমার কান ধরল।” বলতে বলতে নানি হিমেলের কান টেনে ধরল।
“কি হচ্ছে এখানে শুনি?”
“কিছু না নানুমনি। এমনি একটু… ”
“আমি কি বয়রা, কানে শুনি না?”
“শোনো যুগে যুগে কাবাবে হাড্ডি মিলে আর মিলবে। এটা হলো জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি। ”

“হয়েছে আর ঢং করতে হবে না। কাবাবে যেনো হাড্ডি না থাকে তেমন করে কাবাব বানালেই হয়। তেমন যদি পারিস তবেই আসিস। এখন যা। রেহেনা অপেক্ষা করছে তোর জন্য। ”
“নানুমনি তুমি অন্তত একটু আমাকে বোঝো!”
“বুঝি আমি সবই বুঝি। জয় করতে শিখেনে। চুরি করা মহাপাপ। জয় করা প্রাপ্তিতে সুখ থাকে বেশি। যেদিন জয় করতে পারবি সেদিন লাবুও তোকে বরন করতে ফুলের মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।”
“ঠিক আছে জয় করেই নিবো, দেখে নিও। তবে মালাটা কি ফুলের হবে তা বন্যকে আমি বলে দিব। ওকে বিশ্বাস করা যায় না। বন্যতো কাঁটা যুক্ত ফুলের মালা পড়ায় দিবে গলায় এরপর সারাজীবন ওই কাঁটা শুধু গলায় খোঁচাবে। এতটা রিস্ক নেওয়া যাবে না।”

“চান্দু যেই ফুলের মালাই পরো না কেন তোমাদের ছেলেদের মালা পরার পর শুধু গলাটা চুলকায়। এটা আর নতুন কি? যাও এখন বাসায় যাও। এত রংঢংয়ের কথার দরকার নাই।”

“আচ্ছা যাচ্ছি, তবে তোমার শরীর খারাপ হলে জানিও।” বলে বাসা থেকে বের হল। দরজায় দাঁড়িয়ে ইশারায় একটা চুমু ছুড়ে দিল ওর বন্য বরাবর। এরপর দিল দৌড়।

“এটা কি হল?”
“আমি কি জানি? তোমার সামনেইতো করল তাকে জিজ্ঞেস কর? ”
“তুই লাফিয়ে নিলি যে?”
“আমার জিনিস আমিইতো নিবো, অন্যের জন্য ছেড়ে দিবো নাকি?”
নানি কোন কথা না বলে লাবন্যের দিকে তাকাল। একটু পর নানি ফিক করে হেসে ফেলল আর তার সাথে সাথে লাবন্যও ওর নানিকে জড়িয়ে ধরে হাসতে লাগল।

চলবে।

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ৪২)
সায়লা সুলতানা লাকী

“ইন্না-লিল্লাহ, লাবু তুই এইটা কি করলি? রুশ নানুভাই আমার, ব্যথা পাইছো তুমি?” লাবন্যের নানি চিৎকার দিয়ে উঠলেন। আর তখনই মনে হল লাবন্যের হুশ হল ও এই মাত্র কি কাজটা করেছে তার। ওর ভেতরে জমিয়ে রাখা ভয় যে ওকে এতটা আচ্ছন্ন করে রেখেছে তা ও বুঝতেই পারেনি। হঠাৎ করেই অপরাধ বোধ উদয় হল ভেতরে। রুশের দিকে তাকাতেই ওর অসহায় চোখগুলো মনের মধ্যে হাতুড়ি পেটানো শুরু করল। আচমকা রুশের হাতটা ধরে টেনে নিজের রুমে ছুটে গেল। ভেতরে ঢুকে দরজাটা আটকিয়ে দিয়ে ভাইকে বুকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠল। রুশ পুরোপুরি কলের পুতুল হয়ে গেল। লাবন্য যেভাবে টানছে সেভাবেই দুলছে। নিজে অনেকটা স্তব্ধ হয়ে গেছে। কোনো রকম রিয়েক্ট করতে ভুলে গেছে বলে মনে হল। চড়টা খেয়েও কাঁদছে না শুধু অবাক চোখে বোনের অস্থিরতা দেখছে।

রুশকে নিয়ে রুমে যেতেই লিখন ভয় পেয়ে গেল। কি করে আবার রুশের সাথে? এমন চিন্তায় নিয়ে বসে থাকতে পারল না উঠে দরজায় নক করতে লাগলো “লাবু, লাবু মা আমার দরজাটা খোল। আমার কথা শোন। পুরো কথাটাতো একবার শুনবিতো! পুরোটা শোনা উচিৎ তোর, তাই না? মা লাবু দরজাটা খোল। মারে মাথাটা একটু ঠান্ডা কর। আমি তোদের বাবা বেঁচে আছি এখনও, তোরা এতিম না। মা শোন দরজাটা খোল।”

লাবন্য তখনও রুশকে বুকে চেপে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে। লিখনের কোনো কথাই ওর কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। আস্তে করে রুশ বোনের বুক থেকে মাথাটা উঠিয়ে বলল
“আপু, আব্বুু দরজাটা খুলতে বলছে, আমি খুলে দেই?”
“রুশ ভাইরে , তুইতো আব্বুর ভাগ কাউকে দিতে চাইতি না। এখন দেখ আব্বুই তোর আব্বুর ভাগ অন্যকে দিয়ে দিচ্ছে। আমাদের আব্বু আর শুধু আমাদের রইল না।”

“লাবু মা আমার কথাটা শোন, একটু দরজাটা খোল।”
এবার রুশ লাবন্যের বাহুবন্ধনী খুলে বের হয়ে দরজাটা আস্তে করে খুলে দিল।
লিখন এগিয়ে এসে লাবন্যকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো কিন্তু ও ওর আব্বুর হাতটা সরিয়ে দিল ধাক্কা দিয়ে। তারপরও লিখন জোর করে মেয়ের হাত ধরে পাশে নিয়ে বসালো

“লাবু, মাই লাভ। আগে আমার কথাটা শোন তারপর কষ্ট নিস। কথা না শুনেই শুধু শুধু কেন কষ্ট পাচ্ছিস বোকা মেয়ে। আমি লিখন তোর আব্বু এখনও বেঁচে আছি। তারপরও কেন নিজেকে এতিম ভাবছিস? মানলাম আমি নির্বোধের মতো একটা ভুল করে ফেলছি। তাই বলে কি আমি বারবার ভুল করব? তুই আর রুশই যে আমার জীবনের সব। তোরা ছাড়া যে আমি একেবারে শূন্য। তোরা আমার সন্তান, তোদের প্রতি আমার যেমন দায়িত্ব আছে ঠিক তেমনি আমার মা আমার গর্ভধারিনীর প্রতিও দায়িত্ব আছে। মা শুধু আমার একা না অন্যদের ও। তাই বলে অন্য কেউ দেখছে না এই ভেবেতো আমি আমার দায়িত্ব ভুলতে পারি না। বরং তখন আরও বেশি দায়িত্ব বেড়ে যায় যখন দেখি আমি ছাড়া আর কেউ দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না । আমি বিয়েটা করেছিলাম সংসারটাকে আবার আগের মতো সচল করতে। সবাই মিলে চাপ দিলো বলল তোরাও একসময় মেনে নিবি। আম্মার কষ্টটাই তখন খুব বেশি ভোগাচ্ছিল মনে। নিজের পেটের সন্তানদের আচরন তার মায়ের প্রতি এতটা যে খারাপ হতে পারে তা সামনে থেকে না দেখলে বোঝা যায় না। আমি বিয়েটাতো করলাম কিন্তু তার আগে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছিলাম মেয়ে পক্ষকে। ওরা সব শর্ত মেনে নিল। তাদেরও কোন উপায় ছিলো না। যাকে বিয়ে করলাম তার বয়স চল্লিশ। তার বিবরন আর তোকে না’ই দেই। বিয়ের পর আমার জীবনটা যে এমন হয়ে যাবে তা বুঝতে পারিনি। তোদের প্রতিই যখন আমার পুরো ধ্যান তখন ওই দিকটায় আবার সেই পুরোনো ধাঁচে চলতে শুরু করে দিল সেদিকটায় আর তাকাইনি ফিরে । সবাইতো আর রেশমা হয় না যে মুখ বুঝে সহ্য করবে। সমস্যা একটু একটু করে বড় হতে শুরু করল। আমি রেশমার প্রতি সত্যি সত্যিই বড় অবিচার করেছি। এই পাপ আমাকে দুনিয়া আর আখেরাতে ভোগাবে তা নিশ্চিত। তাই নতুন করে আর পাপ করতে চাইলাম না। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সরিয়ে দিলাম দুই গ্রুপকে দুইদিকে।
এতদিন আমি এখানে থেকে দুজনকেই এভয়ড করেছি সমানতালে। তাদেরকে তাদের প্রয়োজন আর অবস্থান ঠিক করতে সময় দিয়েছি। এসব কথা কেন তোকে বলছি হয়ত তোর ভেতরে এমনই প্রশ্ন উঠছে তুই খুব বিরক্ত হচ্ছিস, হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি হলেও তাই হতাম। কিন্তু মা তোর বাবা একটা ভুল করছে সত্য এখন সেই ভুলটাকেতো আর অস্বীকার করা যাবে না। এগুলোর মধ্যেই চলতে হবে।”

“কি বলতে চাও তুমি? তোমার ভুল নিয়ে তুমি থাকো। এসব নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নাই। আমরা কেন এগুলোকে সাথে নিয়ে চলবো?”

“তোদের মাথা ব্যথা হোক তা’ও আমি চাই না। তোরা ভালো থাক সেটাই আমার কাম্য। তোদের মাঝে যাতে আমার ভুল কখনও না আসে সেই ব্যবস্থা করতেই গিয়েছিলাম। আমি সেই সুখবরটাই দিতে এসেছিলাম। মা তার বৌয়ের সাথে মিলেমিশে থাকতে সম্মতি দিয়েছেন, দুজনই দুজনের সাথে মিলেমিশে থাকতে চাচ্ছেন এটা আমার জন্য একটা সুখের খবর। আমাকে আর মা বা সংসার নিয়ে চিন্তা করতে হব না। আমি আমার সন্তানদের সময় দিতে পারব নিশ্চিন্তে। আমি তাই বলতে চাচ্চ্ছিলাম। কিন্তু তুই কি বুঝতে কি বুঝলি…..”

“এসব কথা আমাকে শোনানোর কোনো প্রয়োজন নাই। কে কোথায় থাকবে তা দিয়ে আমি কি করব? আমরা আমাদের অধিকারে কারো হস্তক্ষেপ মেনে নিতে পারব না, পারি না। ”

“না তুই কিছুই করবি না। তবে…..”

“লিখন তুমি তোমার রুমে যাও আমি লাবুর পাশে আছি। তুমি যাও রুশকে নিয়ে যাও।” লিখনকে থামিয়ে দিয়ে বললেন লাবন্যের নানি।

“জি আম্মা।” বলে লিখন রুশকে জড়িয়ে ধরে চলে গেল নিজের রুমে।

“লাবু এইটা তুই কি করলি? পুরো ঘটনাটাতো একবার জানার দরকার ছিলো। ছিলো না?
হুট করেই মাথাটা এমন গরম হয়ে উঠলো কেন তোর? কোনো কিছুই কি ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে পারিস না?”

“নানি আব্বু যেদিনই বিয়েটা করেছে সেদিন থেকেই আমি ভয়ে আছি, কবে আব্বু তার সুখবর শোনায়। তার নতুন কোনো বেবি আসবে পৃথিবীতে তার প্রতিনিধিত্ব করতে। আমরা তখন তার জীবন থেকে আউট হয়ে যাবো আস্তে আস্তে । আমাকে নিয়েতো ভাবি না, তবে এমন হলে রুশ অনেক কষ্ট পাবে। এমন কষ্ট কি ও সহ্য করতে পারবে? ওযে ছোট থেকেই আব্বুর নেওটা। আব্বু হলে ওর আর কিছু লাগে না। একবার ভাবোতো আব্বুর যদি এখন একটা ছেলে হয় তখন আব্বু কি আর রুশকে এইভাবে সময় দিবে?”

“না দিবে না, দিতে চাইলেও পারবে না। এটাই স্বাভাবিক, এটাই জীবন। এগুলোকে যত সহজে মেনে নিতে পারবি ততটাই ভালো থাকবি। রুশের জন্য তুই আছিস, আমি আছি, হিমেল আছে। সবাই মিলে চেষ্টা করব ওর অপূর্ণতাকে আদর ভালেবাসা দিয়ে ভরে দিতে। জীবন থেমে থাকে না। এই যে রেশমা চলে গেছে তাতে কি কারো জীবন থেমে আছে? সাময়িক কিছু অসুবিধা শুধু সৃষ্টি হয়েছে, এইটুকুই। এটাই জীবন এটাই বাস্তবতা। লিখনের বৌ মরেছে ও বিয়ে করে বৌ নিয়ে পূর্ণ করেছে ওর জীবন। তোর দাদিও সেইম। তোদের মা নেই তাই হয়ত সে জায়গারায় নানিকে এনে দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কিছুতো থামিয়ে রাখেননি আল্লাহ । রেখেছেন কি?”

“আমরা আমার আব্বুর পাশে আমার মা ছাড়া আর কাউকে চিন্তা করতে পারি না। আমাদের আব্বুকে আমরা ছাড়া আর কেউ আব্বু ডাকবে তা ভাবতে পারি না। এরজন্য যদি কেউ আমাকে স্বার্থপর বলে বলুক। আমি এতটা উদার না। আমি আমার জিনিস শুধু আমারই হবে তাই চাই।”

“এই ঝামেলা হওয়ার পর লিখন চেয়েছিলো ডিভোর্স দিবে। আমি মানা করেছি। আমার মেয়েটার সাথে অন্যায় হয়েছে, অন্য কোন মেয়ের সাথেও হোক তা আমি চাই না। যে মেয়েটার সাথে লিখনের বিয়ে হয়েছে সে এখন লিখনের স্ত্রী। তার পূর্ণ হক আছে লিখনের সাথে সুখে থাকার। তার হককে নষ্ট করার অধিকার কারো নাই। তোরও নাই। একটা সময় তুই বিয়ে করবি, রুশ নিজের জগতে ব্যস্ত হবে তখন লিখন একা হয়ে পড়বে। সেই সময়টাতে ওর সঙ্গী দরকার হবে। তখন যদি ওর সঙ্গীর কথা ভাবি তবে এখন কেনো নয়। এখন হওয়ায় ও ওর মা’কে নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকছে এটাতো সত্য। তবে কেন আমরা বাঁধা দিব?
লিখন থাক ওর জীবন নিয়ে হাসিখুশি। এতে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। আমরা যা হারিয়েছি তা হারিয়েছিই। তা আর ফিরে পাবো না। এখন যা আছে তার মধ্যেই নিজেদেরকে ভালো রাখার চেষ্টা করব। ভালো রাখার মালিক আল্লাহ। নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম প্রতিদান কারি। পরের মেয়ের সুখ নষ্ট হোক, হক নষ্ট হোক তা যখন চাইলাম না তখন নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার মেয়ের সুখ, হকও ঠিক রাখবেন। সেই বিশ্বাস আমার আছে। সব কিছু ভালো ভালো চিন্তা কর। শুধু নাই নাই ভাবিস না। কি আছে তা খুঁজে দেখ। যা আছে তার যত্ন কর।”

“আব্বু মরে গেলে কি আমাদের জীবন এমন হতো?”

“মায়েরা হচ্ছে ঘরের স্তম্ভ। বাবারা ছাঁদ। ছাঁদ সরে গেলে স্তম্ভ তার উপরেই ঘরটাকে দাঁড় করিয়ে রাখে। ঘরটা উড়ে যায় না। কিন্তু স্তম্ভ ভেঙে গেলে ছাদ আর কোনো কাজেই লাগে নারে লাবু।”

“নানি রুশকে যে আজ আমি মারলাম…..”

“হুমম, তুই বড় বেশি ডিপ্রেশনে আছিস।হিমুকে বলব তোকে নিয়ে কোনো কাউন্সিলরের সাথে কথা বলার জন্য। ”
“মানে?”
“হুমম ওতো এমনই কিছু বলল।”
“কে তোমার হিমু? ও কি আমাকে অসুস্থ ভাবে?”
“উঁহু , ও না আমি। আমি তোর চোখেমুখে মাঝে মাঝে এতটা বিষাদ দেখি যে আমি ভয় পাই।”
“জানো নানি, আম্মু ছিলো আমার শক্তির আদার, আমার খুশির খনি, ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাসের স্তম্ভ। আম্মুর এমন করে চলে যাওয়াটা আমি মন থেকে মানতে পারি না। আমার শুধু মনে হয় আম্মু মরে নাই আম্মুকে হত্যা করা হয়েছে। প্রথমে আম্মুর হাসিখুশি জীবনটাকে, তারপর বিশ্বাসকে, তারপর ভালোবাসাকে তারপর……”
“চুপ কর, আর বলিস না। এসব ভুলে যা। এসব বলে কি তুই আমাকেও খুনি বানাতে চাস? আমরা যে সবাই ওর আসামি ছিলাম। আয়নায় দাঁড়াতে পারি না। নিজের চেহারা নিজে চোখই যেনো আমার বড় শত্রু। তাই এখন চোখ বুজে মনকে বলি, রেশমা তুই তোর মা’কে ক্ষমা করে দিস। আমার আকাশে একদিন একটা চাঁদ হয়ে এসেছিল ও, যে কি না অসময়েই মেঘে ঢেকে গেছে। এই মেঘ ঘন কালো মেঘ। এই আকাশে বাতাস নেই তাই এই মেঘ স্থির, চারপাশ সব বরফ শীতল হয়ে আছে। তাইতো আমি তোদের মাঝে শুধু সূর্য খুঁজে ফিরি। যদি তোদের মাঝে একটু আলোর দেখা পাই, যদি একটু উত্তাপ পাই। হয়তো খুঁজতে খুঁজতে একদিন আমিও মেয়ের মতো বরফ শীতল হয়ে যাবো কোন মেঘের আড়ালে ডুবে। হয়তো তখন রেশমা আমাকে কাছে টেনে নিবে। আমাকে ক্ষমা করবে।”
“প্লিজ নানি এবার তুমি থামো। আর কিছু বলো না। আমি আর কখনওই এসব কথা বলবো না। তুমি অন্তত আমাদের পাশে থাকো। তুমি অন্তত চলে যাওয়ার কথা বলো না।”
“অন্তিম আলে যাওয়াটা কারউ হাতে নাইরে। ডাক আসলেই যেতে হবে। তাই চাই না আমাকে দিয়ে কোন খারাপ কাজ হোক। সব ডিসিশন আবেগ দিয়ে নিতে পারি না, বিবেক বাঁধা দেয়।”

“তুমি তাই করো যা তোমার বিবেক বলে। আমি আর কোনো কথা বলবো না। এখন থেকে তোমার সব কথা মেনে চলব। তুমি যা বলবে তাই মেনে নিব।”

“তবে এখন থেকে শুরু কর। পারবি? লিখনের সাথে স্বাভাবিক আচরন করতে পারবি? রুশকে সরি বলবি৷ লিখনকেও বলবি। হুট করেই মাথা গরম করবি না। যা তোর তার হেফাজত করবি কিন্তু অন্যের জিনিসে হাত দিবি না। ”

“না দিবো না।”
“কোনো একদিন যদি শুনিস লিখনের বাচ্চা হবে তখন কোনো সিনক্রিয়েট করবি না। ওটা ওর বৌয়ের অধিকার এটা মনে করে নিজে সংযত থাকবি।”
“হুমম থাকব। থাকতে হবে।” বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
“ঠিকই বলেছো এসব ভেবে মনটাকে ভারি করাটা বোকামি। এখন মনটাকে অনেক হালকা লাগছে।”

“জীবন একটাই জীবনকে সহজ কর।”
“ও কে ডার্লিং লাইফটা ভেরি ইজি।” বলে হা হা হা করে হাসতে লাগল।

রাতে হিমেলের কল আসল লাবন্যের মোবাইলে। লাবন্য রিসিভ করে চিৎকার করে উঠল
“এই তুমি নানিকে কি বলছো? হ্যে আমাকে কোন কাউন্সিলের কাছে নিতে চাইছে?”
“হুমম নিতে চাইছি, যাতে যে কোনো বিষয়কে নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করতে পারোছ।”
“আমি ইতিবাচকই চিন্তা করি। তোমার মতো না।”
“হুমম, আমার মতো না। আমার মতো ঝামেলায় পড়ে দেখ তখন বুঝবি কেমন অবস্থায় আছি।”
“কেন আবার নতুন কি হল?”
“ছোট আপুর ফ্যামেলিতে খুব ঝামেলা হচ্ছে। যৌথ পরিবারের ঝামেলা লাগলে সব যৌথ ভাবেই লাগে। ছোট আপু মনে হয় খুব একটা ভালো নাই। আপুর ননাস ননদরা ওখানে যাওয়ার পর থেকেই নাকি ঝামেলা শুরু হইছে। আম্মুকে দেখলাম খুব কাঁদতেছে। বাসায় খুব থমথমে আবহাওয়া বিরাজ করছে।”
“ইন্না লিল্লাহি ! একি অশান্তি আবার শুরু হল ছোটাপুর সাথে, আল্লাহ রহম কর। তুমি এখন আমার সাথে কথা না বলে যাও খালামনিকে স্বান্তনা দাও। খালামনিকে কাঁদতে মানা কর।” কথাটা বলে কলটা কেটে দিল লাবন্য।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here