#বিষন্ন_রাত💖,পর্বঃ__১০__১১
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖
১০
বাড়ি ফিরতেই বৃষ্টির হাত ধরে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যাচ্ছে সাজিদ। হাত ছারাতে মুচরা মুচরি করছে বৃষ্টি। তাতেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সাজিদের। টেনে হিছরে রুমে নিয়ে গেলো বৃষ্টিকে। হিছকে টানে রুমে রুমে নিয়ে যাওয়ায় টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোড়ে ছিটকে পরে সে। বৃষ্টির চুলের মুঠি ধরে নিজের মুখ বরাবর ধরে সাজিদ। খুব শক্ত গলায় বলে উঠে,
– ছেলেটা কে হয় তোর?
রাগে ও ঘৃনায় বৃষ্টিও খুব শক্ত গলায় বলে দেয়,
– ও আমার ভালোবাসা।
কথাটা বলা মাত্রই সাজিদের একটা সজোরে থাপ্পরে আবার ফ্লোড়ে ছিটকে পরে বৃষ্টি।
মাথা তুলে শক্ত গলায় বলে উঠে বৃষ্টি,
– আপনাকে মামাতো ভাই বলে সম্মান করি তার অর্থ এই নয়, আপনি যা ইচ্ছা তাই করবেন আমাকে। আমার গায়ে হাত তোলার সাহস ও অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?
তখনি বৃষ্টির মা রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে,
– আমি দিয়েছি অধিকার।
মায়ের কথায় টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পরলো বৃষ্টির চোখ দিয়ে। যেই মানুষটাকে এতোদিন সে নিজের আশ্রয় ভাবতো, আর আজ সেই মানুষটার সামনে অন্য কেও আমার গায়ে হাত তুলছে আর সে বাহ্ বাহ্ দিয়ে যাচ্ছে। এটা কি আমার সে মা যে আমার একটু কষ্ট সহ্য করতে পারতো না?
নয়নতারা বেগম সজিদকে বলে উঠে,
– তুই একটু বাইরে যা আমি বুঝাচ্ছি ওকে।
সাজিদ বারান্দায় গিয়ে দাড়াতে নয়নতারা বেগম প্রশ্ন ছুরে দেয়,
– কি বললি, ছেলেটা তোর কি হয় আবার বল।
বৃষ্টি কাদু কাদু গলায় বলে উঠে,
– আমি ওকে ভালোবাসি মা। বিশ্বাস করো বমি বাচতে পারবোনা ওকে ছারা।
রাগে খটমট করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো নয়নতারা বেগম।
ওভাবেই ফ্লোড়ে পরে রইলো বৃষ্টি। পাশের রুমে গিয়ে আবার এক মিনিট পর ফিরে এলো নয়নতারা বেগম। এবার হাতে একটা বেল্ট। ভয়ে চুপসে যায় বৃষ্টি।
নয়নতারা সমনে এগিয়ে এসে বলে,
– বল ওকে ভালোবাসিস না তুই।
বৃষ্টির মুখে কোনো উত্তর না পেয়ে একের পর এক বেল্টের আঘাত করে যাচ্ছে তার সারা গায়ে। মার খেতে খেতে ফ্লোড়ে লুটিয়ে পরলো বৃষ্টি। তবুও আমি রাতকে ভালোবাসিনা কথাটা মুখ দিয়ে বের হলোনা। দাতে দাত চেপে সহ্য করে নিচ্ছে সে। এক সময় সেই সহ্যের বাদটাও ভেঙে গেলো তার। মনে হচ্ছে বেল্টের প্রতিটা আঘাত তার শরিরে ঢুকে যাচ্ছে।
মায়ের পা জড়িয়ে হাউ মাউ করে কেদে দিলো বৃষ্টি,
– আমি আর সহ্য করতে পারছিনা ম.. মা। খুব ক..কষ্ট হচ্ছে আমার।
সাজিদ বারান্দা থেকে এসে গাল দুটি চেপে ধরে বৃষ্টির। বৃষ্টি কাদু কাদু ভাবে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাজিদের দিকে। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে আজ। বাবাও নেই বাড়িতে। বাবা থাকলে হয়তো আজ আমার সাথে এসব করার সুজুগ দিতোনা কাওকেই। বাবা তুমি কোথায় তারাতারি বাড়ি চলে আসো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আজ। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।
রাগি চোখে বলে উঠে সাজিদ,
– আজ এই কষ্টের সাথে মুছে দিবি নিজের জীবন থেকে রাতের নামটা। ভুলে যাবি রাতকে। সরে যাবি রাতের থেকে অনেক দুরে। তা না হলে সরি বলার জন্যও রাতকে তুই খুজে পাবিনা। শুধু তোর মন থেকে নয় তোর দৃষ্টির আড়াল হয়ে যাবে চিরতরে।
বুকটা কেপে উঠে বৃষ্টির। সাজিদের পা ধরে বলে উঠে,
– প্লিজ রাতকে কিছু করবেন না। আপনার পায়ে ধরছি আমি। আমি রাতের থেকে অনেক দুরে সরে যাবো। তাও রাতকে কিছু করবেন না আপনি।
গাল টেনে একটা হাসি দেয় সাজিদ।
– গুড ডিসিশন। কথাটা যেনো মাথায় থাকে।
বলেই হন হন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো সাজিদ। ফ্লোড়ে শুয়ে শুয়ে কান্না করছে বৃষ্টি। উঠে বসার শক্তিটুকু পাচ্ছেনা সে।
,
,
বাইক নিয়ে বাড়ি ফিরার পথে রিদ খেয়াল করলো সামির গার্লফ্রন্ড লামিয়া তার থেকে কিছুটা দুরে একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আছে। রিদের বিশ্বাসই হচ্ছেনা এটা কি সেই লামিয়া, যে সামিকে ভুল ভাল বুঝিয়ে তার সামির পুরু বিশ্বাসটাই অর্জন করে নিয়েছে?
পকেট থেকে ফোনটা বের করলো রিদ। লামিয়া তার আর সামির থেকে এক ব্যাচ জুনিয়র। সামির গার্লফ্রন্ড হওয়ায় রিদের সাথে ভালোই পরিচয় লামিয়ার।
লামিয়াকে ফোন দিলো রিদ।
– হ্যালো, ভাইয়া।
– হ্যা লামিয়া কোথায় তুমি?
– ভাইয়া আমিতো বান্ধবিদের সাথে।
– কি করছো?
– এইতো ভাইয়া বাড়ি যাচ্ছি। কেনো ভাইয়া কোনো সমস্যা হয়েছে?
– নাহ্ এমনি।
– আচ্ছা।
– ওকে বাই, ইউ কেরি অন।
ফোন রাখতেই লামিয়ার পাশের ছেলেটা বলে উঠে,
– কে ও?
– ভাইয়া।
– কিন্তু তুমি তো বললে, তোমার নাকি কোনো ভাই নেই। তাহলে?
– কাজিন হয়, বাদ দাও।
– ওহ্।
হ্যালমেট পরে লামিয়াদের সামনে দিয়ে বাইক নিয়ে চলে গেলো রিদ। সেদিন সামিকে কিছু বললোনা রিদ। লামিয়ার ব্যাপারে ভালো করে খোজ খবর নিতে হবে আগে।
পরদিন দেখলো অন্য একটা ছেলের সাথে একটা আবাসিক হোটেল থেকে বের হচ্ছে লামিয়া।
সামি আর রিদ বসে আছে রাস্তার পাশে একটা গাছের নিচে। সামি উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,
– আরে ভাই বলনা কি বলবি?
– লামিয়াকে তুই কয়দিন ধরে চিনিস?
– তুই তো জানিসই দু,তিন মাস।
– লামিয়ার ব্যাপারে কতটুকু জানিস তুই?
– মানে?
– দেখ সামি আমি সোজা কথা সোজা ভাবেই বলছি, লামিয়াকে ভুলে যা তুই।
– দেখ রিদ ফাজলামি করিস না।
– আমি মোটেও ফাজলামি করছিনা সামি। লামিয়া কোনো সাধারন মেয়ে নয়। ওই মেয়ের স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে তোর কোনো ধরনাই নেই।
– দেখ রিদ, এমন কিছু বলিস না যাতে আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়। আর আমার পার্সনাল লাইফ নিয়ে কথা বলার অধিকারটা তোর নেই।
– দেখ সামি লামিয়ার ক্যারেক্টারে প্রব্লেম আছে। পরে কিন্তু পস্তাতে হবে তোকে।
– মুখ সামলে কথা বল রিদ।
– আমি তোর ভালোর জন্যই বলছি সামি। লামিয়াকে আমি দু,দিন আগে দেখলাম একটা ছেলেকে জরিয়ে রে আছে। আর গত কাল দেখলাম একটা ছেলেকে নিয়ে একটা আবাসিক হোটেল থেকে বেড়িয়ে আসছে। এসব বারোভাতারির পাল্লায় পরে লাইফ নষ্ট করার কোনো মানে হয় না সামি।
আর কোনো কথা বলার সুজুগ না দিয়ে সামি হুট করে একটা চর বসিয়ে দেয় রিদের গালে।
– মাইন্ড ইউর লেনগুয়েজ। তুই আমার বন্ধু তার অর্থ এই নয় লামিয়ার ব্যাপারে উল্টা পাল্টা যা তা বলবি আর আমি মুখ বুজে সহ্য করে নিবো। আর আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে তোকে না ভাবলেও চলবে।
রিদ ভাবতেও পারেনি উপকারের প্রতিদানটা এভাবে পেতে হবে তাকে। ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– ওহ্, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম লাইফটা তোর আর তা নিয়ে কথা বলার অধিকার আমার নেই। আমি সরি তোর কাছে। লামিয়া খুব ভালো মেয়ে আর তাকে নিয়ে সুখি হ এই দোয়াই করি সব সময়।
সেখানে বসে রইলো সামি। বাড়ির পথে রওনা দিলো রিদ।
,
,
সেদিন মারের পর হুট করে জ্বর উঠে বৃষ্টির। সারা শরিরের ব্যাথা ও জ্বরের কারনে এই তিন চার দিন রাতের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারেনি সে। ওদিকে পাগলের মতো বৃষ্টিকে খুজছে রাত। কয়দিন ধরে কলেজেও যায়নি। ফোনও বন্ধ পাচ্ছে। আর তার বান্ধবিরাও কিছু জানেনা। বৃষ্টির কাছেও আসতে পারছেনা রাত। আসতে চেয়েছিলো গাড়িটা পার্কিং করে বৃষ্টির বাড়ির পাশে দাড়াতেই হুট করে একটা গাড়ি এসে তার পাশ দিয়ে চলে যায়। ভাগ্গিস সরে গিয়েছিলো, তবুও হাতে লেগে যাওয়ায় একদিন হাসপাতালে ছিলো রাত। ব্যাপারটা একটা এক্সিডেন্ট ভেবে তেমন পাত্তা দিলোনা রাতও।
আজ জ্বর কিছুটা সেরে উঠেছে বৃষ্টির। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে বন্ধ হয়ে আছে বিছানা থেকে উঠে ফোনটা চার্জে লাগিয়ে দিলো সে। শরিরটা এখনো প্রচন্ড ব্যথা করছে। মারের দাগ গুলো স্পস্ট বসে আছে শরিরে। পিঠে বেশি আঘার লাগায় উপর হয়ে শুয়ে আছে সে যাতে পিঠে বেশি চাপ না পরে। রাতের সাথে কোনো যোগাযোগ না হওয়ার বুকের ভেতরটা কেমন ফাকা হয়ে আছে তার। মনে অজশ্র ভয় সাজিদ তার কোনো ক্ষতি করেনি তো আবার?
রুমে এসে বৃষ্টির পাশে বসে সাজিদ। সাজিদের দিকে তাকালোও না বৃষ্টি। সাজিদকে দেখলেই ব্যাথার পরিবর্তে শরিরটা ঘৃনায় জ্বলে যায়। সাজিদ ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– কেমন লাগছে এখন?
কোনো উত্তর দিলোনা বৃষ্টি। সাজিদ এবার কর্কশ গলায় বলে উঠে,
– কাল রাতের কাছে যাবি। শেষ বারের মতো দেখা করে আসবি তার সাথে। যা ছিলো সব শেষ করে দিবি তার সাথে। এটা তোর লাস্ট দেখা তার সাথে। কালই সব সম্পর্কের ইতি টানবি তুই। তা না হলে বুঝতেই পারছিস, আমি নিজেই ইতি টানতে বাধ্য হবো।
বলেই হন হন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো সাজিদ।
আবারও দু,চোখ ভিজে এল বৃষ্টির। ইচ্ছে করছে এখনি ছুটে যেতে রাতের কাছে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে রাতকে। খুন করে বলতে ইচ্ছে করছে,
” তুই আমার জীবনে সব। তোকে ছারা আমি শুন্য। তুই ই আমার বেচে থাকার অক্সিজেন। আর সেই অক্সিজেন না থাকলে আমার গোটা পৃথিবিটারও কোনো প্রয়োজন নেই। তোকে ছারা আমি বাচতে পারবোনা রাত। আমায় নিয়ে হারিয়ে যা কোনো এক অজানায়। যেখানে কেও খুজে পাবেনা আমাদের।
কিন্তু চাইলেও তা করতে পারছেনা সে। সে যে এখন এক বন্ধি খাচার পাখি।
শরিরের ব্যাথা এখনো কমেনি। আগে হালকা জ্বর হলেও মা কাছে বসে থাকতো আর এখন এতো মারের পরও তিন দিন কঠিন জ্বর তাও একবারের জন্য কাছে এসে প্রশ্ন করলোনা,
” মা তুই কিছু খাবি?
#পর্বঃ__১১
গাড়ি থেকে নামতেই রাতের সামনে ভেষে উঠে সেই চেনা মুখটা। যার কারণে তার জীবনকে ঘিরে ধরেছে এক কলঙ্কিত অধ্যায়। কিছুক্ষন স্থির হয়ে চেয়ে আছে তার সেই ছোট্ট কালের হোম টিচার আনিসের দিকে। রাতকে দেখে চিনতে পারলো আনিসও। সে ও তাকিয়ে আছে রাতের দিকে।
রাগ টগবগ করছে রাতের মাথায়। রাত রাস্তার মাঝে মারতে শুরু করলো আনিসকে। রাস্তায় ফেলে একের পর এক লাথি দিচ্ছে আনিসের গায়ে। তবুও যেনো রাগটা কিছুতেই থামছেবা তার। এদিক ওদিক তাকাতেই চোখে পরলো একটা দোকানের সামনে বিক্রি করার জন্য কিছু ক্রিকেট ব্যাট রাখা আছে। একটু হেটে গিয়ে ওখান থেকে একটা ব্যাট তুলে নিলো রাত। এতো বছরের সব রাগ আজ সে একদিনেই আনিসকে ফিরিয়ে দিবে। একের পর এক ব্যাটের আঘাতে রাস্তটা ভিজে যাচ্ছে আনিসের রক্তে। অনেক লোন ভির করেছে সেখানে। সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেকে যাচ্ছে। কেও বা আবার ফোন করেছে পুলিশকে।
কিছুক্ষনের মধ্যে ওখানে এসে হাজির হলো পুলিশ। ততোক্ষনে আনিস অজ্ঞান হয়ে গেছে। রক্তে সারা শরির ভিজে একাকার। রাতকে গাড়িতে করে নিয়ে চলে যাচ্ছে তারা।
একটু দুরে গাড়ি দার করিয়ে সব দেখে যাচ্ছে বৃষ্টির বাবা। পাশে ছিলো সাজিদও। একটা কাজে সাজিদকে নিয়ে বেরিয়েছে সে। সাজিদ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো,
– ওই ছেলেটাই হলো রাত। যার কথা আপনাকে বলেছিলাম।
বৃষ্টির বাবাও এবার কঠিন সিদ্ধান্তে পৌছে গেলো। আর যাই হোক এমন একটা সন্ত্রাসির হাতে নিজের মেয়েকে তুলে দেওয়া যায়না। গ্লাস উঠিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো সে ও।
রাতকে ছারিয়ে নিয়ে এলো রুদ্র চৌধুরি। মরতে মরতে কোনো রকম বেচে গেছে আনিস।
ওদিকে সাজিদ বৃষ্টিকে রাতের সাথে দেখা করতে না দিলেও তার বাবা এবার বরাবরই নিষেদ করে দিয়েছে রাতের সাথে যেনো কোনো ধরনের যোগাযোগ না রাখে বৃষ্টি। বৃষ্টির কলেজে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে তার বাবা। আরো কয়েকদিন বাসা থেকে বের হতে পারেনি বৃষ্টি। দম বন্ধ হয়ে আসছে বৃষ্টির। কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেনা রাতের সাথে। ফোনও নিয়ে নিয়েছে নয়নতারা বেগম। ওদিকে ছটপট করছে রাতও। নিজেকে মানাতে পারছেনা কোনো ভাবেই। বৃষ্টি হটাৎ করে যোগাযোগ বন্ধকরে দিলো কেনো তাও বুঝতে পারছেনা সে।
রাস্তায় হটাৎ রিদের সাথে দেখা হলো রাতের। কয়েকটা প্রশ্ন করার পরও কোনো উত্তর দিচ্ছেনা রিদ। চোখ দুটু লাল হয়ে আছে তার। দেখে মনে হচ্ছে একটু আগে প্রচুর কেদেছে সে।
কিছুক্ষন আগে,
রিদ ও শুভ্রতা বসে আছে একটা রেস্টুরেন্টে। শুভ্রতা বরাবরই রিদের মুখের উপর বলে দিলো,
– তোমার সাথে আমি আর সম্পর্ক রাখতে চাইনা রিদ।
– এই কয়েকদিন ধরে দেখছি তুমি আমায় ইগনোর করে চলছো। আর আজ এই কথা বলছো কেনো এমন করছো শুভ্রতা কি করেছি আমি। আমার দোষটা তো বলো প্লিজ।
– আমি একবারও বলছি তোমার কোনো দোষ আছে? আমার আর এই রিলেশনটা এগিয়ে নিতে ভালো লাগছেনা তাই ব্রেকআপ।
– তুমি বললেই তো আমি মেনে নেবোনা শুভ্রতা। আট টা বছর নিজেদের হাতে গড়া এই রিলেশন শীপ। বললেই তো সব কিছু শেষ হয়ে যায়না শুভ্রতা।
– আবার কোনো কিছু অসম্ভব ও না। নেক্সট টাইম তুমি আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবানা। উঠছি আমি।
রিদ হটাৎ শুভ্রতার হাতটা চেপে ধরে,
– আমি তোমায় কোথাও যেতে দিবোনা শুভ্রতা। জোর করে হলেও তোমায় রেখে দিবো আমি। তুমি চাইলেই চলে যেতে পারোনা আমায় ছেরে।
শুভ্রতা হাতটা ছারিয়ে একটা চর বসিয়ে দেয় রিদের গালে,
– এই তুমি ব্রেকআপ মানে বুঝনা? একটা সম্পর্ক ছিলো আমাদের আর তা এখন আর নেই। তুমি না বলতে তুমি আমায় ভালোবাসো? আমার জন্য সব করতে পারবে? তাহলে প্লিজ আজকের পর থেকে কোনো দিনও আমার সামনে আসবেনা।
হন হন করে বেরিয়ে গেলো শুভ্রতা। ছল ছল দৃষ্টি শুভ্রতার চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে রিদ। রিদ যেনো বিশ্বাসই করতে পারছেনা এটা তার সেই শুভ্রতা।
বাসায় এসে অনাবরত কেদে চলছে শুভ্রতা। হিচকে হিচকে কাদছে সে। সে চায়নি রিদকে কখনো কষ্ট দিতে। হটাৎ মুখ ধরে দৌড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো শুভ্রতা। হিচকে হিচকে কাদতে কাদতে কাশিস সাথে বেড়িয়ে এলো এক দলা রক্ত।
বাসায় ফিরার পথেই রাতের সাথে দেখা হয় রিদের। কিন্তু রিদের মুখে কোনো কথা নেই। শুধু চোখ দুটি লাল হয়ে আছে। চার পাশটা কেমন জানি ধোয়াসে ধোয়াসে লাগছে রিদের কাছে। মাথাটাও ঘুরছে, রাত কি বছে তাও বুঝতে পারেনি রিদ। রাত বুঝতেই পারলো রিদ কোথা থেকে এসেছে।
রাত পাশের দেকান থেকে একটা খাতা আর কলম নিয়ে। কি যেনো লিখলো সেটার মাঝে। রিদ খপ করে নিয়ে নিলো সেটা। মাতাল কন্ঠে বলে উঠে,
– এটা আপুকে দিতে হবে তাই তো? দিয়ে দিবো, সর সামনে থেকে আমি বাসায় যাবো।
রিদকে ধরে গেট অব্দি পৌছে দিলো রাত।
ঢুলতে ঢুলতে বাড়ি ঢুকলো রিদ। ভিতরে ঢুকতেই সাজিদ এগিয়ে এলো তার কাছে। রিদের মাথায় একটা কথাই ঘুরছে,
“”এই লোকটা আজও আমিকে কষ্ট দিতে এসেছে।
সাজিদ এগিয়ে এসে বললো, কি হয়েছে তোর? এসব কি করলি তুই। ফুফা আর ফুফি দেখলে কি করবে জানিস?
রিদ সাজিদের গলা ধরে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,
– এই সালা, তোর এখানে কি রে? আমি কি করবো না করবো তোকে বলতে হবে? সর সামনে থেকে। আপুকে আজও কষ্ট দিতে আসছিস না? তোর কপালে শনি আছে বলে দিলাম। লাশ ফেলে দিবো তোর।
সাজিদ ভালোই বুঝতে পারছে কোনো কথা হুস থেকে বলছেনা রিদ। সে রিদকে ধরে রুমে দিয়ে আসতে চাইলে, তাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় রিদ। তার পর ঢুলতে ঢুলতে বৃষ্টির রুমে গিয়ে বিছানায় ধপাস করে পরে যায় রিদ। বৃষ্টি অবাক হয়ে দেখছে কান্ড। খুব বিশ্র গন্ধ আসছে রিদের শরির থেকে। বৃষ্টি দরজার কাছে গিয়ে দেকে ড্রইং রুমে কেও নেই। তার মানে রিদকেও এই অবস্থায় কেও দেখেনি। ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দেয় বৃষ্টি। রিদের হাতে একটা কাগজ দেকতে পেলো সে।
,
,
বিকেলটা আজ খুব ফুর ফুরে। হালকা বাতাসে গাছের পাতা গুলো দোল খাচ্ছে। বৃষ্টি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেছে রাতকে। কিছুক্ষন নিশ্বব্দে চোখের পানি ফেললো বৃষ্টি। রাতের চুল খামচে ধরে রাতের পুরু মুখে চুমু দিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি। যেনো আজ হাজার বছর পর দেখা তাদের। বৃষ্টি আবার জড়িয়ে ধরলো রাতকে। হটাৎ রাতের চোখ পরলো বৃষ্টির ঘারে অনেকগুলো মারের আঘাত। হতটা বের করে দেখলো হাতেও আছে কতগুলো।
বৃষ্টির হাত ধরে টেনে টেনে গাড়িতে নিয়ে গেলো রাত।
– দেখি ওদিকে ঘুরো।
– কেনো?
– আমি বলছি তাই।
বৃষ্টি উল্টো হয়ে বসতেই পিঠের দিকের জামার অংশটা উপরে তুলে নিলো রাত। দেখে পিঠেও হাজারও মারের আঘাত। চোখ ছল ছল করছে রাতের। আলতো করে একটা চুমু একে দিলো সেই পিঠে। মুহুর্তেই কেপে উঠলো বৃষ্টি।
– এতো কিছু হয়ে গেলো একটিবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলেনা আমায়?
বৃষ্টি কাদু কাদু গলায় বললো,
– অনেকবার যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম তোমার সাথে।
– তাহলে আজ এলে কিভাবে?
– আজ আর থাকতে পারছিনা, যাই হয়ে যাক না কেনো তবুও তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো।
– এভাবে কে মেরেছে তোমাকে?
– আম্মু,
– আর?
– সা,,,,,,
বাকিটা বলার আগেই খুব ক্ষেপে গেলো রাত। চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে ধিরে ধিরে।
,
,
সন্ধার পর রাস্তার পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছে সাজিদ। হটাৎ একটা গাড়ি এসে দাড়ায় সাজিদের পাশে। কয়েকটা ছেলে নেমে চোখ মুখ বেধে গাড়িতে তুলে নেয় সাজিদকে।
সাজিদের সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছে রাত।
– তোর সাহস হয় কি করে বৃষ্টির গায়ে হাত তোলার? এই শু,,,, বাচ্চা।
মারের সাথে অদ্ভুত সব গালি গালাস রাতের মুখে।
অনেক্ষন পর সাজিদকে ওভাবে ফেলেই চলে যায় রাত।
– এখানেই পরে তাকবি তুই এই অবস্থায়।
নাক মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরছে সাজিদের। একটু আগে বেল্ট দিয়ে বৃষ্টির গায়ে দেখা প্রতিটি আঘাত দ্বিগুন করে ফিরিয়ে দিলো রাত।
কিছুক্ষন পর এসে দেখে সাজিদ নেই। চেয়ারটায় পরে আছে একটা সাদা কাগজ,
“”আমাকে এভাবে তুলে এনে অপমান ও মারধর করার সাহসটা কারোরই নেই। আর তুই সেই দুঃসাহসটা দেখিয়ে দিলি। আই লাইক ইট ব্রাদার। এবার এর প্রতিদানটা খুব সহজেই পেয়ে যাবি। “”
রুমে বসে আছে বৃষ্টি। রুমে প্রবেশ করে নয়নতারা বেগম। সেই দিনের মতো আজও হাতে তার বেল্ট। ভয়ে চুপসে গেলো বৃষ্টি। আজও কি সেদিনের মতো মারবে তাকে? হয়তো রাতের সাথে দেখা করার খবরটা মায়ের কান অব্দি পৌছে গেছে। কিন্তু আজ তো আর মার সহ্য করার ক্ষমতা নেই তার।
To be continue………