#বিষন্ন_রাত💖,০৩,০৪
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖
#পর্বঃ__৩
– ছি ছি এই নির্জন রাতে একটা মেয়েকে নিয়ে কোথায় গেলো কে জানে। এতো রাতে একটা ছেলেকে নিয়ে কোথাও যাওায়া মেয়ে আর যাই হোক কখনো ভালো হতে পারেনা। আজ আমার নিজের চোখে না দেখলে তো বিশ্বাসই হতোনা রাত কতোটা নিচে নেমে গেছে। দাও আরো আস্কারা দাও ছেলেকে। নিজের চোখেই দোখে কতোটা নিচে নেমে গেছে তোমার ছেলে। মাঝ রাতে একটা মেয়েকে নিয়ে,,,, ছি ছি।
পলির অভিযোগ গুলো শুনে রুদ্র চৌধুরি ঠান্ডা মাথায় টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি পান করলো। রুদ্র চৌধুরির নিরবতা দেখে রাগ আরো বেড়ে গেলো পলির।
– আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা তাই তো? যেদিন এগুলো লোক জানাজানি হবে তখন কিন্তু মান সম্মানটা তোমারই যাবো। তখন কপাল থাপরানো ছারা আর কিছুই করার থাকবে না।
ঠান্ডা মাথায় রুদ্র চৌধুরি বলে উঠে,
– তোমার অভিযোগ দেওয়া শেষ? অনেক রাত হয়েছে ঘুমুতে চলো।
আধা ঘন্টা আগে,
বৃষ্টিকে নিচে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তড়িঘরি করে নিচে চলে যায় রাত। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় রাতকে দেখে তার বাবা রুদ্র। ছেলেকে নিয়ে ইদানিং অনেক টেনশন হয় তার। এতো রাতে কোথায় যাচ্ছে। মাথায় দুঃশ্চিনার ভার। ফলো করতে করতে রাতের পেছন পেছন বেরিয়ে পরে সে ও।
রাত বৃষ্টিকে বাড়ি পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। পলি চৌধুরি তা উপর থেকে দেখে রুমে চলে যায়। রুদ্র চৌধুরিকে খবরটা দিতে যে তার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে। রুমে গিয়ে রুদ্রকে দেখতে পেলো না সে।
বৃষ্টিকে বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দিলো রাত। বাড়ির পেছন দিক দিয়ে ফাইফ বেয়ে নিজের রুমে চলে যায় বৃষ্টি। বারান্দায় দাড়িয়ে কয়েকটা নিশ্বাস ফেলে সে। রুমটা খুটখুটে অন্ধকার হয়ে আছে। বৃষ্টি উকি দেয়ে দেখে খাটের উপর কে যেনো বসে আছে। অন্ধকারে কে তা বুঝা না গেলেও কেও একজন আছে তা ভালোই বুঝতে পারছে সে। বুকটা টিপ টিপ করতে থাকে তার। মনে হয় এক্ষুনি পরান পাখি উড়াল দিবে। মা বসে নেই তো আবার? নিশ্চই জিজ্ঞেস করবে কোথায় গিয়েছিলি এতো রাতে?
তখনি ভেতর থেকে আওয়াজ এলো।
– ভয় পাস না আপু, ভিতরে চলে আয়।
বুকে হাত দিয়ে একটা সস্থির নিশ্বাস ফেললো বৃষ্টি। তার মানে এটা মা নয় তার ছোট ভাই রিদ। ক্লাস টেনে পড়ে সে।
বৃষ্টি এগিয়ে গিয়ে বলে উঠে,
– এখানে কি করছিস তুই? যানিস কতো ভয় পেয়েছিলাম?
– তোর উপকার করলাম থ্যাংস দে আমায়।
– আচ্ছা। আগে বল কি এমন উপকার করলি যার জন্য থ্যাংস দিতে হবে?
– তুইযে বের হচ্ছিলি তা আমি দেখেছি। আর তুই জানিস বাবা তখন ছাদে হাটাহাটি করছে? তোকে দেকেও ফেলেছে রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে যাওয়ার সময়, ভাগ্গিস চিনতে পারেনি। তখনই আমি তোর রুমে এসে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে থাকি। কিছুক্ষন পর বাবা এসে রুমে চেক করে গেলো। আমাকে দেখেই ভেবেছিলো তুই শুয়ে আছিস। তাই রুমে চলে গেলো। এখন হয়তো নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে। আচ্ছা বাদ দে আগে বল কাকে উইশ করেছিস?
– আমি যে কাওকে উইশ করতে গিয়েছি তুই কি করে জানলি?
– হুহ্, ওইসব আমি আরো আগে পার করে এসেছি। আগে বল কে সে যাকে এতো রাতে উইশ করতে গেলি?
– সময় হলে জানবি এখন যা ঘুমাতে যা।
– কিন্তু আমার হেল্প করার ক্রেডিট দিবি না?
– এতোদিনে একটা কাজের মতো কাজ করেছিস। পেয়ে যাবি।
,
,
বাড়ি ফিরে ফাইফ বেয়ে উঠে নিজের রুমে গিয়ে সুয়ে পরে রাত। পলি নিচে ড্রায়নিং রুমে পায়চারি করছে। রুদ্রকে ঘরে ঢুকতে দেখেই। অভিযোগ দিতে থাকে তার কাছে।
ঠান্ডা মাথায় নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো রুদ্র চৌধুরি।
পেছন থেকে পলি বলে উঠে,
– ভালোর জন্যই বলছি তোমায় বিশ্বাস হচ্ছেনা তাইতো? রুমে গিয়ে দেখে আসো তোমার ছেলে কোথায়?
রুদ্র এবার থেমে বলে উঠে,
– আমি ভাবতেও পারছি না রাতকে নিয়ে তোমার চিন্তা ভাবনা এতো নিচে নেমে গেছে। দেখি চলো তো।
পলি রুদ্রকে নিয়ে রাতের রুমের সামনে চলে গেলো। ভেতরে গিয়ে দেখে রাত সুয়ে আছে বিছানায়।
পলি চৌধুরি অবাক হলেও ভালোই বুঝতে পারছে এবার রুদ্র তার কোনো কথাই বিশ্বাস করবে না।
,
,
,
নতুন কলেজ, সাথে কিছু নতুন বন্ধু সব মিলিয়ে দিন ভালোই কাটছে রাতের। মাজে মাঝে একা একা বিষন্ন মনে গিটার বাজানোটা তার নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাড়িয়েছে।
বৃষ্টি, নেহা, স্নিদ্ধা, মিলি সকলে বসে আছে দল বেধে। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে নেহা বলে উঠে,
– কিরে এতো কি ভাবছিস কিছুতো বলবি নাকি?
পাশ থেকে স্নিদ্ধা বলে উঠে,
– নিশ্চই রাতের আকাশে অনুভুতির তারা ছরাচ্ছে।
– আরে ধুর ছরাতে যাবে কেনো, ও তো এখন জোট বানাতে ব্যস্ত।
বিরক্তিশুর নিয়ে বৃষ্টি বলে উঠে,
– ধুর কি শুরু করেছিস তোরা?
– আচ্ছা দোস্ত রাতকে যেহেতু তুই পছন্দই করে নিয়েছিস তাহলে তোর মনের কথা বলে দে তাকে।
– তোদেরকে আমি কখনো বলেছি যে রাতকে আমি পছন্দ করি।
– দোস্ত তুই না বললেও তোর চোখের ভাষায় তা স্পষ্ট।
– সত্যি কি তা বুঝা যায়?
– কোনো সন্দেহ নেই।
– তাহলে রাতও কি সেই ভাষা বুঝতে পারে?
– সেটা তুই তাকেই জিজ্ঞেস কর। আর আমার মনে হয় রাতও তোকে পছন্দ করে। নাহলে সে কোনো মেয়ের সাথেই তেমন ঘনিষ্ট নয়।
– যদি ও ফিরিয়ে দেয় তাহলে ভালো সম্পর্কটাও নষ্ট হয়ে যাবে আমাদের। আমি তো রাতকে হারাতে চাই না?
– আরু ধুর পাগল, এতো ভয় পেলে কি হবে?আমার বিশ্বাস রাত তোকে ফিরিয়ে দিবে না।
পাশ থেকে মিলি বলে উঠে,
– আই হ্যাব এ আইডিয়া। আমরা সকল ফ্রেন্ডরা মিলে দু,একদিনের জন্য কোথাও ঘুরতে চল। আর এই ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো রাতকে বৃষ্টির প্রপোজ করা।
স্নিদ্ধা বলে উঠে,
– আইডিয়াটা খারাপ না। কিন্তু টুরের ফিপটি পার্সেন্ট খরচ কিন্তু বৃষ্টির। বন্ধুত্বের খাতিরে ফুল খরচ থেকে ফিপটি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দিলাম। অন্য কেও হলে যার জন্য যাচ্ছি ফুরো খরচ তার কাছ থেকেই আদায় করা হতো।
পাশ থেকে নেহা বলে উঠে,
– আমার মনে হয় যাওয়া হবেনা রে। বাসা থেকে কোথাও একা যেতে দেয়না আমাকে।
– আরে আমরা বুঝিয়ে বলবো আঙ্কেলকে। দেখবি না করবে না। এখন রাতের বন্ধুদের সাথে আলাপ করতে হবে এই নিয়ে।
,
,
ছুটি শেষে পাশাপাশি হাটছে রাত ও বৃষ্টি। ড্রাইবারকে কিছু বকশিস দিয়ে একটু সাইডে তাকতে বলেছে সে।
হাটার সময় রাতের দিকে বার বার আড় চোখে তাকাচ্ছে বৃষ্টি। এভাবে যে সে অসমাপ্ত পথ পারি দিতে চায় রাতের সাথে।
কারো মুখে কোনো কথা নেই। মাথার উপর সূর্যটা পশ্চিম দিকে হেলে পরছে ধিয়ে ধিরে। তবুও প্রখর তাপ ছরাতে ব্যস্ত সে। সুর্যের তাপ বরাবরই গায়ে এসে পরছে দুজনের। ঘামে হালকা লাল গোলাপি আকার ধারন করেছে বৃষ্টির মুখটা। কপালে জমে তাকা বিন্দু বিন্দি ঘাম গুলো বার বার মুছে নিচ্ছ বৃষ্টি। রাত বৃষ্টির দিকে তাকালেও সেই দৃষ্টি দির্ঘ নয়। চোখ ফিরিয়ে একটা হাসির আভাস ফুটিয়ে তুলতে চেয়েও থেমে গেল। রাতের চোখের হাসি কখনো তার মুখ অব্দি পৌছায়না।
নিরবতা ভেঙে রাত বলে উঠে,
– অভ্যেস না থাকলে এমন উত্তপ্ত রোদে হাটার কারণ?
– ভালো লাগছে তাই।
– ভালো লাগার কারণ?
– তোমার কি অসস্থি বোধ হচ্ছে?
তার যে কেনো অসস্থি বোধ হচ্ছেনা আজ, তা বলতে গিয়েও থেমে গেলো রাত। আবার কিছুক্ষন নিরবতায় কাটলো।
নিরবতা ভেঙে বৃষ্টি বলে উঠে,
– সেদিন বুঝলাম তুমি তোমার মাকে খুব ঘৃনা করো। কারণ টা জানতে পারি?
প্রশ্নটা করেই পিট পিট করে তাকায় রাতের দিকে। প্রশ্নটা করার পর বুঝলো, রাতের দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন করা উচিৎ হয়নি তার।
রাত শান্তভাবে বলে উঠে,
– পুরানা ক্ষত জাগিয়ে তুলতে চাইনা। ওই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করোনা প্লিজ।
– সরি,,,,
আবার কিছুক্ষন নিরব। আবার বৃষ্টি বলে উঠে,
– কখনো কারো প্রেমে পরেছিলে?
– এসব প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাসি নই আমি। এগুলো সব হলো অভিনয় আর দিন শেষে সবাই অভিনেতা।
– আচ্ছা তুমি কখনো হাসোনা কেনো? একটু হাসলে কি হয়? এতো গম্ভির কেনো তুমি? কাতুকুতু দিলে হাসবে? আরে হাসতে কোনো টেক্স লাগেনা। একটু হাসো প্লিজ,,,,,,
বৃষ্টির বাচ্চামোতে মুখ চাপা রেখে একটু হেসে দিলো সে। তা বৃষ্টির চোখ এড়ালো না।
– এই হাসিটাই তোমার মুখে সারা জীবন দেখতে চাই।
,
,
,
বিকেলে স্কুল ছুটি দিলো রিদের। সারাদিন স্কুলে ক্লাস করলেও তার হৃদপিন্ডটা বেধে ছিলো ওই গার্লস্ স্কুলে। টিফিনের টাইমে ফাকি দিয়ে ঠিকই চলে গিয়েছিলো তার গার্লফ্রেন্ড শুভ্রতার কাছে। ছুটি শেষে ব্যাগটা তার বন্ধু সামি নিয়ে এসেছে। শুভ্রতার সাথে দেখা করে ফিরতে ফিরতে বেলা ঘনিয়ে এলো। রিদ আার সামি মিলে হাটা ধরলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
ওদিকে বৃষ্টি রাতের সাথেই ছিলো এতোক্ষন। দুজন মিলে লান্স করে কিছুক্ষন ঘুরলো কাছে সুন্দর সুন্দর জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলো রাত। আগে এসব জায়গায় ঘুরাফিরা করলেও আজ ছিলো এক ভিন্ন অনুভুতি।
বৃষ্টি বাসায় ফিরতে রাস্তায় দেখা হলো রিদ ও সামির সাথে। গাড়ি থামিয়ে রিদকে বলে উঠলো বৃষ্টি,
– কি রে রিদ কখন স্কুল ছুটি হলো আর তুই এখন বাড়ি ফিরছিস? আর হেটে হেটেই বা কেনো যাচ্ছিস। কোথায় ছিলি এতোক্ষন?
পাস থেকে সামি বলে উঠে,
– আর বলবেন না আপু, প্রতিদিন গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যায় সাথে আমাকেও নিয়ে যায়। আজতো স্কুল ফাকি দিয়েই চলে এসেছে। রিদের সাথে থাকতে থাকতে দেখেন কতো লেট হয়ে গেলো দেখলে? এখন নির্ঘাত মা বাড়িতে গেলে বকবে।
বৃষ্টি রাগি ভাবে তাকিয়ে আছে রিদের দিকে,
– বিশ্বাস কর আপু ও সব মিথ্যা বলছে। আর আমি স্কুল ও ফাকি দিই নি।
– গাড়িতে উঠ।
– তুই যা আপু এইতো আর একটু। আমি সামির সাথেই আসছি।
– বাসায় আয় আজকে।
বৃষ্টি চলে যাওয়ার সামির গলা চেপে ধরে রিদ।
– হারামজাদা, তোরে বলছি আপুকে এইসব বলতে? তোরা কি বন্ধু নাকি বুকে ধরে থাকা বন্দুকের নল?
– আরে ছার কি করছিস, তোর প্রতি অতি ভালোবাসার টানে সত্যিটা বেড়িয়ে গেছে মুখ দিয়ে। ভালোবাসা থেকে আসছে এগুলো।
– তোমার এতো ভালোবাসা আমার দরকার নেই। একটু কম করে বাসো। এখন বাড়িতে কথাগুলো জানাজানি হলো বাশ রেডি করেই রাখবে আমার জন্য।
তখনই সামির পকেটে ফোনটা বেজে উঠলো।
– হ্যালো আম্মু।
– কোথায়রে তুই?
– এইতো আম্মু চলে আসছি। গ্রুপ স্টাডি করছিলাম তো তাই।
রিদের মাথায় চাপলো দুস্ট বুদ্ধি। এটাই সামির ভালোবাসা তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার উত্তম সময়।
ফোনের কাছে মুখ নিয়ে রিদ বলতে শুরু করে,
– ওফ বেবি কে ফোন দিলো ফোনটা রাখোতো। কে এমন ডিস্টার্ব করছে যত্তসব।
ওপাস তেকে সামির মা বলে উঠে,
– এটাই তোর গ্রুপ স্টাডি?
রিদ এবার জোরে জোরে বলতে শুরু করে,
– এই সামি, সিগারেটের পেকেট টা দে তো সিগারেটের পেকেট টা দে। আরে সামি দে না। পেকেটের অর্ধেক তো তুই ই শেষ করে ফেললি।
সামি প্রায় কাদু কাদু অবস্থা তার মায়ের কাছে। ওপাস থেকে তার মা রাগি গলায় অনেক গুলো কথা বলতে তাকে সামি কে,
– তুই আজ বাসায় আয়।
ফোন কেটে দিলো তার মা।
সামি রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে,
– হারামজাদা এটা কি করলি তুই?
– কিচ্ছু করার নেই দোস্ত তোর মতো আমারও অতি ভালোবাসার কারণে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ভালোবাসা থেকে আসছে এগুলো।
To be continue………..
#বিষন্ন_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖
#পর্বঃ__৪
বাড়ি ফিরে ব্যাগ নিয়ে বাসায় প্রবেশ করলো বৃষ্টি। আজকে ফিরতে অনেকটা লেট হয়ে গেছে। সন্ধা নেমে এলো প্রায়।
কাধে ব্যাগ নিয়ে দ্রুত পায়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায় সে। লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসে রুম থেকে। দেখে নিচে তার বাবা ও মা বসে আছে সোফায়। নিচে গিয়ে তাদের পাশে বসলো বৃষ্টি।
পাস থেকে তার বাবা বলে উঠে,
– কিরে মা, আজ বাসায় ফিরতে এতো লেট হলো তোর?
– আ আসলে বাবা, ওইতো স্নিদ্ধদের বাসায় গিয়েছিলাম কিছু নোটস লিখে আনতে তাই দেড়ি হয়ে গেলো।
– ওহ্ আচ্ছা। আর শুন কোথাও বের হলে হিজাব পরে বের হবি যাতে চিনা না যায়। আর সিফন আর রাজু তো সাথে আছেই। রাজনিতি করলে পেছনে অনেক শত্রু পরে থাকে। যারা সবসময় থাকে সুজুকের অপেক্ষায়।
– তুমি কোনো চিন্তা করোনা বাবা আমার কোনো প্রব্লেম হয় না।
এর মাঝে তার মা ও টান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– সাজিদ ফোন করেছিলো একটু আগে। তোকে খুজছিলো সে। তোকে নাকি ইদানিং ফোনেই পাওয়া যায় না। তুই কি কোনো করণে সাজিদকে এ্যাবোয়েট করছিস?
– ক্লাসে থাকি তো তাই ফোন সাইলেন্ট করা থাকে। আর মাঝে মাঝে কথা হয়, কাজিন হিসেবে টুকটাক হাই হ্যালো হয় এই আরকি। এ্যাবোয়েট কেনো করবো?
– কাজিন শব্দটা মাঝখানে টেনে আনিস কেনো? তোকে আর সাজিদকে নিয়ে আমাদের ফিউচার ফ্লেনিংটা কি তা ভালো করেই জানিস।
– লাইফ টা আমার মা। আর আমার লাইফ নিয়ে ডিসিশন নেওয়ার অধিকার আমারও আছে। আর সাজিদ ভাইকে আমি জাস্ট মামাতো ভাইয়ের চোখেই দেখি। এর চেয়ে বেশি কিছু না।
– আরে ধুর পাগলি বিয়ের পর দেখবি এসব চিন্তা ভাবনা ঠিকই পাল্টে যাবে।
– প্লিজ মা,,,,,,
বৃষ্টি হেটে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। পাশ থেকে হেলান দেওয়া অবস্থায় তার বাবা তার মাকে বলে উঠে,
– আরে মেয়ের সামনে কেও এসব বলে? ওর তো লজ্জা বলতেও একটা কথা আছে তাই না?
– তুমি চুপ থাকো,, তোমার আস্কারে পেয়ে পেয়েই মেয়েটা বখে যাচ্ছে। মুকে মুখে কথা বলাও শিখে গেছে। ইদানিং ওর মনের ভিতর কি চলে তাও বুঝা মুশকিল।
দরজার সামনে এসে উকি দেয় রিদ। দেখে বাবা ও মা সোফায় বসে কি যেনো কথা বলছে।
বিড়ালের মতো নিশ্চুপ পায়ে হেটে হেটে উপরে চলে যাচ্ছে সে। পেছন থেকে ডাক পরে তার মায়ের।
– এইতো এসে গেছে আরেক নবাবজাদা। একটু এদিকে আসুন জাহাপনা।
একটা শুকনো ঢোক নিলো রিদ। আপু আবার সব বলে দেয় নি তো?
ধিরে পায়ে সামনে গেলো রিদ। মা কর্কশ গলায় বলে উঠে,,,
– কোথায় ছিলি এতোক্ষন? তুই ও কি তোর বোনের মতো নোটস লিখে আনতে গিয়েছিলি?
– তুমি কি করে জানলে?
তখনি বৃষ্টি ডাক দিলো রিদকে,
– এই রিদ একটু এদিকে আয় তো।
রিদ বৃষ্টির রুমে গিয়ে বলে,
– ধন্যবাদ আপু।
– ধন্যবাদ আমার লাগবেনা। এখন এই কাচের টুকরু গুলো পরিস্কার কর।
– নিশ্চই আজ বিয়ের কথা মনে করিয়ে দেওয়ায় ভাঙচুর করেছিস?
– ওটা যেনে তোর লাভ নেই। এখন এগুলো পরিস্কার করে ডাসবিনে ফেলে আয়।
– আমি তোর কাজের লোক নাকি যে এগুলো পরিস্কার করবো।
– ওরে লক্ষি ভাইটি আমার, তুমিও করবা তোমার হাতেও করবে। যদি না করো আজকের স্পেশাল বার্তাটা বাবা মায়ের কানে পৌছে যাবে।
– ব্লেকমেইল করছিস তাই না? ওকে কোনো ব্যাপার না, কিভাবে কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হয় আমিও জানি। সেইদিন যে তুই রাত বারোটার সময় বের হয়ে কার কাছে গিয়েছিলি তাও আমি জানি। এখন আমি ফ্রেশ হবো তুই এই রুম পরিস্কার করে আমার রুমে গিয়ে আমার জামা কাপর গুলো ধুরে দিবি। তা না হলে বুঝতেই পারছিস ব্যপারটা বাবার কানে যেতে একটুও লেট হবে না।
অতি শ্বাসন করতে গিয়ে নিজেই ফেসে গেলো বৃষ্টি। আর কিছু না বলে বৃষ্টিকে একটা ভেংচি কেটে সোজা নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো রিদ।
,
,
রাতে খেয়ে ছাদে হাটা হাটি করছে বৃষ্টি। তবুও অস্থিরতা কাটছেনা তার। হটাৎ হটাৎ মায়ের মুখে এসব কথা শুনে টেনশন ভর করে মাথায় উপর। সে যে সাজিদেকে সহ্যও করতে পারেনা এটা তার বাবা মাকে কি করে বুঝাবে সে। অনেক ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু লাভ হয়নি। পরের ঘরে গিয়ে সারাজীবন সংসার তো আমাকেই করতে হবে তাহলে আমার লাইফ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারটা আমার নেই?
এর মাঝে ফোনটা বেজে উঠে বৃষ্টির। দেখে সাজিদের ফোন। কয়েকবার নাম্বার ব্লক করলেও আবার খুলতে হয়েছে তাকে।
– কেমন আছো বৃষ্টি?
– ভালো।
– খেয়েছো?
– হুম।
– কিছু হয়েছে?
– ভালো লাগছেনা ফোন রাখেন।
বলেই ফোন কেটে দিলো বৃষ্টি। এর পর সাজিদ আবারো কয়েকবার কল দিলো। আর রিসিভ করলোনা বৃষ্টি। ওপাশে সাজিদের রাগ হলেও কিছু বললো না। নিজের রাগ নিজের মাঝেই পুষে রাখলো। শুধু পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরার অপেক্ষায়।
,
,
কেটে গেলো দু, এক দিন। নেহা, মিলি, স্নিদ্ধা, বৃষ্টি ও রাতের বন্ধুরা মিলে বসে আছে ক্যম্পাসে। রাত এখনো আসেনি। এর ফাকেই তাদের ফ্লেনিং করা শেষ।
রাফি বলে উঠে,
– আমার মনে হয় না কোনো লাভ হবে। কারণ রাত এসব প্রেম ভালোবাসা সহ্যই করতে পারেনা।
– আরে সব সময় নেগেটেভ চিন্তা ভাবনা করিস কেনো?
– আচ্ছা বাদ দে, এখন কোথায় ঘুরতে যাচ্ছিস ঠিক করলি?
স্নিদ্ধা বলে উঠে,
– হুম, টাঙ্গাইলে মহেরা জমিদার বাড়ি। অনেকদিন ধরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে ওখানে কিন্তু যাওয়া হয় না। এই ফাকে ওটাও দেখা হয়ে যাবে।
এর মাঝে রাফি বলে উঠে,
– আরে ওখানে আমি কয়েকবার গিয়েছিলাম। অন্য জায়গা সিলেক্ট কর।
– আরে শুন। আমরা দু,দিনের জন্য বের হবো। সকালে টাঙ্গাইল জমিদার বাড়ি চলে যাবো। যেতে যেতে দুপুর হয়ে যাবে। বিকেলটা ওখানে কাটিয়ে সন্ধার পর রাত ও বৃষ্টিকে ওখানে রেখে সোজা সিলেট চলে যাবো। বাকিটা বৃষ্টিই বুঝে নিবে। ওরা টাঙ্গাইল থেকে যাবে আর আমরা রাতেই সিলেট। পরদিন ওখানেই কাটাবো।
রাফি আবার বলে উঠে,
– সিলেট যায়গাটা খারাপ না, সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে ওখানে। কিন্তু সৌন্দর্যের জন্য চট্টগ্রামটাই অন্যতম। যাকে বাংলাদেশের প্রবেশধার বলা হয়।
স্নিদ্ধা বললো,
– দু,দিনের জন্য বের হলাম তাই এই ছোট্ট ট্রেবল। আর চট্টগ্রাম গেলে তো একদিনে আর কতোটা সুন্দর্যই উপভোগ করতে পারবি? ওখানে একবারে এক্সামের পর যাবো সবাই মিলে কয়েকদিনের জন্য, তাহলে ভালো ভাবেই উপভোগ করতে পারবি চট্টগ্রামের সুন্দর্য। আর শুন রাতকে এসব কিছু বলার দরকার নেই যে, আমরা তাকে আর বৃষ্টিকে টাঙ্গাইল ফেলে যাবো। ও শুধু যানবে আমরা ঘুরতে যাচ্ছি।
– ওকে।
– আর, বৃষ্টি তোর কোনো ভিন্ন মত নেই তো ফ্লেনে? মানে তুই পারবিতো বাকি সব?
– জানিনা।
– আরে ধুর পারবি পারবি। সাহস রাখ।
– তোরাও থাকনা ওখানে।
– আরে পাগল নাকি। রাত জদি রাজি না হয় তাহলে তোকে আমাদের কাছে রেখে ও চলে আসবে। আর জদি আমরা ওখানে না থাকি তাহলে, ও রাজি না হলেও তোখে ওখানে একা ফেলে আসবে না। কিন্তু আমার পুরু বিশ্বাস রাত তোকে ফিরিয়ে দিবেনা। আর তখন তোদের মাঝে আমরা থেকে তোদের মুল্যবান সময়টুকু নষ্ট করবো না। তখন দুজন এক সাথে থাকলে, ক্ষুদ্র জিনিস গুলোও তোদের কাছে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করবে।
– আচ্ছা।
সবাই মিলে ফ্লেন করলো আগামি পরশু তারা রওনা দিচ্ছে দু,দিনের সফরে। মিশন ঢাকা টু সিলেট।
রাতে ছাদে বাবার পাশে গিয়ে দাড়ায় রাত। কপি হাতে তাদের পাশে এসে দাড়ায় পলি চৌধুরি। রাত তার বাবাকে বলে উঠে,
– বাবা আগামি পরশু আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে একটু ঘুরতে বের হবো। দু,দিন থাকবো আমরা।
– ভালো তো, ঘুরাঘুরি করলে মন ফ্রেশ থাকে অলটাইম। যা ফ্রেন্ডরা মিলে ঘুরে আয় দেখবি মন ফুরপুরে থাকবে।
– কিন্তু বাবা,,,
– টাকা লগবে? নো প্রব্লেম ঘুরা ফিরার খরচ আমি দিয়ে দিচ্ছি। তবুও তুই হাসি খুশি থাক এটাই আমি চাই।
মাঝখানে পলি চৌধুরি বলে উঠে,
– টাকার কথা বলার আগেই তুই আগ বাড়িয়ে দিচ্ছো অজথা এতো টাকা নষ্ট করার দরকার কি? যেহেতু ফ্রেন্ডরা মিলে যাচ্ছে তাহলে সবাই মিলেই তো দিবে তাই না? আর রাত তোমরা কোথায় বা যাবে?
রাত এবার রাগি চোখে বলে উঠে,
– আমার বিয়ের বর যাত্রি নিয়ে যাবো। বুঝলাম না, আমার আর বাবার মাঝখানে না ঢুকলে কি আপনার শান্তি হয়না? আপনার জম্মই হয়েছে মনে হয় আমার আর বাবার মাঝখানে সব সময় কাঠি কাটানোর জন্য।
আর কিছু না বলে সোজা নিচে চলে গেলো রাত। রুদ্র চৌধুরি পলির দিকে তাকিয়ে বলে,
– মেয়ে লোক যত কথা কম বলবে তার সম্মানটা ততো উপরে থাকবে।,
,
,
বাসা থেকে অনুমতি পেলো বৃষ্টিও। দুই দিন থাকার কথা শুনে প্রথমে তার বাবা না করলেও পরে বন্ধুদের কথায় তাদের সাথে যেতে অনুমতি দিলো বৃষ্টিকে।
আজ রওনা দিবে তারা। সকালে ভোরে সবাই বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে। সবাই একত্রিত হয়ে।
রাফি বলে উঠে,
– মহেরা জমিদার বাড়ি যেতে হলে, প্রথমে যেতে হবে মহাখালি বাসটার্মিনারে। ওখানে নন এসি বাস গুলোর মাঝে নিরালা সুপার বাসটাই ভালো যার টিকিটের দাম, ১৭০ কি ৮০ টাকা। যদিও আমরা এসি বাসে যাবো ভেবেছিলাম, কিন্তু ঠান্ডায় নাকি হালকা প্রব্লেম আছে বৃষ্টির। তাই নন এসি বাসেই যাবো আমরা।
সকলে মিলে চলে গেলো মহাখালি বাসটার্মিনারে। ওখানে নিরালা সুপার বাস সার্ভিসের ৮ টা টিকিট নিলো রাফি। এতে বৃষ্টি আর রাতে সিট পাশাপাশি ই নিয়েছে রাফি।
বাসে উঠলো সবাই। রত দেখলো বৃষ্টির সিট তার পাশেই। যদিও মেয়েদের নিয়ে কখনো বসা হয়না রাতের। তবুও বৃষ্টি পাশে পরায় কিছু বললো না সে। পারলে টিকিট বদলে নিতে পারতো। তাও করেনি রাত। একটা হাসি দিয়ে বসে পরলো বৃষ্টির পাশে।
বৃষ্টি আড় চোখে তাকাচ্ছে রাতের দিকে। কেমন বৌ বৌ ফিলিংস আসছে তার মাঝে। এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছে জামাইর সাথে করে কোথাও যাচ্ছে সে। ভাবতেই হেসে দিলো বৃষ্টি।
রাত তার দিকে তাকিয়ে দেখলো বৃষ্টি তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। রাত নিজেকে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত একবার দেখে নিলো। না হাসির মতো তেমন কিছুই দেখছেনা সে।
– কি হলো হাসছো যে?
বৃষ্টি তবুও হাসছে। যদিও একটু কমিয়ে নিয়েছে।
– দেখো বৃষ্টি হাসি বন্ধ করো তোমার হাসি দেখে নিজেকে জোকার মনে হচ্ছে আমার।
– আচ্ছা আচ্ছা এই যে থামালাম। এবার হ্যাপি?
– শুনো বাসে যহেতু যাচ্ছি প্রব্লেম হলে বলবে কিন্তু।
– আচ্ছা।
বাস চলছে। রাতে ঘুম হয়নি বৃষ্টির। কি করবে তা ফ্লেন করতে করতে রাতটা পার হয়ে গেছে।
রাত পাশে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি ঘুমিয়ে আছে। কি আজব, একটা জায়গায় যাচ্ছি তাও ঘুমিয়ে পরলো। রাতে ঘুম হয়নি মনে হয়।
কিছুক্ষন পর বৃষ্টির মাথাটা কাত হয়ে রাতের ঘারে পরলো। বুকটা কেপে উঠলো রাতের। প্রথম এমন কোনো অনুভুতি। ডাকতে যেয়েও ডাকলো না রাত। চোখ স্থির হয়ে আছে বৃষ্টির মুখের দিকে। খুবই মায়াবি লাগছে তার মুখটা। রাত বেশিক্ষন তাকালোনা সে দিকে। কারণ যতবারই বৃষ্টিকে দেখে অবাক হয় সে। মেয়েদের প্রতি ঘৃনা থাকলেও বৃষ্টির প্রতি কেনো সেই ঘৃনা কাজ করেনা? এটা যে মুখ নয় যেনো এক স্পস্ট মায়াজাল। পাশ থেকে স্নিদ্ধা বলে উঠে,
– রাত এভাবে তাকিয়ে থাকিস না প্রেমে পরে যাবি।
– ধুর, ঘুমিয়ে গেছে দেখেই তাকালাম অন্য কিছু না।
স্নিদ্ধা এবার দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে উঠে,
– কিছু কিছু দির্ঘতম প্রেমের ইতিহাস কিন্তু এখান থেকেই শুরু হয়।
To be continue…………