প্রেমপ্রলয় পর্ব-১৩

0
496

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১৩

-‘ জিমি তুই গেলি গোমড়া মুখো হয়ে। কি সব বলে গেলি আমরা তো টেনশনে শেষ আর আসলি মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে হাসি মুখে ব্যাপার কি বলতো তোর আমাদের টেনশন না দিলে তোর হয় না? না-কি রে একটু বলবি আমারে’

জিমি সোফায় আরাম করে বসে বলল

-‘ রিলাক্স আপু তেমন কিছুই না অফিস থেকে বসের ফোন আসছিল মনে করলাম জবটা মনে হয় শেষ কিন্তু না ওখানে গিয়ে দেখি উল্টো কেস’

-‘মানে কি বলছিস এগুলো? কিছু বুঝতেছি না’

-‘ ঠিকি বলছি আগে অফিস সপ্তাহে ৩দিন ছিলো আর এখন ৭ দিন-ই অফিস’

-‘ মানে তোর প্রমোশন হয়েছে?’

জিমি উপর নিচ মাথা নাড়ালো। সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সামি কিছু বুঝতে না পেরে বলল

-‘ এই আপনি কি সব খু*ন টুন বলে গেলেন? আর আপনি কিসের জব করেন?’

মিলিও সামির সাথে তাল মিলিয়ে বলল

-‘ হ্যাঁ তো তুই কারে খু-ন করার কথা বলছিলি?’

-‘ আরে ম্যানেজারকে শালা এক নম্বরের মীর জাফর আমাকে দু-চোখে সহ্য করতে পারে না কাজে কোনো ভুল না হলে খুঁচিয়ে ভুল বের করা স্বাভাব তার সবসময় দৌড়ের ওপরে রাখে আজ মনে করছিলাম স্যাররে যদি উল্টো পাল্টা বলে আমার নামে কান ভাঙ্গায় তাইলে আজই মাথা ফা’টিয়ে দিয়ে আসবো দেখলাম কিছুই বলল না মুখ গম্ভীর করে একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল নির্ঘাত ঝাড়ি খাইছে স্যারের কাছে’

লিমন হাতে থাকা ফোন দেখিয়ে আফসোস সুরে বলল

-‘ আপু এই দেখ আমি আরো ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিলাম কখন থানা থেকে ফোন আসবে আর তোকে উদ্ধার করে নিয়ে আসবো কিন্তু না তা আর হলো না আহা কতদিনের শখ একটু থানা থেকে ঘুরে আসবো কিন্তু হলেও না’

লিমনের কথা শুনে মিলি ঠাস করে লিমনের মাথায় চ-ড় মে-রে বলল

-‘ সবকিছু নিয়ে ফাইজলামি তাই না? বিয়া*দপ।’

জাকি বাঁধা দিয়ে বলল

-‘ আহ তুমি আমার বাচ্চা শালাকে মারছো কেনো? তোমার তো দেখি সাহস কম না’

জিমি মজা নিয়ে বলল

-‘ মা’রের আর কি দেখলে ভাইয়া পিকচার তো আভি বাকি হে। যখন আপু তোমাকে ঝাঁটা নিয়ে তারা করবে আর তুমি দৌড়াবে আর আপু পিছনে ঝাঁটা নিয়ে দৌড়াবে আহা কত কিউট ই না হবে’

সামি বলে উঠলো

-‘হোয়াট এ সিন? আমি এখনই ইমাজিন করে ফেলছি’

জাকির কাশি উঠে গেলো। মিলি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। লিলি বেগম রেগে জিমির দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ জিমি কি হচ্ছে এগুলা? বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না?’

জাকি বলল

-‘ থাক আম্মু বকবেন না ও মজা করছে’

লিলি বেগম অনুনয় করে বলল

-‘ জিমির কথায় কিছু মনে করো না বাবা কখন যে কি বলে মাথার ঠিক নাই পাগল ও’

-‘ আরে আম্মু এতো হায়পার হওয়ার কিছু নাই আমি কিছু মনে করি না লিমন জিমি ওরা তো আমার ছোট ভাই-বোন ওদের কথায় কেনো কিছু মনে করবো বলুন তো?’

জিমি মুখ ফুলিয়ে রুমে চলে গেলো। লিলি সামির সামনে ‘পাগল’ কথাটা বলায় জিমির বড্ড পেস্টিজে লাগছে। সামি ও তখন জিমির দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছিলো জিমির গা জ্বলে যাচ্ছিল একে বারে।

জিমি ফ্রেশ হয়ে ধপাস করে বিছানায় উবুর হয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে চোখ খুলতেই সোজাসোজি টেবিলে থাকা বইগুলো চোখে পড়লো তারা যেনো জিমিকে কাছে ডাকছে। জিমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল

-‘ তোরা আমাকে ডাকছিস কেনো বলতো? নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে নাইলে তো তোরা এভাবে ডাকার পাত্র না সত্যি করে বলতো কি বলতে চাস?’

আবার ও কিছুক্ষণ চোখ ছোট ছোট করে বইগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো

-‘ এভাবে বার বার আমাকে ডেকে ডিস্টার্ব করলে তোদেরকে অন্য রুমে শিফট করে দিবো এই রুমে থাকতে চাইলে ডোন্ট ডিস্টার্ব মি গট ইট?’

জিমি নিজে নিজে বকবক করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো।

____________________________________________

মিলিরা চলে গেছে আজ কয়েক দিন হলো মাত্র। সবাই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বেশি মন খারাপ হলে ফোন করে কথা বলে নেয়।

বিকাল বেলা চারিদিকে আধার নেমে আসছে জিমি দাঁড়িয়ে আছে অন্যমনুষ্ক হয়ে। হুট করে আচমকা জিমির হাত টান দিলো কেউ। কারোর বুকে এসে বাড়ি খেলো। তার হৃৎস্পন্দন বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে জিমি পারফিউমটাও কেমন চেনা চেনা অতিচেনা তখনই শাঁই করে একটা ট্রাক পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। লোকটা জিমিকে জড়িয়ে ধরে আছে দেখতেই জিমির কি হলো কে জানে ঝট করে সরে দাঁড়ালো। চোখ তুলে সামির মুখ দর্শন হলো। জিমির হঠাৎ হার্ট বিট বেড়ে গেলো অস্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস পড়তে লাগলো। মনে মনে অংক কষে বলল এই নিয়ে দুই বার ওনার এতো কাছে ছিলাম তা-ও আর কোনো ছেলের এতো কাছে যায়নি। ভাবনার মাঝে সামির বাজ খাই গলায় আওয়াজ জিমির কানে বাড়ি খেলো। জিমি চমকে সামির দিকে তাকালো

-‘ এভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কি ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছিলেন না-কি মডেলিং করতেছিলেন? আমি না আসলে আপনি উড়ে যেতেন সে খেয়াল আছে আপনার? মনটা কি আদেও আপনার কাছে আছে না-কি বফের কাছে রেখে আসছেন’

জিমি কিছু বলল না ওর মাথায় চলছে অন্য কিছু। শুধু সামিকে ছোট করে বলল

-‘ থ্যাংকিউ’

সামি অবাক হলো ভ্রু কুচকে গেলো ধিরে ধিরে বিড়বিড় করে বলল ‘আজব এতো কথা বলাম তার বদলে শুধু থ্যাংকিউ? এই মেয়ে রে একটা কথা বললে ১০০ টা কথা শুনিয়ে দেয় আর এখন এতো কথা বললাম এতোক্ষণ তো আমার কান ঝালাপালা হয়ে যাওয়ার কথা’ কিন্তু সামি মুখে বলল

-‘ জিমি আপনি ঠিক আছেন? আপনাকে কেমন অদ্ভুত লাগছে’

জিমি মাথা নাড়িয়ে বলল

-‘ হ্যাঁ ঠিক আছি’

-‘ কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আপনি ঠিক নাই’

কথাটা শেষ হতে না হতেই জিমি রাস্তার মধ্যে পড়ে গেলো। সামি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে দেখলো জিমিকে ধরার সুযোগ টুকু পেলো না সোডিয়ামের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলো মাথা দিয়ে তরল পদার্থ বেরিয়ে রাস্তা ভিজে গেলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here