বিষন্ন_রাত💖,পর্বঃ__১২

0
468

#বিষন্ন_রাত💖,পর্বঃ__১২
#মেহেদি_হাসান_রিয়াদ💖

একটা বেল্ট হাতে নয়নতারা বেগম কে রুমে আসতে দেখে ভয়ে চুপসে গেলো বৃষ্টি। ভয়ে ঠান্ডা হয়ে আসছে সারা শরির। নয়নতারার দিকে করুন দৃষ্টিতে চেয়ে আছে বৃষ্টি। মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেদে দিবে সে।
নয়নতারা বেগম এগিয়ে এসে বলে উঠে,
– তোকে না নিষেদ করেছি বাড়ি থেকে বের হবিনা। তাহলে কোন সাহসে রাতের সাথে দেখা করতে গেলি তুই?
বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগেই নয়নতারা বেগম একটা চর বসিয়ে দেয় বৃষ্টির গালে। টাল সামলাতে না পেরে নিচে ছিটকে পরে বৃষ্টি।
নয়নতারা বেগম বেল্ট দিয়ে আঘাত করতে যাবে তখনই খেয়াল করে কেও পেছন থেকে বেল্ট টা ধরে ফেলেছে। রাগি চোখে পেছনে তাকিয়ে দেখে, রিদ ধরে রেখেছে বেল্ট টা।
– বেয়াদবি তো ভালোই শিখে গেলি রিদ।
– কি শুরু করলে তুমি মা? একটা মানুষের তো ধর্যেরও একটা সীমা আছে। আর আপু মুখ বুজে সব সহ্য করে নিচ্ছে তার অর্থ এই নয় তুমি সব সময় অত্যাচার করে যাবে তার উপর।
– বখে গেলে কিভাবে শ্বাসন করতে হয় সেটা তোর কাছ থেকে আমার শিখতে হবেনা রিদ।
– শ্বাসন? শ্বাসন শব্দটা যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তখন তা অত্যাচারে রুপ নেয়। আর মা হয়েছো বলে এভাবে সন্তানের উপর অত্যাচার করতে পারোনা তুমি।
– কথা মতো না চললে শুধু অত্যাচার নয়, কুচি কুচি করে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিবো।
– শুন মা তুমি মাথা ঠান্ডা করো। তুমি এখন কিছুতেই স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। তোমার একটা ইমার্জেন্সি মেন্টালি ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন। এভাবে চলতে থাকলে তুমি খুব শিগ্রই,,,,৷
আর কিছু বলার আগেই রিদের গালেও একটা চর বসিয়ে দেয় নয়নতারা বেগম।
বৃষ্টির বাবা সবে বাড়ি ফিয়েছে। উপরে চেচামেচির আওয়াজ শুনে ওখানে যায় সে। দেখে রিদের সাথে নয়নতারার তর্কাতর্কি লেগেই আছে আর বৃষ্টি ঘরের এক কোনে গুটিশুটি মেরে বসে বসে কাদছে।
– কি হচ্ছে এখানে?
রিদ বলে উঠে,
– দেখো বাবা, মা পাগল হয়ে গেছে। দিন দিন আপুকে বন্ধি ঘরে আটকে রেখে অত্যাচার করছে সে। দেখো বেল্ট নিয়ে আজও মারতে এসেছে, আমি বধা দিয়েছি বলে আমার সাথেও লেগেছে। একটা মানুষেকে কি দিনের পর দিন মানসিক চাপে রেখে আবার শারিরিক নির্যাতন করলে তার অবস্থাটা কি হবে?
বৃষ্টির বাবা রাগি চোখে তাকিয়ে আছে নয়নতারার দিকে।
– এসবের মানে কি? তোমার সব কথা মেনে নিই তার মানে এই নয় যে আমি তোমায় কিছু বলতে পারবোনা। ভুলে যেও না ও তোমার একার মেয়ে নয়।

রাগে গদ গদ করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো নয়নতারা বেগম। দৌড়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টি। হিচকে হিচকে কাদছে সে।
– কাদিসনা মা তোর কিছু হবেনা, আমি এসে গেছি দেখ।
– বাবা একটা সত্যি কথা বলবে?
– বল মা,,
– আমি কি তোমাদের আসল মেয়ে নাকি কোনো অনাথ আশ্রম থেকে নিয়ে এসেছো আমায়?
– তুই তো জানিসই তোর মা খু বেশিই রাগি। তাও কেনো তার কথার অবাধ্য হস বলতো?
– আমি বাচতে পারবোনা বাবা। রাতকে ছারা আমি অন্য কারো সাথে থাকতে পারবোনা।
– খবরদার ওই ছেলের নামও মুখে নিবিনা। ওসব গুন্ডা মাস্তানের হাতে আমি আমার মেয়েকে কিছুতেই তুলে দিবোমনা।
– ও খুব ভালো ছেলে বাবা। বিশ্বাস করো আমায়।
– নিজের চোখে যা দেখলাম তা তো আর মিথা নয়।
বলেই রুম থেকে হেটে বেড়িয়ে গেলো বৃষ্টির বাবা।
পেছন থেকে কাদতে কাদতে বলে উঠে বৃষ্টি,
– আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা। আচ্ছা বাবা আমি মরে গেলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?
,
,
খাবার টেবিলে বসে আছে রাত ও রুদ্র চৌধুরি। পুরু বাসায় এখন তাদের দুজনেরই বসবাস। বিষন্ন মনে বসে খাবার নারাচারা করছে রাত। রুদ্র চৌধুরি খেতে খেতে বলে উঠে,
– সব বুঝলাম, ওই মেয়েটা কি তোকে ভালোবাসে?
– হ্যা বাবা।
– তাহলে সব ছেরে চলে আসতে বল এই বাড়িতে। ওকে নিয়ে যদি তুই সুখি হস আমার কোনো আপত্তি নেই তাতে।
– ও আসবেনা বাবা। কারণ সম্পর্কটা ও সবার দোয়া নিয়েই শুরু করতে চায়। অভিশাপ নিয়ে ও কিছু করবেনা বাবা। ও যদি ওর পরিবারকে মানাতে পারে তবেই এই সম্পর্কের পুর্ণতা পাবে।
,
,
কেমন এলো মেলো হয়ে আছে সবার পথ চলা। আজ কয়েকদিন রাতের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই বৃষ্টির। মাঝে মাঝে রিদের ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতো সে। এখন তারও সুজুগ নেই সারাক্ষন রুমের আসেপাসে থাকে নয়নতারা বেগম। তার ধারনা, এভাবে থাকলে হয়তো রাতকে ভুলে যাবে বৃষ্টি।
আমরা জানি সত্যি কারের ভালোবাসাকে কখনো আলাদা করা যায় না। ভুলা যায়না কখনো। দুরুত্ব বেড়ে গেলেও মায়া থেকে যায় একে অপরের প্রতি।

শুভ্রতার খবর কানে আসতেই দৌড়ে হসপিটালে চলে যায় রিদ। দেখে দেখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে শুয়ে আছে শুভ্রতা।
গতকাল থেকে ছটপট করছে শুভ্রতা। মনে এক বড় শুন্যতা। শেষ বারের মতো যদি একবার রিদকে কাছে পেতো। একটিবার জদি দেখতে পারতো তাকে?

রিদকে দেখেই পিট পিট করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে শুভ্রতা। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরছে জন। যেই দুইটা মানুষ সারা জীবন একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞা করেছিলো আজ তারা নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠার আগেই হারিয়ে যাচ্ছে একে অপরের থেকে অনেক দুরে। এটাই কি ছিলো তাদের ভাগ্যের লিখন?
সবাইকে একটু বাইরে যেতে বলে সে।

রিদ বসে আছে শুভ্রতার পাশে।
– কেনো আমায় সত্যিটা বললেনা শুভ্রতা? কেনো মিথ্যা বলে এতোদিন দুরে ঠেলে রেখেছো আমায়? আমায় বললে কি আমি তোমায় ছেরে যাবো? প্রয়োজনে নিজের জীবনের বিনিময় হলেও ফিরিয়ে আনবো তোমায়। প্রয়োজনে দেশের বাইরে নিয়ে যাবো তামায়। কেনো এতোটা দিন আমায় দুরে রাখতে? আমায় দেখলে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতে। দিনের পর দিন তোমার বাসার নিচে দাড়িয়ে থাকতাম তোমায় দেখার জন্য। জদিও আমার কোনো ভুল ছিলোনা তবুও তোমার আশায় দাড়িয়ে থাকতাম একটিবার সরি বলার জন্য। যখনি তোমার কথা মনে হয় তখনি ইচ্ছে করতো তোমাকে একটিবার বুকে জড়িয়ে বলতে, “আমায় এমন শাস্তি দিওনা শুভ্রতা। আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার দুরুত্বের কষ্ট তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে আমায়। কেনো এমন করলে শুভ্রতা কেনো? এখন আমি চলে এসেছি শুভ্রতা, যেভাবেই হোক তোমাকে আমি সুস্থ করে তুলবো। যেখানে দরকার সেখানে নিয়ে যাবো তোমায়। আর কনোদিন মিথ্যা বলে দুরে ঠেলে দিওনা শুভ্রতা।
-“” তার আর প্রয়োজন নেই, ডাক্তার বললো আমরা অনেক বেশিই দেরি করে ফেলেছি। এখন যা হয় সব উপরওয়ালার ইচ্ছা। তুমি শুধু নিজের খেয়াল রেখো। কথা দাও আমায়, কোনো পাগলামু করবেনা। নিজেকে ঘুচিয়ে একদিন অনেক বড় হবে তুমি। আমি না হয় ওই দুর আকাশের তারা হয়েই তোমায় দেখে যাবো রিদ। যখনি আমার কথা মনে হবে, তখনই চোখ বন্ধ করে কিছুটা সময় স্থির থেকো। দেখবে আমি তোমার পাশে আছি। রাতে এক গুচ্ছ ফুল নিয়ে ছাদে এসে দাড়িও। আমি ওই দুর আকাশের তারা হয়েই নিরবতার ভাষায় কথা বলবো তোমার সাথে। কথা দাও আমায় নিজের খেয়াল রাখবে তুমি?
– এভাবে বলোনা শুভ্রতা। কিচ্ছু হবেনা তোমার।
– তুমি বড্ড আগোছালো হয়ে গেছো রিদ। শরিরের, চুলের কিছুরই কোনো যত্ন নাও না তুমি। আমার অনেক ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন ছিলো তোমার এই বেখেয়ালিপনা গুলো নিজে ধরে ধরে ঘুচিয়ে দিতে। এখন সেই ছোট্ট ইচ্ছে গুলো তোমাকেই পুরণ করতে হবে। নিজের যত্ন নিবে। জীবনের প্রতি গুরুত্ব দিবে। দেখবে একদিন তুমি অনেক উচুতে পৌছে গেছো। Love you rid, love you so much And take care yourself.

শুভ্রতা মারা যাওয়ার পর থেকে কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে রিদ। সারাদিন একা একা বসে থাকে একটা অন্ধকার ঘরে। সেই ছোট বেলা থেকে রিলেশন এক তরফা ভালোবাসাকে হটাৎ করেই হারিয়ে সক্ড টা ভালোই পেয়েছে সে। অন্ধকার ঘরে বসে সিদারেটের ধোয়া উড়াতে ব্যাস্ত রিদ। ঘোয়ায় অন্ধকার হয়ে আছে রুমটা। হয়তো খুব বেশিদিন থাকবেনা এই বিষন্নতা। ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে সব।

এই কয়েকদিন বৃষ্টির সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই রাতের। আগে যোগাযোগের মাধ্যম ছিলো রিদ। এখন সেই রাস্তটাও বন্ধ। ওদিকে বৃষ্টির মা চাইছে যত তারাতারি সম্ভব বিয়েটা দিয়ে দিতে। কারণ বিয়েটা হয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

ইদানিং পাগলামি বেড়ে গেছে বৃষ্টির। এভাবে আর থাকা যাচ্ছেনা। রাতকে ছারা দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। এতোটা দিন কষ্ট করেও পরিবারকে মানাতে পারেনি সে। সামনে যাই পাচ্ছে তাই ভাঙচুর করছে বৃষ্টি। তার একটাই কথা প্রয়োজনে মরে যাবো তবুও রাতকে ছারা ওই সাজিদকে বিয়ে করবেনা সে।
তার মায়েরও কঠিন জেদ। প্রয়োজনে মেয়েকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিবে তবুও রাতের সাথে বিয়ে দিবেনা মেয়েকে।

বৃষ্টির বিয়ের কথা শুনে আর দুরে থাকতে পারছেনা রাত। ছুটে চলে এলো বৃষ্টির কাছে। রাস্তায় দাড়িয়ে আছে রাত। বারান্দায় দাড়িয়ে রাতের দিকে চেয়ে আছে বৃষ্টি। ইচ্ছে করছে পাখি হয়ে উড়াল দিয়ে চলে যেতে রাতের কাছে। কথা নেই শুধু চোখ দিয়ে পানি পরছে তার। রাতও ছল ছল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। আগের বৃষ্টি ও এখন কার বৃষ্টির মাঝে খুব তফাৎ খুজে পাচ্ছে সে। মুখে নেই কোনো হাসির রেখা। চেহারাটাও কেমন ভাঙা চোরা অবস্থার মতো পরে আছে। স্নিদ্ধ মৃশ্রণ চুল গুলোও কেমন উষ্কো খুষ্কো। প্রচুর কান্না পাচ্ছে রাতের। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই যে কাদতে অবস্থ নয়। এই জল অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে। তবুও আজ ধরে রাখতে পারছেনা কান্না। মনে হচ্ছে এই জল শুকায়নি মনের কোনো এক স্থানে জমা হয়ে ছিলো এতোদিন। আর আজ তা বেরিয়ে আসতে চাইছে।
বৃষ্টি খেয়াল করলো একটা গাড়ি এসে থামলো রাতের সামনে। আর সেখান থেকে কিছু ছেলে নেমে এসে ঘিরে ধরলো রাতকে। ওদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রাতের। এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে বৃষ্টির দিকে।
হটাৎ একটা ছেলে এসে লাথি দিলো রাতের পিঠে। রাত কিছুটা নরে উঠলেও এখনো তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। ছেলেগুলো সবাই মিলে মারতে শুরু করলো রাতকে। বারান্দায় দাড়িয়ে চিৎকার দিয়ে দিয়ে কাদছে বৃষ্টি। বারান্দায় বৃষ্টির পাশে এসে দাড়ায় সাজিদ। রাতের করুন অবস্থা দেখে হাসছে সে। ছেলেগুলো এখনো মারছে রাতকে। এবার বৃষ্টি সহ্য করতে না পেরে সাজিদের পা জরিয়ে হাওমাও করে কাদছে।
– প্লিজ ওকে আর মারবেন না। আমি কথা দিচ্ছি, আপনি যা বলবেন তাই করবো আমি। তবুও রাতকে ছেরে দিন। আপনার পায়ে ধরছি আমি রাতকে আর মারবেন না। যা বলবেন তাই করবো আমি। প্রয়োজনে রাতের সাথে আর কোনো যোগাযোগ কাখবোনা। তবুও ওকে ছেরে দিন।
সাজিদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে রাতের দিকে চেয়ে চেয়ে হাসছে সাজিদ। সাজিদের মুখে কোনো উত্তর না পেয়ে রাতের কাছে যাওয়ার জন্য দৌর দিলো বৃষ্টি। পেছন থেকে হাতটা খপ করে ধরে ফেললো সাজিদ। আজ আর রাতের কাছে যেতে দিবেনা বৃষ্টিকে।

To be continue……………

~~ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here