প্রেমপ্রলয় পর্ব-৪

0
556

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৪

সময়টা গোধূলিলগ্নে সূর্যের লাল আলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে কোনো নাম না জানা কিংবা নাম জানা কোনো দেশে। জিমি সেই কখন থেকে জ্যামে আটকে আছে সূর্য ডুবে গিয়ে সারাশহর অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। ধীরে ধীরে সারাশহরের রংবেরঙের কৃত্রিম আলোই ভরপুর হয়ে গেলো। জিমির মেজাজ ক্লান্তি, বিরক্তিতে টইটম্বুর। তার মধ্যে মরার ওপর খাড়া হয়ে জ্যামের মধ্যে দেখা হয়ে গেলো সামির সাথে। জিমির ঠিক পাশেই সামি গাড়িতে বসে জিমির দিকে তাকিয়ে আছে কি যেনো ভাবছে এতে জিমি আরও মহাবিরক্ত। পিছানোরও জায়গায় নায় সামনে যাওয়ার ও জায়গা নাই একেবারে গ্যারা কলে পড়ে ফেঁসে গেছে যেনো। সাথে আজ হার্ড বাইক স্ট্যাড করায় হাতে পায়ে ব্যথা পেয়ে বেশ ছিলেও গেছে। সামি বলে উঠলো

-‘এই মেয়ে, এই!’

জিমি কাঠ হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো যেনো কিছু শোনেই নি। কিন্তু সামি থামবার পাত্র নয় ‘এই মেয়ে’ বলে ডেকেই চলেছে। জিমির কানের পোকাগুলা যেনো নড়ে উঠলো আশেপাশের লোকজন ও বারবার তাকাছে। জিমি মহাবিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে বলল

-‘গরুর মতো চিৎকার করছেন কেনো? আর আমার না একটা নাম আছে সেটা জ ি কারে জি ম ি কারে মি জিমি, জিইইইমি বুঝছেন ভালো করে মাথায় ডুকিয়ে নিন’

-‘গাধার মতো কথা কথা বলবেন না বুঝতে পারছেন আর শুনুন আপনাকে না আমি অযথা ডাকি নাই’

-‘শুনুন আমি না আপনার মতো সবসময় ঝগড়া করা মুডে থাকি না তাই মোটেও আমি আপনার সাথে এখন ঝগড়া করতে চাইছি’

-‘আপনার দোষ আমার ওপরে চাপাছেন কেনো নিজে তো ঝগড়া করার জন্য রেডি থাকেন বাই দ্য ওয়ে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেসা করার জন্য আপনাকে ডাকছে ৩৬ লাইন বেশি না বুঝলে হয় না আপনা’

-‘দেখেন আপনি সবসময় বেশি বেশি করেন কবে জানি আমি আপনার মাথা ফা/টি/য়ে দি’

-‘হ্যাঁ সেই তো আপনি আমার মাথা ফা/টা/তে আসবেন আর আমিও মাথা এগিয়ে বলবো নেন নেন আমার মাথা ফা/টি/য়ে দিন বাহ্ কি দারুণ ব্যপার না?’

জিমি আর উত্তর দিলো মাথা ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছে যেনো। সামি আবার বলল

-‘শুনুন আপনি ঔ বাড়ির কে হন? আই মিন মিলি ভাবির কে হন?’

জিমির বুকে কেমন করে উঠলো। আর তখনি ভাগ্যক্রমে জ্যাম ছুটে গেলো। জিমিও আর না দাঁড়িয়ে উত্তর না দিয়ে চলে গেলো। সামি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে বলল ‘শুনতে পাই নি? না-কি উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না? না-কি পালিয়ে গেলো?’

সারাদিনের ক্লান্তি বাসায় ফিরতেই জিমি বিছানায় লুটিয়ে পড়লো। মিলি বকতে বকতে জিমিকে ফ্রেশ করতে পাঠালো। জিমি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো মিলি খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে। জিমি ঠাস করে শুয়ে পড়ে বলল

-‘খেতে ইচ্ছে করছে না আপু নিয়ে যা এসব’

-‘খেতে ইচ্ছে করছে না বললে তো শুনবো না খেতেই হবে’

-‘আপু যা না আমার খাওয়ার মুড নাই’

-‘কানে চ*ড় দিয়ে সোজা করে ফেলবো বি/য়া/দ/প ওঠ’

মিলি জিমিকে ঠেলে উঠে বসালো।

-‘সবসময় ভালোলাগে না আপু’

-‘আর ক’দিন পরে যখন চলে যাবো তখন আর এমন করবো না’

জিমি চুপ রইলো। মনটা তার ও খারাপ হয় যখন ভাবে তার প্রাণপ্রিয় আপুটা শশুর বাড়িতে চলে যাবে এমন করে আর তাকে কেউ শাসন করবে না মন চাইলে আর ঝগড়া, দেখা করতে পারবে না। জিমি আর কিছু না বলে খেতে লাগলো মিলির হাতে তা দেখে মিলি নিভৃতে হাসলো। খাওয়া শেষে জিমি শুয়ে পড়লো ক্লান্তিতে বড্ড ঘুম পাচ্ছিল তার কিন্তু ঘুম পরিরা এখন কোন অজানায় জেনো হারিয়ে গেলো জিমির বুকটা হটাৎ ভার ভার লাগছে বড্ড কান্না পাচ্ছে সচারাচর তার কান্না পাই না কিন্তু হঠাৎ এখন কেনো কান্না পাচ্ছে তার? মনে হচ্ছে কি যেনো হারিয়ে ফেলার ভয় দূরে চলে যাওয়ার ভয়। জিমি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শক্ত করার প্রয়াশ চালানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলো। জিমির চোখের কার্ণিশ বেয়ে অবাধ্য নোনাধরা বেয়ে পড়লো। মাথায় হাতের ছোঁয়া পেতে চোখ খুলে মিলিকে দেখে জড়িয়ে ধরে নিরবে কেঁদে ফেললো।

-‘এই পাগলি কাঁদছিস কেনো? আমি কি চলে গেছি না-কি?’

-‘যাসনি কিন্তু যাবি তো! আচ্ছা ওখানে গিয়ে আমাদেরকে ভুলে যাবি না তো আপু?’

-‘তোর কি এমনটাই মনে হয়?’

-‘উহুম কিন্তু মানুষ তো পরিবর্তনশীল!’

মিলি জিমি দু’জনই চুপ কারোর কোনো কথা নেই।কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে নিরবতা ভেংঙে জিমি বলল

-‘মিলিপু একটা কথা বলবো?’

মিলি আনমনেই বলল

-‘হুম’

-‘মারবি বা বকবি না তো?’

-‘এতো হেয়ালি না করে বলে ফ্যাল’

-‘আপু আসলে তোকে যারা আগে দেখতে আসছিল না তারা না অনেকেই ভালো ছিলো না আবার অনেকে আমার পছন্দ হয় নি তাই ভেঙে দিয়েছিলাম ‘

-‘জানি!’

জিমি অবাক হয়ে তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে উঠে বলল

-‘জানিস মানে? তাহলে আমাকে আগে বকিস নি কেনো?’

-‘আমি জানি মিস.জিমি আফরিন যেটা করে তার পিছনে নিশ্চয়ই ভালো কিছু লুকিয়ে আছে আর এও জানি সে আমার সবসময় ভালো চায়’

-‘আপু! এতো ভালো কেনো তুই? এতো ভালো কে হতে বলেছিল বলতো? তোর জাগায় অন্য কেউ থাকলে আমাকে এতক্ষণে মা/র্ডা/র করে দিতো’

জিমি কথাটা বলতে বলতে মিলির কোলে শুয়ে পড়লো মিলিও জিমির মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে হাসলো। জিমি আবার বলল

-‘আপু! জাকি ভাইয়ার ফুল ডিটেইলস আমি দেখছি ওনি অনেক ভালো সাথে ওনার পরিবারও তুই খুব সুখী হবি আপু দেখিস ওনার সাথে কথা বলছিস?’

মিলি লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে ‘হুম’ বলল।

-‘আপু দেখিস সব ঠিক মতো হবে। তোর বিয়েটা অনেক বড় ধুমধাম করে দিবো’

মিলি মলিন হেসে বলল

-‘টাকা পাবি কই?’

-‘সেটা নিয়ে তোদের ওতো ভাবতে হবে না ও ঠিক একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে’

-‘ধার করবি? কিভাবে শোধ করবি?’

-‘ওফ আপু এতো কেনো বকিস বলতো? বলাম না সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে আর শোন তুই আর টিউশানি করাতে যাবি না’

-‘মানে কি যাতা বলছিস বলতো? আমি টিউশনি না করালে তুই একা হিমশিম খেয়ে যাবি’

-‘বিয়ের পরে শশুড় বাড়ি গিয়েও কি তুই টিউশনি করিয়ে আমাদেরকে টিউশনির টাকা পাঠাবি?’

-‘দরকার পড়লে তাই কি করবো’

-‘শোন বেশি ফালতু বকবক করিস না যা বলছি সেটাই করবি তোর বিয়ে অনেক ধুমধাম করে দিবো দেখিস আমার খুব ইচ্ছে আপু। হয়ত উপস্থিত থাকতে পারবো না কিন্তু সব ঠিক ভাবেই হবে’

-‘উপস্থিত থাকবি না তো কই যাবি?’

জিমি চোখ বন্ধ করে বলল

-‘মাথা টিপে দে ভালো করে খুব ব্যথা করছে’

মিলি জিমির মাথা টিপে দিতে দিতে গভীর চিন্তায় পড়ে গেলো। কিভাবে কি হবে?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here