মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ৪৪)

0
379

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ৪৪)
সায়লা সুলতানা লাকী।

নানিকে খালার কাছে রেখে লাবণ্য হুটহাট বাসায় চলে আসে। লিখন রুশকে স্কুলে দিয়ে অফিসে চলে যায়। তখন লাবন্যই রুশকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে আসে। নিজে গোসল করে ফ্রেশ হয় রুশের সাথে বসে খাওয়া দাওয়া করে। ওকে ঘুম পাড়ায়। ওর টিচার পড়িয়ে যাওয়ার পর ও আবার খালার বাসায় ফিরে আসে। এভাবে বেশ কয়েকদিন যাবৎ চলছে। খালামনিকে এভাবে একা রেখে বাসায় চলে যেতে বিবেক বাঁধা দেয় ওর।

এমনই একদিন বারোটার দিকে খালার বাসা থেকে বের হবে ঠিক তখনই নাকে এসে আঘাত হানলো গরুর গোস্ত ভুনার ঘ্রান। কালক্ষেপণ না করেই দৌড়ে ঢুকল কিচেনে।
“খালা আজ কি বাসায় গরুর গোস্ত রান্না হচ্ছে নাকি? কার জন্য? কে খাবে?”
“এত প্রশ্ন করেন আফনে ওরে আল্লাহ! ভাবি ঠিকই কয়, আফনে একটা বাঁচাল।”
“তোমাকে যে প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দাও। তুমি এত কথা বলছো কেন?”
“আফনেগো খাওন দরকার, আফনেরা খাইবেন। মেহমানগো এত প্রশ্ন করনের কি আছে?”
“কি আশ্চর্য, তুমিতো মানুষ বেশি সুবিধার না, প্রচন্ড বদ মহিলা। জিজ্ঞেস করছি বাসায় অসুস্থ রোগী আছেন আর তুমি তার জন্য মানা এমন খাবার রান্না করছো তাই, আর তুমি কি না যা ইচ্ছে তাই ব্যবহার করছো বমার সাথে ?”
“আফনে কেডা যে হেরে আমি এত জবাব দিমু? আমারে বড়ফায় যা কয় আমি তাই করি। আমি বদ হমু ক্যা, আফনেই বদ। এল্লাইগ্যাইতো আফনেরে ভাবি, বড়ফা কেউ দেখতে পারে না। নিজে বদ আর আফনে আমারে কন বদ?”

“মর্জিনা? ” বেশ শক্ত গলায় ডাক দিলেন নাজমুল সাহেব। তিনি ডাইনিংএ বসে নিউজ পেপার পড়ছিলেন। কিচেনের কথাগুলো চুপচাপ শুনছিলেন। এক পর্যায়ে আর সহ্য হচ্ছিলো না তাই বেশ বিরক্ত হয়েই ডাকলেন খুব জোরে।

“জে ভাই আইতাছি।” জবাব দিয়েই লাবন্যকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে ডাইনিংএ এসে দাঁড়ালো বুয়া।

“তুই ব্যাগ গুছিয়ে নে,দুপুরের বাসেই বাড়ি চলে যাবি। আর কত টাকা হয়েছে তার হিসাবটা দে।আমি ক্যাশ দিয়ে দিচ্ছি। আর ফিরতে হবে না। আমি জমিরকে বলে অন্য কাউকে আনিয়ে নিব।”

“ও আল্লাহ! ভাই এইডা কি কন ভাইজান ? আমি কি কইছিনি আমি বাড়ি যামু, আর কাম করুম না?”

“তোর মতো লোক আমার বাসায় রাখব না। তুই এতক্ষণ কি করছিলি রান্না ঘরে? আমি সবই শুনছি। মনে হয় না এরপর আর তোকে এখানে রাখা যায় বলে।”
“ভাই আমি দুষের কি করছি? হেয় রান্ধন ঘরে আইয়া আমারে জেরা করন লাগছে…”
“হুমম ওতো করবেই, ও ছাড়া আর কে আছে যে তোকে জেরা করবে?”
“ভাইজান বুঝি নাই।”
“না বোঝারতো কিছু নাই। লাবন্যের কথা মতো যখন চলার ক্ষমতা নাই তখন তুই আর এ বাসায় থাকছিস না। চলে যা গ্রামে।”
“ভাই আমি এত বছর….”
“আহ মর্জিনা! কথা বাড়াচ্ছিস কেন? এখন থেকে এই বাসার সব কাজ লাবন্যের কথামতো হবে। ওর জন্য আলাদা লোক আনাবো, যে ওর সব কথা মেনে চলবে। তুই যা।”
“বড়ফা…..”
“যা বড়ফার বাসাতেই যা।”
“ভাবিসাব এই সাদা সাদা তরকারি খাইতে পারে না, তাই কইছিলো একটু গোস্ত ভুইন্যা দিতে।” বলতে বলতে কেঁদে ফেলল মর্জিনা।
“এই কথাটা তখন সুন্দর মতো লাবন্যকে কেন বললি না?”
“তারে….তো তারেতো…”
“তোতলাচ্ছিস কেন? তুই যা তোর কাজ শেষ কর। তুইতো আর একদিনে তৈরি হোস নাই এইভাবে? তোকে আর বলে কি হবে? লাবন্যের কথামতো না চলতে পারলে গুছিয়েনে সব কিছু। এখন থেকে এই বাসা ওর কথাতেই চলবে। এবং আমিও চলব ওর কথা মতো। এখন ভেবে দেখ তুই কি করবি। ”
নাজমুল সাহেব যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন লাবন্য স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। উনি এতটা সাপোর্ট দিবেন তা ও কল্পনাও করতে পারে নাই। ওকে এভাবে দাঁড়ানো দেখে নাজমুল সাহেব বললেন
“কি হলো মামনি তুমি এখনও দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও জলদি যাও রৌশন ওখানে অপেক্ষা করবে।”
“যাচ্ছি খালুজি, মানে গরুর গোস্ত….. ”
বুঝেছি মা, আমি দেখবো, চিন্তা করো না , আমি গোস্ত খেতে দিবো না। রেহেনার জন্য যা খাবার দেওয়ার কথা বলা আছে তাই দেওয়া হবে।”

“জি জি খালুজি, আসলে… ”
“আহা লাবন্য তুমি শুধু শুধু সময় নষ্ট করছো, রৌশনের ছুটি হয়ে গেছো যাওতো তুমি, যাও।”
“আচ্ছা আসি আমি।” বলে আর দাঁড়ালো না বের হয়ে এল বাসা থেকে ।

পাশের রুমে বসে রেহেনা বেগম কাঁদছেন কোন কথা বলতে পারছেন না। হঠাৎ তার মায়ের কথায় নড়েচড়ে বসলেন।
“তোর বুয়ার মুখটাতো তুইই খুলিয়েছিস, তাই না? সারাক্ষণ বাসায় বসে রেশমাকে গালাগালি করা ছিল তোর অভ্যাস, আর ঠিক যখনই টের পেলি তোর ছেলে লাবুকে ভালোবাসে তখনই পড়েছিস ওকে ছোট বানানোর চেষ্টায়। মা মেয়ে মিলে লাবুকে আজে বাজে কথা বলতি সবসময় , এসব শুনে শুনেইতো বুয়ার মুখ এতটা পাস হয়েছে। কতটুকু দুঃসাহস হলে পরে সে লাবুর সাথে এমন আচরন করে। আমিতো একটুও বুয়ার দোষ দিবো না এই ঘটনায় । এসবই তোদের কারনে হয়েছে। দোষটা তোদের। ”
“ঠিক বলছেন আম্মা সব দোষ আমারই। আমিই অন্ধ বনে ছিলাম। সব দেখলেও না দেখার মতো করে পড়েছিলাম। নিজের অপারগতাকে ঢাকতে গিয়ে অনেক ভুলই করেছি জীবনে। নিজের ভুলকে ঢেকে রাখতে পারিনি।কিন্তু নির্বোধ আমি ভাবতাম ঢেকে ফেলেছি। অথচ যার বোঝার সে ঠিকই বুঝে আমাকে শাস্তি দিতো। আর আমি সেই শাস্তিকেও অন্যের কারনে পাচ্ছি ভেবে ভেবে মনে জিদ পোষতাম। পুরো জীবনটাই ভুলে ভুলে কাটায় গেলাম। আমার ভুলে আমিই ডুবে গেছি অন্ধকারে ।”

“এখনও সময় আছো নিজেকে শুধরেনে। ছেলের জীবনটা নিয়ে আর খেলিস না। এতে শুধু তোর কষ্টই বাড়বে। সুখ বড় অমূল্য রতন। সুখের নাগাল সবাই পায় না। তুই পেয়েও হারাইস না।”

“আম্মা আমার সুমুর অনেক বিপদ, ওর উপর অনেক অত্যাচার করা হচ্ছে। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ”

“কাঁদিস না। এগুলো থেকে শিখেনে। নিজের মেয়েদের উপর যা হচ্ছে পরের মেয়েকে নিজের ছেলের জন্য এনে এমন অত্যাচারিত হতে দিবি না। তুই পরের মেয়েকে সুখ দিলে আল্লাহই তোর মেয়ের কপালে সুখ দিবে।”

“আমি কি বলছি আমি পরের মেয়েকে কষ্ট দিবো?”

“তুইতো তোর ছেলের ভালোই দেখতে চাচ্ছিস না! সুমুর শাশুড়ি কেন তার ছেলের ভালো চাইবে? ছেলে বৌ বাচ্চা নিয়ে ভালো আছে সুখে আছে তা কেন সহ্য করবে? তোর ছেলে তোর কাছে কপাল কুটে মরছে একটা জিনিস চেয়ে তুইকি ওর কথা শুনছিস?”

“সুমুর জামাইতো সুমুর হয়ে একটা কথাও বলছে না ওর মা’কে !”
“ওও হয়তো হিমুর মতো মাতৃভক্তি বেশি, তাই হয়ত কিছু বলে মাকে কষ্ট দিতে পারছে না।”

“কিন্তু হিমুতো আমাকে কষ্ট দিচ্ছে, আমি যা চাই তা ও মানছে না।”

“সেটা মানা সম্ভব না বলেই হয়তো মানছে না।”

“তাহলে আর মাতৃভক্তি কোথায় দেখেন?”
“এই যে ছেলে কামাই রোজগার করছে কিন্তু নিজের ইচ্ছেতে বিয়েটা করে ফেলছে না। মায়ের পারমিশনের আশায় বসে আছে তাতে কি কিছুই দেখিস না? এতটা অন্ধ হয়ে আছিস? আবার নিজের মেয়ের কষ্ট দেখে কাঁদিস। পরের মেয়েকে আজেবাজে কথা বলে গায়েল করে তাকে কাঁদাতে কষ্ট লাগে না তোর?”

“আম্মা আমার সুমুকে ওরা দেশে পাঠিয়ে দিবে, জামাইয়ের সাথে থাকতে দিবে না বলেছে।”

“কাঁদিস না। সুমুর জামাই আমাকে কল দিবে রাতে, ওর সাথে কথা বলব তখন। দেখি ওর কি মন্তব্য।” বলে লাবন্যের নানি অযু করতে চলে গেলেন।

রুশকে নিয়ে বাসায় ফিরে লম্বা সময় নিয়ে গোসল করল লাবন্য। কি জন্য তা জানে না তবে সাওয়ার ছেড়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কাঁদল। কান্নাটা সুখের না দুখের তা নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করল না। গোসল সেরে এসে দেখে রুশ টেবিলে বসা এখনও খাবার শুরু করে নাই। বোনকে দেখেই বলল

“আপু, তুমি এতক্ষণে আসছো? আমিতো ভাবলাম তুমি আজ বাথ করতে গিয়ে বুঝি ঘুমিয়েই গিয়েছো!”

“হুমম, ঘুমই পাচ্ছিলো, কিন্তু চোখ বুঝতেই মনে হল কেউ একজন প্লেট সামনে নিয়ে বসে আছে তাই ছুটে বের হয়ে এলাম। বসে না থেকে খাওয়া শুরু করতে পারতি বোকা।”

“আপু প্লিজ এসব বলো না। আমি কখনও একা খেয়েছি? কেউ সাথে না থাকলে খেতে ইচ্ছে করে না। আগে কি সুন্দর করে আম্মু বসে থাকতো। ছোট মাছ হলেই খাওয়ায় দিতো। কত সময় ঘুমের ভাব ধরে বসে থাকতাম যাতে আম্মু খাওয়ায় দেয়। আম্মু…..”

“কি আজ বুঝি নিজের হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না? আয় আজ আমি খাওয়ায় দেই। আম্মু কি আর ফিরে আসবে এসব কথা বললে ? শুধু শুধু তার কথা ভেবে মনটা কেন খারাপ করিস? তার চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া কর যেনো আম্মু ওখানে ভালো থাকে, একটু আরামে থাকে। পৃথিবীতেতো আমরা আর আম্মুকে কেউ আরাম দেইনি।”

“না তোমাকে খাওয়াতে হবে না। আমি খেতে পারবো। নানুমনি কবে বাসায় আসবে? একা একা ভালো লাগে না।”

“আসবে খালামনির শরীরটা ভালো হলেই চলে আসবে।”
“তুমি ওই বাসায় কেন যাও? দেখো না খালামনি তোমাকে একটুও ভালোবাসে না। সারাক্ষণ বকাঝকা করে।”
“যাতে আর বকাঝকা না করে তার জন্য যাই।বলে একটু হাসল লাবন্য। ”
“হাসছো কেন? খালামনি অনেক পঁচা পঁচা কথা বলে তোমাকেও আম্মাকেও, আমরাতো একটুও ভালো লাগে না তাকে।”
“মানুষের যখন বিপদ আসে তখন তাকে হেল্প করতে হয়। সে কেমন, তার কি দোষ আছে, তখন সব ভুলে যেতে হয়। মানবতা বলে একটা শব্দ আছে রুশ ওটা শিখতে হবে তোর। ”

“দাদি ফুপুরাও যদি কখনও সমস্যাতে পড়ে তখনও কি আমরা ভুলে যাবো তারা যে আমাদের আব্বুকে আরেকটা বিয়ে করিয়েছে? তারা যে আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে?”

“আব্বু ছোট মানুষ না, বিয়েটা আব্বু নিজের ইচ্ছেতেই করেছে। সে না চাইলে কারউ ক্ষমতা ছিলো না তাকে জোর করে। বিয়ে নিয়ে অন্যকে দোষারোপ করিস না। দাদি ফুপুরা আমাদেরকে অনেকভাবে কষ্ট দিয়েছেন সত্য, কিন্তু তারাও যদি কখনও আমাদের সামনে কোন সমস্যায় পড়ে আর যদি আমাদের কোন হেল্প তাদের দরকার হয় তখন অবশ্যই করব। আমাদের আম্মুতো আমাদেরকে সেই রকম শিক্ষাই দিয়েছেন, তাই না?”

“আমি করব না। আমার কাছে মানবতা বলে কোনো শব্দ নাই। যারা আমার আম্মুকে মুছে দিয়েছে তাদের ছায়াটাও আমার কাছে অসহ্য লাগে। আগে আব্বুর পাশে ঘুমাতে যেতাম মনে হত আম্মু বুঝি পাশেই আছে। এখন আর এমনটা লাগে না।”

“এখন তুই বড় হয়েছিস, এখন আর আব্বুর পাশে শুঁতে যাবি কেন? এখন এসব ছাড়। নিজের কাজ নিজে করবি। সবাই কি সবসময় আব্বু আম্মুর গা ঘেষে থাকতে পারে না থাকে? যা তোর খাবার শেষ এখন ঘুমাতে যা। আমিও একটু ঘুমাবো।”

“মোটেও না। তুমি এখন হিমেল ভাইয়ার সাথে কথা বলবে।”
“মানে?”
“আমি শুনেছি প্রতিদিনই তুমি বিছানায় গিয়েই ভাইয়াকে কল দাও।”
“তুই কি লুকিয়ে লুকিয়ে আমার কথা শুনিস?”
“নাহ, ভালো লাগে না। তাই শুনি না।”
“ভালো লাগে না বুঝলি কীভাবে?”
“ওই একদিন শুনেছিলাম, এই আর কি?”
“রুশ? এক চড় দিয়ে চাপার দাঁত ফেলে দিব বদমাশ । দাঁড়া আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।” কথাটা শেষ হতেই রুশ দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। লাবন্য কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পরে নিজের রুমে এসে মোবাইলটা নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। এক রিং বাজতেই হিমেল কল রিসিভ করল

“হুমম বল,”
“বলবো না।”
“তাহলে কল দিলি কেন?”
“এমনি ঢং করতে।”
“ঢংতো দেখা যায় না। ভিডিও কল দে।”
“না দিবো না।”
“মেজাজ খারাপ কেন?”
“মেজাজ খারাপ না ভালো বুঝতেছি না।কেমন জানি একটা আউলা ঝাউলা অবস্থা আমার। নিজের কেমন লাগছে, নিজের এখন কেমন রিয়েক্ট করা উচিৎ, তাই বুঝতেছি না।”
“খুলে বল।”
হিমেলের কথাটা শুনে লাবন্য আজ হিমেলদের বাসার পুরো ঘটনাটায় বিস্তারিত বলল, সবটা শুনে হিমেল ছোট্ট করে বলল
“হুমম,”
“শুধু হুমম? খালুজির কথাগুলোকে মন থেকে সরাতে পারছি না। বারবার রিঅন হচ্ছে মনের বেতারে। এতটা সাপোর্ট পাবো এত অল্প সময়ে তা কল্পনাও করতে পারিনি। আমি কাঁদব না হাসব তাও ভুলে গেছি। আর তুমি শুধু বলছো হুমম!”
“দাঁড়া একটু হিসেব করে নেই। ক্যালকুলেটরও দরকারের সময় কাজ করে না ঠিকঠাক মতো।”
“কিসের মধ্যে কি বলো তুমি?”
“শোন বন্য আমি আগেই বলে রাখি, বেশি দামী জিনিস ডিমান্ড করবি না। গহনা জুয়েলারি নিয়ে ঝামেলা পাকাবি না৷ কসমেটিকস কম কম কিনবি আর কি কি খরচ আছেরে?”
“কি ব্যাপার তুমি কি পাগল হয়ে গেলা নাকি? কি আবোল তাবোল বলছো?”
“এইতো এতক্ষণে লাইনে আসছো সোনা! আমাকে পাগল বলে নিজে ইচ্ছে মতো বিয়ের শপিং করবা। বলবা বিয়ে কি বারবার হয় নাকি? আমার এটা লাগবে ওটা লাগবে এটা চাই ওটা চাই। আল্লাহয় জানে আব্বুর কথা শুনে না জানি কত কত স্বপ্ন এতক্ষণে দেখা শুরু করে দিয়েছে এই বন্য।”

“আশ্চর্য আমি আবার কখন কি স্বপ্ন দেখলাম?”
“তুই দেখিস নাই? ইন্না-লিল্লাহ। আমিতো অলরেডি বিসমিল্লাহ করে ফেলছি। জলদি জলদি তুইও শুরু কর। নাহলে পিছনে পড়ে যাবি। আমার স্বপ্ন বেশি হয়ে যাবে দেখে আবার কান্নাকাটি শুরু করিস না যেন।”
“তুমি একটা আজব মানুষ।”
“তা জানি না তবে আমি নিজেকে বর বেশে দিব্যি ফটোসেশান করতে দেখছি। ভালোই লাগছে আমাকে।মায়া আল্লাহ। ”
“একা একা? আমি নাই ওখানে?”
“কই দেখছি নাতো? মনে হয় এখনও পার্লারে। থাক তুই আরও কিছুক্ষন পার্লারেই থাক। ততক্ষণে আমি একটু ভাবে থাকি। তুই ঢুকলেতো সব ভাব তখন তোর হয়ে যাবে কেউ আর আমাকে পাত্তাই দিবে না।”
“হা হা হা, তুমি কীভাবে এসব পারো বলোতো?”
“সেই দিন আর বেশি দূরে না যেদিন আমার এই স্বপ্ন সত্য হবে।”
“আচ্ছা দেখা যাবে সেইদিন কবে আসবে ? তোমাকে বর বেশে আমিও দেখার অপেক্ষায় রইলাম। আচ্ছা এখন রাখি একটু পরেই বের হব।”
“ও কে বাই।রাতে দেখা হবে।” নলপ কলটা কেটে দিল হিমেল। লাবন্য মোবাইলটা বুকে চেপে চোখ বন্ধ করল। এক অজানা ভালো লাগায় ডুবে যেতে লাগল আপনমনে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here