বিষন্ন_রাত💖,পর্বঃ__১৩_ও__১৪

0
366

#বিষন্ন_রাত💖,পর্বঃ__১৩_ও__১৪
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

সাজিদ ইশারা করতেই রাতকে ছেরে গাড়ি নিয়ে চলে যায় ছেলেগুলো। বারান্দায় বৃষ্টিকে ফেলেই ভিতরে চলে যায় সাজিদ। রাতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কেদে যাচ্ছে বৃষ্টি।
হাটুতে ভর করে উঠে দাড়ায় রাত। নাক দিয়ে মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরছে তার। রাত এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। এই বন্ধি খাচায় কতোইনা কষ্ট পাচ্ছে বৃষ্টি।
বৃষ্টি হাত দুটি জোড় করে চেয়ে আছে রাতের দিকে।
– আমায় ক্ষমা করে দিও রাত। হয়তো সুখটা আমাদের কপালে নেই। হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাকে তোমার পাজরের হার দিয়ে বানায়নি। আমাদের কপালটাই পোড়া মনে হয়। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিও তুমি। ভাগ্য বরই নিষ্ঠুর। ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হবে একই রাস্তায়। দুরুত্ব বেড়ে গেলেও তুমি থেকেই যাবে আমার মনের মনিকোটায়। তুমি চলে যায়ও রাত। প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে আজ আমি ব্যর্থ। প্লিজ তুমি চলে যাও। আমি নাহয় তোমার জীবনে বেঈমান হয়েই থাকে যাবো।
মুখ চেপে কাদতে কাদতে ভিতরে চলে গেলো বৃষ্টি। কিছুক্ষন ঠায় দাড়িয়ে থেকে চলে যাচ্ছে রাতও। আজ দুজনের চোখ দিয়েই গড়িয়ে পরছে অঝরে জল। আজ থেকে আলাদা হয়ে গেছে দুজনের পথচলা। আজ থেকে দুজনই ভিন্ন পথের পথযাত্রি। এক পা একপা করে চলে যাচ্ছে রাত। প্রতিটা পা যেনো আজ গড়ে তুলছে দুরুত্বের বিশাল ব্যাবধান।
বিছানায় পরে বালিশে মুখ গুজে অঝরে কাদছে বৃষ্টি। বুক ফাটা কান্না যাকে বলে। মনে আসছে হাজারও অভিজোগ। কেনো তার সাথে এমন হতে হলো। কতোজনের ভালোবাসাই তো পূর্ণতা পায়। অন্যদের মতো যদি আজ আমাদের দুজনের ভালোবাসাও পূর্ণতা পেতো তাহলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো?

বাসার দরজা অব্দি পৌছাতেই ছুটে আছে রুদ্র চৌধুরি। রাতের গায়ের বিভিন্ন অংশে রক্ত দেখে অস্থির হয়ে পরে সে।
– কি হয়েছে বাবা তোর? এই অবস্থা কেনো তোর?
– না বাবা তেমন কিছুনা। রাস্তা দিয়ে আসতেই একটা ছোট এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।
– এটা ছোট?
অস্থির হয়ে রাতকে নিয়ে গাড়িতে বসায় রুদ্র চৌধুরি।
হসপিটালে চলে যায় রাতকে নিয়ে।

কাটা স্থান গুলো ড্রসিং করে বেধে দিচ্ছে ডাক্তার। ছেলের এমন অবস্থা সহ্য করার ক্ষমতা নেই রুদ্রর। কেবিনের বাইরে পায়চারি করছে সে। হটাৎ চোখ পরলো একটু দুরে বসে থাকা একটা মহিলার উপর। এতো বছর পর সেই চেনা মুখটি দেখে আজও ঘৃনা হচ্ছে তার। কিন্তু আগের মতো নেই মানুষটা। সুন্দর লোহাকেও যেমন সামান্য মরিচিকায় নষ্ট করে দেয় তেমনি নষ্ট হয়ে গেছে সামিয়া। দেখে মনে হচ্ছে অনেক বছর কোনো জত্ন পায়নি সে।
রুদ্রকে দেখেই তার কাছে আসে সামিয়া। ঘৃনার ছাপ এখনো রুদ্রের মুখে স্পশ্ট।
নিরবতা ভেঙে সামিয়া বলে উঠে,
– কেমন আছো?
কোনো উত্তর দিলোনা রুদ্র। সামিয়া আবার বলে উঠে,
– বিচ্ছেদের এতোটা বছর পেরিয়ে গেলো, আজও কি রাগ করে আছে আমার উপর?
এবার সামিয়ার দিকে তাকায় রুদ্র,
– রাগ? কোনটা রাগ আর কোনটা ঘৃনা আশা করি আপনাকে বুঝাতে হবেনা।
– আপনি করে বলছো যে?
– তুমি করে বলতেও একটা মায়ার দরকার হয়। যা অনেক আগেই ঘৃনায় পরিনত হয়ে গেছে। যাই হোক কেনো এসেছেন এখানে?
এবার কেদে দিলো সামিয়া,
– বাবাকে দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু সেই ভয়গ্যটাও আমার কপালে নেই। সেইদিন তোমার সাথে ডিবোর্স হওয়ার পর বাড়িতে যেতে নিষেধ করে দিয়েছিলো বাবা। তিনি বলেছে তার কোনো মেয়ে নেই। মা ও বলে দিয়েছিলো আমাকে পেটে ধরে অনেক বড় পাপ করে ফেলেছে সে। সকলের কাছ থেকে দুরে দুরে ছিলাম এতোটা বছর। বাবার অসুস্থতার কথা শুনে ছুটে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম এতো বছর পেরিয়ে গেছে তাদের অভিমানের পাল্লাটাও কিছুটা হালকা হয়েছে। কিন্তু না, বাবা তার অভিমানকেই বড় করে রেখেছে। একটিবার দেখতে দেওয়ার অনুমতি দিলেন না আমাকে। মা তো চোখ ঢেকে দুর দুর করে বের করে দিয়েছে আমাকে। যেনো আমি ওখানে থাকলেও ওদের পাপ হয়ে যাবে।
এতোটুকু বলেই চোখ মুছে নেয় সামিয়া। আবার বলে উঠে,
– তুমি কেনো এসেছো?
– আমার ছেলেটার একটা ছোট এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তাই।
– কি হয়েছে রাতের? আমি একদিবার দেখা করতে চাই ওর সাথে কতোটা বছর দেখিনা তাকে।
– ওর সাথে দেখা করার সম্মান টুকু রেখেছো তুমি? লজ্জাটা তোমার এতোটাই হ্রাস পেয়েছিলো যে, এতটুকু ছিলো আমার ছেলেটা। তার কথাও একবার ভাবলেনা তুমি। আর দেখা করিয়ে রাতের পুরুনো ক্ষতটা জাগিয়ে তুলতে চাইনা আমি।
রূদ্র চৌধুরি উঠে যাবে তখনি তার হাতটা ধরে ফেলে সামিয়া।
– আমাকে কি আর একটিবার সুজুগ দেওয়া যায়না? কথা দিচ্ছি কাজের লোক হয়ে পরে থাকবো ওই বাড়িতে।
এক ঝাটকায় হাতটা ছারিয়ে নেয় রুদ্র চৌধুরি।
– যে ভুল করে আবার নিজের ভুলটা শিকার করে তাকেও ক্ষমা করা যায়। কিন্তু বিশ্বাস ঘাতককে নয়।

রাতের কাছে চলে যায় রুদ্র চৌধুরি। রাতেরও সব কমপ্লিট। বাসায় নিয়ে যাচ্ছে রাতকে, ডাক্তার বলেছে দু,এক দিন রেস্টে থাকতে হবে রাতকে। বের হতে সামিয়ার উল্টো পথে হাটা ধরলো তারা। তাড় সামিয়াকে খেয়াল করেনি রাত। পেছন থেকে ছল ছল দৃষ্টিতে নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে সামিয়া। জীবনে একটা ভুলের জন্য সব কিছু থেকে বঞ্চিত সে। নাহলে তার সেই ছেলে, স্বামি, শাশুড়ি, চার জনের ছোট্ট সুখি সংসারটা আজও বেচে থাকতো। সব হারিয়ে এভাবে কাদতে হতোনা আজ।
,
,
সেদিনের পর আর যোগাযোগ হয়নি রাত ও বৃষ্টির। যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও দুই দিকের দুইটি প্রান আজও গভির রাতে ঘুম হিন ছটপট করতে থাকে।

বেশ কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেছে। নিজেকে মনিয়ে নিতেও মোটামুটি শিখে গেছে বৃষ্টি। কিন্তু তীব্র বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে রাতকে। এই বিষন্নতা যেনো পূর্বের চাইতেও ভয়ঙ্কর।
ওদিকে শুব্রতাকে হারানোর সক্ডটা থেকে আজও বেড়িয়ে আসতে পারেনি রাত। অন্ধকার রুম আর সিগারেটের ধোয়া এগুলো যেনো তার নিত্য দিনের সঙ্গি।

রাত তখন তিনটা,
ফোনটা বেজে উঠলো রাতের। ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে রইলো রাত। আজ কতো দিন পর এই নাম্বারটা থেকে ফোন এলো। ফোনটা রিসিভ করে কানে তুললো রাত,
– হ্যালো!
– কেমন আছো?
– ভালো তুমি?
– ভালো।
আবার কিছুক্ষন নিরবতা। প্রচুর কান্না পাচ্ছে বৃষ্টির। তবুও কান্না চাপা রাখলো সে। নিরবতা ভেঙে রাত বলে উঠে,
– হটাৎ এতোদিন পর কি মনে করে?
কান্না চেপে রাখতে না পেরে এবার কেদেই দিলো বৃষ্টি। কতটুকু দুরুত্ব বেরে গেছে তাদের মাঝে। কারণে অকারনে ফোন দেওয়া মানুষ গুলোও আজ ফোন দেওয়ার আগে কোনো কারণ খুজে বের করতে হয়। বৃষ্টির চাপা কান্নার শব্দে যেনো ফেটে যাচ্ছে রাতের বুকের ভেতরটা। বৃষ্টি কান্ন থামিয়ে চোখ মুছে বলে উঠে,
– কালকে দেখা করতে পারবে?
– কখন?
– বিকেলে।
– হুম পারবো।

রাতেরও বৃষ্টির সাথে দেখা করাটা জরুরি। বৃষ্টির দেওয়া সবকিছু ফিরিয়ে দিতে হবে তাকে। বিষেশ করে গিটার টা।
সারা রাত আর ঘুম হয়নি রাতের।
,
,
ফুর ফুরে বিকেলটায় সামনা সামনি দাড়িয়ে আছে দুজন। উত্তর দিক থেকে হালকা শিতল হাওয়া বইছে।
– এটাই হয়তো আমাদের শেষ দেখা রাত। এরপর দেখা হওয়ার ভাগ্যটা হবে কিনা জানিনা। তবে আমার জীবনে স্পেশাল সময়গুলো তুমিই আমাকে উপহার দিয়েছিলে। একটা অনুরুধ কর রাত?
– একটা নয় আজ তুমি হাজারটা অনুরুধ করো। অবাধ্য অনুরুধ গুলোও আজ আমি বাধা দিবোনা।
– তোমায় শেষ বারের মতো একবার জড়িয়ে ধরি।
হাতটা বাড়িয়ে দিলো রাত, ছল ছল দৃষ্টিতে রাতের বুকে ঝাপিয়ে পরলো বৃষ্টি।

আজ থেকে রাত বৃষ্টির সকল সম্পর্কের ইতি ঘটে গেলো। হয়তো বৃষ্টি পা বাড়াবে এক নতুন জীবনের দিকে আর রাত পা বাড়াবে তীব্র একাকিত্বের পথে।
এভাবেই কেটে গেলো আরো কয়েকদিন। ওদিকে সাজিদ ও বৃষ্টির বিয়ের বাকি মাত্র দুই দিন। তীব্র যন্ত্রনা এসে হানা দিলো বৃষ্টির বুকে। মনে হচ্ছে জীবনের সব থেকে বড় অংশটা সে হারিয়ে ফেলছে এই দু,দিন পর। আচ্ছা রাতের জীবনে যখন অন্য কেও জড়িয়ে পরবে তখন তাকেও কি এভাবে ভালোবাসবে সে? নাকি আরো বেশি বাসবে? নাকি আরও কম? না আর সহ্য হচ্ছেনা বৃষ্টির।
এদিক ওদিক হাটাহাটি করে সব আবার নতুন করে দেখছে রিদ। গত এক মাস যেই ঝড়টা বয়ে গেছে তার উপর দিয়ে তাতে দিন দিন অবনতির দিকে হেলে পরছে তার জীবন। হয়তো সক্ডটা একটু বেশিই পেয়েছে সে। ছেলের এমন অবস্থা দেখে টেনশনে পরে গেলো রিদের বাবা। এই এক মাসে অনেক চেষ্টাও করেছে তার জন্য। তেমন কোনো সমস্যা খুজে পায়নি। ওই একটু চিন্তা চিন্তায় এমনটা হয়েছে। ঠিক হয়ে যাবে একসময়। তবে সব সময় চিন্তা মুক্ত রাখতে হবে তাকে।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো একটা দিন। বিয়ের আর মাত্র একদিন বাকি। রাতের ফোনে ভেসে উঠলো একটা অচেনা নাম্বার। রিসিভ করলো না রাত। আবার বেজে উঠতেই রিসিভ করে রাত। বিরক্তি মাখা গলায় বলে উঠে,
– হ্যালো কে?
ওপাশ থেকে কেও নরম সুরে বলে উঠে,
– আমি।
মুহুর্তেই যেনো একটা ছোট্ট ঝাকুনি দিয়ে উঠলো রাতের শরিরে। একটা শিতল হাওয়া অনুভব করলো বুকের ভিতর। যেই কন্ঠস্বর শুনে নিজেকে সামলে রাখতে পারবেনা সে। সেই প্রিয়জনের নাম্বার, আইডি সব ব্লক লিস্টে রেখে দিয়েছে দিনের পর দিন। কারণ সেই কন্ঠস্বর সে শুনতে চায়না চাইলেই হয়তো ঠিক রাখতে পারবেনা নিজেকে। কিন্তু আজ অন্য একটা নাম্বার দিয়েই,,,,,,। ছেরেই যখন গেলো তাহলে আবার মাঝে মাঝে ক্ষত জাগিয়ে দেওয়ার দরকার কি?
নিরবতার অবশন ঘটিয়ে বৃষ্টি বলে উঠে,
– কাল আমার বিয়ে।
মুহুর্তেই যেনো দমটা আটকে গেলো রাতে। বৃষ্টির সাথে এখন কোনো সম্পর্ক না থাকলেও কষ্ট হচ্ছে আজ খুব বেশিই কষ্ট হচ্ছে। নিজেকে শান্ত রেখে রাত বলে উঠে,
– ওয়াও কনগ্রেচুলেশন্স। শুভ কামনা রইলো তোমার নতুন জীবনের জন্য।
মুহুর্তেই ওপাশ থেকে কান্নায় ভেঙে পরে বৃষ্টি। তার জীবনটাই যেনো এক কান্নাময় হয়ে গেলো।
ফোনটা কেটে দিলো রাত। কারণ বৃষ্টি কাদছে, আর সেই কান্না সহ্য করার ক্ষমতা যে তার নেই।

এদিকে এই সময়টা রাতের অবস্থা দেখে বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে তার বাবা রুদ্র চৌধুরি। রুদ্র চৌধুরির ধারণা নতুন কেও এলেই তার জীবনটা ঘুচিয়ে দিতে পারবে। যেমনটা বৃষ্টি দিয়েছিলো। কিন্তু রাত এতে সম্পুর্ন বিরোধিতা করে। তার একটাই কথা, সে আর কারো জীবনের খেলনা হতে চায়না।
,
,
আজ বৃষ্টির বিয়ে। খুব বড় করে হচ্ছেনা। শুধু বৃষ্টির ফ্যামিলি আর সাজিদের ফ্যামিলি। সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলেই তখন বড় করে অনুষ্ঠান করবে। এখন শুধু বিয়েটা হলেই হলো। রিদকেও দেখতে পাচ্ছেনা কেও। হয়তো এই বিয়েতে ঘোর বিপত্তি তারও। আর সেও এখন মন মানসিকতায় কিছুটা দুর্বল।
বিয়ের প্রায় সব রেডি কাজি সাহেবও চলে এসেছে।
এই মুহুর্তে বৃষ্টি অনুভব করতে পারছে যে সে প্যামিলির কথা ভাবতে গিয়ে কতো বড় ভুল ডিসিশনটা নিয়ে ফেলেছে। বার বার শ্বাস আটকে যাচ্ছে তার। মনে হচ্ছে এক্ষুনি জ্ঞান হারাবে সে।

হটাৎ করে উপর থেকে চিৎকার দিয়ে উঠলো কেও একজন। দৌড়ে উপরে চলে গেলো বৃষ্টির বাবা ও মা। তার পেছন পেছন গেলো বাকি সবাই।
গিয়ে দেখে ফ্লোড়ে পরে আছে রিদ। বাম হাতটা কাটা তার। ধিরে ধিরে রক্তে ভেসে যাচ্ছে ফ্লোড়টা। রিদের বাবা ছেলের এই অবস্থা দেখে অজ্ঞান হয়ে পরে। রিদের মা হলো শক্ত মনের মানুষ। নিজেকে শক্ত রেখে সব সামলে যাচ্ছে সে। এতে চরম বিরক্ত বোধ করছে সাজিদ। যতই সে তারাতারি সব শেষ করতে চায় তখনই একটা না একটা ঝামেলা লেগে থাকে। তাদের নিয়ে হসপিটালে দৌড়াদুরি করতে থাকে বাকিরা। সেই দিনের মতো বন্ধ হয়ে যায় বিয়েটা।
,
,
প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে রিদের। তাই ২ব্যগ রক্ত দিতে হয়েছে তাকে। হাতে মেইন শিরা কাটেনি দেখে কোনো রকম বেচে যায় সেদিন।
কেটে গেলো কয়েকদিন। রিদ মোটামুটি সুস্থের দিকে। তার বাবা বসে আছে তার মাথার পাশটায়।
,- এমন কেনো করলি বাবা? তোরাইতো আমার সব, তোরা এভাবে ছেরে যেতে চাইলে আমি কি নিয়ে বাচবো বাবা।
রিদ বাবার হাতটা ধরে বলে উঠে,
– বাবা, আমার মনে যতটা কষ্ট জমা হয়ে আছে। তার চেয়ে দ্বিগুন কষ্ট তিলে তিলে শেষমকরে দিচ্ছে আপুর জীবনটা। বাবা হয়ে কি মেয়ের সুখটা চাও না তুমি?
,
,
সব ঠিকঠাক হতে দেখতে দেখতে আরো একটি মাস কেটে গেলো। এই একটি মাস সবচেয়ে বিরক্তিকর ভাবে কাটলো সাজিদের। কারণ তার অনেকটা ময় নষ্ট হয়েছে এই রিদের কারণে। সাজিদ এবার উঠে পরে লেগেছে বিয়েটা এবার করেই ছারবে সে।

এদিকে সেই একমাস আগে রাতের সাথে কথা হয়েছে বৃষ্টির। এর পর আর যোগাযোগ হয়নি। শুধু সেদিন ফোন করে বলেছিলো বিয়েটা ভেঙে গেছে তার।
অনেক কিছু বুঝে নিয়েছে এই কয়েকটা দিনে।
দু,দি পরই আবার বিয়ের তারিখ ফেললো সাজিদ। এবার আর থাকতে পারছেনা বৃষ্টি। প্রয়োজনে মরে যাবে তবুও ওই সাজিদকে বিয়ে করবেনা সে।

ফোনটা হাতে নিয়ে রাতকে ফোন দিলো সে।
– হ্যালো রাত।
– আবারও কনগ্রেচুলেশন্স।
– কেনো?
– সাজিদের সাথে আবার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে এটা বলতেই ফোন দিয়েছো নিশ্চই?
– আমি চলে আসবো।
– কোথায়?
– তোমার কাছে।
– অজথা দেখা করে মায়া বাড়িয়ে কি লাভ বলো।
– আমি একবারে সব ছেরে চলে আসবো তোমার কাছে। আর থাকতে পারছিনা আমি। প্লিজ তুমি নিয়ে যাও আমায় এখান থেকে। দুরে কোথাও হারিয়ে যাও আমাকে নিয়ে।
কিছুক্ষন নিশ্চুপ থাকলো রাত তার পর বলে উঠলো,
– তুমি কি ভেবে চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছো?
– হুম।
– সব ছারতে পারবে?
– হুম।
– আমায় আবার খেলনা বানিয়ে ছেরে দিবেনা তো?
– নাহ্।
– এখন বেড়িয়ে আসতে পারবে?
– নাহ্, রাতি একটা চিরেকুট লিখে রেখে যাবো মায়ের জন্য। আর এখন বেরোনোটা রিস্ক হয়ে যাবে।
– রেডি থেকো আমি নিয়ে আসবো তোমায়।
,
,
রাতে একটা চিরেকুট লিখে বেরিয়ে পরে বৃষ্টি। অনেক কিছু ছেরেছিলো এই ফ্যামিলির জন্য। কিন্তু সেই ফ্যামিলি তার সুখের জন্য বিন্দু মাত্র সেক্রিফাইজ করেনি।
মুখটা ঢেকে বাড়ির পেছন দিক দিয়ে বেড়িয়ে রাতের কাছে চলে যায় বৃষ্টি। দৌড়ে গিয়ে রাতকে জড়িয়ে ধরে থাকে কিছুক্ষন।
– চলো জড়িয়ে ধরার জন্য একটি জীবন সময় পাবে। এখন যত তারাতারি চলে যাবো ততোই ভালো। আর রাফিদেরকে বলে এসেছি তারা কাজি অফিসের সামনে আছে। এখন তারাতারি গাড়িতে উঠো।
– হুম চলো।

গাড়ি চলছে নির্জন রাস্তায়। বৃষ্টি তাকিয়ে আছে রাতের মুখের দিকে। মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে তার। আজ কতোদিন পর রাতকে পেতে যাচ্ছে সে।
হটাৎ গাড়ি ব্রেক করায় একটু সামনে ঝুকে পরে বৃষ্টি।
মাথাটা তুলে তাকিয়ে দেখে সামনে সাজিদ দাড়িয়ে আছে কয়েকটা ছেলে নিয়ে। আজ খুব হিংস্র দেখাচ্ছে তাকে।

বৃষ্টিকে টেনে গাড়িতে তুলে নিলো সাজিদ। রাতের জন্য তার বুক ফাটা আত্নচিৎকার।
বৃষ্টিকে নিয়ে সোজা বাড়ি পিরে এলো সাজিদ। রিদ ও তার বাবা মা সোফায় বসে আছে। সাজিদ সব খুলে বলতেই বৃষ্টির মা এসে একটা চর মারলো বৃষ্টির গালে। সাজিদ টানতে টানতে রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্দ করে দিলো বৃষ্টিকে। ওপাস থেকে দরজায় বার বার আওয়াজ করছে বৃষ্টি। সেটার পরোয়া না করে দরজা বাইরে থেকে দরজা আটকে দিলো সে।
তখনই ফোন এলো সাজিদের নাম্বারে। ওপাস থেকে কি বললো তা ঠিক বুঝতে পারলোনা বৃষ্টি। তবে সাজিদের রিপ্লাইটা ভালোই বুঝতে পেরেছে বৃষ্টি।
“” গুড, এবার লাশটা পাশের জঙ্গলটাতে ফেলে রেখে আয়।

কথাটা শুনা মাত্রই যেনো ভো ভো করে ঘুরতে লাগলো বৃষ্টির মাথাটা। রাত না থাকলে তার বাচাটাও অর্থহিন। একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে বৃষ্টি বলে উঠে,
“” চিন্তা করোনা রাত, কথা দিয়েছিলাম আর একা করে দিবোনা তোমাকে। আমি আমার কথা রাখবো। আমি আসছি তোমার কাছে রাত। একসাথে বাচতে না পারি একসাথে এই প্রকান্ড ধরনির মায়া তো ত্যাগ করতে পারবো।

এবার দরজাটা ভেতর থেকেই বন্ধ করে দেয় বৃষ্টি।

To be continue……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here